#স্পর্শ
#পর্ব_২০
#writer_nahida_islam
-আমি কী করবো সবাই আমাকে এই নাম ধরে ডাকে।
-সবাইকে তোমার আকিকা দিয়ে দাওয়াত খাওবা তাহলে নতুন নাম ধরে সবাই ডাকবে। আর যদি কেউ স্পর্শ বলে ডাকে তাহলে মেরে তোমার কোমর ভেঙ্গে দিবো।
-একটা অচেনা মেয়ের সাথে আপনি এভাবে কথা বলছেন। এই নামটা কী আপনার নামে দললি করে রেখেছে।
-হে, আমার নামে দলিল করে রেখেছি। আরেকটা কথা বললে থাপ্পড় মেরে গাল লাল করে ফেলবো। যেটা বলছি ঐটা করবা।
স্পর্শ খুব উশৃংখল ব্যবহার করছে, স্পর্শিয়া আস্তে করে বললো,
-মেয়েদের কে সম্মান দিতে শিখুন, মনে রাখবে আপনার মা ও একজন মেয়ে। আপনার মায়ের কাছ থেকে শিখে নিবেন কী করে অন্য একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে হয়।
স্পর্শিয়া কথাটা শুনে স্পর্শ দৌড়ে বাইকে উঠে যায়। হাই স্পিড গাড়ি চালিয়ে সোজা বাসায় ডুকে। বাসায় ডুকে বাইকটা রেখে ই বাগানের উওর সাইডে শিউলি তলায় অতসীর কবরের পাশে গিয়ে বসে পড়ে। দুচোখ থেকে অঝোরে অশ্রু পড়ছে। মায়ের কথা মনে হলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। কখনো তো মাকে সামনে থেকে চোখের দেখা টা ও দেখেনও। মায়ের ছবি দেখেছে। মায়ের ছবিতে কতো শত চুমু খেয়েছে তার হিসাব নেই বললে ই চলে। মায়ের আদর ভালোবাসা কখনো অন্য কেউ দিতে পারেনা।
পৃথিবীতে সবার মা আছে আমার কেনো মা নেই। রোজ সবাইকে যখন তাদের মা স্কুলে দিয়ে যেতে আমি দূর থেকে শুধু তাকিয়ে দেখতাম। আর ভাবতাম আমার মাকে কেনো আল্লাহ নিয়ে গেলো। মাকে একা না নিয়ে আমাকে ও মায়ের সাথে নিয়ে যেতে।
স্পর্শ কবরের পাশে বসে এসব বলছে আর কান্না করছে।
নীলু বেলকনিতে দাড়াতে ই চোখ যায় অতসীর কবরের পাশে কেউ বসে আছে। নীলুর বুঝতে অসুবিধে হলো না এটা স্পর্শ। নিশ্চয়ই আবার কেউ মায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে তাই তো ওখানে বসে বসে কাদছে। নীলু দৌড়ে বাগানে গেলো। স্পর্শে কাদে হাত রাখতে ই স্পর্শ নিলুকে জড়িয়ে ধরে জোরে কেদে উঠে। নীলু স্পর্শকে নিয়ে বাসায় ডুকে। স্পর্শকে সোফায় বসিয়ে নীলু নিচে বসে পড়লো,
-আচ্ছা স্পর্শ এভাবে বাচ্চাদের মতো কান্না করলে আমার কী কষ্ট হয় না বল তো। আমি কী তোর মা না?
-মা কখনো অন্য কেউ হতে পারে না। আমার মা আল্লাহর কাছে চলে গেছে। মামনী।
-স্পর্শ বাবা এভাবে বলো না আমি তো আছি, যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
অতসীর মৃত্যুর পর পর ইফাজ খুব ভেঙ্গে পড়ে যার কারণে রোহানকে ইফাজের ব্যবসা সামলাতে হয়েছে। রোহানের সাথে নীলুর বিয়ে হয়ছে কয়েকবছর হলো তাদের ছোট একটা মেয়ে আছে আয়ন্তি। রোহান, নীলু, আয়ন্তী এখন ইফাজের বাসায় ই থাকে।
অতসীর মৃত্যুর পর ইফাজ আর দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবে ও নি। বেশ সময় লেগেছে অতসীর মৃত্যুর ধাক্কাটা সামলাতে। সব কিছু ভুলে ছেলেকে বড় করেছে। কিন্তু শাসন করেনি। ছেলে কান্না করলে সাথে ইফাজ ও কান্না করতো। স্পর্শ একটু ব্যাথা পেলে স্পর্শের থেকে বেশি ইফাজের ব্যাথা লাগতো মনে হতো। স্পর্শ সব আবদার ইফাজ পূরণ করেছে শুধু মায়ের ভালোবাসা টুকু দিতে পারেনি। ইফাজ আজ ও কাদে অতসীর জন্য।
ইফাজ প্রায় সব সময় ই বেলকনিতে বসে থাকে কারণ এখান থেকে অতসীর কবরটা স্পষ্ট দেখা যায়। অতসীর মৃত্যুর পর পর ই দাদিমা মারা যায়।
স্পর্শ ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে খেতে বসে। তানিয়া বেগম স্পর্শের সামনে চেয়ার টেনে বসতে ই বললো,
-অ গো তানিয়া তুমি আমাকে কিছু টাকা দিতে বাধিত থাকবে।
-কালকে ই তো টাকা দিলাম?
-এই টাকায় কী হয় বলো।
-তোর বাবার কাছ থেকে চেয়েনে।
-তানিয়া মরে গেলে বাবার কাছে চাইবো।
-কালকে যে টাকা দিয়েছে তার হিসাব দে।
-বন্ধুদের ট্রিট দিয়েছি।
-কীসের ট্রিট কী এমন আহামরি পাস করছোস। দুইবার পরিক্ষা দিয়া তিনবারের মাথায় টেনেটুনে এসএসসি পাশ।
– ঐ বুড়ি বেশি ব্রিলিয়ান্ট, ফাইভ পাস ও তো করোনি।
নীলু পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে। তানিয়া বেগম আর কোনো কথা বললো না। জানে এই ছেলের সাথে পেড়ে উঠা যাবে না।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ই স্পর্শ কলেজে চলে যায়। স্পর্শ দেখতে ৫’৭ গায়ের রং অতসীর মতো ই সুন্দর। চুলগুলো স্পাইক করা। বাইক নিয়ে কলেজে ডুকার সময় মেয়েরা হা করে তাকিয়ে থাকে। কয়েকটা মেয়ে স্পর্শকে প্রপোজ ও করেছিলো কিন্তু স্পর্শ ওদেরকে অপমান করে না করে দিয়েছে। কিন্তু একটা মেয়ে আছে নাবিলা যে আঠার মতো স্পর্শের পেছনে লেগে আছে। নাবিলাকে এ পর্যন্ত করো অপমান করেছে কিন্তু এই মেয়ে স্পর্শের পিছু ছাড়ে না।
স্পর্শিয়া ঘুম থেকে উঠে, রান্নাবান্না শেষ করে তার অসুস্থ মাকে খাবার খাইয়ে ঔষধ খাওয়ালো। সব শেষে করে গোসল করে ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে ই দৌড়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলো কারণ অনেকটা লেইট হয়ে গেছে।
স্পর্শিয়া কলেজে ডুকে ক্লাস রুমের দিকে যেতে ই কেউ পেছন থেকে ডাকতেই স্পর্শিয়া পেছন ঘুরে তাকতেই স্পর্শিয়ার চুলগুলো স্পর্শের মুখে ভারি লাগে। স্পর্শ রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে ই স্পর্শিয়া বলে উঠলো,
– সরি।
-দেখে চলতে পারো না।
-আপনি আমার পেছনে আছেন এটা আমি জানলে কলেজের সবাই মিলে ডাকলে ও পিছু ফিরতাম না।
-আর আমি ও যদি জানতাম তুমি নামক পেত্নী সামনে তাহলে কখনো তোমার পিছু হাটতাম না।
-না হাটলে সামনে যান। আমি আপনাকে জোর করে আমার পিছনে এনে দাড় করাইনি।
-ভুল করেছো তুমি আবার বড় বড় কথা।
-ভুল করেছি তাই সরি ও বলেছি।
-সরি বললে কী সব শেষ হয়ে যায়।
স্পর্শিয়া মুখ বাকিয়ে বললো,
-অবশ্যই।
স্পর্শ স্পর্শিয়া চুলে ধরে জোরে টান মেরে বলে,
-সরি।
স্পর্শিয়া ব্যাথায় পেয়ে মাথায় হাত দিয়ে সামনে তাকাতে ই দেখে স্পর্শ ক্লাস রুমে ডুকে পড়েছে।
-হাই স্পর্শিয়া
– তুমি আমাকে পিছন থেকে ডেকেছিলে কেনো?
-এমনি তোমার সাথে ক্লাসে যাবো বলে।
-দেখলে তো ঐ বজ্জাতটার সাথে কতো জামেলা হলো।
-স্পর্শকে বজ্জাত বলো না শুনতে পারলে তোমার খবর করে ছাড়বে।
-আরে এই ছেলেকে আমি ভয় পাই নাকি। চলো তো ক্লাসে যাই।
ক্লাস শুরু হওয়ার পর একটু পর পর কেউ কারো দিকে মুখ ঘুরিয়ে ও দেখেনি একবার। কিন্তু দুজনে দুই বেঞ্চের সাইডে। স্পর্শ অন্য দিকে ঘুরে তাকিয়ে বসে আছে দেখে রুহিত জোরে বললো,
–তোর ঘাড় কী বাকা হয়ে গেছেরে স্পর্শ এভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে বসে আছিস।
-আরে বলিস না ডান সাইডে যে পেত্নী বসেছে তা না দেখার জন্য এদিকে ঘুরে বসে আছি।
স্পর্শিয়া কথাটা শোনে বললো,
-এমন অসভ্য লোক আমি জীবনে ও দেখেনি।
স্পর্শ এবার ডান দিকে ঘুরে বললো,
-অসভ্য কাকে বললে।
-এমা আপনি বাম সাইডে বেকে বসেন এদিকে তো পেত্নী বসেছে।
-ঐটা তোমার দেখতে হবে না। অসভ্য কাকে বললে।
এই মাঝখানে স্পর্শ আর তার সাইডের মেয়েটা দাড়াও। ক্লাস করছি দেখতে পাচ্ছো তার মধ্যে দুজনে সংসারের আলাপ জুড়ে দিয়েছো।
-সংসারে আলাপ মানে?
-স্পর্শ আবার মুখে মুখে কথা বলছো।
-স্যার আমি বসি আমার কোনো দোষ নেই, সব দোষ এই মেয়েটার।
-আর একটা কথা বললে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখবো।
স্যার আবার পড়াতে লাগলেন এটুকু বলে।
-সব দোষ এই তোমার।
-নিজের দোষটা শিকার করুন, আমাকে পেত্নী বলতে গেলেন কোন সাধে।
-তুমি আমাকে অসভ্য বললে কেনো। তোমার জন্য সব হয়েছে। এতো বড় ছেলে হয়ে ক্লাসে দাড়িয়ে থাকবো।
স্পর্শ কথাটা বলে শেষ করে দেখে স্যার তার দিকে রাগি লুক দিয়ে তাকিয়ে আছে।
-স্পর্শ তুই এক পায়ে দাড়িয়ে কানে ধরে দাড়া। এই মেয়ে তুমি বসে যাও।
স্পর্শিয়া বসে মিটমিট করে হাসছে,
-কেমন লাগছে এখন, এতো বড় দামড়া দাড়িয়ে আছে তা দেখতে কিন্তু সেই লাগছে।
স্পর্শ রেগে গিয়ে বললল, দেখে নিবো তোমাকে, আজকে খালি ক্লাস শেষ হতে দেও।
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]