#হলুদ_শহরের_প্রেম – [১১]
লাবিবা ওয়াহিদ
নিশাতের পরীক্ষা শেষ সপ্তাহখানেক হলো। ছুটিতে সে মামা বাড়ি বেড়াতে চলে গেছে৷ নিপুণও বেড়াতে বাঁধা দেয়নি। একা বাসায় কী করবে? তার চেয়ে ভালো বড়ো মামার সাথে থেকে আসলো। নিপুণের তিনজন মামা। বড়ো মামা দেশে থাকলেও বাকি দুই মামা অস্ট্রেলিয়াতে শিফট। নিপুণের নানুবাড়ির পরিবার শুরু থেকেই বেশ বিত্তশীল ছিল। সেটারই সৎব্যবহার করেছিল নিপুণের বাবা। তিন ভাইয়ের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করায় সময়ে, অসময়ে অনেক কিছুই পেয়েছে সে। এজন্য যখন তালাকের কথা ওঠে, ব্যাপারটা কিছুতেই মানতে পারেনি নিপুণের বাবা। এখন নিপুণের মা নেই, দুই ভাই-বোনই ভরসা। কিন্তু তারাও নাগালের বাইরে চলে গেছে। নিপুণকে তাও একবার বিয়ে দিয়ে লাখ টাকার কামাই হয়েছিল। এখন তো কোনো কামাই-ই নেই। তবুও নিশাত তার উত্তরাধিকার, দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে উত্তরাধিকার দিতে পারেনি। সেই হিসেবেও নিশাতকে তার লাগত।
রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে। প্রায় পনেরোদিন ধরে তার বিয়ের প্রস্তুতি চলছে। নিপুণ না চাইলেও রিয়া প্রায়ই তাকে নিয়ে এখানে সেখানে যাচ্ছে বিয়ের শপিং এর জন্য। নিপুণের এসব ভালো না লাগলেও বাধ্য হয়ে যেতে হয়। মেয়েটা ইমোশনালি ব্লেকমেইল করতে পারে প্রচুর।
আজ মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার রিয়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। রিয়া তাকে ইনভাইট করেছে হলুদের অনুষ্ঠানে। কিন্তু এই অনুষ্ঠান চলবে মধ্যরাত অবধি। তাই নিপুণ যাবে নাকি যাবে না সে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে।
রাত এখন নয়টা বাজে। গলিতে আনমনে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছে নিপুণ। হাঁটতে হাঁটতে অনুভব করলো, কেউ একজন তার পিছু নিচ্ছে। সহসা পিছে না চাইলেও হুট করে পিছে ফিরে তাকালো। পিছে তাকাতেই দেখলো সুপ্ত। হাতে মোবাইল, মোবাইলের স্ক্রিন অন। নিপুণ সুপ্তকে দেখেই রেগে গেলো। হতভম্ভ গলায় বলল,
–“আপনি আমার পিছু নিচ্ছেন কেন?”
সুপ্ত ভ্রু নাচিয়ে দুই ধাপ এগিয়ে আসলো। তর্জনী দিয়ে পিচঢালা রাস্তায় ইশারা করে বলল,
–“এই রাস্তা সরকারি সম্পত্তি, এখান দিয়ে হাঁটা মানে যে কারো পিছু নেওয়ার মানে তো বুঝলাম না।”
বেশ অনেকদিন পর সুপ্ত নিপুণের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। নয়তো প্রায়ই বিভিন্ন কাজে, সম্মেলনে তাকে দেখা যেত। রাস্তায় দেয়ালে, দেয়ালে সুপ্তের জন্য ভোট চেয়ে পোস্টারও ঝুলছে ইদানীং। এমতাবস্থায় সুপ্তের মুখোমুখি হওয়ার পর থেকেই নিপুণের ভেতরটা কেমন দুরদুরু করছে। এই প্রথম অচেনা অনুভূতির সম্মুখীন হলো নিপুণ। তবুও অনুভূতিকে দমিয়ে রেখে আবারও বলল,
–“তো আমি দাঁড়ানোতে আপনি দাঁড়ালেন কেন?”
–“তুমি আমার আপন মানুষ, দাঁড়াতেই পারি।”
–“আমি আপনার কেউ নই।”
–“আচ্ছা, কেউ নও। তবে এই পথ আমার বাসার দিকেই পড়ে। এখন কী আমার বাসায় গেলেও দোষ হবে?”
