#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২
#সামসুন_নাহার
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষিদ্ধ)
“কিছু কিছু মানুষ আছে যারা মানুষকে চোখ দিয়ে গিলে খেতে চায়।হে সৃষ্টিকর্তা আমাকে সেসব নজর থেকে মুক্তি দিও।আমাকে যেন কারো বদনজর না লাগে।”
প্রিয়শা রাতে পড়ছিল হঠাৎ করে ফোনে ম্যাসেজ আসায় প্রিয়শার ভ্রুদয় কুঞ্চিত হলো।ভ্রুদয় কুঞ্চিত রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো তাহমিদ নামক এক ব্যক্তির আইডি থেকে ম্যাসেজ এসেছে।প্রিয়শা কিছুটা ভাবলো হঠাৎ আজ প্রায় বিশদিন পর তাহমিদ নামক বান্দার ম্যাসেজ দেখে। ফোনের লক খুলে উপরোক্ত ম্যাসেজ নামক বার্তা দেখে প্রিয়শা অবাক হলো।প্রিয়শা উল্টো বার্তা প্রেরণ করার উদ্দেশ্যে লিখলো,
“কে কাকে বদনজর দিল।”
অপাশ থেকে উল্টো বার্তা এলো,
“আশেপাশে অনেক মানুষ আছে তারা আমাকে নজর দেয়।”
“কার এত দুর্বুদ্ধি হলো যে তোমার দিকে তাকাতে হলো।”
“আছে অনেক মানুষ। ”
“কে দেখি আমি তাকে।”
“আমি আজ যেই ক্লাসে ক্লাস নিলাম।সেখানে সাদিয়া নামক এক মেয়ে ছিল সে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল।আল্লাহর কাছে দোয়া করি সেই সাদিয়া নামক মেয়ের বদনজর থেকে আমাকে যেন রক্ষা করে।”
শেষে হাসির ইমুজি ছিল।বার্তাটি পড়ে প্রিয়শা যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। মুহুর্তেই রাগে গিজগিজ করতে করতে লিখলো,
“ফাইয়াজের বাচ্চা। আমি তোমাকে নজর দেই।নজর তো দিচ্ছিল ক্লাসের মেয়েরা।সেটা ভালো লাগছিল।যেহেতু বললা আমি নজর দিচ্ছিলাম।ভালো করেছি নজর দিয়ে। আমাকে আর ম্যাসেজ দিবা না।”
প্রিয়শার পাঠানো বার্তা দেখে ফাইয়াজ হাসলো।প্রিয়শাকে রাগাতে তার ভিষণ ভালো লাগে। ফাইয়াজ সঙ্গে সঙ্গে লিখলো,
“ফাইয়াজের বাচ্চা হবে না।হবে ফিরোজের বাচ্চা। আমার বাবার নাম ফিরোজ।তাছাড়া আমার এখনো বিয়ে হয়নি।বাচ্চা আসবে কই থেকে। তবে ভাবছি এবার বিয়ে করে নিব যত তারাতারি সম্ভব ।”
“এখন তো বিয়ে করবাই সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখছো।এতদিন তো সুন্দর মেয়ের অপেক্ষায় ছিলে। যা করো বিয়ে আমাকে কেন বলতেছো। বিশদিন আগে যেভাবে কথা বলা বন্ধ করেছিলা তেমনভাবে আবারো বন্ধ করো।আর কখনো ম্যাসেজ দিবা না।”
প্রিয়শা অফলাইনে চলে গেল।যা দেখে ফাইয়াজ আপনমনে হাসলো।
…………………………………..
“ওয়াও মা।তুমি আজকে মাছ ভাজা রান্না করছো।খুব ভালো করেছো।অনেকদিন ধরে খেতে ইচ্ছে করছিল।থ্যাংকস মা।”
বলেই আদিল মাকে জড়িয়ে ধরলো।ছেলের খুশি মুখ দেখে আতিফা বেগমের চোখে খুশির ঝিলিক ধরা দিল।আতিফা বেগম হেসে বললেন,
“তাহলে দেরি না করে খেতে বসো তারাতারি।”
“হুম বসছি।”
ভাইয়ের হাসিমুখ দেখে প্রিয়শা মজা করে বলল,
“মা আদিলের মাছের ভাগটা আমাকে দাও।আদিল এখনো ছোট আছে।ওর মাছ খাওয়ার দরকার নেই।”
আদিল বোনের দিকে ঘুরে প্রিয়শাকে মুখ ভেঙচিয়ে বলল,
“বললেও হলো নাকি তুমি আমার ভাগের মাছ খাবা।আর ছোটদের বেশি বেশি খেতে হয়।মা তুমি আপুর ভাগের মাছের পিস আমাকে দাও।”
“না মা আমাকে দাও বেশি করে।”
“না মা আমাকে।”
আতিফা বেগম দুই ছেলে-মেয়ের খুনসুটি দেখে হাসলো।হেসে দুই ছেলে-মেয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
“হয়েছে থামো এবার তোমরা দুইজনেই।আমি তোমাদের দুইজনকেই সমান ভাগ দিয়েছি।কথা না বলে খাও।”
প্রিয়শা ও আদিল দুইজনেই হেসে খেতে শুরু করলো।আদিল কয়েক লোকমা ভাত খেয়েছে তখন হঠাৎ করে সাইদুর রহমান এসে ধমকে বললেন,
“আদিল তুমি কি খাচ্ছো এসব।”
আদিল ভয়ে ভয়ে বলল,
“কেনো আব্বু ভাত খাচ্ছি।”
“ভাত খাচ্ছো ভালো কথা। তবে অতিরিক্ত তেলের খাবার খাচ্ছো কেনো।”
“কিন্তু আব্বু মাছে তো বেশি প্রোটিন আছে।”
সাইদুর রহমান টেবিলে বসে আদিলের পাত থেকে মাছ সরিয়ে অন্য তরকারি দিয়ে বললেন,
“মাছে বেশি প্রোটিন আছে আমিও সেটা জানি।কিন্তু তোমার মা যেভাবে তেলে রান্না করেছ। এত বেশি তেল তোমাদের খেতে হবে না।অন্য তরকারি দিয়ে খাও।”
সাইদুর রহমান মাছ সরাতেই আদিলের মুখ আকাশের কালো মেঘের ন্যায় কালো হয়ে উঠলো। আদিল কিছুটা সাহস নিয়ে মাথা নিচু করে বলল,
“আব্বু একদিন খেলে কিছু হবে না।”
ছেলের কথা শুনে সাইদুর রহমান আশ্চর্য হলেন।তার ছেলে তার মুখের উপর কথা বলছে।তিনি কিছুটা কড়াভাবে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললেন,
“আমার মুখের উপর কথা বলা শিখে গেছো। আমার চেয়ে ভালো তোমাদের কেউ বুঝে না।আমি যা করি তোমাদের ভালোর জন্যই করি।বেশি কথা না বলে খাও।খাওয়ার সময় আমি কথা বলা পছন্দ করি না। আর প্রিয় তোমাকে কি আলাদা করে বলতে হবে।”
আতিফা বেগম কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলেন না স্বামীর মুখের উপর। প্রিয়শা ভাইয়ের শুকনো মুখে একপলক তাকিয়ে মাছ রেখে খাওয়া শুরু করলো।তার ভাইটা কত আশা করেছিল। কিন্তু আব্বুর মুখের উপর কেউ কথা বলে না তাই প্রিয়শা কিছু বলতে পারলো না।
খাওয়া শেষ করে যে যার ঘরে গেল।প্রিয়শা নিজের ঘরে না গিয়ে আদিলের রুমে গিয়ে দেখলো আদিল মন খারাপ করে স্কুল যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।প্রিয়শা ভাইয়ের ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
“কি রে মন খারাপ তখনকার বিষয়ের জন্য।”
আদিল মুখ ব্যঙ্গ করে বলল,
“মন খারাপ কেনো হবে।আমাদের মন খারাপ করতে নেই।আমাদের ভালো-মন্দ আব্বুর চেয়ে বেশি কে জানে। এমনকি আমরাও জানি না।”
প্রিয়শা আদিলের চুল ঠিক করে দিয়ে বলল,
“আব্বু আমাদের ভালোবাসে তাই এমন করে।”
আদিল কিছুটা রাগ নিয়ে বলল,
“তাহলে লাগবে না আমার এমন ভালোবাসা। যে ভালোবাসা আমাদের মনের খোজ রাগে না শুধু নিজের যেটা ভালো মনে হয় সেটা করে।দরকার নেই সেসব ভালোবাসার।আব্বু সবসময় এমন করে নিজের ভালোলাগা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়।কিছু বললেই ধমক দিয়ে রেখে দেয়।আমাদের কিসে ভালো লাগে খোঁজ নেয়।আমার তো মনে হয় কোনো জেলখানায় আছি।”
প্রিয়শা আর কি বলবে। তার ভাই মিথ্যে কিছু বলেনি।আব্বু সবসময় নিজের যেটা ভালো লাগে সেটা করতে বলে।তাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না।প্রিয়শা আদিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিল এখনো মন খারাপ করে আছে।হঠাৎ আদিল বলে উঠলো,
“বুবু আর কিছু বলবা।আমার স্কুলের দেরি হচ্ছে।”
প্রিয়শা আদিলকে হালকা করে মেরে হেসে বলল,
“পড়িস তো ক্লাস টেনে।তোর আবার কিসের দেরি।”
“তো তোমার মত ফাঁকিবাজ হতে বলছো।”
“বেশি কথা বলা শিখেছিস।আমি কই ফাঁকিবাজি করি।বাদ দে এসব চল আজকে আমি তোকে স্কুলে দিয়ে আসি।যাবি আমার সাথে।”
“তুমি আমাকে নিয়ে যাবে আর আমি যাবো না তাই হয় নাকি।চলো তাহলে যাই।”
“চল।তুই বাইরে যা আমি ব্যাগ নিয়ে আসতেছি।”
প্রিয়শা ও আদিল রিকশায় করে স্কুল যাচ্ছে।হঠাৎ করে আদিল বলে উঠলো,
“আচ্ছা আপু।ভাইয়ার কি খবর।এখনো কথা হচ্ছে তোমাদের।”
আদিলের মুখে ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা রাতের কথা মনে পড়লো। প্রিয়শা সামান্য ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“কে ভাইয়া।কিসের ভাইয়া।আমার সামনে ওই ছেলের নাম নিবি না।”
“কেনো আপু তোর সাথে কি ভাইয়ার কথা হইছে।আর ভাইয়া এখন কোথায়।”
“তার মন যেখানে সেখানে যাক।আমাকে বলবি না তার কথা।”
প্রিয়শা লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বলল,
“আব্বু যেদিন অফিসের কাজে বাইরে যাবে সেদিন আমি তোকে নিয়ে সারাদিন ঘুরবো। অনেক মজা করবো আর নিজের পছন্দের খাবার খাবো।”
আদিল বোনের কথা শুনে খুশি হয়ে বলল,
“সত্যি বলছো আপু।খুব মজা হবে।কিন্তু আপু আব্বু তো পারমিশন দিবে না।”
“আব্বু জানতেই পারবে না।আর তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।শুধু তৈরি হয়ে থাকিস।”
#চলমান…………………….