হয়তো তোমারি জন্য পর্ব-০৮

0
90

#হয়তো_তোমারি_জন্য ( অষ্টম পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
তবে এই চিন্তার ভিড়ে পরেরদিন উজানের সাথে বেরিয়ে যখন ভোরবেলা গঙ্গার ঘাটে পৌঁছলো, তখন সত্যি স্থির হয়ে গেল কেমন শারদীয়া। আকাশটা সেই সময় আগুনরঙা রঙে রঙিন হয়ে আছে। চারিদিকে পাখির আওয়াজ, আর সামনে শান্ত স্নিগ্ধ গঙ্গা চুপচাপ বয়ে চলেছে। সবটা মিলিয়ে অদ্ভুত একটা সৌন্দর্য আর শান্তি আছে এই জায়গায়। শারদীয়া তো এই দৃশ্য দেখে কেমন শব্দহীন হয়ে গেছিল কিছুক্ষণ। তখনই উজান জিজ্ঞেস করে উঠলো,
——–” কি হলো? ভালো লাগছে না এখানে এসে? ”
এই প্রশ্নে শারদীয়া বেশ অবাক হয়ে বললো,
———” শুধু ভালো না; অনেক অনেক বেশি ভালো লাগছে এখানে! আমি এক্সপেক্ট করিনি এরকম একটা জায়গায় আসবো আজ! ”
কথাটায় উজান এবার নিজের মনেই বলে উঠলো,
———” এটা আমার আর বাবার জায়গা। আগে ছোটবেলায় মাঝে মাঝেই বাবা নিয়ে আসতো এখানে, গঙ্গার ঘাটে; একদম ভোরবেলা। কত কি জিজ্ঞেস করতাম তখন বাবাকে! কত গল্প হতো। আর খুব সুন্দরভাবে শুরু হতো সকালটা।”
কথাটা শুনে শারদীয়া নিস্পলকভাবে তাকিয়েছিল ছেলেটার দিকে। বুঝতে পারছিল উজানের মনে এই মুহূর্তে অনেক স্মৃতির ভিড়। তবে ভালো লাগছিল শারদীয়ার, এই স্মৃতির কিছুটা ভাগ পাওয়ার জন্য।
তবে সেদিন শারদীয়াকে আরো অবাক করে দিয়ে উজান ওকে নিয়ে এরপর গেছিল সামনের একটা ছোট মিষ্টির দোকানে কচুরি খাওয়াতে। শারদীয়া তো এই মুহূর্তে চুপ না থেকে বলেই ফেলেছিল,
———” আপনি এইসব দোকানে খাবেন? মানে আপনাকে দেখে তো বোঝা যায় না! ”
এই প্রশ্নে উজান আলতো হেসে বলেছিল,
——–” এটা আমার বাবার ফেভারিট মিষ্টির দোকান ছিল। ছোটবেলায় অনেক আসতাম! আর বাবা মারা যাবার পর এতগুলো বছর বাদে এই প্রথম এলাম তোমার সাথে। যাইহোক, এখানকার কচুরি ট্রাই করো। সিরিয়াসলি দারুণ খেতে। ”

কথাটা শুনে শারদীয়া আলতো হেসেছিল।
তবে এবার উজান এই মুহূর্তে হঠাৎ অন্য একটা কথা বলে উঠেছিল। বেশ চিন্তিত মুখ করেই বলেছিল,
,——-” আচ্ছা, তোমার কি আমাকে খুব বয়স্ক লাগে? ভীষণ সিনিয়র কেউ? ”
প্রশ্নটা শুনে শারদীয়া কোন মানে খুঁজে পায়নি ঠিক। তাই চোখ দুটো বড় বড় করেই বলেছিল,
——–” না না! বয়স্ক লাগতে যাবে কেন? সেরকম কিছুই না! ”
এই কথায় উজান সাথে সাথেই বলে উঠেছিল,
——–” তাহলে এইভাবে আপনি আজ্ঞে কেন করো সারাক্ষণ? তুমি করে কি বলা যায় না?”
