#সে_জন_সোনা_চিনে_না
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৩
ভোরের আলো তখনও ফুটে নি। বাইরে কড়া নাড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। স্বপ্নে দুপুর দেখলো শাহ তাকে ধাক্কা দিচ্ছে। দুপুর হেলে পড়ছে। হঠাৎ শব্দটা বাড়লো, দুপুর ফট করে চোখ খুললো। তার রুমের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে কেউ। দুপুর ভাবলো হয়তো মা এসেছে। দাদীর কিছু হলো কি না, নাকি ফুপি চলে এলো। এসব ভাবনার মাঝেই শব্দটা বন্ধ হয়ে আসে। দুপুর উঠবে তখনই কেউ বাইরে থেকে লকটা খুলে অন্ধকারে ভেতরে ঢুকে। দরজা বন্ধ করে ভেতর থেকে। দুপুর থম ধরে বসে থাকে। অন্ধকারে যদিও দেখা যাচ্ছে না কে এসেছে কিন্তু দুপুর তো চিনে, জানে এটা কে। তামজিদের উপস্থিতি বুঝতেই ওর মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে। দুপুর মূর্তি বনে যায়। মানব মূর্তিটা তখন এগিয়ে আসে বিছানার কাছে। বসে একদম মুখোমুখি। ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে তাকায় দুপুরের দিকে। আলো চোখে পড়তেই চোখ কুঁচকায় দুপুর। তামজিদ মনোযোগ দিয়ে দেখে ওকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে পুতুলের মতো দেখতে মেয়েটাকে। ছোট্ট একটা মুখ অথচ মায়া ঢালা তাতে। ঘুম যেন এখনও তাকে ছেড়ে যায় নি। তামজিদ আস্তে করে হাত বাড়ায়। ওর কপাল ছুঁয়ে কুঁচকানো ভাবটা টানটান করে নিজ হাতে। নিজের সেই পরিচিত কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,
— ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম পাখি?
দুপুর চুপ করে বসা। তামজিদ তো মালোশিয়া ছিলো। কখন ফিরলো, কেন ফিরলো দুপুর বুঝে না। তামজিদ এবার দুপুরে নরম গালটায় হাত রাখে। আদর মিশ্রিত গলায় বলে,
— বাসায় যাই নি এখনও দুপুর। তোমার কথা খুব মনে পরছিলো। সেদিন কথা বললে না তো। কতবার ফোন দিলাম। ভিডিও কলে চোখ তুলো না। আমার বুকে হাত দিয়ে দেখো তো একটাবার দুপুর কেমন উত্তপ্ত হয়ে আছে। তুমি যদি শীতলতা না ছড়াও তাহলে ম রে যাব না আমি বলো?
তামজিদ চায় নরম পুতুলটাকে বুকে জড়াতে। কপালে ছোট্ট উষ্ণ স্পর্শ দিতে। নিজের মাঝে সারাটা জীবন রেখে দিতে অথচ মেয়েটা রাজিই হয় না৷ এবার সেও ছাড়বে না। ত্রিশের কোঠায় বয়স ঠেকেছে। এখন বিয়েটা না করলেই নয় তারমধ্য ছোট ভাই বিয়ে সেড়ে ফেলেছে এখন পালা তামজিদে’র। দুপুরকে বুঝিয়ে, শুনিয়ে রাজি করাতে হবে। তার তো বুঝতে হবে তামজিদ তাকে কতটা ভালোবাসে। নিজের ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিয়ে তামজিদ ওর কপালে চুমু খেতেই দুপুর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। চোখ দুটো বড় বড় করে হাঁপাতে লাগলো। এই কপালে তার শাহ চুমু দেয়। শাহ এর হক তো দুপুর নষ্ট হতে দিবে না। না দিবে কাউকে নষ্ট করতে। দুই হাতে কপাল ডলে দুপুর। কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে থাকে,
— ফুপি….ফুপি?
