#সে_জন_সোনা_চিনে_না
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২২
আজ তিনদিন ধরে পলাতক তামজিদ। সেদিন পুলিশের জিপ থেকেই নাকি পালিয়েছে সে। এর কারণ বুঝতে পারছে না কেউ। তামজিদ পালানোর মতো ছেলে না। তাদের জাহাজে থাকা অ’স্ত্র সব বৈধ এটা তাসরিফ নিজেই জানে। এক দিনের ব্যবসা না এটা। তামজিদ বছরের পর বছর কষ্ট করে গড়েছে এটা তাও কিনা একা হাতে। তাসরিফ যখন কাগজপত্র গোছাচ্ছিলো তখন চেয়ারম্যান সাহেব গিয়েছিলেন ওসির সাথে কথা বলতে। পথিমধ্যে খবর আসে জিপ থেকেই পালিয়েছে তামজিদ৷ তার পায়ে শ্যুট করা হয়েছে। এই কাজটা করার সাহস পুলিশ পেতো না কিন্তু তামজিদ দু’জন কন্সট্রেবলকে আহত করে পালিয়েছে। তাসরিফে’র কানে এসেছে মাথায়ও নাকি কিছু একটা ছুঁড়ে মে’রেছিলো তারা। কথাটা শোনার পর থেকে তাসরিফ থ হয়ে যায়। ভাই যে তার আগে থেকেই মাথায় আঘাত নিয়ে ঘুরছে। ইদানীং হুটহাট রাস্তায় চলা পথে হুট করে থেমে যায়। নিজের ঠিকানা তখন ভুলে যায়। চিন্তাটা এখন অবশ্য বেশি। খোঁজ খবরও পাওয়া যাচ্ছে না। তাসরিফ বিগত তিনদিন ধরে নাওয়া খাওয়া ভুলে এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে তাসরিফ। ফলাফল শূন্য। ক্লান্ত হয়ে বাড়ী ফিরতেই দেখলো হেলান দিয়ে খাটে শুয়ে আছে সায়রা। হয়তো অপেক্ষা করছিলো। আবার ভাবলো সায়রা অপেক্ষা করার মতো মেয়ে না৷ শব্দ হীন ভাবে আলমারি খুলে কাপড় নিতেই সায়রা জেগে উঠে। কথা না বলে তাসরিফ বাথরুমে ঢুকে। সায়রা যায় খাবার আনতে। নিজের শোকেই মৃত সায়রা অন্য’র শোকে ততটাও প্রভাবিত হচ্ছে না।
খাবার আনতে গিয়ে শশুড়ের ঘর থেকে শাশুড়ীর কান্নার শব্দ শুনলো। সায়রা গায়ে মাখলো না ততটা। তার ভাবী কত কাঁদলো। কে ই বা শুনতো সেই কান্না? কেউ না৷ এই পৃথিবীতে কেউ কারো কান্না ততটা শুনতে চায় না।
খাবারটা নিয়ে রুমে ঢুকে দরজায় টোকা দিলো সায়রা,
— তাসরিফ? তারাতাড়ি বের হও।
— কিছু লাগবে য়রা?
— তোমার লাগবে। খাবে। বের হও।
— বের হতে পারছি না য়রা।
সায়রা জানে মাথা ঘুরাচ্ছে এই ছেলের। ওর পায়ের টলমল ভাব দেখেই বুঝেছে। তিনদিন এক প্রকার না খাওয়া সে। এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সায়রা জিজ্ঞেস করে,
— তুমি কি বসে আছো?
— বুঝতে পারছি না য়রা।
— আচ্ছা, দরজাটা খুলে দাও তো।
— দরজা কোথায় য়রা?
— তুমি কোথায়?
— পানির নিচে।
— বরাবর সমানে দরজা। আসো। খুলে দাও।
কলের নিচে মাথা দিয়ে রাখা তাসরিফ বরাবর উল্টো দিকে গিয়ে দরজা খুললো। সায়রা দেখলো খালি গায়ে শুধু শর্ট প্যান্ট পরে পানিতে ভিজে আছে তাসরিফ৷ ওর চোখ লাল। আঁচলটা কোমড়ে গুঁজে ভেতরে ঢুকে সায়রা। বালতি ভরতে রেখে তাসরিফ’কে ধরে টুলে বসায়। এখনও টলছে ও। গায়ে ভীষণ জ্বর। মগ ভর্তি পানি ঢাললো সায়রা ওর মাথায়। তাসরিফে’র সুঠাম দেহ তখন কাঁপছে। ভীষণ ভাবে কাঁপছে। এত বড় পুরুষটাকে মুছিয়ে নিজের উপর ভর নিয়ে বের করে সায়রা৷ টাউজার এগিয়ে দিয়ে বলে,
— পরো এটা।
— পা ঢুকাতে পারছি না য়রা।
সায়রা বসে ওর ঢুকালো। কখনো এতটা এলোমেলো ও দেখে নি তাসরিফ’কে। নিজের ভাই তো। শোকে শোকে এই দশা। হাসি পায় সায়রা’র তবে হাসে না। নিজের ভাই এর গায়ে এক খোঁচা লাগলেও সহোদর ভাই-বোনের অবস্থা হয় সবচাইতে করুণ। তারা মরে যায় তখন। নাড়ের টান আছে না একটা?
নিজের হাতে খায়িয়ে ঔষধ দিয়ে ওকে ঘুমাতে বললো সায়রা। তাসরিফ ঘুমায় না৷ কোন ভাবেই ঘুমাবে না ও৷ বাইরে যাবে। কিসের নাকি কাজ আছে। সায়রা না পেরে শেষে ধমকে উঠলো,
— কোথায় যাবে? হাঁটতে পারছো? ফাইজলামি যত্তসব। চুপ করে ঘুমাও তাসরিফ। আমার বিরক্ত লাগছে।
মাথাটা বালিশে রাখা মাত্রই সায়রা’কে কাছে টানলো তাসরিফ। চুপ করে সায়রাও কাছে এলো। ওর বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে কেঁদে উঠে যেন ছোট্ট একটা বাচ্চা। বড় ভাইয়ের ন্যাওটা এক ছোট ভাই যে কি না খুব চিন্তিত তার বড় ভাই নিয়ে। তাসরিফ কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— য়রা, য়রা আমার ভাইকে মাফ করে দিন৷ সে খু ন করে নি। আমার ভাই খু নি না য়রা। সেবার আপনার ভাইকেও এমন ভাবে শ্যুট করেছিলো যাতে তেমন ক্ষতি না হয়। ভাই প্রফেশনাল য়রা। খু ন করে নি। অন্তত ভাবীর খাতিরে হলেও সে খু ন করে নি৷ ফাঁসানো হচ্ছে আমার ভাইকে য়রা। সে অবৈধ ব্যাবসা করে না৷ সরকারি ভাবে অনুমতি নিয়েই কাজ করে সে।
সায়রা বোঁধহয় এই প্রথম ওর পিঠে স্বান্তনার হাত রাখলো। আরেকটু ওর দিকে চাপলো তাসরিফ। গুনগুন করে বলতে লাগলো,
— ভাই পাচ্ছি না য়রা। ভাইকে পাই না। কোথায় খুঁজব বলো। কোথায় খুঁজব আমি তাকে? ভাই তো এখন রাস্তা-ঘাটও ততটা চিনে না। তার মাথায় আঘাত লেগেছে আবার য়রা। কেন মা রলো তাকে? কেন মা রলো? ভাই কেন পালালো য়রা? কি দরকার ছিলো? আমি তো যাচ্ছিলাম…..
গুঙিয়ে কাঁদছে কাঁদতে স্ত্রী’র নরম বুকে তাসরিফ ঘুমালো। অপারগ হলো জানতে উল্টো জগৎ এ ঘটা এক করুণ গল্পের।
______________________
দুপুরের আজ সামান্য পেট ব্যথা। শাহ সকালে ডিউটিতে যায় নি৷ স্ত্রীর সেবা করেছে। এখনও সামান্য গরম পানিতে দুপুরের ফুলা পা দুটো ভিজিয়ে নিজ হাতে নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিচ্ছে। দুপুর আস্তে করে ডাকে,
— শাহ?
— হু।
— আপনি কি ঠিক শুনেছেন মেয়ে হবে?
শাহজেব হাসলো। কালো মুখটায় বড্ড সুন্দর দেখালো সেই হাসি। দুপুর কিঞ্চিত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়। শাহ হেসে হঠাৎ দুপুরের পায়ে ঝুঁকে চুমু খেতেই দুপুর কেঁপে উঠে। শাহ আস্তে করে পেটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
— হ্যাঁ। মেয়ে হবে দুপুর। আমার মেয়ে আসবে। আমাদের ছোট্ট একটা জান আসবে। সকল রাতের আঁধার কাটিয়ে এক নতুন ভোরের আগমন হবে দুপুর।
— মেয়ের নাম ‘ভোর’ রেখেছেন?
— হু? পছন্দ হয় নি?
— সুন্দর নাম।
— পুরো নাম ভোর শাহজেব।
— খুব সুন্দর।
শাহ উঠে আসে। দুপুরের পাশে বসে শাহ অগোছালো চুলগুলো ঠিক করতে করতে বললো,
— আমার দুপুর চন্ডী আগের মতো হয়ে যাও৷
দুপুর হাসে। শুধায়,
— আগের মতোই আছি।
— শোক কাটবার নয় দুপুর তবে…
পেটে হাত রেখে বলে,
— ওর জন্য হাসিখুুশি থাকো।
— থাকছি।
— তুমি আমার উপর খুব রেগে তাই না দুপুর?
— নাহ। আমার শুধু কিছু প্রশ্ন তবে সেগুলোর উত্তর দিতে আপনি বাধ্য নন শাহ৷ সকল প্রশ্ন বাবা’কে।
শাহ ওর হাতদুটো চেপে ধরে। কপালে চুমু খেয়ে বলে,
— সোনায় বরণ এক কন্যা ছিলো। কন্যার চুল যেন রেশম, চোখ যেন মায়ার খাদ। কন্যার জন্য পা গল হলো এক ছেলে। ঠিক রূপে কন্যার বরাবর। কন্যা ফিরিয়ে দিলো তাকে। ছেলে তখন ভালোবাসার খাঁচায় আটকাতে চাইলো কন্যাকে। কন্যার চঞ্চলতা আর হাস্যমুখ খয়ে খয়ে পরলো। কন্যা খুব দুঃখী হলো। কন্যার বাবা তখন চিন্তিত। বিচলিত। খুঁজে পেলেন এক কালো চাঁদ’কে। কালো চাঁদের যোগ্যতা কন্যার রূপে মানায় না৷ কন্যা মানা করে দিলো। সোনার অঙ্গ বুঝি এই কালো চাঁদ পাবে? নিজেকে ঐ ছেলে থেকে বাঁচাতে কন্যা অগত্যা রাজি হয়। প্রথম রাতেই কালো চাঁদকে তার মনে ধরে। হয় সত্যি নাহয় মিথ্যা অথবা এক ভ্রম। কালো চাঁদ নিজের কালো মুখটা নিয়েই কন্যাকে ভালোবাসতে চায়। দূরে থেকে আবার কাছে এসে। কালো তো তাই চাঁদটা প্রকাশ করতে ভয় পায়। সবাই কি আর প্রকাশ করতে পারে বলো?
দুপুর কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— ভ্রম না। ভালোবেসেছিলাম।
— ছিলাম? এখন নেই?
— ছেলের এক খারাপ থেকে কন্যা বাঁচতে চাইলো বাবা তাহলে দুই খারাপে ঠেলে দিলো?
— এতই খারাপ আমি?
— নাহ।
— ভালোবাসা যায়?
— যায়।
— দুপুরচন্ডী?
— হুউ।
— বুকে আসা যাবে?
দুপুর বুকে আসে। কালো বুকটায় সে সুখ খুঁজতে লাগলো। সুখের আয়ু চারদিন হোক তবুও হোক। সুখ পেতে মানা নেই। খাদ হলেও তা সোনা, খাটি হলেও তো সোনা। শাহ ওর কপালে চুমু খেতে খেতে বললো,
— খাদে পূর্ণ সোনাই নাহয় মেনে নাও।
— খাদ নেই। নেই খাদ৷ খাদ দুপুরের মধ্যে। শুধু আমার মধ্যে।
দুপুরকে ঘুম পারিয়ে শাহ তৈরি হলো। সকালের ডিউটি বাদ গিয়েছে তাই দুপুরে যাচ্ছে।
বাইরে থেকে লক করে বের হলো শাহ। গাড়িতে উঠা মাত্রই একটা ছায়া সরলো সেখান থেকে।
.
পেটের উপর আদুরে হাত বুলাচ্ছে কেউ। চামড়ায় লাল লাল দাগ গভীর ভাবে দেখে সে। ঝুঁকে একটা চুমুও খায়। দুপুর আরামে গুঙিয়ে উঠে। ডাকে,
— শাহ?
— হুউ।
ছোট্ট উত্তর। দুপুর ঘুমায় উত্তর শুনে। চোখে আজ বড্ড ঘুম তার। বুকের কাছটায় কেউ মাথা দিয়ে রেখেছে। গলায় ভেজা ভাব অনুভব করতেই দুপুর হাতড়ে হাতড়ে মানুষটার চুলে হাত বুলালো। আরাম পেলো বুঝি মানুষটা। ঘুমালো জড়িয়ে ধরে তাকে। দুপুর তখন গভীর ঘুমে। শান্তিতে আজ ছয় বছর পর ঘুমালো তামজিদ। সেই ছয়টা বছর ধরে ভালোবেসেও কখনো বুকে পায় নি পাখিটাকে। আজ পেয়ে তার ঘুম এসেছে। ভীষণ ঘুম৷ তিনদিন ধরে ঘুরে ঘুরে এখানে এসেছে। চেনা জায়াগ কিন্তু তামজিদ হারিয়ে ফেলেছিলো। টানা দুই ঘন্টা ঘুমালো তারা৷ দুপুরের পেটে সামান্য ব্যথায় ঘুম ভাঙে। চোখ পিটপিট করতেই বুঝে শাহ আজ সমস্ত ভার দুপুরের শরীরে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ব্যথায় কেঁদে ফেলে দুপুর। পেটটা এত কেন ব্যথা হচ্ছে?
ওর কান্নায় তামজিদ ধরফরিয়ে উঠে। দুপুর কান্না ভুলে তাকিয়ে রইলো যখন তামজিদ অস্থির হয়ে বললো,
— কি হয়েছে পাখি? বাবু ব্যথা দিচ্ছে? কাঁদছো কেন? এই দুপু কাঁদো কেন জান?
পেটে তখন নরম হাত বুলাচ্ছে তামজিদ। খুব যত্ন সহকারে দুপুরকে একটু পানি খাওয়ালো। পেটে কান পেতে কি যে শুনলো অতঃপর কাঁদলো। কাঁদতে কাঁদতে দুপুরের হাত দুটো নিজের বুকে নিয়ে বললো,
— ও আমাকে বাবা ডাকলো কেন দুপুর? কেন ডাকলো? ও কি জানে আমি ওর বাবা? জানে ও? শাহ কিন্তু ওর বাবা না৷ আমরা এখন পালিয়ে যাব। পুলিশ ধরেছিলো আমাকে দুপুর। পালিয়ে এসেছে। এই দেখো মাথায় মেরেছে। মাঝেমধ্যে রাস্তাঘাট ভুলে যাচ্ছি দুপুর। তিনদিন ঘুরে এখানে এলাম৷ ক্ষুধা পেয়েছে দুপুর। কিছু হবে খেতে?
দুপুর অবাক হয়ে তাকিয়েই আছে। শ্বাস নেয়াটাও যেন মুশকিল। তামজিদ আবার বললো,
— বিস্কুট হবে না?
— হবে।
— ক্ষুধা পেয়েছে আমার।
দুপুর উঠে। আনমনে গিয়ে ভাত বেড়ে নিয়ে আসে। বদ্ধ এক ফ্লাটে কাকে ডাকবে দুপুর? কেউ তো নেই। তামজিদ খুশিই হলো ভাত দেখে। আরেক ধাপ এগিয়ে আবদার ধরে,
— খায়িয়ে দিবে?
দুপুর তাই করলো। পানি খাচ্ছে তামজিদ। দুপুর আস্তে করে নিজের ফোনটা নিলো। পেছন থেকে ফোন লাগালো শাহ’কে। রিসিভ হলো মূহুর্তের মাঝে। ওপাশ থেকে হ্যালো বলা মাত্রই তামজিদ দেখে ফেললো। তারাতাড়ি ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে উঠলো,
— বর’কে কল দিলে কেন? আমি এসেছি না এখন দুপুর? চলো বের হই। কথা কথা যে জমা পাখি। কত কথা…
বেশ নরম হলো তামজিদ। দুপুর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,
— বেরিয়ে যান তামজিদ।
— কোথায় যাব? তোমার স্বামী আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। কাউকে খু’ন করি নি আমি৷ কাউকে না৷ ওটা অ্যাকসিডেন্ট ছিলো খোঁজ লাগিয়ে দেখো। আমি কাউকে মারি নি দুপুর। এই যে আমাদের সন্তানকে ছুঁয়ে বললাম৷
দুপুরের পেট ধরতেই দুপুর আঁতকে উঠে। বলে,
— এটা শাহ’র সন্তান।
— না আমার।
— পা গ ল আপনি। বের হন। দয়া করে আমাকে বাঁচতে দিন।
তামজিদ পাগলামো করে। ও জড়িয়ে ধরে দুপুরকে। দুপুর ছটফট করে। পেট ব্যথা বাড়ছে। দুই হাতে পেট ধরে ও চিৎকার করে উঠতেই তামজিদ ভয় পেলো। দুপুরকে বুকে নিয়ে বসে কপালে সমানে চুমু দিতে দিতে বললো,
— কি হয়েছে? দুপুর আমার কথা বলো পাখি। পেট ব্যথা? ক…কি করব?
— শাহ!
— শাহ আসবে না পাখি। ও আর আমাদের বাঁধা দিবে না৷
— শাআআহ!
দুপুর চিৎকার করে ডাকে। তামজিদে’র মাথা কাজ করে না৷ ও দুপুরকে ধরে তুলতে চায়, দুপুর উঠে না৷ তামজিদ কোমড় থেকে পি স্ত ল বের করে। নিজের মাথায় ঠেকিয়ে বলে,
— উঠো। উঠো নাহয় নিজেকে মেরে দিব৷ পালাব আমরা৷ আমার তোমাকে চাই দুপুর। আমি এভাবে নিতাম না কিন্তু.. কিন্তু… শাহ আমাকে বাধ্য করলো। আমি তো শুধু দেখতাম তোমাকে। শুধু দেখতাম৷ আমার ভালোবাসায় দোষ নেই দুপু। দোষ নেই। তুমি আমার যেই গুনের জন্য সেই গুন তোমার বরেরও আছে। তাহলে আমার দোষ কোথায় দুপুর? কথা বলো, কেঁদো না।
দরজায় তখন সমান তালে কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। দুপুর ডাকে,
— শাহ!
তামজিদে’র মাথা খারাপ হচ্ছে তখন৷ কোথায় পালাবে এখন? দুপুর আচমকা চেঁচিয়ে উঠে,
— তামজিদ!
তামজিদ তাকালো। ফর্সা দুপুরের মেক্সিটা সামান্য উপরে উঠেছে। দুই পা বেয়ে র’ক্ত। তামজিদ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এক টানে দুপুরকে বুকে তুলে বললো,
— আমাদের বাবুর কিছু হবে না দুপুর। আমি কিছু হতে দিব না৷
দুপুরকে কাঁধে তুলে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে তামজিদ। সম্মুখে দাঁড়িয়ে শাহ। এই অবস্থা দেখে শাহ থমকালো। তামজিদ তোয়াক্কা না করে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামছে। দুপুর সামান্য অচেতন৷ আচমকা দুই সিঁড়ি নামার পূর্বে তামজিদ ব্যথায় ‘উফ’ শব্দ করে। পরপর আরেকটা শব্দ হয়। দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না তামজিদ। বসে পরে দুপুরকে নিয়ে। চোখ ভর্তি পানি নিয়ে তাকায় কয়েক সিঁড়ি উপরে দাঁড়িয়ে থাকা শাহ’র পানে। শাহ আরেকটা গুলি করে ওর বুক বরাবর। দৌড়ে নামবার আগেই ট্রিগার চাপে তামজিদ। দুপুরের কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
— ছোট্ট পাখি আমার তোমাকে তো আমি আজ প্রথম এতটা কাছে পেলাম৷ লোভ হলো অনেকখানি তাই তুমি আর বাবু আমার সঙ্গেই চলো। একা আর ভালো লাগে না আমার দুপু..
— নাহ! তামজিদ ডোন্ট শ্যুট হার। প্লিজ নো…. নো!
শাহ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে তামজিদ দুপুরের মাথায় পরপর দুটো গু লি করলো। অর্ধচেতা দুপুর তখন তামজিদের বুকে। এই তো তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হলো ঠিক দুপুর তিনটা পাঁচ মিনিটে। নামটা দুপুর হওয়ার পাশাপাশি তার অসংখ্য ইচ্ছে ছিলো। এই যেমন বিয়ে হবে তার দুপুরে, বাসর হবে দুপুরে, বাবু হবে দুপুরে, হাত ধরে হাঁটবে তারা দুপুরে। মৃত্যুটা দুপুর কখনো দুপুরে ভাবে নি। অতি কাঙ্খিত জিনিসটাই ভাবা বাকি ছিলো তার। জড়ানো হাতটা শক্ত করে তামজিদ। শেষ বুলেট সে নিজের মাথায় নিজে গেঁথে দিলো।
শাহ ততক্ষণে হাঁটু ভেঙে বসেছে। তার মুখ থেকে ফেনা বেরুচ্ছে। বমি করে ফেললো ও। কোনমতে গেলো দুপুরের কাছে। টেনে নিজের কাছে নিতে চাইলো কিন্তু ভাগ্য এবার তামজিদে’র পক্ষে। ছুটাতে শক্তি পেলো না শাহ। কি হচ্ছে তার? দুপুর যখন ফোন দিলো তখন সামন্য একটু চা ই তো খেয়েছিলো ও।
#সমাপ্ত…..