সুপ্তের ত্যাড়া প্রশ্নে নিপুণ ফুঁসলেও কিছু বললো না। সে হাঁটতে লাগলো। আর সুপ্ত তার পিছে পিছে। সুপ্ত হাঁটতে হাঁটতে নিপুণের উদ্দেশে ক্ষীণ গলায় বলল,
–“আমি কিন্তু আসলেই তোমার পিছু নিচ্ছিলাম। কতদিন তোমার ছায়ার সাথে মিশি না। না জানি কোন বান্দরের ছানা তোমার দিকে চোখ উঠিয়ে তাকায়। আমার আবার সহ্য হবে না হবু স্ত্রীর দিকে কারো চোখ তুলে তাকানো।”
নিপুণ আচমকা থমকে গেল সুপ্তের কথা শুনে। সে এতটাই হতভম্ভ হয়েছে যা তার চোখ-মুখে নিদারুণ প্রকাশ পাচ্ছে। সুপ্ত তা দেখে বলল,
–“দ্রুত চলো। নয়তো মানুষজন ভাববে মাহদী সুপ্ত চুপিচুপি বিয়ে করে নিয়েছে তোমাকে। তুমি কী এখন আমার বউ ডাক শুনতে চাইছ?”
পিলে চমকে উঠলো নিপুণের। ভেতরটা পুণরায় ধ্ক করে উঠলো। আজ এমন অনুভূতি হচ্ছে কেন তার? সামলানোই দায় হয়ে পড়ছে নিজেকে৷ নিপুণ দ্রুত পায়ে চলে গেলো বাড়ির দিকে। গেট দিয়ে ঢুকে সিঁড়ির দিকে যেতেই আরেকবার পিছে তাকালো। এ কী! সুপ্ত তো দেখছি লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে। নিপুণ চোখ কপালে তুলে বলল,
–“পিছু নিতে নিতে আমার বাড়ি অবধি চলে এসেছেন?”
সুপ্ত ভ্রু কুচকে তাকায় নিপুণের দিকে। সরু গলায় বলল,
–“ও হ্যালো ম্যাডাম! এটা আমার মানে আপনার শ্বশুরবাড়ি। আপনি আপনার শ্বশুরের বাড়িতেই ভাড়া থাকছেন!”
নিপুণের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো বিরাট আকাশটা তার মাথায় এসে বিকট শব্দের সাথে পড়ল! সুপ্তের অধরে তখন বিচরণ করছে দুষ্টুমির হাসি। যেন নিপুণকে এরকম এক চমক দেওয়ার অপেক্ষাতেই বসে ছিল এতদিন যাবৎ। নিপুণের বিস্ময় ভাব তখনো কাটছে না। অস্ফুট স্বরে বলল,
–“আঙ্কেল না বললো তাঁর সাথে তাঁর ছেলে থাকে? শুরুর দিকেই তো আঙ্কেলের ছেলেকে দেখলাম।”
–“ওটা আমার ভাই ছিল, বড়ো ভাই। তবে আমাদের সাথে থাকে না। চাকরির জন্য ফ্যামিলি নিয়ে অন্যত্র থাকছে। আমিই বাবা-মায়ের সাথে থাকি।”
–“আপনি জানতেন আমি এখানে থাকছি?”