এই প্রশ্নে শারদীয়া সত্যি ঘাবড়ে গেছিল। কি উত্তর দেবে ঠিক ভেবে পাচ্ছিল না। তবে উজান এবার বেশ জোর দেখিয়ে বলেছিল,
——–” আজ থেকে আপনি আপনি করা ভুলে যাও। আই অ্যাম নট ইওর বস.. আই অ্যাম ইওর ফ্রেন্ড.. সো কল মি উজান। ”
কথাটা শারদীয়ার চোখে চোখ রেখে বলেছিল উজান। তবে শারদীয়া এরপরও কি বলবে বুঝতে পারেনি! তবে ভালো লেগেছিল সেই মুহূর্তটা। আসলে উজানকে আজ যত কাছ থেকে দেখছিল, ততোই যেন জড়িয়ে যাচ্ছিল ছেলেটার সাথে। ওর সরল হাসি, সাধারণ কথা মন ছুঁয়ে যাচ্ছিল শারদীয়ার। কেমন ভালো লাগা এসে জমা হচ্ছিল মনে, উজানের জন্য।

কিন্তু সেদিনের পর থেকে উজান নিজের সমস্ত আড়াল ভেঙে মিশতে শুরু করেছিল শারদীয়ার সাথে। আজকাল ও আর ড্রিঙ্ক করে না। নাইট ক্লাবে যায় না। পার্টি করে না। কেমন যেন বদলে যাচ্ছে নিজে থেকেই প্রত্যেকদিন। এখন কাজের পর সোজা বাড়ি ফেরে উজান। তারপর সব সময় যেন শারদীয়ার কাছেই থাকতে চায়। এই যেমন সেইদিন শারদীয়া রান্নাঘরে কিছু একটা বানাচ্ছিল, তখন উজান এসে হাজির। তারপর বেশ আবদারের সুরে বললো,
———” আমিও রান্না করবো। আই ক্যান ডু চপিং..”
কথাটা বলেই সামনে রাখা সবজি গুলো কাটতে শুরু করেছিল। শারদীয়া এই মুহূর্তে বেশ উত্তেজিত হয়েই বলেছিল,
——–” আরে, এসব করছো কেন! হাত কেটে গেলে তখন! ”
এটা শুনে উজান বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বললো,
——–” আরে! হাত কাটতে যাবে কেন! আমি কি বাচ্চা না কি? আমি খুবই ভালোভাবে ভেজিটেবলস চপ করতে পারি। তুমি শুধু দ্যাখো একবার। ”
কথাটা বলতে বলতেই উজান টমেটোর জায়গায় নিজের আঙ্গুলেই ছুরি বসিয়ে দিল হঠাৎ। তারপর চিৎকার করে উঠলো যন্ত্রণায়। শারদীয়া এই সময় ঘাবড়ে গিয়ে খেয়াল করলো উজান হাত কেটে ফেলেছে নিজের। ও তাড়াতাড়ি উজানের হাতটা ধরে বেশ চেঁচিয়ে বললো,
——–” বলেছিলাম, হাত কেটে যাবে। দেখলে তো কি হলো! ”
তারপর তাড়াহুড়ো করে ওর হাতটা ধুইয়ে ফার্স্ট এড বক্স এনে কাটা জায়গাটায় ওষুধ ব্যান্ডেড লাগিয়ে দিয়েছিল। এই সময় শারদীয়ার মুখটা কেমন অন্ধকার হয়ে গেছিল উজানের রক্ত দেখে। তবে উজান পুরো ব্যাপারটা বেশ এনজয় করছিল। শারদীয়ার ওর জন্য চিন্তা, কনসার্ন এইসব দেখতে বেশ ভালো লাগছিল যেন। মনে হচ্ছিল এই মেয়েটার কাছে ওর দাম আছে তাহলে! এইসবই ভাবছিল অপলক দৃষ্টিতে শারদীয়ার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। ততক্ষণে ওর হাতে ব্যান্ডেড লাগানো হয়ে গেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে শারদীয়া বেশ গম্ভীর হয়েই বলল,
——–” এই জন্য আমি বারণ করছিলাম সব্জি কাটতে। দেখলে তো, কিভাবে কেটে গেল হাতটা! ”
এই কথাটা শুনে উজান আর চুপ না থেকে অল্প হেসে বললো,
——-” মাঝে মাঝে এরকম হাত কাটা ভালো। অন্যের চোখে নিজের জন্য কনসার্ন দেখা যায়। ”
