স্বপ্ন জুড়ে তুমি পর্ব-০৬

0
61

#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_৬
#সামসুন_নাহার

রাত বারোটা নিকষ কালো রজনী চারদিকে।আকাশে রুপালী চাঁদ তার সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে রাত জুড়ে।বিশাল অট্টালিকাজুড়ে কৃত্রিম আলো বিদ্যমান।রাস্তাজুড়ে গাড়ির শব্দ।বাড়ি ফেরার তাড়া সবার। পরিবারের মানুষের সাথে মিলিত হওয়ার সময়।চাঁদ টা দেখতে সুন্দর তবে প্রিয়শার কাছে আজকের চাঁদ সাধারণ মনে হচ্ছে।

প্রিয়শা খুঁজে পাচ্ছে না কোনো সৌন্দর্য। শান্তি পাচ্ছে না কোথাও।শুধু মন জুড়ে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মাথা ব্যাথা শুরু হচ্ছে যদিও সেটা এখন ক্ষুদ্র পরিমানে আছে।প্রিয়শা উঠে রান্নাঘরে গিয়ে কড়া করে আদা চা বানিয়ে নিয়ে এলো।পড়ার টেবিলে বসে এসাইনমেন্ট লেখা শুরু করল।অল্প একটু লিখতেই আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।এভাবে এক ঘন্টা যাবত বসে আছে টেবিলে।একটু লিখছে তো একটু বসে আরাম করছে।বসে থাকতে থাকতে প্রিয়শা বুঝল মাথা ব্যাথা অনেক বেড়ে গেছে।সহ্য করা যাচ্ছে না।পড়ার টেবিল ছেড়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল।মনে মনে ভাবল সে এসাইনমেন্ট করবে না।প্রয়োজনে আব্বুর কাছে বকা খাবে।

প্রিয়শা বিছানায় শুয়ে মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।আশ্চর্যজনকভাবে ঘুম ধরছে না।হঠাৎ করে প্রিয়শার মোবাইলে কল আসল।প্রিয়শা চোখ খুলে দেখল মোবাইল পড়ার টেবিলের উপর।প্রিয়শার উঠতে ইচ্ছে করল না।কিছু সনয় পর রিংটোন বাজা বন্ধ হয়ে গেল।কিন্তু কিছু সময় পর আবার বাজা শুরু করল।এভাবে তিনবার বাজার পর প্রিয়শা উঠে মোবাইল হাতে নিয়ে আবার বিছানায় গিয়ে নাম্বার না দেখেই কল রিসিভ করল।মোবাইলের অপাশ থেকে ঝাঁঝালো কণ্ঠে শব্দ আসল,

“কতক্ষণ ধরে কল দিচ্ছি। ধরছিলে না কেন।নিজেকে কি মনে করো।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা কিছু বলল না।অন্য সময় হলে ঠিক কিছু না কিছু বলত।প্রিয়শা কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে বলল,

“কেন ফোন দিছো বলো।”

“এসাইনমেন্ট করছো।”

প্রিয়শা উৎসুক হয়ে বলল,

“না করি নাই।কেনো করে দিবা নাকি তুমি।যদি করে দাও তাহলে বলো।”

“আমি কেনো করে দিব।কোন দুঃখে করে দিব।আমি এসাইনমেন্ট দিব আর আমিই করে দিব তা হয় নাকি।”

“যেহেতু করে দিবা না।তাহলে ফোন রাখো। ”

“উহু!ফোন রাখার জন্য কল করেছি নাকি।”

“তো কেনো করেছো কল।”

“তুমি তখন ওইরকম করে সুফিয়াকে নিয়ে আসলা কেন।তখন আমার কেমন লাগছিল বলে বোঝাতে পারব না।”

“বেশ করেছি।আমার সামনে প্রশংসা করছিল গিফট দেওয়ার জন্য।তারও তো জানা উচিত যে শাস্তি দিয়েছে সেই শান্তনা গিফট দিচ্ছে। তাই তাকে দেখালাম গিরগিটিকে যে তাড়াতাড়ি নিজের রঙ বদলায়।”

প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ থতমত খেল।প্রিয়শা তাকে গিরগিটি বলল।ফাইয়াজও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।ফাইয়াজ বলল,

“আমি গিরগিটি হলে তুমি কি।”

প্রিয়শা ভাব নিয়ে বলল,

“আমি হলাম প্রিয়শা।”

“আমি গিরগিটি হলে তুমিও গিরগিটির বউ হবে।এসাইনমেন্ট যখন দিলাম তখন তুমি কিভাবে সুন্দর করে কথা বলছিলে যেন তোমাকে এসাইনমেন্ট না দেই।তাই তুমিও গিরগিটি।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা তখনকার কথা মনে করল যখন সে সুন্দর করে কথা বলে এসাইনমেন্ট বাদ দিতে চাচ্ছিল।কিন্তু তার ইচ্ছেকে দমিয়ে ফাইয়াজ তাকে এসাইনমেন্ট দিল।এখন আবার কথা শুনাচ্ছে।প্রিয়শা তেতে উঠে অন্য ভাব নিয়ে বলল,

“ভেবেছিলাম তোমার সাথে এখন থেকে সুন্দর করে কথা বলব।কিন্তু তোমার তো তা পছন্দ হলো ।তাই তোমার সাথে আর সুন্দর করে কথা বলব না।”

প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ হাসল।কন্ঠে দুষ্টুমির রেশ ধরে বলল,

“কিভাবে কথা ঘোরাতে হয় সেটা তোমার থেকে শেখা উচিত।আসলে তুমি তোমার কথায় প্রমান করে দিচ্ছ যে তুমি গিরগিটি। ”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,

“তুমি কি আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য ফোন দিছো।”

ফাইয়াজ হেসে বলল,

“তুমি আমার সাথে কথায় হেরে যাচ্ছো তাই পালাতে চাচ্ছো।”

“কোন দুঃখে পালাতে যাবো।তোমার মত আমাকে ভাবছো নাকি যে হঠাৎ করে পালাবো।”

প্রিয়শার খোঁচা মারা কথা শুনে ফাইয়াজ এবার নিজে ঘোরাতে বলল,

“তোমার এসাইনমেন্ট কতদূর হলো।”

প্রিয়শা হেসে বলল,

“দেখছো এখন কে পালাতে চাচ্ছে।এখন কে হেরে যাচ্ছে।”

ফাইয়াজ আর বেশি কথা বলল না।যদি প্রিয়শা ফোন কেটে দেয়।তাহলে যেই কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছে সেটা বলা হবে না।ফাইয়াজ বলল,

“হুম আমি হেরে গেলাম ঠিক আছে।এখন বলো তোমার এসাইনমেন্ট কতদূর হলো। ”

“এখনো লেখা শুরু করিনি।”

“যদি ভাবো লেখবে না তাহলে কি করব মনে আছে।”

“হুম মনে আছে।আব্বুকে ফোন করে বলবা।”

“এখন ভাবছি আমি ফোন করব না ওনাকে ভার্সিটিতে ডাকব।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা অবাক হলো।আসলে ফাইয়াজ গিরগিটি নাহলে এসব বলত না।প্রিয়শার আব্বু যে রাগী। আব্বু ভার্সিটি যাওয়ার কথা শুনলেই প্রিয়শার কি হবে প্রিয়শা ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো।প্রিয়শা শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“তুমি কি করতে চাচ্ছো বলোতো।আমি কোনো এসাইনমেন্ট করতে পারব না।”

ফাইয়াজ হাসলো। হেসে বলল,

“আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে।”

প্রিয়শা ভ্রু কুচকে বলল,

“কি বুদ্ধি।আর কিসের বুদ্ধি।”

“এমন একটা বুদ্ধি দিব।যাতে তোমাকে আর এসাইনমেন্ট করতে না হয়।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা খুশি হলো।খুশি হয়ে বলল,

“কি বুদ্ধি তাড়াতাড়ি বলো।”

ফাইয়াজ হাসলো। প্রিয়শা তার লাইনে আসছে।ফাইয়াজ বলল,

“তুমি যদি আমার তিনটে শর্ত মানো তাহলে তোমাকে আর এসাইনমেন্ট করতে হবে না।”

বুদ্ধির কথা শুনে ফাইয়াজ খুশি হলেও শর্তর কথা শুনে খুশি হতে পারল না।প্রিয়শা বলল,

“আমি পারব না মানতে তোমার শর্ত।কি করবা করো।”

“মানতে হবে না তোমাকে কোনো শর্ত।শুধু একটু ইমাজিন করো তোমার আব্বুর মুখ ভয়ংকর লাল হয়ে আছে রাগে।ভার্সিটি আসে তাকে অনেক কথা শুনতে হলো। আর..”

ফাইয়াজের অর্ধেক কথা শুনে প্রিয়শা তাড়াতাড়ি বলল,

“আমি রাজি।আমি তোমার শর্ত মানতে রাজি।”

প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ হাসল।ফাইয়াজ বলল,

“গুড গার্ল।”

প্রিয়শা আর কোনো কথা শুনল না।তার মাথা ব্যাথা আবার বাড়ছে।প্রিয়শা ব্যাথিত কন্ঠে বলল,

“আর কিছু বলবা। আমি রাখছি তাহলে।”

প্রিয়শার এমন কন্ঠ শুনে ফাইয়াজ আঁতকে উঠল। ফাইয়াজ চিন্তিত গলায় বলল,

“প্রিয় তুমি ঠিক আছো তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন।”

“কিছু না।”

“বললেই হলো নাকি তোমার কন্ঠ অন্য শোনাচ্ছে কি হয়েছে আমাকে বলো।”

প্রিয়শা জানে ফাইয়াজকে এখন সত্যি না বললে সে থামবে না।তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে প্রিয়শা বলল,

“মাথা ব্যাথা করছে প্রচুর। ”

ফাইয়াজ বিচলিত কন্ঠে বলল,

“তোমার মাথা ব্যাথা করতেছে আর তুমি এখন বলতেছ।ওষুধ খেয়েছ।”

“না।”

“আশ্চর্য তোমার মাথা ব্যাথা করতেছে আর তুমি ওষুধ না খেয়ে চুপ করে আছো।অবাক না হয়ে পারছি না প্রিয়।নিজের শরীরের প্রতি এত অবহেলা করতে নেই।এখন তুমি ভালো মেয়ের মত ঔষধ খাবে।ঠিক আছে।”

প্রিয়শা মিনমিন করে বলল,

“আচ্ছা।”

“হুম।খেয়ে ঘুম দাও ভালো করে।রাখছি এখন।”

ফাইয়াজ কল কেটে দিলে প্রিয়শা মাথা ব্যাথার একটা ঔষধ খেয়ে মায়ের রুমে গেল। আতিফা বেগম এই সময়ে মেয়েকে দেখে অবাক হলেন।অবাকতার কন্ঠে বললেন,

“কি হয়েছে প্রিয়শা। এই সময়ে তুই আমার রুমে।”

প্রিয়শা কোনো কথা না বলে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলল,

“মা আমার মাথা ব্যাথা করছে মাথায় হাত বুলিয়ে দাওতো।”

মেয়ের মাথা ব্যাথার কথা শুনে চিন্তিত হয়ে বললেন,

“কখন থেকে মাথা ব্যাথা। ঔষধ খেয়েছিস।”

“হুম ঔষধ খেয়েছি।তবে আমার মনে হয় না ওই ঔষধে কাজ হবে।”

“সবার ওই ঔষধে কাজ হলে তোমার কেন হবে না শুনি।”

প্রিয়শা হেসে মায়ের দুইহাত ধরে বলল,

“কারন এখানে আমার আসল ঔষধ আছে।এই হাত মাথায় পরলেই মাথা ব্যাথা ফুড়ুৎ হয়েই যাবে।”

মেয়ের কথা শুনে আতিফা বেগম হাসলেন।মেয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন।তখন আদিল রুমে এসে মুখ ফুলিয়ে বলল,

“আমাকে তো সবাই ভুলে গেছে।আপির কথা কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু মা তুমি আমাকে কিভাবে ভুলে গেলে।”

আদিলের কথা শুনে মা-মেয়ে হাসলেন।আতিফা বেগম হেসে বললেন,

“আসো তুমিও আসো।তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

মায়ের কথা শুনে আদিল ঝটপট মায়ের কোলে মাথা রাখল।আতিফা বেগম হেসে দুই ছেলে-মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।আতিফা বেগমের কাছে এই মুহূর্তটুকু খুবই সুখকর। ছেলে-মেয়ের মুখে হাসি মায়েদের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখকর ও শান্তিময় সময়।তিনি দোয়া করলেন তার ছেলে-মেয়ে যেন সারাজীবন এমন হাসিখুশি থাকে।কারো নজর যেন না লাগে।

#চলবে…………………………
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ)