স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা পর্ব-২৮+২৯

0
38

#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#২৮তম_পর্ব

“কাঙ্খিত নম্বরটিতে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না”

পরমুহূর্তেই জাওয়াদের খেয়াল হলো চিংকি তাকে ব্লক করে রেখেছে। জাওয়াদ কোনোভাবেই তার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। উপায়ন্তর না পেয়ে ভার্সিটিতে খোঁজ নেবার সিদ্ধান্ত নিলো। ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট খুঁজতে সময় লাগলো জাওয়াদের। ডিপার্টমেন্টে যেয়ে খুব ঝামেলায় পড়লো। চিংকির কোনো বান্ধবীকে সে চিনে না। অবশেষে একটি মেয়েকে দেখতে পেলো। মেয়েটিকে সে পিঠা উৎসবের সময় দেখেছিলো। তাই তার কাছে যেয়ে শুধালো,
“আপনি ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের থার্ড ইয়ারে না?”
“হ্যা”
“দীপশিখা কবিরকে চিনেন?”
“জি চিনি”
“ও এখন কোথায় আছে বলতে পারবেন?”
“কিভাবে বলবো বলুন? সে তো দুদিন ধরেই ক্যাম্পাসে আসে না”

জাওয়াদের মাথায় বজ্রঘাত হলো। চিংকি ক্যাম্পাসে আসে নি? প্রথম যে চিন্তা মস্তিষ্কে হানা দিল তা হলো, আদিবের সাথে বিয়ের ভয়ংকর চিন্তা। মাথা ফাঁকা লাগছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। পাভেল ফোন করছে। কর্কশ ধ্বনিতে বিরক্তি বাড়লো। ফোন কেটে দিলো জাওয়াদ। এখন ঘড়িতে সাড়ে চারটা বাজে। সে কি একবার দীপশিখার বাসায় যাবে? ব্যাপারটি কি শোভনীয় হবে?

***

দরজায় অনবরত কলিংবেল বাজছে। ওপাশের মানুষটির ধৈর্য্যের বড় অভাব। সে এক মিনিটের মধ্যে তিনবার বেল চাপলো। তরঙ্গিনী দরজা খুলতেই থতমত খেয়ে গেলো। জাওয়াদ দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখমুখে ইতস্ততভাব। সংকিত স্বরে শুধালো,
“আপু, দীপশিখা আছে?”

নিরুপমা রাগে ফুলছে। জাওয়াদকে বসার ঘরে বসানোর কোনো মানেই নেই। ছেলেটিকে উচিত ছিলো দরজা থেকে বিদায় করা। অসভ্য, লম্পট ছেলে। এতো ভালো সম্মন্ধের বারোটা বাজিয়েছে সে। কাঠ গলায় শুধালো,
“এই ছেলে, তোমার দীপশিখার কাছে কি কাজ?”
“সেটা আমি তাকেই বলব। আপনি কি ওকে একটু ডেকে দিবেন?”
“তোমাকে চাপকে সোজা করে দিতে ইচ্ছে করছে। তোমার সাহস কি করে হয় আমার বাড়িতে আসা। এখনই বের হবে তুমি। আমার তোমার মুখ দেখলেই রাগ হচ্ছে। তোমার বাবা বলেছিলেন আমার মেয়ের থেকে অনেক ভালো মেয়ের সাথে বিয়ে দিবেন। কি মেয়ে পাচ্ছেন না নাকি? তাই আমার মেয়ের পেছনে ঘুরঘুর করছো?”

জাওয়াদ চুপ করে বসে রইলো। চিংকির মার রাগ অন্যায্য নয়। বিয়ে ভাঙ্গার দিন, বাবার সাথে খুব কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। জাওয়াদ অসহায় স্বরে বললো,
“আন্টি, আপনার অনেক রাগ জমে আছে আমার উপর। আমি সেজন্য হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি। শুধু দীপশিখাকে একটু ডেকে দিন প্লিজ”

এবার অপর সোফায় শান্তচিত্তে বসে থাকা মোস্তফা সাহেব মুখ খুললেন। জাওয়াদকে ঘরে ঢুকার অনুমতি তিনিই দিয়েছেন। এতোটা সময় তিনি ছিলেন মৌন। গম্ভীর স্বরে তিনি বললেন,
“চিংকি মা তো বাসায় নেই। সে এই শহর ছেড়ে চলে গেছে”
“মানে?”
“মানেটা খুব সোজা। সে তোমার ভালোবাসা থেকে পালিয়ে যেতে চায়। তোমার ভালোবাসা তাকে কষ্ট দিচ্ছে। এলোমেলো করে দিচ্ছে”

জাওয়াদ থমকালো। অস্পষ্ট স্বরে শুধালো,
“আমি একটা শেষ সুযোগও পাবো না?”

মোস্তফা কবির দাঁড়ালেন। জাওয়াদের কাঁধ চাপড়ে বললো,
“ভালোবাসার পরীক্ষা অনেক কঠিন জাওয়াদ। মুখে মুখে ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা জাহির করা হয় না। প্রমাণ দিতে হয়”

***

ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের “ঙ” বগির একটি জানালা থেকে মুখ বের করে আছে দীপশিখা। তার বিষন্ন চোখ দেখছে প্লাটফর্মের ট্রেন ধরতে ব্যস্ত যাত্রীদের দৌড়ঝাপ। দিনের আলো শুষে এসেছে। সন্ধ্যে সন্ধ্যে নেমেছে। একটু পর ই আঁধারে ঢেকে যাবে ধরনী। মিনিট বিশেকের মধ্যে ট্রেন ছাড়বে। গন্তব্য দেওয়ানবাজার। দীপশিখাও এই শহরের অশান্তিগুলোকে পরিত্যাগ করে রওনা হবে নয়া ফুপুর কাছে। দীপশিখার নয়া ফুপু থাকেন সেখানে। তিনি বিয়েতে আসতে পারেন নি। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে সিড়ি থেকে পড়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। আত্মীয়দের মধ্যে এই নারীকেই দীপশিখার খুব ভালো লাগে। ভদ্রমহিলা বিধবা এবং নিঃসন্তান। বিয়ের আড়াইবছরের মধ্যে জটিল ব্যধিতে পরলোক গমণ করেন তার স্বামী। তিনি তখন তেইশের তরুণী। পরিবার বিয়ের জন্য হন্তদন্ত করতে থাকে। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্তে অনড়। বিয়ে তিনি করবেন না। তার একটাই কথা,
“আমার স্বামী স্বল্প দিনে আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, তা আমি চিরটাকাল বুকে আগলে রাখতে পারবো”

বুকেই আগলে রেখেছে সে। দীপশিখাও নয়া ফুপুর মতো এমন ভালোবাসা চেয়েছিলো। কতটা ভাগ্যবান সেই নারী, সেই ক্ষুদ্র সময়ের ভালোবাসাটা কতটা পরিপূর্ণ ছিলো যে হৃদয় তৃপ্ত হয়ে আছে এখনো। দীপশিখা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই শহরের সমীরণও তিক্ত লাগছে। শহর ছেড়ে দিলে হয়তো যন্ত্রণা থেকে অবশেষে মুক্তি পাবে। সে চায় না জাওয়াদের মুখোমুখি হতে। তার মনে হচ্ছে সে জোর করে নিজের হৃদয়ের উপর অত্যাচার করছে। কারণ জাওয়াদের চোখে নিজের জন্য স্বচ্ছ ভালোবাসাকে কত সময় প্রত্যাখ্যান করা যায়। তার কথা, কাজ প্রচন্ডভাবে দূর্বল করে দিচ্ছে হৃদয়কে। নিজের অনড় সিদ্ধান্ত নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। দীপশিখা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আবার কষ্ট সহ্য করার সাহস নেই তার। তাই একপ্রকার পালাতে চায় সে। উপরন্তু, আদিব নামক ব্যক্তির জন্য বাসায় কম ঝামেলা হয় নি। সেদিন বাসায় ফিরতেই মায়ের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আদিব থানায় সুবিধা না করতে পেরে বড়খালাকে সব জানিয়েছে। বড়খালা কেমন মানুষ সেটা দীপশিখার ভালো করেই জানা। শব্দ দিয়ে চাবুক মারেন তিনি। হয়ত সেই চাবুকের প্রহার নিরুপমাকে সহ্য করতে হয়েছে। তাই বাসায় যেতেই কঠিন স্বরে তিনি প্রশ্ন করেন,
“ঐ ছেলের সাথে তোমার এখনো যোগাযোগ আছে দীপশিখা?”