কথাটা বলতে বলতে ভীষণ স্থিরভাবে তাকিয়েছিল ও শারদীয়ার দিকে। যেন অনেক কিছু বোঝাতে চাইছিল ও মেয়েটাকে শব্দহীন ভাবে। তবে শারদীয়া সবটা বুঝেও কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছিল না ঠিক। অদ্ভুত একটা লজ্জা এসে ঘিরে ধরছিল ওকে। সেই জন্য কথাটা ঘুরিয়ে বললো,
——–” আমি আসছি। রান্নাঘরে অনেক কাজ আছে আসলে। ”
কথাটা বলে কোন রকমে নিজেকে গুটিয়ে চলে গেছিল ও। তবে উজান এরপর আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি। উজান যে শারদীয়াকে ভীষণ মন থেকে ভালোবাসে এটা বলেছিল নিজে থেকে কটা দিন বাদেই।
সেই দিনটা ছিল শারদীয়ার জন্মদিন। উজান এই দিনটার কথা বেশ কিছুদিন আগে শারদীয়ার মুখে শুনেছিল। তবে এই ১৬ই জানুয়ারি দিনটাকে যে মনে রাখবে ছেলেটা, এটা ও কল্পনাও করেনি। তবে অবাক হয়েছিল যখন সেইদিন সন্ধ্যের পর হঠাৎ শারদীয়ার ঘরের দরজায় শব্দ হয়েছিল। ও কিছু না ভেবেই দরজা খুলে পুরো অবাক হয়ে গেছিল যেন! উজান একটা কেক সমেত হাজির ওর সামনে। শারদীয়া কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছিল না সেই মুহূর্তে! আসলে ওর জন্মদিনও যে কেউ মনে রাখতে পারে, এটা ভেবেই কিরকম অন্য রকম লাগছিল আজ। তবে সেদিন উজান কেকের সঙ্গে একটা কার্ডও দিয়েছিল শারদীয়াকে। যেটাতে ও ওর মনের ফিলিংসটাকে লিখে রেখেছিল শব্দ দিয়ে। সেদিন ও শারদীয়ার হাতে কার্ডটা দিয়ে কিরকম নার্ভাস ফিল করছিল যেন! এই প্রথম কাউকে ‘ ভালোবাসি ‘ বলছে। আসলে জীবনে যে কারোর জন্য এইভাবে ফিল করবে মন থেকে, এটাই ও ভাবেনি কোনদিন! তাই আলাদা রকমেরই টেনশন হচ্ছিল আজ।
তবে শারদীয়া এই মুহূর্তে কার্ডের লেখাগুলো পড়ে কেমন থমকে গেছিল যেন! ও কিরকম স্থির গলায়ই জিজ্ঞাসা করেছিল,
——-” এইসব কি লেখা! এইসবের মানে? ”
কথাটা শুনে উজান নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বলেছিল,
———” একচুয়ালি আই লাইক ইউ.. মোর দ্যান আ ফ্রেন্ড.. এরকম ফিলিংস এর আগে আমার কারোর জন্য হয়নি। মানে তোমার জন্য আমার পুরো লাইফটা বদলে গেছে! ইউ আর দ্যা ওয়ান, যার জন্য আমি চেঞ্জ হয়ে গেছি। সরি, এইসব হঠাৎ এইভাবে বললাম বলে। আই হোপ ইউ ডোন্ট মাইন্ড! মানে, না বলে থাকতে পারলাম না আর! ”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেছিল উজান। কিন্তু শারদীয়া চুপ হয়ে গেছিল যেন কয়েক সেকেন্ড। তারপর কিছুটা এলোমেলো হয়েই বলেছিল,
———” এইসব কি বলছো! আমাদের মধ্যে কোন মিল নেই। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড, ক্লাস, সব আলাদা। আমাদের মধ্যে কখনোই কিছু সম্ভব না। আর আমার মনে হয় আমার আর এই বাড়িতে থাকা উচিত না। ”
কথাটা শুনে উজান শারদীয়াকে শক্ত করে ধরে বলেছিল,
