#হঠাৎ_প্রণয়
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
চতুর্দশ পর্ব
মামার বাসায় গিয়ে সকলের সাথে কুশল বিনিময় হলো, শুধুমাত্র আমার মামাতো বোন আয়েশা ছাড়া। সে নাকি টিউশনে গেছে। বিকালের নাস্তা সেরে গেস্টরুমে চলে আসলাম।
আসার পর বাসায় কল দেয়া হয়নি, বাবাকে জানানো হলেও আম্মু বা আপুকে কল তো দেইনি। আম্মুর নাম্বারে কল দিলাম,
“হ্যালো, আম্মু?”
“হ্যাঁ, পৌঁছে গেছো? একা একা ভ°য় পেয়েছো?”
“একা কোথায়? সাথে তো…”
বলেই থেমে গেলাম। আম্মু ওপাশ থেকে বলল,
“সাথে কে ছিল?”
থ°তম°ত খেয়ে বললাম,
“পুরো বগিতে অনেক মানুষ ছিল।”
আম্মু হেসে বলল,
“আচ্ছা, তোমার মামানীকে দাও তো।”
“একদম না। তোমরা কথা বলা শুরু করলে চার্জ শেষ হবে আমার ফোনের। মামানীর নাম্বারে কল দাও, আমি পড়বো।”
বলেই কল কে°টে দিলাম।
তারপর কল দিলাম মানহার কাছে। বেচারী নি°র্ঘা°ত আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে।
“হ্যালো, তনুমনু পৌঁছে গেছিস?”
মানহার কথার জবাব না দিয়ে বললাম,
“অয়ন এসেছিল।”
“সত্যি?”
“হুম।”
“কি হয়েছিল? কি হয়েছিল? বল না।”
প্রেমিক এলো আমার আর এক্সাইমেন্ট আমার বেস্টির। ঝা°রি দিয়ে বলি,
“চুপ, ফোনে এসব বলা যাবে না। ঢাকায় এসে বলবো।”
“গেলো আমার ঘুম হা°রা°ম হয়ে।”
“কেন?”
মানহা নিচুস্বরে বলল,
“ট্রেনে দুজন পাশাপাশি সিটে বসে বসে..”
“বসে বসে গান গেয়েছি। ভাগ বিলাই।”
“সে তুমি গান গাও আর নাচো তা তো সব অয়নের জন্যই।”
“দূর, রাখ তো ফা°জি°ল।”
“আরে শোন..”
মানহার কথার মাঝেই কল কে°টে দেই। এই মেয়ের মুখ আমার থেকেও বেশি লাগামহীন। একবার খুললে বন্ধ হতে সময় নেয়।
বই খুলে বসেছি মাত্রই অয়নের কল আসলো। নাম্বারটা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রিসিভ করলাম।
“অয়ন, কোথায় গিয়েছিলে?”
“ওমা, কোনো ভূমিকা ছাড়াই সোজা রচনায় চলে গেলি যে।”
হেয়ালি কথায় রাগ উঠলো।
“অয়ন, কোথায় গিয়েছিলে সেটা বলো।”
“কোথায় যাবো? তোর পিছনেই ছিলাম। মামার সামনে আসলাম না আর কি।”
“ওহ।”
“বাসায় গিয়েছিস?”
“হুম।”
হঠাৎ কিছু মনে হওয়ায় বললাম,
“এখন কোথায় আছো? রাতে কোথায় থাকবে?”
“বন্ধুর সাথে মেসে থাকবো।”
“সমস্যা হবে না?”
“একরাতেরই তো ব্যাপার।”
অয়নের কথায় খারাপ লাগতে শুরু করলো। আমার কথায় এখানে এসে পুরো একটা রাত ও কষ্টেই থাকবে। মেসের পরিবেশ তো আমি জানি, শুধু শুধুই মানুষটাকে কষ্ট দিই আমি।
“তনুশ্রী?”
“জি।”
“কাল তো ফিরে যাবি?”
“হুম, পরীক্ষা দুপুরে আর বাবা রাতের টিকেট কে°টে°ছে।”
“ভার্সিটির বাইরে পেয়ে যাবি আমাকে। এখন পড়তে বস।”
অয়নের কথায় জবাব না দিয়ে প্রসঙ্গ পালটে বললাম,
“আমার জন্য শুধু শুধুই কষ্ট করবে তুমি। তোমার আসাই উচিত হয়নি।”
অয়ন চুপ করে রইলো। আমি আবারো বললাম,
“হাত কে°টে°ছে কিভাবে বলছো না, বাসায় কি হয়েছে বলছো না। এমন কেন করো তুমি?”
“আমি ঠিক আছি তনুশ্রী। তুই পড়ায় ফোকাস কর।”
অয়ন কল কে°টে দিলো। যতই ফোকাস করতে বলুক, আসলে কি মনোযোগ আসে নাকি আসতে পারে?
এমনসময় আমার মামাতো বোন আয়েশা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকলো।
“তন্বী, কেমন আছো?”
চমকে উঠে তাকিয়ে বললাম,
“এইতো আপু, ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো?”
“ভালো।”
আপু এসে আমার পাশে বসে বলল,
“পড়াশুনা কেমন চলছে?”
ব্য°ঙ্গসুরে বললাম,
“পড়াশুনা কেমন যাচ্ছে তা তো পরীক্ষার রেজাল্টই বলছে।”
আয়েশা আপু আমার পিঠ চা°প°ড়ে দিয়ে বলল,
“আরে এসব কোনো ব্যাপারই না। কত পরীক্ষা জীবনে দিবা। ভার্সিটি কি লাইফ সলিড করবে নাকি? আশেপাশে ভালো মানুষ থাকলে আর নিজে ভালো থাকলে জীবন সলিড হবে।”
বুঝলাম আপু আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিছু না বলে মুচকি হাসলাম।
পরদিন দুপুর তিনটায় পরীক্ষা হলো। পরীক্ষা শেষে বের হতে হতে সাড়ে চারটা বেজে গেছে। হলের বাইরে মামা দাঁড়িয়ে আছে।
আমি এসে পাশে দাঁড়াতেই বলল,
“মামুনি, চল আইসক্রিম খাই।”
“ওকে।”
এমন প্রস্তাব ফিরায় কোন বোকায়?
আইসক্রিম খাচ্ছি আর আশেপাশে তাকাচ্ছি। অয়নের ছিটেফোঁটাও নেই। এতো এতো মানুষের মাঝে আমাকে কিভাবে খুঁজে পাবে অয়ন?
কাঁ°টা°পাহাড়ের রাস্তায় মানুষ আর মানুষ। মনে হচ্ছে পুরো দেশের মানুষ এখানে এসে জুটেছে। একটা পাবলিকের সিটের জন্য এতো হৈ-হুল্লোড় করতে হবে কেন বুঝি না আমি। একটা সুবিধা হলো কষ্ট করে আর হাঁটা লাগে না, মানুষের ধা°ক্কায় এমনেই সামনে চলে যাই।
মামা আমার ডান ধরে সোজা হাঁটছে, উনার আরেকহাতে আমার পরীক্ষার ফাইল। হঠাৎ বাহাতে কারো স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে দেখি অয়ন। মাস্ক পড়ে মুখ ঢেকে রেখেছে।
আমি হাসি দিতেই বলল,
“লুকিং কিউট।”
বলে আর থামলো না। দ্রুত পায়ে মানুষের ভীড় কা°টি°য়ে সামনে চলে গেল। কিউট, আমাকে কিউট লাগছে? কিসব বলে সে? পরীক্ষা দিয়ে ঘে°মেনেয়ে একসারা হয়ে থাকা মেয়েটা নাকি কিউট। এতো মানুষের ভীড়ে নি°শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে সেখানে আমাকে তার কিউট লাগছে।
বাসায় এসে নাস্তা সেরেই রেডি হয়ে নিলাম। এরমধ্যে অয়নের ম্যাসেজ আসলো,
“আমি স্টেশনে আছি।”
বের হওয়ার আগে আপুকে কল দিলাম।
“পরীক্ষা কেমন হলো?”
“রাখো তো পরীক্ষা, ও কখনোই ভালো হবে না। অয়ন আমার সাথে এসেছিল, এখন আবার সাথেই যাবো।”
“তো?”
“তো আর কি? আমি খুব খুশি। বাসায় এসে তোমাকে সব বলবো।”
আপু বিরক্ত প্রকাশ করে বলল,
“তোর প্রেমের কাহিনী শুনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। আর শুন, আব্বু তোকে নিতে কমলাপুর যাবে। সাবধানে আসিস।”
“ওকে।”
ফোন রেখে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। মামা আমার সাথে স্টেশন পর্যন্ত আসলো। সিএনজি ভাড়া দেওয়ার সময়টুকুই আশেপাশে দেখার সুযোগ হলো। অয়নকে না দেখলেও আমি শিউর যে অয়ন আছে, আমার কাছাকাছি আছে। সে আর যাই হোক না কেন আমাকে একা ছাড়বে না।
ট্রেনে বসে মামাকে বিদায় জানিয়ে বাসায় যাওয়ার প্রস্তাব দিলাম। মামা সুন্দর করে জানালো,
“তানিমার বিয়ে তো কয়দিন পরই, তখন আসবো ইনশাআল্লাহ।”
অফিসে কাজ থাকায় ট্রেন ছাড়ার আগেই মামা চলে গেলেন। আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি।
অয়ন দ্রুত এসে আমার ব্যাগটা হাতে তুলে নিতে নিতে বলল,
“জলদি চল, ট্রেন ছেড়ে দিবে।”
“কোথায় যাবো?”
“কথা বলার টাইম নেই, চল।”
অয়ন নেমে গেল। আমি অবাকের মগডালে উঠে তাকে অনুসরণ করছি। আজকে বাসায় না গেলে বাবা আবারো তুলকালাম করবে, অয়ন বুঝতে পারছে না এই কথাটা। বেশ কয়েকবার ডাকলেও পেছনে তাকানো ছাড়া আর কিছুই বলল না।
যাক শেষমেশ সে ট্রেনে উঠলো, কিন্তু এতো কেবিন, কেবিনের টিকেট তো নেই তবে এখানে কেন আনলো?
একটা কেবিনে গিয়ে অয়ন ব্যাগ রেখে সিটে বসে পড়লো। আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বললাম,
“অয়ন, টিকেট তো নেই।”
অয়ন তাকাতেই আবার বললাম,
“যদি ভা°গাই দেয়।”
সে হুট করে হাসতে হাসতে বলল,
“ভা°গালে ভা°গবি। এখন বস।”
গিয়ে ওর পাশে বসতে বসতে বললাম,
“চলো না আমাদের ওই ক্লাসেই ফিরে যাই।”
“কোন ক্লাসে যাবি? নার্সারি নাকি কেজি?”
“ব্যা°ড জো°ক।”
অয়ন হাসতে থাকে। আমি মুখ বাঁকিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে চেয়ে রইলাম।
ট্রেন চলতে শুরু করলেই আমি অয়নের হাত ধরে ছটফট করতে করতে বলি,
“অয়ন, অয়ন। মানসম্মান থাকতে থাকতে চলো প্লিজ।”
অয়ন আমাকে ধরে বসিয়ে বলল,
“টিকেট আছে আমার কাছে। পুরো কেবিনের টিকেট আছে।”
“কোথা থেকে আসলো?”
“অনলাইনে বুক করেছি।”
“রাতারাতি?”
আমার মাথায় হালকা করে চা°টি দিয়ে বলল,
“রাতারাতি হবে কেন? যেদিন যাওয়ার অফার করেছিলি, ওইদিন বুক করেছি।”
“এতো টাকা?”
“নো প্রবলেম।”
এবারে মনটা একটু হালকা হলো। সিটে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলাম। পরক্ষণেই লাফিয়ে উঠে বললাম,
“কাল কিভাবে ট্রেনের নাম জানলে?”
আমাকে একহাতে কাছে টে°নে নিয়ে অয়ন বলল,
“তানিমা বলেছে।”
“মানে আপু সব জানে?”
“হুম।”
বলেই আমার মাথায় একটা চুম্বন করলো।
আপু সবটা জানে, তবুও আজ বললো আমার প্রেম কাহিনী নিয়ে তার ইন্টারেস্ট নেই। আমার তো মনে হয় প্রেম আমার আর মিলিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার আপুর। তাকে কেউ এই দায়িত্ব দেয়নি, সে নিজেই নিয়ে নিয়েছে।
হঠাৎ উঠে বসে বললাম,
“অয়ন, বললে না তো বাসায় কি হয়েছিল?”
অয়ন সরে গিয়ে আমার মুখোমুখি থাকা সিটে বসে বাইরে চেয়ে রইলো। আমি এখনো তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। তারপর সে সামনে ঝুঁকে বলল,
“বড় কাকার সাথে আব্বুর অনেক ঝ°গ°ড়া হয়েছে।”
অবাক হয়ে গেলাম। আনোয়ার আংকেল কথাবার্তাই খুব কম বলে আর উনি ঝ°গ°ড়া করেছেন মানে ঘটনা সিরিয়াস।
অয়ন আবারো বলল,
“ছোট কাকা জার্মানি থেকে আসবেন আগামী মাসে৷ ছোট কাকীমা আমাদের বাসায় এসেছে। কাকা এয়ারপোর্ট থেকে সোজা আমাদের বাসায় যাবে। এটা নিয়েই বড় কাকার তুমুল কান্ড।”
“এখানে ঝ°গ°ড়ার কি আছে?”
এমন ছোট একটা বিষয়ে পারিবারিক ঝা°মে°লা কিভাবে হতে পারে বুঝতে পারছি না। এ আবার কেমন মানুষ?
অয়ন সোজা হয়ে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমার বড়কাকা মানুষটা অদ্ভুত। সব কথায় একটা না একটা প্যাঁ°চ ধরবে। উনি ঠিক কি চান তা উনি নিজেও হয়তো জানেন না। মাঝে মাঝে মনে হয় উনি হয়তো পা°গল।”
অয়ন একটু থেমে তারপর জানলা দিয়ে বাইরে ইশারা করে বলল,
“ওই পাহাড়ে বেড়াতে এসেছিলাম আমি। অনেক সুন্দর জায়গা।”
আমি বাইরে তাকালাম। সবুজ মাঠ পেরিয়ে সবুজ পাহাড়, গাছপালা আর ঘাসে ঢেকে থাকা পাহাড়গুলো রাতের অন্ধকারে রহস্যের সাজে মেতেছে।
অয়নের দিকে তাকাতেই দেখি হাতের ব্যা°ন্ডে°জটা খুলছে। গভীর একটা ক্ষ°ত সেখানে। অয়নের পাশে গিয়ে বসে হাতটা ধরে বললাম,
“ডাক্তার দেখাইছো?”
“হুম, সে°লা°ই লাগছে।”
এই কা°টা হাতটা আমার গালে রাখলো অয়ন। ভ°য়ে, ক°ষ্টে কান্না করে দিলাম আমি।
অয়ন হেসে বলল,
“বড় হতে পারলি না এখনো, এইটুকুতেই কেউ কাঁদে নাকি?”
“কি করে হলো এটা?”
“কাচের ভা°ঙ্গা বোতল দিয়ে আব্বুকে মা°রতে এসেছিল বড়কাকা। আমি বাধা দিতে গিয়েছিলাম, আমার হাতে এসে পড়েছে।”
এখনো আশ্চর্য লাগছে আমার। লোকটা কি আসলেও পাগল নাকি যে এমন করেছে?
“অয়ন, এতো ছোট কারণে এমন কেন করলেন উনি?”
“উনি এমনই, সবকিছুকে নিজের মন মতো বানিয়ে ফেলে। ছোটকাকা আমাদের বাসায় আসবে আর উনি বললেন উনার বাসা ঢাকায় তাও ওখানে কেন যাবে না? ছোটকাকাকে ব্লেম করলো আর আব্বুকে বললো আব্বু নাকি ছোটকাকার ব্রেন ওয়াশ করেছে। মূলত উনি চায় না ছোটকাকার সাথে আব্বুর সম্পর্ক ভালো থাকুক। আব্বুকে আগে থেকে হিং°সা করেন উনি।”
“কেন হিং°সা করেন?
অয়ন সোজা হয়ে বসে বলে,
“বাবা সরকারি চাকরি পেয়েছে আর উনি পায়নি। বাবার ব্যবসার উন্নতি হয়েছে আর উনার হয়নি। এসব নিয়েই পা°গ°লা°মি। অনেক আগে থেকেই উনি ছোট বিষয়কে বড় করে সংসারে অ°শা°ন্তি সৃষ্টি করেন।”
অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ঘটনা হয়তো আরো আছে, হিং°সার হয়তো দীর্ঘ কারণ আছে। পুরোটা আমাকে বলা সম্ভব না অথবা বোঝানো হয়তো সম্ভব না।
অয়নের হাতটাতে স্পর্শ করতেই অয়ন আমার হাতে হাত রেখে বলল,
“ভাবিস না এসব নিয়ে। পৃথিবীর সব মানুষ একরকম নয়। কোনো কারণ ছাড়াই কিছু মানুষ উল্টাপাল্টা কাজ করে। ওভার থিংকিং শুধু টিনেজারদের নয় বড়দের ক্ষেত্রেও সমস্যা।”
অয়নের হাতটার দিকে এখনো তাকিয়ে আছি৷ হয়তো হাতটা না°ড়া°চা°ড়া করাই নিষেধ।
ওর কাঁধে মাথা রেখে বললাম,
“হাত না°ড়া°চা°ড়া করতে নি°ষে°ধ করেছে?”
