#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#২২তম_পর্ব
জাওয়াদ দাঁড়িয়ে আছে। সে ভালোবাসে চিংকিকে। কিন্তু চিংকি যে তার প্রতি বিশাল চায়নার প্রাচীর তুলে দিয়েছে। সেটা রুখবে কি করে? চিংকি তাকে ঘৃণা করছে না, অভিমান করছে না, অভিযোগ করছে না। চিংকির জীবনের কোথাও সে নেই। নিজের দোষে সব নষ্ট করে দিয়েছে সে। কি করে আবার সব ঠিক করবে? চিংকি কি বুঝবে তার মনের ব্যথা? ক্ষমা করে ভালোবাসবে তাকে?
***
ঝকঝকে রোদ, সতেজ সকাল। উষ্ণরোদ্দুরে দগ্ধ সমীরণে উড়ছে দীপশিখার চুল। আজ খোপা করতে ভুলে গেছে সে। সকালবেলায় গিয়েছিলো নীলক্ষেতে। কিন্তু কাজ হয় নি। বইয়ের দোকানটা খোলা ছিলো না। কিছু নতুন বই পড়বে বলে ঠিক করেছে। যদিও বই হাতে নিলেই জ্বর আসার উপক্রম হচ্ছে। তাই ঠিক করেছে নতুন বইয়ের গন্ধ শুকবে। বইয়ের দোকানের ছেলেটা বলেছিলো তাকে কিছু বই জোগাড় করে দিবে। সময় ঠিক করে দিয়েছিলো। তাইতো এতো তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসা। কিন্তু দোকানটাই খুলে নি। দীপশিখা সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও ছিলো। ফোন দিলো, অথচ ছেলেটা ফোন ধরলো না। ছেলেটা ভালো আছে তো? কে জানে? দীপশিখা নিস্পৃহ ভঙ্গিতে হাটছে। চুলগুলো মুখের উপর আঁছড়ে পড়ছে। ক্লাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না আজ। বাসায় যাবে না সে। বাসায় গেলেই মা বিয়ের পাত্রের ছবি দেখানোর কার্যক্রম শুরু করবে। যা মোটেই ভালো লাগছে না। দীপশিখার সাথে নিরুপমা কবিরের সম্পর্কটা খুব অন্যরকম। নীরুপমা কবির খুব চমৎকার উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। কত কত পুরষ্কার যে তিনি পেয়েছেন তার হিসেব নেই। দীপশিখাদের বাসায় একটি কাঠের আলমারী আছে যাতে নীরুপমার সব পুরষ্কারগুলো ঠাসা। ছোট বেলায় সে টেলিভিশনেও অনুষ্ঠান করতো। এতো সুন্দরী গুনী মেয়েটি হুট প্রেমে পড়লো এক বেগুণ পুরুষের। যার কথার আগা মাথা নেই। মোস্তফা তার কাছে কেবল ই বামন। অথচ বামন হয়েও চাঁদ হাতে পেলো। সকলের অমতে একটি নতুন দুনিয়া গড়লো তারা। কিন্তু সেই দুনিয়ার মধ্যে নানা উত্থানপতন। দীপশিখা হবার পর ডাক্তার জানিয়ে দিলেন নীরুপমা আর মা হতে পারবেন না। কারণ তার ইউটেরাস ফেলে দিতে হয়েছে। শরীরের অবস্থাও অধঃপতন ঘটলো। প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস পাকাপুক্তভাবে শরীরে বাসা বাঁধলো। অসুস্থতার জন্য গান ছেড়ে দিতে হলো। মানসিকভাবেই প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়লো নীরুপমা। তার উপর থেকে, দীপশিখার গড়ন নিয়ে নানাবিধ টিপ্পনী, কথাবার্তা—সব মিলেই এক কঠোর এবং জেদী মায়ে পরিণত হলেন নীরুপমা। তিনি নিজের মত মেয়েকে সুখে দেখতে চান। মেয়ের জীবনের সবকিছু তার মতো করেই সাজাতে চান তিনি। সবকিছুতে তার হস্তক্ষেপ হতেই হবে। মোস্তফা তাকে বাঁধা দেন না। কারণ স্ত্রীকে নিজের মানসিক পরিস্থিতির সাথে সর্বদাই লড়াই করতে দেখেছেন। তবে মেয়ের ব্যাপারটায় স্ত্রীর আড়ালেই তাকে প্রশ্রয় দেন। তিনি জানেন দীপশিখা কখনো কিছুই বলবে না।
এবারও তাই হলো। দীপশিখার খালারা ছেলেদের সম্বন্ধ আনছে। নীরুপমা দীপশিখার সাথে তাদের ফর্দ আনছে। ফলে বাবাই তাকে বুদ্ধি দিলেন,
“যত পারিস, ব্যস্ত থাক”
কিন্তু ক্লাসেও যেতে ইচ্ছে করছে না। এই তো পরশুর কথা, যে ক্লাসমেটরা তার খোঁজ নেয় না তারাই শুধাচ্ছিলো,
“তোমার বিয়ে হয়ে গেছে দীপশিখা? বরের সাথে ছবি দেখি!”
“আমার বিয়ে হয় নি”
নিস্পৃহ, ক্লান্তভাবে উত্তর দিলো দীপশিখা। মেয়েটি ঠোঁটচেপে হাসলো যেন। পরমুহূর্তেই মেকি করুনা দেখিয়ে বললো,
“মন খারাপ কর না। সুন্দর ছেলেগুলো একটু স্বার্থপর হয়”
মেয়েটি কি বোঝাতে চেয়েছে বুঝতে পেরেছে দীপশিখা। অন্যসময় হলে কথাটা গায়ে মাখাতো না সে। কিন্তু সেদিন কেনো যেন কথাটা মনে লাগলো সুইয়ের মতো। সেই সাথে তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়লো হৃদয়ে। দীপশিখার ভালো লাগে না। ভালো লাগে না যখন তাকে প্রশ্ন করে,
“বিয়েটা কেন ভেঙ্গে দিল?”
ভেঙ্গে দিল? বিয়েটা দীপশিখা নিজে ভেঙ্গেছে। কারণ ঐ মুহূর্তে নিজের আত্মসম্মানের ভারটা বেশি লাগছিলো। কারোর জীবনে অপ্রিয় মানুষ হয়ে থাকার চেয়ে না থাকাই শ্রেয়। সে অসন্দুর হতে পারে, ফেলনা নয়। দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। হঠাৎ পা আটকালো। কিছুসময় তাকিয়ে রইলো। ভার্সিটির সামনে একটি নতুন কেকের দোকান খুলেছে। ছোট কেকের দোকান। কিন্তু নামটা মনে ধরলো দীপশিখার। “Have some sweet” – মিষ্টি একটা নাম। দরজাটা খুলতেই ডোর চিম টুংটাং করে শব্দ করে উঠলো। ভেতরের সাজসজ্জাটাও খুব পরিপাটি। একজন পুরুষ কাস্টোমার আছে। দোকানের ম্যানেজার মেয়েটি হাসি মুখে বললো,
“কিছু লাগবে ম্যাম?”
“আপনাদের কাছে চকলেট কেক হবে?”
“জি। এই যে আমাদের সব আইটেম”
মেয়েটি উত্তর দিলেও তা কানে আসলো না দীপশিখার। কারণ সামনের মানুষটির হঠাৎ উপস্থিতি তাকে অপ্রস্তুত করলো। জাওয়াদ! এখানে? দীপশিখাকে দেখেই জাওয়াদ হাসলো। অনেকক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলো সে। সেই স্নিগ্ধ হাসি সরলো না। দীপশিখা চোখ সরিয়ে নিলো। তার সময় লাগলো নিজেকে সামলাতে। সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সে দোকানদার মেয়েটিকে বললো,
“আমাকে একটা চকলেট কেক দিন”
জাওয়াদ কিছুসময় তাকিয়ে রইলো দীপশিখার দিকে। তারপর সাথে সাথে আগ্রহভরে প্রশ্ন করলো,
“দীপশিখা এটা সত্যি তুমি? আমি ভাবছিলাম আমি আবার কল্পনা করছি। তুমি এখানে কি করছো? আজ তোমার ক্লাস নেই?”
দীপশিখা উত্তর দিলো না। দীপশিখার এমন উপেক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিলো সে। সে জানে দীপশিখা তাকে সম্পূর্ণরুপে প্রত্যাখ্যান করবে। নিজেকে সম্পূর্ন প্রস্তুত করে রেখেছিলো সে। তাই নির্লজ্জ হয়ে আবার শুধালো,
“এখানের চকলেট কেকটা ভালো। অবশ্য আমি রেড ভেলভেট কেকটা খেয়েছি। ওটাও ভালো। ওটা ট্রাই করে দেখতে পারো। আমি ভেবেছিলাম তোমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ভাগ্যিস করতে হলো না। অবশ্য আমি সারাদিন-ই আজ ফ্রি। ছুটি নিয়েছি অফিস থেকে। বেশ কামাই হয়ে গেছে আমার। তবুও……”
দীপশিখা কোনো উত্তর দিলো না। তার কেকটি নিয়ে টাকা চুকিয়েই হাটা দিল। জাওয়াদ নিজের প্যাকেটটি নিয়ে তার পিছু নিলো। তার পিছন পিছন হাটতে লাগলো সে। দীপশিখা ব্যাপারটি লক্ষ করে বিরক্তিবোধ হলো তার। কিন্তু সম্পূর্ণরুপে জাওয়াদকে উপেক্ষা করার জন্য মনোস্থির করেছে সে। তাই বিরক্তিটা প্রকাশ করলো না। ঠিক তখনই তার হাত টেনে ধরলো জাওয়াদ। আকস্মিক হ্যাচকাটানে দীপশিখার হাত থেকে কেকের প্যাকেটটা পড়ে গেলো। রাগান্বিত স্বরে কিছু বলতেই যাবে সাথে সাথে জাওয়াদ কঠিন স্বরে বললো,
“রাস্তায় না দেখে হাটার স্বভাব তোমার যাবে না? এখন-ই তো মোটরসাইকেলটা গায়ে উঠে যেত”
দীপশিখা পাশে তাকাতেই দেখলো ক্ষিপ্র গতিতে একটি মোটরসাইকেল তার পাশ দিয়ে চলে গেছে। ফলে যে কঠিন শব্দগুলো জাওয়াদের উদ্দেশ্যে সাজিয়েছিলো সেগুলো গিলে নিল সে। নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। কেকের প্যাকেটটা মাটি থেকে তুললো। পুরো কেক চটকে গেছে। খাওয়া যাবে না। দীর্ঘশ্বাস ফেললো দীপশিখা। আজকে দিনটা বুঝি খারাপ। কপালের সমান্তরাল ভাঁজগুলো স্বাভাবিক করে হাটতে যাবে তখন আবার হাতটা টেনে ধরলো জাওয়াদ। দীপশিখা তার দিকে তাকাতেই সে বললো,
“আমি জানি তুমি আমার সাথে কথা বলতে চাও না। কিন্তু প্লিজ আমার কথাটা একটু শোন। আমি তোমার জন্যই এতোটা কষ্ট করে এসেছি”
দীপশিখা তাচ্ছিল্যভরে হেসে বললো,
“আবার আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন? দিন খারাপ যাচ্ছে বলে এখন আবার আমার মুখ দেখতে হবে?”
দীপশিখার প্রশ্নে থতমত খেলো জাওয়াদ। না সে কোনো স্বপ্ন দেখছে না। সে দিন খারাপ যাচ্ছে বলে দীপশিখাকে দেখতে আসে নি। এসেছে মনের ব্যথা কমাতে। মনের ক্ষুধা মেটাতে। মেয়েটি তো জানে না কি ভীষণ মায়ায় সে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলেছে। ক্ষণে তাকে দেখার তীব্র নেশা ধরে। তাকে ছুঁতে ইচ্ছে করে, কথা বলতে ইচ্ছে করে। ফলে অপরাধী স্বরে উত্তর দিলো,
“না”
“তাহলে আমাকে কেন বিরক্ত করছেন?”
“কারণ তোমাকে কিছু বলার ছিলো। কথাগুলো না বললে আমার মন শান্ত হবে না”
“কিন্তু আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না”
“জানি। তবুও নির্লজ্জের মত এসেছি। জানি কথাগুলো আবলতাবল লাগবে। কিন্তু বিশ্বাস কর দীপশিখা আমি আর পারছি না। আমি একটা বলদ যে নিজের অনুভূতি বুঝতে পারি নি। কিন্তু সত্যি বলছি আমি স্বপ্নের জন্য তোমার সাথে দেখা করতে আসি নি। এসেছি কারণ, কারণ আমার মনের খোড়াক হয়ে গেছো তুমি। আমি তোমাকে ভালো……”
কথাটা শেষ করার আগেই থামিয়ে দিলো দীপশিখা। তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। চোখের দৃষ্টিতে প্রখরতা। কঠিন স্বরে বললো,
“আপনার সাথে ভালোবাসা ভালোবাসা খেলার সময় বা ইচ্ছে আমার নেই জাওয়াদ সাহেব। আপনি এসব ফাতরামি অন্য কারোর সাথে করুন প্লিজ। আমাকে ক্ষমা করবেন। আসছি”
দীপশিখা যেতে নিলেই আবার হাতটা টেনে ধরলো জাওয়াদ। কাতর স্বরে বললো,
“প্লিজ আমার কথাটা শোনো চিংকি। আমি সত্যি বলছি, আমি তোমার জীবনের কেউ না হলেও তুমি আমার অনেককিছু। আমি তোমাকে পাগলের মত দেখতে চাই, তোমার কন্ঠ শুনতে চাই। রাত রাতভর তোমার সাথে অহেতুক কথা বলতে চাই, তোমার হাসিটা দেখতে চাই যা শুধু আমার জন্য ছিলো। প্লিজ চিংকি”
দীপশিখা শীতলভাবে তার হাত ছাড়িয়ে দিলো। বরফ শীতল স্বরে বললো,
“আমি চাই না। আমি আপনার খেলনা হতে চাই না। বোকার মত আপনার কথাগুলোয় নিজেকে আপাদমস্তক ভাসিয়ে দিতে চাই না। কারণ আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না”
বলেই সে পা বাড়ালো। সে চলে যাচ্ছে। জাওয়াদের মস্তিষ্কে ভাসছে পড়াবাবার কথাটা,
“চিংকির বিয়ে অন্য একজনের সাথে হচ্ছে। সে অন্যকাউকে ভালোবাসছে। আর তুমি তার ত্রিসীমানায় কোথাও নেই। তার জীবনে তোমার অস্তিত্ব নেই। তাই চিন্তাচেতনায় তোমার অস্তিত্ব নেই। তুমি কোথাও নেই”
এভাবেই কি চিংকির সাথে তার গল্পটির সমাপ্তি ঘটবে? এভাবেই তাদের রাস্তা পৃথক হয়ে যাবে? সে চিংকিকে বোঝাতে পারবে না? বোঝাতে পারবে না সে তাকে সত্যি ভালোবাসে? জাওয়াদ বেপরোয়ার মতো ছুটলো। চিংকির বাহু টেনে ধরে নিজের দিকে ফেরালো। উন্মাদের মত বললো,
“ভুলটা আমার ছিলো। আমি নিজেকে বুঝতে পারি নি। সবসময় ভেবেছি তোমার প্রতি এই অনুভূতিগুলো প্রেম নয়। বোকার মত প্রশ্ন করে গেছি আমি তোমার প্রেমে কেন পড়বো?”
“কেনো? আমার প্রেমে পড়া যায় না বুঝি?”
দীপশিখার প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো জাওয়াদ। চিংকির চোখ কাঁপছে। টলমল করছে তা। জাওয়াদ কথাটা এভাবে বলতে চায় নি। সে প্রেমের কথা বলায় পটু নয়। চিংকি তার হাত ছাড়িয়ে দিলো। ধরা গলায় বললো,
“কখনো আমার সামনে আসবেন না আপনি। আপনি একটা জঘন্য মানুষ”
জাওয়াদ অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। বুকের মধ্যিখানে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলো। চিংকি আবার তাকে ভুল বুঝলো। সে কথাটা সে অর্থে বলতে চায় নি। চিংকি চলে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই আটকাতে পারলো না জাওয়াদ। বলতেই পারলো না,
“আমাকে একটি শেষ সুযোগ দাও”
******
বসার ঘরে ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে বসে আছে জাওয়াদ। তার সামনে বসে আছে জ্যোতি। মোবাইলে চোখ টিকিয়ে রেখেছে আর রাগে ফুসছে। মুখখানা লাল হয়ে গেছে ওর। একটু পর পর গা/ল/মন্দ করছে,
“জা উ রা কোথাকার! পিটিয়ে তত্তা বানিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়। ছাগল কোথাকার!”
তার রুষ্ট কন্ঠে ঘাবড়ালো জাওয়াদ। ভীত স্বরে বললো,
“কাকে গাল্লাচ্ছিস!”
“এই গাধা নায়কটাকে। কি শয়তান জানো? এতোকাল যখন নায়িকা তাকে ভালোবেসেছে সে নিষ্ঠুরভাবে তাকে মানা করেছে। এখন যখন নায়িকা মনোঃস্থির করে ঠিক করেছে সে এই ছেলেকে ভুলে যাবে তখন শয়তানটা তাকে বলছে ভালোবাসি। চিন্তা কর কি অপদার্থ, অথর্ব। লেখিকা যদি এই শয়তানের সাথে মিল দেয় আমি লেখিকাকে বয়কট করবো। লেখিকা নায়িকার জন্য একটা ভালো ছেলে আনবে, তার সাথেই বিয়ে দেবে। তখন এই গাধার গাধা কাঁদবে আর বুঝবে কত ধানে কত চাল! বেদ্দপ একটা”
জাওয়াদ কেশে উঠলো। তার মনে হলো জ্যোতি তাকে বলছে। সে অসহায় স্বরে বললো,
“বেচারা হয়তো বুঝতে পারে নি”
“বুঝবে না কেনো? প্রেম কি ফিজিক্সের সূত্র নাকি ত্রিকোনমিতির কোনো অংক যে বুঝবে না। যখন সময় ছিলো বুঝে নি। এখন ঢং করছে। যতসব। থাপড়ানো দরকার। পাজি কোথাকার।”
জাওয়াদ মাথা চুলকালো। হ্যা, দোষ সম্পূর্ণ তার। সব শাস্তি সে পেতে রাজি। কিন্তু কোনোভাবেই চিংকিকে হারাতে পারবে না। মোটেই নয়। কিন্তু কি করবে? হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো।
*****
জেলের সেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদ এবং পাভেল। পড়াবাবা বিরক্ত স্বরে বললেন,
“কি চাই?”………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি
#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#২৩তম_পর্ব
জেলের সেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদ এবং পাভেল। পড়াবাবা বিরক্ত স্বরে বললেন,
“কি চাই?”
পড়াবাবার কণ্ঠে তীব্র বিরক্তি প্রকাশ পেলেও তার মুখশ্রী শান্ত। সোডিয়ামের হলুদ আলোতে তার শান্ত মুখপেশীগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। পরণে আজ অন্যদিনের মত শর্ট আর টিশার্ট নয়। বরং পাঞ্জাবী এবং পায়জামা। পাঞ্জাবীর হাতাটায় একটা হলুদ দাগ। চট করে দাগটা চোখে পড়ে না। পড়াবাবা ঘুমাচ্ছিলেন যখন পাভেল আর জাওয়াদ এসে তাকে ডাকলো। ঘুম হয়তো কাঁচা ছিলো তাই কণ্ঠে বিরক্তি। ঘড়ির সময় এখন সন্ধ্যা ছয়টা দশ। দূর থেকে আযানের শেষ ধ্বনি ভেসে আসছে। জাওয়াদ অফিস থেকে পাভেলকে প্রায় পাকরাও করে এনেছে। পাভেলও একটু বিনোদনের নেশায় এসেছে। পড়াবাবার মতো মানুষকে জেলের ভেতর—ব্যাপারটি তার জন্য বিনোদন থেকে কম কিছু নয়।
থানার পেছনের দক্ষিণের ছাতিম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে তিনজন। গাছটি ছোট, কিন্তু ডালপালা ছড়িয়ে বিশাল ছাউনি করে রেখেছে। পড়াবাবার ঠোঁটে জ্বলন্ত নিকোটিনের দলা। সে হাত না লাগিয়ে সিগারেট টানছে। দু হাত পায়জামার পকেটে। ধোঁয়া মিলিয়ে যাচ্ছে শীতল সমীরণে। আজ বৃষ্টি হবে হবে করছে। দক্ষিণের শীতল বাতাসে সিগারেট জ্বালাতেও একটু বেগ পেতে হচ্ছিলো। সিগারেট অবশ্য জাওয়াদ এনেছে। সিগারেট পেয়ে পড়াবার কণ্ঠের বিরক্তি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
কন্সটেবল আর এস.আই এর সাথে কি এমন ভালো সম্পর্ক জানা নেই জাওয়াদের। কিন্তু পড়াবাবা বললেই তারা লকাপের দরজা হাসিমুখে খুলে দেয়। জাওয়াদ যদিও খুব একটা অবাক হয় নি। আগেরদিন সে এই ব্যাপারটি খেয়াল করেছিলো। তবে পাভেল খুব অবাক হয়েছে। দেশের আইনের এমন ল্যাঙড়া অবস্থা বলেই বোধহয় ফাঁশির আসামী পালিয়ে যায় আমরা খোঁজ পাই ছয়মাস পর। পড়াবাবা সিগারেটের ফিল্টার ফেলে দিলেন। পায়ে পিষে শুধালেন,
“কি চাই তোমার?”
“উপদেশ”
নির্লজ্জভাবে উত্তর দিল জাওয়াদ। পড়াবাবার কপালে ভাঁজ পড়লো। আবার কণ্ঠে বিরক্তি এনে বললো,
“কিসের উপদেশ চাই তোর হতচ্ছাড়া?”
“তুই তুকারি করছেন কেন?”
“তো কি ধূপধুনো করবো তোমাকে? আমি কোথায় একটু শান্তি পেতে এসেছি, তোমার যন্ত্রণায় আমার ভ্যাকেশনের চৌদ্দটা বেজে গেছে”
“দোষ তো আপনার। যতক্ষণ বুঝতাম না আমি চিংকিকে ভালোবাসি ততক্ষণ তো ভালোই ছিলাম, এখন তো ভালো নেই। যখনই মনে হচ্ছে সে আমার জীবনে নেই তখনই আমার বুকে মোচড় খাচ্ছে। ভেতরটায় এক সূক্ষ্ণ ব্যথা আমাকে অসহায় করে তুলছে। ব্যাথাটা সময়ের সাথে সাথে বাড়ে। একটা সময় আমার পাগল পাগল লাগে। হাহাকার করে কাঁধতে ইচ্ছে করে। অথচ সেই মানুষটি আমার মুখদর্শন করতে চায় না—এর চেয়ে যন্ত্রণা আর কি হতে পারেন বলেন তো। আমি পাগলের মতো হেদিয়ে মরছি ওর জন্য, অথচ ও মেঘের মতো হয়ে গেছে। যাকে দেখা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না। এবার বলুন আমি কি করবো? আমি চিংকিকে ভালোবাসি, কিন্তু আমি সেটা ওকে কি করে বোঝাবো?”
পড়াবাবা মুখ বিকৃত করে একটা শুয়োপোকার হাটা দেখছেন। সে জাওয়াদের কোনো কথা শুনেছেন কি না সন্দেহ। তার সমগ্র আগ্রহ ঐ শুয়োপোকাটার মাঝেই। জাওয়াদ আবার শুধালো,
“আমাকে কোনো উপায় বলুন, যেন আমি চিংকির ঘৃণা তালিকা থেকে বের হতে পারি”
“আমি কি করে বলব?”
“মানে কি? আপনি ভন্ডবাবা এমন বুদ্ধি আপনার মাথায় গিজগিজ করার কথা। মাথা ঝাকালেই বুদ্ধি পড়বে”
পড়াবাবা রহস্য করে হাসলেন, ঠাট্টার স্বরে বললেন,
“আমি পড়ে ফু দেই, বুদ্ধি দেই না। তোমার বন্ধু তো প্রেম করে, তাকে জিজ্ঞেস কর”
“সে আমার বোনের সাথে প্রেম করে। জ্যোতিকে একহাজার টাকা দিলেই ও রাগ ভুলে যায়”
পাভেল সহমত জানিয়ে বললো,
“ঠিক, জ্যোতি কখনো রাগে না। আমার উপর কখনো রাগলে আমি সরি নোটের সাথে বিকাশে সেন্ড মানি করে দেই”
পাভেলের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললো পড়াবাবা। জাওয়াদের দেওয়া সিগারেটের আরেকটি সিগারেট ধরালেন। একটি টান দিয়ে নিকোটিনের কুন্ডলী ছাড়লেন। তারপর গম্ভীর স্বরে বললেন,
“প্রেমে পড়ে যদি সেই প্রেম প্রকাশে অন্যের সাহায্য লাগে, তাহলে তুমি প্রেমিক হিসেবে ব্যর্থ। প্রতিটা প্রেমিকের প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ভিন্ন হয়। যদি ভিন্ন না হয় তবে সেই প্রেমে স্বকীয়তা নেই। একটা গল্প বলি, বহুকাল আগের কথা—একজন ব্যর্থ মানুষ ছিলো। সে বিশ্বাস করতো জীবন তাকে শুধু ব্যর্থতা দিয়েছিলো। জীবনে তার খাঁ খাঁ শুন্যতা ছিলো। না সমাজের জংধরা নিয়মের চাকরি ছিলো না তার কাছে বেগুনী কাগজের দলা ছিলো। ছিলো শুধু একটা কলম। লেখার শখ ছিল। একটা সময় এই লেখার ইচ্ছেটুকুও হারিয়ে গেলো। বাঁচার কোনো ইচ্ছে অবশেষ রইলো না। স্টেশনের প্লাটফর্মে শুয়ে সে রেললাইনের দিকে তাকিয়ে রইতো। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো ঝাপ দেই। কিন্তু ঝাপ দেওয়া হত না। এই জীবন রেখে কি লাভ যার কোনো অর্থ নেই। কিন্তু অদৃষ্টের হয়তো অন্যকিছু ইচ্ছে ছিলো। ব্যর্থ মানুষটির জীবনে একটি মেয়েকে সে পাঠিয়ে দিল। একরাশ প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলো কাজললতা। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই টাকা। ব্যর্থ মানুষের টাকার দরকার। বেগুনী কাগজের অভাবে তাকে রেলস্টেশনে ঘুমাতে হয়। সে ঠিক করলো কাজললতার প্রশ্নের উত্তর দিবে, যদিও সে কিছুই জানে না তবুও সে প্রশ্নের উত্তর দিবে। মিথ্যে বলবে, সমস্যা কি! প্রথম প্রথম মেয়েটিকে মোটেই ভালো লাগে নি। দেমাগী, রাগী—একটা মেয়ে। কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো তত কাজললতা তাকে ঘোরের মধ্যে ফেলে দিলো। কাজললতার নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়ে গেলো ব্যর্থ মানুষের নিত্তদিনের কাজ। একটা সময় সে অভ্যস্থ হয়ে গেলো কাজললতার। কাজললতার কঠিন ভাষ্য তাকে মুগ্ধ করতে লাগলো। কাজল কালো নয়ন তার হৃদয় কাঁপাতো। তার অশ্রু ব্যর্থ মানুষটিকে ভাবাতো। তার প্রতিদিনের প্রশ্নোত্তর খেলা কখনো মনোভাবের আদান প্রদানের মাধ্যম হলো তারা টের পেলো না। ব্যর্থ মানুষ আর মিথ্যে বলতে পারছিলো না। সে খেয়াল করলো, তার জীবনের শূন্যতা গুলো আর তাকে ভাবাচ্ছে না। ধীরে ধীরে বাঁচার ইচ্ছে হলো। কাজললতাকে নিয়ে একটি দুনিয়া বানানোর ইচ্ছে হলো। মিথ্যেগুলো আড়াল করার ইচ্ছে হলো। ব্যর্থ মানুষ ঠিক করলো সে নতুন করে চেষ্টা করবে। ছক কাটবে নতুন করে। নতুন করে তার জীবনকে সাজাবে। কাজললতাকে বলবে,
“আমার বাঁচার ইচ্ছে হবে, কাজললতা?””
বলেই থামলেন পড়াবাবা। তার দীর্ঘশ্বাসে তীব্র হতাশা ছিলো যেন। পাভেল শুধালো,
“বলেছিলো?”
“নাহ! বলার সময় হয়তো পেরিয়ে গিয়েছিলো। কাজললতাকে যে মিথ্যে কথাগুলো সে বলেছিলো সব মিথ্যে ফাঁস হয়ে গেলো। কাজললতা বুঝে গেলো, ব্যর্থ মানুষটি আসলে ভন্ড। তার উত্তরগুলো সব মিথ্যে। তাই সে ব্যর্থ মানুষের পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিলো। ব্যর্থ মানুষ দেরি করে ফেলেছে তার কাজললতাকে মনের কথাটা বলতে”
“সেই ব্যর্থ মানুষটি কি আপনি?”
জাওয়াদের প্রশ্নে শুধু হাসলেন পড়াবাবা। সিগারেটটা শেষ হয়ে গেছে। টান দেওয়া হলো না। ফিল্টারের ছাই গুলো হাতের উপর পড়ছে। জাওয়াদ শুধালো,
“কাজললতা এখন কোথায়?”
“সে ভালো আছে। সুখে আছে। শুধু…… সে আমার নেই”
জাওয়াদ চুপ করে রইলো। তার মুখশ্রীতে তীব্র বিষাদ নেমে এলো যেন। পড়াবাবা পায়জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললেন,
“প্রেমিকের প্রেম সফল হোক বা বিফল, প্রেমে স্বকীয়তা থাকা প্রয়োজন। প্রেমের কোনো নিয়ম-নীতি নেই, প্রেম প্রেমই হয়। ভয় পেয়ে তুমি ছক কাটতে গেলেই তুমি চোরাবালিতে ডুবে যাবে। ব্যর্থ মানুষের মত ভুল করতে যেও না। আর শোনো, এই শেষবার! কাল আমি বেইল নিয়ে থানা থেকে বিদায় নিব। খবরদার তুমি আমার কাছে আর আসবে না”
পড়াবাবা যাবার জন্য পা বাড়ালে পাভেল পিছন থেকে শুধালো,
“আচ্ছা, আপনার আসল নাম কি? ব্যর্থ মানুষ কারোর নাম হয় না”
পড়াবাবা হেসে উত্তর দিলেন,
“সীমান্ত”
***
“বঁধু, মিছে রাগ কোরো না, কোরো না
বঁধু, মিছে রাগ কোরো না, কোরো না
মম মন বুঝে দেখো মনে মনে
মনে রেখো, কোরো করুণা
বঁধু, মিছে রাগ কোরো না, কোরো না”
গানটা মৃদু সুরে বাজছে। খোলা চুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে দীপশিখা। তার হাতে গরম চায়ের মগ। মাথাটা খুব ধরেছে। জাওয়াদের সাথে দেখা হবার পর-ই বাসায় চলে এসেছিলো সে। ঝর্ণা ছেড়ে পাগলের মতো কেঁদেছে। সেই থেকে তীব্র মাথা ব্যথা। কাঁদার মানে নেই। তবুও ঝর্ণা ছেড়ে হাউমাউ করে কেঁদেছে। জাওয়াদ তাকে ভালোবাসে। কথাটা একমাস আগে বললেও দীপশিখা হয়তো অনেক আনন্দিত হত। এখন বাক্যটি শুধু নাইলনের দড়ির মত লেগেছে যা তার কথা পেঁচিয়ে আছে। যত মানুষটিকে ভুলে থাকতে চাইছে সে ততটাই মানুষটি তার সম্মুখে আসছে। প্রথমবার তার কাছ থেকে প্রত্যাখান পেয়ে খুব ভালো করে সামলে নিয়েছিলো চিংকি। কিন্তু এবার যত সামলাতে চাইছে ততই সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। দূর্বল নয়, তার মনকে আরোও শক্ত করতে হবে। সে আর জাওয়াদকে নিয়ে ভাবতে চায় না। এর মাঝেই বাসার সামনের কদম গাছটির দিকে তার চোখ গেলো। সোডিয়ামের ক্ষীন আলোতে লম্বাকার ছায়া স্পষ্ট। চিংকি সাথে সাথেই ঘড়ির দিকে তাকাল। এখন রাত এগারোটা বাজে, অথচ এতো রাতে তার বাড়ির সামনে জাওয়াদ দাঁড়িয়ে আছে মানা যায়। জাওয়াদের দৃষ্টি তাকে দেখছে কোনো সন্দেহ নেই। দীপশিখা এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। সে ঘরের ভেতরে চলে গেলো। বারান্দার দরজাটা দিয়ে সব পর্দা টেনে দিলো। মাঝরাতে তার রোমিওগিরি করতে ইচ্ছে হলে সে করুক। তাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই দীপশিখার।
*****
আকাশটা কমলা হয়ে গেছে। সূর্যের কমলা রঙ ছড়িয়ে আকাশের নীল রঙকেও ঢেকে দিয়েছে। দলে দলে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে নিজ নীড়ে। বাতাসটাও সন্ধ্যের গন্ধ নিয়ে আসছে। দীপশিখা ভার্সিটির গেট থেকে বের হলো একটু ব্যস্ত ভঙ্গিতে। গন্তব্য এখন নীলক্ষেত। বই কিনবে কিছু। সেদিন দোকানটা বন্ধ ছিলো। আজ টিউশন নেই। মেয়েটিকে বলেছে আজ আসবে না। এখন একটা রিক্সা পেলে হয়। সোজা মেট্রো স্টেশন। তারপর মেট্রো ধরে শাহবাগ। কিন্তু আজ যেন একটা রিক্সা নেই। যাকেই জিজ্ঞেস করা সেই মুখ বাকিয়ে বলছে “যাব না”। তখনই একটি বাইক তার পাশে এসে দাঁড়ালো। দীপশিখা সেদিকে নজর যেতেই কপাল কুচকে এলো তার। নির্লজ্জ স্বরে বললো,
“লিফট লাগবে?”
জাওয়াদের এমন নির্লজ্জতায় কপাল কুঁচকে গেলো দীপশিখার। জাওয়াদ বললো,
“তুমি বাসায় যাবে তো?”
দীপশিখা উত্তর দিল না। সে হাটা শুরু করলো। জাওয়াদ তার পাশ দিয়ে ধীর গতিতে বাইক চালাতে লাগলো। সন্তর্পনে চালালো যেন কোনো ঝামেলা না হয়। দীপশিখার বিরক্তি বাড়লো তাতে। ফলে হাটা থামিয়ে কঠিন স্বরে বললো,
“কি সমস্যা আপনার?”
“কোনো সমস্যা নেই”
“আপনি কি গতদিনের কথাগুলো ভুলে গেছেন?”
“একেবারেই না”
“তাহলে আমাকে বিরক্ত করছেন?”
জাওয়াদ মৃদু স্বরে বললো,
“যাতে অন্তত তুমি আমাকে দেখো। আমাকে নিয়ে ভাবো। বিরক্ত হলেও তুমি আমাকে একেবারে অদেখা তো করবে না”
জাওয়াদের কথায় হতভম্ব হয়ে গেলো দীপশিখা। এই লোক পাগল। এর মাথার তার সত্যি ছেঁড়া তাতে সন্দেহ নেই। দীপশিখা একটি রিক্সা ঢাকলো। লোকটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়া চাইলেও সে উঠে পড়লো। জাওয়াদও তার রিক্সার সাথে সাথে বাইক চালালো। দীপশিখা মেট্রো স্টেশন যেয়ে ভাবলো জাওয়াদের সাথে তার আর দেখা হবে না। কিন্তু তার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ হলো। নীলক্ষেতেই দেখা হলো জাওয়াদের সাথে। জাওয়াদ তার বাইক পার্ক করে দীপশিখার পাশ দিয়ে হাটতে লাগলো। দীপশিখা কঠিন স্বরে বললো,
“আমার পিছন পিছন আসবেন না”
“আমি কোথায় তোমার পিছন পিছন এসেছি?”
“তাহলে আপনি নীলক্ষেতে কি করছেন?”
“অদ্ভুত নীলক্ষেত কি তোমার একার?”
“তাহলে আমি যে দোকানে যাচ্ছি আপনিও কেন যাচ্ছেন? দেখুন এসব বন্ধ করুন। আমার ভালো লাগছে না”
দীপশিখার কঠিন ধমকে জাওয়াদ কিছুসময় চুপ থাকলো। তারপর একটু ঝুকে তার চোখে চোখ রেখে বললো,
“আমি তোমাকে কখনো বলেছি তুমি নীল রঙ পড়বে না”
“মানে কি?”
“মানে হলো নীল পড়লে তোমাকে সবচেয়ে সুন্দর লাগে। আমি চোখ ফেরাতে পারি না। নীল রঙ তুমি শুধু আমার সামনেই পড়বে এছাড়া নয়”
“আজব, আমি আপনার কথা শুনবো কেন?”
“তাহলে আমি তোমার কথা শুনবো কেন?……………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি