#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#১৮তম_পর্ব
জাওয়াদ পেছনে ঘুরতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো সে। চিংকি দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ পাংশুটে বর্ণ। চোখে এক তীব্র অবিশ্বাস। অস্পষ্ট স্বরে শুধালো,
“কিসের স্বপ্ন?”
মেয়েটির কাজল দেওয়া ছোট ছোট চোখে জমেছে অশ্রুকণা। সে কি সবটা শুনে ফেলেছে। জাওয়াদের লুকোচুরি খেলা কি তবে এখন শেষ দান দিয়ে ফেললো। একত্রে অনেকটা প্রশ্ন ঢেউ তুললো মন সমুদ্রে। নিদারুণ সূক্ষ্ণ ব্যথা অনুভূত হল সেই সাথে। মুখের মাংসপেশী গুলো শিথিল হয়ে গেলো। কিছু বলতে যেয়েও যেন থেমে গেলো। সবসময় মিথ্যে বলা যায় না। মিথ্যের প্রাচীর যত বিশাল হোক না কেন এক না একসময় তা ভাঙ্গতেই হয়। জাওয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চিংকি অধৈর্য্য হয়ে গেলো যেন। জাওয়াদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে শক্তকন্ঠ শুধাল,
“জাওয়াদ সাহেব, আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি”
পাভেল আভাস পেলো শীতল পরিস্থিতির। সে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ফলে সেখানে শুধু দাঁড়িয়ে রইলো জাওয়াদ এবং চিংকি। সেই সাথে এক অস্বস্তি জড়ানো দীর্ঘশ্বাস।
****
ভেন্যুর এক ফাঁকা ঘরে মুখোমুখি বসে রয়েছে জাওয়াদ এবং চিংকির। চিংকির চোখজোড়া টলমলে। বিশ্বাস ভাঙ্গার আঘাতে কাতর হয়ে আছে হৃদয়। তবুও মুখমন্ডলের মাংসপেশী স্থির। দৃষ্টি শীতল। খুব ঠান্ডা স্বরে শুধালো,
“কোন স্বপ্ন নিয়ে কথা বলছিলেন? যা না দেখলে আপনি কখনো আমার সামনে আসতেন না?”
জাওয়াদ গাল ফুলিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো। অস্বস্তিমাখা স্বরে বললো,
“আমি প্রায় রাতে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। তোমার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। স্বপ্নটা যে রাতে দেখতাম তার পরদিন আমার সাথে শুধু অঘটন ঘটতো। শাম্মীর সাথে ব্রেকাপ, আমার বাইকের এক্সিডেন্ট, প্রমোশন আটকে যাওয়া, নোটিশ পাওয়া ইত্যাদি। এরমধ্যেই তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা উঠে। বাবার উপর কথা বলার সাহস আমার নেই। আমি বাবাকে খুব ভয় পাই, তুমি জানো। তাই আমি অমত করি নি। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখতে এসেছিলাম আমি থতমত খেয়ে যাই। সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছিলো। উপর থেকে তোমার সাথে দেখা হবার পর থেকে আমি আর স্বপ্নটা দেখতাম না। যেদিন তোমাকে দেখতাম আমি স্বপ্নটা দেখতাম না। এজন্য……”
“এজন্য আপনি আমার সাথে প্রতিদিন দেখা করতেন। আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও?”
“হ্যা। আমি শুধু স্বপ্নটা থেকে রেহাই চেয়েছি। আই থট, ছয় বছর আগে তোমাকে রিজেক্ট করাতে তুমি আমাকে বদদোয়া দিচ্ছো। যেহেতু আমি জীবনে প্রথম কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকলে সেটা তুমি ছিলে। সেদিনটা আমার খুব খারাপ কেটেছে বলেছিলাম তোমাকে। মারপিট পর্যন্ত করেছিলাম প্রথমবার। তাই সব রাগ আমি তোমার উপর ঝেড়েছি। তোমার কোনো দোষ তো ছিলোই না। সো আই ওয়াজ ফিলিং গিল্টি। বাট তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেও লাভ হচ্ছিল না। স্বপ্ন আমার পিছু ছাড়ছিলোই না। সো আমার মনে হয়েছিলো কোনো ব্লাক ম্যাজিক টাইপের ব্যপার কি না। মামার পরামর্শে পড়াবাবাকেও দেখিয়েছি আমি। কিন্তু কাজ হয় নি। আই এম সরি। আই এম এক্সট্রিমলি সরি”
জাওয়াদের অপরাধী স্বর মস্তিষ্কে ঢুকলো না যেন। বরং স্বপ্নের যে তাজমহলটা একটু একটু তৈরি করেছিলো চিংকি, সেই মহলের উপর দিয়ে যেন বুলডোজার চলে গেলো। কি অসহ্য ব্যথা? বিশ্বাস, স্বপ্ন ভাঙ্গার ব্যথাগুলো এতো কষ্টদায়ক হয়? মাথাটা খালি খালি লাগছে। চোখ জ্বলছে। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি। ধরা স্বরে শুধু শুধালো,
“আপনার কাছে আমার একটাই প্রশ্ন, আপনি কি কখনো আমাকে ভালোবেসেছেন?”
কেনো যেন সহজগলায় বলতে পারলো না,
“না, আমি তোমাকে ভালোবাসি না”
বরং চোখ নামিয়ে অপরাধীর মত বললো,
“আই এম সরি চিংকি”
চিংকি তার উত্তর পেয়ে গেলো। সে মানুষ চিনতে পারে নি, হৃদয়ের দূর্বলতায় নিজেকে এতো নিচে নামিয়ে ফেলেছে যে ঘৃণা হচ্ছে নিজেকে। প্রেম! হায় প্রেম! এর চেয়ে জঘন্য জিনিস বুঝি কিছু নেই। আত্মসম্মান বিকিয়ে নিজেকে সমর্পণ করে দিতেও দ্বিধা করে নি এই প্রেমের জন্য। ছিঃ, ছিঃ। এতো কিছুর পরও সে জাওয়াদকে কোনো কটু কথা বলতে পারছে না। সত্যি ই তো, সে তো কখনো বলে নি সে চিংকিকে ভালোবাসে না। চিংকি নিজেই স্বপ্নের রংমহল তৈরি করেছিলো। ভুল তো তার ছিলো। সে নিজেই ভেবেছে জাওয়াদের নিজস্ব পৃথিবীর একটা অংশ সে। অথচ জাওয়াদের জন্য শুধুমাত্র অকথিত অশুভ লক্ষণ ছিলো। নিজের উপর তীব্র ঘৃণা জন্মালো চিংকির। এতো বোকা সে? কই কখনো কারোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতো মরিয়া হয় নি। তবে এই পুরুষের ক্ষেত্রেই কেনো? চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো অশ্রুরেখা। জাওয়াদ মাথা নিচু করে রয়েছে। চিংকি চোখ মুছে নিল বা হাতের উলটো পাশ দিয়ে। ঠান্ডা স্বরে বললো,
“আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি”
বলেই উঠে দাঁড়ালো। রুম থেকে বের হতেই তরঙ্গিনীর সাথে দেখা হলো। সে সবার আতিথেয়তায় ব্যস্ত ছিলো। চিংকির মলিন, রুগ্ন, মূর্ছানো মুখখানা দেখতেই সে বললো,
“কোথায় ছিলি? আমি কখন থেকে খুঁজছি তোকে। শরীর খারাপ লাগছে?”
“বাবা কোথায় আপু?”
“কি হয়েছে চিংকি?”
চিংকি উত্তর দিলো না। শুধু শূন্য, ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তরঙ্গিনী বোনের এমন দৃষ্টিকে চেনে। খুব বড় কিছু না হলে সে এমন দৃষ্টিতে চায় না। ফলে সে উত্তর দিল,
“মামাদের সাথে আছে, খাবারের ওখানে”
চিংকি কোনো কথা না বলেই অলস পায়ে এগিয়ে গেলো সেখানে। মোস্তফা কবির মেহমানদারীতে ব্যস্ত তখন। বাবার পাঞ্জাবির হাতাটা ধরে চিংকি বললো,
“বাবা, তোমার সাথে কথা আছে”
মেয়ের কণ্ঠ শুনতেই বুক ছ্যাৎ করে উঠলো তার। চিংকিকে সাথে সাথেই শুধালো,
“কি হয়েছে মা?”
“আমি বিয়েটা করবো না। তুমি বিয়েটা ভেঙ্গে দাও”
“কেন মা?”
চিংকির ভেজা চোখ দেখতেই প্রশ্নটা ফিরিয়ে নিলেন মোস্তফা। মাথায় হাত রেখে বললেন,
“তুমি কি বাসায় যাবে?”
“হ্যা, এখনি”
“ঠিক আছে। আমি সুমনকে বলছি, তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে”
“সরি বাবা”
মোস্তফা মেয়ের চোখজোড়া আলতো হাতে মুছে দিলেন। মাথায় আদরমাখা হাতখানা বুলাতে বুলাতে বললেন,
“আমি এখানটা সামলে নিচ্ছি। তুমি বাসায় চলে যাও। এখানে থাকতে হবে না। আর কাঁদবে না মা। তুমি আমার স্ট্রং চিংকি, ওকে”
চিংকি মাথা দুলালো। কিন্তু মনে মনে বললো,
“আমি মোটেই স্ট্রং না বাবা। তোমার চিংকি একটা বোকা মেয়ে। সে মানুষ চিনতে পারে না”
*****
মোস্তফা কবির, তার স্ত্রী এবং আব্দুল হামিদ সাহেবকে আলাদা করে ডাকলেন। আব্দুল হামিদ সাহেব খুব অবাক হলেন। তিনি জাওয়াদের বড় মামাকেও সাথে রাখতে চাইলেন। মোস্তফা কবির বাঁধা দিলেন না। এই বিয়ের প্রস্তাবের মুল ঘটক তিনিই। বড় জামাইয়ের শিক্ষক বলে তাকে খুব শ্রদ্ধাও করেন মোস্তফা কামাল। আব্দুল হামিদ সাহেব বিনীত স্বরে বললেন,
“কি হয়েছে বেয়াই সাহেব? এভাবে আলাদা করে ডাকা? দেনমোহর, জুতা চুরি, গেট ধরার টাকা তো সব ঠিক হয়ে গেছে। আমরা শুক্রবার জুম্মা বাদ ই আসবো। চলনে পঞ্চাশ জনের একজন বেশি হবে না”
“বিয়েটা হচ্ছে না হামিদ সাহেব?”
কথাটা শুনতেই আব্দুল হামিদের শান্ত দৃষ্টি চমকে উঠলো। স্বরের গাম্ভীর্য বাড়লো,
“মানে, মশকরা করছেন?”
“না ভাইজান, কিছু মনে করবেন না। আমার মেয়ে চাইছে না বিয়েটা হোক। তাই আমি বিয়ে ভাঙ্গছি। আপনার পরিবার খুব ভালো। কিন্তু ভালোতেই তো সব শেষ হয়ে যায় না। সংসার আমার মেয়ে করবে?”
আব্দুল হামিদের সাথে সাথে নিরুপমাও ক্ষিপ্ত হলেন, স্বামীর এমন হুটহাট সিদ্ধান্ত তাকে খুব অপ্রস্তুত করে। ফলে কঠিন স্বরে শুধালো,
“এগুলো কি বলছো তুমি? মাথা খারাপ হয়েছে? বেশি খেয়ে বদহজম হয়েছে?”
“না, নিরুপমা। আমি সুস্থ আছি”
“তাহলে এমন পাগলের মতো আওড়াচ্ছো কেন?”
“আমার মেয়ে বিয়ে করতে চাচ্ছে না। কথাটা বোধহয় তুমি শোনো নি”
মোস্তফা কবির কঠিন স্বরে উত্তর দিলেন। এদিকে আব্দুল হামিদ এবং জাওয়াদের বড় মামা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। মানসম্মানের ব্যপার এটা। হলুদের পর বিয়ে ভাঙ্গা মানে এক রকম কেলেঙ্কারি। এতো টাকা পয়সা খরচ হয়েছে, আত্মীয় স্বজন গিজগিজ করছে। মুখ দেখানো জো থাকবে না। আব্দুল হামিদের বুক ধকধক করছে। উত্তেজনা বেড়ে যাচ্ছে। জোরে জোরে তিনি শ্বাস নিতে লাগলেন। মোস্তফা দ্রুত তাকে বসালেন। খুব বিনীত স্বরে বললেন,
“আমার মেয়েকে আমি খুব ভালোবাসি হামিদ সাহেব, তার চোখের পানি আমি সইতে পারি না। তাই অনুরোধ করছি। ক্ষমা করবেন”
“আপনাদের মত জঘন্য মানুষের সাথে ছেলে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবাই আমার ভুল ছিলো। আত্মীয় স্বজনদের মাঝে থাকি, একটা সমাজ আছে আমাদের। সবাই তো ভাববে ছেলের মধ্যেই খুঁত। আমি তো আপনার মেয়েকে সময় কম দেই নি। কত দিন ঘুরিয়েছে সে। নেহাৎ মেয়েটাকে আমার ভালো লেগেছিলো। না ভুল আমার ছিলো। একটা উড়ুমনা মেয়েকে বউ হিসেবে ভাবাই আমার ভুল”
আব্দুল হামিদের কথার ভাবভঙ্গি বদলে গেলো। রোষপ্রকাশ পেলো অত্যধিক। নীরুপমাও তেঁতে উঠলো। তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
“খবরদার হামিদ সাহেব, মেয়ের নামে উলটাপালটা কথা বলবেন না”
“যান যান, মুখ আটকাবেন আমার? আমাদের মান সম্মান ডুবিয়ে এখন বড় কথা?”
“টাকা পয়সা আমরা দিয়ে দিব”
“টাকার গরম দেখাবেন না নীরুপমা ভাবি। এখানে আমাদের লোকমুখে থু থু পড়ার অবস্থা। আজ আপনাদের মেয়ের জন্য আমি আর আমার পরিবার হাসির পাত্র হব, ছিঃ ছিঃ”
মোস্তফা কবির মুখ শক্ত করে বললেন,
“আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের আমি অত্যধিক সম্মান করি, কটুক্তি করে সেই সম্মান হারাবেন না”
“থামুন, আজ ছেলে নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। আমিও দেখবো আপনার মেয়ের বিয়ে কোথায় হয়!”
নীরুপমা সাথে সাথে ক্ষিপ্র স্বরে বললো,
“নিজের গাধা ছেলের বিয়ে আগে দিন। আমার মেয়েকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না”
“আমার ছেলেকে আপনার মেয়ের থেকে বহু ভালো ঘরে আমি বিয়ে দিব”
“আরে যান যান। মুরদ জানা আছে”
এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি লেগে গেল নীরুপমা এবং আব্দুল হামিদের মধ্যে। দুপক্ষের শব্দের ঘাত প্রতিঘাতে জর্জরিত হলো শান্ত পরিবেশ। উত্তপ্ত মহলে একে অপরের দম্ভকে উঁচু করতে ব্যস্ত। রাগ মানুষের সবচেয়ে খারাপ বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলে। নীরুপমা এবং আব্দুল হামিদ দুজনই নিজেদের সেই বৈশিষ্ট্য নিয়ে লড়াইয়ে নামলো। দুজন ই নিজেদের সন্তানের বড়াই করতে লাগলেন। এক অঘোষিত প্রতিদ্বন্দ্বীতা শুরু হলো। কার সন্তানের আগে বিয়ে হবে। মোস্তফার সেদিকে খুব একটা আগ্রহ নেই। তার মানসপটে কেবল মেয়ের টলমলে চোখ ভাসছে। জাওয়াদের বড় মামা পড়লেন লজ্জায়। প্রথম ঘটকালিটা ঠিক হলো না। ফলে তার দুঃখটাই সর্বাধিক। চিংকি বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে তাতে খুব মাথাব্যথা হল না জাওয়াদের। সে একটা শব্দ করলো না। তার মস্তিষ্কে শুধু একটা কথাই ঘুরছিলো, তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বের যাত্রাটা বুঝি এখানেই শেষ। মেয়েটি তাকে ঘৃণা করছে নিশ্চয়। কারোর ঘৃণার পাত্র হওয়া এতোটা পীড়াদায়ক এবং ক্লেশকর তার জানা ছিলো না। মেয়েটি কি এখন কাঁদছে? চিংকি সেদিন প্রত্যাখিত হবার পরও কিছু বলে নি, আজও কিছু বলে নি। সে কেন তাকে কিছু বললো না। অন্তত একটা থাপ্পড় মারতে পারতো। অন্তত জাওয়াদ নিজেকে অপরাধী ভাবতো না। নিজের কাছে দায়মুক্ত হয়ে যেত। কিন্তু মেয়েটির শান্তরুপ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তার টলমলে চোখ, বিভ্রান্ত শূণ্য দৃষ্টি তাকে বুকের মধ্যিখানে চাবুক চালাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। নিজেকে নিকৃষ্ট প্রাণী মনে হচ্ছে। সে যা চেয়েছিলো তাই তো হয়েছে, তাহলে কেন শান্তি পাচ্ছে না?
জাওয়াদের বিয়ে ভাঙ্গায় আত্মীয়দের নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হলো জাওয়াদ। বন্ধুদের মধ্যেও তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা শুরু হলো। কিন্তু তাতে খুব একটা বিচলিত নয় জাওয়াদ। কলিগরা তো অবাক। যেদিন বিয়ের কথা সেদিন সে অফিসে হাজির। কি অদ্ভুত! ইনচার্জ ইনিয়ে বিনিয়ে কারণ শুধালো। কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না জাওয়াদ। তার ভালো লাগছে না। স্বপ্নের তান্ডব শেষ হয়ে গেছে। সে এখন আর চিংকিকে স্বপ্ন দেখে না। মনে হচ্ছে এই সমস্যাটা কোনোদিন যেন ছিলই না। এতে খুশি হওয়া উচিত। অথচ খুশি হতে পারছে না। সে রাতে ঘুমাতে পারছে না। চিংকি তাদের সকল ভাবে ব্লক করে দিয়েছে। এমন কি তার ইউটিউব চ্যানেল থেকেও সে ব্যান। পেজ থেকে ব্যান। কোনোভাবে তাকে দেখার উপায় নেই। না জাওয়াদ তাকে দেখতে চায় না। কিন্তু খচখচ ভাবটা কাটছে না। চিংকির কথা মনে পড়লে বুকের মধ্যিখানে ব্যাথা হয়। বিশ্রী ব্যাথা। নিঃশ্বাস আটকে যাওয়া নীল ব্যাথা।
লাঞ্চ টাইমটা কোনোভাবে শেষ করলো জাওয়াদ। খেতে ইচ্ছে করছে না। এর মধ্যে চোখ আটকে গেলো। থমকে গেলো জাওয়াদের পা। দৃষ্টি চমকে উঠলো। চিংকি? তার অফিসে? কি সুন্দর নীল শাড়ি পড়ে আছে। জাওয়াদের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। মনে হচ্ছে এখনই হৃদয় বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়া যাবে। নিঃশ্বাস ঘন হল। একপ্রকার ছুটে গেলো সে চিংকির কাছে। তাকে ডাকতেই মেয়েটি তার দিকে অবাক নয়নে তাকালো। না এ তো চিংকি নয়, বরং তার কলিগ শ্রেয়া। কি হচ্ছে তার সাথে? শ্রেয়া বিনীত স্বরে বললো,
“কিছু বললেন ভাই?”
“না, সরি”
জাওয়াদ মাথা ধরে বসে পড়ল। ক্লান্ত লাগছে শরীরটা। নিঃসাড় লাগছে মাংসপেশী। মাথা ঘুরাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে। এখনই, এখনই, এই মুহূর্তে।
*****
পাভেলের সামনে বসে আছে জাওয়াদ। পাভেল তার প্রেজেনটেশন তৈরি করছে। একটু পর তার মিটিং। পাভেল ভরদুপুরে উপস্থিত হয়েছে। কিছু না বলেই বসে আছে। থমথমে মুখ, দৃষ্টি উদ্ভ্রান্ত, অবস্থা বেগতিক। মনে হচ্ছে কোনো বিশাল ঝড় যাচ্ছে তার উপর। বিয়ে ভেঙ্গে পনেরদিন। অথচ জাওয়াদকে দেখে মনে হচ্ছে তার পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেছে। পাভেল ল্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়ে বললো,
“এই অসময়ে আমাকে কোন খুশীতে স্মরণ হলো? আবার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছে?”
“নাহ! আমি এখন চিংকিকে বাস্তবে দেখছি! ও স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে বাস্তবে আমাকে দেখা দিচ্ছে……………………”
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি