স্বপ্ন জুড়ে তুমি পর্ব-২২+২৩

0
54

#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২২
#সামসুন_নাহার

প্রতিবেশীর এমন কথা শুনে ফাতেমা বেগম রেগে গেলেন।রেগে রাগান্বিত চেহারা নিয়ে প্রতিবেশীর উদ্দেশ্যে গম্ভীরমুখে বললেন,

“নতুন বউ দেখতে আসছেন।বউ দেখবেন নাস্তা খাবেন শেষ। এর বেশি কিছু করা লাগবে না আপনাদের।”

এই কথা শোনার পরেও প্রতিবেশীটি না থেমে আবার বললেন,

“এভাবে বিয়ে করেছে।দেখিও আবার তোমার সংসার না ভেঙ্গে দেয়।এসব মেয়েরা পরিবারের কথা না ভেবে পালিয়ে বিয়ে করে তারা পরিবারের মধ্যে শান্তি রাখতে দেয় না।এইজন্য নিজের পছন্দ মত ছেলের বউ আনতে হয়।কিন্তু ফাতেমা তোমার ভাগ্য দেখেছ।একটা ছেলের বউ নিজের পছন্দের আনতে পারলে না।দুই ছেলেই পালিয়ে বিয়ে করল।”

প্রতিবেশীর এমন কথা শুনে ফাতেমা বেগম আরো রেগে গেলেন।এই প্রতিবেশী নামক মানুষদের সামনে যতই চুপ করে থাকবে তত এরা বেশি হয়।তাই এদের মুখেই সব কথা বলে দিতে হয়।তাই ফাতেমা বেগম কড়াকড়ি ভাবে স্পষ্টভাবে বললেন,

” আমাদের পরিবার আমরা দেখে নিব।আপনাকে আমাদের পরিবার নিয়ে ভাবতে হবে না।আর অন্যের দিকে এক আঙ্গুল তোলার আগে নিজের দিকে চার আঙুল দিয়ে দেখবেন।আপনি তো প্রায় নিজের ছেলের বউয়ের সাথে ঝগড়া করেন।আমি যতদুর জানি আপনি আপনার ছেলের বউ নিজেই পছন্দ করে আনছেন।তাহলে আপনার নিজের পছন্দ করা ছেলের বউয়ের সাথে এত ঝগড়া কেন।আর আমাদের দেখেন।তরী আর আমাকে দেখে কেউ বলতেই পারবে না আমরা শ্বাশুড়ি বৌমা। সবাই বলে আমরা মা-মেয়ে।আর আমার বিশ্বাস আমার এই ছেলের বউও আমার মনের মত হবে।”

ফাতেমা বেগমের মুখে এসব কথা শুনে প্রতিবেশীর মুখ চুপসে গেল।তিনি সবসময় অন্যের বদনাম করে বেড়াতেন আজ তিনি এভাবে সবার সামনে অপমানিত হলেন।নিজের করা কাজের উচিত পরিনাম পেলেন।প্রতিবেশীদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল,

“আরে ফাতেমা তুমি ওর কথা ধরিও না।জানোই তো ও ওইরকম। তোমার ছেলের এই নতুন বউ অনেক সুন্দর।তোমার দুই ছেলের বউ দেখতে অনেক সুন্দর।আমরা বরং আজ আসি।দোয়া করি তোমরা সবাই মিলেমিশে সুখে সংসার করো।”

প্রতিবেশীরা সবাই এক এক করে চলে গেল।সাথে নিয়ে গেল তাদের চুপসে যাওয়া মুখ।প্রতিবেশীরা চলে যেতেই তরী উচ্চস্বরে হাসা শুরু করল।তরী ফাতেমা বেগমের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আম্মু তুমি তো পুরোই ফাটিয়ে দিছো। এদের এভাবে না বললে এরা ঠিক হয়না।তুমি বললে আর সবাই সোজা হয়ে গেল।”

ফাতেমা বেগম তরীকে সরিয়ে বললেন,

“অনেক হাসাহাসি করেছ।বেলা দেখেছ এখনো নাস্তা করা হয়নি।সবাইকে ডাইনিং এ আসতে বলো আমি আসছি একটু রুম থেকে।”

