হয়তো তোমারি জন্য পর্ব-০৩

0
94

#হয়তো_তোমারি_জন্য ( তৃতীয় পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<৪>
এরপর পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে উজান সবটা জানিয়েছিল। আর শারদীয়ার কথা অনুযায়ী এড্রেসে গিয়ে পুলিশ ওর মামা মামীকে এরেস্ট করেছিল। যদিও ওরা জেরায় সব কিছু অস্বীকার করে। কিন্তু পুলিশ কল রেকর্ড চেক করতে পুরো সত্যিটা বেরিয়ে গেছিল। শারদীয়ার কথাগুলোই ঠিক। ওর মামা মামী ওকে বিক্রি করার পুরো প্ল্যানিং করে ফেলেছিল। এমনকি তার জন্য তিন লাখ টাকা এডভান্সও নিয়েছিল। কথাটা তিন চারদিনের মধ্যেই পুলিশ উজানকে জানিয়েছিল। যাইহোক, এখন এইটুকু পরিষ্কার মেয়েটা আর যাই হোক, মিথ্যে বলেনি। তবে এইসবে ওর কি! এখন তো তিন চারদিন হয়েও গেছে। আর মেয়েটার শরীরও এখন ঠিকঠাক। তাই সেদিন উজান গিয়ে ওকে বলেছিল,
——-” আপনার মামা মামীর এগেনস্টএ ক্রাইমটা প্রুভ হয়ে গেছে। আপনাকে যাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছিল, পুলিশ তাদেরও এরেস্ট করেছে। এখন আর আপনার বাইরে কোন ভয় নেই। আর এখন তো আপনার শরীরও অনেকটা ঠিক। তাই আই থিঙ্ক এবার আপনি নিজের ইচ্ছে মতন যেখানে যেতে চান যেতে পারেন। ”
কথাটা শুনে শারদীয়া অনেকদিন বাদে বেশ নিশ্চিন্ত হয়েছিল। তার সাথে এটাও বুঝেছিল যে উজান এবার ওকে চলে যেতে বলছে। সত্যি! তিনদিন হয়ে গেল এই লোকটার বাড়িতে আছে! ওনার জন্যই এত বড় একটা বিপদ কাটলো শারদীয়ার! এক্সিডেন্টটা মনে হয় ভগবানই করে দিয়েছিল। তবে আর এখানে এইভাবে থাকা সম্ভব না। কথাটা ভেবেই ও বলে উঠলো,
——-” আপনি সত্যি খুব হেল্প করলেন আমার! কিভাবে ধন্যবাদ দেব জানি না। যাইহোক, আমি আজ চলে যাবো। আমি এখন ঠিক আছি। ”
কথাটা শান্ত গলায় বললো শারদীয়া। কথাটা শুনে উজান আর কোন কথা বাড়ালো না। নিজেও নিশ্চিন্তে অফিস চলে গেল। এরপর দুপুরের দিকে বাড়ির সার্ভেন্টকে ফোন করে একবার শুধু কনফার্ম হয়েছিল মেয়েটা গেছে না কি! সার্ভেন্ট এর কাছ থেকে শারদীয়ার চলে যাওয়ার খবরটা পেয়ে এরপর মনে হলো চ্যাপ্টারটা ক্লোজ হয়েছে।

যাইহোক, এরপর উজান রোজের মতন কাজে বিজি হয়ে গেছিল। তবে আজ সন্ধ্যার পরও বেশ কাজের চাপ ছিল। তাই আর ক্লাবে যায়নি ও। ওই রাত এগারোটার দিকে অফিস থেকেই বাড়ি ফিরছিল। কিন্তু একটা সিগন্যালে গাড়িটা দাঁড়াতে হঠাৎ চোখটা থমকে গেল যেন। উল্টো দিকে বাস স্টপের বেঞ্চে শারদীয়া বসে। একটা সাদামাটা চুড়িদার পড়ে। সঙ্গে সেই কালো রঙের ব্যাগ প্যাকটা। উজান দৃশ্যটা দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য অদেখা করার চেষ্টা করলো। যদিও বুঝেছে যাওয়ার কোন জায়গা নেই বলেই মনে হয় এখানে বসে! কিন্তু ওর কি দরকার এই নিয়ে মাথা ঘামিয়ে! আর মেয়েটা তো ওকে খেয়ালও করেনি। কথাটা ভেবেই সিগন্যালটা সবুজ হতেই উজান গাড়িটা নিয়ে এগিয়ে গেল। তবে কিছুটা রাস্তা যেতেই আর নিজেকে আটকাতে পারলো না। যদিও এটা ওর স্বভাব বিরুদ্ধ। আজ পর্যন্ত কাউকে খুব বেশি হেল্প করেনি উজান। উল্টে এড়িয়ে গেছে অনেক সময়। তবে এই মেয়েটার থমকে যাওয়া দৃষ্টির মধ্যে কিছু একটা ছিল, যার জন্য উজান গাড়িটা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলো না। ফিরে এলো ব্যাক করে আগের সিগন্যালে।
তবে শারদীয়া এই মুহূর্তে ওর সামনে এত বড় একটা গাড়ি থামতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছিল। আর আরো অবাক হয়েছিল উজানকে সেখান থেকে নামতে দেখে। তাই চোখ দুটো বড় বড় করেই ওর দিকে তাকিয়েছিল। কিন্তু উজান একটু উত্তেজিত হয়েই বললো,
——-” এত রাতে এখানে এইভাবে বসে আছো কেন? আর বর্ধমান ফিরে যাওনি? ওহ সরি.. তুমি বলে ফেললাম। আসলে বেশিক্ষণ ওই আপনি আজ্ঞে আমার ঠিক আসে না।”
এই কথায় শারদীয়া একটু ইতঃস্তত হয়েই উত্তর দিল,—–” না মানে! আসলে বর্ধমানে আর কেউ নিজের নেই ফিরে যাওয়ার মতন। আমি ঠিক আছি। কাল আমি ঠিক কিছু একটা ব্যবস্থা করে নেব। ”
এই কথায় উজান একটা অন্য প্রশ্ন করে উঠলো একটু ভ্রু কুঁচকে,
——–” লেখাপড়া কত দূর? স্কুল কলেজ কিছু গেছ? ”
এই কথায় শারদীয়া আস্তে গলায় বললো,
——–” গ্র্যাজুয়েট.. ফিলজ্যোফি অনার্স.. ”
কথাটা শুনে উজান বেশ অবাক হয়েই বললো,
——-” বাপ রে! ফিলজ্যোফি! তবে এই শহরে ফিলজাফারদের জন্য চাকরি পাওয়াটা একটু কঠিন কাজ। সময় লাগবে। ”
এই কথায় শারদীয়া চোখটা নামিয়ে নিল নিজের। তবে উজান এই মুহূর্তে খেয়াল করলো মেয়েটা এই পরিস্থিতিতেও ওকে দেখে কান্নাকাটি করছে না। বা নিজে থেকে কোন হেল্প চাইছে না। মানে চ্যারিটি কেস সাজার কোন চেষ্টা ওর মধ্যে নেই। তাই হয়তো উজানের বেশ আলাদা লেগেছিল শারদীয়াকে। সেই জন্য একটা হিসাব বিরুদ্ধ কথা বলেই ফেললো। বেশ সোজাসুজি ভাবেই বললো,
