হট চকোলেট পর্ব-০১

0
48

হট_চকোলেট
পর্ব- ১
সুমাইয়া আমান নিতু

১.
রাত দুটোয় বন্ধুর বউয়ের নাম্বার থেকে কল আসায় বেশ অবাক হলো শুভ৷ গতকালই অর্কর বাসায় দাওয়াত ছিল। সেখানেই অর্কর বউ শারিকার সাথে প্রথম আলাপ হয়। বিয়ের দিন দেখা হলেও সেভাবে পরিচয় হয়নি। গতকাল ফোন নাম্বার আদান প্রদানও হয়েছিল। অবশ্য সেটা শারিকা নিজ আগ্রহে করেছিল। কোনো বিপদ হলো না তো? কলটা তৎক্ষনাৎ রিসিভ করল শুভ।

“হ্যালো, শারিকা ভাবি?”

শারিকা খানিক তরল গলায় মৃদু হাসল। ওর গলা সুরেলা। কথা বললে মনে হয় রিনঝিন আওয়াজ হচ্ছে। ওর হাসি শুনে উদ্বেগ কেটে গেল শুভর। শারিকা বলল, “আমি আপনার থেকে কত ছোটো! তবুও ভাবি বলতে হবে? শুধু শারিকা বললে হয় না?”

শুভ অবাকই হলো। গতকাল তো সে ভাবি বলেই সম্বোধন করছিল। তখন তো শারিকা বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেনি। সে খানিক বিরক্তির সুরে বলল, “কী ডাকছি সেটা বড় কথা না, বড় কথা হলো, আপনি আমাকে এত রাতে কেন কল করলেন? আমি ভাবলাম কোনো বিপদ হলো কি না!”

“উহু, কোনো বিপদ হবে কেন? গল্প করতে ফোন করতে পারি না? আপনার বন্ধুর সাথে তো খুব আড্ডা দিতে পারেন। আমি কল করলেই সমস্যা?” ঢলঢলে গলায় কথাগুলো বলল শারিকা।

শুভর কাছে বিষয়টা সুবিধার মনে হচ্ছে না। সে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আমরা মাঝরাতে আড্ডা দেই না।”

“তাই বুঝি? মিথ্যে বললে আমি মানব কেন? আপনারা ইউনিভার্সিটিতে থাকতে সারারাত আড্ডা দিয়ে কাটাননি? মাতাল হয়ে পড়ে থাকেননি? ট্যুরে গিয়ে রাত জেগে আকাশের তারা গোনেননি? সব শুনেছি আমি বুঝলেন?”

“সেটা আলাদা বিষয়। তখনকার ব্যাপারটাই আলাদা ছিল।”

“এখনকার ব্যাপারটাও আলাদা।”

“কিরকম?”

“আমি কিন্তু রাগ করব। আপনি আমার সাথে এমনভাবে কথা বলছেন যেন ফোন রাখতে পারলে বেঁচে যান। আমার কথা ভালো লাগছে না? গতকাল তো খুব প্রশংসা করছিলেন আমার কণ্ঠের।”

শুভ হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, “আচ্ছা বলুন কী বলতে চান? ভালো কথা, অর্ক কোথায়?”

“আপনার বন্ধু তার বাড়িতে। আমি আমার বাপের বাড়ি এসেছি।”

“ওহ। এখন তো তাহলে আপনার অর্কর সাথে কথা বলা উচিত।”

“অর্ক! হাহ! সে এত ক্লান্ত থাকে যে অফিস থেকে ফিরে কোনোরকম খেয়ে বিছানায় যেতে যেতেই ঘুম! রাগ করে বাপের বাড়ি চলে এসেছি জানেন? কত রাত চলে যায় আমার কাছেও আসে না। চেয়েও দেখে না৷ একটু আদরও করে না।”

শুভ ঢোক গিলল। কথাবার্তা বিপজ্জনক দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিংবা ইচ্ছে করে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। সে বলল, “আপনার উচিত অর্কর সাথে সোজাসুজি এ ব্যাপারে কথা বলা।”

“কেন বলব বলুন? সবকিছু মুখ ফুটে বলতে হয়? আমার চোখ দেখে, আমার সাজসজ্জা দেখেও তো বোঝা উচিত আমি কী চাই।”

“ও আসলে সবসময়ই একটু কাজ পাগল। তাই হয়তো খেয়াল করে না। আপনাদের মধ্যে বেশি দূরত্ব হয়ে গেলে….”

“খেয়াল করে না? ও কি অন্ধ? নাকি শরীরের সব সেন্সিটিভ অর্গান নষ্ট হয়ে গেছে? দাঁড়ান… আপনি মেসেঞ্জার চেক করুন।”

শুভ মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখল শারিকা একটা ছবি পাঠিয়েছে। ছবিটা ওপেন করল শুভ। যা দেখল তাতে সে পুরো কয়েক সেকেন্ডের জন্য জমে গেল।

শারিকার নিজের ছবি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোলা। এ ধরনের ছবিগুলোকে বলা হয় মিরর সেলফি। ওর পরনে একটা নাইট ড্রেস। গলাটা বিশাল। বুকের অর্ধেকটা উন্মুক্ত। হাঁটুর অনেকটা ওপরেই ড্রেসটা শেষ হয়ে গেছে। নখে লাল রঙের নেইল পলিশ। এক হাতে ছবি তুলছে। অন্য হাতে একটা হট চকোলেটের গ্লাস ধরে আছে। শারিকাকে ডাকসাইটে সুন্দরী বলা না গেলেও ওর একটা প্রচন্ড আবেদনময়ী শরীর আছে। সেটা এমনিতে দেখে শুধু ধারণা করা যায়, আর এই স্বল্প কাপড়ে দেখে পুরোপুরি উপলব্ধি করা যাচ্ছে!

শারিকার কথার শব্দে সম্বিত ফিরল শুভর। সে যেন একটা ভিন্ন জগত থেকে ফিরে এলো। শারিকা বলছে, “বলুন তো, এরকমভাবে কারো সামনে গেলে তার সাধ্য আছে ফিরিয়ে দেবার? আপনার বন্ধু দেয়। শুধু দেয় না, সে চেয়েই দেখে না। নাক ডেকে ঘুম দেয়। আমার কী ইচ্ছে করে জানেন? নাহ্ থাক আপনাকে আর সেসব বললাম না।”

শুভ কিছু বলতে পারছে না। তার কথা হারিয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে কলটা কেটে দিতে। কিন্তু পারছে না। শারিকা যেন তাকে হিপনোটাইজ করে ফেলেছে। ভয়ঙ্কর এক নেশার জগতে টেনে নিয়ে গেছে তাকে। তার নিজের ওপর কোনো কন্ট্রোল নেই। সে নিজের ঘরের আয়নার দিকে চাইল। কাচে সে স্পষ্ট শারিকাকে দেখতে পেল। ঠিক ছবির মতো বেশভূষায় দাঁড়িয়ে আছে।

২.

পরদিন শুভর কল পেয়ে খুশিই হলো অর্ক।

“কিরে দোস্ত, কী অবস্থা?”

“এইতো। তোর কী খবর বল?”

“খবর আর কী? বাসায় একা একা ভালো লাগে না৷ বউ বাপের বাড়ি গেছে। পনেরো দিন পার না করে আসবে না।”

“আহারে! তুই ফিরেছিস অফিস থেকে?”

“হুম। আমার অফিস তো কাছেই। সাতটার মধ্যে চলে আসি। তাও মনে হয় তোর মতো হলে ভালো হতো। নিজের বিজনেস, যখন খুশি যাব, যখন খুশি আসব।”

“হেহ! এত সহজ না। তুই কি প্রতিদিনই সাতটার মধ্যে আসতে পারিস? কাজের চাপ থাকে না?”

“চাপ যতদূর পারি না নেয়ারই চেষ্টা করি আমি। বাসায় সুন্দরী বউ রেখে কার কাজ করতে ভালো লাগে বল?”

“তাই নাকি? তা সুন্দরী বউকে ঠিকঠাকমতো হ্যান্ডেল করতে পারিস তো? নাকি…”

“ধুর মিয়া। আমি কি সাবেত আলী নাকি যে বিয়ের রাতে বন্ধুদের ফোন করে বলবো নার্ভাস লাগতেছে?”

“সাবেত আলীর কিন্তু এখন তিনটা বাচ্চা। তোর এখনো জিরো।”

“তো? সাবেত আলী বিয়ে করছে বাচ্চার জন্য। আমি ভাই লাইফ এনজয় করার পর বাচ্চার কথা ভাবব।”

“তার মানে ম্যারিড লাইফ ভালোই যাচ্ছে?”

“একদম সেরা।”

“ভাবিকে দেখলে তো মনে হয় তোর থেকে বহুত এডভান্স।”

“তাতে কী? মাঝে মাঝে ওই বলে আজকের মতো ছাড়ো… ”

“বুঝেছি।”

আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন রাখল শুভ। অর্ক মিথ্যে বলেনি। সে কখনো মিথ্যে বলেও না। বহুদিনের বন্ধুত্ব ওদের। শুভর সামনে ইমেজ বজায় রাখতে মিথ্যে বড়াই করার মতো মানুষ অর্ক নয়। তার মানে মিথ্যে বলছিল শারিকা! কিন্তু কেন? ওর উদ্দেশ্যটা কী?

৩.

সেই রাতে শারিকা আবার কল করল। শুভ কল রিসিভ করল না। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর শারিকা কল করা বন্ধ করে দিল।

শুভ কাজ করছিল ল্যাপটপে। ফেসবুক-মেসেঞ্জার খোলাই ছিল৷ তাই শারিকার আজকের পাঠানো ছবিটা ওর চোখে পড়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ওর।

গতকালের মতোই আরেকটা ছবি। আজকের ছবিতে শারিকা শাড়ি পরেছে। শাড়ির সাথে ফুল হাতা ব্লাউজ পরেও যে কোনো মানুষকে এতটা অশ্লীল লাগতে পারে সেটা এই ছবি না দেখলে কখনো বুঝতে পারত না শুভ। শাড়ির আঁচল একপাশে কোনোরকম ফেলে রাখা। হাতদুটো পেছনে ঠেলে শরীরটা মুচড়ে যেন সামনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে শরীরের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ। ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে রেখেছে।

শারিকার এরপরের কলটা ধরল শুভ।

“হ্যালো।”

“বলুন।”

“ছবিটা দেখেছেন?”

“হুম।”

“আমাকে কেমন লাগছে?”

শারিকার গলায় এত আহ্লাদ গলে পড়ছে যে শুভর মনে হলো সে কোনো অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। সে নিজের অজান্তেই উত্তর দিল, “দারুণ!”

তাদের কথা চলতে থাকল ভোর পর্যন্ত। এর মাঝেই শারিকার আবদারে অনলাইনে ওর জন্য একটা শাড়ির পেমেন্ট করে দিল শুভ। মাত্র বাইশ হাজার টাকা।

পরদিন শারিকার কল, আর বিশেষ করে ছবির জন্য যেন অপেক্ষা করে রইল শুভ। বারবার মেসেঞ্জার চেক করতে লাগল। রাত দুটো পেরিয়ে গেলেও কিছু এলো না। দেখতে দেখতে তিনটা বেজে গেল। শুভ ধরেই নিল আজ আর কোনো সাড়া পাওয়া যাবে না। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে শারিকা।

রাত তিনটা দশে শারিকার কল এলো। ভিডিও কল। ভিডিও কল দেখে হাত কাঁপতে লাগল শুভর। কেন যেন মনে হলো এই আগুনে ঝাঁপ দিলে সে আর ফিরতে পারবে না।

চলবে।

নোট : পুরোটা না পড়ে অন্য কোনো গল্পের সাথে মেলানো যাবে না।