দীপশিখা আশা করেছিলো মা তার মুখের আঘাতের কথা শুধাবে। কিন্তু এমনটা হলো না। নিরুপমা তীব্র অপ্রসন্নতা প্রকাশ করে বলল,
“তুমি তো এতোটা নির্বোধ ছিলে না দীপশিখা, আমি তো ভাবতেই পারছি না তুমি ওই লোফারটার সাথে যোগাযোগ রেখেছো। আদিবকে সে তার হাসপাতালে যেয়ে মেরেছে। রোমিও হয়েছে সে? তোমার সমস্যা ছিলো বলেই বিয়েটা ভেঙ্গেছে। এখন এসব ঢং এর কি মানে? উত্তর দিচ্ছো না কেন? জানো আদিব তোমার বড়খালাকে ফোন করে কি কি বলেছে? তোমার নামে কি কি বলেছে জানো? তুমি এতো বেক্কলের মতো কাজ কি করে করলে?”

দীপশিখা মায়ের দিকে বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর খুব শান্ত স্বরে বললো,
“আমি আদিব সাহেবকে বিয়ে করবো না। আমি কাউকেই বিয়ে করবো না মা। আমার জীবনে অশান্তির অভাব নেই। অন্তত তুমি আর অশান্তি বাড়িও না। আমি তো মানুষ। আর তোমার অন্যের ছেলের কথা ভাবার আগে নিজের মেয়ের দিকে তাকানো উচিত ছিলো না?”

নিরুপমা থমকালেন। এখন তার চোখে বাঁধলো দীপশিখার ঠোঁটের কালচে রক্তের দাগ। অস্থির হয়ে বললেন,
“কি করে হলো?”
“এটা আদিব সাহেব নিশ্চয়ই বড় খালাকে জানান নি? থাক। বাদ দেও”

বলেই এলোমেলো পা বাড়ালো নিজের ঘরের দিকে। বাথরুমে ডুকলো। এক ঘন্টা ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে থাকলো। নিজেকে গোছালো নিপুনভাবে। একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো সে। কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার পূর্বে মন দূর্বল থাকে। দীপশিখার হৃদয় এখন দূর্বল। তাই সময় নিলো মনকে শক্ত করতে।

***

রাতে খাবারের পর মোস্তফা বারান্দার আরাম কেদারায় বসে ছিলেন। কোলে একটা বই। বইটির নাম “What If?: Serious Scientific Answers to Absurd Hypothetical Questions”। পড়তে পড়তে চোখ লেগে এসেছে তার। ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়লো দীপশিখা। মৃদু স্বরে বললো,
“বাবা আসবো?”

মোস্তফা চোখ মেললো। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি উদিত হলো। আহ্লাদি স্বরে বললেন,
“আয় মা”
“তুমি ঘুমাচ্ছিলে?”
“না তো। চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম। তোমার মা তো রাগে ফেঁপে আছেন, বলেছেন তিনি খাবেন না। তার ক্রোধের কালবৈশাখী কি করে থামানো যায় ভাবছিলাম। কিছু বলবি মা?”
“তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করলে না, আমি কেন জাওয়াদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করি?”
“আমি তোকে চিনি। তাই আমি জানি তুমি নিজ থেকেই আমাকে বলবে”

দীপশিখা চুপ করে রইলো কিছুসময়। তারপর বিষন্ন স্বরে বললো,
“জাওয়াদ সাহেব আমাকে ভালোবাসেন বাবা। উনি আমার কাছে সুযোগ চান”
“তুই কি চাস?”
“আমি জানি না বাবা। আমি সত্যি জানি না। আমার সবকিছু অসহ্য লাগছে বাবা। এই শহর, এই শহরের আকাশ, এই শহরের বৃষ্টি, এই শহরের জ্যোৎস্না সব অসহ্য লাগছে। আমি পালাতে চাই বাবা। আমি সব কিছু থেকে মুক্তি চাই”
“পালিয়ে যাবে?”
“আমার সবকিছু এলোমেলো লাগছে বাবা। অনুভূতির যাতাকলে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমার দুদন্ড শান্তি চাই”

মোস্তফা হাসলেন। রহস্যময় হাসি। অতঃপর মৃদু স্বরে বললেন,
“তুমি একটু তোমার নয়া ফুপুর কাছে ঘুরে আসো। দেখবে ভালো লাগবে”

বাবা তৎকালে টিকিট কেটেছেন। তাই এসি বা বার্থের সিট পান নি। দীপশিখার অসুবিধা হচ্ছে না। তার পাশে এক বৃদ্ধ মহিলা বসা। মহিলার সাথে একটি চটের ব্যাগ। ব্যাগটাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। চোখমুখে দ্বিধা, হয়তো তিনি একা একা যাত্রা করেন না। দীপশিখা আবার জানালা দিয়ে মুখ বের করলো। তখনই দৃষ্টি আটকে গেলো। জাওয়াদ পাগলের মতো স্টেশনের প্লাটফর্মে ছুটছে। তার চুল অবিন্যস্ত। শার্টের নিচের অংশে ময়লা লাগা। হাটুর জায়গাটা কালচে হয়ে আছে। নীল জিন্সে ব্যাপারটা ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে। সে হাটছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তার দৃষ্টি উদ্ভ্রান্ত। খুঁজছে যেন অমূল্য কিছু। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই এনাউন্স করলো, ট্রেন ছেড়ে দিবে। দীপশিখার হাত পা জমে গেলো। হৃদস্পন্দের মাত্রা বেড়ে গেলো। চোখ ভিজে আসছে। হৃদয়টা যেন টুইটুম্বর হয়ে গেছে অজানা আনন্দে। অভিমানের অটল পাহাড় যেন বিকট শব্দ করে গুড়িয়ে গেলো। সে কি চাইছিলো জাওয়াদ তাকে খুঁজুক? সে কি চাইছিলো জাওয়াদ তার ভালোবাসার পরীক্ষা দিক। তার অবচেতন মন কি ঠিক করেই রেখেছিলো জাওয়াদ যদি তাকে খুঁজে নেয় তবে সে জাওয়াদকে ক্ষমা করে দিবে? ট্রেন ধীর গতিতে যাত্রা শুরু করলো। একটুবাদে প্লাটফর্ম ছেড়ে দিবে। দীপশিখা এখনো তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। সে কি নেমে পড়বে?

***

প্রচন্ড অপমানিত হবার পরও জাওয়াদের আফসোস নেই। কারণ তরঙ্গিনী তার উপর দয়া করেছে। পুরোপুরি দয়া করে নি সে। শুধু বলেছে চিংকি এখন কমলাপুর ট্রেন স্টেশনে। একটু পর তার ট্রেন। কোন ট্রেন, কয়টার সময় কিছুই বলে নি। কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের অভাব নেই। কিন্তু হাতে সময় কম। জাওয়াদ পাগলের মতো বাইক চালিয়েছে। তাড়াহুড়োর মধ্যে একবার বাইক এক্সিডেন্টও করেছে। একটুর জন্য ভয়ংকর কিছু হয় নি। চোট লেগেছে জাওয়াদের। হাত ছিলে গেছে। হাটুতে কেটে গেছে। কিন্তু জাওয়াদের অনুভূতিশূণ্য। তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। মস্তিষ্কে শুধু একটাই চিন্তা। তাকে কমলাপুরে পৌছাতে হবে। কমলাপুর রেলস্টেশনে যখন পৌছালো তখন ঘড়িতে সময় ছয়টা। কোনো মতে বাইকটা পার্ক করেই সে ছুটলো। কত নম্বর প্লাটফর্মে ট্রেন আসবে সে জানে না। কোন ট্রেন সে জানে না। প্রথমে দেখলো মনিটর। অনেকগুলো ট্রেনের নাম। বর্তমানে তিনটে ট্রেন প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। কোন ট্রেনটা দেখবে? জাওয়াদ একটা প্লাটফর্ম ভালো করে দেখলো, চিংকি নেই। একটা ট্রেনে উঠলো। সবকটা বগি দেখলো। চিংকি নেই। ট্রেনটি থেকে নামতেই বাকি দুটো ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। ট্রেনদুটো প্লাটফর্ম ছেড়ে দিচ্ছে। জাওয়াদ স্থবির চোখে তাকিয়ে রইলো। চিংকি কি সত্যি শহর ছেড়ে দিচ্ছে। তাদের কি আর দেখা হবে না? জাওয়াদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ তার জীবনীশক্তিটা কেড়ে নিচ্ছে। পৃথিবীটা হুট করে তিক্ত লাগছে। নড়তে পারছে না। মাটি যেন পা আটকে রেখেছে। পাথর দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছে ট্রেন চলে যাচ্ছে। জাওয়াদ চোখ সরিয়ে নিলো। মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। চিংকিরও কি এমনটাই অনুভূত হয়েছিলো যখন সে বলেছিলো সে চিংকিকে ভালোবাসে না। তারও কি এতটাই কষ্ট হয়েছিলো। তারও কি মনে হয়েছিলো পৃথিবীটা খুব বিশ্রী? বিষাদের মেঘ নামলো আকাশে। আকাশ ডাকছে। বৃষ্টি হবে। ভিজে যাবে ধরণী। জাওয়াদের শরীর চলছে না। চোখ তুলে প্লাটফর্ম ছাড়া ট্রেনটির দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো একটি মেয়ে ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে। ছুটে আসছে তার দিকে। জাওয়াদের নিষ্প্রাণ দৃষ্টি কি ভ্রম দেখছে। হয়তো দেখছে। মেয়েটিকে চিংকির মতো লাগছে। হুবহু চিংকি। পরনে হলুদ একটি জামা। হাতে ব্যাগ। মেয়েটি কাছে আসতেই জাওয়াদ লক্ষ করলো মেয়েটি সত্যি সত্যি চিংকি। তার নয়ন বিস্ফারিত হলো। মেয়েটি তাকে জড়িয়ে ধরলো। কাঁদোকাঁদো স্বরে বললো,
“আপনি কি জাদু করেছেন বলুন তো? কেন আমি আপনাকে ঘৃণা করতে পারছি না?”…………

চলবে

#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#২৯তম_পর্ব

“আপনি কি জাদু করেছেন বলুন তো? কেন আমি আপনাকে ঘৃণা করতে পারছি না?”

জাওয়াদ শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তার অনুভূতিগুলো জড় হয়ে আছে যেন। চিংকি তাকে ছেড়ে ভালো করে দেখলো তাকে। দু হাতে মুখখানা হাতের আদলে নিলো সে। উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত স্বরে বললো,
“এ কি অবস্থা করেছেন নিজের? একেই আপনার সেদিনের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয় নি, আবার এই রক্ত কেন? আমাদের হাসপাতালে যাওয়া উচিত”
“তুমি তো কিছু না বলেই নীরবে চলে যাচ্ছিলে। তুমি কি আমাকে এতটাই ঘৃণা করো? যে বিদায়ের একটি শব্দও উচ্চারণের প্রয়োজন অনুভব করো নি?”

জাওয়াদের কণ্ঠ কাঁপছে। তার চোখ টলমল করছে বিষন্নতায়। তার শরীর কাঁপছে। চিংকি বিমূঢ় চেয়ে রইলো। সে কোনো উত্তর দেবার পূর্বেই জাওয়াদ আবার বিষন্ন স্বগোতক্তি করলো,
“দীপশিখা আমি ভেবেছিলাম, যদি অনুভবগুলো একটু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে পারি—তাহলে তুমি বুঝতে পারবে, তুমি হয়তো ফিরে তাকাবে…আমি ভেবেছিলাম, আমার ভালোবাসাটা যদি ঠিকভাবে বোঝাতে পারি তাহলে তুমি আমাকে শেষ সুযোগটা দিবে……যদি নিজের অনুভূতিগুলো একটু ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে পারি, তাহলে তুমি একদিন ঠিক বুঝবে। একদিন ঠিক মেনে নেবে… আমার ভালোবাসা, আমার অপেক্ষা। আমি জানতাম না, কতোটা সময় লাগবে—তবু বিশ্বাস করেছিলাম… একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। যদি তুমি এভাবে চলে যাও, তাহলে তো আমি কোনো সুযোগই পাবো না—আমার চেষ্টা করারও তো কোনো অবকাশ থাকে না। আমার হৃদয় একটা শেষ সুযোগ পাবারও যোগ্য নয়?”

কথাটা বলতে বলতেই তার চোখ ভিজে এলো। কণ্ঠে দলা পাকিয়ে গেলো। থামলো একটুক্ষণ। মাথা নত করে বলতে লাগলো,
“তোমার সেদিনের শেষ “আসছি” বলাটা কি চিরকালের জন্য ছিলো? আর আমি গাধার মতো… গাধার মতো ভাবছিলাম তুমি আমাকে আসছি বলেছো। তুমি আমাকে বিদায় জানানোর কথা ভেবেছিলো। আহাম্মকের মতো সেটাকে একটা আশার কিরণ ভেবে কত কি ভেবে ফেলেছি। তোমার চলে যাওয়াই উচিত ছিলো চিংকি। অন্তত আমার মতো মানুষের থেকে মুক্তি পেতে, যে জোঁকের মতো তোমার পিছু ছাড়ছিলো না। অবশেষে তুমি আমাকে ঝেড়ে ফেলতে পারতে। কেন এলে তুমি? এটাই আমার প্রাপ্য ছিলো। আমার চিরকালের শাস্তি। আমিও তোমার মনের অবস্থাটা অনুধাবণ করতে পারতাম— অনুভব করতে পারতাম কেমন অনুভব হয়েছিলো যখন আমি তোমার হৃদয় ভেঙ্গেছিলাম, তোমার ভালোবাসাকে যখন নিজের অহঙ্কারে পিষে দিয়েছিলাম, তোমার অনুভবগুলোকে ‘তুচ্ছ’ বলে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলাম… কেন ফিরলে তুমি? কেন?”

বলতে বলতেই জাওয়াদ চিংকির হাতগুলো নিজের হাতে নিয়ে মাথা ঠেকালো। তার চোখ থেকে পানি পড়ছে। চিংকি এতটা সময় নিজেকে সামলালে আজ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলো। এতোটা দিন নিজের বক্ষমাঝে সব দুঃখ জমিয়ে রাখতে রাখতে যেন সে ক্লান্ত। এতোকাল সে নির্বিকার, নিরুদ্বেগ সত্তা সে ধরে রেখেছিলো তা মুহূর্তেই দুমড়ে মুচড়ে গেলো। আকাশ সমান অভিমান নিয়ে শুধালো,
“আমি কেন ফিরে এলাম? এখন আমাকে দোষ দিচ্ছেন আপনি? আমার দোষ? সব দোষ আপনার। আপনি বলেছিলেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, অথচ পরদিন বললেন আমাকে ভালোবাসেন। কি ভেবেছেন আমাকে? আমার মনের, আমার অনুভূতির কোনো দাম নেই? আপনি যদি সত্যি আমার মনের অবস্থা, আমার অনুভূতির কথা ভাবতেন তাহলে বিয়ে ভাঙ্গার পর কখনো আমার সাথে দেখা করতেই আসতেন না। ইনফ্যাক্ট আপনি আমাকে বিয়ে করতেই চাইতেন না। সব কিছু আপনার স্বার্থপরতা। আপনার ধারনা আছে আমি কতটা কষ্ট করে নিজেকে গুছিয়েছিলাম। আপনার যখন মনে হয় তখন আমার সামনে উপস্থিত হন, যখন মনে হয় আমাকে তচনচ করে চলে যান। আপনি যদি বিয়ে ভাঙ্গার পর আমার সামনে না আসতেন, কোনো যোগাযোগ না করতেন আমি আপনাকে ভুলে জীবন নতুন করে শুরু করতে পারতাম…”

দীপশিখার কণ্ঠ জড়িয়ে যাচ্ছে। চোখ অশ্রুসিক্ত। অভিমান, অভিযোগগুলো অশ্রুর রুপে বয়ে যাচ্ছে যেন। ফুঁপাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে, তবুও মন শান্ত হচ্ছে না। বক্ষস্থলের সব অভিযোগগুলো জলচ্ছ্বাসের রুপ নিয়েছে যেন। গোছানো, সজ্জিত হৃদয় বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলো। অভিমানের হাতুড়ির আঘাতে নিজেকে অনড় রাখা দীপশিখা আজ চূর্ণবিচূর্ণ। দলা পাকানো স্বরে বললো,
“প্রথম থেকে দোষ আপনার। আপনার স্বপ্ন, আপনার খারাপ দিনের জন্য আপনি আমার কাছে এসেছিলেন। ভালো না বেসেও আমাকে ভালোবাসার মরীচিকা দেখিয়েছিলেন। আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম আপনাকে। ভুলে গিয়েছিলাম কিশোরীর হৃদয় ভাঙ্গনের কষ্টটুকু। তাহলে কেন আপনি আমার কাছে এসেছিলেন? কেন আমাকে নিজের প্রতি দূর্বল করেছিলেন! আশা দেখিয়ে, স্বপ্ন দেখিয়ে আমাকে আমার আপনি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলেন। আমার বিশ্বাস, আমার ভালোবাসার মূল্য রাখলেন? তারপর যখন বিয়ে ভেঙ্গে দিলাম, আমি নিজেকে কড়া শাসনে রেখেছিলাম। আর কখনো কাউকে বিশ্বাস করবো না প্রতীজ্ঞা করেছিলাম। কিন্তু তখনও আপনি এসে হাজির হলেন ভালোবাসার কথা বলে। আমি কি করে তৃতীয়বারের মতো আপনাকে বিশ্বাস করবো বলুন? কি করে আবার ভালোবাসবো? এতো সোজা? কি ভরসা আপনি আবার কোনো স্বপ্ন দেখছেন না। কি ভরসা আপনি আমাকে আবার ব্যবহার করছেন না”
“আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি, চিংকি আমি কোনো স্বপ্নের ভয়ে তোমার কাছে আসি নি। আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই তোমার কাছে এসেছিলাম। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমার মন থেকে সেই সব জঘন্য স্মৃতি গুলো মুছিয়ে দিতে চেয়েছিলাম যেগুলো তোমাকে কাঁদিয়েছিলো। ইনফ্যাক্ট আমার যদি ক্ষমতা থাকতো, আমি কলেজের ফেয়ারওয়েলের দিনটাকেও পুনরাবৃত্তি করাতাম। আমি সেদিন তোমাকে কখনোই ফিরিয়ে দিতাম না। আমাকে শেষবারের মতো বিশ্বাস করো”
“প্রমাণ দিতে পারবেন আপনি?”
“তুমি কি প্রমাণ চাও? বল। তুমি যা চাইবে তাই হবে। শুধু বল”
“আমাকে বিয়ে করতে পারবেন? এখন এই মুহূর্তে?”