সবসময় ফুপিকে ডাকা মেয়েটা ভুলেই গেলো ফুপি তো নেই। তামজিদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আগে কি কপালে সে চুমু দেয় নি? দিয়েছে তো? তখন তো ভয়ে গুটিয়ে থাকতো তাহলে আজ কেন কাঁদলো? তামজিদ উঠে কাছে আসতে চায়। দুপুর সরে দাঁড়ায়। মেয়েটা এখন জোরে কাঁদছে। তামজিদ একটু পিছু হটলো। শান্ত করতে বললো,
— ইটস ফাইন দুপুর। আমি আগাচ্ছি না। তোমাকে দেখতে এলাম৷ ভেবেছিলাম সকালে বাসায় যাব। তুমি ঘুমাও এখন। কাম পাখি। বিছানায় এসো।
দুপুর এদিক ওদিক তাকালো। আরেকটু চেষ্টা করলো। ডাকলো বাবাকে কিন্তু লাভ তো হলো না৷ অত আস্তে ডাক দুই রুম পরে কি শোনা যায়? বাড়ির লকগুলো থেকে শুরু করে সব তালার চাবি তামজিদের কাছে আছে। যখন তখন ঢুকে যায়। শব্দহীনা সে সোজা হাজির হয়। তামজিদ দেখলো দুপুর দাঁড়িয়ে ঠাই। নিজেকে ঠান্ডা করে পুণরায় মুখ খুললো তবে এবার কিছুটা আদেশের স্বরে বললো,
— কাম ফাস্ট জান।
দুপুরে’র আত্মাটা গলায় আটকে এলো তখন। এগিয়ে এসে বিছানায় উঠে চুপ করে শুয়ে পরে ও। মাথায় হাত রাখে তামজিদ। আস্তে করে বলে,
— চোখ বন্ধ করো তো পাখি। ঘুমটা আমি ভাঙালাম তাহলে দায়িত্ব নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে যাই।
দুপুর ঘুমালো মিনিট পাঁচে। তামজিদ তাকে দেখলো আরো দশ মিনিট। চোখের দেখায় মন ভরে না৷ এই সৌন্দর্য এই মোহ দেখে কাটানো যায় না৷ ছুঁয়ে দেখার শখ কাছে আসলে বাড়ে শতগুণ। তামজিদ যখন নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ তখন উঠে বেড়িয়ে যায়। আরেকটু সময় থাকলে অঘটন ঘটিয়ে ফেলতো সে। তামজিদ রুম থেকে বের হতেই চোখ খুলে দুপুর। ফোনট হাতে তুলে কাঁপা কাঁপা হাতে ডায়াল করল শাহজেব’কে। ওপাশ থেকে রিসিভ হলো দ্বিতীয় বারে। দুপুর কেঁদে উঠে ডাকলো,
— শাহ!
— দুপুর কাঁদছো কেন সোনা?
— আমাকে নিয়ে চলুন৷ আমি থাকব না তো এখানে। আমি কিন্তু কিছু করে ফেলব শাহ। আমার মন খারাপ। ভালো লাগছে না কিছু।
— মনটা কি খুব খারাপ আমার দুপুরের?
— হু, খুব।
— তাহলে তো কাজ ফেলে আসতেই হয়।
— আমার সত্যি খারাপ লাগছে শাহ। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আপনার ঘ্রাণ বুক ভরে না নিলে খারাপ লাগাটুকু কাটবে না৷
— আমার ঘ্রাণও চিনে ফেলেছো দেখছি?
— তো চিনব না?
— তা তো চিনবেই। আর কি চিনলে বলো তো?
— কি চিনব৷ পুরো শাহটাকেই তো চিনি।
— মানুষ চেনা বুঝি এত সহজ? হাতে গুনে কয় রাত ছিলে আমার বুকে দুপুর? তাতেই চিনে ফেললে?
— আমি চিনেছি তো আপনাকে শাহ।
শাহ কিছুক্ষণ চুপ রইলো। দুপুর তখন শান্ত কিছুটা। আস্তে ধীরে দুপুর বললো,
— আপনার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।
— বউ তো এমনই হওয়া দরকার উচিত দুপুর। রোজ সকালে কর্কশ এলার্মের বদলে তোমার মোহনীয় গলায় শাহ ডাক শোনা তো আমার ভাগ্য।
— আমি খুব জ্বালাই আপনাকে শাহ।
— খুব না তো।
— একটু একটু?
— উউহু।
— তাহলে?
— আপনি আমাকে অনেক জ্বালান দুপুর। খুব করে জ্বালান৷ এই যে আমি কালো চাঁদ বলে আমার কয়লা হওয়া বুকটা দেখা যায় না নাহয় তো আপনি দেখতে পেতেন আপনার বিরহে আমি কতটা ঝলসে আছি।
— তাহলে কাছে নিন।
— নিব।
— কখন?
— এখন।
___________________________
সায়রা’র ঘুমন্ত মুখটার মায়া টুকু খুব গভীর ভাবে দেখছে তাসরিফ। মুখটা বাড়িয়ে উষ্ণ এক আদর দেয় স্ত্রী’কে। নিজের মাথাটা রাখে তার বুকে। আবেশে চোখ বুজে আসে তার। দুই হাতে জড়িয়ে রাখে নিজেকে সায়রা’র সাথে। গলার দিকে চোখটা যেতেই বুকটা আঁতকে উঠে। দাগটা দেখলেই গা শিউড়ে উঠে তার। নিজের সবটুকু আদর সায়রা’কে দিয়ে টেনে নেয় বুকে। আস্তে করে বলে,
— আপনাকে যে আমি কতটা চাই য়রা তা যদি বুঝতেন তাহলে কখনো নিজেকে শেষ করার কথা ভাবতেন না৷ আমি এখনও ভুলতে পারছি না য়রা। কখনোই ভুলব না।
সায়রা কথা বলে না। আস্তে করে ওকে ছাড়িয়ে উঠতে চায়। তাসরিফ ওর হাত ধরে বলে,
— কোথায় যাচ্ছেন য়রা?
