#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
#৮ম_পর্ব
জাওয়াদের হাসিখুশি মেজাজটা একেবারেই চটকে গেলো স্টলের সামনে যেয়ে। চিংকি ক্যাশে বসে রয়েছে। তাকে দারুণ সুন্দর লাগছে। একেবারে অপরাজিতা ফুলের মত লাগছে। তারপাশেই মৌমাছির মতো চারেটে ছেলে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। চাতক পাখির মতো তার দিকে চেয়ে আছে। জাওয়াদ ছেলেগুলোর দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো।
পুরুষ মানুষ হবার সুবাদে পুরুষের দৃষ্টি বুঝতে কষ্ট হলো না জাওয়াদের। কিছু দৃষ্টি হয় আকর্ষণের, কিছু দৃষ্টি হয় প্রেমের, আদরের আর কিছু দৃষ্টি হয় কুৎসিত। ছেলেগুলোও কুৎসিত দৃষ্টিতে চিংকির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির কন্ঠস্থির দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের মধ্যে একটি ছেলে। ফিসফিস করে পাশের ছেলেটাকে বিশ্রী ইঙ্গিত করছে। চিংকি চুল খোপা করায় তার ঘাড় দেখা যাচ্ছে। অথচ মেয়েটার সেদিকে খেয়াল নেই। তার পাশে কিছু ছেলে তাকে দেখছে, লাল ফেলছে, বিশ্রী মন্তব্য করছে। অথচ মেয়েটি নির্বিকার বসে রয়েছে। তার মনোযোগ সম্পূর্ণ হিসেবে। একটু পর পর খাতায় লিখছে আর হিসেব করছে। শাল অবধি পড়ে নি মেয়েটা। এতো ঠান্ডা তিনি ক্যাটরিনা সেজে বসে আছেন। জাওয়াদের প্রচন্ড রাগ হলো। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। কে বলেছে নীল পড়তে? কে বলছে এতো পরিপাটি হতে? কে বলেছে খোপা করতে। সেদিনের মতো কালো বিড়াল হয়ে আসতে পারতো না? কই তার সাথে তো ঘোরার সময় এমন সাজে না! কালো জামা পড়ে শোক পালন করে। একদিন তো বাসার জামা পড়ে বের হয়েছে। কি হয় তখন পরিপাটি হলে? পরিপাটি সাজা কি অন্যদের জন্য? আর জাওয়াদের বেলায় শোক দিবস?
জাওয়াদ হাত মুঠোবন্দি করে নিজের রাগ দমালো। হনহন করে হেটে কাউন্টারে গেলো। একটা ভাপা পিঠা নিলো। তারপর ক্যাশের সামনে যেয়ে টাকা ধরলো। চিংকি চোখ তুলতেই চমকে গেলো। লোকটি আসবে তাকে জানায় নি। বিস্মিত স্বরে বললো,
“আপনি এখানে কি করছেন?”
“নাচছি, দেখছো না?”
দু পাটি দাঁত বের করে হিনহিনে স্বরে বললো জাওয়াদ। জাওয়াদের স্বর শুনে খুব ধাক্কা খেলো চিংকি। এমন স্বরে সে কথা বলে না। জাওয়াদ টাকা ধরালো চিংকিকে। তখন ছেলেগুলোর সাথে চোখাচোখি হলো। শানিত দৃষ্টির সম্মুখীন হতেই সুরসুর করে সরে পড়লো তারা। জাওয়াদ একটা চেয়ার নিলো। ঠিক চিংকির পাশে বসলো। জাওয়াদের এমন কাজে হতবিহ্বল হলো চিংকি। অবাক স্বরে বলল,
“আপনি কি এখানে বসবেন?”
“হ্যা, সমস্যা?”
“খ্যাটখ্যাট করছেন কেনো এতো? আমি কি বলেছি সমস্যা? অদ্ভুত!”
ঝাঁঝালো স্বরে বললো চিংকি। জাওয়াদের রাগ কমছে না। মেয়েটা অপমান করার সময় শুধুই তাকেই পায়। আর কাউকে তো অপমান করে না। ছেলেগুলোর বেলায় সে ছিলো নির্বিকার। অথচ জাওয়াদ পাশে বসতেই তার র্যাডার চালু হয়ে গেলো? এতো কৈফিয়ত তো ইনচার্জকেও দেয় না জাওয়াদ। চিংকি তার কাজে ব্যস্ত। তার বন্ধুবান্ধবগুলো একটু পর পর আসছে। কয়েকজন শুধালো,
“ইনি কে দীপশিখা?”
চিংকি স্বাভাবিক স্বরে বলল,
“আমার পরিচিত”
পরিচিত? পরিচিত? জাওয়াদ কি কেবল পরিচিত? সে তার হবু স্বামী। বিয়ে হবে তাদের। মেয়েটা পরিচিত বলেই কাটিয়ে দিলো। এতো অপমান। আইফেল টাওয়ার সমপর্যায়ের অপমান। জাওয়াদ পিঠে খায় না। গ্যাসের সমস্যা হয়। তাই প্লেটটা চিংকির মুখের সামনে নিয়ে বলল,
“খাও”
চিংকি অবাক দৃষ্টিতে তাকালো জাওয়াদের দিকে। মানুষটি এমন অদ্ভুত আচারণ করছে কেন? এখন সে কাজ করছে, পিঠে কি করে খাবে। আসার পর থেকে উদ্ভট আচারণ করেই যাচ্ছে। চিংকি শান্ত গলায় বললো,
“আমি খাবো না। আপনি কিনেছেন, আপনি খান”
“আমি পিঠে খাই না”
“তাহলে কিনেছেন কেন?”
“তোমার জন্য কিনেছি। খাও”
চিংকি হাল ছেড়ে দিলো। অসহায় স্বরে বলল,
“আমি কাজ করছি”
“আচ্ছা, আমি খাইয়ে দিচ্ছি”
বলেই পিঠে ভেঙ্গে চিংকির সামনে ধরলো জাওয়াদ। চিংকির মনে হলো আকাশটা ঠুস করে ভেঙ্গে পড়লো মাথায়। এই লোকের মারাত্মক পর্যায়ের শুচিবাই সমস্যা। সে মানুষের চামচ দিয়ে খাবার খায় না, গা গুলায়। সে চিংকির মুখ দেওয়া পানি খায় না। অন্যের হাতে খাওয়া তার কাছে আনহাইজেনিক মনে হয়। অথচ সে তার মুখে পিঠে ধরে রেখেছে। এর থেকেও যন্ত্রণার বিষয় তার চারপাশ। সবার গোলগোল চোখ একরাশ বিস্ময় নিয়ে হাড়হাভাতের মতো চেয়ে রয়েছে। ফলে তীব্র অস্বস্তি হলো চিংকির। সে আর সহ্য করতে পারলো না। হাত টেনে জাওয়াদকে একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গেলো। সকলের দৃষ্টির আড়ালে ক্ষিপ্র স্বরে শুধালো,
“আপনার সমস্যা কি বলুন তো?”
“আমার কি সমস্যা হবে?”
“সেটা আমি জানলে তো ধন্য হয়ে যেতাম। আচ্ছা আপনি আমাকে না জানিয়ে আমার ভার্সিটিতে কেনো এসেছেন? আপনি জানেন না আমি বিরক্ত হই”
চিংকির এমন কথা রাগের মাত্রা বাড়লো জাওয়াদের। হিনহিনে স্বরে বলল,
“তোমার বিরক্তর ঠেকা নিয়ে রেখেছি আমি? আর আমার ইচ্ছে হয়েছে এসেছি। তুমি যে এই ঠান্ডার মধ্যে ক্যাটরিনা সেজে এসেছো আমাকে জিজ্ঞেস করেছো?”
“আমি ক্যাটরিনা কোথায় সেজেছি?”
“মুখে মুখে তর্ক করছ? বেয়াদব মেয়ে তো তুমি। নাহ! তিলে খচ্চর তুমি। আর তোমাকে এই নীল রঙ্গে মোটেই ভালো লাগছে না”
বলেই চিংকিকে অবাক করে জাওয়াদ চিংকির চুলের বেলির মালা খুলে কুটিকুটি করে ছিড়ে ফেললো। খোঁপা খুলে দিলো। নিজের কোট খুলে চিংকিকে পড়িয়ে দিলো। চিংকি অবাক স্বরে বললো,
“আপনি এমন পাগলের মত আচারণ করছেন কেনো?”