——-” শারদীয়া প্লিজ! ডোন্ট সে সাচ থিংস্! এখন তো তুমিই আমার ফ্যামিলি। আমার সব থেকে নিজের। এই বাড়িটা তোমাকে ছাড়া ইনকমপ্লিট.. আর এই স্ট্যান্ডার্ড ক্লাস, এইসব কথা বলে আমাকে ছোট কোরো না প্লিজ। টাকা দিয়ে আমাকে জাজ কোরো না অন্তত। আর তোমার সাথে আমার মিল নেই এটা কিভাবে বলছো তুমি! তোমার জীবন আর আমার জীবন তো একই। একটা কাছের মানুষ নেই আমাদের। একটা ফ্যামিলি নেই। কিন্তু তারপরও যদি তুমি আবার আমাকে একা করে চলে যেতে চাও; আমার কিছু বলার নেই! কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমি আর আমার একটা দিনও ভাবতে পারি না। সব কিছু শেষ মনে হয়। ”
কথাগুলো খুব জোর দেখিয়ে বললো উজান। শারদীয়া এই মুহূর্তে খেয়াল করলো ছেলেটার চোখের কোণে জল জমেছে। মুখটা অন্ধকার হয়ে গেছে। কাউকে ভালোবাসলেই এই জলটা আসে চোখে। এটা দেখে শারদীয়া আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না! নিজের চারিদিকে তৈরি শক্ত কাঁচের দেয়ালটা ভেঙে নিজেও জড়িয়ে ধরলো উজানকে। খুব শক্ত করে। আসলে ভালো তো ও ও বেসেছিল। এতগুলো দিন ধরে, রোজ একটু একটু করে উজানের সাথে বাঁধা পড়ে গেছে ও। সেই জন্যই তো চাকরি পাওয়ার পরও এই বাড়িটা ছেড়ে যেতে পারেনি কখনো। এই ছেলেটার জন্য ওর এতটা টান, এতটা মায়া! কিন্তু শুধু কিছু বলতে পারেনি কখনো। শুধু প্রত্যেকটা দিন, প্রত্যেকটা মুহূর্তে চুপ করে রয়ে গেছে এই অন্তহীন সম্পর্কের মধ্যে।
এরপরের দিনগুলো দুজনের কেটেছিল স্বপ্নের মতন। উজান শারদীয়াকে বিয়ে করার কথা পর্যন্ত ভাবতে শুরু করেছিল। যেই ছেলেটা এতদিন সম্পর্কে জড়াতে ভয় পেত, সে ই আজ শারদীয়াকে নিজের জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখতে চাইছিল। আসলে এতদিন বাদে মনে হয়েছিল একটা নিজের লোক খুঁজে পেয়েছে, তাই শারদীয়াকে আঁকড়ে ধরেছিল উজান।
তবে উজানকে নিয়ে আরো একজন স্বপ্ন দেখছিল রোজ ওর অজান্তে। তিস্তা। মেয়েটা এক মিনিটের জন্য ভুলতে পারছিল না উজানকে প্রথম দেখা হওয়ার পর থেকে। তাই কারণে অকারণে ওর অফিসে এসে হাজির হতো, ফোন করতো, মেসেজ করতো। যদিও উজান দরকারের বেশি কখনোই কথা বাড়াতো না ওর সাথে। কিন্তু তিস্তার এটাতে খুব অবাক লাগতো। ওর মতন সুন্দরীকে কেউ এটেনশন না দিয়ে থাকছে কি করে দিনের পর দিন! সেদিনও উজানের অফিসে এসে তিস্তা এই কথাটাই ভাবছিল। ওর লাস্ট এড শুটের জন্য পেমেন্টটা নিতে এসেছে আজ। যদিও অন্য কোথাও হলে এই ছোটখাটো কাজের জন্য তিস্তা নিজের এসিসটেন্টকে পাঠিয়ে দিতো। কিন্তু এই অফিসে যেহেতু উজান আছে, তাই ওকে আসতেই হবে যে কোন অজুহাতে। সেদিন এইসব ভাবতে ভাবতেই করিডোরের চেয়ারে বসেছিল। তবে উজান অফিসে ঢোকার সময় করিডোরে ওকে ঠিক খেয়ালই করলো না যেন। নিজের মতন ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে কেবিনে ঢুকে গেল। আর তিস্তা অপলক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। এক ঘন্টা ধরে ও বসে আছে এখানে; যাতে উজানের সাথে কিছু কথা হয়! কিন্তু উজান ওর দিকে তাকালো অব্দি না! ভেবেই মনে ভীষণ রাগ তৈরি হলো হঠাৎ। তবে ওর পাশের চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরে এই পুরো ঘটনাটা খেয়াল করছিল। তিস্তা যে উজানকে লাইক করে, সেটা যে কেউ ওর চোখ মুখ দেখলে বুঝতে পারবে! কথাটা ভেবেই মেয়েটা নিজে থেকে বলে উঠেছিল তিস্তাকে,
