#সে_আমার_বৌপ্রিয়া
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩০
“আলহামদুলিল্লাহ আপনার ছেলে সন্তান হয়েছে৷ বকশিস দিয়ে আপনার ছেলেকে কোলে তুলে নিন।
‘আমার ওয়াইফ কেমন আছে? ওর কি অবস্থা? ও ঠিক আছে তো?
‘ওনার অবস্থা বেশি ভালো না৷ এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। ব্লাড দেয়া হচ্ছে।জ্ঞান ফিরলে তারপর অবস্থা বোঝা যাবে৷ আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করুন৷ এ-ই নিন আপনার সন্তান।
‘ফারজাদ দূরে সরে গেলো।
‘রুবিনা বেগম এসে নার্সের হাতে এক হাজার টাকার একটা নোট দিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো৷
‘শিরিন বেগম ফারজাদের হাত ধরে বলে,তোমাদের সন্তানকে কোলে নাও।
‘ফারজাদ কথার উত্তর না দিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। ডাক্তারের কাছে এসে বলে রোগিকে কেবিনে কখন দিবেন?
‘চারঘন্টা পর। তবে জ্ঞান না ফিরলে আইসিইউতে নিতে হবে।
‘ডাক্তার আমার ওয়াইফের কিছু হবে না তো? আচ্ছা ওটিতে নেয়ার আগে কেন জিজ্ঞেস করলেন না, মা না সন্তান কাকে বাঁচাতে চান?
‘বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন কেনো করছেন মিস্টার সিকদার?এটা কোন নাটকের দৃশ্য নয় বাস্তব জীবন। আপনার ওয়াইফের জন্য প্রার্থনা করুন।
‘ফারজাদ ডাক্তারের রুম থেকে বের হলো আবার ওটির সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে বলছে তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না।
‘ফয়সাল সিকদার রুবিন বেগমকে বললেন, তোমার ছেলেকে কি করবো!এমন বাচ্চাদের মতো বিহেভিয়ার করলে হবে? আমাদের টাকা পয়সার তো কমতি নেই দরকার পরলে আমাদের মিরহাকে আমরা বাহিরের কান্ট্রিতে নিয়ে যাবো উন্নত চিকিৎসা করাবো। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বৌমাকে সুস্থ করে তুলতে৷
‘এখন এসব বললেও তোমার ছেলে বুঝবে না। নিজের সন্তানের মুখ পর্যন্ত দর্শন করেনি। দোয়া করো মিরহার জ্ঞান ফিরুক। তাহলে যদি শান্ত হয়।আর খোঁজ নিয়ে দেখো মিরহার কন্ডিশন এখন কেমন? সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নাও। চার্টার বিমান রেডি করো। আমরা এভাবে হাতের উপর হাত রেখে বসে তো থাকতে পারি না৷
‘ডক্টর সোহাইল এর আগে কখনো এমন কোন পেশেন্ট দেখেনি। পুরো পরিবারের সবাই মেয়েটাকে কতটা ভালোবাসে! প্রতিটি মানুষ মিরহার খোঁজ করে করে তাকে অস্থির বানিয়ে দিচ্ছে। এ-ই হাতে কত কত সিজার করিয়েছে বেশিরভাগ মানুষ বাচ্চা পাওয়ার পর রোগির কথা সাময়িক ভাবে ভুলে যায়। বাচ্চা নিয়ে মেতে থাকে।অথচ আজকের মেয়েটি কত ভাগ্যবতী৷
‘তিনঘণ্টা পর ফারজাদ উঠে আবার ডাক্তারের রুমে আসলো। আমার ওয়াইফ চোখ না খুললে আপনি কোথাও যেতে পারবেননা।
‘আমার ডিউটি আজকের মতো শেষ আজ আর কোন ওটিও নেই।
‘আপনার কি আছে কি নেই আমি জানতে চাই না। আমার ওয়াইফকে যেভাবে ওটিতে ঢুকিয়েছেন ঠিক সেভাবে ফেরত চাই।
‘মিস্টার সিকদার আপনি রেস্ট রুমে রেস্ট করুন। আমি এখন বের হবো।
‘আমার ওয়াইফের জ্ঞান না ফিরতে হসপিটাল থেকে এক পা নড়তে পারবেন না।
‘আপনি একজন ভদ্র মানুষ। আর এটা হসপিটাল দয়া করে ভদ্রতা বজায় রাখুন।
‘আপনি আমাকে যাই বলুন আমি আপনাকে বের হতে দেবো না।
ফয়সাল সিকদার ফারজাদকে বলে,এসব কি শুরু করলে?মৃত্যু অনিবার্য যেনেই আমরা পৃথিবীতে এসেছি।
‘একজন নার্স এসে বলে,স্যার পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে তাকে কেবিনে হস্তান্তর করা হয়েছে।
‘ডাক্তার দ্রুত বের হয়ে পরলেন। ফারজাদ ডাক্তারের সাথে সাথে গেলো।
‘মিরহা চোখ খুলেই বলে,আমার বেবি কোথায়?
‘আপনার বেবি পাশের কেবিনে।
‘ফারজাদ ডাক্তারের আগে এসে বলে,তুমি ঠিক আছো? বলেই মিরহার সারা মুখে কিস করলো।
‘মিরহা ক্লান্ত কন্ঠে বলে,আমি ঠিক আছি আমাদের সন্তান কেমন আছে?
‘আমি জানিনা। আমার বৌপ্রিয়া আমার কাছে সবার আগে।
‘ডাক্তার বলে,আপনার হাসবেন্ড আমাদের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।
‘মিরহা মুচকি হাসলো। মানুষটা তাকে এতো ভালোবাসে কেনো! মানুষ তো সন্তানের জন্য পাগল হয়ে যায় আর সে পাগল হলো বৌয়ের জন্য!
‘ডাক্তার নার্সকে নিয়ে বের হয়ে গেলো৷
‘মিরহা বলল, আমাদের সন্তানকে নিয়ে আসো। ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে হয়েছে আমাদের?
‘জানিনা আমি।
‘এখন নিয়ে এসো।
‘রুবিনা বেগম বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে কেবিনে ঢুকে বলে,তোমার তো বাবার কমতি ছিলো আল্লাহ তায়ালা তোমাকে সেটাই দিয়েছে।
‘মিরহা ফারজাদের দিকে তাকালো। একদিন রাতে ফারজাদের বুকে মাথা রেখে বলছে আমার ছেলে হলে নাম রাখবো মিরহান। মেয়ে হলে ফাতিহা।
‘উঁহু আমাদের মেয়ে হবে আর তার নাম হবে পরি।
‘পরি কোন নাম হলো?
‘হয়নি হবে।
‘ফারজাদ মিরহার কপালে চুমু দিয়ে বলে,যখন হবে তখন নাম রাখা যাবে এখন ঘুমাও।
‘ফারজাদ বাচ্চাটা কোলে নিয়ে মিরহার পাশে এসে বসলো মিরহার কোল ঘেঁষে বাচ্চাটা শুইয়ে দিয়ে বলে,এ-ই নাও তোমার মিরহান।
‘মিরহা মিরহানের দিকে তাকাতেই নিমিষেই যেনো তার সকল কষ্ট হাওয়ায় মিইয়ে গেলো। মনে হচ্ছে এ-ই মুখশ্রীর জন্য এরচেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করলেও সেটা কম মনে হতো। মিরহা মিরহানের ছোট হাত ছুঁয়ে দিতেই চোখ দুটো ভিজে উঠলো।
ফারজাদ মিরহার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে, এখন তো হাসো!তোমরা দুজন আমাকে অনেক জ্বালিয়েছো এবার থেকে শান্তি দিবে।
‘মিরহা ফারজাদের দিকে তাকিয়ে বলে,দেখো ওর নাকটা আর ঠোঁটটা তোমার মতো হয়েছে। চোখ দুটো আমার মতো হয়েছে। আমাদের দুজনের কম্বিনেশনে ফিফটি-ফিফটি আমাদের ভালোবাসার উজ্জ্বল নক্ষত্র।
🌿 এরপর কেটে গেলো তিন বছর।
মিরহা মিরহানের পিছু ছুটছে আর একটু একটু করে খাবার মুখে দিচ্ছে।
ফারজাদ মিরহাকে পেছন থেকে কোলে তুলে নিয়ে বলে সারাদিন ছেলেকে সময় দিলে হবে? এ-ই অবহেলিত বরটার দিকেও তো একটু নজর দিতে হবে।
‘কি করছো দিনেদুপুরে! নামাও ওকে খাইয়ে আম্মার কাছে দিয়ে আসছি।
‘মিরহান ফারজাদের কোলে মিরহাকে দেখে ছুটে এসে কান্না জুড়ে দিলো। পাপা আমাকে কোলে নিবে আম্মাকে না, বলছে আর কান্না করছে।
‘ফারজাদ মিরহাকে কোল থেকে নামিয়ে মিরহানকে কোলে নিলো।
‘বাপ ভক্ত ছেলে। বাপকে পেলে আমাকেই ভুলে যায়।
‘আমি মিরহানকে আম্মুর কাছে দিয়ে আসতেছি। মিরহানের আম্মু মিরহানের বাবার টাইম শুরু।
‘মিরহা রুমে আসতেই ফারজাদ দরজা বন্ধ করে দিয়ে মিরহাকে জড়িয়ে ধরলো।
‘মিরহাও ফারজাদকে জড়িয়ে ধরে বলে,মিস্টার হ্যাসবেন্ড তিন বছর শেষ হয়ে গেলো, এখনো আপনার প্রেম কমলো না৷
“ফারজাদ মিরহাকে চুমু দিচ্ছে আর বলছে,প্রেম কমে না যতদিন যায় প্রেম বাড়তে থাকে। আদর বাড়তে থাকে।
‘আপনার আদরের তো কোন টাইম নেই যখন তখন ডিস্টার্ব।
‘সারাজীবন তোমাকে ডিস্টার্ব করবো।
‘আজ তো পুস্প আর জিসানের ম্যারেজ ডে ওদের জন্য গিফট নিতে হবে তো।
‘ফারজাদ মিরহার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে বলে,এ-ই মূহুর্তে শুধু আমাদের ভালোবাসার কথা হবে আর কোন কথা না৷
ঘন্টা দেড়েক পরে মিরহা ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলে,দ্রুত শাওয়ার নিয়ে বের হও আমি রেডি হচ্ছি বের হবো একসাথে।
‘ফারজাদ উঠে এসে মিরহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,আমার তো একদম রুম থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে না। খুব আদর পাচ্ছে।
‘ছাড়ে আমাকে দাও শাওয়ার নিতে৷
‘ফারজাদ মিরহার পিঠে চুমু দিয়ে বলে, এবার ছেড়ে দিলাম রাতে কিন্তু ছাড়াছাড়ি নাই৷
‘দুজনে রেডি হয়ে মিরহানকে রেডি করে সাথে নিয়ে বের হলো।
‘ফারজাদ মিরহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, ভালোবাসি বৌপ্রিয়া।
‘মিরহা ফারজাদের বাহুতে মাথা রেখে বলে,সবটা কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে। কখনো কল্পনা করিনি আমার কপালে এতো সুখ আছে৷
‘তুমি আমি আমাদের সন্তান এ-ই ছোট জীবনে আর কিছু চাই না৷
‘ফারজাদ গাড়ি থেকে নেমে মিরহাকে হাত ধরে নামালো। বাসার ভেতর ঢুকতেই রাহাত মিরহানকে কোলে তুলে নিলো।
‘ফারজাদ বলল,কিরে শ্বশুর বাড়ি ছাড়তে মনচায় না?
‘আরেহহহ ইয়ার বৌ যেখানে আমি সেখানে।
‘জিসান এসে বলে,আজকে কিন্তু ডাবল সেলিব্রেশন।
‘সবাই অবাক হয়ে বলে সেটা কেমন?
‘মিরহা ফুপু হচ্ছে ।
‘সবাই একত্রে বলে কংগ্রাচুলেশনস।
‘অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত বারোটা বেজে গেলো।
ফারজাদ মিরহাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো। মিরহানকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে, ড্রেস চেঞ্জ করে বসতেই ফারজাদ মিরহাকে কোলে তুলে বারান্দায় নিয়ে আসলো। নিজের কোলে বসিয়ে মিরহাকে আদুরে কন্ঠে বলে,”যার আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে ফিরে পাই প্রাণ সে আমার বৌপ্রিয়া,সে-ই আমার বেঁচে থাকার গান।
সমাপ্তি।
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, এতোদিন ধরে ধৈর্য ধরে গল্পটা যারা পড়ছেন সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ইনশা আল্লাহ খু্ব শীগ্রই নতুন কোন উপন্যাস নিয়ে হাজির হবো৷ ভালোবাসা অবিরাম প্রিয় পাঠক।
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥀