স্পর্শ পর্ব-১৭

0
1105

#স্পর্শ
#পর্ব_১৭
#writer_nahida_islam

আমি আর কোনো কথা বললাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে রাতে ই কোথাও চলে যাবো। কখনো থাকবো এই কালপিটের সাথে। আমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছে তা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। এই মানুষটার সাথে একই ছাদের নিচে থাকা সম্ভব নয়।

-অতসী চলো।

-আমাকে বাসায় রেখে আসুন।

-শুধু শুধু কথা বাড়িয়ো না। ঐ বাসায় তোমার থাকতে প্রবলেম হবে।

-কোনো প্রবেলম হবে না।

-তুমি জানো হাজার বার বললে ও আমি তোমাকে আর ঐ বাসায় যেতে দিবো না।

বুঝতে পারলাম বলে কোনো কাজ হবে না। তাই আর কোনো কথা বললাম না বাসার ভেতরে চলে গেলাম। আমি বাসার ভেতরে ডুকতে ই রানু দৌড়ে আসলো,

-নতুন বউ তুমি আসছো। জানো তুমি এতোদিন ছিলে না আমার খুব কষ্ট হয়েছে।

-কষ্ট হবে কেনো, তুমি আমার বাবার বাড়িতে চলে যেতে। আমি ও তোমাকে দেখতাম তুমি ও আমাকে দেখতে।

-আপনাকে না বললাম আমার এই বাড়ি থেকে আপনি চলে যান তারপর ও কেনো এখানে থেকে গেলেন।

ইফাজের চিৎকার চেচামেচিতে আমি পেছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখলাম তানিয়া বেগম কে ইফাজ কথাগুলো শুনচ্ছে। প্রতিউওরে তানিয়া বেগম চুপটি করে দাড়িয়ে আছে,

-কথা বলছেন না কেনো?

-বাবা আমাকে মাফ করে দে। আমি তোদের ছাড়া থাকতে পারবো না।

-আপনাকে ভালোয় ভালোয় বলছি আপনি বাসা থেকে বের হয়ে আপনার জন্য রাখা ফ্ল্যাটে চলে যান।

-এই সংসার আমি এতোদিন ধরে রেখেছি। আমি তোকে বড় করেছি। এতো বছরের মায়া ছাড়তে পারিনা বাবা। আমাকে ক্ষমা করে দে।

-ক্ষমা আমার কাছে না অতসীর কাছে চান, অন্যায় আমার সাথে না অতসীর সাথে করেছে।

তানিয়া বেগম দ্রুত এসে আমার হাতে ধরে বললো,

-মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি তো আমার মেয়ের মতো ই বলো।

আমি সাধারণ ভাবে উওর দিলাম,

-আপনি ও তো আমার মায়ের মতো ই ছিলেন তাহলে কী করে পারলেন এতো টা কষ্ট আমাকে দিতে। ক্ষমা তাদের করা যায়, যারা না বুঝে ভুল করে। যারা সজ্ঞানে ভুল করে তাদের ক্ষমা করার প্রশ্ন ই আসে না।

আমি আর দাড়ালাম না, নিজের রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু চোখে কিছুতে ই ঘুম আসছে নাহ্।

রাত দশটার দিকে,

-অতসী ঘুমিয়ে পড়ছো?

-নাহ্

-তাহলে আসো খেয়ে নিবে।

-ক্ষুধা নাই।

-আমার উপর রাগ করো খাবার উপর নয়।

-আমি কারো উপর রাগ করে নেই।

-তাহলে খেতে চলো।

-বললাম তো ক্ষুধা নাই।

-আচ্ছা তো রুমে খাবার নিয়ে আসি।

-বললাম তো খাবো না।

কিছুটা জোড়ে কথাটা বলতে ই ইফাজ আমাকে আর কোনো কথা বললো না, সোজা রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর ইফাজ আবার এসে লাইটা অফ করে আমার পাশে শুয়ে পড়লো। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে ও পড়বে। কিন্তু আমার ঘুম কিছুতে ই আসছে না। একটা ই চিন্তা যে করে ই হক এখান থেকে বের হতে হবে। কী করবো কোথায় যাবো জানি না কিন্তু এটা জানি আমি এখানে থাকবো নাহ্।

ইফাজ ঘুম থেকে উঠে, কিন্তু পাশে অতসীকে পায় না। ইফাজ ভাবলো হয়তো রাগ করে অন্য রুমে ঘুমিয়েছে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষন কেটে যাওয়ার পর ও যখন অতসীর কোনো সারাশব্দ পাচ্ছে না তখন ইফাজ উঠে বসলো। কিছু একটা ভেবে ইফাজ অতসীকে কয়েক বার ডাকলো। ডাকার পর ও যখন অতসী অতসীর কোনো সারা পাচ্ছে না তখন ইফাজ অতসীকে খুজতে নিচে আসে।

-রানু তুমি অতসীকে দেখেছো?

-না দাদাভাই।

-আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি খুজে দেখো তো কোথায় আছে।

ইফাজ রানুকে খুজতে বলে নিজের রুমে চলে যায়। রানু একেএকে সবার রুম খুজতে থাকে, তানিয়া বেগমের রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-খালাম্মা নতুন বউ কী আপনার রুমে আসছে।

-না তো কেনো? ইফাজের দাদির রুমে দেখতে পারিস। অতসী তো ঐ রুমে প্রায় ই বসে থাকে।

-আচ্ছা আপনার সাথে পরে কথা বলবো, আগে নতুন বউকে খুজে বের করি।

রানু আর দেরি করলো না, দাদিমার রুমে চলে গেলো। সকাল বেলা করে উনি তো এখনো জায়নামাজ ছেড়ে ই উঠেন নি। আর উনার রুমে ও উঁকি মেরে দেখলো অতসীর কোনো অস্তিত্ব ই নেই।

-এই রানু সাত সকাল বেলা এমন চোরের মতো উঁকি দিচ্ছিস কেনো।

-নতুন বউকে খুঁজছিলাম।

-কেনো কী হয়েছে?অতসী কী এই সকাল করে আমার কাছে আসবে নাকি।

-কোথাও খুজে পাচ্ছি না তাই আপনার রুমে খুজতে এসেছি।

-খুজে পাচ্ছি না মানে, চোখে কম দেখিস হয়তো তাই খুজে পাচ্ছিস না।

-আমি কানা তো তাই না।

-বেশি কথা না বলে অতসীকে পেলে বলবি আমার সাথে দেখা করতে। কালকে আসলো অথচ আমার সাথে দেখা করলো না।

রানু আর কোনো কথা না বলে, আমার প্রতিটি রুম ভালো করে খুজে। তারপর ছাদে খুজে, বাগানে ও অতসীকে খুজতে যায় কিন্তু অতসীকে কোথায় ও না পেয়ে হতাশ হয়ে ইফাজের রুমের দিকে যায়।

-দাদাভাই নতুন বউকে তো পেলাম না খুজে।

-দাদিমার ঘুমে দেখেছো?

-হে

-ছাদে গিয়ে দেখো আছে হয়তো।

-তাও দেখেছি কোথাও নাই।

ইফাজ ফোনটা বের করে দারোয়ান কে কল দেয়। কিন্তু দারোয়ান তো অতসীকে বাসার ভেতর থেকে বাহিরে যেতে দেখেনি।

অতসী বসে বসে বাসা থেকে বের হওয়ার কথা ভাবছে,

সারা রাত জেগে ছিলো, একটু পর পর ঘড়ি দেখেছে
উঠে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম তিনটা উনপঞ্চাশ বাজে। দেরি করলাম না উঠে পড়লাম। আস্তে আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে পড়লাম। পিছনের দরজা খোলে সোজা মেইন গেইটের সামনে চলে গেলাম। দারোয়ান গেইটে ছিলো না হয়তো অজু করতে গিয়েছে। এই ফাকে আমি বেরিয়ে পড়লাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। খুব কষ্ট হয়েছে বাসা থেকে বের হতে। মানুষজন নামেজে যাচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে মানুষজন। আমি আর দাড়িয়ে থাকলাম না। দশমিনিট হাটলে ই সামনে স্টেশন।

হকারদের হাক ডাকে বাস্তুবে ফিরে আসলাম। চারপাশে মানুষ আবার ও বিরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবছে, এমন পোশাক পড়ে কেউ কী বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আমি চুলগুলল ও ভয়ে ভালো করে বাধতে পারিনি।
অপেক্ষা শব্দটা বরাবরই খুব খারাপ। এমনি তে ই খুব ভয়ে আছি তার উপর ট্রেন আসবে সাতটায়। এতোক্ষণ বসে থাকা যায় নাকি। তারউপর আবার মানুষ। সকাল বেলা মানুষ কম থাকে জানতাম কিন্তু এখন টেনশনে এসে দেখলাম অন্য রুম। নতুন শহরে পা রাখবো নতুন করে নিজের জীবনটাকে সাজাবো। নতুন করে আবার বাচতে শিখবো। থাকবে না পিছুটান। কারো কথা শুনে আর চলতে হবে না।

ইফাজ অনেক ভেবে ও কূল পাচ্ছে না যে অতসী কোথায় যাবে। অতসীর বাবার বাড়িতে কল দিলো কিন্তু অতসী সেখানে ও যায়নি। হঠাৎ মনে হলো মেইন গেইটের সিসিটিভির কথা। ইফাজ দৌড়ে গিয়ে লেপটপ নিয়ে এসে ফুটেজ বের করতে ই দেখে। অতসী চারটা আটের দিকে মেইন গেইট ক্রস করে। তখন দারোয়ান নামাজ পড়ছিলো। মেইন গেইট ক্রস করে দক্ষিণে দিকে যাচ্ছে। এর পর আর অতসীকে দেখা যায়নি। ইফাজ আর দেরি করলো না গাড়ির চাবিটা নিয়ে বের হয়ে পড়ে।

চলবে,