#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#২৬তম_পর্ব
দীপশিখা কেঁচিগেট খুলতে যাবে ঠিক তখনই পেছন থেকে জাওয়াদ তাকে জড়িয়ে ধরলো। শক্ত সে বাধন। কপাল কাঁধে ঠেকিয়ে কাতর স্বরে বললো,
“প্লিজ তুমি আমাকে একটি সুযোগ দেও”
বলিষ্ঠ বুকে ঠেকে আছে দীপশিখার পিঠ। উষ্ণ নিঃশ্বাস ছড়িয়ে যাচ্ছে কাঁধময়। পুরুষটির বেসামাল হৃদয়ের স্পন্দনও শুনতে পাচ্ছে দীপশিখা। মুহূর্তটা যেন থমকে গেছে। বাতাস থেমে গেছে। গাছের পাতা নড়ছে না। পৃথিবীটাও দাঁড়িয়ে গেছে যেন। দীপশিখার হাত পা অসাড় হয়ে গেলো। ভেতরটা অস্থির করে উঠলো। নাকে ঠেকছে জাওয়াদের সেই চিরচেনা গন্ধ। একটা সময় বিভোর ছিলো এই মাতাল করা পারফিউমের গন্ধে। হৃদয়ে উচাটন হত এই মাতাল করা গন্ধে। আজও অনুভূতিটা একই। কিন্তু সেই সাথে স্পর্শ রয়েছে অদ্ভুত বিষাদের। এই বিষাদ তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। হৃদয়কে ভার করে তুলছে। মানুষটির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো সে। জাওয়াদের বাঁধন আরোও শক্ত হল। অনুরোধ করে বললো যে,
“একটু থাকো না গো। ছেড়ে দিলেই তো পালিয়ে যাবে”
নিদারুণ কাতরতা অনুভূত হলো দীপশিখার। কম্পিত স্বরে শুধালো,
“আবার আমার স্বপ্ন আপনাকে জ্বালাচ্ছে? দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে?”
জাওয়াদ থমকালো, চমকালো। সে চট জলদি দীপশিখাকে নিজের দিকে ঘোরালো। বিস্মিত স্বরে শুধালো,
“কি বলছো এগুলো?”
“অনেক ভাবলাম, হুট করেই আপনার অপছন্দের মানুষটি কি করে পছন্দের সারিতে চলে এলো। এছাড়া আর কোনো ব্যখ্যা পেলাম না। আমি সত্যি আপনার স্বপ্নে আসতে চাই না”
“কিন্তু আমি চাই, আমি চাই তুমি আমার স্বপ্নে আসো। শুধু স্বপ্নে না, তুমি আমার সর্বত্র জুড়ে থাকো। আমি চাই তোমাতে আমি বিভোর হয়ে থাকি। আমি মানছি আমি ভুল করেছি, মানছি নিজের অনুভূতিগুলো বুঝতে আমার অনেক সময় লেগেছে। আমি ভালোবাসার যাত্রায় নেহায়াত কাঁচা মানুষ। আমার জানা নেই ভালোবাসার সংজ্ঞা। শুধু এতোটুকু জানি তুমি ছাড়া আমার নিজেকে অপূর্ণ লাগে। সুন্দর পৃথিবীও অসুন্দর লাগে। জ্যোৎস্নাও মলিন লাগে। যে স্বপ্নের জন্য আমি উত্যক্ত ছিলাম, সেই স্বপ্ন দেখার অপেক্ষা করি। তোমার এক ঝলকের জন্য তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো অপেক্ষা করি। আমি কতটা শুচিবাই তুমি জানো। তবুও এই মশার মধ্যে আমি দাঁড়িয়ে আছি শুধুমাত্র তোমাকে এক পলক দেখার জন্য। আমার অনুভূতিগুলো তোমার কাছেই এসে থেমে যায়। এটাকে তুমি কিভাবে ব্যখ্যা করবে বলো? আমি তোমাকে ভালোবাসি। পাগলের মতো ভালোবাসি”
মনটা হু হু করে উঠলো দীপশিখার। টলমল করে উঠলো লুকায়িত প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা মূর্ছিত প্রণয়লহর। সেই টলমলে প্রণয়লহরীকে রুখলো তীব্র অভিমানের দেওয়ার। কঠিন সেই দেওয়াল। এতটাই শক্ত ধাতুর যে তার ভাঙ্গার শক্তি নেই দীপশিখার। ফলে অনুভূতিগুলো পুনরায় মলিন হয়ে গেলো। জাওয়াদের প্রেম নিবেদন কেবল শব্দের মতো লাগছে। সে ভেবেছিলো কখনো সে জাওয়াদের প্রতি রাগ দেখাবে না, অভিমানের ঝলক প্রকাশ করবে না। অভিযোগের সুর তুলবে না। অথচ আজ সবকিছু শরীরকে স্থবির করে ফেলেছে। অশ্রুরা দলা পাকাচ্ছে কণ্ঠে। যে আকুল নিবেদনে সে বিবশ হবার কথা সেই আকুল নিবেদনে তার কষ্ট হচ্ছে। বিশ্রী কষ্ট। এই কষ্ট কেন? জাওয়াদের প্রেম অনুভব করতে পারছে না তাই? চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো দীপশিখার। দলা পাকানো স্বরে বললো,
“আপনার প্রেমের এক রত্তি অনুভব করার জন্য একটা সময় প্রমত্ত হয়ে ছিলাম। অথচ আজ নিজেকে অনুভূতিশূণ্য ঠেকছে। আমি বোধ হয় আপনাকে আর ভালোবাসি না জাওয়াদ সাহেব। আমার ভালোবাসায় সিক্ত হৃদয়টা মনে হয় রিক্ত হয়ে গেছে। আপনি বোধ হয় দেরি করে ফেলেছেন। কেন এতোটা সময় লাগালেন বলুন তো? কেন? কেন? কেন?”
জাওয়াদ আকুল স্বরে বললো,
“ফাঁসির আসামীকেও একটি শেষ সুযোগ দেওয়া হয় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার। আমাকে তুমি সেটাও দিবে না?”
“আমার হৃদয়ে আপনার জন্য কিছুই হয়তো অবশিষ্ট নেই। যা আছে তা শুধু দুঃখ, অভিযোগ, অভিমান। আপনি সইতে পারবেন? অভিমানের ভার সইবার ক্ষমতা আছে?”
“তোমার আমাকে ভালোবাসার প্রয়োজন নেই। শুধু আমাকে একটি সুযোগ দাও, সুযোগ দাও আমার অনুভূতিগুলো বোঝানোর। তোমার অভিমান সইতে রাজি আমি। তোমার রাগ, অভিযোগ, দুঃখগুলোকে আগলে রাখবো বিশ্বাস কর। আমি শুধু তোমাকেই এমনটা বলছি দীপশিখা। তবুও যদি তুমি মানতে না চাও আমি তোমাকে ভালোবাসি। তবে তাই হোক। মেনে নিলাম সব অভিযোগ। শুধু আমাকে তোমার গন্ডিতে থাকতে দাও। তোমার পরিধিতে একটু ঠাঁই দাও”
দীপশিখা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো জাওয়াদের থেকে। তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুকের উপর কেউ যেত পাহাড়সম ভার উঠিয়ে দিয়েছে। কেউ গলাটা চিপে ধরে রয়েছে যেন নিষ্ঠুরতার সাথে। অভিমানী স্বরে বলল,
“অনেক দেরি হয়ে গেছে জাওয়াদ সাহেব”
“তারমানে তুমি ওই আদিবকে বিয়ে করবে? তুমি যাকে ভালোবাসো না তাকে বিয়ে করবে? এটা কি অন্যায় না?”
জাওয়াদের স্বরে ঠিকরে পড়লো রাগ। দীপশিখা বিমূঢ় চাইলো। পরমুহূর্তে বললো,
“আপনার মতো সবাই? ভালোবাসা এমন লাউ কচু না। বিয়ের পর সেটা হয়েই যাবে”
জাওয়াদের রাগ হলো প্রচন্ড। মেয়েটি কেনো তাকে বুঝতে চাইছে না। আদিব ছেলেটি মোটেই ভালো নয়। তবুও তাকে সে বিয়ে করবে? ফলে কড়া স্বরে বললো,
“তার মানে তুমি ওকেই বিয়েই করবে?”
“হ্যা করবো”
দীপশিখার কথাটা শেষ হবার আগেই কেঁচিগেটে সজোরে লাথি মারলো জাওয়াদ। সশব্দে গেটটা নড়ে উঠলো। কানে তালা লেগে গেলো যেন শব্দে। জাওয়াদের শুভ্র মুখ রাগে রক্তিম হয়ে গেছে। চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। কঠিন স্বরে বলল,
“আমিও দেখে ছাড়বো তুমি কি করে বিয়ে কর”
বলেই হনহন করে সে হাটা দিলো। কি অদ্ভুত? সে শাঁসিয়ে গেলো? সে কি বিয়ে হতে দিবে না? হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলো দীপশিখা।
*******
প্রচন্ড খারাপ মেজাজ নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো জাওয়াদ। মনটা বিষিয়ে আছে। বিষন্নতার ঘন মেঘের মধ্যেই যোগ হয়েছে নিজের অসহায়ত্ব। নিজের উপর রাগ হচ্ছে বেশি। কেন সময়ে তার বুদ্ধি কাজ করে নি। কেন সে কলেজের ফেয়ারওয়েলের সময়-ই চিংকির প্রেম নিবেদন গ্রহণ করে নি? পাভেল কত বলেছে বিয়ে করে নিতে? কেন সে দীপশিখাকে নিজের ভূলে হারাতে গেলো? সবকিছু হয়েছে নিজের ভুলের জন্য। সে কোনোমতেই চিংকিকে হারাতে পারবে না। কিন্তু হারানোর আগে তাকে পেতে হবে। চিংকি তাকে সেই সুযোগটাও দিচ্ছে না। সত্যি কি দেরি হয়ে গেছে তার। মরীচিকার পেছনে ছুটছে কি?
ঘরে ঢুকতেই আব্দুল হামিদের সাথে দেখা হলো জাওয়াদের। তাকে উৎসাহিত লাগছে। চোখে মুখে এক চাপা আনন্দ ঠিকরে পড়ছে। ছেলেকে দেখে যদিও সেই আনন্দটা লুকিয়ে ফেললেন। সরু করলেন দৃষ্টি। জাওয়াদকে দেখেই কৈফিয়ত চাইতে শুধালেন,
“এতো দেরি হলো কেন? ছুটির দিনও রাত করে বাড়ি ফিরছো যে?”
“বন্ধুদের সাথে ছিলাম”
“এখন একটু বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো কমিয়ে দেও। বিয়েশাদি হলে ঘরমুখো হতেই হবে। এখনই অভ্যাস করে নাও”
“বিয়ে হলে আমি ঘরমুখোই হব। সেটা নিয়ে এতো চিন্তা করবেন না”
“অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। আজ বাদে কাল ঘরে বউ আসবে”
জাওয়াদ দাঁড়িয়ে পড়লো। কথাটায় খটকা লাগলো যেন তার। ফলে বিনয়ী স্বরে শুধালো,
“বউ আসবে মানে? বউ কি বাজারের আলু পটল যে গেলাম আর তুলে আনলাম”
“তোমাকে বলা হয় নি, তোমার বড় মামা একটি মেয়ে পছন্দ করেছেন। খুব ভালো মেয়ে। পরিবার ভালো। আমারও পছন্দ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আন্টি পরিয়ে আসবো। শুক্রবার সময় রেখো”
জাওয়াদের উত্তপ্ত মেজাজ আরোও বিগড়ে গেলো। যে ছেলে কখনো বাবার কথার বাহিরে কখনো কাজ করে নি, সেই ছেলেই আজ নির্লিপ্ত স্বরে বলে উঠলো,
“আমি কোনো মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি না”
“মানে?”
“মানেটা স্পষ্ট, আমি বিয়ে করতে পারবো না”
“ফাজলামি করছো?”
“না তো, আমি আমার মতামত জানাচ্ছি। আমার নিজস্ব একটা পছন্দ আছে। আমি একজনকে ভালোবাসি। আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই”
“কে সে শুনি!”
“আপনি চিনেন”
“এটা কি সেই মেয়ে?”
জাওয়াদ নিরুত্তাপ স্বরে উত্তর দিলো,
“যাক বুঝতে পেরেছেন”
জাওয়াদের অবাধ্যতা সহ্য হলো না আব্দুল হামিদের। রাশভারী স্বরে হুংকার ছাড়লেন,
“মানসম্মান কি সব গিলে ফেলেছো? ভুলে গেলো মেয়েটা কিভাবে আমাদের অপমান করেছে। আমি কিন্তু ভুলি নি। ছোট্ট একটা মেয়ের জন্য আমার এতো দিনের সম্মান সব জলে গেছে। আত্মীয়দের খোঁচামারা কথাগুলো আমার শুনতে হয়েছে। খবরদার যদি তুমি এমন কিছু চিন্তাও কর”
“তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন বাবা, কারণ আমি এমন কিছুই চিন্তা করেছি”
জাওয়াদের কথায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন আব্দুল হামিদ। রাগে তিনি কাঁপছেন। শিরাগুলো ফুলে গেছে তার। বৃদ্ধ ঘামছেন ছেলের উদ্ধত আচারণ দেখে। বাবাকে এমন উত্তেজিত দেখেও খুব একটা গা লাগালো না জাওয়াদ। সে ভনীতাহীন স্বরে বললো,
“মামাকে বলবেন এই ঘটকগিরি ছেড়ে যেন নিজের শিক্ষকতায় মনোনিয়োগ করেন। রিটায়ার হতে তো বেশি সময় নেই”
“জাওয়াদ, তোমাকে আমি কিন্তু সাবধান করছি। এটা আমার ঘর। আমার ঘরে আমার কথার অমান্য করার স্পর্ধা দেখিও না”
জ্যোতি ছুটে বাবাকে শান্ত করার জন্য ব্যস্ত হলো। কিন্তু জাওয়াদ নির্বিকার। নির্লিপ্ত স্বরে বললো,
“বাবা, আপনার বয়স হয়েছে। এই বয়সে এতো জেদ ভালো না। হ্যা যদি ছেলেবিহীন জীবন কাটানোর সিদ্ধান্তে আপনি অনড় হন আমিও কিছু বলবো না। তবে আমি দীপশিখাকে ছাড়া অন্যকাউকে নিজের জীবনে কল্পনা করতে পারছি না”
আব্দুল হামিদ স্থবির চোখে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে। ছেলের এমন পরিবর্তন তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। জাওয়াদকে যতই গালমন্দ করেন তবে তার একটি আত্মবিশ্বাস ছিলো ছেলে তার বাধ্য। কিন্তু আজ এমন ব্যবহার সহ্য হচ্ছে না তার। জাওয়াদ নিজের ঘরে গেলো। ঘরে প্রবেশ করতেই টেবিলের উপর দেখলো ভাড়া ঘড়িটা। ঘড়িটা দেখতেই জ্যোতিকে ডাকলো সে। জ্যোতি ভয়ে ভয়ে ঘরে এলো,
“ডেকেছো ভাইয়া?”
“এই ঘড়িটা কে ঠিক করেছে?”
“আমি ঠিক করে এনেছি। যেদিন খুব চেঁচামেচি করেছিলে, তাই ভাবলাম ঠিক করে দেই। সরি তোমাকে জানাই নি”
জাওয়াদ ঘড়িটা হাতে পড়লো। বোনের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো,
“ধন্যবাদ”
****
অফিস শেষ করেই জাওয়াদ নীলক্ষেতের দোকানটিতে গেলো। চিংকি দোকানদারকে বলেছিলো সে আগামী সপ্তাহে এইদিন আসবে। জাওয়াদ দোকানে বসে রইলো কিছু সময়। একঘন্টা কেটে গেলেও চিংকি এলো না। দোকানদান তাকেই শুধালো,
“ভাইজান আফামনি আইবে না?”
জাওয়াদ উত্তর দিল না। এক অদ্ভূত যন্ত্রণা অনুভব করলো সে। ভেতরটা পুড়ছে যেন। চিংকি কি আবার আদিবের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে? সে সত্যি সত্যি আদিবকে বিয়ে করবে? জাওয়াদ আরোও কিছু সময় বসে রইলো। অসহ্য যন্ত্রণাটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ইচ্ছে হচ্ছে এখনই ছুটে মেয়েটির কাছে চলে যেতে। তাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। ছুঁতে ইচ্ছে করছে। জাওয়াদ অনুভব করলো সে ঈর্ষান্বিত। জাওয়াদ হামিদ ঈর্ষা করছে। তাও আদিবের মত মানুষকে। নিজের অসহায়ত্বের উপর হাসি পেলো। আদিবের সাথে চিংকি ঘুরছে, তারা হয়তো ঘনিষ্ঠ হবে, চিংকি কি তাকেও নিজের কাছে আসার সুযোগ দিবে? কথাটা ভাবতেই শিরা উপশিরার রক্তের স্রোত যেন বেড়ে গেলো। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গেলো চাপা ক্রোধ। সাথে সাথেই পাভেলকে ফোন করলো সে, কড়া স্বরে শুধালো,
“এই আদিব হারামীটাকে কোথায় পাওয়া যাবে?”
***
এভারকেয়ার হাসপাতালের রিসিপশন থেকে আদিবের খোঁজ নিলো জাওয়াদ এবং পাভেল। এখানের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কার্যরত আদিব। বেশ দামী হাসপাতাল। আদিবের দেখা মিলতে অনেক ঝামেলা করতে হলো। হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো। অবশেষে আদিবের দেখা মিললো। আদিব জাওয়াদকে দেখেই হাসলো। হাসিতে ফুটে উঠলো একপ্রকার বিদ্রুপ। কৌতুক স্বরে শুধালো,
“আজ আমাকে এতো খুঁজছিস কাহিনী কি?”
“তোর সাথে আমার কথা আছে। গুরুত্বপূর্ণ কথা”
আদিবের হাসি প্রসারিত হলো। সে রিসিপশনের মেয়েটিকে বললো,
“আমার ফিয়ান্সে আসলে আমার রুমে পাঠিয়ে দিবেন।“
জাওয়াদের গা জ্বলে উঠলো। ফিয়ান্সে শব্দটা হুলের মত ফুটলো যেন। নিজের ছোট্ট কামড়ায় নিয়ে গেলো আদিব। এখানেই সে থাকে। ছোট হলেও বেশ এলাহি ব্যাপার আছে। আদিব আপ্যায়নের স্বরে বললো,
“কি খাবি? চা না কফি?”
“কিছুই না। আপাতত শুধু তোকে একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই”
“কি বিষয়?”
মেকি কৌতুহল দেখালো আদিব। জাওয়াদ সেটা উপেক্ষা করে বললো,
“দীপশিখার সাথে বিয়েটা ভেঙ্গে দে”
“কেন?”
“কারণ দীপশিখা এবং আমি একে অপরকে ভালোবাসি”
“কিন্তু এমন কিছু তো দীপশিখা আমাকে বলেন নি। দেখ বিয়ের কথা হতেই পারে, কিন্তু সেটা ভেঙ্গে গেছে এটা ধ্রুব সত্যি”
“দীপশিখা আমাকে বহু আগ থেকেই ভালোবাসে। স্কুলজীবন থেকে। এতোদিনের ভালোবাসা দুম করে হাওয়া হয়ে যাবে? ও আমার উপর রেগে আছে, অভিমান করেছে। সেকারণে জেদ করে তোকে বিয়ে করতে চাইছে কিন্তু বিষয়টা তেমন না। দেখ আমি তোর কাছে অনুরোধ করছে। দীপশিখাকে আমি খুব ভালোবাসি। আমাদের মধ্যে কাঁটা হস না প্লিজ”
আদিব স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তার ঠোঁটে এখনো চতুর হাসি। সে বুকে হাত বাঁধলো। হাসি অক্ষত রেখেই বললো,
“জাওয়াদ হামিদ আমার কাছে অনুরোধ করছে। দারুণ দৃশ্য”
“বেশি ভাব নিস না আদিব। জাওয়াদ নেহায়াত ঠেলায় পড়েছে। তাই বলে এতো দম্ভ করিস না”
পাভেল কঠিন স্বরে তাকে সাবধান করলো। আদিব তা গায়ে লাগালো না। বরং বিদ্রুপ টেনে বললো,
“কেমন লাগে জাওয়াদ যখন নিজের প্রেয়সীকে অন্যের সাথে দেখতে? নিশ্চয়ই ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। আমারো এমন অনুভূতি হত। তোকে দেখে আমার সত্যি শান্তি লাগছে রে”
“তুই সেই কলেজের বদলা নিবি আমার সাথে”
আদিব কুৎসিত ভাবে হাসলো। জাওয়াদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
“জাওয়াদ হামিদ যে কিনা সুন্দরী, লাস্যময়ী নারীদের মাঝে ঘিরে ছিলো আজ একটা মোটা, বেটে, সাধারণ মেয়ের জন্য আমার সামনে অনুরোধ করছে। তোর পছন্দে কত অধঃপতন। আমি যখন প্রথম মেয়েটাকে দেখলাম ঠিক করে ফেলেছিলাম ওকে আমি বিয়ে করবো না। আফটার অল সুন্দরী বউ সবাই চায়। কিন্তু যখন তোকে ওর প্রতি অস্থির হতে দেখলাম তখনই ঠিক করেছি এই মেয়েটাকেই আমি বিয়ে করব। আফটার অল বহুবছর পর শান্তি লাগছে জাওয়াদ হামিদকে হারতে দেখে। যা একটা সুযোগ দিচ্ছি, নাকে খত দে। যদি আমার মন নরম হয়”
কথাটা শেষ হবার আগেই আদিবকে প্রবল বেগে ঘুষি মেরে বসলো জাওয়াদ। আকস্মিক ঘটনায় টাল সামলাতে পারলো না আদিব। জাওয়াদ তার বিস্ময়কে আরো বাড়িয়ে কলার চেপে বললো,
“আমাকে নাকে খত দিতে বললেও আমি দিতাম, কিন্তু তোর সাহস কি করে হয় আমার চিংকিকে নিয়ে উলটাপালটা মন্তব্য করার…………
চলবে
#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#২৭তম_পর্ব
“আমাকে নাকে খত দিতে বললেও আমি দিতাম, কিন্তু তোর সাহস কি করে হয় আমার চিংকিকে নিয়ে উলটাপালটা মন্তব্য করার”
পাভেল হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে। চিরচেনা জাওয়াদ হামিদের এমন রুপ তাকে বিস্মিত করছে। এতো দিনের বন্ধুকেও অচেনা লাগছে। এটা জাওয়াদই তো? যে নিজের ব্যক্তিত্বকে অমলিন রাখতে সর্বদা একটি মুখোশ পড়ে থাকে। তার রাগ, জেদ, অপছন্দ কখনোই প্রকাশ করে না সে। নিজেকে সর্বদা “পার্ফেক্ট জেন্টালম্যান” হিসেবেই অংকন করেছে। অথচ সেই পার্ফেক্ট জেন্টালম্যানের খোলসটা আজ খসে পড়েছে। নিজের অন্তরের রাগ উগরাতে সে ব্যস্ত। স্থান, কাল জ্ঞান যেন হারিয়ে ফেলেছে সে। এটা হাসপাতাল। আদিব এই নামকরা হাসপাতালের একজন ডাক্তার। এখানে এমন গুন্ডাদের মত মারপিট করলে জাওয়াদের হিতে বিপরীত হবে। কিন্তু সেদিকে পরোয়া নেই তার। সে নিজের গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আরোও দুটো ঘুষি মারলো আদিবকে। আদিব ছিটকে পড়লো মেঝেতে। তার ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ছে। জাওয়াদ আরোও কয়েকটা ঘুষি মারতে হাত উঁচালেও থেমে যেতে হলো। হুট করেই আদিব এবং তার মাঝে উপস্থিত হলো চিংকি। চিংকি তার হাত টেনে উৎকন্ঠিত স্বরে বললো,
“পাগল হয়ে গেছেন জাওয়াদ সাহেব”
চিংকির এখানে আসার কথা ছিল না। তার আজকে ভিন্ন পরিকল্পনা ছিলো। কলেজ বন্ধ বিধায় সারাদিন ভিডিও বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সে। কিন্তু নিরুপমা জোর করে তাকে পাঠিয়েছেন। চিংকির হুট করেই দুদিন যাবৎ দাঁতের মাড়ি ফুলে গেছে। হয়তো আক্কেল দাঁত উঠবে। দাঁতের মাড়ির ব্যথায় মুখও ফুলে গেছে। কথাটা আদিব জানার পর নীরুপমাকে বুদ্ধি দিয়েছে চিংকি যেন তার হাসপাতালে চলে আসে। তার পরিচিত ভালো দাঁতের ডাক্তারের সিরিয়াল নিয়ে রাখবে। চিংকির অনিচ্ছাস্বত্তেও আসতে হল। দাঁতের ব্যথাটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছে। সেকারণেই চিংকির আসা। আদিব তার দাঁতের ব্যথার কথা কি করে জানে সেটা একটা রহস্য। বড়খালা হয়তো জানিয়েছেন। সে নিয়ে চিংকির কোনো মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা বর্তমান অবস্থা নিয়ে। জাওয়াদের এমন রুদ্ররুপ তাকে চিন্তিত করছে। চিংকিকে দেখে থেমে গেলো জাওয়াদ। নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টা করলো। চিংকির সম্মুখে নিজের কুৎসিত রুপ সে দেখাতে চায় না। ফলে আদিবকে সতর্ক করে জাওয়াদ কঠিন স্বরে বললো,
“এই মারটা মনে রাখিস। আজ আমাদের হিসেব শেষ হলো”
আদিবের কপালের শিরা দপদপ করছে। নিজের পৌরুষে অপমানের হাতুড়ির প্রহার অনুভূত হলো। কেউ তার কর্মস্থলে তাকেই মারবে সহ্য হলো না। শুধু কর্মস্থলে ঘটনা ঘটলে মানা যেত। এখানে দীপশিখাও উপস্থিত। নিজের পুরুষত্বের পরিচয় দিবে সে। ফলে নিজেকে সামলে জাওয়াদকে মারতে উদ্ধত হলো সে। তবে মুষ্টিগত হাতটা জাওয়াদের গায়ে লাগলো না, লাগলো একুশ বর্ষীয়া তরুনীর গায়ে। এতোটাই জোরে আঘাত লাগলো যে তরুণীর ঠোঁটের কাছটা কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়লো। মুখের ভেতরের অংশও হয়তো কেটে গিয়েছে। দীপশিখার ঠোঁটের কাছের কাটা অংশটা দেখতেই দৃষ্টি শিথিল হয়ে গেলো জাওয়াদের। তার মস্তিষ্কের নিউরণকোষগুলো উত্তেজিত হলো মুহূর্তে। সংযম ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো পরক্ষণেই। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রহার করতে লাগলো আদিবকে। আদিবও এলোপাথারি লাথি ঘুষি দিচ্ছে। বিশ্রী ব্যপার। জাওয়াদের হাত থেকে লহুরেখা গড়াচ্ছে। তাতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। শুধু একটা লাইন ই আওড়াতে লাগলো,
“আমার চিংকিকে তুই মারলি কি করে?”
****
লকাপের শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদ। আদিব, পাভেল এবং চিংকি বসে রয়েছে সাব ইন্সপেক্টরের সামনে। জাওয়াদের রুদ্ররুপের কোনো পরিবর্তন নেই। চোখে যেন আগুন জ্বলছে। নিজের আচরণের সামান্য অনুতাপ নেই। হাসপাতালের স্টাফ পুলিশে খবর দিয়েছে। তাদের ধারণা হয়েছে তাদের ডাক্তারকে কেউ অন্যায়ভাবে প্রহার করছে। পুলিশ এসে তাই জাওয়াদের হাতে হাতকড়া পরালো। জাওয়াদ হামিদের হাতে হাতকড়া, পাভেল স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি। চিংকির অপমানে যে তার বন্ধু প্রলয়ংকররুপ ধারণ করবে সে ভাবে নি। জাওয়াদ সংযত পুরুষ, নিজের সংযম সে হারায় না। রাগ, ক্রোধ দমিয়ে রাখা তার স্বভাবে বিশেষ গুন। অথচ সেই গুনকে সে ত্যাগ করেছে। চিংকি বসে আছে চুপ করে। পাভেল পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করছে,
“স্যার আমার বন্ধু সজ্জনব্যক্তি। আপনি খোঁজ নিন, সে কখনো এমন কাজ করে নি”
“আপনার কি মনে হয়? আমার স্বপ্নে এসেছিলো আপনার বন্ধু গুন্ডা? কমপ্লেইন এসেছে বলেই তাকে উঠিয়ে আনা হয়েছে”
আদিবের মুখে মারে দাগ। চোখ ফুলে গেছে। ঠোঁট ফেঁটে গেছে। কাপড় চোপড় অবিন্যস্ত, এলোমেলো। সে ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,
“আপনারা না আসলে আমাকে তো মেরেই ফেলতো”
“বাজে কথা বলবি না আদিব, ঝামেলা তুই শুরু করেছিস”
“জাওয়াদের চামচা তুই, ওর পক্ষই তো নিবি। আমার মুখের এই অবস্থা কে করেছে?”
“তোর থোবড়ানো খ্যামাই এমন, জাওয়াদ একটু শুধরে দিয়েছে”
পাভেলের অপমান কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটের মতো লাগলো আদিবের। কঠিন স্বরে বললো,
“তোর বন্ধুকে জেলের ভাত না খাওয়ালে আমার নাম আদিব না”
“মেয়ে মানুষের গায়ে হাত তুলে বড় বড় কথা! স্যার দেখুন শয়তানটা আমার ভাবীর গায়েও হাত তুলেছে”
দীপশিখা একটু নড়েচড়ে উঠলো। তার মুখে মারের দাগ স্পষ্ট। এস.আই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকালেন। ঠান্ডা স্বরে শুধালেন,
“আপনাকে মেরেছেন উনি?”
দীপশিখা চুপ করে রইলো। পাভেল সাথে সাথেই বলে উঠলো,
“ও তো ভয়ে কিছু বলতে পারছে না, আপনি দেখতে পারছেন না? আমার বন্ধু সহ্য করতে না পেরে এই শয়তানটাকে মেরেছে। আর করবে না, ওকে ছেড়ে দিন”
পাভেলের কথায় পুলিশ বিরক্ত হয়ে বললেন,
“চোপা বন্ধ, আমি পুলিশ না আপনি?”
“আপনি, কিন্তু কিছু করছেন না তো”
“বেশি কথা বললে কিন্তু আপনাকেও জেলে ঢুকাবো”
পাভেল বাধ্য হয়ে থেমে গেলো। জাওয়াদকে ছাড়ানোর চিন্তায় মাথা কাজ করছে না। দীপশিখাও কিছু বলছে না। সে চুপ করে বসে রয়েছে। পাভেল দীপশিখাকে অনুরোধ করে বললো,
“চিংকি, প্লিজ। জাওয়াদকে ছাড়বে না ওরা। কিছু বলো”
“আমি তো মারতে বলি নি”
“কিন্তু জাওয়াদ তো তোমার জন্যই হাত তুলেছে”
দীপশিখা চুপ করে রইলো। পাভেল নিশ্চিত জাওয়াদকে আজ ছাড়বে না। আদিব মোটামোটি প্রস্তুত এফ.আর.আই করার জন্য। আব্দুল হামিদ সাহেবকে জানানোও মুশকিল। উনি উলটো পাভেলকে গালমন্দ করবে। এত দ্রুত উকিলের খোঁজ নেওয়াও কঠিন। জাওয়াদ বরাবর যন্ত্রণা বাঁধিয়ে তার কাঁধে তুলে দেয়। আজও তাই ঘটলো। তন্মধ্যে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। পরিচিত স্বর কানে এলো,
“এস.আই সাহেব আছেন কেমন?”
কণ্ঠ অনুসরণ করে পেছনে ফিরলো। এস.আই সাহেবের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো মানুষটিকে দেখে। সে চেয়ারি ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বিনয়ী স্বরে বললেন,
“ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন বাবা?”
মানুষটি আর কেউ নয় পড়াবাবা। পড়াবাবাকে দেখে পাভেলের মুখ হা হয়ে গেলো। এই মানুষের দেখে আবার থানায়ই পাবে ভাবতে পারে নি। সেদিনের পর পড়াবাবা ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলো বলেই সে জানে। অথচ আবার তাকে থানায় দেখে অবাক হলো পাভেল। পড়াবাবার সাথে এস.আই সাহেবের সখ্যতা অনেক। তিনি পড়াবাবাকে দেখতেই একটি গদি চেয়ারের ব্যবস্থা করলেন। বেশি দুধ দিয়ে কড়া চা আনানোর ব্যবস্থা করলেন। এতোটা আপ্যায়ন একজন জেলে দিন কাটানো মানুষের জন্য কেনো সেটা বুঝতে বাকি রইলো না পাভেলের। নিশ্চয়ই ব্যাটা তার ট্রিক্স আর মাইন্ড গেম দিয়ে এই মানুষটিকে নিজের মুরিদ বানিয়েছে। পড়াবাবার পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। পড়াবাবা একবার জাওয়াদের দিকে তাকালেন। কিছু বললেন না, শুধু হাসলেন। তিনি চা খেলেন। কেকও এনেছিলো হাবিলদার। কিন্তু সেটা খেলেন না। পাভেলের মনে হল এটা থানা না, কোনো হোটেল। পড়াবাবা কিছু হাবিজাবি কথা বললেন। এস.আই তার কথা হ্যা, হ্যা করলো। যেনো তার এই পরামর্শগুলোর উপর এস.আই এর জীবন আটকে আছে। পড়াবাবা পকেট থেকে বের করে কিছু হাবিজাবি এস.আই এর হাতে দিলেন। তারপর তিনি উঠে বললেন,
“আসি এস.আই সাহেব”
“আপনার আসার প্রয়োজন ছিলো না। আমি বেইলের কাগজটা আপনার আড্ডা থেকেই নিয়ে আসতাম”
“না না, হাজিরা দেওয়া আমার কর্তব্য। আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করুন, আমি আমার। পৃথিবীতে আমরা নিজের দায়িত্বের কাছেই বাঁধা। হিসেব তো সেটারই দিতে হয়”
এস.আই নিজে পড়াবাবাকে এগিয়ে দিলেন থানার বাহির অবধি। এসে কিছুক্ষণ গম্ভীরমুখে বসে রইলেন। তারপর হাবিলদারকে বললেন,
“ছেড়ে দেও ওই ছেলেকে”
আদিব অনেক চেঁচামেচি করলেও অবশেষে ওয়ার্নিং পেয়ে ছাড়া পেলো জাওয়াদ। পাভেল স্বাক্ষর করলো বন্ধুর হয়ে। মুখ খিঁচিয়ে বললো,
“একমাত্র আমার জ্যোতির জন্য আজ তোর দায়ভার নিলাম। এরপর কোনো ঝামেলায় জড়ালে আমি তোকে চিনি না, তুই আমাকে চিনিস না”
****
থানা থেকে বের হয়ে চিংকিকে কোথাও দেখতে পেলো না জাওয়াদ। মেয়েটি কি চলে গেলো? চিংকির সামনে নিজের এমন কুৎসিত রুপটাকে দেখানোর ইচ্ছে কখনোই ছিলো না জাওয়াদের। জাওয়াদ কবে থেকে এতোটা বেসামাল হলো? কবে থেকে সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো? হয়ত এবারো নিয়ন্ত্রণ হারা হত না যদি না এখানে দীপশিখা জড়িত থাকতো। দীপশিখার ব্যপার আসলেই জাওয়াদ বিচক্ষণতার সাথে ভাবতেই ভুলে যায়। চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। হতাশ লাগছে তার। দীপশিখা তাকে হয়তো নিকৃষ্টদের তালিকায় ফেলে দিলো। চৈত্রের বাতাসে আজ বিষন্নতা। মনটা খা খা করছে। ঠিক তখনই খেয়াল করলো দীপশিখা তার দিকে ছুটে আসছে। হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ। দীপশিখা জাওয়াদের দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বললো,
“ঔষধ লাগিয়ে নিবেন, ইনফেকশন হবে”
গালের একপাশটা লাল হয়ে আছে দীপশিখার। ঠোঁটের পাশটায় রক্ত জমে কালো হয়ে গিয়েছে। জাওয়াদের ভেতরটা হু হু করে উঠলো। ছুঁতে চাইলো কিন্তু দীপশিখা মুখ সরিয়ে নিলো। জাওয়াদ তখন অপরাধী স্বরে বললো,
“সরি আজকে আমার এমন রুপ তোমাকে দেখতে হয়েছে। তখন মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিলো। আদিবের মুখে তোমার নামের কথাগুলো সহ্য হয় নি আমার”
“জাওয়াদ সাহেব, আমার মনে হয় আমাদের আর দেখা না হওয়াই ভালো। আমার জন্য আপনি ঝামেলায় কেন ফেলছেন নিজেকে? আমার আর আপনার পথ আলাদা। সত্যিটা মেনে নিন”
বলেই পা আগাতে নিলেই হাত টেনে ধরলো জাওয়াদ। কাতর স্বরে বললো,
“আমাকে একটা সুযোগ নেওয়া যায় না চিংকি? আমি তোমার অপরাধী, আমি তো মাথা পেতে নিয়েছি”
দীপশিখা চুপ করে রইলো। জাওয়াদ তার হাতজোড়া নিজের হাতের ফাঁকে রেখে বলল,
“বেশ তবে আমি তোমার থেকে শুধু একটা দিন চাই। আমাকে একটা দিন দাও তোমার জীবনের। তারপর আর কখনো কিছু চাইবো না। আগামী পাঁচ তারিখ তুমি আমাকে দেও। এরপর যদি তোমার মনে হয় আমার ভালোবাসা মেকি, তবে আমি আর কখনো তোমাকে মুখ দেখাবো না”
“আমাকে বাসায় যেতে হবে”
“তুমি যদি আমাকে হ্যা না বলো আমি তোমাকে ছাড়ছি না”
দীপশিখা বুঝতে পারলো না কি বলা উচিত। এদিকে নিরুপমা ফোন করছে তার বাড়ি ফেরা জরুরি। সে হাত ছাড়িয়ে বললো,
“আমাকে বাসায় যেতে হবে”
*****
দীপশিখাকে বাসায় পৌছে দিলো জাওয়াদ। কেঁচিগেট দিয়ে যখন সে বাসায় প্রবেশ করছিলো জাওয়াদ পেছন থেকে বললো,
“আমি পাঁচ তারিখ তোমার জন্য অপেক্ষা করবো তোমার ভার্সিটির গেটে ঠিক চারটে নাগাদ”
দীপশিখা ফিরে চাইলো। মৃদু হেসে বললো,
“আসছি”
*****
দীপশিখার কলেজের গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদ। আজ তার জন্মদিন। সে আজকে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে প্রেম নিবেদন করবে দীপশিখাকে। অনেকটা ফিল্মি স্টাইলেই ব্যাপারটা ঘটবে। পরিকল্পনা তেমন-ই। একটি রেস্টুরেন্টের ছাঁদ ভাড়া করেছে সে। পাভেল এবং জ্যোতি অপেক্ষা করছে। দীপশিখার ক্লাস শেষ হবার সময় হয়ে এসেছে। ঘড়ির ছোট কাঁটা চারটেতে পৌছাতেই সে ফোন করলো দীপশিখাকে। কিন্তু অপরপাশ থেকে শুনতে পেলো,
“কাঙ্খিত নম্বরটিতে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না……………
চলবে