——–” তুমি রান্নাবান্না পারো? তাহলে আমার বাড়িতে কদিন কুকের কাজ করতে পারো। আই ডোন্ট নো হোয়াই আই এম আস্কিং ইউ ফর দিজ! আমার মধ্যে মনে হয় কোন মহাত্মা এসে ভর করেছে কদিন ধরে! বাট যাই হোক, ইউ ক্যান বি আ কুক এট মাই প্লেস ফর সম ডেজ.. যতোদিন না কোন কাজ পাচ্ছো কলকাতায়। এন্ড নাও ইউ ক্যান কম উইথ মি.. মানে বাড়িতে। এখানে এইভাবে বসে থেকে কোন লাভ নেই! ”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বললো উজান। তবে শারদীয়া কিরকম নিস্পলক ভাবে ওর দিকে তাকিয়েছিল এই মুহূর্তে। যেন ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না কথাগুলো। তবে উজান কয়েক সেকেন্ড দেখে এবার গলাটা ঝাঁকিয়ে বললো,
——-” কি হলো? ওঠো। এবার কি তোমাকে ইনভিটেশন কার্ড দিতে হবে যাওয়ার জন্য! ”
কথাটা শুনে শারদীয়া একটু হকচকিয়ে কিছু না বলেই উঠে দাঁড়ালো। তারপর আর কোন কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। আসলে সব কিছু এখনও স্বপ্নের মতন মনে হচ্ছে! দু মিনিট আগেও এই শহরে কোন ঠিকানা ছিল না ওর। মাথার ওপর খোলা আকাশটাই ছিল ছাদ। তবে হঠাৎ কিরকম ম্যাজিকের মতন একটা কাজ, আর একটা আশ্রয় জুটে গেল যেন, এই পুরোপুরি অচেনা মানুষটার কাছ থেকে।
<৫>
সেদিন উজান শারদীয়াকে বাড়িতে নিয়ে এসে বেশ সহজ ভাবে বললো,
——-” দ্যাখো, তুমি তো আর গেস্ট না এখন, তাই আগেরবারের মতন গেস্ট রুমে থাকতে তোমাকে দেয়া যাবে না। এই বাড়িতে সার্ভেন্টসদের জন্য আলাদা থাকার ব্যাবস্থা আছে। তুমি ওই একটা রুমে থাকবে। ”
কথাটা বলে উজান ‘ বিশু কাকা ‘ ‘ বিশু কাকা ‘ বলে চেঁচিয়ে একজনকে ডেকেছিল। তারপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একজন বয়স্ক মতন লোক এসে সামনে হাজির হয়েছিল। তারপর বেশ প্রশ্নবোধক চিন্হর মতন মুখটা করে বলেছিল,
——-” কে এই মেয়েটা? তুমি যেরকম মেয়েদের বাড়ি নিয়ে আসো, একে দেখে তো সেরকম মনে হচ্ছে না! ”
কথাটা শুনে উজান একটু গুছিয়ে বললো,
——–” তুমি যখন গ্রামে ছিলে, অনেক কেস হয়েছে। পরে বলবো সব। যাইহোক, ও শারদীয়া। কাল থেকে এই বাড়িতে রান্নার কাজ করবে। ”
এই কথায় বিশু কাকা বেশ বড় বড় চোখ করে বলে উঠলো,
—–” যাহ বাবা! আবার রান্নার লোকের কি দরকার! তুমি তো রোজই প্রায় বাইরেই খাও। আর টুকটাক যা রান্না সেটা তো আমিই করে দিই। এছাড়া বাড়িতে আরো দুজন কাজের লোক তো আছে। তাহলে আবার রান্নার লোক কেন! ”
এই প্রশ্নে উজান এক কথায়ই বললো,
——–” কারণ শারদীয়ার এখন কাজের একটা খুব দরকার। তাই। ”
কথাটা শেষ করে এবার ও শারদীয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
———” তোমাকে আলাপ করিয়ে দিই। উনি হচ্ছে বিশু কাকা। আমার বাড়িটাকে বিশু কাকাই দেখাশোনা করে। তোমার কিছু দরকার হলে ওনাকে বলবে, আর ওনার সব কথা শুনে চলবে। ”
কথাটা বলে শারদীয়ার আর কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে উজান বিশু কাকাকে বলে উঠলো,
——-” তুমি ওকে একটু ওর ঘরটা দেখিয়ে দাও। এন্ড গুড নাইট টু অল.. আর বিশুকাকা আমার রুমে কিছুটা আইস পাঠিয়ে দিও। ”
কথাটা বলে উজান চলে যাচ্ছিল। তখন বিশু কাকা বেশ বিরক্তির সুরেই বললো,
——-” উফ! আজকেও আবার ওই ছাইপাশ গুলো খাবে! একদিন ওইসব না খেলে কি হয় শুনি? কি যে বলবো! কেউ তো আমার কথা শোনেই না। ”
কথাটায় উজান এবার আলতো হেসে উত্তর দিল,
——-” চিল করো একটু। রিল্যাক্স.. ”
কথাটা বলেই উজান আর দাঁড়ালো না। ঘরে চলে গেল নিজের। তবে শারদীয়া সেদিন ওদের কথা কিছু বুঝতে না পেরে একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করেছিল এরপর বিশু কাকাকে,
———-” ছাইপাশ কি খাবেন উনি? ”
প্রশ্নটায় বিশুকাকা এবার আগের মতন বিরক্তি নিয়েই বললো,
——–” সেটা কিছুদিন বাদেই বুঝতে পারবে। এখন নিজের ঘরে চলো। ”
যাইহোক, এরপর সার্ভেন্ট রুমের ছোট্ট ওই ঘরটায় এসে শারদীয়ার সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল একটা আশ্রয় পেল যেন এই অচেনা শহরে। কেমন নিজের লাগলো ঘরটাকে হঠাৎ!
যাইহোক, তবে এরপর কয়েকটা দিন শারদীয়াকে কোন কাজই করতে হলো না রান্নার। ও কিন্তু সকাল সকালই রান্নাঘরে চলে যেত কাজের খোঁজে। কিন্তু বিশু কাকা সেই বিরক্তি ভরা মুখেই বলতো,
——-” তোমার উজান স্যার ব্রেকফাস্ট এ আমার হাতের স্যান্ডুইচ ছাড়া কিছুই খায় না। আর দুপুর আর রাতে তো বাইরেই খায় সব সময়। তবে ওই বছরে দু চারদিন বাড়িতে খায়! সেদিন বলে দেব তোমাকে। কোরো রান্না। ”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই উনি নিজের কাজে চলে যেতেন। তবে এইভাবে কটাদিন যাওয়ার পর শারদীয়া সেদিন রান্নাঘরে ঢুকে জোর করেই বললো বিশু কাকাকে,
———” আজ আমি রান্না করবোই। নইলে আমি এখানে আছি কেন! আমাকে কাজ দিয়েই তো এখানে রাখা হয়েছে। ”
কথাটা শুনে বিশু কাকা কি বলবে বুঝতে না পেরে একটু এলোমেলো হয়েই বললো,
——–” তুমি নিজেই বাবা উজানের সাথে কথা বলে নাও। আমি কিছু জানি না! ”
কথাটা বলেই বিশু কাকা যেন দ্বায়মুক্ত হলো। এরপর উজান ব্রেকফাস্ট টেবিলে আসতেই শারদীয়া ওর কাছে গিয়ে আস্তে গলায় বলে উঠলো,
———” স্যার, আপনি যখন আমাকে টাকা খরচ করে রেখেছেন, তখন রোজ বাইরে খান কেন? ”
এই প্রশ্নে উজান যেন কেমন হকচকিয়ে গেল! এতটা সোজাসুজি ভাবে কোন স্টাফের ওকে প্রশ্ন করার সাহস নেই আসলে। তবে ওর কিছু বলার আগেই শারদীয়া আবার বলে উঠলো,
———” আপনি একদিন আমার হাতের রান্না খেয়ে দেখুন। যদি ভালো না লাগে, আর খাবেন না। আমি অন্য কোন কাজ খুঁজে নেব। আর আপনারও টাকাগুলো নষ্ট হবে না এইভাবে আমার ওপর! ”
কথাগুলো বেশ অন্য রকম লাগলো উজানের। আসলে ওর বহুদিনের অভ্যাসই বাইরে খাওয়া। শারদীয়াকে রান্নার কাজের কথাটা ঝোঁকের বশে বলে দিয়েছিল। কিছুটা ওকে হেল্প করার জন্য, কিছু না ভেবেই। কিন্তু এই মেয়ে তো বেশ কাজের প্রতি ডেডিকেটেড! নইলে অনেক এমপ্লই তো কাজ না করে বসে বসে স্যালারে পেলে আর কিছু চায় না! সেখানে এই মেয়ে কাজ না করে টাকা নেবে না! কথাগুলো ভেবে ও একটু শান্ত গলায় বললো,
——-” আসলে আমি কন্টিনেন্টাল ফুড প্রেফার করি বেশি। আমার মনে হয় না তুমি ওইসব বানাতে পারবে। যাইহোক, তুমি যেটা রান্না করতে পারো, কোরো আজ, দেন ড্রাইভারকে দিয়ে অফিসে পাঠিয়ে দিও লাঞ্চ টাইমে। দেখি কেমন লাগে খেয়ে! ”
এই কথার পর উজান রোজের মতন অফিস বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজ শারদীয়া প্রথম রান্না করেছিল উজানের জন্য। না, কন্টিনেন্টাল ফুড না, সাদা মাটা বাঙালি খাবার, ভাত ডাল আলু পোস্ত মাছের ঝোল। তারপর খাবারটা টিফিন কৌটোয় প্যাক করে পাঠিয়েছিল ড্রাইভারের হাত দিয়ে।
সেদিন উজান একটু কৌতূহল নিয়েই টেস্ট করেছিল রান্নাগুলো। এমনিতে ও এইসব খাবার খুব একটা খায় না। লাঞ্চ এ ওই স্যান্ডুইচ বা পাস্তা কিছু একটা অর্ডার করে নেয়। ডিনারেও তাই। সেই জন্য মনে মনে বেশ কনফিডেন্টই ছিল, এইসব ভাত ডাল ওর পোষাবে না! কিন্তু রান্নাগুলো একবার খেয়ে আর নিজের কনফিডেন্সটাকে ধরে রাখতে পারলো না! অদ্ভুত স্বাদ ছিল সব কটা খাবারে। হয়তো হাতের গুণ! ঠিক জানে না উজান। তবে টিফিন কৌটো গুলো পুরোপুরি খালি করে ফেলেছিল আজ। তারপর বিশু কাকাকে ফোন করে বলেছিল,
——–” শারদীয়াকে বোলো অন্য কাজ খোঁজার দরকার নেই এখনই। আই লাইক হার ফুড.. ও রোজ লাঞ্চে আমার জন্য খাবার পাঠাতে পারে। ”

কথাটা শুনে বিশু কাকা বেশ অবিশ্বাস্য মুখ করে শারদীয়ার কাছে এসে বলেছিল,
——–” জানি না সূর্য আজ কোন দিকে উঠলো! তোমার ভাত ডাল তরকারি পছন্দ হয়েছে উজান স্যারের! বলেছে রোজ দুপুরে অফিসে খাবার পাঠাতে। আমি প্রায় পনেরো বছর হলো এই বাড়িতে কাজ করছি। এই প্রথম দেখলাম বাড়ির রান্না ছেলেটার এত মনে ধরেছে! তোমার হাতে এলেম আছে বলতে হবে। ”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেছিল বিশু কাকা। শারদীয়ার এইসব শুনে মুখে এক চিলতে হাসি চলে এসেছিল। এটা যদিও ওর কাজ, যার জন্য টাকা পায়, কিন্তু কাউকে রান্না করে খাওয়ানোর মধ্যে একটা আলাদা তৃপ্তি আছে। কথাটা হঠাৎ মনে হলো যেন।
তবে এর দুটো দিন পর শারদীয়া ছাইপাশ খাওয়ার মানে বুঝেছিল। সেদিন বিশু কাকা ছিল না বাড়িতে। শারদীয়া একাই ছিল। সেদিন হঠাৎ ওই রাত একটার সময় বাড়ির কলিং বেলটা বেজে উঠলো। শারদীয়া ঘুমের মধ্যে থেকে উঠে এসে দরজা খুলে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। উজান দরজার উল্টো দিকে একটা মেয়ের সাথে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় দু মিনিট মতন ওরা দুজনে দুজনের ঠোঁটে এতটাই হারিয়ে ছিল, যে শারদীয়া দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে এটা খেয়ালই করেনি কেউ। তারপর উজান একটু অন্যমনস্ক হয়ে দেখেছিল ওকে। সেই সময় উজানের চোখ দুটো মদের নেশায় লাল হয়ে ছিল। সেই ঘোলাটে দৃষ্টি নিয়েই ও ওই মেয়েটার সঙ্গে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। শারদীয়া এই মুহূর্তে খেয়াল করলো মেয়েটার হাতেও একটা বিয়ারের বোতল ধরা। তারপর দুজন টলতে টলতে উজানের রুমে চলে গেল। শারদীয়া এই মুহূর্তে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক জায়গায়। উজানকে এরকম রূপে প্রথম দেখেছিল আসলে, তাই বিশ্বাস করতে যেন একটা ধাক্কা লাগলো। তবে আজ মনে হলো তাড়াতাড়ি অন্য কোন কাজ খুঁজতে হবে ওকে। যেভাবেই হোক। এরকম লোকের বাড়িতে আসলে বেশিদিন থাকা যাবে না!
যাইহোক, তবে সেই রাতটা শারদীয়ার একটা সংশয়ের মধ্যে কাটলেও উজানের ভীষণ ভালো কেটেছিল। এই মেয়েটা রুবি। ওদের বিজনেস পার্টনারের মেয়ে। দুজনেই কাজের থেকে স্ট্রেস ফ্রি হওয়ার জন্য একটা পার্টিতে গেছিল সন্ধ্যে বেলা। তবে মদের নেশার সঙ্গে শরীরের নেশাটাও ভীষণ। তাই আস্তে আস্তে সেই সন্ধ্যেতে দুজনে একে অপরের প্রতি খুব এট্রাকটেড ফিল করেছিল। তারপর সেই রাতটায় দুজনে হারিয়ে গেছিল একে অপরের শরীরে।
এরপর মাঝে মাঝেই আসতো রুবি উজানের সাথে এই বাড়িতে রাত কাটাতে। উজানেরও আসলে রুবিকে বেশ পছন্দ ছিল। মেয়েটা ওর মতনই কমিটমেন্ট রিলেশনশিপে বিশ্বাস করে না। সেক্সটা ওর কাছে একটা মজা। একটা এনজয়মেন্ট। তাই দুজনের মিলেছিল ভালো। সেই জন্য উজান আর রুবি মাঝে মাঝেই হারিয়ে যেত একে অপরের শরীরে। শারদীয়া প্রায়ই মাঝ রাতে দরজা খুলে দেখতো উজান মদের নেশায় চুর হয়ে রুবির সাথে বাড়ি ফিরছে। তারপর দুজনেই চলে যাচ্ছে উজানের বেড রুমে। মদের গন্ধটা সেই সময় শারদীয়ার নাকে এসে লাগতো খুব। মনে হতো এই বাড়ির পরিবেশটা খুব বদ্ধ। দম বন্ধ হয়ে আসার মতন মাঝে মাঝে।

চলবে।