——” হাই.. এম রুবি.. ”
কথাটা শুনে তিস্তার যেন স্তম্ভিত ফিরলো। ও একটু থমথমে মুখে এবার রুবির দিকে তাকালো। রুবি এই মুহূর্তে নিজে থেকেই বললো,
——–” যাকে দেখছো, তাকে দেখে কোন লাভ নেই। উজান এখন একজনের দিকেই তাকায়। ফুললি ডেডিকেটেড লাভার.. মেয়েটার নাম শারদীয়া। ওরই বাড়িতে থাকে। গোল্ড ডিগার যাকে বলে! ইনোসেন্ট একটা ফেস নিয়ে উজানের মতন ছেলেকে চেঞ্জ করে দিল! নইলে তো একটা সময় আমার সাথেও! ”
না কথাটাকে আর শেষ করতে পারলো না রুবি। তবে খেয়াল করলো এইসব শুনে তিস্তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। মুখে অদ্ভুত একটা রাগ এসে জমা হয়েছে। চোখ দুটো লাল হয়ে এসেছে যেন ওর। তবে এই মুহূর্তে রুবি খুশিই হয়েছিল এটা দেখে। কারণ ও আগুনই তো লাগাতে চেয়েছিল। তাই মনে মনে হেসেছিল আজ।
যাইহোক, সেদিনের পরও দিনগুলো এগোচ্ছিল নিজের মতন করে। এর মধ্যে উজান আর শারদীয়া রেজিস্ট্রির জন্য এপ্লাই করে দিয়েছে। এক মাস পরের ডেটটা দুজনে ফাইনাল করেছে বিয়ের জন্য। এর মধ্যে টুকটাক কেনাকাটি এরেঞ্জমেন্টস চলছিল বিয়ের। দিনগুলো কেমন স্বপ্নের মতন ছিল যেন। তবে স্বপ্ন যে এক ধাক্কায়ই ভেঙে যায়; আর রুক্ষ বাস্তব সামনে চলে আসে হঠাৎ! এই সুন্দর দিনগুলোর মাঝে সেদিন উজানের সাথেও তাই হয়েছিল।

ও আজ অফিস থেকে বিয়ের রিসেপশনের ভ্যেনু দেখতে গেছিল। তারপর সব ফাইনাল করে যখন বাড়ি ফিরেছিল, তখন রাত নটা। বিশু কাকাই দরজা খুলে দিয়েছিল সেইদিন। তবে আজ বিশু কাকার মুখটা ভীষণ থমথমে ছিল। উজান সেটা দেখে বুঝতে পারছিল কিছু একটা হয়েছে, তবে ওর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বিশু কাকা বলেছিল,
———” দ্যাখো গিয়ে একবার শারদীয়ার ঘরে কি চলছে! ছিঃ। এতদিন দেখতাম তুমি অফিস চলে যাওয়ার পর ওই ছেলেটার সাথে এদিক ওদিক বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তুমি মেয়েটাকে এত ভালোবাসো বলে আমি কিছু আর বলিনি। কিন্তু আজ; আজ তো সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ছেলেটাকে নিয়ে এই বাড়িতেই! ”
কথাগুলো আর শেষ করতে পারলো না বিশু কাকা। তখনই উজান ভীষণ অবাক হয়ে বললো,
——–” এসব কি বলছো কি তুমি শারদীয়াকে নিয়ে! মাথার ঠিক আছে তো তোমার? ”
কথাটা শুনে বিশু কাকা বেশ জোর দিয়ে বললো,
——-” আমি আর কিছুই বলছি না। তুমি নিজে শারদীয়া দিদিমণির ঘরে গিয়ে দ্যাখো কি চলছে। ”
এটা শুনে উজান আর এক সেকেন্ডও ওয়েট করলো না। তাড়াতাড়ি পা চালালো শারদীয়ার ঘরের দিকে। তারপর ভিতর থেকে ভেজানো দরজাটায় একটা ধাক্কা মারতেই হাট করে খুলে গেল উজানের সামনে, আর উজানের পুরো পৃথিবীটা ওলোট পালোট হয়ে গেল কেমন।

চলবে।