#স্পর্শ
#পর্ব_১৩
#writer_nahida_islam
অনেক কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কীসের কাগজ।
– ইফাজ সুমিকে বিয়ে করবে। যেহেতু তোমাদের ডিভোর্স এখন ও হয়নি তাই অনুমতির জন্য এই পেপারে সাইন করতে হবে।
-মা আমার তো অনুমতি দেওয়ার দরকার নেই। আপনার ছেলে বিয়ে করুক বা না করুক তাতে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
-তাও বলা তো যায়না তুমি যদি আবার কোনো জামেলা করো।
হাসি দিয়ে বললাম। এতো সন্দেহ নিয়ে চলে যান তা আমি ও চাই না। দেন আমি সাইন করে দেই।
কথাটা বলতে ই হাসি মুখে আমাকে পেপারটা এগিয়ে দিলো। আমি সাইন করে উনার হাতে পেপারটা দিতে ই হাসি দিয়ো বললো,
-জানো আমার অনেক খুশি লাগছে। খুশির খবরটা তোমাকে ও বলি। আমার খুশি যে তোমার খুশি হবে না, তা আমি শিউর। ইফাজের সাথে আমি সুমির বিয়েটা দিবো এটা আমার আগে থেকে ই চিন্তা। কিন্তু আমার এই চিন্তার মধ্যে বা হাত ডুকালো প্রিয়ন্তী। প্রিয়ন্তীকে আমি সব ভুল বুঝিয়ে, প্রিয়ন্তীর সামনে ইফাজকে খারাপ প্রমান করলাম। ইফাজ যে ব্যপারটা না বুঝে তাই আমি ই প্রিয়ন্তির মার সাথে কথা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলাম। দুজনের জন্য শপিং ও করলাম। কিন্তু বিয়ের ঠিক আগের দিন আমি নিজে স্বাক্ষী থেকে প্রিয়ন্তি রাহুলের বিয়ে দিলাম। অবশ্য প্রিয়ন্তী আগে থেকেই জানতো যে তাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হবে শপিং হবে কিন্তু বিয়ে হবে না।
ইফাজ গুন অক্ষরে টের পায়নি সব কলকাঠি আমি নাড়ছিলাম। তারপর আমাকে না জানিয়ে ই তোমাকে বিয়ে করে নিলো ঐদিন ইফাজকে আমার মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু কি করবো বিয়ে যখন করে ফেলেছে তখন তো আর কোনো কিছু বলার নেই। ভাবতে লাগলাম কী করা যায়। তখন দেখলাম তুমি যে মেয়ে তোমাকে দিয়ে আমার কোনো কাজ হাসিল করা অসম্ভব তাই সব ইফাজকে আমি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলাম। ইফাজ চেয়েছিলো তোমার সাথে মানিয়ে নিতে এটা আমাকে বলেছে তখন আমি তোমার সম্পর্কে ইফাজকে কান বিষ ঢেলেছি। তোমার ক্ষতি করার আমার কোনো প্লানিং ছিলো না কিন্তু ইফাজ তোমাকে রাখুক তা আমি চাইনি। আমার ইচ্ছে তো পূরনের জন্য তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে আমি বাধ্য হয়েছি। প্রত্যেকদিন ইফাজের সামনে খারাপ করার জন্য নানা ফাদ পেতেছি।কিন্তু এতো অত্যাচারে ও যখন তুমি ইফাজকে ছেড়ে আসছিলে না তখন আমি আমাকে মারার নাটক টা করলাম। সুমির বাবা বলেছিলো সুমিকে বিয়ে করালে উনার প্রোপার্টির ফিফটি পার্সেন্ট আমার নামে করে দিবে। আর ইফাজ তো আমার ছেলে নাহ্। ইফাজ হচ্ছে ইমরুলের ভাইয়ের ছেলে তাকে দিয়ে যদি আমার স্বার্থ হাতে আসে তাহলে ইফাজকে কেনো হাত ছাড়া করবো। তাছাড়া ইমরুল স্টাম্প করে দিয়ে গেছে ইমরুলের সব সম্পওি ইফাজের নামে। আবার যাওয়ার সময় আমাকে ডিভোর্স পেপারটা ও দিয়ে গেছে। তাহলে বলো এমন লোকের সংসার আমি কেনো টিকিয়ে রাখবো।
কথাগুলো বলে ই দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো।
-চলিএবার। মনে মনে কী ভাবছো ইফাজকে সব বলে দিবে। আবার সংসার করবে ইফাজের সাথে। ভুল ভাবছো তা কখনো হবে না। ইফাজ কখনো তোমার কথা বিশ্বাস করবো না।
-মানতে হবে মা তুমি পাক্কা অভিনেত্রী। খলনাইকার চরিত্র ও তোমার থেকে ভালো।
কথাগুলো শুনে পেছনো তাকাতে ই দেখলো ইফাজ। তানিয়া বেগম খুব ভয় পেয়ে যায় ইফাজকে দেখে।
-আরে ভয় পাচ্ছো কেনো। এতো বড় অভিনেত্রী ভয় পেলে কী আর পরের সিনটা করতে পারবে।
-ইফাজ তুই।
-কেনো অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি।
-তুই এখানে আসলি কেনো।
-না আসলে কী তোমার এই রুপটা দেখতাম। আমার মা বাবাকে কী তুমি ই মেরে ফেলছো নাকি আছে কোথাও।
— বাবা তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমার কথাটা শোন।
-আর কী শুনবো এখন আবার নতুন গল্প সাজাবে তাই তো। আমি কোনো নতুন গল্প শুনতে চাইনা। এতো বড় ধোকা কী করে দিয়েছো তুমি।
অতসীর মা দুজনে এক সাথে দেখে আগ্রহ নিয়ে আসে কী হয়েছে জানার জন্য । মাঝখান থেকে কথা কিছুই বুঝতে পারে না তাই অতসীকে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে। অতসী মুখে হাত দিয়ে চুপ করতে বলে আর দেখতে বলে এখানে কী হচ্ছে।
-অতসীর মা মাঝঝানে বলে উঠে। ইফাজ বাবা তোমার মাকে নিয়ে রুমে এসে কথা বলো,
-উনি আমার মা নাহ্। আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দেওয়ার যন্ত্র। আরে আপনি বলতেন আমি আপনাকে আমার সব দিয়ে দিতাম। আপনাকে সব দিয়ে দিলে যদি আমি সুখে থাকতাম তাহলে তাই করতাম। সব কেড়ে নিয়েছেন। এসব না করে আমাকে মেরে ফেলতে পারতেন।
ইফাজ এসে উনার হাতে থাকা পেপারটা নিয়ে ছিড়ে ফেলে।
-আমার চোখের সামনে থেকে চলে যান আপনি।
তানিয়া বেগম আর এক মুহুর্তে জন্য ও দাড়ালো না সোজা চলে গেলো।
অতসীর মা এসবের আগা মাথা কিছু না বুঝে বার বার অতসীকে ইশার করছে। কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে বললো,
-অতসী বলবি প্লিজ কী হয়েছে।
অতসী কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেলো। ফ্যানটা হাই স্পিডে ছেড়ে বসে পড়লো। এতোক্ষণ কী হলো সব মাথার উপর দিয়ে গেলো।অতসী কখনো ভাবেও নাই এমন কিছু হবে।
অতসীর মা ইফাজকে এনে অতসীর রুমে বসিয়ে দিলো। ইফাজকে বসিয়ে দিয়ে উনি পানি নিয়ে আসলো। পানি এনে ইফাজকে খেতে দিলো।
আমি বেডে শুয়ে ইফাজের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। চোখ দুটো লালা হয়ে আছে। চোখের পানি টলমল করছে ইফাজ একটু পর পর চোখের কোনো আটকে থাকা পানিগুলো মুছে ফেলছে। কান্না আটকানো যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ইফাজ। ইফাজ আমার দিকে তাকাতে ই আমি চোখ সরিয়ে নেই।
-ইফাজ বাবা তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও আমি তোমার জন্য খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
-মা এখন আমি খাবো না।
ইফাজ ফোন বের করে দাদিমাকে কল দিলো। কল দিয়ে অতসীদের বাসায় আসতে বললো।
অতসীর মা খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছে তাই অতসীর মাকে সব খুলে বলতে লাগলো।
আমি শুধু চেয়ে চেয়ে সব দেখছি। ইফাজ যে আমার উপর অত্যাচার করেছে সব চোখে ভেসে উঠছে। আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ গিয়েছে এ কটা মাস। সহ্য করেছি অনেক তার ফল মনে হয় আল্লাহ আমাকে দেখিয়েছে।
বেশকিছুক্ষনের মধ্যে দেখলাম হাবিবা বেগম চলে এসেছে। এসে ই আমার কাছে এসেছে।
-কেমন আছিস নাতবউ।
-এই তো ভালো, তুমি কেমন আছো?
-তোদের না ছাড়া আমি কী ভালো থাকতে পারি।
-ভালো থাকবে না কেনো? তোমার নাতি তো আবার বিয়ে করছে। নতুন নাতবউ পাবা।
আমার কথা শোনে দাদিমা অবাক দৃষ্টিতে ইফাজের দিকে তাকালো,
-তুই আবার বিয়ে করবি।
-এগুলো বাদ দিয়ে বলো, তানিয়া বেগম যে আমার মা না তা কেনো এতোদিন বলোনি।
হাবিবা বেগম নিচের দিকে তাকিয়ে উওর দিলো,
-তুই এসব জানলি কোথা থেকে।
-দাদিমা আমি তোমাকে যা জিজ্ঞেস করেছি তার উওর দেও।
-দাদুভাই তুই যদি কষ্ট পাস যে তোর মা বাবা নেই সে জন্য।
-আমার মা বাবা নেই মানে।
-তোর বাবা মা এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। এর পর থেকে ই তানিয়া তোকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করেছে। তাই জন্য কখনো তোকে আমি তোর বাবা মার কথা বলিনি।
-তানিয়া আমাকে নিজের স্বার্থে জন্য মানুষ করেছে। এটা তোমরা বুঝতে পারোনি।
ইফাজ সব কিছু হাবিবা বেগমকে বলে।
-দাদুভাই এতো কিছু বুঝিনি রে। মাফ করিস আমাকে।
অতসীর মা দাদিমাকে নিয়ে গেলেন কারণ উনার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছে। অতসী আগের ন্যায় বিছানায় শুয়ে আছে। ইফাজ আস্তে আস্তে অতসীর পাশে গিয়ে বসে। ইফাজকে আসতে দেখে অতসী চলে যেতে নেয়। ইফাজ জোর করে অতসীকে বেডে বসিয়ে দেয়। অতসীর হাত ধরতে ই সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে অতসী ইফাজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। ইফাজ হঠাৎ অতসীর পা জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। কান্না জড়িত কন্ঠ বলতে থাকে। অতসী প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও। আজকের পর থেকে আমি কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না। এখন তুমি ও যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না। আমি মরে যাবো।
অতসী পা ছাড়িয়ে বললো,
-যে অন্যের কথা শোনে আমাকে মারতে পর্যন্ত দুবার ভাবেনি তাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।
চলবে,