শান্ত একটা চাহনি দিতেই হাতটা ছাড়ে তাসরিফ। বাথরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসে সায়রা। দরজা জানালা সব খুলে বারান্দায় যেতেই তাসরিফ বিছানা থেকে বলে,
— চা খাবেন য়রা?
সায়রা কথা বলে না। তাসরিফে’র খুব মন খারাপ হলো। বিয়ের দুটো রাত পার হলো অথচ সায়রা’র মুখ থেকে তেমন কিছু ই বের হচ্ছে না। ভালো মন্দ কোন কথাই বলছে না৷ তাসরিফে’র খারাপ লাগা আরেকটু বাড়ে যখন সায়রা কোন প্রশ্নেরও উত্তর দেয় না। নিজেই উঠে বিছানা পরিপাটি করে গোছায় তাসরিফ।
সোফা থেকে টিশার্ট নিয়ে গায়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। রান্নাঘর তখন নীরব। চা কখনো তেমন করা হয় নি। খুব রাগ হলো নিজের উপর। বউকে চা অফার করার আগে ভাবা উচিত ছিলো। কফি অফার করা যেতো। দুধে ঢাললেই মামলা খতম কিন্তু চা জিনিসটা ঝামেলার। এই মূহুর্তে পৃথিবীর সবচাইতে জটিল প্রসেস চা ই মনে হচ্ছে তাসরিফে’র। তবুও চেষ্টা কিন্তু সে করলো কিন্তু চা পাতা পেলো না। অগত্যা ইজ্জত বাঁচাতে দুই কাপ কফিই করা হলো। সাথে নিলো বিস্কুট। বউটা খায় না ঠিক মতো। তাসরিফ চাইছে খুব খেয়াল রাখতে। য়রাটাকে যদি সারাটাক্ষন পালা যেতো তাহলে কাজ কাম ছেড়ে তাসরিফ তাই করতো। পেলে নিলো। তার যে কত শখ, আহ্লাদ, ইচ্ছে য়রা’কে ঘিরে তা তাসরিফ কাউকে বলতে পারে না৷ য়রাটাকেও না। তার ইচ্ছে বউটার চুল আঁচড়ে দেয়া, খোঁপায় ফুল গুজার থেকেও অদম্য ইচ্ছে খোঁপা পেঁচিয়ে দেয়া। আঁচলটা নিজ হাতে গুছিয়ে দেয়া। মাঝেমধ্যে তার হাটুতে ভর দেয়া। এই য়রাটার মাঝে কি যে দেখলো তাসরিফ, দেখেই আটকে গেলো। তিনটা বছর লাগলো অসাধ্য সাধন করতে। উপায়টা যদিও ঠিক ছিলো না কিন্তু কেউ তো বলেছিলো, ভালোবাসায় সব জায়েজ। তাসরিফ নাহয় অজানা ব্যক্তির কথাই মানলো।
তামজিদকে বাসায় ঢুকতে দেখে তাসরিফ অবাক হয়ে ছুটে এলো। দুই হাতে ভাইকে ঝাপ্টে ধরে তামজিদ। তাসরিফ অবাক হয়ে বলে,
— এত তারাতাড়ি? সকাল এগারোটায় না ল্যান্ড করবে বললে ভাই? আমি তো তাই ভোরে উঠলাম তোমায় আনতে যাব।
— রাতেই ল্যান্ড করেছিলাম।
— কোথায় ছিলে?
— তোর ভাবীর কাছে।
তাসরিফ ভাইকে ছাড়লো। তার মুখে দারুণ উচ্ছাস। দুপুরের কথা শুনে বুকটা হালকা হলো। এ-র মানে যেখানেই গিয়েছিলো ফিরে এসেছে। তাসরিফ খুব ভয়ে ছিলো বিষয়টা নিয়ে। তামজিদ জিজ্ঞেস করে,
— সায়রা ভালো আছে এখন?
নত মস্তিষ্কে উত্তর করে,
— জ্বি ভাই।
— বউ হয় খুব প্রিসিয়াস বুঝলি। তাদের খুব যত্নে রাখা দরকার। এদিক ওদিক হলেই মুশকিল। তোর উচিত ছিলো খতিয়ে দেখা, এমন কি হলো যে সায়রা’র মতো শক্ত মেয়ে এহেন সিদ্ধান্ত নেয়?
— ভাই আসলে…..
— বাহানা না তাসরিফ৷ বউয়ের অসম্মান হবে এমন বাসায় তো বউ ই রাখা উচিত না৷ পুরুষ না তুই? সামঞ্জস্য করা শিখ। তার আগে রুমে যা। সায়রা নিশ্চিত অপেক্ষা করছে। পরে কথা হবে। আ’ম টায়ার্ড।
তামজিদ যেতেই তাসরিফও রুমে ঢুকে। বারান্দায় যেতেই দেখে সায়রা এক মনে একটা কুকুর দেখছে যেটা গেটের দিকে শুয়ে আছে। তাসরিফ গলা খেঁকালো৷ দৃষ্টি সরালো না সায়রা। তাসরিফ রাউন্ড টেবিলে ট্রে রেখে সায়রা’র হাতটা ধরে বসালো। এক কাপ কফি দিয়ে বললো,
— চা করতে পারলাম না য়রা। চা-পাতা পাই না বুঝলে? কি লজ্জার বিষয় চা অফার করে কফি আনলাম৷
— তোমার লজ্জাও আছে?
— নেই বলছো?
সায়রা হেলা করলো। তাসরিফ বসলো হাঁটু ভেঙে সায়রার পায়ের কাছে। সায়রার কোলে রাখলো বিস্কুটের প্লেট। অপূর্ব, অপরূপ এক দৃশ্য। ক’জন স্বামী এমন হয় সায়রা জানে না অথচ তার স্বামী নামক তিন বছরের ছোট তাসরিফ তার হাঁটুতে হেলান দিয়ে কফি খাচ্ছে। সায়রা উদাস ভঙ্গিতে বাইরে তাকায়। গলা দিয়ে গরম কফিটা যাওয়াতে ভালো লাগছে তার। প্রচুর ব্যথা ছিলো।
.
তামজিদ শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে রইলো ঘন্টা খানিক। তার তীক্ষ্ণ চোখ জোরা ভুল দেখে নি। দুপুরের মাঝে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তার চোখের ভাষা, বাচনভঙ্গি, অঙ্গ প্রত্যাঙ্গ সবটায় আমুল পরিবর্তন এসেছে। এসব দেখা লাগে না তামজিদে’র। এক ঝলকে বুঝে যায় সে কিন্তু ঘরে বসে থেকে এই পরিবর্তন কি করে আসবে? তামজিদ আজ বিকেলে আরেকবার যাবে। দুপুরের সাথে বিয়ের বিষয়টা নিয়ে সরাসরি আলাপ দরকার। মিরাজ সাহেব’কে ততটা চাপ দেয়া যাবে না৷ অসুস্থ মানুষ, কিছু হয়ে গেলে সমস্যা।
তামজিদ কোমড়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসে। খাটের উপর বিশাল বড় দুপুরের ছবি টানানো। তামজিদ লজ্জা পেলো না বরং বললো,
— এভাবে দেখো না জান। খু ন হয়ে যাব আমি। তোমার এই সৌন্দর্য আমাকে মে রে দিবে একদিন। ম রার আগে হলেও তোমাকে আমার চাই দুপুর। একদিনের জন্য হলেও আমার বউ তোমাকে হতেই হবে। এত ভালোবাসা এভাবে পায়ে ঠেলো না। পৃথিবীর ভর্তি ঠক প্রতারক। তোমাকে খুব আগলে নিজের কাছে রাখতে চাই আমি। আমার এত ভালোবাসা অবহেলা করো না জান। তোমার চোখের পানি দেখতে পারি না বলে আজও চলে এলাম৷ এভাবে আর কত? কত দুপুর আমি একা রইব বলো তো?
#চলবে…..
#সে_জন_সোনা_চিনে_না
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৪
— জান, তুমি কি করছো এসব? লজ্জা টজ্জা কিছু পাচ্ছো না?
ইফাতের কথায় ভ্রু উঁচু করে সন্ধ্যা। ইফাত নিচের দিকে তাকিয়ে চাপা হাসে। আস্তে করে বলে,
— এভাবে তাকায় কেউ? লজ্জা পাই তো।
— ইফাত!
— হ্যাঁ হ্যাঁ।
— ভেজা কাপড় দাও বলছি।
— আমি তো…
— এখন কিন্তু ময়লা কাপড় তোমার মাথায় দিব আমি।
ভয়ে এবার ইফাত বউয়ের হাতে কাপড় দিলো। সন্ধ্যা আজ ঘরবাড়ী ঝাড়া ঝাড়ি করছে। ফ্যান মোছার সময়ই যখন উঁচু হলো তখন থেকেই ইফাত নামক ভীতু লোকটা দুষ্টামি শুরু করেছে। সন্ধ্যা ফ্যান মুছতেই ইফাত ওর হাত ধরে নামালো। ঘরটা নিজে ঝাড়ু দিতে দিতে বললো,
— গোসলে ঢুকে যাও ফাস্ট ফাস্ট। আমি আজ রান্না করব।
— ইফাত ঝামেলা করবে না একদম।
— কি করেছি?
— তুমি রাঁধবে কেন? বউ নেই তোমার? ব্যাচেলর তুমি? নাকি প্রেমিকা আছে যে সে রান্না করে রেখেছে বাইরে?
রাগে গজরাতে গজরাতে বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে। রান্নাঘর থেকে তখন হাঁড়িপাতিলের ঝনঝন শব্দে ঘরবাড়ি মাতোয়ারা হচ্ছে। ইফাত মুচকি মুচকি হাসছে। সুন্দর মতো ঝাড়ু দিচ্ছে সে। সন্ধ্যা আবার ময়লা দেখতে পারে না। তাছাড়াও কারণ আছে। আপাতত বউকে ঘাটা যাবে না৷ সে রেগে আছে। আগে রাগ কমুক তারপর বিড়াল পায়ে যাবে ইফাত।
পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় সন্ধ্যা রাগী স্বরে বললো,
— সরো।
— উহুম।
— ঘেমে আছি না? ছাড়ো।
— আমিও তো ঘেমে।
— আমার রাগ লাগছে কিন্তু।
— আমরা কি তাহলে একটা ঠান্ডা শাওয়ার নিব?
— ইফাত আমার হাতের খুন্তি দেখেছো। চটাস করে দুটো পড়বে তোমার পিঠে।
— পড়ুক না। সমস্যা তো নেই।
গ্যাসের চুলাটা বন্ধ করে ইফাত। পাজা কোলে তুলে সন্ধ্যাকে। তাকিয়ে রয় নারীটির চোখের দিকে। সন্ধ্যা চুপ হয়ে যায়। আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,
— এত কি দেখো এই চোখে?
— তোমাকে দেখি।
— আর কত, হু?
— মন তো ভরে না৷
ইফাত গোসলখানায় ঢুকে গেলো।
.
চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে সন্ধ্যা বেরিয়ে এলো রান্নাঘরে। ইফাত সালাদ কাটছে। দু’জন মিলে আজ খিচুড়ি রাঁধলো। চট্টগ্রামে ভালোই বৃষ্টি হচ্ছে। ইফাত আজ ভালোই বায়না ধরলো। নিজ হাতে বউকে খাওয়াবে। সন্ধ্যা চুপচাপ খেলো। তার মন ভীষণ খারাপ হলো আজ। কেন তাকে এত ভালো হতে হবে? আজ-কাল কোন পুরুষ এত ভালো হয়? অথচ এত বছর ধরে ওদের সন্তান হচ্ছে না তা নিয়ে সন্ধ্যা হতাশায় ভুগে। ইফাত কি করে? সে উল্টো স্বান্তনার বাণী শোনায়। ইফাতের বুকে মাথা রেখে ক্লান্ত শ্বাস ফেলে সন্ধ্যা। ইফাত ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। খুব যত্নে চুলে হাত চালাতে চালাতে বললো,
— হুট করে এত কাজ করো না। অসুস্থ হয়ে যাবে।
— কিচ্ছু হবে না।
— বললেই হয় না সন্ধ্যা। তুমি যে নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো তাতে কি আমার কষ্ট হয় না? আমি তো তোমার বাইরের কেউ?
— ছিঃ, কিসব বলো।
— তাহলে বেরিয়ে আসো এসব থেকে।
— মানে?
— যখন বাবু হবার হবে। আল্লাহ খুশি হয়ে যখন দেবার দেবেন। তুমি এভাবে খাটাখাটুনি করে নিজেকে আর ক্লান্ত করবে না।
সন্ধ্যা চুপ করে রইলো। এরমধ্যে ডাক্তার দেখানো হয়েছিলো। ডাক্তার এবার সন্ধ্যাকে পরিশ্রম করতে বলেছে। শারীরিক কিছু ব্যায়াম দিয়েছেন। দু’জনকে একাকী সময় কাটাতে বলেছেন এবং মানষিক চাপ নিতে নিষেধ করেছেন। সেই থেকে সন্ধ্যা উঠে পড়ে কাজে লেগেছে। বাচ্চার জন্য পা গল হয়ে আছে। ওকে দেখে ইফাতের খারাপ লাগা আরেকটু করে ধাপে ধাপে বাড়ে।
সন্ধ্যা দুই হাতে ইফাতের গলা জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
— বাড়ী যেতে মন চাইছে।
— এখন তো ছুটি মেলাটা খুব মুশকিল।
— তাহলে থাক।
— খুব মন চাইছে?
— উহু। একটু একটু।
— তাহলে ব্যবস্থা করি?
— নাহ। ঈদের ছুটিতে যাব নে।
ইফাত ওর চুলে তখনও হাত বুলাচ্ছে। তার কাছে এই মানুষটা খুব আদরের। যত্নের।
_________________________
সারাদিন ঘর থেকে সায়রা’কে বের হতে দেখা যায় না। আজ দুই রাত পাড় হয়ে তিন দিন অথচ ও চুপচাপ রুমের আলো নিভিয়ে থাকে। পৃথিবীতে মানুষ গুলো হয় খুব এলোমেলো। এরা কি চায় তা জানে না। আবার মাঝেমধ্যে না চাওয়া কিছুতেও খুব সুখ খুঁজে পায়। কেউ কেউ আবার দুঃখ পেতে পছন্দ করে। তাদের চারপাশে সবসময় দুঃখ থাকে। সায়রা’র মনে হয় ও পৃথিবীতে এসেছে দুঃখময়ী হতে। এহেন শব্দের অর্থ তার জানা নেই কিন্তু নিজেকে তাই মনে হচ্ছে। কোন কিছুই তাকে ভাঙতে পারে নি কখনো। নরম মনটা নিয়ে খুব করে মাহমুদ খেললো তখন সায়রা গলে গলে পড়ছিলো মোমেন ন্যায়৷ কিশোরী হৃদয়ে ফুটছিলো কৃষ্ণচূড়া। লতাপাতা যেন তাকে আঁকড়ে ধরতো। চারপাশে প্রেম প্রেম গন্ধ। মাহমুদের সেই মুচকি এক টুকরো হাসি আর চোখের সেই অসামান্য চাহনি সবটাই যেন পা গল করে নাড়িয়ে দিতো কিশোরী হৃদয়। কেমন আমোদে-প্রমোদে দিনগুলো কাটতো। বাসায় মা সহ ভাই জেনে গেলেও কেউ আপত্তি তো করলো না। মাহমুদ তো টপার ছেলে৷ কে ই বা না করবে?
ফিনফিনে দেহের সেই তরুণী হৃদয়টা একদিন ভেঙে গেলো। চারপাশে ছড়িয়ে পড়লো সকল ভাঙাচোরা কাঁচ। মাহমুদ নেই। তার খোঁজ নেই, খবর নেই। সায়রা অপেক্ষা করে জানালা ধরে। চোখের কাজল ছুটলো, রাঙা ঠোঁটটা বিবর্ণ হলো। যত্নে থাকা চুলগুলো জটলায় ভরলো। অপেক্ষার রঙ হলো তখন গাঢ়। কালো, কুৎসিত এক রঙ৷
অন্ধকার ঠেলে আলো আসার কথা থাকলেও সায়রা’র ক্ষেত্রে তা হলো না। তাকে বরং মাহমুদ অন্ধকারে আরেকটু জোরেই ধাক্কা দিয়ে ফেললো। সায়রা তখন খাদে পড়লো। খবর এলো মাহমুদ বিয়ে করেছে। চাকরি পেতেই তার মা তার বিয়ে দিয়েছে। ছোট ছেলের বিয়েতে নাকি দেড়ী করতে চান নি ভদ্রমহিলা তাই তো ধরে বিয়ে দিলেন৷ সায়রা ভাবে, হয়তো জোর করে বিয়ে দিয়েছে। কসম-টসম দিলো কি না কে জানে কিন্তু পুরুষকে কি আর জোর করতে হয়? মাহমুদ খেলার ছলে খেলেছে অতঃপর নতুন পেয়ে পুরাতন ভুলেছে। সায়রা কিন্তু তখন ভাঙে নি বরং ভাঙা থেকেও নিজেকে গড়েছিলো কঠিন রূপে। সেই থেকে এতটা বছর বিয়ে নামক সম্পর্কে জড়ায় নি৷ কত প্রস্তাব, কত কথা, মানুষের বাকা চাহনি সবটাই সহ্য করেছে একা তবুও বিয়ে সে করে নি। দিন দিন নিজেকে কঠিন ইস্পাত করেছে। সেই কঠিন সায়রাকে বিয়ের রাতেই ম রতে হলো? উচিত তো ছিলো তরুণী সায়রা’র মরে যাওয়া কিন্তু ম রতে চাইছিলো এই ত্রিশ বছর বয়সী সায়রা।
একজন মানুষকে যখন ভাঙতে ভাঙতে সকলে ক্লান্ত তখন আর ভাঙার জন্য হাতুড়ি শাবল লাগে না বরং দুটো কটু কথাই যথেষ্ট। তার শাশুড়ী সেদিন যখন মহিলাদের সাথে তাকে নিয়ে নানান মুখোরোচক গল্পে মশগুল ছিলেন তখন সায়রা সেখানে কঠিন কথা শুনাতে চায়। শাশুড়ী তখন সায়রা’কে টেনে পাশের রুমে নেন। অপবাদ পুরোটাই দিলেন তার আর তার ভাইঝির উপর। মহিলার নোংরা কথায় যদিও সায়রা নামক মেয়েটার কষ্ট পাওয়ার কথা না কিন্তু সেদিন যেন সায়রা’র মনে হলো তার মরে যাওয়াটাই শ্রেয়। একসাথে কতগুলো মানুষ বেঁচে যেতো।
— য়রা?
চোখ ঘুরিয়ে তাকালো সায়রা। সারাদিন পর তাসরিফ’কে দেখা গেলো। ক্লান্ত পায়ে এসেই পাশে বসেছে ওর। সায়রা’র মনে হচ্ছে ছেলেটা বোকা। তার উচিত ছিলো কম বয়সী একটা মেয়ে বিয়ে করা। এই যে ক্লান্ত হয়ে ফিরলো, কপালে তাহলে ঠান্ডা পানি জুটতো। সায়রা এসব করবে না৷ তার কাছে স্বামী মানে তাসরিফ না৷ তার কল্পনায়ও না অথচ আজ যেন সবচাইতে বড় সত্যিই এটা যা সায়রা মানতে পারছে না।
তাসরিফ ওর গালে হাত রাখে। আস্তে ধীরে তা গলায় নামে। জিগ্যেস করে,
— ব্যথা আছে য়রা?
সায়রা উত্তর করে না। তাসরিফ নিজেই বলে,
— ভাবী ফিরেছে। আমি যদিও জানতে পারছি না কোথায় গিয়েছিলো। আপনি বললে ভালো হতো। ভাই এসেছে য়রা। ভাবীর সাথে দেখাও হয়েছে। সব ঠিক থাকলে শিঘ্রই বিয়ে হবে। আপনার তখন আর একা একা লাগবে না।
সায়রা’র গা গুলিয়ে এলো হঠাৎ। দুপুর কেন এসেছে? ওকে কেন এখনই ফিরতে হলো? যা হওয়ার এবার হয়ে যেতো। সায়রা এই বাড়ীতেই আছে। কি আর করতো? মে রেই নাহয় ফেলতো। এক ল্যাটাতো চুকে যেতো। গলায় তখনও তাসরিফে’র হাতটা এলোমেলো ঘুরছে। দাগটা হালকা হচ্ছে না। তাসরিফ বললো,
— আপনি ঘামছেন কেন য়রা?
সায়রা এবারেও চুপ। তাসরিফ ওর গালটায় হাত রেখে বললো,
— কিছু কি লুকাচ্ছেন য়রা?
— না।
— আপনি এভাবে চুপ থাকলে আমার খারাপ লাগে য়রা। কথা কি বলাই যাবে না৷
— খুব বিরক্ত হচ্ছি৷
তাসরিফ গলা থেকে হাত সরিয়ে সায়রা’র একটা হাত ধরে৷ নিজের গালে রাখে তা। তালুতে চুমু দিয়ে বলে,
— বিরক্ত হন য়রা তবুও কথা বলুন। আমার ভালো লাগে না৷ আমরা স্বাভাবিক নেই সবটা।
তাচ্ছিল্য হাসে সায়রা। বলে,
— গু লির ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছো অথচ বলছো স্বাভাবিক নিব? আবদারটা খুব বড় নয় কি?
তাসরিফ চুপ করে মাথা নামায়। সায়রা’র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে অভ্যস্ত হলেও এই ভাঙা গলার সায়রাতে সে অভ্যস্ত না। একদমই না। ভেতরে ভেতরেই যেন অস্থির লাগে ওর। এর থেকে মুক্তি মিলবে কিভাবে?
____________________
দরজায় টোকা পড়তেই বন্ধ চোখের পাতা খুলে দুপুর। বিকেল দিকে তামজিদ একবার এসে গেলো। বাবা-মা, দাদী সবার সামনে বিয়ের কথা বলে গিয়েছে আজ।
এবার সে কোন ভাবেই সিদ্ধান্ত বদলাবে না৷ ঠান্ডা মাথায় খুব করে দুপুরকে বুঝিয়ে গেলো। সেই থেকে দুপুর চুপ করে আছে। শাহ’কে বললে ও তো নিতে আসে না। তারই বা কি দোষ? সরকারি চাকরি, চাইলেই তো আর ছুটি মিলে না। বাড়ীর অবস্থা ভালো না। এতদিন কঠিন হাতে সায়রা সামলাতো এখন সে নেই। মরা মরা একটা অবস্থা। বড় আপা নেই। মিরাজ সাহেব অসুস্থ কিছুটা বোনের শোকে। দাদী ঝিমিয়ে আছেন৷ মা রান্না করছেন। সবাইকে খাওয়াচ্ছেন। এক মেয়ে জন্ম দিয়ে কোন পাপটাই না করেছে তারা। দুপুরের মন চাইলো নিজের চেহারাটা জ্বালিয়ে দিতে। না থাকবে চেহারা না থাকবে তামজিদের মোহ।
দুপুর উঠে গিয়ে দরজা খুলে। ভেবেছিলো মা অথবা বাবা কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শাহজেব। চিরায়ত সেই হাসিতেই সুন্দর মুখটা। অবিশ্বাস্য চোখে দুপুর চেয়ে রইলো। শাহ ক্লান্ত গলায় ডাকলো,
— দুপুর?
— শাহ।
— ভেতরে আসতে বলবে না? অনেকটা পথ জার্নি করে এলাম……
হঠাৎ বুকের মধ্যে ঝড়ের বেগে ঝাপিয়ে পড়ে দুপুর। দুই হাতে জড়িয়ে ধরে শাহ৷ ঝরঝরে কেঁদে উঠে কাচা হলুদ রঙের শাহ’র বউ। অভিযোগ করে না সে৷ শাহ ওকে সামান্য উঁচু করে ভেতরে ঢুকে। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে খাটে বসে। দুপুর কান্না থামিয়েছে। এখন হাসছে। শাহ দুষ্টামি করে বললো,
— এত মিস করছিলে?
— খুব।
— ডেকেছো, এসেছি। এখন?
— এখন?
ঘড়িতে দেখে শাহ। রাত নয়টা। শাহ ওর কানে কানে বললো,
— এগারোটায় বের হব তোমাকে নিয়ে। ছুটি পাইনি বউ। সকালেই কাজ আছে। মাঝে দুই ঘন্টা। এক ঘন্টা আমার। এক ঘন্টা পরিবারের।
দুপুর বোকা বোকা চাহনি দিতেই শাহ সুযোগ মতো বুঝে নিলো। খোলা জানালা দিয়ে ঘরে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। দুলিয়ে দিচ্ছে প্রেমিক মন৷ চোখ বুজে আছে দুপুর। শাহ’র চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো,
— ক’দিনের জন্য নেবেন?
— বিয়ে করেছি কয়দিনের জন্য?
— বিয়ে কি মানুষ দিন গুনে করে?
— বউ কি কাছে মানুষ দিন গুনে নেয়?
দুপুর কালো বুকটার মাঝে নিজের নরম হাতের আদর দেয়। শাহ ওর ধবধবে ফর্সা হাতটা নিজের মুঠোয় পুরে। বলে,
— এক ঘন্টা তো শেষ দুপুর। গোসল করে ব্যাগে শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর কিছু কাপড় নাও। পুরাতন কাপড় প্রয়োজন নেই।
— কেন?
— আজ থেকে শাড়ী পরবে তুমি। আমি কিন্তু ততটাও ভালো স্বামী নই যে বউকে শাসন করব না। অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে সব।
দুপুর খিলখিল করে হাসলো। বুকের মধ্যে নাক ঘঁষে উঠে গেলো। ওর যাওয়ার পানে শাহ তাকিয়ে রয়। মাঝেমধ্যে তো অবিশ্বাসই হয়৷ দুপুর তার কি করে হলো?
.
মিরাজ সাহেব আজ কাঁদছেন৷ দুপুর বাবা’র এহেন কান্না দেখে কি করবে বুঝতে পারছে না৷ মনের ভেতর এত ভয়, জড়তা কাজ করছে। এখন যেতে মন টানছে না৷ তামজিদ ওকে না পেলে কি করবে কে জানে? দাদী কাঁদলেন গুনগুন করে। মা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন। দুপুর ওনার সামনে এলো। নিজ থেকেই হাত ধরে বললো,
— তোমার আদর কখনোই আমি ততটা পাই নি আম্মু। দোষ তোমার হলেও আমার রাগ আপির উপর। আপি না থাকলে নিশ্চিত আমি আদরটুকুর পেতাম। এতদিন আফসোস হলেও এখন হয় না৷ আমার আরেকটা মা আছে। আমি না খেলে ধমকায়। আমার প্রতিবেলা মনে পরে আমি খেলাম কি না। আমার চুলের সে যত্ন করে বাবার মতো। আমাকে বকে না বিনাদোষে। আজ তোমার কাছে একটাই আবদার, বাবাকে দেখে রেখো।
দুপুর হঠাৎ ই তাকে জড়িয়ে ধরে। কান্নারত গলায় কানে ফিসফিস করে বলে,
— আমি তামজিদ ভাইকে আমার শরীর দেখিয়ে ফুসলাই নি মা। তুমি সেদিন আমাকে কলেজ থেকে এলাম পর কত মা’রলে। আমার শরীরে এখনও ব্যথা হয়। শাহ জিজ্ঞেস করেছিলো কিসের দাগ। আমি বলি নি। আবার জিজ্ঞেস করলে বলব।
মা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। বাবার হাত ধরে বেরিয়ে এলো রাতের অন্ধকারে। গাড়িতে উঠতেই দেখলো শাহজেব বাবাকে জড়িয়ে ধরে কি কি বলছে। বাবার চোখে তখন বিশ্বাস। ভরসা। তীব্র এক আস্থা। সে তার মেয়েকে তুলে দিয়েছেন এক বিশ্বত্ব হাতে।
#চলবে…..