জাওয়াদ থমকালো। সে নিস্তব্ধ চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো চিংকির দিয়ে। শান্ত সরোবরের মতো অনুত্তাল চিংকির এমন কথা তাকে স্তব্ধ করে ফেললো। মেয়েটি কখনো না বুঝে জিদ করে না। চিংকি শ্লেষাত্মক স্বরে বললো,
“কি হলো সব সাহস উবে গেলো? ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো?”
“আমি তোমাকে বিয়ে করবো”
“জানতাম আপনার দ্বারা কিছু সম্ভব না। আপনি আসলে আমাকে ভালোবাসেনই না। আমাদের পরিবার কখনো আমাদের মেনে নিবে না। আমি শুধু শুধু ট্রেন থেকে নামলাম”

দীপশিখা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তার কান্না বাঁধ ভাঙ্গছে না। জাওয়াদ তার বাহু শক্ত করে ধরে ঝাঁকালো। স্পষ্ট স্বরে বললো,
“আমি তোমাকে বিয়ে করবো। এখনই করবো”
“হ্যা?”

বিমূঢ় চেয়ে রইলো দীপশিখা। কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। হতভম্ব হয়ে বললো,
“এই অবস্থায়?”

জাওয়াদ অশ্রুমিশ্রিত স্বরে বললো,
“হ্যা, এই অবস্থায়?”
“পড়ে পস্তাবেন না তো?”
“নাহ”
“স্বপ্নে আমাকে দেখে আপনার অবস্থা বেহালাল, বিয়ের পরও যদি তাই হয়”
“তুমি আমার সৌভাগ্য চিংকি। তোমার স্বপ্ন দেখার জন্য আমি কাতর হয়ে থাকি। বিশ্বাস কর, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসবো। বুকের মধ্যে আগলে রাখবো। আমার বউ হবে?”
“বাবা না মানলে?”
“একটু বিশ্বাস কর, এই পৃথিবী সাক্ষী থাকবে আমার ভালোবাসার। আজন্ম আমি তোমার হাত ছাড়বো না। এবার একটু বিশ্বাস কর”

দীপশিখার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রুকনাগুলো সযত্নে মুছে দিলো জাওয়াদ। দীপশিখা কাঁদছে। হৃদয়ে চেপে থাকা দুঃখ গুলো আজ মুক্তি পেয়েছে যেন, অভিমান গুলো গলে অশ্রুরুপে বয়ে যাচ্ছে। এক চাঁপা আনন্দে তার চোখ ভিজে আসছে। এতোটা আনন্দিত শেষ কবে হয়েছিলো সে? মনে পড়ছে না। তবে সত্যি যেন সৃষ্টিকর্তা তার ঝুলিতে সুখের জ্যোৎস্না এনে দিয়েছেন। নির্মল এই প্রাপ্তি।

***

কমলাপুরের পাশেই এক কাজী অফিসে বিয়ে করলো জাওয়াদ এবং চিংকি। সাক্ষী হিসেবে থাকলো পাভেল এবং জ্যোতি। চিংকির বিয়ে এতোটা সাদামাটা হবে কখনো ভাবে নি। অথচ ঠোঁটে হাসির রেষ কমছে না। আইনত, ধর্মীয় রুপে এখন সে দীপশিখা কবির থেকে দীপশিখা হামিদ হয়ে গেলো। না না দীপশিখা জাওয়াদ হামিদ। বাবাকে না জানিয়ে কাজ করার মেয়ে নয় দীপশিখা। তাই বিয়ে পূর্বে সে প্রথমে বাবাকে জানালো। মোস্তফা গম্ভীর স্বরে বললেন,
“এতো বড় সিদ্ধান্ত একা একা নিচ্ছো?”
“হ্যা বাবা”
“কোনো সংশয় অনুভব করছো?”
“আশ্চর্যের ব্যপার আমার একটুও সংশয় লাগছে না বাবা। খুতখুত করছে না মন। আমার মনে হচ্ছে বিয়েটা কোনো খারাপ কোনো সিদ্ধান্ত না”
“তাহলে আমাকে ফোন করলে যে?”
“তুমি আমার বাবা, আমার বন্ধু। তোমাকে না জানিয়ে কি করে বিয়ে করবো বাবা? তুমি কি রাগ করেছো?”
“একদম না। আমি শুধু ভাবছি তোমার মা কে সামলাবো কি করে?”

দীপশিখা চুপ করে রইলো। মা যে খুব বড় ঝামেলা করবেন তাতে সন্দেহ নেই। তিনি ঠিক এগারোটায় নয়া ফুপুকে ফোন দিবেন। দীপশিখার খোঁজ করবেন। দীপশিখা নিষ্প্রভ স্বরে শুধালো,
“তাহলে কি করবো বাবা?”
“এক কাজ কর, বিয়েটা করে আজ তুমি জাওয়াদের সাথেই থাকো। কাল সকাল হতেই আমাদের বাসায় চলে এসো। নীরু নারকেলজাত মহিলা। পা ধরলেই গলে যাবে। আর শোনো চিংকি মা?”
“কি বাবা?”
“তোমার বাবার দোয়া তোমার সাথে আছে। আমি এখন আসতে পারছি না। তবে তোমার বিয়েটা আমি ধুমধাম করেই দিব”

বাবার সাথে কথা বলে মনটা শান্ত হয়ে গেলো। নিঃসংশয় মনে সে বিয়েটা করলো। বিয়ের পর জাওয়াদ মৃদু স্বরে বলল,
“চলো”
“কোথায়?”
“তোমার বাড়িতে”

****

জাওয়াদের হাত ধরে আব্দুল হামিদের মুখোমুখি হলো চিংকি। আব্দুল হামিদের মুখখানা শক্ত। রাগ ঠিকরে উঠছে চোখে মুখে। জাওয়াদ ঘরে ঢুকতে নিলেই তিনি কঠিন স্বরে বললেন,
“তুমি এই মেয়েকে বিয়ে করে আমার সামনে আসার স্পর্ধা দেখালে কিভাবে? মনে নেই এই মেয়ের জন্য আমার কত অপমান সইতে হয়েছে?”
“আমরা একে অপরকে ভালোবাসি বাবা”

আব্দুল হামিদ রাগে কাঁপছেন। নিজের ছেলের এমন অবাধ্যতায় তিনি নিজেকে সংযত রাখতে পারলেন না। ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলেন ছেলের গালে। চোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে যেন তার। কঠিন, বজ্রকণ্ঠে বললেন,
“বেয়াদ্দব, বের হ। বের হ আমার সামনে থেকে। তোর মুখ দেখতে চাই না”
“বেশ। আমি শুধু আপনার দোয়া নিতে এসেছিলাম। আমার স্ত্রীর এখানে জায়গা না হলে আমিও এক মুহূর্ত এখানে থাকবো না”

বলেই নিজের সব জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেলো জাওয়াদ। চিংকি তাকে বোঝাতে চাইলো। কিন্তু জাওয়াদ শুনলো না। চিংকির হাত ধরেই ঘর আব্দুল হামিদের ঘর ছাড়লো সে।

***

বন্ধু হিসেবে বন্ধুর পাশে থাকা পাভেলের দায়িত্ব। তাই জাওয়াদ এবং চিংকির বাসস্থানের ব্যবস্থা সেই করলো। তার বোনের বাসায় একটা ফ্লাট খালি ছিলো। ছোট ফ্লাট। কিন্তু নব্য দম্পত্তির জন্য যথেষ্ট। জাওয়াদ যখন তাকে ধন্যবাদ দিতে চাইলো, সে নির্বিকার স্বরে বলল,
“ঋণ যথা সময়ে পরিশোধ করবি। আমিও যখন জ্যোতিকে নিয়ে পালাবো তখন আমাকে সাহায্য করবি”

ছোট দুটো ঘর, একটা রান্নাঘর। ঘরে কোনো আসবাব নেই। পাভেল এবং জাওয়াদ একটা তোশক আর দুটো বালিশ কিনে এনেছে আজ রাতের জন্য। চিংকি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চট করে সিদ্ধান্তটা কি ভুল ছিলো? তাদের কি একটু ধৈর্য্য ধরা উচিত ছিলো? ঠিক সেই সময় তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো জাওয়াদ। নাক ডোবালো কাঁধে। ধীর স্বরে বললো,
“ম্যাডাম আজ কিন্তু বিশেষ রাত, আজ কোনো বারণ আমি শুনবো না”………………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি