স্বপ্ন জুড়ে তুমি পর্ব-০৩

0
72

#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_৩
#সামসুন_নাহার

“তুমি দশ মিনিট দেরি করে আসছো।তাই দশ মিনিট বাইরে দাঁড়িয়ে থাকো।”

প্রিয়শা আদিলের স্কুলে গিয়েছিল তাই আসতে দেরি হয়েছে।প্রিয়শা আবার বলল,

“স্যরি স্যার আজকে দেরি হওয়ার জন্য।আজকে ঢুকতে দেন স্যার কালকে থেকে ঠিক সময়ে চলে আসবো।”

প্রিয়শা একদৃষ্টে ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা
করছে ফাইয়াজ কি বলবে।প্রিয়শার ভাবনার মাঝেই ফাইয়াজ বলল,

“আজকে প্রথমদিন তাই কিছু বললাম না।কিন্ত অন্যদিন কেউ দেরি করে আসলে তাকে আর ঢুকতে দিব না।সাদিয়া যাও নিজের জায়গায় যাও।”

ভেতরে যাওয়ার কথা শুনে প্রিয়শা খুশি হয়ে জায়গায় বসলো। প্রিয়শা জায়গায় বসতেই ফাইয়াজ গম্ভীরমুখে সবার উদ্দেশ্যে বলল,

“আমার ক্লাসে কোনো ফাঁকিবাজি চলবে না।প্রতিদিন ঠিক সময়ে আসতে হবে।কার ক্লাস করো করো নাই নাই আমার ক্লাস করতেই হবে।যদি একান্তই ক্লাসে আসতে না পারবে না তাহলে ফোন করে ছুটি নিবে।বুঝেছো সবাই।নাহলে শাস্তি পেতে হবে।”

ফাইয়াজের কথা শেষ হতেই হুমায়রা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে বলল,

“কিন্তু স্যার আপনার নাম্বার আমাদের কাছে নেই।আপনি যদি আপনার নাম্বার দিতেন। নাহলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে।”

প্রিয়শা হুট করে হুমায়রার দিকে তাকিয়ে দেখলো হুমায়রা আজ সেজে এসেছে।এই মেয়েকে দেখলে প্রিয়শার মাথা ঠিক থাকে না।প্রিয়শার ভাবনার মাঝেই ফাইয়াজ বলে উঠলো,

“আমি যেহেতু বলেছি যোগাযোগ করার কথা।তাই তুমি আমার নাম্বার না চাইলেও আমি দিতাম।বসো এখন।”

ফাইয়াজ বোর্ডে নিজের নাম্বার লিখে দিল।সবাই নাম্বার লিখে নিলো।তখন হুমায়রা আবার বলল,

“স্যার প্রিয়শা ফর্ম পূরণ করবে না।ওকে যে ফর্ম দিলেন না।”

হুমায়রার কথায় ফাইয়াজ বিরক্ত হলো।ফাইয়াজ বিরক্তি প্রকাশ না করে বলল,

“তোমাকে বলতে বলেছি।আমি জানি আমার কাজ কখন করতে হবে।নেক্সট টাইমে আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলবা না।বসো এখন।”

হুমায়রা মুখ চুপসে বসে গেল।হঠাৎ প্রিয়শা ফিক করে হেসে দিল।সবার দৃষ্টি এখন প্রিয়শার দিকে।সুফিয়ার হালকা করে প্রিয়শা মেরে নিচু স্বরে বলল,

“প্রিয়শা চুপ কর।সবাই তোকে দেখছে।”

সুফিয়ার কথা শুনে প্রিয়শা চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই এমনকি ফাইয়াজ ও তারদিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়শা কি প্রতিক্রিয়া দিবে বুঝতে পারছে না।ফাইয়াজ গম্ভীর কন্ঠে প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বলল,

“এমনিতে তো দেরি করে ক্লাসে এসেছো আবার ক্লাসে পড়ায় মন না দিয়ে হাসছো।দাঁড়াও।পুরো সময় দাঁড়িয়ে ক্লাস করবা। ”

প্রিয়শা দাঁড়িয়ে গেল।ফাইয়াজ ওকে বকলো তবুও প্রিয়শার রাগ হচ্ছে না।বরং হাসি এখনো বের হচ্ছে হুমায়রাকে বকার জন্য।প্রিয়শা পুরো সময় দাঁড়িয়ে ক্লাস করলো।

ক্লাস শেষে ফাইয়াজ প্রিয়শাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“সাদিয়া।”

ফাইয়াজের ডাকে প্রিয়শা সাড়া দিল না।সুফিয়া প্রিয়শাকে বলল,

“প্রিয়শা স্যার তোকে ডাকছে।”

সুফিয়ার কথা শুনে প্রিয়শা কোনোকিছু না বুঝে দাঁড়িয়ে বলল,

“জ্বি স্যার।”

“সব ক্লাস করা শেষে আমার সাথে দেখা করবা।”

……………………………….

সব ক্লাস করা শেষে প্রিয়শা গেল ফাইয়াজের সাথে দেখা করতে।প্রিয়শা যেতেই ফাইয়াজ প্রিয়শাকে বলল,

“তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।তারাতাড়ি এই ফর্মটা পূরণ করে দাও।”

প্রিয়শা চেয়ারে বস্তে ধরতেই ফাইয়াজ বলে উঠলো,

“স্যারের সামনে চেয়ারে বসতে চাচ্ছো আবার পারমিশন ছাড়া।আমি বসার অনুমতি দিয়েছি। দাঁড়িয়ে পূরণ করো। ”

প্রিয়শা বাকা চোখে একবার প্রিয়শাকে দেখে ফর্ম পূরণ করে ফাইয়াজকে দিল।ফাইয়াজ কিছুক্ষণ ফর্ম নেড়েচেড়ে দেখে বলল,

“বাহ!সাদিয়া তোমার লেখা তো অসাধারণ সুন্দর।আমি এইরকম লেখা আগে দেখিনি।তাহলে তোমাকে দিয়ে আমার ক্লাসের নোট করিয়ে নিব।কি বলো ভালো বুদ্ধি না।”

প্রিয়শা কটমট দৃষ্টিতে ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাইয়াজ জানে প্রিয়শা কতটা অলস লেখার ক্ষেত্রে। তাকে নাজেহাল করতে ফাইয়াজ এসব বলছে।প্রিয়শা হেসে বলল,

“তাহমিদ তুমি জানো আমি এসব লেখালেখি পছন্দ করি না।তাই আমাকে দিয়ে দিয়ে নোট করানোর চিন্তা মাথায় আনিও না।”

প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ নিজের এক আঙ্গুল নিজের ঠোঁটে রেখে বলল,

“হুসস!আমি তোমার স্যার হই কোনো পূর্বপরিচিত নই যে আমার নাম ধরে ডাকবা।আমাকে স্যার বলে সম্মোধন করবা।আমি তোমার স্যার হই।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা মাথা নিচু করে বলল,

“স্যরি স্যার। আপনাকে আমার এক পরিচিতির মত দেখতে তাই ভুল করে বলেছি।যদিও সে আর পরিচিত নয় আমার।স্যরি এমন ভুল আর হবে না।আসি স্যার।”

প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ বুঝলো প্রিয়শা মন খারাপ করেছে।ফাইয়াজ কন্ঠে নমনীয়তা বজায় রেখে কিছু একটা বলতে চাইলো তার আগেই প্রিয়শা হেসে মুখ ভেঙচি কেটে বলল,

“কি ভেবেছো এসব বলব তোমাকে।কোনোদিনও না।তুমি যা করেছো আমার সাথে। আগে হলে সুন্দর করে স্যার বলতাম কিন্তু এখন বলতে পারছি না।বললেও সেটা মন থেকে আসবে না।”

প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ কন্ঠে স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বলল,

“একপাক্ষিক দিক দেখে সবকিছু বিচার করা যায়না।দুইদিক দেখে বিচার করতে হয়।”

“আমি কাউকে বিচার করতে চাইনা।কি বিচার করব বা করতাম কোনোকিছুই আমার হাতে ছিল না।হঠাৎ করে এসেছিলে আবার হঠাৎ করে চলে গেলে।মাঝখানে আমি শুধুই দেখেই গেলাম।যখন যাওয়ার ছিলোই তখন নিজের সবকিছু নিয়েই চলে যেতে।স্মৃতিগুলো রেখে যাওয়ার কি আছে।স্মৃতিগুলোর সাথে এখন রাগ-ক্ষোভ যুক্ত হয়েছে। ”

” আমি বুঝতেছি তোমার জায়গা থেকে তুমি ঠিক।কিন্তু আমি কোনোকিছু ইচ্ছে করে করিনি। আমার জায়গায় থাকলে তুমি থাকলে হয়তো তুমিও এমনটাই করতে।আমি তোমাকে সবকিছু বলতে চাই। ”

“আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।তোমার জায়গায় বসাতেও চাইনা আর কোনো কথাও শুনতে চাইনা।”

“তুমি শুনতে না চাইলে আমি তোমাকে বলতে চাই।সবকিছু শুনে তুমি যা বলবে আমি তাই মেনে নিব।”

“ইচ্ছে নেই।জীবন যেরকম চলছে চলতে দাও।আমি আজ আসি।তবে তুমি আমার শুধু পরিচিত হয়েই থাকবা এর বেশিকিছু না।”

ফাইয়াজকে বিষন্ন দেখালো।তার নিজের জন্য প্রিয়শা তাকে ভুল বুঝলো।তবে প্রিয়শাকে নিজের না করা অব্ধি ফাইয়াজ হার মানবে না।প্রয়োজনে নতুন করে আবার প্রিয়শার মন জয় করবে।সব স্বপ্ন পূরন করবে।ফাইয়াজের স্বপ্ন জুড়ে শুধুই প্রিয়শা।ফাইয়াজ তো আর পারেনা এত তারাতাড়ি প্রিয়শাকে ভুলে যেতে।প্রিয়শার অভিমান ফাইয়াজ ভাঙ্গিয়ে ছাড়বে।

#চলবে……………….
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)