#স্পর্শ
#পর্ব_২৪
#Writer_ Nahida_islam
-ও আচ্ছা তো স্পর্শিয়ার ভালো আন্টির সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিতে পারবেন।
-দারোয়ান স্পর্শকে ভেতরে নিয়ে গেলো। অতসীকে ডেকে বললো,
-উনি ই হলো স্পর্শিয়া ভালো আন্টি।
অতসী চোখের চশমাটা খুলে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছে। আবার মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে। যন্ত্রণা উপেক্ষা করে স্পর্শকে দেখছে। স্পর্শ এতোক্ষণ হাসি মুখে ছিলো কিন্তু অতসীর মুখটা মলিন দেখে জিজ্ঞেস করলো,
-আসসালামু আলাইকুম । আমি স্পর্শ। স্পর্শিয়া আর আমি এক ক্লাসে পড়ি। স্পর্শিয়া কাছ থেকে শুনলাম আপনি নাকি আমার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাই দেখতে আসলাম, আপনি কী অসুস্থ আমি কী পরে আসবো।
স্পর্শ এক নিঃশ্বাসে কথাট শেষ করে নিলো।
-না বাবা বসো তুমি। আমি ঠিক আছি।
অতসী চেয়ার টেনে দিলো। স্পর্শ চুপচাপ অতসীর দিকে তাকিয়ে আছে ভালো করে দেখে বললো,
-আপনি না আমার মায়ের মতো দেখতে।
অতসীর মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে খুব বার বার বাচ্চা কান্নার আওয়াজ কানে আসছে তাও কেনো জানি ছেলেটার সামনে বসে থাকতে ভালো লাগছে। অতসী মুখে হাসি টেনে বললো,
-ওহ্ একদিন তোমার মাকে নিয়ে এসো।
-আমার মা বেচে নেই, জন্মের পর মাকে আমি দেখিনি।
স্পর্শ কথাটা বলতে ই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে লাগলো।অতসী উঠে গিয়ে স্পর্শের চোখের পানি মুছে দিলো।
-আরে বাবা কান্না করছো কেনো, আমাকে মা বলে ডাকবে আশ্রমের সব বাচ্চারা তো আমাকে মা বলে ই ডাকে। আজ না হয় আমার ছেলে আরো একটা বেড়ে গেলো।
স্পর্শ হালকা হাসলো।
-বাবা তুমি দুপুরে খেয়েছো।
স্পর্শ মাথা নাড়িয়ে বললো না। অতসী রান্নাঘরে দিকে গেলো। অতসীর ভাগের খাবারটা স্পর্শের জন্য নিয়ে গেলো।
-বাবা চলো খেয়ে নিবে।
-না মা আমার ক্ষুধা নেই।
-ম বলে যখন ডেকেছো তখন তো মায়ের কথা শুনতে ই হবে।
অতসী স্পর্শকে খাবার দিয়ে দাড়িয়ে আছে, কেনো জানি মা বলে ডাকতে খুব ভালো লাগছে। খাবারের কথা বললো তাও নিষেধ করতে পারেনি। হয়তো মায়ের মুখের সাথে অনেকটা মিল আছে তাই ভেতর থেকে মায়া অনুভব করছে।
অতসী পলকহীন ভাবে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকদিন পর ছেলেটাকে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।
-খালাম্মা আপনে যে এই পোলাডা রে খাইতে দিলেন অহন আপনে খাইবেন কী।
অতসী চোখ রাগিয়ে রুমির দিকে তাকায়। রুমি হচ্ছে রান্নাবান্না করে।
-কোথায় কী বলতে হয় তা জানো না দেখছি রুমি। তোমাকে আমি বলেছি এখন এ কথা বলতে।
-আপনে খান নাই, আর ড্রামে চাল ও নাই তো আমি কী বলবো না। এখন তো সারা রাত না খাইয়া থাকতে হবে।
-আমার সামনে থেকে যাও রুমি।
-মা বকো কেনো। তুমি খাওনি তা আগে বলোনি কেনো।
অতসী আর কিছু বললো না স্পর্শ খাবার শেষ করে দারোয়ানকে নিয়ে বাজারে গেলো। স্পর্শের কাছে যা টাকা ছিলো সব দিয়ে আশ্রমের জন্য বাজার করলো। চাল, ডাল, আলু, যা লাগে। মোটামুটি তিন চার দিনের খাবার। স্পর্শ টাকাগুলো নিয়েছিলো ইফাজের কাছ থেকে বন্ধুদের সাথে মজা করবে বলে কিন্তু আশ্রমে খাবার নেই শুনে মনটা খুব খারাপ লাগলো। তাই আর দেরি করেনি বাজার করতে চলে আসে।
স্পর্শ বাজার করে আশ্রমে ডুকে ই মা বলে ডাকতে থাকে। স্পর্শের ডাকটা শুনে ই অতসী রুম থেকে বের হলো, বের হয়ে এতো বাজার দেখে অতসী অবাক হয়ে যায়।
-বাবা তুমি এগুলো কী করেছো?
-তোমার ভাগের খাবার খেয়েছি তাই আমার ভাগের টাকা দিয়ে তোমার জন্য আবার খাবার নিয়ে এসেছি।
স্পর্শিয়া এমন হাক ডাক শুনে বাহিরে এসে স্পর্শকে দেখে চোখদুটো রসগোল্লা মতো বড় বড় করে ফেলে।
-এই আপনি আমার পিছু নিয়ে আমার বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছেন।
– চুইংগামের আঠা মতো লেগে সব সময় আমার
পিছনে পড়ে আছে।
-ভালো আন্টি এই ছেলে ই সেই বজ্জাত ছেলে যার জন্য তুমি কালকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে।
-তাই আজ সুস্থ করতে চলে এলাম।
-সুস্থ না ছাই। আমার আশ্রম থেকে বের হন।
-আরে মা তুমি এমন করছো কেনো, দেখো ছেলেটা কত বাজার করে নিয়ে এসেছে আশ্রমের বাচ্চাদের জন্য।
স্পর্শিয়া নিচের দিকে তাকাতে ই হা হয়ে গেলো। এই ছেলে করেছে টা কি।
স্পর্শ স্পর্শিয়াকে পাত্তা না দিয়ে অতসীর কাছ গেলো,
-মা আমাকে বাসায় যেতে হবে আমার বাবা হয়তো অনেক চিন্তা করছে। আপনি রাতে ভালো করে খাবেন।আবার কালকে আসবো বায়।
স্পর্শ অতসীকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে দৌড়ে বাইক নিয়ে বের হয়ে যায়।
সুমা সব শুনেছে অতসীর কাছ থেকে। ছেলেটা বড়ই অদ্ভুত কেমন আসলো, অতসীর সাথে মুহুর্তেই মিশে গেলো। আবার আশ্রমের জন্য খাবার ও কিনে আনলো। সে যা ই হক আশ্রমের খাবারের ব্যবস্থা তো হলো আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে আল্লাহ কখনো খালি হাতে ফেরায় না।
-এই ভালো আন্টি এই বেয়াদব ছেলেটা তোমাকে মা বলে ডাকে।
-স্পর্শিয়া ওর মা নেই। ওর মা ছোটবেলা মারা গিয়েছে।
-আরে মিথ্যা বলছে তোমাকে।
অতসী স্পর্শিয়ার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো,
-আর যা ই হক কখনো কেউ মা বাবা নিয়ে মিথ্যা বলে না।
স্পর্শ বাসায় ডুকতে ই ইফাজকে সোফায় বসে থাকতে দেখলো,
-স্পর্শ এতোক্ষণ কোথায় ছিলে।
-বাবা জানো আমি আজকে একটা মা পেয়েছি। দেখতে পুরো আমার মায়ের মতো। উনার কাছে ই এতোক্ষণ ছিলাম।
তানিয়া বেগম মাঝখান থেকে বলে উঠলো,
-কারে না কারে মা ডাকে ছেলেটা। তোর মা মরে গেছে জানিস না।
-তুমি মরতে পারলে না শয়তান বুড়ি আমার মা না মরে।
-দেখলি ইফাজ তোর ছেলে কী বলে।
কথাটা বলতে বলতে তানিয়া বেগম সোফার দিকে তাকাতে ই দেখলো ইফাজ নেই। অতসীর কথা মনে হতে ই রুমে চলে গিয়েছে।
এতো বছর হলো তাও অতসীকে মন থেকে এক বিন্দু ও সরাতে পারেনি। যাকে মন থেকে ভালোবাসা যায় একবার তাকে কী কখনো ভুলা যায়। বিয়ে হলো বাচ্চ ও হলো কিন্তু সংসারটা আর ঠিক করে হয়ে উঠেনি। তার আগে ই অজানা ঝড়ে জীবনটা তছনছ করে দিয়ে চলে গেলো। যদি জীবন নিয়ে লিখতে বসে তাহলে ইফাজের প্রাপ্তির খাতায় ডাবল শূন্য পড়বে। জীবনে যা চেয়েছিলো তা কখনো ই পায়নি। জীবনে সুখের হাতছানি পাওয়ার আগে ই দুঃখ এসে ঝাপটে ধরেছে। তবে হাল ছাড়েনি এই তো এখন ও বেচে আছে একটুখানি সুখে আশায়। সুখ তো পেয়েছে স্পর্শ নামক সুখ কিন্তু এই সুখটা ও যে উপভোগ করতে পারেনা। স্পর্শের মুখের দিকে তাকালে আগে অতসীর মুখটা ভেসে উঠে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে স্পর্শিয়া। খাবে নাকি খাবে না ভাবছে। না খেয়ে ও তো উপায় নেই। এই খাবারগুলো তো স্পর্শ কালকে সবার জন্য কিনে দিয়ে গেছে।
-কী এতো ভাবছিস?
অনমনে স্পর্শিয়া উওর দিলো,
-কিছু না মা। আমি যাচ্ছি।
-কোথায় যাচ্ছিস না খেয়ে।
স্পর্শিয়া কোনো কথা না বলে ই কলেজে চলে আসলো। ক্লাসে ব্যাগটা রেখে ক্যাম্পাসের চারদিকে খুজতে লাগলো। খুজতে খুজতে কলেজে বাহিরে চলে এসেছে। অন্যদিন মাথা খায় আজকে পাওয়া যাচ্ছে না।
-আমাকে খুজছিলে বুঝি।
স্পর্শকে দেখে স্বাভাবিক ভাবে ই বললো,
-দয়া দেখিয়ে কী কালকে বাজার করে দিয়ে এসেছেন।
-তোমার সাথে আমার কোনো কথা হয়নি তাই তুমি এসব নিয়ে আমার সাথে কথা বলবা না।
-আমি আপনার টাকা শোধ করে দিতে চাই।
স্পর্শ হেসে বললো,
-তাই নাকি।
-হে।
-আচ্ছা তাহলে আমি ই তোমাকে একটা কাজ দেই।
চলবে,
[ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]