ফাতেমা বেগম চলে যেতেই তরী প্রিয়শার কাছে গিয়ে বলল,

“দেখেছ প্রিয়শা আম্মু কত ভালো।দেখবে তোমাকেও তাড়াতাড়ি মেনে নিবে।একটু অভিমান করে আছে। আসো এখন আমার সাথে।”

………………………………

“মা।বাজার করতে তো ভালোই মজা লাগল।আমি তো এই প্রথমবার বাজারে গেলাম।ভালোই লাগলো আর তুমি যে বাজার করতে জানতে কই আমরা জানতাম না।”

আদিলের কথায় আতিফা বেগম হাসলেন।তিনি আজ ছেলেকে নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন।তাদের জন্য কিছু বাজার করতে। আতিফা বেগম হেসে বললেন,

“আমি আরো অনেক কিছুই জানি শুধু তোরা দেখার সুযোগ পাসনি।তবে এবার থেকে সব দেখবি।এখন যা বস গিয়ে আমি তোর জন্য কিছু বানিয়ে আনি।”

আদিল হাসল মায়ের কথা শুনে।আদিল বই নিয়ে বসল ড্রয়িং রুমে। সেখানে সাইদুর রহমান বসে পেপার পড়ছেন আর সবকিছু পরোখ করছেন।কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছে না।আগে হলে সাইদুর রহমান আতিফা বেগমকে বকতেন এভাবে নিজে ও ছেলেকে বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য।কিন্তু এখন করছেন না।কারন তাদের মধ্যে এখন কোনো কথা হচ্ছে না।

আতিফা বেগম কিছুক্ষণ পর এসে আদিলকে সকালের নাস্তা দিল।এবং আরেকটা নাস্তার প্লেট আদিলের হাতে দিয়ে সাইদুর রহমানকে শুনিয়ে আদিলেকে বলল,

“আদিল তোর আব্বুকে নাস্তা দে।আর তাকে বলে দিস আমাদের নাস্তা আমাদের টাকায় খাচ্ছি।আর তার নাস্তা তার খরচ দিয়ে বানিয়ে দিয়েছি।”

সাইদুর রহমান আদিলের উদ্দেশ্যে বলল,

“আদিল তোর মা’কে বলে দাও।আমি খাব না খাবার। ”

আদিল কিছুই বলল না শুধু দেখে গেল।আতিফা বেগম আর কিছু বললেন না।আতিফা বেগম আর সাইদুর রহমানের সাথে কথা বলেনি এবং আলাদা ঘরে থেকেছে।নাস্তা খাওয়া শেষে আতিফা বেগম আদিলের উদ্দেশ্যে বলল,

“আদিল আমার চিন্তা হচ্ছে প্রিয়শার জন্য।মেয়েটা কেমন আছে আল্লাহ জানে।ওই বাড়ির সবাই প্রিয়শাকে মেনে নিয়েছে কি নেয়নি।বিশেষ করে প্রিয়শার শ্বাশুড়ির জন্য কারন তিনি যেভাবে সেদিন বেড়িয়ে গেলেন।”

আদিল মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“চিন্তা করিও না।আপুকে সবাই মেনে নিবে।”

“চিন্তা কি বাধা মানে।সে তো আসবেই।তুই বরং একটা কাজ কর প্রিয়শার শ্বাশুড়িকে ফোন কর আমি কথা বলব।তোর আব্বু যেভাবে সেদিন তাদের অপমান করল।”

সাইদুর রহমান আর থাকলেন না।নিজের রুমে চলে গেলেন।আদিল কল লাগাল ফাতেমা বেগমের কাছে।

……………………………

“হ্যালো কে বলছেন।”

“হ্যাঁ বেয়াইন।”

আননোন নাম্বার দেখে ফাতেমা বেগম রিসিভ করতেই ফোনের অপাশ থেকে উপরক্ত কথা বলে উঠল।ফাতেমা বেগম বুঝলেন এটা প্রিয়শার আম্মু কারন তরীর আম্মুর নাম্বার সেফ করা আছে।ফাতেমা বেগম মুখ গম্ভীর করে বললেন,

“জ্বি বলেন।কি বলবেন।”

“বেয়াইন কেমন আছেন?”

“যেমন রেখেছেন তেমন আছি।কি বলার জন্য কল করেছেন।”

“আমাদের ক্ষমা করবেন সেদিনের ব্যবহারের জন্য।আমাদের জন্য আমার মেয়েটা কেন কষ্ট ভোগ করবে।সেদিনের জন্য প্রিয়শা কোনোভাবে দায়ী ছিল না।”

“কি বলার জন্য ফোন করেছেন সেটা বলুন আমার কাজ আছে।”

“আমার মেয়েটাকে একটু দেখে রাখবেন।মেয়েটা একটু সুখের আশায় বিয়ে করেছে।”

“হুম বুঝেছি।”

ফাতেমা বেগমের এইরকম গা ছাড়া কথায় আতিফা বেগম ডুকরে কেঁদে উঠলেন।কেঁদে কেঁদে বললেন,

“এভাবে বলিয়েন না।আমি জানি আপনি রেগে আছেন সেইদিনের ব্যবহারের জন্য।কিন্তু সেসবের সাথে প্রিয়শার কোনো কানেকশন নেই।মেয়েটা আমার নিজের ইচ্ছেই কিছুই করতে পারেনি।সব সময় ওর আব্বুর কথা শুনে এসেছে।
প্রিয়শার আব্বু সব সময় নিজেদের ভালো-মন্দ ওদের উপর চাপিয়ে দিত।মেয়েটা এই প্রথমবার নিজের আব্বুর বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছে।এইজন্য প্রিয়শাকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে।আর মেয়েটা কিন্তু খারাপ না।আপনি ওর বাবার কথা মনে করে প্রিয়শাকে কষ্ট দিয়েন না।মেয়েটা আমার অনেক অভিমানী।আপনি তো মা আপনি নিশ্চয় আরেক মায়ের কষ্ট বুঝবেন।”

আতিফা বেগমের এসব কথা শুনে ফাতেমা বেগমের মন একটু হলেও গলল।আসলেই তো প্রিয়শার বাবার কাজের জন্য তিনি প্রিয়শাকে দায়ী ভাবা ঠিক না।একজনের কাজের জন্য আরেকজন কেন ভুক্তভোগী কেন হবে।তিনি তো এমন ছিলেন না তাহলে প্রিয়শার বেলায় এমন কেন করছেন।কিন্তু তিনি এত সহজে প্রিয়শাকে মেনে নিবেন না।ফাতেমা বেগম আতিফা বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন,

“আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আপনার মেয়ে এখানে সুখেই থাকবে।”

“আপনার ভরসায় আছি আমি।আমার মেয়েটা ছোট আছে।কিন্তু ও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে।প্রিয়শা ওর বাবার বিরুদ্ধে এই বিয়ে করেছে নিজের ভালোবাসার জন্য।আমি চাই না প্রিয়শা তার বাবার কাছে হেরে যাক।আমি চাই প্রিয়শার ভালোবাসা জয়ী হোক।”

#চলবে…….

#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২৩ (১৮+ এলার্ট)
#সামসুন_নাহার

“ভাবিপু আম্মু কি রাজি হবে।আম্মু তো প্রিয়শা আপুকে পছন্দই করছে না।যদি আমাদের বকে।”

ফিজার কথায় তরী হেসে বলল,

“ফিজা তুমি আম্মুকে চিনতে পারোনি।আম্মু এইরকম না।দিয়ে দিবে আমি আছি তো রাজি করার জন্য।চলো এখন।”

তরী ও ফিজা গেল ফাতেমা বেগমের রুমে।তারা গিয়ে দেখল ফাতেমা বেগম হাতে বই নিয়ে পড়ছেন।তরী গিয়ে ফাতেমা বেগমকে চা দিয়ে পাশে বসল।ফাতেমা বেগম বই বন্ধ করে তরীর দিকে তাকিয়ে বলল,

“তরী কিছু বলবে।বলার থাকলে বলো।”

“হুম আম্মু।বলছি যে তাহমিদ আর প্রিয়শার তো বিয়ে হয়ে গেছেই ভাবছিলাম আজকে ওদের বাসরের ব্যবস্থা করব।তাহমিদের বউয়ের জন্য যেগুলো গয়না বানানো হয়েছিল।সেগুলো যদি দিতে।”

