#হঠাৎ_বর্ষনের_রাতে💖
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💖
— পর্বঃ১৪
“নির্জন রাতের নির্জন রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি করে বাড়ি ফিরছে অর্নব আর ইরা!’কুটকুটে নীরবতা বিরাজ করছে দুজনের মধ্যে!’যদিও অর্নব তাকিয়ে আছে ইরার দিকে আর ইরা তার ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে মাথা নিচু করেই অর্নবের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে!’কোনো কথাই বলছে না সে!’কিছুক্ষনের মধ্যেই অর্নবের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে চুপচাপ উল্টোদিক মুখ করে তাকিয়ে রইলো বাহিরের দিকে!’তার এখনো কানে বাজছে অর্নবের বলা কথাঃ
—“বিকজ আই লাভ ইউ,আমি তোমায় ভালোবাসি ইরা আর আমার ভালোবাসার ওপর কেউ নজর দিবে তাতে আমার রাগ হবে না….
“ইরার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না অর্নব তাকে কি বললো!’যদিও অর্নব অত্যাধিক হারে নেশা করেছে!’কিন্তু ইরা যতদূর জানে ড্রিংক করলে মানুষ সত্যি কথা বলে,কিন্তু এই মুহূর্তে ইরা সত্যি শকটের মধ্যে আছে!’ইরার মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু মুখ দিয়ে যেন কথাই বের হচ্ছে না তাঁর!’….
“পাক্কা ১৫ মিনিট অস্থিরতা নিয়ে কাটানোর পর ইরা ভাবলো এখন কিছু বলবে সে!’ইরা জোরে শ্বাস ফেলে পাশ ফিরে বললোঃ
—“স্যার….
“আর কিছু বলার আগে নিজের কাঁধে অর্নবের মাথা দেখতে পেয়ে আরো হতাশ ইরা!’নিজের ভাবনায় এতটাই মগ্ন ছিল সে,কখন যে অর্নব তার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারে নি ইরা!’অর্নবের ঘুমন্ত মুখ দেখে আর কিছু বলতে পারলো না ইরা!’রাতের জোৎসা ভরা আলো এসে গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি মারছে ইরা আর অর্নবের দিকে!’অর্নবের কপালে লেপ্টে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো বাতাসে উড়ছে একটু,ইরা বেশি কিছু না ভেবে মুচকি হেঁসে সরিয়ে দিলো অর্নবের কপাল থেকে চুলগুলো!’যদিও সেগুলো সরালেও আবার এসে পড়ছে অর্নবের কপালে!’ইরার বেশ লাগছে,এমনটা নয় ইরা পছন্দ করে না অর্নবকে কিন্তু সে ভাবে নি অর্নবও তাকে পছন্দ করবে!’
—“আচ্ছা এমনটাও তো হতে পারে কাল সকালেই অর্নব স্যার সব ভুলে যাবে..
“আনমনেই কথাটা ভেবে জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো ইরা!’আজও সেদিন রাতের মতো চাঁদটা চলছে তাদের সাথে সাথে!’মাথার ভিতর হাজারো কল্পনা জল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইরা,আর আরেকজন ইরার কাঁধে মাথা দিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে….
____
“পরেরদিন,,
“আনমনেই হেঁটে অফিসের ভিতর ঢুকলো ইরা!’কাল রাতের কাহিনি এখনও তার মাথা থেকে বের হয় নি,সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের ডেস্কের দিকে ইরা যাবে এমন সময় তার হাত ধরে টেনে অন্যদিকে নিয়ে গেল কেউ!’আচমকা এমনটা হওয়াতে প্রচন্ড ঘাবড়ে যায় ইরা চোখ বড় বড় করে সামনে তাকাতেই জেরিনকে দেখে নিজেকে শান্ত করে বললো সেঃ
—“তুই…
“ইরার কথা শুনে জেরিন কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী কন্ঠে বললোঃ
—“হুম আমি,কি করে পারলি তুই ওতরাতে আমাকে পার্টিতে একা রেখে চলে যেতে…?’
“এতক্ষণ পর যেন ইরার মনে পড়লো জেরিনের কথা!’এই কথাটা তার মাথায় একবারও আসে নি!’সে তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিল৷ কাল রাতের পার্টি আর জেরিনের কথা!’এবার বুঝলো ইরা জেরিন কেন তার সাথে রেগে কথা বলছে!’ইরা জেরিনের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট লুকিং এ তাকিয়ে বললোঃ
—“আই এক্সট্রিমলি সরি দোস্ত আসলে কালকে…
—“হইছে তোকে আর কিছু বলতে হবে না এমনিতেও তুই কালকে চলে গেছিস একদিক থেকে ভালোই হয়েছিল…
“বলেই হেঁসে উঠল জেরিন!’জেরিনের কথা শুনে কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বললো ইরাঃ
—“কেন….
—“জানিস কাল রাতে কি হয়েছিল?’
—“কি…
—“তবে শোন কাল রাতে….
|| ফ্লাসবেক ||
“ইরা চলে যাওয়ায় জেরিন নিরাশ হয়ে যখন বলে
“ইরা আমায় রেখেই চলে গেল”তখন পিছন থেকে আসফি জেরিনের কথা শুনে বললোঃ
—“একটা কথা বলি…
“আসফির কথা শুনে জেরিন মন খারাপ করে বললোঃ
—“হুম বলুন স্যার…
—“মন খারাপ করো না তুমি চাইলে আমি তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেই…
“আসফির কথা শুনে জেরিনের মনে তো লাড্ডু ফুটলো!’অটোমেটিক ঠোঁটে হাসি আসতে নিলো তার কিন্তু এই মুহূর্তে হাসা যাবে না ভেবেই জেরিন নিরাশ হয়ে বললোঃ
—“আপনি দিবেন কিন্তু…
—“আবার কিন্তু কিসের এমনিতেও রাত কম হয় নি আর তুমি একা একটা মেয়ে,চল আমি তোমায় পৌঁছে দেই…
—“আচ্ছা আপনি এত করে যখন বলছেন তাহলে চলুন..
“বলেই যেতে নেয় আসফি আর জেরিন!’হঠাৎই আসফি বলে উঠলঃ
—“এক মিনিট তুমি কি কিছু খেয়েছো…
“আসফির কথা শুনে জেরিন যেতে নিয়েও থেমে যায় তারপর বলেঃ
—“না মানে খাই নি তারপরও ডোন্ট ওয়ারি বাড়ি গিয়ে খেয়ে নিবো…
—“এটা কেমন কথা পার্টিতে এসেছো আর না খেয়ে যাবে চল আমার সাথে…
“বলেই জেরিনের হাত ধরে নিয়ে যায় আসফি!’আসফির কাজে তো আরো খুশি জেরিন!’মনে মনে কয়েকশো বার থ্যাংক ইউ বললো সে ইরাকে!’তারপর আর কি জেরিনকে খাইয়ে গাড়ি করে জেরিনের বাসা অবদি পৌঁছে দিল আসফি!’সারা রাস্তায় টুকিটাকি গল্প করেছে তাঁরা!’আর তার থেকেও বড় ব্যাপার বাড়ি পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে আসফির নাম্বারটাও নিয়েছে জেরিন…
“সবমিলিয়ে ভালো কেটেছে তার কাল রাতে!’
|| ফ্লাসবেক ওভার ||
“পুরো কথাটা গুলো বলতে বলতে গালে হাত দিয়ে ধ্যানে পড়ে গেছে জেরিন!’জেরিনের কাজে ইরা তো চরম অবাক!’বাবা মাইয়া তো পুরাই চালাক, চালাকি কইরা আসফির নাম্বারও নিয়ে নিলো!’ইরা জেরিনের ধ্যানের মাঝে ওর মাথায় চাটি দিয়ে বললোঃ
—“ওরে বাবা তলে তলে এতকিছু হয়ে গেল…
“ইরার কথা শুনে দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো জেরিন!’জেরিনের হাসি দেখে ইরাও হেঁসে দিলো!’এমন সময় একজন লোক এসে বললোঃ
—“বস এসেছে ইরা,তোমায় ডাকছে…?’
“লোকটি কথা শুনে ইরাও হেঁসে বললোঃ
—“ওকে!’…
“এতটুকু বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ইরা তারপর জেরিনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো সেঃ
—“তুই বস আমি এক্ষুনি আসছি তারপর বাকি কথা শুনবো…
“বলেই চলে যায় ইরা অর্নবের রুমের দিকে!’
____
“নিজের রুমের এপাশ ওপাশ করে হাঁটছে অর্নব!’প্রচন্ড ঘাবড়ে আছে সে!’অর্নবের কাল রাতের কথা তেমন কিছুই মনে নেই!’কিন্তু তারপরও তার এতটুকু মনে আছে নেশার ঘোরে আর রাগের মাথায় অনেককিছু বলে ছিল সে ইরাকে!’হাত ধরে পার্টির স্থান থেকে টেনে বাহিরের নিয়ে এসেছিল অর্নব এরপর গাড়ির কাছে এনে এরপর আর কিছু মনে নেই অর্নবের!’মাথায় একটু পেসার দিলেই মাথা যন্ত্রণা করছে অর্নবের,সকাল থেকেই কাল রাতের কথা ভাবতে ভাবতে তার মাথা খারাপ প্রায় তারপরও কিছুই মনে করতে পারলো না অর্নব!’রাগের মাথায় কাল যেন একটু না অনেক বেশিই ড্রিংক করে ফেলেছে সে!’..
“হঠাৎই সামনে তাকাতেই ইরাকে তার দিকে আসতে দেখে হাঁটা বন্ধ করে টেবিলের উল্টোদিক ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লো অর্নব!’…
“অন্যদিকে…
“অর্নবের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো ইরা!’তারপর তার উত্তেজিত মনকে শান্ত করার জন্য জোরে শ্বাস ফেলে অর্নবের রুমে দরজা খুলে বললোঃ
—“মে আই কামিং স্যার…
“ইরার কথা শুনে টেবিলের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে বললো অর্নবঃ
—“হুম কাম…
“অর্নবের কথা শুনে ইরাও তাড়াতাড়ি ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়লো!’তারপর অর্নবকে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বলে ইরাঃ
—“স্যার আপনি দাঁড়িয়ে যে বসবেন না…
—“ও হ্যাঁ…
“বলেই তাড়াতাড়ি নিজের চেয়ারের কাছে গিয়ে বসে পড়ে অর্নব!’অর্নবকে বসতে দেখে ইরাও হাতে একটা ফাইল নিয়ে চলে যায় অর্নবের কাছে!’তারপর ফাইল দেখিয়ে কিছু বলতে থাকে ইরা আর অর্নব তাকিয়ে থাকে ইরার মুখের দিকে!’অনেক কিছু বলতে চাইছে সে কিন্তু কিভাবে শুরু করবে ঠিক বুঝতে পারছে না অর্নব!’হঠাৎই ইরার কথার মাঝখানে বলে উঠল অর্নবঃ
—“একটা কথা বলবো ইরা…
“হুট করে নিজের কথার মাঝখানে অর্নবের কথা শুনে নিজের কথা বলা থামিয়ে দিয়ে বললো ইরাঃ
—“জ্বী স্যার বলুন…
—“আসলে কিভাবে বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না…
—“কেন স্যার..
—“না মানে কাল রাতের জন্য আই এক্সট্রিমলি সরি ইরা,আমি নিজেও জানি না কাল রাতে কি হয়েছিল আমার,হয়তো রাগের মাথায় অনেককিছু বলে ফেলেছি তোমায়!’আই এক্সট্রিমলি সরি ইরা…
“এতক্ষণ পর অর্নবের মুখে কাল রাতের কথা শুনে কিছু না বলে উল্টো দিক মুখ করে দাঁড়ালো ইরা!’ইরাকে উল্টোদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্নব কিছুটা নিরাশ হয়ে বললোঃ
—“তুমি কি খুব রাগ করেছো,বিশ্বাস করো কাল রাতে কি হয়েছিল আমার কিছুই মনে নেই কিন্তু এতটুকু মনে আছে কাল আমি রাগের মাথায় অনেককিছু বলে ফেলেছিলাম তোমায় সরি ইরা…
“এবারও কিছু বললো না ইরা, চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো সে এবারও ইরাকে চুপ থাকতে দেখে আরো হতাশ অর্নব!’ইরার দিকে তাকিয়ে বললো সেঃ
—“কি হলো ইরা,তুমি কোনো কথা বলছো কেন?’খুব বেশি রাগ করে ফেলেছো…
“অর্নবের এবারের কথা শুনে অর্নবের দিকে তাকায় ইরা!’ইরাকে তাকাতে দেখে অর্নব নিরাশ হয়ে বললোঃ
—“সরি…
—“সরি বললেই সব ঠিক হয়ে গেল স্যার?’
—“না মানে..
—“আপনি জানেন স্যার কাল রাতে আপনি আমায় কি কি বলেছেন?’
—“সরি বললাম তো…
—“আপনার জন্য কালকের পার্টিতে কিছু খেতেই পারলাম না কত সুন্দর সুন্দর খাবার বানানো হলো অথচ আমি একটু ছুঁয়েও দেখতে পারলাম না…
—“কি…
—“কি, কি কি করছেন..
—“তুমি এই কারনে রেগে আছো…
—“শুধু এই একটা কারন না আরো আছে কাল রাতে আপনি আমায়…
“বলেই অর্নবের দিকে ঝুঁকে পড়লো ইরা!’হুট করে ইরার এমন কাজে কিছুটা ঘাবড়ে যায় অর্নব!’কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে সেঃ
—“কি কি করছো ইরা…
—“কি করছি মানে কাল রাতে আপনি আমায়…
—“কাল রাতের জন্য আমি সত্যি দুঃখিত ইরা..
—“শুধু সরিতে কাজ হবে না স্যার…
—“মানে…
“অর্নবের কথা শুনে ইরা অর্নবের চেয়ারে হাত রেখে ভাড় দিয়ে অর্নবের দিকে আর একটু ঝুঁকে বললোঃ
—“মানেটা হলো…
“ইরা আর কিছু বলবে এর আগেই ঘটলো আরেকটা ঘটনা চেয়ারের পিছনে বেশি ভাড় দেওয়ার কারনে চেয়ার নিয়েই নিচে পড়ে যায় ইরা অর্নব!’অর্নব নিচে আর ইরা উপরে…
“এরই মাঝে অর্নবের রুমে প্রবেশ করলো অর্নবের বাবা!’ঘটনাচক্রে অর্নবের বাবাকে দেখে ইরা অর্নব দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে,হুট করে যে এমন কিছু হবে এটা ভাবতেই পারে নি ইরা অর্নব…..
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️