#হয়তো_তোমারই_জন্য
#পর্বসংখ্যা_১০
#সাদিয়া_তাসনিম
‘ সাঁঝ এখানে একটু আয় তো মা ।’
আসমা বেগম রান্না ঘরে কাজ করছিলেন ঠিক তখন সাঁঝকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে গলা ছেড়ে সাঁঝে ডাক দিলেন। সাঁঝ বাগানের নিজের প্রিয় গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছিলো। সে নিজের কাজ শেষ করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করা মাত্র আসমা বেগম তাকে নিজের কাছে ডাক দেয়।আসমা বেগমের ডাক শুনে সাঁঝের পা থমকে যায়। সে কোনো কথা ছাড়ায় রান্না ঘরের দিকে চলে আসে।সাঁঝ রান্না ঘরে এসেই দেখে আসমা বেগম চুলার পানি গরম দিয়ে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে অন্য কাজ করছেন। চুলার উপর থাকা পানি টগবগ করে ফুটতে ফুটতে একে বার কমে গেছে। সাঁঝ তা দেখে দ্রুত পায়ে চুলায় সামনে যায় এবং তাড়াতাড়ি গ্যাসের চুলাটা বন্ধ করে দেয়।সাঁঝ কাজটা শেষ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা আসমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে ,
‘ দেখছো চাচিমণি কী অবস্থা? চুলা বন্ধ না করলে তো পানি শুকায়ে পাতিল ধরে যেতো। ‘
সাঁঝের কথাটা শুনে আসমা বেগম তাড়াতাড়ি নিজের হাতের কাজ বাদ রেখে চুলার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। তিনিও না, একটা কাজ করতে গিয়ে আর একটা কাজের মতো দিব্যি ভুলে গেছেন। সে যে একটু আগে সৌহার্দ্যের জন্য চায়ের পানি বসিয়ে ছিলেন তা একেবারে মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছে। ভাগ্যিস সে সাঁঝকে ডাকলো আর সাঁঝ আসলো তা না হলে! আসমা বেগম কথাগুলো চিন্তা করতে করতে চুলার পাশে থাকা জগ থেকে আবারও পাতিলে পানি ঢালেন। সাঁঝ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার মেজে চাচিমণির কাজ দেখছে। আসমা বেগমকে কোনো কথা বলতে না দেখে সাঁঝ নিজেই স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ চা বানাবা নাকি রুটি বানাবা?’
আসমা বেগম সাঁঝের কথা শুনে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে বলে উঠলেন,
‘ চা। খাবি নাকি?’
সাঁঝ আসমা বেগমের কথা শুনে কিছুক্ষণ ভাবলো।কিন্তু এখন তার চা খেতে ইচ্ছে করছে না বলে দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বললো। আসমা বেগম সাঁঝের উত্তরটা পেয়ে গিয়ে মৃদু হাঁসলেন। তিনি সাঁঝের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাতিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো পানি আবারও অনেকটা শুকিয়ে গেছে তাই তিনি তাড়াতাড়ি পাশে থাকা চায়ের কৌটা থেকে চা পাতা দিয়ে দিলেন টগবগ করা পানিতে৷ মিনিট কয়েক এর মধ্যে চা একটা কাপে ঢেলে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে ছোট ছোট করে বলে উঠলেন,
‘ যেই জন্য তোকে ডেকে ছিলাম, যা চা-টা সৌহার্দ্যকে দিয়ে আয়। ছেলেটা দুই দিনের জন্য এ বাড়িতে ঘুরতে এসেছে আমি চায় না ছেলেটার কোনো অযত্ন হক। আগের বার যখন সৌহার্দ্যদের বাড়িতে গিয়ে ছিলাম তখন দেখে ছিলাম সন্ধ্যা আগে চা খায় ও। বড় ভাবি করে দেয়। আর আমাদের বাড়িতে তো সকলে মাগরিবের পরে চা নিয়ে বসে। যা তুই এটা এখন সৌহার্দ্যকে দিয়ে আয় তো মা।’
আসমা বেগমের কথা শুনে সাঁঝ আসমা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে। সৌহার্দ্যকে চা দিয়ে আসতে হবে শুনলে সে এখানে আসতো না। আসমা বেগম শতবার ডাকলেও না। সৌহার্দ্য তখন তাকে অপমান করেছে। সে নাকি এখনও বাচ্চা! কার্টুন দেখে! সে যদি সৌহার্দ্যকে চা দিতে যায় তখন সৌহার্দ্য ওর পুরাতন সেই একই নাটক আবারও শুরু করবে। সাঁঝ মনে মনে সৌহার্দ্যকে চা দিতে নারাজ হলেও আসমা বেগমের সামনে কিছু বলতে পারলো না তাই নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিলো। নিজের মুখে বিরক্ত চেপে সে সৌহার্দ্যের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
সাঁঝ চায়ের কাপটা নিয়ে সৌহার্দ্যের জন্য নিধারিত রুমের দিকে চলে গেলো। সাঁঝ সৌহার্দ্যের রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রয়লো। দরজা খোলায় আছে তাই সে আর নক করে সৌহার্দ্যের রুমে ঢুকলো না। হুট করেই ঢুকে গেলো। ঘরটার বাম দিকে বড় খোলা জানালা, আর এই খোলা জানালার পাশেই রাখা ছোট একটা সোফা ।সাঁঝ লক্ষ্য করলো সৌহার্দ্য সাদা মখমলে কাপড়ের গদির উপর পায়ের উপর পা তুলে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কিছু করছে। সৌহার্দ্য ভাবুক ভঙ্গিতে ঠোঁটের কাছে হাত রেখে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা করেই চলেছে। সাঁঝ হুট করে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মুখ বাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়লো।
হঠাৎ নিজের সামনে উজ্জ্বল ফর্সা সাঁঝকে দেখে সৌহার্দ্যের হৃদপিণ্ড বিদ্যুৎ গতিতে লাফিয়ে উঠলো। সৌহার্দ্য নিজের অজান্তেই মন কারা দৃষ্টিতে সাঁঝের দিকে নিজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখলো কিছুক্ষণ । সাঁঝ তার রোগা শরীরে একটা মস্ত বড়ো ঢিলেঢালা সেলোয়ার-কামিজ জড়িয়েছে যার সুতির ওড়নারা নিচের মেঝে ছুঁই ছুঁই করে ঝুলে আছে৷ সাঁঝের এমন মন কাড়া রুপ দেখে সৌহার্দ্যের হৃদপিণ্ডের গতি যেনও বিদ্যুৎ বেগে ছুটতে থাকলো। এই বিদ্যুৎ বেগে ছুটতে থাকা হৃদয়কে নিয়েও সৌহার্দ্য তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নির্মল চেহারার সাঁঝকে দেখে স্বত্বির হাসি ফুটিয়ে তোললো নিজের ঠোঁটের কোণে যার ফলে দুই দিকে প্রসারিত হয় সৌহার্দ্যের পাতলা অধরোষ্ঠ। একটা মানুষের সৌন্দর্য কতটা নিখুঁত হলে তা অন্য একটা মানুষের বক্ষস্থলে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে তা সৌহার্দ্য সাঁঝকে না দেখলে কখনো বিশ্বাসই করতো না৷ কিন্তু আজ সৌহার্দ্য এই ভয়কাতুরে মেয়েটার জন্য নিজের বক্ষস্থলে এক প্রকান্ড অনুভুতি অনুভব করে। সাঁঝের জন্য সর্বদাই একটা ব্যাকুলতা কাজ করে তার বক্ষস্থলে।
সৌহার্দ্যকে চায়ের কাপটা নিতে না দেখে সাঁঝ ঘাড় ঘুরিয়ে সৌহার্দ্যের দিকে তাকালো। ঘাড় ঘুরিয়ে সৌহার্দ্যের দিকে তাকাতেই দেখলো সৌহার্দ্য তার দিকে আগে থেকেই তাকিয়ে আছে যার ফলে তাদের চোখাচোখি হয়ে গেলো। সাঁঝ আজ সৌহার্দ্যের দিক থেকে নিজের চোখ সরায় না বরং নিজের চোখ মুখ কুঁচকে নিয়ে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞাসা করে উঠে,
‘ কাপটা ধরেন ভাইয়া। আমি কতক্ষণ কাপটা নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো? মেরুদণ্ড ব্যথা হয়ে গেলো আমার। ‘
সৌহার্দ্য সাঁঝের কথা শুনে নিজের মোবাইলটা প্যান্টের পকেটে রেখে হুট করে উঠে দাঁড়লো। নিজের আলসেমিটা ভেঙ্গে কৌতুহলী দৃষ্টিতে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে নম্র স্বরে বলে উঠলো ,
‘ তুই যে দিন দিন এতো অসভ্য হচ্ছিস সাঁঝ তা জানে তোর মা?’
সাঁঝ সৌহার্দ্যের উঠে দাঁড়ানো দেখে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো তবে সৌহার্দ্যের মুখে অসভ্য কথাটা শুনে নিজের জায়গায় থমকে গেলো। চায়ের কাপটা সোফার পাশেই থাকা ছোট্ট টেবিলটার উপর রেখে সাঁঝ সৌহার্দ্যের দিকে এগিয়ে আসলো। সৌহার্দ্যের চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করে উঠলো ,
‘ অসভ্যতামির করলামটা কী আমি? আপনি কী কোনো কাজ পান না সারাদিন আমার পিছনে লেগে থাকেন। ‘
সৌহার্দ্য একবার চায়ের কাপটার দিকে তাকালো তারপর আবার সাঁঝের দিকে তাকিয়ে গলা শক্ত করে বলে উঠলো ,
‘ চায়ের কাপটা কার জন্য এনেছিস? ‘
সাঁঝ সৌহার্দ্যের কথা শুনে মুখ কুঁচকে বলে উঠলো ,
‘ আপনার জন্য। ‘
নিজের কাঙ্ক্ষিত উত্তরটা পেয়ে সৌহার্দ্যের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠলো। সে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
‘ চা এনে একবারও আমাকে বলেছিস? আমি হুট করে সামনে তাকিয়ে দেখি তুই চায়ের কাপটা আমার মুখের সামনে ধরে দাঁড়িয়ে আছিস। ‘
সাঁঝের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে সাঁঝকে কথাগুলো বললো সৌহার্দ্য। সাঁঝ সৌহার্দ্যের কথা শুনে ঢোক গিললো। আসলেই তো, সে যে চায়ের কাপটা এনে সৌহার্দ্যের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।কেন ডাকলো না সে সৌহার্দ্য ভাই কে? ইশশ! সৌহার্দ্য ভাই এখন না জানি কী ভাবে? মনে মনে ভাবলো সাঁঝ তবে পরক্ষণেই নিজেকে শান্ত করে গলা ঝেরে নিজের দোষ ঢাকতে বলে উঠলো,
‘যখন দেখলেনই চায়ের কাপটা আপনার মুখের সামনে ধরা তখন হাত থেকে নিয়ে নিলেয় তো হয়ে যেতো। ‘
সাঁঝের কথা শুনে সৌহার্দ্য নিজের চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। সে সাদা মখমলের সোফাটায় আবারও বসে পরলো। মেয়েটা আজ কয়েকদিন অতিরিক্ত কথা বলা শুরু করেছে তা সৌহার্দ্য ভালো করেই বুঝে উঠতে পারলো। আগে একটা ভীতুরডিম ছিলো কিন্তু এখন মুখে মুখে কথা বলা শিখেছে। এই মেয়েটাকে এখন কিছু না বললে কিছুদিন পরে আরো তার মাথায় চড়ে বসবে। সৌহার্দ্য নিজের পকেটে থেকে ফোনটা বের করে আবারও ফোনের স্ক্রিনে মনোযোগ দিলো। তবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার সাঁঝের দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে আদেশের সুরে বলে উঠলো ,
‘ চায়ের কাপটা হাতে নে সাঁঝ। ‘
সাঁঝ সৌহার্দ্যের কথা শুনে সৌহার্দ্যের দিকে নিজের ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো। সৌহার্দ্য আসলো কী করতে চায়ছে সাঁঝ তাই বুঝতে চেষ্টা করলো। সাঁঝকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সৌহার্দ্য এবার ধমকের গলায় বলে উঠলো,
‘ চা-টা খা।’
‘ কী?’
‘ খেতে বললাম না তোকে?’
গম্ভীর কন্ঠে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো সৌহার্দ্য। সাঁঝ তখনও চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বিমূঢ় হতবাক দৃষ্টিতে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে আছে৷
এই বিকাল বেলা সৌহার্দ্যের রুমে চা দিতে এসে সে ভাবতেও পারে নি সে এই মহা-মুশকিলে পড়বে তা । সৌহার্দ্যের সাথে লাগতে গিয়ে ছিলো সে, তাই সৌহার্দ্য ক্ষেপে এখনই তাকে দাঁড়িয়ে চা-টা খেতে বললো। সাঁঝ জানে সে সৌহার্দ্যের সাথে কথায় পারবে না আর তার এখন ইচ্ছেও নেই সৌহার্দ্যের সাথে মুখ লাগানোর তাই সাঁঝ চুপচাপ চায়ের কাপটা ঠোঁটের কাছে তোলে চায়ের কাপে চুমুক দিতেই চায়ের কাপটা মুখ থেকে নিচে নামিয়ে চোখমুখ কুঁচকে নিলো।
সাঁঝ রং চা একদমই পছন্দ করে না। সে যখনই চা খায় তা দুধ চায় হয়। এই লোকটা সেটা ভালো করেই জানে। তাই তো ইচ্ছে করে তাকে নিজের জন্য আনা বিশ্রী চা খেতে দিয়েছে। রং চা দেখলেই সাঁঝের গা গোলায় তারপর আবার সৌহার্দ্য চা কফিতে কোনো প্রকার চিনি ছাড়া লিকার বেশি দিয়ে খায়।
ইশশ! সাঁঝকে এই বিশ্রী চায়ের বদলে বিষ এনে দিলে সে চুপচাপ খেয়ে নিতে পারবে কিন্তু এখন এই কাপে আর একবারের জন্যও চুমুক দিতে পারবে না। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে সাঁঝ চোখ মুখ কুঁচকে মনে মনে কথাগুলো ভেবে দাঁড়িয়ে রয়লো। সৌহার্দ্য সাঁঝের এমন অবস্থা দেখে শব্দ করে হেসে ফেললো। সৌহার্দ্যের হাসির শব্দে সাঁঝ চোখ তুলে তার দিকে তাকালো। সৌহার্দ্যকে হাসতে দেখে তার রাগ রাগলো। সাঁঝের মনে চাইলো সৌহার্দ্যের মাথাার সবগুলো চুল টেনে টেনে ছিড়ে ফেলতে কিন্তু এটা যে অসাধ্য কোনো কাজ সাঁঝ তা ভালো করে জানে। সাঁঝ সৌহার্দ্যের দিকে চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো ,
‘ আপনি না..’
সাঁঝের বিরক্তি মাখা কন্ঠ স্বর শুনে সৌহার্দ্য আবারও হাসলো। সাঁঝকে এভাবে সায়েস্তা করতে পেরে সৌহার্দ্যের ভালো লাগলো। মেয়েটা মুখে মুখে বেশি কথা বলা শিখেছে এবার থেকে তার মুখের উপর আর কোনো কথা বললে এভাবে তার চা- টা সাঁঝকে খাওয়াবে সে তাহলে সাঁঝের মুখটা বন্ধ হয়ে যাবে মনে মনে কথাটা ভেবে হাসলো সে। সৌহার্দ্য সাঁঝের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে বলে উঠলো,
‘ সবটা শেষ কর। তা না হলে তোর আম্মুর কাছে নালিশ দিবো। ‘
‘ কিসের? ‘
‘ শুনলাম তোর নাকি রেজাল্ট দিয়েছে…।’
সাঁঝ বুঝলো সৌহার্দ্য তাকে blackmail করছে রেজাল্ট নিয়ে। সাঁঝ একবার বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে সৌহার্দ্যের দিকে তাকালো। তারপর নিজের শ্বাস বন্ধ করে সাঁঝ চা-টা খেতে লাগলো। চায়ে আরে কয়েকটা চুমুক দিতেই সাঁঝের পুরো মুখ তেঁতো হয়ে গেলো তবে রোবটের মতো চা-টার অল্প একটু খেয়ে শ্বাস ফেললো সে। চোখ মুখ কুঁচকে ‘চ’ সূচক শব্দ করলো সাঁঝ। তবে তা আস্তে হওয়াই সৌহার্দ্যের কানে পৌঁছালো না। সৌহার্দ্য আবারও হাঁসে সাঁঝের এমন অবস্থা দেখে। সে ঠোঁট গোল করে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে উঠে ,
‘ কিছু বললি নাকি?’
সৌহার্দ্যের কথা শুনে সাঁঝ বিরক্ত ভরা মুখ নিয়ে সৌহার্দ্যের দিকে তাকায়। ডান হাতে চায়ের কাপ তাই বাম হাত দিয়ে সুতির কাপড়ের ওড়নাটা টেনে তোলে সেটা জিহবার উপরে দিয়ে জিহবা ডলা দেয়। সাঁঝের এমন দূরাবস্থা দেখে সৌহার্দ্য নিজের হাসি কন্ট্রোলে রাখতে পারে না। একপ্রকারে হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায়। সৌহার্দ্য উঠে দাঁড়িয়ে সাঁঝের হাতে থাকা চায়ের কাপটা নিয়ে নেয়। সাঁঝ কঠিন দৃষ্টিতে সৌহার্দ্যের দিকে তাকায়। সৌহার্দ্য দেখে সাঁঝের তাকানো তবে তাতে পাত্তা দেয় না। সাঁঝের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে তাতে চুমুক দেয়। সাঁঝ তা দেখে চোখ বড় বড় করে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে রয়। সাঁঝ চোখ মুখ কুঁচকে অবিশ্বাস্য কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে উঠে ,
‘ আমি তো চা এঁটো করে দিয়েছি তাও খাচ্ছেন আপনি?’
সৌহার্দ্য সাঁঝের এমন রিয়াকশন দেখে হাসে। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আবারও সোফায় গিয়ে বসে। সাঁঝের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠে,
‘ তোর মতো আমি আবার খাবার নষ্ট করি না। তোরা ভাই বড়লোক। তোর বাপের অনেক টাকা তাই খাবারের মূল্য বুঝিস না। আমাকে কী তোর মতো পেয়েছিস? ‘
সৌহার্দ্যের কথা শুনে সাঁঝ চোখ ছোট ছোট করে সৌহার্দ্যের দিকে তাকায়। এই লোকটাকে যে সে কী করবে সে নিজেও জানে না। সৌহার্দ্য আবারও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে উঠে ,
‘ সমস্যা নেই সাঁঝ নিজের উপর এতো বিশ্বাস রাখিস না। ‘
সাঁঝ সৌহার্দ্যের কথাটার মানে বুঝতে না পেরে কৌতুহলী দৃষ্টিতে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে উঠে,
‘ মানে?’
‘ মানে হলো এই যে আমি জানি তুই নাগিনী কিন্তু তোর এতো বিষ নেয় যে আমি মরে যাবো তো চিন্তা করিস না তোর এঁটো করা চা খাচ্ছি বলো কিন্তু সর্বোচ্চ করো সমস্যা হলে তা আমার মনে হয় ফুড পয়জনিং পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে।’
সৌহার্দ্যের এমন কথা শুনে সাঁঝ এবার প্রচন্ড পরিমাণে বিরক্ত হয়। সে সৌহার্দ্য দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে শব্দ করে সৌহার্দ্যের রুম থেকে চলে যায়। সৌহার্দ্য সাঁঝের চলে চাওয়ার পানে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মুখ টিপে হাসে। সাঁঝ যে রেগে গেছে তা ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছে সে।
চলবে….