“ধলা গরু তো, তাই থেকে থেকে পাগলামির হিরিক উঠে। আর নীল রঙ দেখলে পাগলামি বেড়ে যায়, তখন শিং দিয়ে গুতাগুতি করতে ইচ্ছে করে। আমার শিং নেই তাই হাত দিয়ে করি”
জাওয়াদের কথায় চিংকির মন ভীষণ খারাপ হলো। মাটিতে দুমড়ানো মুচড়ানো বেলি ফুলের মালাটা দেখে তার মনখারাপ তীব্র হলো। ফলে বিরস স্বরে বলল,
“আপনি একটা অসহ্য মানুষ”
বলেই সে স্টলের দিকে গেলো। জাওয়াদ ভ্রু কুচকে তার যাবার পানে তাকিয়ে রইলো। তীব্র মেজাজ খারাপ হচ্ছে। মন চাচ্ছে স্টলটা লন্ডফন্ড করে দিতে। এতো রাগ কখনো জাওয়াদের হয়েছে কি না মনে পড়ছে না। জাওয়াদ খুবই সংযমী মানুষ। সে খুব সহজে রাগ গিলে ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ঝুলাতে পারে। আজ পারছে না। কেনো? এই কেনোর উত্তর খুঁজতে গেলে মেজাজ আরোও খারাপ হবে। তাই সে এই প্রচেষ্টা বাদ দিলো। গাল ফুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কোট ছাড়া ঠান্ডা লাগছে। মাথাটাও হালকা কুয়াশায় ভিজে ঠান্ডা হলো। সে ঠিক করলো মেয়েটাকে তার আচারণের জন্য সরি বলবে। চিংকি তার কিছু হয় না যে সে তার উপর রাগ দেখাবে। এটা অন্যায়। কিন্তু স্টলে যেতেই দেখলো ভিন্ন কান্ড শুরু হয়েছে। স্টলের ক্যাশ থেকে সতেরোশ টাকা চুরি গেছে। আর স্টলের সব ছেলেমেয়ের আঙ্গুল চিংকির দিকে। সে ক্যাশের দায়িত্বে, তাই চুরি করলে সেই করবে। অদ্ভুত, এটা তো বলদেও করবে না। নিজের পায়ে কুড়াল কে দিবে? আর সতেরোশ টাকা? চিংকির এত খারাপ দিন আসে নি যে কলেজের সামান্য স্টল থেকে চুরি করতে হবে! কিন্তু কি আজব কান্ড! প্রতিটা প্রাণীর মুখে একটাই কথা,
“ক্যাশের দায়িত্ব দীপশিখার, এখন হিসেব বুঝিয়ে দেবার দায়িত্ব দীপশিখার। আমরা জানি না ও টাকা কি করেছে, এখন টাকা মিলিয়ে দিবে সে। চুরি করেছে যখন শাস্তিও পাবে”
জাওয়াদের বিস্ময় আরোও আকাশচুম্বী হলো যখন চিংকি নির্বিকার। সে একটা টু শব্দ করছে না। চুপ করে অপবাদ মেনে নিচ্ছে? অথচ একটু আগে এই মেয়েটা কত কথার ধার দেখালো তাকে? মানে যত দোষ জাওয়াদ ঘোষ? একজন মেয়ে তো বলেই ফেললো,
“দেখে তো ভালো ঘরের মেয়ে ভেবেছি, সামান্য টাকার লোভ সামলাতে পারলে না?”
জাওয়াদের রাগের ছাই চাপা আগুণটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। ফলে পকেট থেকে দুটো হাজার টাকার নোট বের করে ক্যাশের টেবিলে রেখে শীতল স্বরে বলল,
“দীপশিখার শিক্ষা বা মনমানসিকতা এতো নিচু নয় যে তার ভার্সিটির সামান্য স্টলের টাকা চুরি করতে হবে। তার অভাব পূরণের মানুষের অভাব নেই। আমার মনে হয় এতে আপনাদের টাকা মিলে যাবে। তিনশ টাকা এক্সট্রা আছে। একটা হারপিক কিনে নিজের মানসিকতা ধুয়ে নিবেন”
জাওয়াদের এমন কাজে হতভম্ব হয়ে গেলো দীপশিখা। সে টাকাটা দিতেই যাচ্ছিলো। এমন ঘটনা নতুন নয়, এমন ব্যবহারের বহু সম্মুখীন হয়েছে সে। নতুন কিছুই নয়। তর্ক, ঝগড়া করার এনার্জি তার নেই। সে চেষ্টাও করে না। এদের দায় মেনে নিলেই এরা শান্ত। পাছে তাকে নিয়ে কি আলাপ হচ্ছে কিচ্ছু যায় আসে না দীপশিখার। এই লোক মাঝখান থেকে লাফিয়ে পড়লো কেনো? জাওয়াদ অপেক্ষা করলো না। দীপশিখার হাত নিজের হাতে নিলো। একপ্রকার টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। বাহিরে যেয়ে বাইকে স্টার্ট দিলো। গম্ভীর স্বরে বলল,
“বস”
“আমি আপনার সাথে যাবো না”
“দীপশিখা, আমার মেজাজ খারাপ কর না”
জাওয়াদের হুংকারের দুপয়সা দাম দিলো না দীপশিখা। ক্ষিপ্র স্বরে বলল,
“আজব অর্ডার করছেন কেনো? আর ওখানে টাকা দিলেন কেনো আপনি? আমি কি আপনাকে বলেছিলাম?”
দীপশিখার এমন কথায় জাওয়াদ চেঁচিয়ে উঠলো,
“মানে কি? ওরা তোমাকে অপমান করবে আর আমি দেখবো? আর আমার সাথে তো খুব ঝগড়া করছো, আমাকে বাঁশের মাথায় তুলে রাখো। ভিজিয়ে ভিজিয়ে অপমান কর। অথচ অন্যদের সামনে মুখে তালা লেগে থাকে কেনো? বললে না কেনো তুমি চুরি কর নি! ভিজে বিলাইয়ের মত দাঁড়িয়ে ছিলে”
জাওয়াদের কথাগুলো চাবুকের মত লাগছিলো দীপশিখার কাছে। লোকটি এমন কেনো! কালকেও কি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিলো। এখন এতো তিতো কথা বলছে! সে কি জানে দীপশিখাকে কি কি সহ্য করতে হয়েছে! জানে না। সে নিজেও তো কম অপমান করে নি তাকে। দীপশিখা কোনো কথা বললো না। বিকাশে তার টাকা ছিলো সেখান থেকে দুহাজার টাকা খরচ সহ পাঠিয়ে দিলো জাওয়াদকে। তারপর কোটটা খুলে জাওয়াদের কোলে ফেলে বলল,
“আপনার টাকা আর কোট ফেরত দিলাম। আপনার কোনো সাহায্য আমার চাই না”
“মানে?”
“মানে আপনি একটা অসহ্য মানুষ। ওদের আর আপনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমার সাথে কখনো কথা বলবেন আপনি”
জাওয়াদ তার কথা হজম করার আগেই দীপশিখা একটা রিকশায় চেপে বসলো। জাওয়াদ রাগে ধুলোতে লাথিতে মারলো। এই মেয়ে ভাবেটা কি নিজেকে? জাওয়াদ হামিদ তার জন্য মরে যাবে? পৃথিবীতে মেয়ের অভাব। স্বপ্নের গন্ডগোল না হলে কখনো এই অহংকারী দেমাগী মেয়ের সাথে কথাও বলতো না সে। যতসব
****
কুয়াশার দলা দলা কুন্ডলিতে শহরটা ঝাপসা হয়ে গেছে। শীতের মাত্রা বেড়েছে। তাপমাত্রা নেমে চৌদ্দতে থেমেছে। ফ্লোরে পা দেওয়া যাচ্ছে না। এই ঠান্ডায় ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলো দীপশিখা। জাওয়াদ নামক ব্যক্তি তার জীবনকে একেবারে যাচ্ছে তাই করে দিয়েছে। কি ভেবেছে সে! যখন খুশি যা খুশি করবে! এতো অধিকারবোধ আসছে কোথা থেকে তার? দীপশিখা ঠিক করলো তাকে নিয়ে একটুও ভাববে না। তার জীবনে করার মত অনেক কাজ আছে। ফোন সাইলেন্ট করে ফেললো। গান ছাড়লো মৃদু সাউন্ডে। পুরোনো ইংলিশ গান,
“The falling leaves drift by the window
The autumn leaves of red and gold
I see your lips, the summer kisses
The sun-burned hands I used to hold”
গানের সাথে সাথে সে তার ভিডিও এডিট করলো। নিজের ফেসবুক পেজে, গ্রুপে পোস্ট করলো। এসাইনমেন্ট শেষ করলো। নিজের ঘর গুছালো। এর মাঝে মা খেতে ডাকলো। সে হাসি মুখে খেতেও বসলো। বাবা তার আজব কথা শুরু করলেন,
“বুঝলি চিংকি মা, তোদের জেনারেশন একটা জেবরা জেনারেশন। তোদের সবকিছুই এক্সট্রিম। তোরা সাদা নয় কালোতে বিশ্বাস করিস। হয় একেবারে ধবধবে সাদা, নয় কুচকুচে কালো। অথচ পৃথিবী তো সাদা-কালো নয়। পৃথিবী ধূসর। ভালো-খারাপের মিশ্রণ পৃথিবী। তোরা এটা মানতেই পারিস না”
অন্যসময় চিংকি বাবার কথায় একটা ফিলোসফি খুজতো। কিন্তু আজ তার মন ভালো নেই। তার মন থেকে মোটেই জাওয়াদ নামক ধলা গরুর চিন্তা সরাতে পারছে না। কি নিষ্ঠুর ভাবে সে বেলি ফুলের মালাটা ছিড়ে ফেললো। এর মাঝেই নিরুপমা বিরস স্বরে বলল,
“ওর একটা ভালো নাম আছে মোস্তফা। চিংকি চিংকি কি? শুনলেই মনে হচ্ছে কেউ ঘন্টা বাজাচ্ছে। কতবার বলেছি এই বিশ্রী নামে ওকে ডাকবে না”
“আরে এটা আদুরে নাম। আমার মেয়ে আদুরে, তার নামও আদুরে। আমি তো একটা ছড়াও লিখেছি,
“চিংকি বলে, “কোথায় যাই?
বনে-জঙ্গলে মজা পাই।
এক পায়ে হেঁটে নদীর ধারে,
ভয় পাই না আমি কুমির রে!”
তাল গাছে উঠে বলে, “হুররে!
আমি চিংকি, দুঃসাহসী সুরে।
পাখিরা হাসে, বানরটা চায়,
আমার সাথে দুষ্টুমি খেলতে যায়”
নিরুপমা চোখ কুচকে বলল,
“বিশ্রী কবিতা। আর কখনো এমন কবিতা শুনাবে না মোস্তফা”
দীপশিখা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ডাইনিং টেবিলের এমন কথা কাটাকাটি নতুন নয়। সে খাওয়া শেষ করে ঘরে গেলো। ঘুম আসছে খুব। খুব ক্লান্ত সে নয় তবুও ঘুম আসছে। মনটাই যেনো বিশ্রীভাবে ঝিমিয়ে আছে। এখন ঘুমাবে দীপশিখা। প্রতিদিন জাওয়াদ নামক ধলাগরুর সাথে বিনা কারণে ম্যাসেজিং করতে হয়। ফলে ঘুম কেঁচে যায়। আজ সেটা হবে না। সেই গরুও তাকে ফোন দিবে না নিশ্চয়ই। দীপশিখা এলার্ম দেবার জন্য মোবাইলটা হাতে নিলো। লক খুলতেই আক্কেলগুড়ুম হলো তার। বাইশটা মিসডকল। তাও ধলা গরুর। প্রায় সাথে সাথেই ফোন আবার বেজে উঠলো। দীপশিখা প্রথমে ধরবে না ভেবেছিলো। কিন্তু মিসডকল পঁচিশটা হতেই নিজেকে আটকাতে পারলো না। এক প্রকার মস্তিষ্কের সাথে কোন্দল করেই ফোন ধরলো সে। ওপাশ থেকে তখন গাঢ় স্বর কানে এলো,
“বারান্দায় এসো দীপশিখা”…………….
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি