সে জন সোনা চিনে না পর্ব-০১

0
1

#সে_জন_সোনা_চিনে_না
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১

— এমন কালো ছেলে আম্মা। এত কালো! তুমি দেখেছো তাকে। এত কালো ছেলেকে নিয়ে কিভাবে সংসার করব আমি?

ঘরময় নীরবতা। কারো মুখে রা নেই। নৈঃশব্দ্য ভাবখানা কাটতে দুপুর পুণরায় প্রশ্ন তুলে,

— আমার দিকে একবার তাকাও। একটু দেখো। আমার কিসে কমতি? একটু দেখাও আমাকে।

উপস্থিত সকলেই উত্তর জানে না। দুপুরের তীব্র রোদের মতোই ঝলসানো সৌন্দর্য দুপুরের। এত সুন্দর মেয়ে তাদের যার কি না রুপ গুন সবটাই ষোলকলা পূর্ণ করে। মেধা তুখোড়। ছোট্ট থেকে দুপুর প্রচুর মেধাবী একটা মেয়ে। প্রথম সারিতে তার নাম। এই যে কলেজ পাশ করলো, পুরো জেলায় পঞ্চম হয়েছিলো সে। বৃত্তি দিয়ে পড়েছে এতগুলো বছর। বাবা মেয়ের পেছনে স্কুলে টাকা দিবে কি উল্টো বৃত্তির টাকা এনে দুপুর বাবা’র হাতে দিতো। সেই রুপে লাবন্য ছড়ানো দুপুরের জন্য সকলের পছন্দ করা পাত্র দেখতে কালো। শুধু বুঝি কালো? সে ভীষণ কালো। দুপুর হিংসে করে না। না আছে অহংকার। শুধু ঐ যে, মানুষের মন যেটা না চাইতেও মাঝেমধ্যে মানতে চায় না দুপুরের ক্ষেত্রেও তাই।
কালো দেখতে ছেলেটার যথেষ্ট গুনগান সে শুনে আসছে সে একটা সপ্তাহ যাবৎ। তার মন কিঞ্চিৎ সায়ও জানিয়েছিলো তাকে। আকাশ পানে তাকিয়ে দুপুর তাকে নিয়ে কদাচিৎ চিন্তাও করেছিলো। ভেবেছিলো তাকে জিগ্যেস করবে,

— এই যে মিষ্টার দুপুরের বর, আপনার কি দুপুর পছন্দ?

লোকটা তখন নিশ্চিত চমকাতো। ভাবতো কোন দুপুরের কথা জিগ্যেস করছে তার বউ তাকে। নিজের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এই সুন্দরী দুপুর নাকি বাইরের খড়খড়ে রোদময় এই দুপুর?
তার বিভ্রান্ত ভাবখানা দেখে দুপুর মনে মনে মজা পেতো। আহা! মানুষটাকে এভাবে চিন্তায় ফেলা মোটেও উচিত হয় নি তার কিন্তু দুপুর কি করবে? তার মজা লাগে কাউকে বিভ্রান্ত করে দিতে।

বাবা’র কথায় দুপুরের ভাবনায় ইতি টানে দুপুর। বাবা ওর পাশে বসেন। মাথায় হাত রাখেন। নরম স্বরে বলার চেষ্টা করলেন,

— শাহজেব ভালো ছেলে আম্মু।

— আমি মানতে পারছি না আব্বু।

দুপুর সরল কণ্ঠে উত্তর দেয়। বাবা এবারেও বুঝানোর ভঙ্গিতে শুধালেন,

— আমরা কখনো কখনো মানতে পারি না আম্মু। সেটা কিন্তু এমন নয় যে আমরা চেষ্টা করলেও মানতে পারব না। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই পৃথিবীতে। জীবন মানেই মানিয়ে নেয়া। মানিয়ে এবং মেনেই চলতে হয় আমাদের।

— তাই বলে আমার সারাজীবনের জন্য এমন একটা জায়গায় ঠেলে দিবে যেখানে আমি দম বন্ধ হয়ে মা’রা যাব?

— আশ্চর্য! তুমি এটা কেন ভাবছো আমরা তোমাকে খারাপ জায়গায় দিচ্ছি?

— তাহলে কি ভাববো আব্বু?

বাবা’র কণ্ঠ ভারী হলো। দুপুর থমকালো। মাথা নিচু করে নিলো। সায়রা ভাইঝির পাশে বসে। মাথায় হাত রাখে। বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

— ভাইয়া, একটু শান্ত হয়ে বুঝাও।

— সায়রা, তুমি কি দেখেছো আমি সাথে রাগ করে কথা বলছি।

বলেই তাকালেন স্ত্রী’র পানে। গম্ভীর কণ্ঠে শুধু বললেন,

— আল্লাহ দুই মেয়ে দিয়েছেন৷ বাবা হিসেবে দায়িত্ব পালার। আমি আল্লাহ’র রহমতে দুই জান্নাত বড় করেছি। একজনের বিয়ে দিয়েছি৷ আরেকজন বাকি। তাদের নিজেদের বিবেক আছে। বুদ্ধি আছে। সিদ্ধান্ত যদি নিজেরা নিতে পারে তাহলে নিক। আমায় শুধু জানিয়ে দিলেই হবে।

বলেই উঠে যেতে নিলেন ভদ্রলোক। দুপুর ঝট করে পেছন থেকে বাবা’কে জড়িয়ে ধরে। সে কাঁদে না। ফুপায় না। বাবা’র সাদা পাতলা পাঞ্জাবিটা মুঠোয় পুরে যার দরুন কুঁচকে যায় তা৷ দুপুর মিনিট দুই এভাবেই থাকে। তার বাবা তার প্রিয়। শুধু বলে,

— কাল তাহলে আসতে বলো।

— বলছো?

— বলছি।

— আব্বু জোর করছি?

— উহু।

— ইমোশনাল হয়ে যাও নি তো?

— তুমি তো ইমোশনাল করো নি আব্বু বরং সত্যি বলেছো।

— তুমি চাইলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে ভাব।

— আমি কি এতিম আব্বু? নিজের জন্য এতদিন যখন ভাবি নি তখন এখনও ভাববো না। তুমি আছো তো।

— কাল তাহলে কখন আসতে বলব? কাজ আছে তোমার?

— আছে। দুপুরে আসতে বলো। বিকেলে ঘুমাব একটু।

— ক্লাস আছে?

দুপুর মর্মাহত হলো। তাকালো বাবা’র দিকে। ভদ্রলোক চমকে উঠলেন। মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। দুপুর বাবা’কে ছেড়ে দিলো। স্ত্রী’কে চোখের ইশারায় ডাকলেন তিনি। মা-বাবা বেরিয়ে যেতেই দুপুর তাকালো সায়রা’র দিকে। সায়রা ভাইঝি’কে টেনে কাছে বসালো। দুই গালে হাত দিয়ে জিগ্যেস করলো,

— তুই মন থেকে চাইছিস ওনারা আসুক?

— আসুক।

— খারাপ লাগবে না তোর?

— নাহ।

— দুপু?

— ফুপি, আমরা তো মানুষ। সামাজিক জীব৷ হতেও পারে তাকে সরাসরি দেখে আমার পছন্দ হলো। আবার এটাও কিন্তু হতে পারে আমাকে দেখে তাদের পছন্দ না হলো। চান্স ইজ ফিফটি-ফিফটি।

সায়রা ফিসফিস করে বলে,

— পছন্দ আছে কেউ?

— হু।

_______________________

সকাল থেকে ‘কমলা রোদ’ বাড়ীতে আয়োজন চলমান৷ বাড়ীর মূল ফটক বন্ধ। ছাদের গেট বন্ধ। গেটটা খুলতে বড্ড বিরক্ত লাগে দুপুরের। ক্যাট ক্যাট ক্যাট করে শব্দ করে। দাঁতে কেমন এক কিড়মিড় অনুভব হয় তখন৷ মাথাটা চট করে ধরে যায়। এই লোহার গেটটা তার অপছন্দের। কেউ যাতে টের না পায় তাই বাড়ীতে যা হচ্ছে তা ঘরোয়া ভাবে। এই তো মা-বাবা, ফুপি আর দাদী। সাথে শুধু চাচি এসেছে। চাচা আসবে দুপুরে। তাদের আবার ছোট্ট পিচ্চি আছে। সেটাকে দেখলেই দুপুর গাল দুটো টেনে দেয়। মটকু একটা।

বিছানা থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে দুপুর। ভোর কাটছে মাত্র। বাড়ীতে কাজ শুরু হয়েছে বুঝা যাচ্ছে। তারা কি আজ দুপুর’কে প্যাকেট করে বর পক্ষের হাতে ধরিয়ে দিবে কি না তাতে ঢের সন্দেহ আছে দুপুরের। বিছানা জুড়ে ছড়ানো তার হাঁটু সমান চুল। বাবা খুব যত্নে বড় করেছে এগুলো। দুপুরের আবার অতশত শখ নেই। চুলগুলো গুছিয়ে দুটো গিট দিলো দুপুর। বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করতে করতে আয়নায় নিজেকে দেখলো ও। ফর্সা একখানা মুখ যার সবটা জুড়ে মায়া। দুপুরের নিজেরই মায়া লাগে নিজের উপর। তার কপালে কি আছে আজ সে জানে না। শুধু জানে এক কালো রঙা লোক আসবে আজ যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তার পরিবার। চোখে কম দেখা দাদীও কি অবলীলায় বলে দিলো ছেলে নাকি সোনা’র ছেলে। দুপুরের কি কাজ সেই সোনা দিয়ে? সোনা’র যে দাম আজকাল। লাখে ছোঁয়া যাচ্ছে না। দুপুর মাটির মানুষ। তার জন্য একটা মাটিতে গড়া বর হলেই তো হচ্ছিলো।

— দুপু? দুপু দরজা খোল সোনা।

সায়রা ডাকছে। দুপুর মুখে ব্রাশ নিয়ে বেরিয়ে এলো। সায়রার হাতে বাটি। তাতে হলুদ আর মুলতানি মাটির মিশ্রণ সাথে নিশ্চিত গোলাপ জল আছে তাই তো এমন অদ্ভুত ঘ্রাণ বের হচ্ছে। সায়রা ওকে ঠেলে ঢুকলো ভেতরে। দুপুরের দিকে তাকিয়ে বললো,

— দাঁতে দুটো ঘঁষা দিয়ে কুলি করে আয় আম্মু। ফাস্ট।

— কেন?

— ইশরে, দুপুর! মুখ দিয়ে তোর ফ্যানা বেরিয়ে যাচ্ছে। যা না রে মা।

দুপুর গেলো। কুলি করে পানি দিয়ে মুখটা ধুঁয়ে এলো। এত সুন্দর তয়লা থাকা সত্ত্বেও মুখটা মুছলো ফুপু’র ওরনা দিয়ে। সায়রা আলমারি খুলে কিছু করছিলো। কথায় কথায় বললো,

— বিয়ের পর ওরনা পাবি কোথায় মুখ মুছতে?

— জামাই এর লুঙ্গি দিয়ে মুছব।

— তাও তয়লা নিবি না?

— না।

— আশ্চর্য এক সৃষ্টি তুই সৃষ্টিকর্তার।

দুপুর কথা বললো না। বাইরে যেতে নিলো। ওমনিই দেখলো ওর মা হুরমুর করে ঢুকছে। হাতে প্লেট। তা ভর্তি ভাত আর মুরগির ঝোল করা মাংস। দুই টুকরো আলুও আছে। দুপুর শুধু মুখ খুলেছিলো বলতে যে সে সকাল সকাল ভাত খাবে না কিন্তু কথাটুকু তার গলা দিয়ে উঠে আর ঠোঁটে এলো না। খোলা মুখে মা ভাত ঢুকিয়ে দিলো। ভাবী আর ননদ কথা বলছে তখন। তাদের ভেতর ভেতর সামান্য আতঙ্ক। দুপুর ঠোঁট কামড়ে তাকালো। বিমর্ষ হলো সে। দৃষ্টি দিলো জানালর বাইরে। তার বারান্দায় থাকা অলকানন্দা গাছে দুটো চড়ুই বসেছে। তারা প্রায়ই আসে। দুপুরের সাথে সংসারের গল্প করে। দুপুর শুনে। শলাপরামর্শ করে।
.
দুপুর’কে পরানো হলো এক খয়েরী সুতির শাড়ী। সামান্যতম প্রসাধনী দেখা হলো না। না একটু কাজল আর না একটু লিপস্টিক। সে জন্মগত সৌন্দর্যের আধীকারি৷ তার মায়া মায়া মুখটাই যেন সমানের জনকে ঘায়েল করতে সফল। ঠিক বুক বরাবর তীর মা’রে যেন।
দুপুর’কে দেখতে এসেছে মাত্র চারজন। শাহজেব শাহরিয়ার এবং মা-বাবা সাথে চৌদ্দ বছরের এক ছেলে। ছেলের মামা নাকি আসবে কিন্তু সে আসতে পারছে না। রাস্তায় এই দুপুর বেলা অনেক জ্যাম। তারাও কষ্টেই এসেছে। মেয়ে দেখতে এই ভর দুপুরে অবশ্য কেউ আসে না। যেহেতু কনে পক্ষ বলেছে তাই তারা আর নিষেধ করে নি। ছবি দেখেই তাদের বিনাবাক্যে মেয়ে পছন্দ। তাদের শাহজেবে’র সাথে খুব করে মানাবে। এ যেন হাতে বানানো জুটি। এমন নানা কথা শোনা যাচ্ছে।
দুপুর’কে এনে তাদের সামনে বসানো হলো। দুপুর স্বভাবিক কণ্ঠে সালাম জানাতেই শাহজেবের মা এগিয়ে এসে ওর পাশে বসলেন। চিবুকে হাত রেখে মুখ তুলে দেখলেন। দুই গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

— মাশা আল্লাহ! এতো পরীর বাচ্চা।

চৌদ্দ বছরের ছেলেটা তখন বলে উঠলো,

— ভাবীর মা কি তাহলে পরী আম্মু? আর বাবা হলো জ্বীন।

ছেলের মাথায় চাটি দিলেন ভদ্রলোক। মৃদু হাসলো দুপুর। বললো,

— আমার আম্মু-আব্বু দু’জনই মানুষ। এই দেখো তাদের। আর আমিও মানুষ। ছুঁয়ে দেখো।

তিব্বি এগিয়ে এলো। হবু ভাবীর গা ঘেঁষে বসে হাতটা ধরলো। বললো,

— হ্যালো ভাবী। মাই সেল্ফ তাজদাড় সন অব মি.ওয়াজেদ। নিক নেইম তিব্বি। তাজদাড় ডাকাটা কষ্টকর তাই।

দুপুর হাসলো। ছেলেটাকে তার পছন্দ হয়েছে। কথা বলতে তার খুবই ভালোলাগে। এখন অবশ্য দুপুর মেপে মেপে কথা বলছে। মা বারবার বলেছে, বেশি কথা বলতে না।
কথার ফাঁকে দুপুর হঠাৎ তাকালো। একদমই হঠাৎ তার দৃষ্টি গিয়েছিলো সম্মুখে কোণার সোফায়। সেকেন্ড অথবা ন্যানো সেকেন্ডের ব্যবধানে দুপুর নজর সরিয়ে ফেলেছে। কালো দেখতে লোকটা বসা। ঝাপসা দেখলো তো দুপুর। মানুষটা কালো। এমন না দুপুর রঙ দিয়ে মানুষ বিচার করে কিন্তু… কিন্তু তো রয়ে যায়। এই কিন্তু প্রকৃতির কিন্তু। এত সুন্দরমুখো এক মেয়ে যার জীবনে ত্রুটির গগনা খুবই কম। বাবা’র হাতে মানুষ হয়েছে সে। মা তো তেমন করে পালতেই পারলো না তাকে। বড় আপা’কে পালতে পালতে মা দুপুরকে সামলাতে পারতো না৷
আপাও আজ আসতে পারলো না। সে থাকে চট্টগ্রাম। দুলাভাই এর পোস্টিং সেখানে। চাইলেই তো আর আসা যায় না।
দুপুরের মন খারাপ হলো। ভীষণ মন খারাপ। বাইরের খড়খড়া রোদ দেখলে মানুষের যেমন মন খারাপ হয় দুপুরের মন খারাপ আজ সেই মাত্রাও ছাড়িয়ে গিয়েছে। একদম শেষ প্রান্তে গিয়েছে। কালো মানিক তার পছন্দ হয় নি। নিজের মনের ভাবনায় চমকালো দুপুর নিজেই। ‘কালো মানিক’ শব্দটা বার দুই উচ্চারণ করলো মনে মনে।
.
— তুমি কেন রাজি না আম্মু?

দুপুর মাথা নিচু করে রাখলো। শাহজেবে’র মা ওর হাত দুটো ধরলো। ধরা গলায় প্রশ্ন করলো,

— আমার ছেলে কালো বলে?

দুপুর কথা বলে না। নীরবতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে তিনি সবচাইতে দূর্বল জায়গায় টোকা দিলেন। শুধালেন,

— কুরআনের আক্ষরও তো কালো মা৷ কুরআন কি তোমার প্রিয় না? সেই আয়াত কি তুমি ছুঁয়ে দেখো না? কুরআন কি বুকে নাও না?

দুপুর চমকালো। ভরকালো। প্রচুর ভাবে আহত গলায় ডাকলো,

— আন্টি?

— যদি আল্লাহর কালো করআন’কে তুমি ভালোবাসতে পারো তাহলে আল্লাহ’র সৃষ্টি আমার কালো ছেলেকে কেন নয়?

দুপুর এই দফায় একদম চুপ। তার কথা বলার মুখ নেই। ড্রয়িং রুমে তখন পুরুষরা কথা বলছে। কাজি এসেছে। দুপুরের বাবা এবং শাহজেবের বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আজই শুভ কাজ সারবেন। শুক্রবার আছে। আসরের আগে আগে কাজ সেরে দু’জন এত বছরের বন্ধুত্বকে সম্পর্কে বদলাবেন। তিব্বি ভাইয়ের কানে কানে বললো,

— ভাইয়া, আজই সানাই বাজবে তাহলে।

শাহজেব তখনও চুপ৷ মাঝেমধ্যে শুধু বাবা আর দুপুরের বাবা’র সাথে কথা বলছে। তাদের আলাপ আলোচনা খুব স্বাভাবিক।
সায়রা দুপুর’কে নিয়ে এলো। বসানো হলো সম্মুখীন করে। কাজি সাহেব দরকারী কাজ সারলেন। দুই পক্ষ হতে মত নিলেন। এই তো, পাঁচ মিনিট লাগলো বোধহয় বিয়েটা হতো। এক সুন্দরী কন্যার হাতবদল হলো এক কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের সাথে। দুপুরের মনে হলো বিয়েটা ততটা কঠিন কিছু না। এই তো মাত্র পাঁচ মিনিট লাগলো তাদের।
দুপুর দেখলো বাবা এতক্ষণ যাবৎ ওর ধরে রাখা হাত ছাড়িয়ে শাহজেবের বাবা’র সাথে বুকে বুক মিলালেন। শাহজেবকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,

— এই উপকার কখনো ভুলব না আব্বু।

শাহজেব মৃদু হাসলো। মানুষ কতটা সুন্দর করে হাসে, ঠিক ততটাই সুন্দর এই হাসি। ও শুধু বললো,

— দুপুর দেয়ার জন্য আমি আপনার নিকট চিরকৃতজ্ঞ আঙ্কেল।

সায়রা মিষ্টি আনলো। তার মাথাটা এখন কিছুটা হালকা। সে তো ভেবেছিলো দুপুর কাউকে পছন্দ করে। কাল কি ভয়ই না পেলো যখন দুপুর বললো তার পছন্দ আছে। সায়রা যখন জিজ্ঞেস করলো কে তখন দুপুর একে একে তার মা-বাবা, দাদী আর সায়রা’র নামই নিলো।
শাহজেবে’র বাবা তখন বললো,

— ওরা একটু কথা কথা বলুক।

দুপুর ভাবলো তার এখন কি ই বা দরকার? তবুও সায়রা ওদের ছাদে পাঠালো। লোহার গেটটা ক্যাট করে শব্দ করতেই দুপুরের মাথা ধরে গেলো। কুঁচি সামলে ভেতরে যেতেই শাহজেব দেখলো কড়া রোদ উঠেছে। দুপুর তার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো,

— আপনার কি পছন্দ?

— দুপুর। আমার এই দুপুর পছন্দ।

#চলবে……