#হঠাৎ_বর্ষনের_রাতে💖
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💖
— পর্বঃ১৬
“অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্নব তার বাবার মুখের দিকে!”চোখে মুখে বিষন্ন ভাব তার!’অর্নব কিছুক্ষন চুপ থেকে বললোঃ
—“হঠাৎ করে এমন কিছু কেন করলে বাবা?’
“অর্নবের কথা শুনে অর্নবের বাবা মুখে খাবার নিতে নিতে বলে উঠলঃ
—“যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি অর্নব, আর বয়স তো তোমার কম হয়নি…
—“কিন্তু বাবা…
—“আমি কোনো কিন্তু শুনতে চাই না,কাল বিকেলে আমরা মেয়ের বাড়ি যাবো তুমিও যাবে আমাদের সাথে, আর এটাই আমার শেষ কথা…
“এতটুকু বলে নিজের খাবার খাওয়া শেষ করে চলে যায় আফজাল সাহেব!’আর অর্নব নিরাশ হয়ে বসে বয়!’ছেলেকে বসে থাকতে দেখে অর্নবের মা অর্নবের পাশে দাঁড়িয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললঃ
—“মন খারাপ করিস না, তোর বাবা হয়তো তোর ভালোর জন্যই সবকিছু করেছে…
—“কিন্তু মা…
—“তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?’
“অর্নব তার মায়ের এবারের কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়!’সে তো সত্যি কাউকে ভালোবাসে, অর্নব বুঝতে পারছে না মায়ের প্রশ্নের জবাবে ঠিক কি উওর দিবে সে!’অর্নব কোনো কিছু না বলেই টেবিল থেকে উঠে না খেয়েই বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে!’….
____
“আজ ইরার বাবা আসবে চিটাগাং থেকে!’সেই জন্য পুরো বাড়ি গোছগাছ করছে ইরা আর ইরার মা!’ইরার ভাই গেছে স্কুলে!’পুরো বাড়ি ঝাড়-পোছ থেকে শুরু করে ঘরের পর্দা সবকিছু বদলে নতুন করে টানানো হচ্ছে!’অবশ্য এসব কাজের জন্য ইরা বেশ অবাক কারন এর আগে কখনো বাবা আসার কথা শুনে এভাবে সবকিছু নতুন করা হয় নি!’বিষয়টায় একটু খটকা লাগলেও পরক্ষনেই হয়তো এমনি এটা ভেবে আর তেমন গুরুত্ব দেয় নি ইরা!’কোমড়ে ওড়না বেঁধে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করছে ইরা, চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ তার!’
“অন্যদিকে,,
“ইরার রুমে লাগাতার ফোন বেজে চলেছে,,কিন্তু সেটা ভাইব্রেশনে থাকার কারনে ইরার কান অবদি যাচ্ছে না!’সে তার মতো কাজে ব্যস্ত!’
.
“অফিসে নিজের রুমে রাগ নিয়ে বসে আছে অর্নব!’রাগের মাথায় নিজের ফোনটাকে ছুঁড়ে মারলো টেবিলের উপর!’কারন সে বেশ কয়েকবার ইরাকে ফোন করেছে!’কিন্তু ফোনটা বেজেই ইরা ফোন তুলছে না!’চরম প্রকার রাগ হচ্ছে অর্নবের,,একই তো কিছুদিন যাবৎ ইরা অফিস আসছে না অবশ্য এর কারনটাও তার জানা!’এই মুহূর্তে নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে অর্নবের!’একদিকে বিয়ে অন্যদিকে ইরা!’না আর বেশি ভাব্বে না অর্নব আজই ইরাকে তার মনের কথা বলবে অর্নব আর যদি ইরা তার ভালোবাসা মেনে নেয় তাহলে কালই ইরার বাড়িতে গিয়ে ইরার বাবা মাকে সবটা বলবে তারপর নিজের বাবা মাকেও বলবে!’আর যদি না হয় তাহলে আর কিছু ভাবলো না অর্নব,,চোখে মুখে হাত দিয়ে নিরাশ হয়ে বসে রইলো সে কোনোকিছুই ভালো লাগছে তাঁর!’নিরাশ হয়েই আনমনে বলে উঠল অর্নবঃ
“হঠাৎ বর্ষনের রাতে” কেন এসেছিলে তুমি,আর কেনই বা আবার দেখা হলো তোমার সাথে, আর কেনই বা তোমায় ভালোবাসলাম আমি!’ভালো না বাসলে কোনো সমস্যাই তো ছিল না!’
“এমন সময় অর্নবের রুমের দরজা খুলে বলে উঠল জেরিনঃ
—“মে আই কাম ইন স্যার….