“হুম।”
অয়নের হাতের তালুতে ঠোঁট ছুঁ°ই°য়ে দিলাম। অয়ন হেসে অন্যহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমার চোখ ব°ন্ধ হয়ে আসলো। কালকের পুরো জার্নি, আজকের এক্সাম আর এখন আবার ঢাকা যাওয়া৷ সবটা মিলিয়ে আমার মস্তিষ্ক চি°ন্তাশূন্য হয়ে আছে, অনেক ক্লান্ত আমি।
চলবে………
#হঠাৎ_প্রণয়
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
পঞ্চদশ পর্ব
ঘুম ভা°ঙতেই অনুভব করলাম আমি শুয়ে আছি৷ নড়েচড়ে উঠতে নিলে অয়ন আমাকে ধরে বলল,
“পড়ে যাবি তো।”
মাথা তুলে দেখি সিটে শুয়ে অয়নের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি। উঠতে নিলে অয়ন বলল,
“বাসা এখনো অনেক দূরে, নিশ্চিন্তে ঘুমা।”
ঘুম চোখে নাকিসুরে বললাম,
“কোথায় আছি?”
“কুমিল্লার কাছাকাছি।”
“ওহ।”
আবারো শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ মনে হলো বাসা থেকে কেউ কল দিলো না। লাফিয়ে উঠে বসে বললাম,
“আমার ফোন কোথায়?”
অয়ন ঠোঁট উলটে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে জানে না। ব্যাগ ঘে°টেঘু°টে ফোন বের করে দেখি আপুর নাম্বার থেকে ছয়টা মিসড কল দেখাচ্ছে।
অয়নের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“কল রিসিভ করো নাই কেন?”
“আমি অন্য মানুষের ফোনে হাত দিই না। আর তাছাড়া তানিমা আমাকে কল দিয়েছিল, কথা বলেছি।”
“বাবা কল দিয়েছিল?”
“না, তানিমা ম্যানেজ করে নিয়েছে।”
“যাক, বাঁচলাম।”
হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। ফোনটা ব্যাগে রেখে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। মুখে পানি দিতেই ঘুম অনেকটা কে°টে গেল। আবারো এসে আগের জায়গায় বসে জানলা খুলে দিলাম।
অয়ন জানলা বন্ধ করে বলল,
“রাতে এভাবে জানলা খুলতে হয় না।”
“খুললে কি হবে?”
“শি°ম্পা°ঞ্জি এসে তোকে খ°পা°ত করে ধরবে।”
বলেই আমার মুখের সামনে এসে হাত নাড়ালো। আমি চমকে উঠে হাসলাম।
অয়ন হেসে একটা প্যাকেট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“খেয়ে নে।”
প্যাকেট খুলে বিরিয়ানি দেখে রেগে বললাম,
“রাতে কেউ বিরিয়ানি খায়? আমার ওজন বেড়ে গেলে কি হবে?”
অয়ন আপন মনে নিজের ভাগ পেটে ঠু°স°তে আছে। যেন আমার কথা তার কানেই যায়নি। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ অয়ন হেসে বলল,
“তোর ওজন এমনিতেই অনেক বেশি, এ খেলেও কমবে না আর না খেলেও কমবে না। সো ওজন টজন কমানো ছেড়ে খেয়ে নে।”
আমি রেগে তাকিয়েই আছি। অয়ন চামচ দিয়ে একভাগ আমার মুখের কাছে ধরে বলল,
“রেগে কোনো লাভ নাই, আমার মুখ দিয়ে এসব কথা বহুত বের হবে।”
“যেমন মানুষ তার তেমন মুখ।”
বলে খাবার খেতে লাগলাম আর অয়ন আমাকে খাইয়ে দিলো।
খাওয়া শেষে অয়ন ফোন দেখতে দেখতে বলল,
“তানিমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো, তাও ইত্তাজা ভাইয়ার খালাতো ভাইয়ের সাথে। রুম্মান ভাইকে কেমন লাগলো তানিমার?”
“ভালোই লাগলো মনে হলো।”
“তানিমা বলেনি কিছু?”
“উহু, তেমন কিছু বলেনি।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ করে বলে উঠলাম,
“ইত্তাজা ভাইয়া তোমার চাচাতো ভাই?”
“হুম, বড়চাচার ছেলে।”
“তোমার ওই পা°গ°লা বড়চাচার?”
বলেই মুখে হাত দিলাম, আবার মাথা নেড়ে না বুঝালাম।
অয়ন হো হো করে হেসে বলল,
“সামনে গিয়ে বলিস, মা°ই°র খাবি।”
“আচ্ছা, দেখা যাবে।”
অয়নের ফোনে একটা গান বেজে উঠলো,
“অপূর্ণা নও তুমি,
তুমিই সম্পূর্ণা,
রূপসী বলি না তোমায়
ওগো মায়ায় পরিপূর্ণা।
স্বপ্নে তুমি, বাস্তবে তুমি
তুমিই আছো মনে,
পৃথিবী যাক জেনে
আমি পড়েছি প্রেমে।
পৃথিবী যাক জেনে
আমি পড়েছি প্রেমে।
একলা রাত জাগি আমি
তুমি থাকো অনুভবে,
লাল বেনারসিতে সেজে
তুমি কাছে আসবে।
আমি বারবার হারাবো
তোমার দুইনয়নে,
পৃথিবী যাক জেনে
আমি পড়েছি প্রেমে।
পৃথিবী যাক জেনে
আমি পড়েছি প্রেমে।”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
“কার গান এটা?”
“ইত্তাজা গাইছে, ও নিজেই লিখেছে।”
“ওয়াও, টেলেন্টেড। না না, মাল্টিটেলেন্টেড।”
অয়ন হাসলো।
আমি ব্যাগ থেকে কসমেটিকস বের করে সামনের টেবিলে রেখে বললাম,
“আমি এখন মেকআপ করবো, কথা বলো না।”
অয়ন গালে হাত দিয়ে বসে বলল,
“এই শুরু হইছে আলগা ঢং।”
“কিসের আলগা ঢং? আমি মেকআপ করবো, তারপর আমার ছবি তুলে দিবা।”
সে ভ্রূ উঁচিয়ে বলল,
“যো হুকুম মেরি রাণী।”
আমি মেকআপ শুরু করার আগেই অয়ন সবকিছু নিজের কাছে নিয়ে বলল,
“চোখ বন্ধ করে বসে থাক, আমি সাজিয়ে দিচ্ছি।”
প্র°তি°বা°দ করলাম না। সে নিজে আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। কি কি দিচ্ছে জানি না, জানতেও চাই না। শুধু জানি অয়ন সাজাচ্ছে আমাকে। অয়নের ফোনে এখনো বেজে যাচ্ছে ওই গান “পৃথিবী যাক জেনে, আমি পড়েছি প্রেমে।”
মেকআপ শেষে আমার গালে আঙ্গুল দিয়ে খোঁ°চা দিলো। আমি বললাম,
“কি হলো?”
“আপনার সাজুনি শেষ।”
“আয়না দাও, আমি দেখবো। খারাপ হলে খবর আছে।”
“আর ভালো হলে?”
একটু ভেবে বললাম,
“ভালো হলে জানি না। তুমি যা বলবে তাই।”
অয়ন আয়না এগিয়ে দিলো, আমি নিজেকে দেখছি। একটা ছেলে এতো সুন্দর করে কিভাবে সাজাতে পারে?
ওকে রাগানোর জন্য বললাম,
“পার্লারে কাজ করতে নাকি?”
আমার কথায় সে রাগলো না বরং হেসে বলল,
“আরে না, অথৈকে সাজানো লাগতো তো। তাই অনেক কিছুই শিখে গেছি।”
“কি জানি আর কাকে কাকে কোথায় সাজাইছো?”
“মানে?”
চোখ কুঁচকে গেল তার।
আমি হেসে বললাম,
“মানে হলো তুমি বলেছিলে তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিল।”
“ওদেরকে আমার সাজানো লাগবে না, ওরা নিজেরাই বহুত পন্ডিত ছিল।”
ভ্রু উঁচিয়ে ব্যঙ্গসুরে বললাম,
“ওওওওওওওওরা?”
অয়ন হেসে উঠে মাথা নাড়ালো, সাথে নড়ে উঠলো ওর ঘন চুলগুলো। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম আমি। এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি অ°ন্ধ হয়ে যাবো, পাগল হয়ে যাবো আমি।
অয়ন হাসি থামিয়ে তাড়া দিয়ে বলল,
“ছবি না তুলবি? রেডি হ।”
ছবি তোলা আর খুনশুটিতেই চলে আসলাম এয়ারপোর্টের কাছাকাছি। এই খুনশুটির সময়গুলো লেখার ভাষায় ফুটিয়ে তোলা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়, তবে জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু মুহূর্ত রয়ে গেলো ওই ট্রেনের কেবিনে।
বেশ অনেকটা সময় পেড়িয়ে গেল। ঘড়ি জানান দিচ্ছে এখন রাতের শেষ প্রহর চলছে। আমি ক্লান্ত হয়ে বসে আছি। প্রায় সারারাত জেগে থাকার কারণে এখন ঘুমে চোখ খুলে রাখাই দু°ষ্ক°র।
অয়ন সবকিছু গুছিয়ে নিতে নিতে বলল,
“সব ঠিক আছে কিনা দেখে নে।”
“হুম, ঠিক আছে।”
“আরে, একটু দেখে নিলে কি হয়?”
রেগে গিয়ে বললাম,
“পারবো না আমি। ভালো লাগছে না।”
“আচ্ছা, লাগবে না।”
ট্রেন বোধহয় কমলাপুরের কাছাকাছি চলে আসলো। অয়ন আমাকে বলল,
“এখন কি বাসায় যাবি নাকি এখানেই থাকবি?”
বাইরে তাকালাম। বাইরটা অন্ধকার, তার অর্থ এখনো কমলাপুর আসিনি। অয়নের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“চলন্ত ট্রেন থেকে লা°ফা°বে নাকি?”
“হ্যাঁ, আয়। তোকে নিয়েই লা°ফা°বো।”
বলেই অয়ন দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। অ°গ°ত্যা আমিও বেরিয়ে আসলাম, চুপচাপ অয়নের পিছুপিছু চলছি। ট্রেন থামলো, অয়ন আমাকে নামিয়ে দিয়ে নিজে ভীড়ের মধ্যে যেন হারিয়ে গেল।
আমিও ভীড়ের মধ্যে বেশ বেকায়দায় পড়লাম। এমনসময় কোথা থেকে যেন বাবা এসে আমার হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে গেল। একটু দূরে অয়নকে দেখলাম হাত নেড়ে বিদায় জানাতে।
বাবা আমাকে বললেন,
“ভীড়ের মধ্যে এভাবে ঘুরতেছিলা কেন?”
“সরি।”
“আচ্ছা, বাসায় চলো। এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে।”
হাঁটতে হাঁটতে বললাম,
“রাত না বলে ভোর বলাই তো ভালো।”
বাবা হেসে দিলো। তারপর বলল,
“তোমাকে দূরে পাঠাতে পারবো না। আমি ভেবেছিলাম আমি সাথে থাকবো তাই রাতের টিকেট নিয়েছিলাম। একা আসছো, আমার যে কি অবস্থা হয়েছিল চিন্তায় তা তো কেবল আল্লাহই জানে।”
সিএনজি করে বাসায় আসলাম। পুরা রাস্তা বাবার কাঁধে মাথা রেখে ঝিমাতে ঝিমাতে আসলাম। বাসায় এসে আপু আর আম্মু কি কি বলছে কিছুই বোধহয় আর কানে ঢুকছে না।
ফ্রেশ হয়ে কোনোমতে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। এরমধ্যেই আম্মু এসে জোর করে খাবার খাইয়ে দিলো, কি খেলাম জানি না। এমন ঘুম চোখে কেউ বি°ষ খাওয়ালেও টের পাবো বলে মনে হয় না।
আপুর ডাকে ঘুম ভা°ঙলো। চোখ খুলে ঘড়িতে দেখি দুপুর সাড়ে বারোটা। লাফিয়ে উঠে বললাম,
“পুরো দিন আমি ঘুমিয়েছি?”
“এক্কেরে ম°রা তে°লা°পোকার মতো ঘুমাইছোস।”
পাশবালিশটা টেনে শুয়ে পড়তেই আপু ধ°মক দিয়ে বলল,
“গোসল করে আয়। এতো ঘুমাতে হবে না।”
চোখ কচলে কচলে ওয়াশরুমে গেলাম। ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগাতে লাগাতে বললাম,
“অয়ন কল দিয়েছিল?”
“হুম।”
“কি বলছে?”
“বলছে তোরে বেঁ°ধে ছাদ থেকে ফে°লে দিতে৷”
“মোটেও না।”
আপু ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বেশ সিরিয়াসভাবে বলল,
“তোর মনে হচ্ছে না তুই অয়ন ভাইয়ের উপর বেশি অধিকার খাটাচ্ছিস?”
আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
“তোমার এমনটা কেন মনে হলো?”
“এই যে তুই বলেছিলি বাবার সাথে প্র°তা°র°ণা করবি না, অথচ অয়ন ভাইয়ের সাথে চট্টগ্রাম গেলি? তোর কি মনে হচ্ছে না তুই ভুল করছিস?”
চুপচাপ তাকিয়ে আছি আপুর দিকে। আপু আবারো বলল,
“এভাবে চেয়ে থেকে লাভ নেই তো। অয়ন ভাইয়ের অন্য কাজও থাকতে পারতো, তুই অতিরিক্ত অধিকার দেখাচ্ছিস।”
“ভালো করেছি।”
বলেই শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।
গোসল, দুপুরের খাবার শেষ করলাম। এর মধ্যে আপুর সাথে আর কোনো কথাই বললাম না, শুধু আপু না আম্মুর সাথেও কথা বলিনি আমি।
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই অয়নের কল আসলো। রিসিভ করলাম,
“তনুশ্রী, কেমন আছিস?”
“ভালো।”
“ঘুম ভালো হয়েছে?”
“দেখো আমার ঘুম নিয়ে হাসবে না।”
অয়ন হেসে দিলো, বেশ শব্দ করেই হাসলো। না করেছি বলে বোধহয় আরো বেশি হাসলো।
“ট্রেনে যে ঘুমটাই ঘুমিয়েছিস, তারপর সাজগোজ করেছিস। মানে এতো ঢং কেউ কেমনে করে?”
“আমি ঢং করি?”
“আ°ল°বা°ত করিস। (একটু থেমে) তো কালকের সাজ কেমন হয়েছিল?”
“বলবো না।”
“ছবিগুলো হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েছি, দেখে নিস। আর আমি জানি সাজটা ভালো হয়েছে, তাই আমি যা বলবো তাই হবে। রেডি?”
চমকে উঠে হুড়মুড় করে বললাম,
“কি হবে?”
“চ্যাঞ্জ ইয়োর ডা°র্টি মাইন্ড তনুশ্রী। ভেরি ব্যাড।”
রেগে ধমক দিয়ে বললাম,
“কিসের ডা°র্টি মাইন্ড? কি হবে তাই বলো।”
“হুম, তোলা রইলো এটা। সময়মতো আমি চেয়ে নিবো।”
“ঠিক আছে, তবে একবারই কিন্তু সুযোগ পাবে।”
“যাক, সুযোগ পাবো এটাই অনেক।”
আম্মুকে এদিকে আসতে দেখে তাড়াহুড়ো করে বললাম,
“রাখছি এখন আম্মু আসছে।”
আম্মু এসে আমার পাশে বসে বলল,
“আবারো ঘুমাবে নাকি?”
“না, আম্মু।”
“ভর্তি নিয়ে কিছু ভেবেছো?”
“হুম, সাত কলেজের রেজাল্ট দিয়েছে। ইডেনে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে।”
“আচ্ছা, ভর্তি হও।”
আম্মু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“তানিমার বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। এইতো মাঝে মাত্র দুমাস। প্রস্তুতি তো নিতে হবে।”
“দুই মাসের একটু বেশি।”
“যাইহোক, আমার সাথে সাথে থেকো, মেয়ের বিয়ে তো সহজ কথা না।”
মেয়ের বিয়ে সহজ কথা না কেন? কারণটা জানা হলো না আমার। আম্মু কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে গেল। আমি ঝি°ম মেরে খাটে বসে আছি।
আপুর বিয়ে নিয়ে আমারও ইন্টারেস্ট কম না। তবে বাড়িভর্তি লোক সামলানো বিশাল ব্যাপার, এতো লোকের মাঝে কিভাবে থাকবো আমি? ভাবতেই গায়ে কা°টা দিয়ে উঠলো।
তবে রাত পর্যন্ত আপুর সাথে কোনো কথা হলো না আমার। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার ডেকে গিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে পড়লো সে।
বারান্দায় এসে কানে এয়ারফোন গুজে বসলাম আমি। দুবার কল করলাম অয়নকে, তৃতীয় বারে রিসিভ করলো৷
“অয়ন, কি করছো?”
“বই পড়ছি।”
“কি বই?”
“জসিমউদ্দিনের নক্সী কাঁথার মাঠ।”
“আমাকে শুনাবে?”
একবারেই অয়ন রাজি হয়ে গেল। অয়ন পড়ছে আর আমি শুনছি সাজু আর রুপাইয়ের কাহিনী। রাতের প্রহর পেরিয়ে ভোরের আভা ফুটে উঠলো। অয়ন শুধু পড়ছে না, সে আবার আমাকে বুঝাচ্ছে। যেন এখনো আমার পাক্কা টিচার সে।
ফোন লাইনে রইলো, আমার কানে এয়ারফোন রইলো, কিন্তু আমি ঘুমিয়ে গেলাম। হয়তো অয়ন আমাকে ডেকেছে, ঘুমের ঘোরে শুনেছি কিনা কে জানে।
স্বপ্নে দেখলাম আমরাও আলাদা হয়ে যাচ্ছি। সাজু আর রুপাইয়ের মতো আমাদের ভালোবাসাও পূর্ণতা পায়নি। অস্তমান সূর্যের মতো আমরা একে অপরের জীবন থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছি। যত কাছে আসতে চাচ্ছি ততই দূরে চলে যাচ্ছি। তারপরই রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকারের চাদরে ঢাকা পড়ে গেল চারপাশ, যেন সাজুর ক°ব°রে এখন আমি আছি।
চলবে……