#স্পর্শ
#পর্ব_১২
#writer_nahida_islam
-এসব না বলে উকিন নিয়ে এসেছি, ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেন।
-শরিয়ত মুতাবেক অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তালাক দিলে তা সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগপর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না।
-ওকে তাহলে পরে ই দিবো, আমার টাকা টা রেডি রেখো।
অতসী আর কোনো কথা বললো না, ইফাজ উকিল নিয়ে বের হয়ে গেলো। এখন আর কান্না করতে ইচ্ছে হয় না। আর কতো কান্না করবে। এখন অভ্যেস হয়ে গেছে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতে ই দেখলো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায় তাই আর রুম থেকে বের হলো না। শিমু নীলু দুজন একটা প্লেট হাতে করে নিয়ে রুমে ডুকেছে।
-আপু বলতো এটাতে কী আছে।
অতসী কিছুক্ষন ভেবে বললো,
– মনে করতে পারছি না।
-আচ্ছা একটা অপশন দেই।
-খাবারটা তুই খুব বেশি পছন্দ করিস। আর আমরা তোকে মাঝে মাঝে বানিয়ে খাওয়াতাম।
-কত কিছুই তো আছে, আমার পছন্দের। এখন কোনটা রেখে কোনটা বলবো।
-পারবি না তো?
-উঁহু, মনে আসছে না।
প্লেটটা অতসীর সামনে এনে বললো,
-নারকেল আর চিনি দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে এনেছি। এটা বলতে পারলি না।
অতসী ছু মেরে হাত থেকে টান দিয়ে প্লেটটা নিয়ে কোনো কথা না বলে খাওয়া শুরু করলো।
এটা দেখে শিমু নীলু দুজন ই হাসছে। যাক মনটা একটু ভালো হয়েছে হয়তো।
-আমাদের দিবি না নাকি। এমন ভাবে খাচ্ছিস পড়ে তো কিছু ই পাবো না।
একটা হাসি দিয়ে দুইবোন কে বললো, হাত পাততে।
শিমু নীলু হাত পেতে দিতে ই দুজনকে এক মুঠ করে দুমুঠ মুড়ি তাদের হাতে দিলো।
-আপু এতোটুকু কী খাবো বল।
-না খেলে রেখে চলে যা।
আচ্ছা প্লেটটা এদিকে দে।এটুকু মুড়ি মাখা রেখে চলে যাই। অতসী প্লেটটা দিতে ই নীলু প্লেটটা নিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় সাথে অতসী শিমু ও দৌড়ে পিছনে ছুটে।
সেই আগের খুনসুটির গুলো আবার ফিরে পেয়েছে। তিনবোনে চিল্লাচিল্লিতে বাড়ি মাথায় উঠিয়ে রেখেছে।
অতসীর বাবা কান্না করছে মেয়েদেরকে তো এভাবে ই হাসিখুশি দেখতে চেয়েছিলো। এভাবে ই সব সময় হৈচৈ করবে তা ই তো চেয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ কী পাপের জন্য আল্লাহ এই বিয়ে নামক নরকে অতসীকে পাঠিয়েছেন কে জানে।
অতসী সোফায় বসে প্রচন্ড হাঁপাচ্ছে, এটা দেখে নীলু শিমু খুব ভয় পেয়ে যায়। একজন দৌড়ে যায় পানি আনতে অন্যজন হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতেছে।
শিমু পানি আনতে ই একনিমিষে পানিটা শেষ করে ফেললো। অতসী কোনো রকমে উঠে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
এভাবে দৌড় দেওয়াটা ঠিক হয়নি। বুঝা উচিত ছিলো আমি এখন একা না। ভাবতে ই ভালো লাগে। কদিন পর ছোট্ট একটা বাচ্চা আসবে। আলমারিটা আমার জায়গায় বাচ্চাটার জামাকাপড় দখল করবে। মাঝরাতে কান্নার শব্দ ঘুম ভেঙ্গে যাবে শত কষ্ট হলে ও ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে বাচ্চাটাকে শান্ত করার চেষ্টায় মগ্ন থাকবো। শত কষ্ট মধ্যে ও তার মুখখানা একবার দেখলে সকল কষ্ট নিমিষেই উড়ে যাবে।
এগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে আজান দেওয়ার সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠলাম। নামাজ পড়ে। ঘরের টুকটাক কাজ করতে লাগলাম। একটু কাজ করলে কেউ আর বলতে পারবে না শুধু বসে বসে খাই।
-তুই এতো সকালে উঠে কাজ করছিস কেনো?
মা রেগে এসে আমাকে কথাটা জিজ্ঞেস করলো। আমি স্বভাবিক থেকে ই উওর দিলাম।
-এমনি বসে থাকতে ভালো লাগে না তাই।
-হে আমার দশটাকার কাজ করে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বি পড়ে আবার এক হাজার টাকা টান দিবে।
মনে মনে ভেবেছিলাম আমি কাজ করি এটা দেখে খারাপ লাগার কারনে মা কথাটা জিজ্ঞেস করেছে। এখন জানতে পারলাম টাকার কথা ভেবে জিজ্ঞেস করেছে। মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,
-সে তোমার ভাবতে হবে না মা। আমি এবার অসুস্থ হবো না। আল্লাহর কাছে রোজ চাই যেনো আমিসম্পৃক্ত কোনো কাজে তোমাদের একটা টাকা ও না লাগে।
-সবার দোয়া তো আর কবুল হয় না।
-সে আল্লাহ ই ভালো জানে, তোমাকে এসব নিয়ে না ভাবলে ও চলবে।
অতসী কিচেনে ডুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখছে। অমনি নীলু এসে হাত ধরে কিচেনের বাহিরে নিয়ে গেলো। অতসীকে একটা চেয়ারে বসিয়ে বললো,
-আপু ডাক্তার তোকে পুরো বেড রেস্ট দিয়েছে আর তুই কাজ করছিস।
আমি নীলুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
-ডাক্তার তার নিজের দায়িত্ববোধ থেকে বলেছে আমাকে বেড রেস্ট থাকার জন্য আর আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করতে গিয়েছি। সবার কপালে সব সুখে সয় না।
-তোর যা কাজ আছে সব আমি করে দিবো। তুই শুধু বসে বসে বলবি।
আমি বসা থেকে উঠে বললাম।
-এইতো সব কাজ শেষ তুই পড়তে বস আমি হাতের কাজগুলো সেরে এখন ই রুমে চলে যাবো।
-আপু বললাম তো আমি করে দিবো।
-পাকমো করতে হবে না। পড়তে বস।
নীলু এখন ও ছোট। আমার পরিস্থিতিটা সে বুঝতে পারবে না। তাও আমার কাজগুলো যে করে দিতে চেয়েছে তাতে ই আমি খুশি হয়েছি। কিচেন ডুকে মায়ের জন্য লেবুর পানি বানালাম। লেবুরপানি হাতে নিয়ে মায়ের রুমের দিকে যেতে ই দেখলাম। একটা কাকিমা এসেছে। আমাকে দেখে ই বললো,
-কেমন আছিস অতসী।
হাসি মুখে উওর দিলাম,
-হে কাকিমা ভালো
-তা শ্বশুর বাড়ি থেকে নাকি চলে এসেছিস। দুদিন ও খেতে পারলি না শ্বশুড়ির সাথে মিলে। এখনকার মেয়েদের সভাব ই এমন পান থেকে চুন খসলে ই বাবার বাড়ি চলে আসে।শ্বশুর বাড়ি তো খেতে পারলি না সেই বোঝা হয়ে তো মা বাবার ঘাড়ে পড়বি। তা আবার শুনলাম বাচ্চা ও নাকি হয়েছে। জানিস থাকবি না তো আবার বাচ্চার জামেলা করতে গেলি কেন বল তো?
-কাকিমা কাকা যখন আপনাকে মারতো তখন আপনি শুধু কাদতেন আর প্রতিদিনকার অত্যাচার সহ্য করেছেন। কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করার সাহস আপনার হয়নি। আপনার জামাইয়ের কাছে থেকে দেখে গ্রামের আর কয়েকজন বউ পিটাতো। আর বউয়েরা প্রতিবাদ করলে আপনি উদাহরণ হয়ে থাকতেন। যে দেখ ঐ বাড়ির আসাদ তার বউকে কতো মারে মুখ দিয়ে একটা কথাও বের করে না। আর আমাকে দেখে দেখে দশজন নারী শিখবে অত্যাচারে মুখ বন্ধ করে থাকতে হয়না প্রতিবাদ করতে হয়। আর বাচ্চাটা আল্লাহর দান। কতো মানুষ সারাদিন রাত কান্নাকাটি করে ও একটা বাচ্চা পায়না। আর আল্লাহ আমাকে কতো সহজে ই দিয়ে দিলো। সব কিছু মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলে ও চলবে।
-এতো বড় বড় কথা যে ভালো নিজে তো দুইটি পয়সা কামাই করার ও মুরোদ নেই।
-মেয়েরা ফেলনা না কাকিমা।আমি চাকুরী করতে পারবো, আমি বাবা মার টাকায় না বাবা মা আমার টাকায় খাবে।
কথাটা বলে ই চলে আসলাম। ভুল কিছু তো বলেনি। আমি খুব ভালো করে জানতাম এমন হাজারটা কথা শুনতে হবে। শুনতে হলে হক না তাও নিজে স্বাধীন মতো বাচতে তো পারবো। কয়েকটা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়লাম। এগুলো ধুয়ে বাহিরে নিয়ে রোদে শুকাতে দিলাম। কাপড়ের বালতিটা নিয়ে রুমে ডুকতে যাবো ঠিক তখন ই অতসী বলে কেউ ডাকে।
পিছনে তাকিয়ে দেখলাম তানিয়া বেগম। আমি গিয়ে সালাম দিলাম।
–আসসালামু আলাইকুম। রুমে চলুন মা।
-বসে তোমার সাথে গল্প করতে আসেনি। এই কাগজটায় সাইন করে দেও আমি এখন ই চলে যাবো। সময় নেই বেশি।
অনেক কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কীসের কাগজ।
– ইফাজ সুমিকে বিয়ে করবে। যেহেতু তোমাদের ডিভোর্স এখন ও হয়নি তাই অনুমতির জন্য এই পেপারে সাইন করতে হবে।
চলবে,