এই পর্যায়ে এসে সুপ্ত দাঁত দিয়ে অধর কামড়ে নিপুণের দিকে চেয়ে রইলো। তার ভাব-ভঙ্গিতে বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যাচ্ছে শুরু থেকে এই অবধি সবটাই সুপ্তের হাড়ে হাড়ে জানা। নিপুণের চট করেই মাথায় এলো, প্রায়ই তার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে ফুলের তোড়া থাকত। সুপ্তকে সন্দেহ করলেও ঠিকানা কী করে জানবে ভেবে সুপ্তের ব্যাপারটা মাথায় আসত না। অথচ এখন মনে হচ্ছে বাঘের খাচায় সে নিজে এসেই ধরা দিয়েছে। আজ রাতারাতি কয়েকটা ধাক্কা গিলতে হলো নিপুণকে। টলমলে পায়ে সে সিঁড়ির দিকে যেতে নিলো ওমনি সুপ্ত বলে ওঠে,
–“এতদিন ইচ্ছাকৃতই তোমার সামনে আসিনি, ঠিক এরকম এক চমক দেওয়ার জন্য। উফ, এত্ত সেটিসফাইড ফিল হচ্ছে না! থ্যাঙ্কিউ নিপুণ, এভাবে চমকানোর জন্য।”
নিপুণ ঘাড় বাঁকিয়ে চোখ রাঙিয়ে চাইলো সুপ্তের দিকে। এতে করে সুপ্ত হাসলো।
নিপুণের কী হলো কে জানে। পরেরদিনই সে জ্বরে কাবু হয়ে বিছানায় পড়ে রইলো। এখন জ্বর সিজন চেঞ্জের জন্য নাকি অতিরিক্ত ধাক্কা নেওয়ার জন্য সেটা বোঝা দুষ্কর। নিশাত বাড়িতে নেই। পুরো বাসায় নিপুণ একা। জ্বরের জন্য সকালে নাস্তা খেতেও উঠতে পারলো না। অফিস থেকে কোনো রকমে ছুটি নিয়ে বেলা বারোটা অবধি বিছানায় পড়ে রইলো। যোহরের আগে নিশাত কল দিলো। নিপুণ জানালো তার জ্বর।
নিশাতের সাথে কথাবার্তা শেষ করে সে উঠে বসলো। কিন্তু অতিরিক্ত মাথা ঘুরাচ্ছে, টালমাটাল লাগছে। তবুও উপায় নেই, সুস্থ হতে হলে কিছু খেয়ে ওষুধটাও খেতে হবে। দেয়াল, ফার্ণিচারে হাতের সাহায্যে ভর দিয়ে দিয়ে সে কিচেন অবধি গেলো। গতকাল পাউরুটি কিনে এনেছিল। কোনোরকমে দুধ গরম করে দুই পিছ পাউরুটি খেয়ে নিলো। কিন্তু এতে কী আদৌ পেট ভরে? খুদা যেন আগের মতোই রয়ে গেছে। জ্বরের শুরুতে অদ্ভুত ভাবে মানুষের খাবারের প্রতি রুচি বেড়ে যায়। জ্বরে ভুগা মানুষটির ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে ইচ্ছে করে। যা নিপুণের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে তার আবদার মেটানোর কেউ নেই। টেবিলে দুই কনুইয়ের ভার দিয়ে কপালে হাত চেপে বসে রইলো কিছুক্ষণ। ঘরের গোছগাছ হয়নি, কিছু জামা-কাপড়ও জমিয়ে রেখেছে ধোঁয়ার জন্য। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না জ্বরের খপ্পরে পড়ে। দুশ্চিন্তা নিয়ে সেখানেই থম মেরে বসে রইলো, যতক্ষণ পর্যন্ত না কলিংবেল বেজে উঠলো।
চারিপাশ যোহরের আযানে মুখোরিত তখনই আচমকা দরজার বেল বেজে ওঠে। নিপুণ ভীষণ চমকে যায়, এই অসময়ে কে আসলো? বাড়িওয়ালীর বাসা থেকে কেউ নয়তো? চট করে নিপুণের মাথায় খেলে গেল, এই বাড়ির মালিক স্বয়ং সুপ্তের বাবা। মনটা ভার হয়ে এলো নিপুণের। যখন ওনারা জানবেন সুপ্ত তার পিছে ঘুরে তখন তাঁরা কী ভাববেন, নিশ্চয়ই কষ্ট পাবেন। বড্ড ভালো মানুষ তাঁরা। আর নিপুণ যে তাঁদের চোখে ছোটো হবে সেটা সে নিশ্চিত।
আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কোনোরকমে দরজা খুললো নিপুণ। দরজা খুলতেই দেখলো কিসের যেন প্যাকেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাসুদা। বরাবরের মতোই তার মুখে হাসি। নিপুণ শুকনো হেসে বলল,
–“তুমি।”
মাসুদা চটপট ভেতরে প্রবেশ করলো। বলল,
–“আপনের নাকি জ্বর! এইজন্যু সুপ্ত ভাইজান আপনের জন্যে খাওন আর ওষুদ পাঠাইলো আমারে দিয়া।”
পিলে চমকে ওঠে নিপুণের। সুপ্ত পাঠিয়েছে? মাসুদার হাত দিয়ে? মাসুদা তো সুপ্তের বাসায় কাজ করে, সুপ্তের মায়েরও বেশ ক্লোজ। এর মানে কী ওরা কিছু জানে? মুহূর্তেই নিপুণের গলা শুকিয়ে কাঠকাঠ হয়ে গেল। ইচ্ছে করছে দৌড়ে কোথাও পালিয়ে যেতে।
নিপুণ কাঁপা গলায় বলল,
–“স..সু..সুপ্ত?”
মাসুদা মাথা নেড়ে বলল,
–“হ, আমাগো বাড়িওয়ালীর ছুডু পোলা। সামনে ইলেকশনে দাঁড়াইব। আপনের ছুডু ভাই নাকি ওনারে কল দিয়া কইছে খাওন আর ওষুধ পাঠাইতে, এইল্লিগা দীপক ভাইজানরে দিয়া কিনাইয়া আমার হাত দিয়া পাঠাইলো।”
হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো নিপুণ। এর মানে আহামরি কিছু নয়। খাবার চেক করতেই দেখলো দুই প্যাকেট বিরিয়ানি সহ আরও কিছু শুকনো খাবার। আর এন্টিবায়োটিক ওষুধও দিয়েছে। সব মিলিয়ে নিপুণ কত খরচ হয়েছে তা অনুমান করতে লাগলো। সুপ্তকে এগুলোর টাকা ফিরিয়ে দিবে, দিতেই হবে। এর মাঝে হুট করে মাসুদা বলল,
–“আপনের কোনো কাজ আছে? করে দিমু? আমার হাতের কাম কিন্তু একদম চকচইক্কা।”
নিপুণ তাকালো মাসুদার দিকে। মাসুদার চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে কাজ করতে আগ্রহী। নিপুণ তার ঘরের অবস্থা দেখে ভাবলো কাজ করানোই যায়। কাজ শেষে নাহয় টাকা হাতে গুঁজে দিবে। নিপুণ বলল,
–“হাতে সময় আছে তোমার?”
–“হ, ম্যালা।”
–“তাহলে করো কাজ।”
সাবিনা মাসুদার উপর মহা বিরক্ত। মেয়েটা কাজ ফেলে যে কোথায় হারিয়ে গেছে বুঝতেই পারছে না। এই মেয়েকে নিয়ে সে আর পারে না। সুপ্ত তখন ফিরেছে সবে। সাবিনা সুপ্তকে খেয়াল করতেই মাসুদাকে নিয়ে গাল-মন্দ শুরু করে দিলো। তা শুনে ফোনে নজর রেখে সুপ্ত বলল,
–“মাসুদা কাজে গেছে আম্মা।”
সাবিনা ভ্রু কুচকালো। মাসুদার আবার কোন কাজ? কিসের কাজ? সুপ্তের অর্ধেক কথার অর্থ সাবিনা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল,
–“কার কাজ? কিসের কাজ?”
–“একজন অসুস্থ মানুষের সেবা করতে গিয়েছে।”
সাবিনা অবাক হলো। সুপ্তও প্রশ্ন করার সুযোগ দিলো না মাকে। ধপাধপ পা ফেলে ভেতরে চলে গেলো। সাবিনার মনে তখন অসংখ্য প্রশ্ন।
বিকালের কিছুক্ষণ আগে মাসুদা ফিরল। তবে সাবিনার কাছে না গিয়ে আগে গেলো সুপ্তের ঘরে। সুপ্ত ঘরেই ছিল। মাসুদাকে দেখতেই সুপ্ত বলল,
–“কাজ করে দিয়ে আসছিস?”
–“হ ভাই। মাইয়াডা এতু অসুস্থ, বিছানায় পইড়া গেছে। আমি না গেলে যে কী হইত ভাবলেই আত্মা কাইপ্পা উডে।”
বলেই মাসুদা কিছু টাকা সুপ্তের দিকে এগিয়ে দিলো। সুপ্ত ভ্রু কুচকে তাকালো সেই টাকার দিকে। মাসুদা বলল,
–“যা কিন্না পাডাইছেন তার সব টাকা আপনেরে দিতে কইলো আপায়। আমারেও কিছু বখশিশ দিছে কাম কইরা দেওয়ার জন্যে।”
সুপ্ত সেই টাকার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। ল্যাপটপে নজর স্থির রেখে বলল,
–“এগুলা তুই নিয়ে যা। সব তোর। আমার থেকেও কিছু পাবি।”
মাসুদার মনে হলো সে আজ বড়ো সুখী মানুষ। আজকে কার মুখ দেখে উঠেছে কে জানে? এক ধাক্কায় কতগুলো টাকা উপার্জন হয়ে গেল তার। মুহূর্তেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ল মাসুদা।
রাতে সুপ্তের মেসেজ এলো নিপুণের ফোনে। নিপুণ তখন বেশ কিছুটা সুস্থবোধ করছে। ফোন হাতে নিয়েই মেসেজটা পড়ল,
–“এইযে আমার রানি,
অসুস্থতার স্পর্ধা কী করে হলো তোমায় ছুঁয়ে দেওয়ার? এখনো তো আমি তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম না, আর অসুস্থতা তোমায় কাবু করে ফেলল?
খুব আফসোস হচ্ছে এই মুহূর্তে তোমাকে একা রাখতে। আমি তোমার পাশে থাকলে অসুস্থতাকে একদম ভাগিয়ে ছাড়তাম। নিপুণ, একা থাকতে কী খুব কষ্ট হচ্ছে? ভয় পাচ্ছ? ভয় পেলে বলে দাও। আমি এখনই আসছি।”
নিপুণ শেষের লাইন পড়ে হকচকিয়ে উঠলো। দ্রুত হাতে টাইপিং করলো,
–“খবরদার, একদম না। আমি ঠিক আছি।”
–“সত্যি?”
–“হুঁ।”
–“তুমি নাহয় ঘুমিয়ে গেলে কিন্তু তোমার চিন্তায় আমি কী করে ঘুমাব বলো তো? আমার মন অসুস্থ করে রেখেছ। এই অসুস্থতাকে না পারি সহ্য করতে, না পারি দূরে ঠেলে দিতে। কবে আমার হয়ে আমাকে সুস্থতা নিশ্চিত করবে নিপুণ? আমি তোমার অপেক্ষার অসুখে প্রতিনিয়ত কাতর হচ্ছি জানো?”
নিপুণ মনমরা হয়ে চেয়ে রইলো মেসেজটার দিকে। তার জীবনের একটা দাগের জন্য সে বারবার সুপ্তকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। কী করে চাইবে নিজের সাথে সুপ্তের মতো মানুষকে জড়াতে? এ যে জীবনের সবচেয়ে কঠিন স্বার্থপরতা হবে সুপ্তের সাথে, সুপ্তের পরিবারের সাথে। এক ঘ্রাণময়, সৌন্দর্যে ভরপুর বাগানে কী করে তার মতো ময়লা প্রবেশ করবে?
নিপুণ ভার মুখে টাইপিং করল,
–“যখন দেখবেন আমি আপনার হবো না, যখন আপনি অন্য কারো হবেন তখন ভাববেন বেহুদাই একটা পেছনে সময় নষ্ট করেছেন! তাই সময় থাকতে বলছি, নিজের ভালো টা বুঝুন।”
সুপ্তের মেসেজ আসলো না। নিপুণ কেন যেন অপেক্ষা করতে লাগলো সুপ্তের মেসেজের। কিন্তু আসছে না। এবার নিপুণ কিছুটা অস্থির হলো, কাতর হলো। এই প্রথমবার। আপনমনেই ভাবলো সুপ্ত কেন মেসেজ দিচ্ছে না? অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সুপ্ত হুট করে মেসেজ দিলো,
–“তোমরা মেয়ে মানুষ কখনো ভালো হবা না। তোমাদের পেট ফাটে কিন্তু মুখ ফোটে না। বুঝেছি, দ্রুত তোমাকে বিয়ে করে আমার ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হবে। একটু অপেক্ষা করো, আর একা থাকতে দিচ্ছি না তোমায় ফ্ল্যাটে। সেদিন আবার আজীবনের জন্য ডাবল হওয়ার শোকে কেঁদো না।”
চলবে—