#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#২০তম_পর্ব
“আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি নিজের ব্যক্তিগত পৃথিবীর মানুষ ছাড়া কারো প্রতি রাগ, ঘৃণা, অভিমাণ পুষে রাখতে পারি না। আর আপনি আমার পৃথিবীর কেউ নন জাওয়াদ সাহেব, তাই আমার আপনার প্রতি ঘৃণা, রাগ, অভিমান, অভিযোগ কিছুই নেই। আশাকরি, আপনি আপনার উত্তর পেয়েছেন। আর একটা কথা জাওয়াদ সাহেব, আমি চাই না আপনার এবং আমার দেখা হোক। ব্যপারটা আমার জন্য বিরক্তিকর”
শান্ত, শীতল, সাঁড়াশির ন্যায় স্বর। জাওয়াদ স্থবির নয়নে তাকিয়ে রইলো। এমন কিছুই তো হবার কথা ছিলো! নাকি সে মনে মনে ভিন্ন কিছু কল্পনা করে রেখেছিলো। ভেবেছিলো মেয়েটি হয়তো সাপসাপান্ত করবে, হয়তো চোখে মুখে তীব্র ঘৃণা নিয়ে তাকাবে অথবা—অথবা উজার করে দিবে অভিমানের দলামচা করা শব্দগুলো। কিন্তু তেমনটি তো হচ্ছে না। তাদের গল্পটা আবার সূচনাপত্রে যেয়ে ঠেকলো। না না, তার চেয়েও খারাপ। তাদের গল্পটা আর নেই। পাতাগুলো খোয়া গেছে। চিংকি আবার শীতল স্বরে বললো,
“আশাকরি আমাদের আর দেখা হবে না। আসছি”
জাওয়াদ তার দিকে ব্যথিত নয়নে তাকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত যন্ত্রণা। কেমন যন্ত্রণা তো কখনো হয় নি। ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হাঁসফাস লাগছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। চোখ জ্বলছে। অন্তস্থল পুড়ছে। তার দীর্ঘশ্বাসটুকু স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। অদ্ভুত বিষাদ তাকে চেপে ধরেছে। অথচ দুঃখ পাবার তো কিছু নেই। চিংকি তাকে নিজের জীবন থেকে বাতিল করে দিবে এটাই কি হবার কথা নয়? বরং এজন্যই তো বিয়েটা ভাঙ্গা। তাহলে কেন এতোটা অসহ্য লাগছে? চিংকি দাঁড়ায় নি। সে চলে যাচ্ছে। একটা সময় ভিড়ের মধ্যে মেয়েটি মিলিয়ে গেলো। তার ক্রিম কালারের ওড়নাটাও মিশে গেলো। জাওয়াদ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ডাকছে তার কলিগরা। কিন্তু কানে আসছে না কিছুই।
***
অনেকটা হেটে সামনে এসে ধপ করে হাটু ভাঁজ করে বসে পড়লো চিংকি। তার চোখ থেকে অশ্রুরা বেসামাল ভাবে গড়াচ্ছে। ভেবেছিলো নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। ভুল ভেবেছে। তার হৃদয় এখনো মানুষটাকে ভুলে নি। এখন তার ভাবনা গুলো স্যাঁতসেঁতে হৃদয় আগলে রেখেছে। তাই তো তার দেওয়া আঘাতে সে কষ্ট পাচ্ছে। নিজেকে শক্ত রাখার নাটক করেছে মাত্র। যেন ঐ মানুষটি তাকে দূর্বল না ভাবে তাই কঠিন আদলে ছিলো। কিন্তু এখন যখন তার দৃষ্টিসীমার বাহিরে চলে এসেছে পা কাঁপছে। শিরা উপশিরায় এক বেদনার স্রোত বইছে যেন। নিজের বেহায়া হৃদয়টাকে খুব করে গালমন্দ করতে ইচ্ছে করছে। এতো অপমানের পর কেনো যে বাড়ে বাড়ে দূর্বল হচ্ছে। যার জীবনে তার স্থান নেই, তার মনে তার প্রতি ভালোবাসা নেই; তার কাছে কেন ভালোবাসার আর্জি পাঠাতে হবে। তার জন্য কেন ব্যকুল হতে হবে! যখন জাওয়াদ তার হাত টেনে ধরলো চিংকি বুকটা ধক করে উঠলো। শরীর কাঁপলো। চোখের সম্মুখে তার কাতর মুখখানায় ভেতরটা হুহু করে উঠলো। মনে হচ্ছিল তার হাত-পা অসাড় হয়ে যাচ্ছে। শক্ত থাকার অভিনয়টা করতে তার কতটা কষ্ট হয়েছে কেবল সেই জানে।
“আম্মার কি শরীর খারাপ?”
এক বৃদ্ধের ভাঙ্গা স্বরে সৎবিৎ ফিরলো চিংকির। ফ্যালফ্যাল করে চাইলো সে। বৃদ্ধ চিন্তিত স্বরে শুধালো,
“রিক্সায় যাবেন?”
চিংকি চোখ মুছলো, মাথা নাড়িয়ে না জানালো। তারপর উঠে দাঁড়ালো। মন্থর গতিতে হাটতে লাগলো সে। নিজেকে গুড়িয়ে দিলেও হয়তো এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি নেই। হৃদয়ে চিরটাকাল এই যন্ত্রণাটা রয়েই যাবে।
*****
ফাল্গুনের আগমণে ইট পাথরের শহর থেকে শীত বিদায় নেবার সাথে তীব্র গরম হানা দিলো। মারাত্মক গরম। সূর্যের দাবদাহে নগরবাসী হাঁপিয়ে উঠেছিলো। ঠিক তখনই পশ্চিম দিকে কালো মেঘেদের অনশন ঘটলো। অভিমানী কিশোরীর মতো তারা চোখ মুখ অন্ধকার করে জড়ো হলো যেন। আকাশের রঙ্গ পাল্টালো। কৃষ্ণ আকাশ নিকষ কৃষ্ণ রুপ ধারণ করলো। চাঁদটাও গিলে ফেললো। বাতাসের বেগ বাড়লো। সেই সাথে বাড়লো অস্থিরতা। পাতাগুলো ঝড়ের বার্তা পেয়ে মরমর করে উঠলো। মেঘের গর্জনে কাঁপলো ধরনী। ধুলিকণা কুন্ডলী আকাশে উড়তে লাগলো। ঝড়ের গান গাইতে গাইতেই নামলো মুষলধারে বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি ধুলো ভিজিয়ে কাঁদায় পরিণত করলো। আকাশ-বাতাস একাকার হয়ে গেলো বছরের প্রথম কালবৈশাখীর তান্ডবলীলায়। এর মাঝে ভিজে জুবুথুবু হয়ে বাড়ি ফিরলো জাওয়াদ। প্রস্তুতি ছিলো না ঝড়ের। ফলে মাঝরাস্তায় বিপাকে পড়তে হলো। কিন্তু সে নির্বিকার। প্যান্টের নিচে কাঁদা লেগে আছে। জ্যোতি জানে তার ময়লা-নোংরা অপছন্দ। অথচ তাকে ব্যস্ত হতে দেখা গেলো না। সে জুতো খুলে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ঢুকলো। অথচ অন্যদিন হলে প্রথমে যেত বাথরুমে। জামাকাপড়, হাত-পা পরিষ্কার করে গালমন্দ করতে করতে সে প্রবেশ করতো। আব্দুল হামিদ সাহেব ওখানেই ছিলেন। খবরের কাগজে ভালো খবর খোঁজার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন,
“কাল মামা বাড়ি যেও। একুন ভালো পাত্রীর সন্ধ্যান পেয়েছেন তিনি। তোমাকে যেতে বলেছেন, বায়োডাটা সমেত। তার মোবাইলটা হারিয়ে সব গন্ডগোল হয়ে গেছে। মানুষ এখন অমানুষ হয়ে গেছে। মসজিদ থেকেও চুরি করছে। ছে ছে। মসজিদ আল্লাহর ঘর, সেখানে মানুষ আসে আল্লাহকে ডাকতে। আর এই অমানুষগুলো সেখানে যায় চুরি করতে। বেচারার এক লক্ষ টাকার আইফোন। দুঃখে সে ব্যকুল হয়ে আছে। একটু সান্ত্বনা দিও পারলে। তোমাকে দিয়ে একটা মেইলও লেখাবেন তিনি। বুড়ো হয়ে চোখে কম দেখছেন। তুমি কিন্তু যাবে”
জাওয়াদ উত্তর দিলো না। ফলে তিনি রুষ্টস্বরে বললেন,
“তুমি কি শোনো নি আমি কি বলেছি?
জাওয়াদের চোখ তখন গেলো, জুতোর থাকের পাশের ময়লাঝুড়িতে। স্তুপকৃত ময়লার মাঝে সেখানে র্যাপিং এ মোড়ানো একটি বাক্স। সে সাথে সাথেই সেটা হাতে নিল। এটা চিংকির দেওয়া উপহার। ড্রয়ারে রেখেছিলো সে এটা এখানে কেন। সাথে সাথে রুদ্রস্বরে শুধালো,
“এটা এখানে কে ফেলেছে?”
জ্যোতি থতমত খেলো। বাবার দিকে তাকালো ভয়ার্ত দৃষ্টি। হামিদ সাহেব স্বাভাবিক স্বরে বললেন,
“পরনারীর জিনিস রেখে তো লাভ নেই, বিয়ে ভেঙ্গেছে সুতরাং সম্পর্কের ইতি। তাই আমি বলেছি আবর্জনা বিদায় করতে”
জাওয়াদের মুখভাব বদলে গেলো। ফর্সা মুখখানা রক্তিম বর্ণধারণ করলো। চোখজোড়া ক্রোধে ধিকধিক করে জ্বলছে। চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। স্বভাব বহির্ভূত একটা কাজ করে বসলো সে। বাবার বাধ্য জাওয়াদ চিৎকার করে উঠলো বাবার উপর-ই,
“আমার জিনিসে হাত দেবার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি এটা ফেলবো কি না?”
জাওয়াদের রুঢ় আচারণে আব্দুল হামিদ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। কি বলবেন বুঝতে পারছে না। জাওয়াদ হুংকার ছেড়ে জ্যোতিকে বললো,
“আরেকবার আমার জিনিসে হাত দিলে তোর হাত ভেঙ্গে ফেলব। কথাটা মনে থাকে যেন”
বলেই হনহন করে নিজ ঘরে চলে গেলো সে। তার এমনরুপে স্থবির হয়ে গেলো জ্যোতি এবং আব্দুল হামিদ। জাওয়াদের মত শান্ত ছেলের এমন অগ্নিশর্মারুপের কারণ বোধগম্য হলো না।
****
প্যাকেটটা খোলা হয় নি কখনো। ড্রয়ারের এক কোনে রেখে দিয়েছিলো জাওয়াদ। অথচ আজ খুলতে ইচ্ছে করছে। র্যাপিংটা খুললো খুব যত্নে। ময়লার প্রতি আজ ঘিনপিত্তে নেই। ঘড়িটা ভেঙ্গে গেছে। মেয়েটি অনেক আবেগ নিয়ে ঘড়িটি কিনেছিলো তাতে সন্দেহ নেই। সেই আবেগের স্পর্শ এখনো লেগে আছে তাতে। প্যাকেটের একদম নিচে একটি চিরকুট। চিরকুট পড়া হয় নি জাওয়াদের। আজ পড়তে ইচ্ছে করছে।
“এই যে জাওয়াদ সাহেব,
ভালো আছেন? শুধু শুধু উপহার দিতে ইচ্ছে করছিলো না। ভালোবাসা দিবসের উপহার হওয়া উচিত ভালোবাসার সাথে। কিন্তু ভালোবাসা জাহির করার ভাষা যে আমি পারি না। আপনি কি জানেন, আপনাকে নিয়ে লিখতে গেলে আমি শব্দ খুঁজে পাই না। মনের মধ্যিখানে অবাধ জোয়ার হানা দিলেও আমি ভাষাহীন হয়ে পড়ি। আমি এখন শব্দ হাতড়াচ্ছি। কি যন্ত্রণা দেখুন তো! মনের কথা বলতেও এতো জ্বালা, জানা থাকলে এসবে নিজেকে আটকাতাম না। অবশ্য আমি কিন্তু নিজ থেকে এসবে জড়াই নি। এমনি এমনি সব হয়ে গেলো। বুঝতেই পারলাম না। নিজেকে শতবার আটকাতে চাইলাম, পারলাম না। আমার নির্লজ্জ চোখখানা আপনার দিকে তাকিয়ে রয়, মনে হয় সময় থেমে যাক। আমি তাকিয়েই থাকি। এই দেখার যেনো শেষ না হয়।
আমি একদম আপনার প্রেমে পড়তে চাই নি বুঝলেন। কিন্তু ছয় বছর আগের কিশোরীকে কড়া শাসনে রাখলেও এই অসহ্য, বেসামাল মনকে কি করে শাসন করি! আবার মুখি থুবড়ে আপনার প্রেমে পড়লাম৷ এই প্রেমে পড়া বিষয়টা পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর এবং কুৎসিত একটা অনুভূতি। জানেন তো? সুন্দর কারণ আমার মনে হয় কেউ যেনো হুট করে আমার নির্জীব জীবনে এক কৌটা রঙ ঢেলে দিয়েছে৷ আর কুৎসিত কারণ…. কারণ আমি মন এবং মস্তিষ্কে আপনার একচ্ছত্র অধিকার হয়ে গেছে৷ কি যন্ত্রণা বলুন তো! এই মিষ্টি যন্ত্রণা থেকে অবশ্য আমি মুক্তি চাই না। কারণ আমি চাই, এই ধলা গরুটা শুধু আমার-ই থাক।
প্রেম নামক নীল বিষ আমি সেবন করেছি জাওয়াদ সাহেব। এর প্রতিষেধক কেবল আপনি। কি বোকা বোকা কথা! অথচ এটাই সত্যি। জানেন আমি যখন আপনাকে এসব বোকা বোকা কথা লিখছি আমি একই সাথে কাঁদছি এবং হাসছি। কাঁদছি কারণ আমার হৃদয় ভার হয়ে আসছে। তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছে। মনে হচ্ছে আপনি যদি এই চিঠিটাকে অবজ্ঞা করেন আমি হয়তো ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাব। আর হাসছি কারণ আমার নিজেকে উন্মাদ লাগছে। ভীষণ উন্মাদ। আচ্ছা জাওয়াদ সাহেব, প্রেমে পড়লে কি মানুষ পাগল হয়ে যায়? আমি কি পাগল হয়ে গেছি? কি সাংঘাতিক বলুন। শেষমেশ কি না একটা পাগলের সাথে আপনাকে ঘর করতে হবে। ইশ আপনার জন্য দুঃখই হচ্ছে। অবশ্য আমার কাছে একটা উপায় আছে। যেমন বিষে বিষে বিষক্ষয়, তেমনি পাগলে পাগলে পাগলামিক্ষয়। আপনিও যদি আমার মত পাগল হয়ে যান তাহলে আমাদের সংসারজীবন সুন্দর হয়ে যাবে।
কি জাওয়াদ সাহেব,
হবেন নাকি আমার জন্য পাগল?”
জাওয়াদ গা এলিয়ে দিলো। হাতখানা চোখের উপর রেখে আনমনে বললো,
“আমি হয়তো সত্যি পাগল হয়ে গেছি”
*****
জাওয়াদের মামীর মন আজ ভালো নেই। মন খারাপ থাকলে তার রান্নাবান্না করতে ইচ্ছে হয় না। আজও তার রাধতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তিনি ভারী গলায় জাওয়াদকে বললো,
“তুই বাড়ি চলে যা, আজ রান্না নেই। মন ভালো নেই আমার”
“আমি তো খেতে আসি নি। কাজে এসেছি। কিন্তু আপনার মন ভালো না কেনো মামী?”
মামী নাক টেনে টেনে বললেন,
“জানিস, পড়াবাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। বলছে সে নাকি ঠগ। কতবড় বেয়াকুবের দল ভাব। গজব পড়বে দেখিস এদের উপর। ভালো মানুষকে কি না বলে ঠগ। ওরা কি জানে পড়াবাবার ক্ষমতা। বাজারে এক এক বেয়াকুব ঘুরে বেড়ায়। যত্তসব”
পড়াবাবার জেলে যাওয়ার কথাটা শুনে খুব অবাক হলো না জাওয়াদ। এমনটা হবার ই কথা ছিলো। লোকটা ভাওতাবাজ তাতে তো সন্দেহ নেই। সে কেন তার প্ররোচনায় এসেছিলো সেটাই প্রশ্ন। তার মতো যৌক্তিক পুরুষ কি না স্বপ্ন থেকে বাঁচতে তার শরণাপন্ন হয়েছে। হাস্যকর, নেহাত হাস্যকর। কি কি না করেছে লোকটির কথা মত। কাউকে বললে সে নির্ঘাত তাকে মাথা খারাপ উপাধি দিয়ে দিবে। কিন্তু কিছু প্রশ্ন রয়েই গেছে। সেই উত্তরগুলো পড়াবাবাই দিতে পারবে। ফলে মামীকে শুধালো,
“উনি কোন থানায় আছেন মামী?”
****
মোহাম্মদপুর থানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদ। মনটা খচখচ করছে। সে এখানে কেন এসেছে? সে কি বিশ্বাস করছে পড়াবাবা তার অস্বাভাবিক মনোস্থিতিকে শান্ত করতে পারবে? সে কি অন্ধবিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছে? আজকাল মনটা খুব দূর্বল হয়ে আছে। এক তীব্র অচেনা অনুভূতি তাকে কাবু করে ফেলেছে। এই অনুভূতিটার নামটা তার জানা নেই। তবে অনুভূতির উৎস চিংকি। অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে। গত পরশু সে চিংকির কলেজে গেছে। দূর থেকে চিংকিকে দেখতে। চিংকিকে দেখতেই সে ছুটে লুকিয়ে গেছে। হৃদয় বেসামালভাবে স্পন্দিত হচ্ছিলো। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিল এখন ই বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাবে হৃদয়। কি অদ্ভুত।
থানার লকাপে বন্দি পড়াবাবা। তার মুখে ক্লেশের চিহ্ন নেই। হাফপ্যান্ট পরিহিত মানুষটি পায়ের উপর পা তুলে চাটাই এ শুয়ে আছে। তার মুরিদ এখন লকাপের বাকি আসামী। জাওয়াদ যেতে সে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই শুধালো,
“ভালো আছো জাওয়াদ? তোমাকে দেখতে বড় ইচ্ছে করছিলো”…………
চলবে
#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#২১তম_পর্ব
জাওয়াদ যেতে পড়াবাবা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই শুধালো,
“ভালো আছো জাওয়াদ? তোমাকে দেখতে বড় ইচ্ছে করছিলো”
জাওয়াদ স্থির নয়নে তাকিয়ে আছে পড়াবাবার দিকে। পড়াবাবা এমন অদ্ভুত কথা বলেন। তিনি অপর মানুষটিকে চমকে দিতে চান। এটাই তার ব্যবসা। ফলে চোখ বন্ধ করে তার আগমণ অনুমান করা খুব কঠিন কাজ নয়। জাওয়াদ সেলের সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। পড়াবাবা চোখ মেলে চাইলেন। তার মুখে সেই স্মিত হাসি। তার আন্দাজ লেগে গেছে বলেই কি এতো আনন্দিত! বোঝা গেলো না। তিনি উঠে বসলেন। জেলেও তার মুরিদের অভাব নেই। ওই সেলের অন্য কয়েদি তার চটি এগিয়ে দিল। সে তাতে পা গলিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে এলেন। সামনাসামনি দাঁড়ালো জাওয়াদের। জাওয়াদের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো। পড়াবাবা স্বাভাবিক স্বরে বললেন,
“তোমার মামী কেমন আছেন? উনাকে বলো চিন্তা না করতে। আমি চলে আসবো খুব দ্রুত। এটা কাইন্ড অফ ভ্যাকেশন আমার জন্য”
“জেলে বসেও ভাওতাবাজী বাদ দিতে পারলেন না?”
পড়াবাবা রহস্য করে হাসলেন। যেন খুব মজার কথা বলেছে জাওয়াদ। জাওয়াদের কপালে ভাঁজ পড়লো। ভ্রু কুঞ্চিত হলো। জেলে থেকেও একটা মানুষ এতো স্বাভাবিক কি করে থাকে। পড়াবাবা তাকে অবাক করে কন্সটেবলকে বললো,
“ভাইজান, একটু বের হব। দমবন্ধ লাগছে। একটু হাওয়া খাব”
কন্সটেবল তার পান খাওয়া হলুদ দাঁত বের করে বললো,
“বাবাজি যে কি বলেন? অনুরোধ না হুকুম করেন”
“না না, আমি অন্যায় করি না”
জাওয়াদকে অবাক করে তার সেলের দরজা খুলে দিলো কন্সটেবল। পড়াবাবা বের হলেন। হাতপা টানা দিলেন। হাসি মুখে জাওয়াদকে বললেন,
“চলো একটু হেটে আসি”
****
পুলিশস্টেশনের পেছনে বিশাল জায়গা। একদম শেষপ্রান্তে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। লাল রঙ্গে নুয়ে গেছে গাছের ডালগুলো। কি চমৎকার লাগছে রক্তাক্ত গাছটা। নীল আকাশের নিচে রক্তাক্ত কৃষ্ণচূড়া। পড়াবাবা সেই গাছের নিচে হেলান দিলেন। একটা বেনসন সিগারেট ধরালেন। অঙ্গভঙ্গি, মুখভাব দেখে মনে হচ্ছে এই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরানো তার রোজকার ব্যাপার। একজন জেলের কয়েদি এতো স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সিগারেট টানছে যেন কিছুই হয় নি। অবশ্য কনস্টেবলের আচারণ দেখে জাওয়াদ অনুমান করেছে জেলে জামাই আদর ই পাচ্ছে মহাশয়।
দু আঙ্গুলের ফাঁকে জ্বলছে সিগারেট। কুন্ডলীত ধোঁয়া মিশে যাচ্ছে সমীরণে। জাওয়াদ ক্রুদ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষ দিনের পর দিন অতিপ্রাকৃতিক ভঙ ধরে মানুষকে ঠকাচ্ছে। মানুষ অন্ধভাবে তাকে বিশ্বাস করছে। তাকে পীর, মুরিদ ভাবছে। তার কাছে সাহায্য চাচ্ছে। পড়াবাবা ধোঁয়া ছেড়ে বললেন,
“কি দেখছো?”
“দেখছি একটি মানুষ কতটা জানোয়ার হয়। অন্য মানুষকে ঠকিয়েও কতটা স্বাভাবিক চিত্তে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে পারে”
“আমি মোটেই মানুষ ঠকাই না। আমি তাদের সাহায্য করি”
“ভুংভাং বুঝিয়ে মানুষের টাকা হাতানো সাহায্য?”
“তুমি কি স্বপ্ন থেকে পরিত্রাণ পাও নি জাওয়াদ?”
তাচ্ছিল্য করে শুধালেন পড়াবাবা। জাওয়াদ একটু থমকালো। পড়াবাবা সিগারেটে টান দিলেন। স্মিত হাসি অক্ষত রেখে বললেন,
“তুমি স্বপ্ন থেকে পরিত্রাণ পেয়ে এখন বাস্তব জীবনে তাকে দেখছো। প্রতিনিয়ত দেখছো। অন্যের মাঝে তাকে দেখছো। আবার মাঝে মাঝে নিজের ইচ্ছেতেও তাকে দেখছো। কি ভুল বললাম?”
জাওয়াদ সূচালো নয়নে তার পানে চেয়ে রয়েছে। পড়াবাবা সিগারেট এগিয়ে বললেন,
“খাবে?”
“না”
“রাগ করছো কেন?”
“আমি এতো কিছু জানেন কি করে? বলবেন না আপনার আধ্যাত্মিক শক্তি আছে”
“নেই তো”
পড়াবাবা আবার রহস্য করে হাসলেন। লোকটির হাসি বিশ্রী। মেকি হাসি। মানুষকে চমকে দিতেই এই ঘনঘন হাসির ঢং। পড়াবাবা তার সিগারেট শেষ করলেন। ফিল্টার পিষলেন স্যান্ডেল দিয়ে। তারপর বললেন,
“তোমার কি মনে হয়? আমি কি?”
“একজন ঠগ”
“সেটা তো বটেই। আর?”
জাওয়াদ উত্তর দিলো না। পড়াবাবা তার দিকে চাইলেন। জাওয়াদের চোখে মুখের ক্ষিপ্রতা কমে কৌতুহল ফুটে উঠেছে। পড়াবাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে ধীর কণ্ঠে বললো,
“মানুষের সমস্যা কি জানো? তারা সবকিছুর সমাধান খুঁজে। বিপদ, আপদ, দুঃখ, জীর্ণতা—ব্যাপারগুলোকে তারা মোকাবেলা করতে চায় না। চায় শুধু পরিত্রাণ। আমিও তাদের পরিত্রাণ দেই। বিনিময়ে একটু পারিশ্রমিক নেই। এটা দোষের কিছু নয় নিশ্চয়ই। আমি তো খুন করছি না। শুধু তাদের বিশ্বাসের সাহায্য নিচ্ছি”
“আপনি এতো কিছু কি করে বলতে পারেন?”
“ট্রিক। মাইন্ড রিডিং, ম্যানুপুলেশন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অবজারবেশন, লজিক- ওহে ছোকরা আমি সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছি। প্যারা সাইকোলজির উপর কাজ করেছি। এই দেশে এসব কিছুর মূল্য নেই। চাকরি নেই। টাকার অভাবে যখন ট্রেন স্টেশনে ঘুমালাম তখন আমার মাথায় এই বুদ্ধি এসেছে। ওখানে একজন তাবিজ দিত। মানুষ সেই তাবিজ কিনতো, আর বলতো আমি সফল হলে আপনাকে খুশি করে দিব। সেখান থেকেই এই ব্যবসা”
“আর ওই ডিম আর চুল?”
“ওগুলো ট্রিক ছিলো। আসল ডিম নয় ওগুলো”
“আমাকে এগুলো বলছেন কেন?”
পড়াবাবা হাসতে হাসতে বললেন,
“কারণ তুমি বাজারের শ্রেষ্ঠ বোকা। তাই বলছি। নয়তো কেউ নিজের মনের অনুভূতি বুঝতে পারে না?”
জাওয়াদ তার দিকে তাকিয়ে রইলো। কি বলছেন উনি? পড়াবাবা জাওয়াদের কাধে হাত রেখে হতাশ স্বরে বললো,
“আমি তোমাকে লালার ট্রিকটা বলেছিলাম এই ভেবে যেন তুমি মেয়েটিকে চুমু খাও। চুমু খাবার পর তোমার মনের দ্বিধা দূর হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি একটা বেকুব”
“মানে?”
“মানে হলো তোমার কেসটা প্রেম সংক্রান্ত ছিলো। স্বপ্ন টপ্ন সবই তোমার আবেগের জর্জরিত অবচেতন মনের কারসাজি। তোমার বেড়ে উঠা ভিন্ন ভঙ্গিতে। তোমাকে ছোটবেলা থেকে বলা হয়েছে “ইউ হ্যাভ টু বি এ গুড বয়”; এটাই তোমার জীবনের মটো। তুমি সেটাই সারাজীবন করেছো। সবার চোখের নিজের একটা আলাদা ইমেজ তৈরি করেছে। সেকারণে তোমার মাঝে দম্ভের জন্ম। তোমার ধারণা তোমার এই গুড ভয় ইমেজ আর সৌন্দর্য্যের জন্য সবাই তোমার দেওয়ানা। তোমার ধারণা তুমি কারোর প্রতি দূর্বল নও। তুমি তোমার মনে বিরাজ কর, কিন্তু তোমার মনে রাজ করার কেউ নেই। সে কারণে তুমি কারোর প্রেমে পড়ো না। কারোর প্রতি দূর্বলতা তৈরি হয় না। কিন্তু তোমার এই আত্মপ্রেমী হৃদয়কে গ্রাস করলো পনেরো বছরের চিংকি। রোজালিন্ড কার্টরাইট এর মতে আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে অবচেতন মনের আবেগজনিত অভিজ্ঞতাকে প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করে। তুমি যখন প্রথম চিংকির মেয়েটাকে নিয়ে বিয়ের স্বপ্ন দেখেছিলে সেটা ছিলো তোমার অবচেতন মনের আবেগ। অবচেতন মন একটা রহস্যের খনি। সে হুটহাট খেলা খেলে। খেলা খেলতে সে মজা পায়। চেতন মনকে আমরা শাসন করতে পারি, বাধা দিতে পারি কিন্তু অবচেতনকে নয়। তোমার বাবা যখন তোমার বিয়ে নিয়ে উঠে পড়ে লাগলো তখন তোমার অবচেতন মন চিংকিকে অংকন করলো। তার সাথে বিয়ের একটি স্বপ্ন দেখালো। এটার অবশ্য কোনো সঠিক ব্যখ্যা আমি দাঁড় করাতে পারি নি। আমার ধারণা চিংকি-ই প্রথম রমনী ছিল যার সাথে তুমি খারাপ আচারণ করেছিলে। অবচেতন মনে সেই স্মৃতিটার জন্য অপরাধবোধ সৃষ্টি হয়েছে। সেই অপরাধবোধ থেকেই তোমার অবচেতন মন তোমাকে এই স্বপ্ন দেখিয়েছে। স্বপ্নে তোমাকে চিংকি বলেছে সে তোমার থেকে বদলা নিবে। তুমি ভয় পেয়ে গেলে। এটাকে “মুড কনগ্রুয়িটি ইফেক্ট” বলে। ভয় ভীতি থেকে মানসিক অবস্থার অধঃপতন, সেই থেকে তোমার বাস্তব জীবনে তার প্রভাব। তোমার প্রেমিকার সাথে ব্রেকাপ্টা আগেই হত। কিন্তু স্বপ্ন দেখার পরদিন হয়েছে বলে তুমি মেনে নিয়েছো সেটা স্বপ্নের জন্য। বাকি ঘটনাগুলোও তেমন। যেদিন তুমি চিংকির দেখা পেলে তার প্রতি তোমার আবেগ ঘন হলো। অবচেতন মন তার প্রতি ঝুঁকলো। সে ক্ষণে ক্ষণে তাকে দেখতে চাইতো। অকারণেই তার সান্নিধ্য চাইতো। এসব কারণে সে তোমাকে বোকা বানালো। কিন্তু চেতন মন তো দৃঢ়, সে চিংকির প্রেমকে অস্বীকার করলো। সেই চেতন আর অবচেতনের দ্বন্দ্বে তুমি ফেঁসে গেলে। এখন যখন স্বপ্নে সে দেখা দিচ্ছে না। অবচেতন মন তাকে কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে নিয়ে এসেছে”
জাওয়াদ মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার অনুভূতিগুলো কেমন জট পেকে গেছে। সে কি সত্যি ই চিংকির প্রেমে পড়েছে? তাহলে সেটাকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে কেন? পড়াবাবা ধীর স্বরে বললেন,
“তুমি চিংকির প্রেমে আকন্ঠ ডুবেছো জাওয়াদ। রিয়েলিটি মেনে নেও। অহেতুক দ্বন্দ্ব কর না। ভাব তো চিংকির সাথের মুহূর্তগুলো তোমার কাছে কি বিরক্তিকর? তার সাথে কথা বলতে, তার সান্নিধ্যে থাকতে তোমার কি ভালো লাগে না?”
“লাগে। সেটা তো আমার সবার সাথেই লাগে”
“উহু সবার সাথে লাগে না জাওয়াদ। আচ্ছা ধর, চিংকির সাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলো তুমি কি কখনো তোমার এক বছরের প্রেমিকা শাম্মীর সাথে কাটিয়েছো? তার মান ভাঙ্গতে তার বাড়ির নিয়ে শীতের মধ্যে দাঁড়িয়ে জ্বর বাঁধিয়েছো?”
“সেগুলো তো স্বপ্নের জন্য”
পড়াবাবা হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“আসলেই তুমি নির্বোধ, ছাগল, গাধা—একটা গন্ডমূর্খ”
জাওয়াদ চুপ করে রইলো। পড়াবাবা এবার থমথমে স্বরে বললো,
“আচ্ছা, ভাব তো চিংকির সাথে তুমি একটা লম্বা বাইক ড্রাইভে যাচ্ছো কেমন লাগবে?”
“ভালো”
“এবার ভাব চিংকি অন্য একজন পুরুষের সাথে লম্বা বাইক ড্রাইভে যাচ্ছে তোমার কেমন লাগবে?”
জাওয়াদের কপাল কুঁচকে গেলো। সে উত্তর দিলো না। পড়াবাবা ধীর স্বরে বললেন,
“ভাব, অন্য একজন পুরুষের সাথে চিংকি রাতভর কথা বলছে, তার সাথে মেলায় ঘুরতে যাচ্ছে, তার জন্য গিফট কিনছে, তার জন্য চিঠি লিখছে, তাকে চুমু খাচ্ছে—কেমন লাগবে? চিংকির বিয়ে অন্য একজনের সাথে হচ্ছে। সে অন্যকাউকে ভালোবাসছে। আর তুমি তার ত্রিসীমানায় কোথাও নেই। তার জীবনে তোমার অস্তিত্ব নেই। তাই চিন্তাচেতনায় তোমার অস্তিত্ব নেই। তুমি কোথাও নেই”
জাওয়াদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তার চোখ কাঁপছে। কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ। মুখশ্রীতে সূক্ষ্ণ যন্ত্রণার ছাপ। পড়াবাবা হাসলেন। মৃদু স্বরে বললেন,
“এখনো বলবে চিংকিকে ভালোবাসো না?”
“সেদিন এগুলো কেন বুঝান নি? কেন ভুংভাং বলেছিলেন”
খুব ধীর স্বরে শুধালো জাওয়াদ। কণ্ঠে বিরহের ছাপ। পড়াবাবা বললো,
“তুমি জাদুর পরিত্রাণে এসেছিলে জাওয়াদ। প্রেম খুজতে না”
“আজ কেন?”
“ঐ যে তুমি বাজারের সবচেয়ে বড় গাধা। দয়া হল। সবাই নিজের স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা পায় না জাওয়াদ। তুমি পেয়েছো। হারিও না। আমি আসছি। ওসি এসে আমাকে না দেখলে গোসা করবেন”
পড়াবাবা চলে গেলেন। জাওয়াদ দাঁড়িয়ে আছে। সে ভালোবাসে চিংকিকে। কিন্তু চিংকি যে তার প্রতি বিশাল চায়নার প্রাচীর তুলে দিয়েছে। সেটা রুখবে কি করে? চিংকি তাকে ঘৃণা করছে না, অভিমান করছে না, অভিযোগ করছে না। চিংকির জীবনের কোথাও সে নেই। নিজের দোষে সব নষ্ট করে দিয়েছে সে। কি করে আবার সব ঠিক করবে? চিংকি কি বুঝবে তার মনের ব্যথা? ক্ষমা করে ভালোবাসবে তাকে?………………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি