#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২৮
#সামসুন_নাহার
“তরী আপু আব্বু ও আম্মু কই গেছে।জানো তুমি।দেখছি না ওদের।”
প্রিয়শার কথায় তরী মুখ তুলে বলল,
“তুমি জানো না।”
“না।”
“ফিজা আব্বু-আম্মুকে জোর করে নিয়ে গেছে কেনাকাটা করতে।”
প্রিয়শা অবাক হয়ে বলল,
“ফিজা জোর করল আর ওনারা চলে গেল।”
“হুম।যায় তো।আমি বললেও যেত।ওর শুধু ওর জন্য কিনতে গেছে নাকি।আমাদের সবার জন্য কেনাকাটা করতে গেছে।”
“ওহ।কখন গেছে ওরা।আর আসবে কখন।”
“গেছে তো অনেকক্ষণ আগেইনএসে যাবে হয়তো এখন।”
“ওহ।”
বলেই প্রিয়শা তরীর কাজে হাতে হাত লাগাল।আগেকার প্রিয়শার সাথে এখনকার প্রিয়শার অনেক পরিবর্তন। আগে প্রিয়শা কিছু করতে পারত না।এখন প্রিয়শা অনেক কাজ শিখে গেছে।দায়িত্ব নেওয়া শিখে গেছে। আগে বাড়ির মেয়ে হলেও এখন এই বাড়ির বউ।দায়িত্ব তো নিতেই হবেই।তবে প্রিয়শাকে কাজ করার জন্য জোর করতে হয় না।প্রিয়শা নিজ থেকেই সবকিছু করে।কাজ বলতে শুধু রান্না করা।বাকি কাজ কাজের খালা করে দেয়।
প্রিয়শা ও তরীর কাজ করা শেষ হলে দুই-জা মিলে গল্প করতে লাগল।তখন বাইরে থেকে ফিজা জোরে জোরে ডাকে বলল,
“ভাবিপু, আপু কই তোমরা।আসো তাড়াতাড়ি। আজ অনেক কেনাকাটা করেছি।”
তরী ও প্রিয়শা ড্রয়িং রুমে গেল।গিয়ে দেখল ফিজার চোখেমুখে হাসির ঝিলিক লেপ্টে আছে।দুইজন আসতেছেই ফিজা উচ্ছাসিত কন্ঠে বলল,
“ভাবিপু আজ অনেক মজা করেছি।তোমাকে বললাম চলো আমাদের সাথে।কিন্তু তুমি কাজের কথা বলে থেকে গেলে।”
তরী হেসে বলল,
“আমি যাওয়া আর তুমি যাওয়া এক।”
“এসব হয় না-কি। আচ্ছা বাদ দাও।তোমাদের দেখাই কি কি কিনেছি।জানো তোমাদের দুইজনের জন্য শাড়ি আম্মু আর আব্বু পছন্দ করে আনছে।”
ফিজার কথা শুনে ফাতেমা বেগম বললেন,
“এত কথা বলার কি আছে।যার যা জিনিস দিয়ে দেও।”
ফিজা এক এক করে সব বের করল।তরী ও প্রিয়শাকে একটা শাড়ি দিল।ফিজা প্রিয়শাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আপু কেমন হয়েছে তোমার শাড়ি বলো।পছন্দ হয়েছে তোমার।”
প্রিয়শা নিজের হাতে শাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল।লাল,খয়েরী, সোনালি রঙের মিশ্রনের শাড়ি। দেখতে অনেক সুন্দর। প্রিয়শা মুখে হাসি ফুটে উঠল। হেসে বলল,
“অনেক সুন্দর হয়েছে।আর রঙ টা বেশি সুন্দর হয়েছে।”
“সুন্দর আর পছন্দ তো হবেই।আব্বু আর আম্মু দুইজনে মিলে এই শাড়ি পছন্দ করেছে।”
প্রিয়শার মুখে আবার হাসি ধরা দিল।কিন্তু পরক্ষণেই আবার মন খারাপ হলো।নিজের আব্বুর কথা মনে পরল। সাইদূর রহমান নিজে সবার জন্য পছন্দ করে আনতেন।যেটা পছন্দ লাগল সেটাই কিনে আনতেন।তার আব্বু থাকলেও হয়তো কিনে আনতো এমন শাড়ি।প্রিয়শার খুব করে মনে পরল সাইদুর রহমানের কথা।মন ছটফট করছে আব্বুর সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু সাইদুর রহমানকে কল করলে তিনি রিসিভ করেন না।তখন এক ঝাক বিষাদ জেঁকে ধিরে প্রিয়শার মনে।এসব ভেবে প্রিয়শার মুখে আঁধার ঘনিয়ে আসল।
ফিরোজ ইসলাম প্রিয়শার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন।তিনি কিছুটা সময় ভেবে প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বললেন,
“মন খারাপ কেন।শাড়ি পছন্দ হয়নি।”
প্রিয়শা হেসে বলল,
“অনেক পছন্দ হয়েছে।”
ফিরোজ ইসলাম প্রিয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“তোমার আব্বুর কথা মনে পরছে।আব্বুর কথা মনে করে মন খারাপ করলে কি উনি চলে আসবেন।আসবেন না তো।তাই মন খারাপ করিও না।তাই মন খারাপ করিও না।এখন তোমার সামনে যে আব্বু আছে সেই আব্বুর সামনে সবসময় হাসিখুশি থাকবে।”
প্রিয়শার চোখে পানি জমা হলো।এই পানি দুঃখের পানি না।এই পানিও অতিব সুখের পানি।প্রিয়শা ছলছল চোখে ফিরোজ ইসলামের দিকে তাকালো। তার বিনিময়ে তিনি হাসলেন।এই হাসির মধ্যে অনেক সুখের স্বার্থকতা।সবার মুখে হাসি লেগে আছে।এই খুশির মুহুর্তে ফিজা বলে উঠল,
“হয়ে গেল ভাব।এখন দেখিও আপু আব্বু তোমার সাথেও অনেক ফ্রি হয়ে যাবে।”
প্রিয়শা হাসল।হেসে বলল,
“তোমরা বাইরে থেকে এসছো।তোমাদের জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে আসি।”
প্রিয়শা চলে যাতেই ফিরোজ ইসলাম হাসলেন।তিনি অনেক ভেবে দেখলেন।যেখানে ছেলে প্রিয়শাকে নিয়ে খুশি সেখানে তিনি বা ফাতেমা কেউ অন্য কারোর জন্য প্রিয়শাকে এভাবে দূরে রাখতে পারেন না।তাই তো তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রিয়শাকে মেনে নেওয়ার জন্য।
প্রিয়শা রান্নাঘরে গেল।আজ প্রিয়শার খুশির দিন।প্রিয়শা ভাবতেই পারেনি এত সহজে তার শ্বশুর আব্বু মেনে নিবে তাকে।তরীর কথায় ঠিক হচ্ছে।এই বাড়ির সবাই অনেক ভালো আর বন্ধুত্বপূর্ণ তাই তো এত সহজেই তাকে মেনে নিচ্ছে।
প্রিয়শা রান্নাঘর থেকে পানি নিয়ে এসে দেখল। ড্রয়িং রুমে আরো একটি মেয়ে।মেয়েটাকে আগে কোথাও দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না।দেখতে অনেক সুন্দর।সাদা জামায় যেন আরো সুন্দর দেখাচ্ছে।প্রিয়শার মন খচখচ করছে মেয়েটার পরিচয় জানার জন্য।প্রিয়শা সবাইকে পানি দিয়ে দিল।এতক্ষণ মেয়েটি প্রিয়শার দিকে তাকিয়ে ছিল।চোখে মুখে ছিল এক ব্যাথা-বেদনা রেশ।তবে সেটাকে প্রশয় দিল না।তখন মেয়েটি প্রিয়শার কাছে গিয়ে বলল,
“কেমন আছো প্রিয়শা।কেমন কাটছে তোমার নতুন সংসার।”
মেয়েটির কাছে এমন কথা শুনে প্রিয়শা অবাক হলো।সে মেয়েটির নাম জানেই না।অথচ মেয়েটি তার নাম জানে আর তাকে চিনেও।মনে অনেক কৌতুহল থাকলেও তা প্রকাশ না করে মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,
“ভালো আছি।আর অনেক ভালো যাচ্ছে।”
“ভালো তো থাকবেই।এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ ভালো।বিশেষ করে ফাইয়াজ ভাই।”
মেয়েটির কথা শুনে প্রিয়শা সামান্য হেসে বলল,
“তোমার নাম কি আপু।তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।”
প্রিয়শার কথা শুনে মেয়েটি উচ্চস্বরে হাসতে লাগল।সেই হাসির দিকে বাড়ির সবাই তাকিয়ে আছে।কিন্তু মেয়েটর হাসি দেখে কেউ হাসতে পারল না।কারন মেয়েটির হাসিতে সুখ ছিল না ছিল এক মুঠো দুঃখ কষ্ট।মেয়েটি হাসি থামিয়ে বলল,
“আমিও পাগল।নিজের পরিচয় না দিয়ে তোমার সাথে কথা বলে যাচ্ছি।আমি হচ্ছি আরশি।এটা আমার মামার বাড়ি।চিনেছ আমাকে।”
আরশি নাম শুনতেই প্রিয়শার কায়া নড়ে উঠল। তাহলে এই সে আরশি যার জন্য তাহমিদ ও তার ব্রেকআপ হয়েছিল।সে তো শুনেছে মেয়েটি তাহমিদকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু তাহমিদ রাজি হয়নি।কিন্তু ভাগ্য বা ভালোবাসার জোরে সে পেয়েছে তাহমিদকে।কিন্তু আরশিকে দেখে প্রিয়শার মায়া হলো।মেয়েটা দেখতে কি সুন্দর মিষ্টি। কিন্তু মেয়েটার ভালোবাসা পূর্ণতা পেল না।প্রিয়শা কয়েকদিনের জন্য বুঝেছে ভালোবাসা হারানোর চেয়ে কষ্টের আর কিছুই নেই।প্রিয়শা মিষ্টি হেসে বলল,
“হুম।শুনেছি তোমার কথা। ”
“ফাইয়াজ ভাই বলেছে নিশ্চয় তাই না।তবে তুমি খুব লাকি ফাইয়াজ ভাইয়ের মত একজনকে পেয়েছ।”
প্রিয়শা হাসল আরশির কথা শুনে।আরশি সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল। এই হাসি তো তার হাসার কথা ছিল।আরশি সোফায় একটা শাড়ি দেখে হাতে নিয়ে বলল,
“বাহ!শাড়িটা তো সুন্দর অনেক।আমি এইরকম শাড়ি খুঁজেছিলাম কিন্তু পায়নি।”
তখন ফিজা বলে উঠল,
“এটা তো প্রিয়শা আপুর শাড়ি।আব্বু আম্মু পছন্দ করেছে।”
প্রিয়শার শাড়ি শুনে আরশি মুখে হাসি থেমে গেল।তা দেখে প্রিয়শা হেসে আরশির উদ্দেশ্যে বলল,
“আপু তোমার ভালো লাগলে তুমি নিতে পারো।আমার কোনো সমস্যা নেই।”
প্রিয়শার কথা শুনে আরশি মলিন হাসল।হেসে নিজ মনে বিরবির করে বলল,
“আমার সবথেকে প্রিয় জিনিস তোমাকে দিয়ে দিছি।আর সেখানে সামান্য শখের জিনিস তুমি আমাকে দিতে চাচ্ছ।প্রিয় এর কাছে শখের কোনো মূল্য নেই বুঝেছ।আমি তোমাকে যা দিয়েছি তার মূল্য তুমি কোনোদিন দিতে পারবে না।যা তোমার কাছে হয়তো কষ্টকর। তবে আমার প্রিয় মানুষের সুখের জন্য তোমাকে আমার প্রিয় মানুষকে দিয়ে দিছি।”
আরশির ভাবনার মাঝেই প্রিয়শা বলল,
“আপু কি ভাবছ।তুমি শাড়িটি নিয়ে নাও।”
আরশি মলিন হেসে বলল,
“পাগল তোমার শাড়ি আমি কেন নিব।বরং তোমাকে দিতে হবে।তোমাকে কিছু না দিয়ে কিভাবে নিব তোমার থেকে।”
তরী আরশির উদ্দেশ্যে বলল,
“আরশি বসো তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসি।”
আরশি হেসে বলল,
“না ভাবি নাস্তা খাব না।নাস্তা খেতে আসিনি।যেটার জন্য এসেছি সেটা হলো।সামনের মাসে আমার বিয়ে। তোমাদের দাওয়াত দিতে আসলাম।”
আরশির বিয়ের কথা শুনে সবাই অবাক হলো।অবাকতার রেশ কাটিয়ে ফিজা খুশি হয়ে বলল,
“আপু তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।কই আমরা তো জানতাম না।”
আরশি মলিন হেসে বলল,
“তোমাদের না জানলেও চলবে।তোমরা সবাই সুখে আছো এই অনেক।আমাদের নিয়ে না ভাবলেও চলবে।”
আরশির কথার মর্মার্থ সবাই বুঝল।মেয়েটা যে কষ্টে এসব বলছে।তাই কেউ আর বাড়তি কিছু বলল না।আরশি আবার বলল,
“আমার যার সাথে বিয়ে হবে সে অনেক ভালো।আমাকে বলছে অনেক সুখে রাখবে।আমিও আশা করছি তিনি আমাকে ঠকাবেন না।আমি যাই এখন।অনেক কাজ বাকি আছে।”
আর কাউকে কোনো কিছু কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আরশি চলে গেল।আরশির যাওয়ার দিকে সবাই নিষ্পলক তাকিয়ে রইল।
——————-
রাত বারোটা। নিকষকালো রাত।চারদিকে সবাকিছু শান্ত।সবাই আপন নীড়ে আপন ঠিকানায়। বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে তাহমিদ।অনেক মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে।অফিসের কাজ করছে।অন্যদিকে মন নেই।
আর অন্যদিকে প্রিয়শা ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে।রাগে ফুসফুস করছে আর পায়চারী করছে।নিজের মধ্যে মাঝেমধ্যে কিছু বলে যাচ্ছে।কিন্তু তাহমিদ প্রিয়শার দিকে তাকাচ্ছে না। কিছু বলছেও না।আর সহ্য করতে না পেরে প্রিয়শা তাহমিদের আকর্ষণ নেওয়ার জন্য তার সামনে দাঁড়িয়ে গেল।কিন্তু তারপরও তাহমিদ প্রিয়শার দিকে তাকালো না।প্রিয়শা রাগে গিজগিজ করতে করতে বলল,
“কয়টা বাজে এখন।”
তাহমিদ কাজ করতে করতে বলল,
“বারোটা পাঁচ বাজে।”
তাহমিদের কথা শুনে প্রিয়শা আশ্চর্য হলো।সে কি শুধু সময় জানতে চেয়েছে।রাগ করে উল্টে দিকে ঘুরে চলে যেতে ধরতেই তাহমিদ নিজের কোলের ল্যাপটপ বিছানায় রেখে এক টানে প্রিয়শাকে নিজের কোলে বসিয়ে দিল।প্রিয়শার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দিল।প্রিয়শা কেঁপে উঠল। কিন্তু রেগে বলল,
“এখন আমাকে ধরছ কেন।তোমার ল্যাপটপকে ধরে কাজ করো।ছেড়ে দাও আমাকে।”
তাহমিদ প্রিয়শার কথা শুনে তাহমিদ হেসে প্রিয়শার চুলে কাঁধে গাঢ় করে চুমু খেয়ে বলল,
“ল্যাপটপ কি আর বউয়ের অভাব দূর করতে পারে।তাই তো ল্যাপটপকে রেখে বউকে জড়িয়ে ধরলাম।বউকে আমি অনেক ভালোবাসি।তাই বউকে ছেড়ে কিভাবে থাকা যায়। এমনিতে আজ কাজের জন্য বউকে ভালো করে আদর করতে পারিনি।”
ব্যাস তাহমিদের এইটুকু কথায় যেন প্রিয়শা গলে গেল।এতক্ষণের অভিমান মুছে গেল নিমিষেই। হাসল প্রিয়শা।প্রিয়শা হেসে তাহমিদকে জড়িয়ে ধরল।প্রিয়শা তাহমিদকে আরশির কথা বল্যে চাইল।কিন্তু বলল না যদি তাহমিদের মন খারাপ হয়।তাই প্রিয়শা আরশির কথা বলল না।কিন্তু আজ সারদিনের সব কথা তাহমিদকে বলতে লাগল।তাহমিদ মনোযোগ দিয়ে সবকিছু শুনে বলল,
“সবার কথায় তো বললে শুধু আমার কথা বাদ দিয়ে।আমার কথা বুঝি মনে পরেনি সারাদিনে।প্রিয়শা মজা করে বলল,
” না মনে পরেনি।তোমাকে আজ সারাদিন আজ একবারও মনে পরেনি।”
প্রিয়শার কথা শুনে তাহমিদ প্রিয়শার কাঁধে কামড় দিল।প্রিয়শা ব্যাথা সূচক শব্দ করল।তা দেখে তাহমিদ বলল,
“আমাকে মিথ্যে বলার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।তৈরি হয়ে নাও মিসেস তাহমিদ ফাইয়াজ।”
তাহমিদের কথা শুনে প্রিয়শা হাসা শুরু করল। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল নিষ্পলক। মুগ্ধ হলো অবিরাম। এই হাসি দেখতে চায় সবসময়। এই হাসিতে অনেক শান্তি
#চলবে………………….
#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২৯
#সামসুন_নাহার
একাকিত্ব।একাকিত্ব শুধু শব্দটার সাথে মিলে আছে অনেক কিছু।একাকিত্ব উচ্চারণের মত কাজেও একা।একাকিত্ব শব্দের সাথে মিশে আছে অনেক হাহাকার, কষ্ট, না পাওয়া অনেক কিছু,অদ্ভুত সব চিন্তা ভাবনা আরো অনেক কিছু। যার বর্ণনা দিতে শুরু করলে শেষ হবে না।এই একাকিত্বের অর্থ একেকজনের কাছে অনেকরকম।কারো কাজে ভালো লাগার,আবার কারো কাছে আবার বিষাদের।কেউ একাই ভালো থাকতে চায় আবার কেউ সবাইকে নিয়ে আনন্দ করে বাঁচতে চায়।
আচ্ছা সাইদুর রহমান কোনটা করতে চায়।একা ভালো থাকতে চায় নাকি সবাইকে নিয়ে সুখে বাঁচতে চায়।এই প্রশ্নটা সাইদুর রহমান অনেকবার নিজেকে করেছেন কিন্তু তার উত্তর পাননি।তার মন একসময় বলছে সবাইকে নিয়ে থাকতে আবার কখনো বলেছে একা থাকতে। এসব নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় থাকেন আজকাল।মন মস্তিষ্ক যেন আগের মত কাজ করে না।সবকিছু বলদে গেছে।আগের সাইদুর রহমানের সাথে এখনকার সাইদুর রহমানের অনেক পার্থক্য। আগের সাইদুর রহমান খাবারের মধ্যে অনেক নিয়ম মেনে চলছেন সেই সাইদুর রহমান আজ অনেকদিন হলো বাড়ির খাবার না খেয়ে বাইরের খাবার খাচ্ছেন।একসময় বাইরের খাবারের কথা শুনতেই তিনি রেগে যেতেন।নিজের এইরকম কাজে তিনি নিজেই অবাক হন।মেলাতে চান নিজেকে কিন্তু পারেন না।
আজকাল সাইদুর রহমান লক্ষ্য করছেন তিনি অতিরিক্ত চিন্তা করছেন।যেটা ওনার শরীরের জন্য অনেক খারাপ। তারপরও চিন্তা যে বাধা মানে না।চিন্তা আসেও।সাইদুর রহমান বাসায় থেকে যেন বাড়ির সবকিছু নিবিড়ভাবে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন।আজকাল তার কোনো কাজ ভালো লাগে না।বিরক্ত লাগে সবকিছু। তিনি বাসায় থেকে আতিফা বেগম ও আদিলের কাজ দেখেন।তাদের হাসিমুখ দেখে ভালো লাগে।কিন্তু সেই হাসি মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেন না।কেন পারেন না সেই প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই।
সাইদুর রহমানের সামনে খাবার রাখা আছে।বাইরের খাবার।খেতে ইচ্ছে করছে না।আতিফার হাতের সুস্বাদু খাবার খেতে ইচ্ছে করছে।আজকাল আদিলের সামনেও দাঁড়াতে পারেন না।সাইদুর রহমান দাঁড়িয়ে গেলেন।চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলেন।
এখন আদিল ও আতিফা হাসিমুখে থাকেন কই আগে তো ছিলেন না।তিনি ভাবতে লাগলেন,আতিফা, প্রিয়শা ও আদিল সবাই হাসাহাসি করছে।কিন্তু তাকে দেখামাত্র তারা হাসি থামিয়ে দিল।হাসি থামিয়ে নিজের কাজ করতে লাগল।যেন ওনার সামনে হাসলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।তিনি নিজেকে দোষ দিতে লাগলেন।সাইদুর রহমান বিড়বিড় করে আওড়ালেন,
“তাহলে আমিই কি খারাপ ছিলাম।আমি কি তাদের ভালো করে বুঝতে পারিনি”
ভেতর থেকে উত্তর আসল,”হ্যাঁ তুই সবকিছুর জন্য দায়ী।তুই ছেলে-মেয়ে, বউয়ের ভালো-মন্দের কথা ভাবিস নি।তোর ছোট প্রিয়’র কথা ভাবিস নি।মেরেছিস তাকে।ওদের সুখ তুই দেখতে পারিসনি। দেখ আজকে সবাই ওরা সুখে আছে শুধু তুই ছাড়া। ওরা কেউ তোকে ক্ষমা করতে পারবেন না।”
এইটুকু মাথায় আসতে যা হওয়ার হয়ে গেল।মেঝেতে লুটিয়ে পরল তার শরীরখানি।অন্ধকার রুমে কেউ দেখতে পেল না সাইদুর রহমানের অনুতপ্ত মুখখানি।কেউ জানতেও পারল না সাইদুর রহমান ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট পাচ্ছিলেন।
——————-
মা-বাবা।এই দুটো শব্দের মধ্যে অনেক কিছু মিশ্রিত আছে।বাবা-মা আমাদের যতই কষ্ট দিক না কেন।তারা আমাদের কাছে ভালোবাসার মানুষ থাকে এবং সবসময় থাকবে।
তেমনিভাবে আদিলের মনে সাইদুর রহমানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা আছে।যেটা সাইদুর রহমান কোনোদিন দেখতেও চান নি আর আদিলও দেখায়নি।কিন্তু সাইদুর রহমান যতই আদিলকে বকা দিক না কেন আদিল তার আব্বুকে অনেক ভালোবাসে। এই ভালোবাসার বর্ণনা হবে না।তাই এত কিছুর মধ্যেও আদিল তার আব্বুকে দেখে। একপ্রকার লুকিয়ে দেখে।আদিল বুঝে তার আব্বু ভালো নেই।কেমন যেন মরমরা হয়ে যাচ্ছে।আগের মত তিনি আর নেই।আদিল চায় তার আব্বুর এই খারাপ সময়ে তার আব্বুর পাশে দাঁড়াতে। সব দুঃখ ভাগ করে নিতে।কিন্তু অদৃশ্য এক বেড়াজালে আটকে যায়।
সাইদুর রহমান তাদের সাথে কথা বন্ধ করার পর আদিল রোজ রাতে লুকিয়ে সাইদুর রহমানকে দেখতে আসে।আজকেও দেখতে আসছে।কিন্তু আজকে তার মন খারাপ লাগছে।কতদিন আর এভাবে লুকিয়ে দেখবে।আদিল কিছুক্ষণ পর সাইদুর রহমানের রুমের সামনে এসে দাঁড়াল।কিন্তু আজ কোনো শব্দ পাচ্ছে না আদিল।দরজাটা সামান্য ভিড়ানো অবস্থায়। আচ্ছা আদিল কি দরজাটা খুলে একটু দেখবে তার আব্বু কি করছে।আদিল তার মনের কথা শুনে আদিল আস্তে করে দরজাটা অল্প খুলে দেখল।কিন্তু কোথাও দেখতে পারল না।আরেকটু দরজাটা খুলতেই আদিল দেখল সাইদুর রহমান মেঝেতে পরে আছে।
আদিলের কায়া যেন নড়ে উঠল। এইভাবে মেঝেতে কেন পরে।আদিল এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।আদিল দৌড়ে গিয়ে সাইদুর রহমানের কাছে গিয়ে বসে সাইদুর রহমানকে ডাকতে লাগল,
“আব্বু তোমার কি হয়েছে।তুমি মেঝেতে পরে আছো কেন।তুমি তো মেঝেতে কখনো শুয়ে থাকো না।আব্বু কথা বলো।”
আদিলের এই কথার পরিবর্তে সাইদুর রহমান কিছু বললেন না।বলবেন কিভাবে তিনি তো বলার মত অবস্থায় নেই।আদিল কেঁদে উঠল বাবার এমন অবস্থা দেখে।কেঁদে কেঁদে বলল,
“আব্বু কথা বলো।দেখো আমি কাঁদছি তুমি বকা দিবে না আমাকে।ধমকে বলবে না,এই ছেলে কান্না করার কি আছে।আব্বু শুধু একবার কথা বলো আমি আর কোনোদিনও তোমার কথার অবাধ্য হবো না।আব্বু উঠো।তুমি যা বলবে তাই শুনব।আব্বুও”
আদিল কোনো সারা শব্দ না পেয়ে আর উত্তেজিত হতে লাগল।আতিফা বেগমের উদ্দেশ্যে হাক ছেড়ে বলল,
“মা তাড়াতাড়ি আব্বুর রুমে আসো।দেখো আব্বু আমার সাথে কথা বলছে না।আব্বু আমাকে বকা দিচ্ছে না।মা ও মা।”
ছেলের এমন ডাকে আতিফা বেগম তড়িঘড়ি ঘরে ঘরে আসলেন।এসেই দেখলেন সাইদুর রহমান মেঝেতে শুয়ে আছে আর আদিল তার আব্বুকে গালে মুখে হাত দিয়ে কাঁদছে। এইরকম অবস্থা দেখে আতিফা বেগমের কেঁদে উঠলেন।মনে অজানা ভয় ঝেঁকে ধরল।তিনি আদিলের কাছে গিয়ে আদিলকে ধমক দিয়ে বললেন,
“চুপ কর আদিল।কান্না করতেছিস কেন।জানিস না এসব তোর আব্বু পছন্দ করে না।চুপ কর।উনি শুনলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
তিনি ছেলেকে ধমক দিয়ে নিজেও কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন।কিন্তু এখন যে কান্নার সময় না।এখন নিজেকে শক্ত করতে হবে।তিনি কন্ঠ শক্ত করে বললেন,
“আদিল কান্না বন্ধ করে এম্বুলেন্সকে কল কর।তোর আব্বুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।তিনি বাইরের খাবার খাচ্ছেন তাই হয়তো শরীর খারাপ করছে।বাইরের খাবার যে তিনি খেতে পারেন না।আর প্রিয়শাকেও কল করে জানিয়ে দে।”
#চলবে…………………………