“আচমকা কারো কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে উঠলো অর্নব!’নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো সেঃ
—“হুম কাম…
“অর্নবের কথা শুনে জেরিনও খুশি মনে ভিতরে ঢুকলো তারপর হাতের কিছু ফাইল দেখিয়ে বললোঃ
—“স্যার এই ফাইলে আপনার কিছু সাইন লাগবে?’
”জেরিনের কথা শুনে অর্নবও আর বেশি কিছু না ভেবে বললোঃ
—“ওকে নিয়ে আসো…
—“জ্বী স্যার..
“বলেই অর্নবের টেবিলের উপর রাখে ফাইল!’অর্নবও ফাইলগুলো চেক করে সাইন করতে থাকে হঠাৎই কিছু একটা ভাবলো অর্নব!’অর্নবের সাইন করা হয়ে যেতেই জেরিন সেগুলোকে হাতে নিয়ে অর্নবকে থ্যাংক ইউ বলে যেতে নেয় সাথে সাথে অর্নব বলে উঠলঃ
—“শোনো…
“অর্নবের কথা শুনে জেরিনও দাঁড়িয়ে পড়ে তারপর বলেঃ
—“জ্বী স্যার বলুন…
—“আমার একটা কাজ করে দিতে পারবে?’
“অর্নবের কথা শুনে জেরিন কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ
—“অবশ্যই স্যার বলুন…
____
“কলিং বেল বাজার শব্দ পেতেই ইরা তার কাজ বন্ধ করে দিয়ে চলে যায় দরজার সামনে!’দরজা খুলতেই জেরিনকে দেখে অবাক হয়ে বলে সেঃ
—“তুই?’
“ইরার কথা শুনে জেরিন ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললোঃ
—“হুম আমি কেন আসতে পারি না…
—“না তা হবে কেন এই টাইমে আসলি এখন তো তোর অফিসের থাকার কথা তাই আর কি?’
—“হুম অফিসে থেকেই এসেছি আচ্ছা তুই অফিস যাচ্ছিস না কেন?’
—“আসলে আমি কিছুদিনের ছুটি নিয়েছি…
—“হঠাৎ ছুটি নিলি…
—“এমনি…
“ভিতরে ঢুকেই পুরো বাড়ি চোখ বুলালো জেরিন, বাড়ি গোছাতে দেখে বললো সেঃ
—“এত গোছগাছ করছিস কিসের?’
—“ওই বিকেলে বাবা আসবে তো তাই…
—“ওহ তোর রুমে চল তো একটু কিছু কথা আছে…
“এমন সময় রান্নাঘর বের হয় ইরার মা সামনেই জেরিনকে দেখে বলে উঠলেন উনিঃ
—“জেরিন তুমি…
—“হুম আন্টি ভালো আছেন?
—“হুম তুমি..
—“আমিও ভালো আছি..
—“আচ্ছা তোমরা কথা বলো..
“এতটুকু বলে চলে যায় ইরার মা!’ইরার মা যেতেই জেরিন কিছুটা হতভম্ব কন্ঠে বললোঃ
—“তোকে কি বললাম চল তোর রুমে আমার কিছু কথা আছে…
—“আচ্ছা ঠিক আছে চল…
“বলেই হাতের ঝাড়ুটাকে নিচে রেখে চললো ইরা আর জেরিন!’
___
“রুমে ঢুকেই আগে দরজা বন্ধ করে দিলো জেরিন!’জেরিনের কাজে ইরা অবাক হয়ে বললোঃ
—“এটা কি করছিস…?’
“উওরে জেরিন দরজা বন্ধ করে ইরার দিকে এগিয়ে এসে বললোঃ
—“তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে!’
—“হুম বল!’
.
.
“বিকেল ৪ঃ০০টা….
“একটা নিরিবিলি জায়গার গাছতলার নিচে দাঁড়িয়ে আছে ইরা!’অপেক্ষা করছে সে অর্নবের জন্য কারন তখন জেরিন তাকে বলে ছিল অর্নব তাকে এখানে দেখা করতে বলেছে!’ইরা জানে না এই মুহূর্তে অর্নব কি বলবে তাঁকে,,তবে ভেবে নিয়েছে ইরা যদি বাই এনিচান্স অর্নব তাকে প্রপোজ করে তাহলে ইরাও বলবে অর্নবকে তার মনে কথা!’কারন ইরা বুঝতে পেরেছে অর্নবকে ছাড়া তার চলবে না দুইদিন অর্নবকে দেখতে না পেয়ে কি অবস্থা হয়ে তাঁর!’কিন্তু আবার ভয়ও হচ্ছে!’অর্নবের বাবা কি তাদের মেনে নিবে সাথে ভাবতেই খারাপ লাগছে তার!’এ রকম হাজারো কথা ভাবছে ইরা!’এমন সময় পাশের রাস্তার সামনে এসে থামলো একটা গাড়ি!’গাড়িটা দেখে ইরার বুঝতে বাকি নেই গাড়িটা কার!’ইরা তাকিয়ে রইলো গাড়িটার দিকে ততক্ষণে অর্নব গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে!অর্নবের মুখের দিকে তাকাতেই হাল্কা চমকে উঠলো ইরা!’কারন অর্নবকে আজ একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে ইরার,কেমন যেন অগোছালো হয়ে আছে অর্নব!’চুলগুলো এলেমেলো চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ!’ইরা কিছুক্ষন অর্নবের দিকে তাকিয়ে থেকে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে ফেলে!’
“অন্যদিকে…
“কিছুটা দূর থেকে ইরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে অর্নব ইরার দিকে!’অর্নব কাছে আসতেই ইরা মুচকি হেঁসে বললোঃ
—“আসসালামু আলাইকুম স্যার কেমন আছেন?’
—“ওলাইকুম আসসালাম হুম ভালো তুমি?’
—“আমিও ভালো আছি স্যার…
ইরার কথা শুনে অর্নব তাদের সামনেই গাছের নিচে একটা স্টিলের তৈরি বেঞ্চ দেখিয়ে বললোঃ
—“চলো ওইখানে বসি!’
“অর্নবের কথা শুনে ইরাও বেশি কিছু না বললোঃ
—“ঠিক আছে স্যার!’
____
“সময়টা পরন্ত বিকেল!’গাছের পাতাগুলো বাতাসের ছোঁয়ায় হাল্কা নড়ে উঠছে কিছুক্ষন পর পর!’সাথে মিনিট পাঁচেক পর পর দূর আকাশে উড়ে চলছে ছোট ছোট পাখিরা!সাথে এক অন্যরকম গ্রান বয়ে আসছে চারপাশের গাছপালা দিয়ে!এসবের মাঝে নিরিবিলিভাবে বেঞ্চে বসে আছে অর্নব আর ইরা কারো মুখেই কোনো কথা নেই!’অর্নব তো অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কিভাবে কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না!’অর্নবকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ইরা কিছুটা নীরব কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“কি হলো স্যার চুপ করে আছেন কেন?বলুন কি বলবেন?’
“এতক্ষণ পর ইরার মুখে এমন কথা শুনে অর্নব জোরে শ্বাস ফেললো তারপর বললোঃ
—“আমি তো তোমায় অনেক কিছু বলতে চাই ইরা কিন্তু বলতে আর পারছি কই?’
—“এত দ্বিধা কিসের বলেই ফেলুন না!
—“আমায় ভুল বুঝো না প্লিজ,,তুমি শুধু হ্যাঁ বা না এই দুটোর মধ্যে একটা বলো তাহলেই হবে..
—“আগে কথাটা তো বলুন স্যার…
“ইরার এবারের কথা শুনে অর্নব জোরে শ্বাস ফেলেই বলে উঠলঃ
—“আমি তোমায় ভালোবাসি ইরা,আমায় বিয়ে করবে?’
“বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে অর্নব!’অর্নবের কথা আর কান্ড দেখে হেঁসে ফেলে ইরা!’ইরা বেশি কিছু না ভেবেই অর্নবের হাত ধরে বসে!’আচমকা হাতে কারো স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে তাকায় অর্নব ইরা দিকে!’
“অর্নব তাকাতেই ইরা অর্নবের হাত ধরে বললোঃ
—“আমিও আপনাকে ভালোবাসি স্যার,,কিন্তু আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না!’
“ইরার কথা শুনে হতাশ হয়ে বললো অর্নবঃ
—“কেন?’
—“স্যার মানে আপনার বাবা আমাদের কোনোদিন মেনে নিবে না!’…..
—“বাবার টেনশন তুমি করো না আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলবো ইরা!’
—“আর আমার বাবা মা…
—“ওনাদেরও বুঝাবো তাহলেই তো হবে…
“অর্নবের কথা শুনে ইরা অর্নবের হাত ছেড়ে দেয়!’ইরা কাজে আরো নিরাশ অর্নব!’ইরা অর্নবের হাত ছেড়ে দিয়ে বলেঃ
—“আরো একটা সমস্যা আছে স্যার?’
“ইরার কথা শুনে অর্নব বিচলিত কন্ঠ নিয়ে বলে উঠলঃ
—“সেটা কি?’
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️