স্বপ্ন জুড়ে তুমি পর্ব-১৮+১৯

0
51

#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_১৮
#সামসুন_নাহার

বিয়ে বাড়ি আনন্দের বাড়ি।হাসি,মজা,আনন্দ চিৎকার চেচামেচি, গল্প খাওয়া দাওয়ার বাড়ি। চারদিকে হইচইপূর্ণ থাকে।সেই আজ বিয়েবাড়ি হইচই এর পরিবর্তে শান্ত নিরব হয়ে গেছে।সবার মুখে চাপা গুঞ্জন কনে পালিয়েছে।কেউ কেউ শুনে টিটকারি করছে,কেউ কেউ মজা নিচ্ছে,আর কেউ আনন্দ পাচ্ছে।

বর আসার পর যখন সবাই কনেকে আনতে গেল। তখন সবাই ঘরে গিয়ে দেখল কনে নেই।সবার ধারণা কারেন্ট যখন চলে গিয়েছিল তখন প্রিয়শা পালিয়েছে।তারপর সবাই সাইদুর রহমানকে বললে তিনি রেগে গিয়ে প্রিয়শার রুমে গিয়ে দেখেন সত্যি প্রিয়শা পালিয়ে গেছে।

সাইদুর রহমানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।প্রিয়শা যে এভাবে শেষ মুহূর্তে এসে পালিয়ে যাবে তা কল্পনাও করতে পারেনি।এভাবে সাইদুর রহমানের মান সম্মান শেষ হয়ে গেল।নিজের মান সম্মানের জন্য তিনি এতকিছু করলেন কিন্তু শেষ রক্ষা টুকু করলে পারলেন না।সাইদুর রহমান মাথায় হাত দিয়ে বিসে আছেন। এখন কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।খালেদকে, আরহানকে কি জবাব দিবেন।আতিফা বেগম নিজ স্বামীর কাছে গিয়েছিলেন তখন সাইদুর রহমান আতিফা বেগমকে চোখ রাঙ্গিয়ে সরে যেতে বলেন।তাই আতিফা বেগম আর কিছু না বলে চুপ করে আছে।

তখন কেউ একজন এসে সাইদুর রহমানের উদ্দেশ্যে বলল,

“আঙ্কেল প্রিয়শার রুমে একটা চিঠি পেয়েছি।”

সাইদুর রহমান চমকে চিঠি হাতে নিলেন।নীরবে পড়তে লাগলেন।সেখানে লেখা ছিল,

“প্রিয় আব্বু

তুমি কখনো আমাদের ভালো-মন্দ বুঝোনি।শুধু নিজের ভালো-মন্দ বুঝেছ।তাই আজ প্রথমবারের মত তোমার অবাধ্য হয়ে নিজের ভালোটা বেছে নিলাম।ভালো থেকো।

ইতি
তোমার অবাধ্য মেয়ে”

এই চিঠি পড়ে সাইদুর রহমানের রাগ যেন আরো তড়তড় করে বেড়ে গেল।তিনি চেঁচিয়ে আতিফা বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন,

“এই দিন দেখার জন্য তোমার ছেলে-মেয়ের জন্ম দিছি।তোমার মেয়েকে আমি দেখে নিব।সব তোমার জন্য হয়েছে।তোমাকে বলেছিলাম প্রিয়শার উপর নজর রাখতে তুমি কি করেছ।”

আতিফা বেগম কোনোদিনও স্বামীর উপর কথা বলেননি।আজও এতগুলো মানুষের সামনে অপমানিত হয়ে কিছু বললেন না।নিরবে চোখের পানি মুছলেন।সাইদুর রহমান এবার আয়শার কাছে গিয়ে ক্রোধের সাথে চেঁচিয়ে বললেন,

“তুমি সবকিছু করেছ তাই না।তুমি আমার মেয়েকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছ।নাহলে আমার মেয়ে এইরূপ করার সাহস পেত না।তুমি সবসময় আমার বিরুদ্ধে ছিলে তাই আজও আমাকে হারানোর জন্য প্রিয়শাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলে।”

আয়শা হতবার হয়ে গেলেন সাইদুর রহমানের কথা শুনে।আয়শা চেয়েছিল প্রিয়শা যেন তার ভালোবাসার মানুষকে পায় কিন্তু তিনি কখনো এটা চাননি যে প্রিয়শা পালিয়ে যাক।সাইদুর রহমান না জেনেই তার দোষ দিলেন।আয়শা সাইদুর রহমানের উদ্দেশ্যে বললেন,

“বুঝেশুনে কথা বলো দুলাভাই।আমি কেন প্রিয়শাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করব।তুমি তো আমাকে যেতেই দাওনি প্রিয়শার কাছে।প্রিয়শার সাথে আজ আমার কথায় হয়নি।আর আমি তোমার বিরুদ্ধে সবসময় থাকলেও কখনো এটা চাইনি যে প্রিয়শা পালিয়ে যাক।”

“আমার বাড়িতে থেকে আমকেই মিথ্যে কথা বলছ।আমি যখন কাজে ব্যস্ত ছিলাম তখন তুমি প্রিয়শাকে এসব বুদ্ধি দিয়েছ।”

আয়শার রাগ বেড়ে গেল।তিনি বলার পরও সাইদুর রহমান কিভাবে তাকে দো দিচ্ছেন।আয়শা আর সহ্য করতে না পেরে রাগ নিয়ে বলল,

“অনেক বলেছো তুমি।আমি তো বলছি আমি কিছু জানি না।আর বারবার বাড়ির কথা বলো কেন।আমার কি বাড়ি নেই যে তোমার বাড়ি এসে পরে থাকব।এতদিন শুধু প্রিয়শা আর আদিলের জন্য ছিলাম কিন্তু আর না।আমি আর এই বাড়িতে কোনোদিন আসব না।যেই বাড়িতে আমার মিনিমাম সম্মানটুকু নেই সেই বাড়িতে আমি থাকব না।আমি এখনই চলে যাব।”

আয়শা মায়াকে কোলে নিলেন।তখন আদিল সাইদুর রহমানের মান বলল,

“আব্বু মনি কিছু জানে না।মনি চলে যাচ্ছে। তুমি মনিকে আটকাও।”

সাইদুর রহমান আদিলেকে রেগে বলল,

“যে যাবার সে চলে যাক।আমি কেন আটকাতে যাব।আমি তো ভুল কিছু বলিনি।আর তোমার সাহস কিভাবে হলো আমার মুখের উপর কথা বলার।”

তখন আয়শা আদিলের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“ভালো থাকিস বাবা।আর অন্যায়ের সময় মুখ বুজে থাকবি না।লড়াই করবি।আর আমাকে দেখতে ইচ্ছে হলে আমার বাড়ি চলে আসিস।তোদের জন্য আমার বাড়ি সবসময় উন্মুক্ত।”

আদিলকে এসব বলে আয়শা আতিফার উদ্দেশ্যে কড়াভাবে বলল,

“এভাবে চুপ করে থাকিস।স্বামীর কথা শুনে চুপ করে থাকিস।ছেলে-মেয়েদের কথা ভাবতে হবে না।কেমন মা তুই ছেলেমেয়েদের জন্য কথাও বলতে পারিস না।চুপ করে থাকিস সবসময়। ”

বলেই আয়শা মায়াকে নিয়ে চলে গেল।সাইদুর রহমান রেগে চেয়ারে লাথি মারলেন।তখন রওশন অর্থাৎ সুফিয়ার বাবা এসে সাইদুর রহমানকে বললেন,

“ভাই শান্ত হন। এইরকম পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে।এইরকম করলে তো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে না।বরের বাড়ির লোকজনকে তো জানাতে হবে।এভাবে চুপ করে থাকলে তো হবে না।”

সাইদুর রহমান কিছুটা শান্ত হলেন।এখনো ভেবে পাচ্ছেন না কি করবেন।এইরকম পরিস্থিতিতে কি করতে হবে জানা নেই সাইদুর রহমানের। কিছুক্ষণ পর আরহান ও খালেদকে ডেকে আনা হলো।খালেদকে এসে জিজ্ঞাসু কন্ঠে সাইদুর রহমানের উদ্দেশ্যে বলল,

“কি হয়েছে সাইদুর।এভাবে বিয়ের মাঝখানে ডেকে নিয়ে আসলি।আবার আরহানকেও ডেকে নিয়ে আসলি।কোনো সমস্যা হয়েছি কি।”

সাইদুর রহমান মাথা নিচু করলেন।কিভাবে বলবেন ভেবে পাচ্ছে না।খালেদ উত্তর না পেয়ে আবার বলল,

“কি হয়েছে বল আমাকে।এভাবে চুপ করে থাকিস না।”

সাইদুর রহমান চুপ করে আছে দেখে রওশন খালেদের উদ্দেশ্যে বলল,

“আমি বলছি সবকিছু কি হয়েছে।”

খালেদ রওশন এর কথায় বলল,

“আমি সুফিয়ার বাবা। সুফিয়া ও প্রিয়শা একই ক্লাসে পড়ে।”

“ও তাহলে বলুন কি হয়েছে।”

রওশন সাইদুর রহমানের দিকে তাকিয়ে খালেদের উদ্দেশ্যে বলল,

“আমি যেই কথা বলব সেই কথা শুনে আপনারা আমাদের ভুল বুঝবেন না।আসলে কিভাবে যে বলি আপনাকে।”

কিছুক্ষণ থেমে রওশন আবার বলল,

“প্রিয়শা পালিয়ে গেছে।”

এই ছোট একটা কথা যেন বিষ্ফোরকের ন্যায় ঘটল।আরহান বিশ্বাস করতেই পারছে না।বুকে মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব হচ্ছে।আরহান অবিশ্বাসের সাথে বলল,

“আপনারা নিশ্চয় মিথ্যে কথা বলছেন।প্রিয়শা কেন পালিয়ে যাবে।আমি তো প্রিয়শাকে সত্যি ভালোবাসি। ”

“তোমাদের এভাবে ডেকে এনে মিথ্যে বলার কোনো কারন নেই।আর এইসব বিষয়ে মানুষ মিথ্যে কথা বলে।”

এসব কথা শুনে আরহান নিজেকে ঠিক করতে পারল না।কেন কি কারনে প্রিয়শা পালাল।এভাবে তার স্বপ্ন ভেঙ্গে কেন পালাল।আরহান তো অন্য কাউকে ভালোবাসেনি।শুধুই প্রিয়শাকে ভালোবেসেছিল।আরহানের স্বপ্ন জুড়ে শুধু প্রিয়শা ছিল না।সেখানে তো অন্য নারীর বাস ছিল না।আরহান রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল,

“কেন প্রিয়শা পালাল।এই বিয়েতে তো প্রিয়শার মত নেওয়া হয়েছিল।কেন এইভাবে কথা দিয়ে পালাল আমি জানতে চাই আঙ্কেল। ”

রওশন এখন কিছু বলল না।এখন সাইদুরকেই বলতে হবে।সাইদুর রহমান ক্ষীণ স্বরে বললেন,

“বাবা আসলে হয়েছে কি।”

আরহানের এত কিছু শোনার আর ধৈর্য নেই।সে আবার জোরে চিৎকার করে বলল,

“এত কিছু জানতে চাই না।কেন পালাল সেটা শুনুন।”

সাইদুর রহমান কিছু বলবেন তার কেউ কেউ বলল,

“মেঝেতে তো পড়ে আছে প্রিয়শার লেখা চিঠি সেটা পরলেই হবে।”

সাইদুর রহমান চোখ রাঙালেন যিনি চিঠির কথা বললেন।কিন্তু তিনি হয়তো এটা ভুলে গেছে যে সবাই তার বাড়ির সদস্য না যে তার সব কথা মেনে নিবে।আরহান চিঠি নিয়ে পড়তে লাগল।চিঠি পড়ে আরহান অগ্নিমূর্তির ন্যায় রাগান্বিত হলো।সে চেঁচিয়ে জোরে বলল,

“প্রিয়শা বিয়েতে রাজি ছিল না।কিন্তু তোমরা সবাই আমাদের মিথ্যে কথা বলেছ।বলেছ যে প্রিয়শা বিয়েতে রাজি।আমি যখন প্রিয়শার মত নিতে চাইলাম তখন আঙ্কেল তুমি বললে যে প্রিয়শা লজ্জায় কথা বলতে চাচ্ছে না।কিন্তু এসব কিছু না আপনি সব মিথ্যে কথা বলছেন।”

সাইদুর রহমান ছোট হলেন।ঘামতে লাগলেন প্রুচুর।আমতা আমতা করে বললেন,

“আসলে বাবা হয়েছি কি।প্রিয়শা… ”

খালেদ সাইদুর রহমানের উদ্দেশ্যে গম্ভীরমুখে রাগান্বিত হয়ে বললেন,

“আর কত বাহানা দিবি সাইদুর।তোকে আমরা বারবার বলেছিলাম প্রিয়শার মতামত নিয়ে আমাদের কথা দিবি।তাহলে কেন তুই এভাবে মিথ্যে কথা বললি।এভাবে আমাদের মান সম্মান সব ডোবালি।মান সম্মানের কথা বাদ দেন আমার ছেলেটার কি হবে। ছেলেটা তো স্বপ্ন দেখে আসছে মেয়েটাকে বিয়ে করার।যদি আগেই জানত তাহলে আমার ছেলেটা এত কষ্ট পেত না।”

সাইদুর রহমান হাত জোর করে বললেন,

“আমাকে ক্ষমা করে দে।আমার প্রথমে এসব তোদের বলা উচিত ছিল।আমি ভাবিনি প্রিয়শা এইরকম একটা কাজ করবে।”

“বেশ করেছে।তোর মত বাবার থাকলে তো ছেলে-মেয়েরা এমন কাজ করবেই।যেখানে তুই নিজের ভালো-মন্দ দেখিস ছেলে-মেয়েদের দেখিস না।ছে-মেয়েরা কি পছন্দ করছে, তাদের কি ভালো লাগে,কিসে তাদের মন খারাপ হয় খোঁজ নিস তুই।তোর মত বাবা থাকলে ছেলে-মেয়েরা এইরকম করবেই।কারন তুই তাদের মতামতকে সম্মান করতে পারিস না।”

সাইদুর রহমান চুপ হয়ে গেলেন।আজ প্রিয়শার জন্য আজ এতগুলো মানুষের সামনে অপমানিত হতে হচ্ছে।তার আজ এসব প্রাপ্ত ছিল।সাইদুর রহমান অনুনয়ের সঙ্গে হাত জোর করে বলল,

“আমাকে ক্ষমা করে দে খালেদ।আমার তো মান সম্মান তো গেছেই কিন্তু তোর মান-সম্মান নষ্ট হওয়ার দরকার নেই।আজকে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আরহানের বিয়ে হবে।ভালো মেয়ের সাথে বিয়ে হবে।”

বলেই সাইদুর রহমান কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রওশন এর কাছে গিয়ে বলল,

“ভাই তোমার মেয়েটার সাথে আরহানের বিয়ে দিবে।আরহান অনেক ভালো ছেলে।”

রওশন অবাক হলেন কিন্তু তা প্রকাশ করলেন না।তিনি সুফিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,

“সুফিয়া যদি রাজি হয় তাহলে হবে।কিন্তু আমার বিশ্বাস সুফিয়া রাজি হবে না।আমি আমার মেয়ের উপর আমি জোর করি না।”

সাইদুর রহমান সুফিয়ার কাছে যেতেই আরহান চেঁচিয়ে বলল,

“থামুন।আপনি পেয়েছেনটা কি। নিজের মত সবাইকে ভাবেন।এখানে আর কোনো বিয়ে হবে না।আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের জোর করতে পারেন তবে আমাকে না।আর আমি প্রিয়শাকে ভালোবাসি। একজনকে ভালোবেসে অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না।আমি কাউকে আপনার মত ঠকাতে পারব না।”

সাইদুর রহমান নিজের করা কাজের জন্য যোগ্য জবাব পেয়ে গেছে।এইভাবে ছোট বড় সবার সামনে ছোট হতে লাগল।আরহান কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।আরহান ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চলে যেতে ভাবল,

“কেন এভাবে ঠকালে প্রিয়।আমি যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমার #স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি ছিলে আর তুমিই থাকবে আমার স্বপ্ন জুড়ে। তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না।তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো।”

#চলবে……………..

#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_১৯
#সামসুন_নাহার

পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের বাস।আর সবার ব্যবহার, চরিত্র,জেদ,কন্ঠ ইত্যাদি আলাদা রকম।সেই রকম কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ হলেন সাইদুর রহমান।তার কাছে নিজের মান-সম্মান আগে ছিল।ছিল নিজের ভালোলাগা সবার উপরে চাপিয়ে দেওয়ার অভ্যাস।তাই তো তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।

তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না এতগুলো মানুষের সামনে নিজের অপমান। ভুলতে পারছেন না।চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই ঘটনা।যখন বাড়ির আত্মীয়-স্বজন সবার সামনে অপমানিত করা হচ্ছিল।তখন রাগে ফেটে যাচ্ছিল পুরো শরীর কিন্তু পরিস্থিতির চাপে কিছু করতে পারছিলেন না।

তিনি ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না।স্বাভাবিকভাবে নিলে নিজের ভুল বুঝতে পারলে তিনি মেয়ের জন্য কষ্ট পেতেন।কিন্তু তিনি নিচ্ছেন জটিলভাবে তাই তো তিনি এখনো রাগে গিজগিজ করছেন।আরহানরা সাইদুর রহমানকে সবার সামনে ছোট করে চলে গেছে।পুরো বিয়ে বাড়িতে নিরবতা। যেই বাড়িতে কিছুক্ষণ আগে মানুষে গিজগিজ করছিল সেই বাড়িতে এখন শুধু তিনটে মানুষ।

সাইদুর রহমান কিছুক্ষণ ভাবলেন কিছু। তারপর কাউকে ফোন করে বেড়িয়ে যেতে লাগলেন।তখন আতিফা বেগম বললেন,

“কোথায় যাচ্ছ তুমি এই রাতের বেলা।”

সাইদুর রহমান চোখ রাঙ্গিয়ে রাগত স্বরে বলল,

“তোমার মেয়ের ডানা বেড়েছে সেটা ছাটতে যাচ্ছি।”

…………………………

প্রিয়াশা আর তাহমিদ একটা হোটেলে উঠেছে থাকার জন্য।ফ্রেশ হয়ে প্রিয়শা বিছানায় বসে আছে।পড়নে এখনও বিয়ের শাড়ি। গহনা খুলে রেখেছে।তাহমিদ ফ্রেশ হয়ে দেখল প্রিয়শা বসে বসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।তাহমিদ নিরবে হাসল তার নব বঁধুকে দেখে।দেখতে কি অপুর্ব সুন্দর লাগছে।প্রিয়শার কাছে এগিয়ে যেতেই তাহমিদের মোবাইলে কল দিল।

তাহমিদ বিরক্ত হলো প্রচুর। তার বউয়ের কাছেও কি যেতে দিবে না।কল আসার সময় পেল না।তাহমিদ বিরক্ত হয়ে ফোন দেখে তার বড় ভাইয়ের কল দেখে বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করে বলল,

“কল দেওয়ার আর সময় পেলে না।এত ভুল সময়ে কেউ কল করে।”

ফোনের অপাশ হতে তাহসিন অর্থাৎ তাহমিদের বড় ভাই হেয়ালি করে বলল,

“এমন ভবে বলছিস যেন বউয়ের সাথে রোমান্স করতে যাচ্ছিলি আর আমার কল আসায় তা করতে পারলি না।”

“হুম।ঠিক বলেছিস।বউয়ের দিকে ভালোভাবে তাকাতেও দিলে না।তার আগেই কল দিলে।বড় নিষ্ঠুর তুমি।”

“হ্যাঁ কি বলছিস।”

এইটুকু বলতেই তাহসিনের মাথায় কিছু আসতেই তাহসিন তাড়াতাড়ি করে বলল,

“কি বললি তুই। তুই বিয়ে….।”

“হ্যাঁ আমি বিয়ে করেছি।”

“কাকে বিয়ে করেছিস প্রিয়শাকে।”

“হুম।প্রিয়শা ছাড়া আর কে আছে আমার জীবনে। ”

“ভাই তুই এত সাহস কই পাইলি।আমার তো ভয় লাগছে।তোর লাগছে না।”

“তোমার কাছ থেকেই পেয়েছি।তুমিও তো এইরকম করে বিয়ে করেছিলে।তবে তোমরা সোজা বাড়ি গিয়েছিলে আমরা হোটেলে উঠেছি।”

“তোরা হোটেলেই থাক।বাসায় আছিস না।আম্মু এমনিতে প্রিয়শার উপর রেগে আছে।এখন বাসায় আছিস না।কোনো দরকার পরলে ফোন করিস।এখন বউয়ের সাথে রোমান্স কর।”

তাহসিন কল কেটে দিতেই তাহমিদ হাসল।প্রিয়শা সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আছে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায়।প্রিয়শার ভালোলাগার হাসি।এই হাসির উপরে প্রিয়শা বারবার মুগ্ধ হয়।তাহমিদ প্রিয়শার দিকে তাকাতেই প্রিয়শা চোখ নামিয়ে নিল।তাহমিদ এসে প্রিয়শার কাছে দাঁড়াল।

কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার প্রিয়শা আর তাহমিদের দিকে তাকাচ্ছে না।তাহমিদ ভ্রু কুচকে ক্ষানিকটা সময় চেয়ে রইল প্রিয়শার দিকে।কিন্তু প্রিয়শা এখনো তা তাকালে তাহমিদ হেচকা টানে নিজের শরীরের উপর ফেলল।প্রিয়শার কোমর চেপে ধরল।প্রিয়শা নিজের মাথা তাহমিদের বুকে আবেশে রাখল।তাহমিদ মোহময়ী আদুরে কন্ঠে বলল,

“কি ব্যাপার প্রিয় তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছ না কেন।”

প্রিয়শা না তাকিয়ে চুপ করে থাকল।তাহমিদ হেসে আবার বলল,

“প্রিয় তুমি কি লজ্জা পাচ্ছ।তাকাও আমার দিকে।”

প্রিয়শা লজ্জায় মুখ লুকাল তাহমিদের বুকে। তাহমিদ হেসে নিজের দুইহাত দিয়ে প্রিয়শার মুখ তুলে তাকাল প্রিয়শার লজ্জা রাঙা মুখের দিকে।তাকিয়ে দেখল প্রিয়শাকে লজ্জা পেয়ে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। তাহমিদ প্রিয়শা কপালে,গালে গাঢ় করে চুমে খেয়ে বলল,

“প্রিয় তুমি এভাবে লজ্জা পাবে সবসময়। তোমাকে লজ্জা পাওয়া অবস্থায় আরো ভয়ংকর রকমের সুন্দর দেখাচ্ছে।তুমি তো আগে এত লজ্জা পেতে না এখন কেন পাচ্ছ আমার অর্ধাঙ্গিনী। ”

প্রিয়শা আরো লজ্জা পেল তাহমিদের এহন কথায়।বিয়ের আগে তাহমিদ তার শুধু ভালোবাসার মানুষ ছিল কিন্তু এখন তো তাহমিদ আর স্বামী তার একান্ত ব্যক্তিগত। আগের আর এখনকার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।প্রিয়শা এসব ভেবে আরো লজ্জা পেল।তাহমিদের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলে তাহমিদ সরতে দিল না।আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরল প্রিয়শাকে।প্রিয়শা পুরো শরীর মৃদু কাঁপছে। সাথে ঠোঁট জোড়া। তাহমিদ সেই ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে একপ্রকার ঘোরের মধ্যে চলে গেল।মৃদু কম্পনরত ঠোঁট যেন তাহমিদকে টানছে।তাহমিদ নিজের ঠোঁট ধীরে ধীরে প্রিয়শার ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেল।যখন প্রিয়শার ঠোঁটে স্পর্শ করবে তখনই হঠাৎ করে কলিংবেল বাজল।
তাহমিদ ছেড়ে দিল প্রিয়শাকে। বিরক্ত হয়ে বলল,

“আজ আমাকে মনে হয় কেউ বাসর করতে দিবে না।সামান্য চুমু খাবার আগেই সবাই উড়ে এসে জুড়ে বসছে।”

তাহমিদ ছেড়ে দেওয়ায় যেন প্রিয়শা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।কিন্তু তাহমিদের এমন কথায় প্রিয়শার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগল।কান গরম হয়ে গেল।প্রিয়শা দূরে মাথা নিচু করে আছে লজ্জার কারনে।

তাহমিদ বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দরজার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে দেখে অবাক হলো।এই মুহুর্তে এখানে আশা করেনি তাহমিদ।দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং সাইদুর রহমান। সাইদুর রহমান তাহমিদকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকল।সঙ্গে আরো কয়েকটি ছেলে। প্রিয়শাকে উদ্দেশ্য করে কাঠকাঠ গলায় বলল,

“প্রিয়শা চলো আমাদের সাথে।”

হঠাৎ এমন কথা শুনে যেন প্রিয়শা চোখ তুলে তাকাল। নিজের চোখের সামনে বাবাকে দেখে ভয় পেয়ে গেল প্রিয়শা।ভয়ে কাঁপতে লাগল।সাহস করে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসলেও জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত যাকে ভয় পেয়েছে। সেই প্রিয়শা আজ বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছে।প্রিয়শার ভাবনার মাঝেই তাহমিদ সাইদুর রহমানের উদ্দেশ্যে বলল,

“আমরা বিয়ে করেছি।তাই আপনি চাইলেও প্রিয়শাকে নিয়ে যেতে পারবেন না।”

সাইদুর রহমান বাকা হেসে বলল,

“আমার মেয়ে আমি নিয়ে যাব।তুমি বললেই শুনব নাকি।”

“হুম শুনতেই হবে কারন আমরা এখন আমি প্রিয়শার স্বামী। ”

“স্বামী মাই ফুট।”

বলেই সাইদুর রহমান প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বললেন,

“আমি এখন প্রিয়শাকে নিয়ে যাব যা করার করো।”

প্রিয়শা নিজের ভালোবাসার জন্য এতকিছু করেছে।আজ এখন কি-না তার বাবা এসে এভাবে তাকে নিয়ে যাবে। এটা হতে পারে না।প্রিয়শা নিজেকে শক্ত করে বলল,

“আমি যাব না আব্বু।তুমি চলে যাও।আমি তাহমিদের সাথে থাকব।”

সাইদুর রহমান জোরে চেঁচিয়ে বলল,

“চুপ করো তুমি।তোমার অনেক সাহস বেড়েছ না।বাড়ি চলো তোমাকে আগে। তোমার সাহস কত বেড়েছে দেখব।”

বলেই সাইদুর রহমান প্রিয়শার হাত ধরলেন।অপরদিকে তাহমিদ প্রিয়শার হাত ধরে বলল,

“আমি প্রিয়শাকে কোথাও যেতে দিব না।”

“তোমার সাথে আমি বেশি কথা বাড়াব না।”

বলেই তিনি তার সঙ্গে আনা ছেলেদের বললেন,

“তাহমিদকে ধরে থাকো।আমরা যাওয়ার পর ছেড়ে দিবে।”

সাইদুর রহমানের কথা অনুযায়ী ছেলেগুলো তাহমিদকে ধরে রাখল।তাহমিদ অনেক সারানোর চেষ্টা করেও পারল না।প্রিয়শা কেঁদে কেঁদে বলল,

“আব্বু প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।আমি যাব না।আমি তাহমিদের কাছে যাব।”

“চুপ করো।”

বলেই তিনি প্রিয়শাকে টেনে নিয়ে গেলেন।তাহমিদ অনকে চেষ্টা করল কিন্তু নিজেকে সরাতে পারল না ছেলেদের কাছ থেকে।

…………………………..

সাইদুর রহমান প্রিয়শাকে টেনে নিয়ে আসলেন বাড়ির ভেতর।প্রিয়শা শব্দ করে কান্না করছে।সাইদুর রহমান চেঁচিয়ে বলল,

“চুপ করো মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বলবে না।”

আদিল আর আতিফা বেগম এমন চিৎকার শুনে এসে দেখলেন প্রিয়শা কান্না করছে সাইদুর রহমান রাগে ফুসছে।আতিফা বেগম দৌড়ে মেয়ের কাছে গিয়ে প্রিয়শাকে জড়িয়ে ধরল।প্রিয়শা মা’কে পেয়ে আরো জোরে কান্না শুরু করল।আতিফা বেগম প্রিয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“কি হয়েছে প্রিয়শা মা আমার।”

সাইদুর রহমান চেঁচিয়ে বললেন,

“তোমার মেয়ে পালিয়ে ওই ছেলেকে বিয়ে করেছে তার কত বড় সাহস।”

আদিল বোনের কাছে এসে বলল,

“বুবু তুমি কেন চলে আসলে আব্বুর সাথে।তুমি চলে আসে ভালো করোনি।”

আদিলের কথা শুনে সাইদুর রহমান রাগে চেঁচিয়ে বললেন,

“চুপ করো বেয়াদব ছেলে তুমি তো সব করেছ।তুমি কারেন্ট বন্ধ করে দিছ তখন প্রিয়শা পালিয়েছে।আগে তোমাকে শাস্তি দিতে হবে। তারপর এই মেয়েকে।”

আদিল বোনের দিকে তাকিয়ে বাবার উদ্দেশ্যে বলল,

“যা করার ভুল আমি করেছি আমাকে শাস্তি দাও।আপুকে প্লিজ ভাইয়ার কাছে পাঠিয়ে দাও।আপুর কান্না যে আমার সহ্য হচ্ছে না।”

আদিলের মুখে এমন কথা শুনে সাইদুর রহমান রাগে লাল হলেন তেড়ে এসে আদিলের গালে এক থাপ্পড় দিয়ে বললেন,

“ঠাসসসস।তোমার এত বড় সাহস অন্যায় করেছ আবার আমার মুখের উপর কথা বলতেছ।”

সব মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে যখন সেই সীমা অতিক্রম হয়ে যায় তখন মানুষ আর কারোর পরোয়া করে না।তেমনিভাবে দুই ছেলে-মেয়ের এমন অবস্থা দেখে আতিফা বেগম আর চুপ থাকতে পারলেন না।আতিফা বেগমও সমানতালে চেঁচিয়ে বলল,

“অনেক হয়েছে আর না।তুমি পেয়েছ টা কি।তোমার হাতের পুতুল তুমি যেটা বলবে সেটাই শুনবে।কিন্তু আমরা কোনো পুতুল না।রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমাদেরও ভালোলাগা খারাপ লাগা আছে।তাই অনেক হয়েছে আর না।আমরা কেউ তোমার আর কথা শুনব না।আমাদের যা ভালো মনে হবে তাই করব।”

সাইদুর রহমান অবাক হলেন।যেই আতিফা বিয়ের পর থেকে কোনোদিন তার সাথে উচু গলায় কথা বলেনি।সেই আতিফা আজ তার সাথে রেগে কথা বলছে।তিনি যেন বিশ্বাস করতেই পারছেন না।কিন্তু তিনি দমে যাওয়ার মানুষ না।তিনি তেজের সাথে বললেন,

“বাহ তোমারও দেখছি সাহস বেড়ে গেছে।ভুলে যাচ্ছ আমাকে ছাড়া তোমরা কোন কাজ করতে পারো না।তোমাদের খাওয়া, দাওয়া, খরচ সব আমি বহন করি।”

“আর তোমাকে করতে হবে না।তুমি হয়তো ভুলে গেছ আমার টাকার অভাব নেই।আমি চাইলেই চাকরি করে আমার ছেলে-মেয়েদের খরচ দিতে পারব।আর সবকিছু টাকাতে হয়না ভালোবাসাতেও অনেক কিছু হয়। যেটা তুমি দিতে জানো না।”

আতিফা বেগম থামলেন।লম্বা একটা শ্বাস ফেলে আবার বললেন,

“আজ থেকে তুমি তোমার রাস্তায় আর আমরা আমাদের রাস্তায়।আদিল তাহমিদকে ফোন করে ডাকো তার বউকে যেন এসে নিয়ে যায়।আমিও দেখি কে বাধা দেয়।”

#চলবে……………….