ফাতেমা বেগম কিছু বললেন না।এটা তো সত্য তাহমিদের সাথে প্রিয়শার বিয়ে হয়েছে।এখন এই বাড়ির বউ প্রিয়শা।তাহমিদের বউয়ের জন্য বানানো গয়নার এখন প্রিয়শার অধিকার। তিনি এখন নিজের কাছে রেখে কি করবেন।যার জিনিস তাকে দিতেই হবে।তিনি নিরবে চাবি এগিয়ে দিলেন তরীর দিকে।তরী আর কিছু না বলে গয়না বের করল।গয়না ফিজার হাতে দিয়ে ফিজাকে বলল,

“বোন তুমি যাও আমি আসছি।”

ফিজা চলে গেল কোনো প্রশ্ন ছাড়ায়।তরী ফাতেমা বেগমের কাছে বলল,

“আম্মু জানি তুমি প্রিয়শার উপর রেখে আছো।আমি জানি ওরা পালিয়ে বিয়ে করেছে দেখে তুমি রাগ করো নাই।তুমি রাগ করেছ কারন প্রিয়শাদের বাসায় তোমাদের অপমানিত হতে হয়েছে বলে।কিন্তু প্রিয়শার বাবার তোমাদের অপমান করেছে।প্রিয়শা তো করেনি।প্রিয়শা অনেক চেষ্টা করেছে পারেনি বোঝাতে নিজের বাবাকে।আমি জানি আম্মু তুমি বুঝবে।আমি আশা রাখি প্রিয়শার বাবার জন্য তুমি প্রিয়শাকে দায়ী করবে না।”

তরী চলে গেল।ফাতেমা বেগম ভাবতে লাগলেন তরীর কথা।আসলেই কি তিনি সাইদুর রহমানের ক্ষোভ প্রিয়শার উপর ফেলছেন না তো।

…………………………

“তোমরা আমার রুমের সামনে কি করছ।আবার একজন না।তিনজন। তোমাদের কি কিছু সমস্যা হয়েছে।”

তাহমিদের এমন কথায় সবাই হাসল।ফিজা,তাহসিন আর তরী তাহমিদের রুমের সামনে গেট ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তাহসিন দুই সারি দাঁত বের করে হেসে বলল,

“নাটক কম কর পিও।আমরা এখানে কেন আছিস তুই জানিস।বউয়ের কাছে যেতে চাইলে টাকা দিয়ে যেতে হবে।”

তাহসিনের কথা শুনে তাহমিদ ভ্রু কুচকে ফেলল।তরীর সেসবে না তাকিয়ে বলল,

“পনেরো হাজার টাকা দাও আর চাবি নিয়ে বউয়ের কাছে যাও।”

তরীর কথা শুনে তাহমিদ অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

“আমি কিছুই শুনতে পাইনি।”

তাহসিন তাহমিদের উদ্দেশ্যে বলল,

“নাটক কম কর।তাড়াতাড়ি টাকা বের কর নাহলে বউয়ের কাছে যাওয়া হবে না তোর।”

“পারব না দিতে টাকা।”

“তাহলে আমরাও চাবি দিতে পারব না।থাক তুই আমরা গেলাম।”

তাহসিন চলে যেতেই ধরতেই তাহমিদ তরীর দিকে তাকিয়ে অনুরোধের সুরে বলল,

“ভাবিপু তুমিও এদের সাথে আছো।আমি কই পাব এত টাকা।তুমি অন্তত বুঝো।”

তরী হেসে বলল,

“তোমাকে বুঝি দেখেই তো কম করে চাইছি।প্রথমে তো ওরা ত্রিশ হাজার চেয়েছিল আমি কম করে পনেরো হাজার রাখলাম। এখন তুমি যদি টাকা না দাও তাহলে আমি কি করতে পারি।”

তাহমিদ নিজের মুখটা অসহায়ের মত ওয়ালেট বের করে বলল,

“দেখো টাকা নাই।আমি কই পাব এত টাকা।”

তাহসিন হাসল।হেসে তাহমিদের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,

“দেখ ভাই কালকে থেকে বউয়ের দেখা পাসনি ভালো করে।তারপর তোদের নতুন বিয়ে।আর কালকে তুই কি করেছিস আমার সাথে।তুই যদি এখন টাকা না দেইস তাহলে আমি কালকের প্রতিশোধ হিসেবে তোকে বউয়ের কাছে যেতে দিব না।কি করবি ভেবে বল।”

তাহসিনের কথা শুনে তাহমিদ শকুনির দৃষ্টিতে তাকিয়ে টাকা বের করে দিল।তা দেখে তাহসিন দাঁত বের করে হাসল।তাহসিন হেসে বলল,

“সবাই চলো আমরা যাই।”

তারপর তাহসিন আবার তাহমিদকে ফিসফিস করে বলল,

“অল দ্যা বেস্ট।”

——————

গোলাপে বিছানো বিছানায় বসে আছে প্রিয়শা।পড়নে আছে তাহমিদের পছন্দ করা প্রিয় রঙ্গের শাড়ি।আর হাতে, গলায়,কানে এই বাড়ির গহনা।চুলে আছে একগুচ্ছ লাল গোলাপ ও কাঠগোলাপের ফুল।দেখতে অনেক মিষ্টি আর সুন্দর দেখাচ্ছে। মাথায় ঘোমটা দিয়ে বিসে আছে।তাহমিদের তার ভালোবাসার মানুষ। তারপরেও প্রিয়শার ভেতর লজ্জা কাজ করছে।দরজা লাগানোর শব্দে প্রিয়শা কেঁপে উঠল। একটু নড়েচড়ে বসেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করল লজ্জায়।

তাহমিদ এসে দরজা লাগিয়ে প্রিয়শার দিকে তাকিয়ে রইল।প্রিয়শার মুখ দেখা যাচ্ছে না ঘোমটার জন্য।তবে তাহমিদ ভেবে নিল প্রিয়শা এখন লজ্জা পাচ্ছে।দেখল প্রিয়শা সামান্য কাঁপছে। প্রিয়শার এমন অবস্থা দেখে তাহমিদ হাসল।তবে এই হাসি তাচ্ছিল্যের হাসি নয় এই হাসি পরম সুখের ভালোলাগার হাসি।তাহমিদ ধীরে ধীরে গিয়ে বসল প্রিয়শার সামনে।

প্রিয়শা সামান্য মুখ উঁচু করে তাহমিদের দিকে তাকাল।তাকিয়ে দেখল তাহমিদও তার দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়শা তড়িৎ গতিতে আবার মাথা নিচু করল।প্রিয়শার এমন কান্ডে প্রিয়শা উচ্চস্বরে হেসে উঠল।তাহমিদের হাসি শুনে প্রিয়শা আরো লজ্জা পেল।কান দিয়ে মনে হচ্ছে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে।

প্রিয়শাকে আরো লজ্জায় কুড়রে দেখে তাহমিদ নিরবে হাসল।এই হাসি দেখলে প্রিয়শা আরো লজ্জা পেত।তাহমিদ ধীরে সন্তপর্ণে প্রিয়শার নরম হাত ধরে মোহময়ী আদুরে কন্ঠে বলল,

“প্রিয়শা তাকাও আমার দিকে তোমার লজ্জা রাঙ্গা মুখখানি দেখি।তোমার লজ্জা পাওয়া মুখ দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।তাকাও আমার দিকে।”

তাহমিদের এমন কথা শুনে প্রিয়শা লজ্জায় আরো মুখ রাঙ্গা হলো। প্রিয়শার নিরবতা দেখে তাহমিদ হেসে আস্তে করে প্রিয়শার ঘোমটা সরিয়ে দিল।ঘোমটা সরিয়ে দিতেই প্রিয়শা চোখ শক্ত করে বন্ধ করল।তাহমিদ হেসে প্রিয়শার কপালে গাঢ় চুমু খেল।প্রিয়শার অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।শরীর দিয়ে শিরশির অনুভব হচ্ছে।কিছুক্ষণ পর তাহমিদ নিজের হাত দারা প্রিয়শার থুতনি ধরে উঠাল।প্রিয়শা নিরবে চোখ খুলল।অনুভব করল ভালোবাসার মুহূর্ত।

তাহমিদ প্রিয়শাকে ফিসফিস করে বলল,

“আমি কি তোমার অপরিচিত যে আমার সামনে লজ্জা পাচ্ছ।লজ্জা পেয়েই কি শেষ করে দিবে।তবে সমস্যা নেই আমি তোমার লজ্জা ভেঙ্গে দিব।”

তাহমিদের এমন কথা শুনে প্রিয়শা লজ্জায় তাহমিদের বুকে মুখ লুকাল।তাহমিদও পরম আবেশে প্রিয়শাকে জড়িয়ে ধরল।কিছুক্ষণ পর তাহমিদ প্রিয়শাকে বলল,

“প্রিয় তোমাকে আমি ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি।অনেক কষ্টের পর আমাদের অপেক্ষারা পূর্ণতা পেয়েছে।পূর্ণতা পেয়েছে আমাদের ভালোবাসা। আমাদের কেউ আর অপূর্ণ রাখতে পারবে না।আজ থেকে তোমার সব কিছু দেখা দায়িত্ব আমার।তোমার কোনোদিন আফসোস রাখতে দিব না।ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখব।তুমি বুঝতেই পারবে না।তুমি অন্য বাড়িতে আছো।এই বাড়ি তোমার নামের মত প্রিয় হয়ে উঠবে।”

প্রিয়শা তাহমিদের দিকে চেয়ে রইল।কি সুন্দর অপরুপ চেহারা।দেখতেই মন চায়।বিশেষ করে তাহমিদের চোখ আর হাসি।তাহমিদ হাসলে বেশি সুন্দর দেখায়।প্রিয়শা মুগ্ধ হলো সেই চোখে আর হাসিতে।প্রিয়শা ফাইয়াজের চোখের কাছে চুমু খেয়ে বলল,

“আমার কিছুই লাগবে না শুধু তুমি আমার কাছে থাকলে।অনেক বাধা পেরিয়ে আজ আমরা এই পর্যন্ত এসছি তুমি আমার পাশে থাকলে আমি সব বাধা পেরুতে পারব।ভালোবাসি আমার স্বুনের পুরুষ। ভালোবাসি অনেক আমার প্রানের স্বামীকে।ভালোবাসি।ভালোবাসি। ভালোবাসি।”

প্রিয়শার উত্তর শুনে তাহমিদ হাসল।মুগ্ধ হলো উত্তর শুনে।তাহমিদ নিজের হাত দ্বারা প্রিয়শার কপাল মুখ স্লাইড করে বলল,

“এত ভালোবাসি আমাকে।

প্রিয়শার অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।যেই অনুভূতির সাথে আগে কখনো পরিচিত হয়নি।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।হৃৎপিণ্ডের লাব-ডাব শব্দের তীব্রতা বেড়েই যাচ্ছে।শিরশির করছে।শরীর মৃদু কাঁপছে।প্রিয়শা ওইরকম অবস্থায় থেকেই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,

” হুম অনেক ভালোবাসি।নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি।”

প্রিয়শার মুখের অভিভঙ্গি দেখে তাহমিদ আরো একবার মুগ্ধ হলো।তাহমিদের চোখ প্রিয়শার পুরো মুখে বিচরণ করছে।হঠাৎ করে তাহমিদের চোখ আটকে গেল প্রিয়শার কম্পনরত ঠোঁটের দিকে।তাহমিদ এক প্রকার ঘোরের মধ্যে আটকে গেল।ঘোরলাগা কন্ঠে প্রিয়শার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁট দ্বারা প্রিয়শার ঠোঁট স্পর্শ করল।খেল কয়েক চুমু।আবার তাহমিদ মোহময় কন্ঠে বলল,

“তাহলে আজকের এই রাতটি আমাকে দিয়ে দাও।ভালোবাসায় ভরিয়ে দিব।”

প্রিয়শা লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল।প্রিয়শার নিরবতা সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরল তাহমিদ।একে অপরের সাথে ভালোবাসাময় রাত কাটিয়ে দিল।

#চলবে…………………
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ)