হলুদ শহরের প্রেম পর্ব-১২

0
87

#হলুদ_শহরের_প্রেম – [১২]
লাবিবা ওয়াহিদ

নিশাতের জীবনে সবচেয়ে বড়ো স্বপ্ন হচ্ছে দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করা। যা নিপুণ জানত শুরু থেকেই। নিশাত যদি কখনো মুখ ফুটে বলার চেষ্টা করত, নিপুণ হয় শুনেও না শোনার ভান করত নয়তো প্রসঙ্গ পালটে ফেলত। নিপুণের ভাষ্যমতে নিশাতের এই স্বপ্ন পূরণ করা প্রায় অসম্ভব। নিপুণের সামর্থ্য নেই সাথে সে ভাইকে পড়াতে কারো থেকে টাকাও ধার নিবেন না। নিশাতও যেন সব বুঝেও মাঝেমধ্যে অবুঝ হয়ে যেত।

এবার নিশাত মামার বাড়ি বেড়িয়ে আসার পরই অস্ট্রেলিয়া থেকে নিপুণের মেঝো মামা তাকে কল করে এবং নিশাতের বাইরে পড়ার প্রসঙ্গে কথা উঠায়। এ কথা শুনে নিপুণ কিছুটা বিব্রত হয়ে পড়েছিল। হয়তো নিশাত বড়ো মামাকে বাইরে পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। মেঝো মামা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে তখন বললেন,
–“নিশাতের পাসপোর্ট সহ সকল ফর্মালিটিসের ব্যবস্থা করো। নিশাত আমাদের কাছে এসেই পড়ুক। টাকা-পয়সার চিন্তা করার দরকার নেই। তোমাদের মায়ের একটা ফান্ড ছিল, ফান্ডের সব টাকাই তোমাদের ভাই বোনদের জন্য। তোমাকে আমরা সেই টাকাতেই পড়িয়েছি। চিন্তা করো না, তুমি ব্যবস্থা করো সব। লাগলে বড়ো ভাইকেও নিয়ে নিও।”

নিপুণ আশেপাশে প্রায়ই শুনেছে অনেকের মায়ের ভাইরা তাদের বোনকে পাত্তা দেয় না, বোনের দুর্দিনেও ফিরে তাকায় না। টাকা-পয়সা, সম্পত্তির ভাগ যাই হোক না কেন। এই মুহূর্তে নিপুণের মনে হচ্ছে তার মা বড়োই ভাগ্যবতী ছিলেন। স্বামীর ভালোবাসা পাননি তো কী হয়েছে, তার ভাইয়েরা এক আকাশ ভালোবেসেছেন বোনকে। বোনের সাথে কখনো বেঈমানী করেননি তারা। আচ্ছা, এই ভালো মামারা নিপুণের ভাগ্যে জুটে গেলো কী করে? নিপুণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। সিদ্ধান্ত নিলো নিশাতের এসএসসি রেজাল্ট দেওয়া অবধি নিশাতকে বিভিন্ন কোর্স করাতে শুরু করে দিবে। আইইএলটিএস এর কোর্স তো একশো শতাংশ করতেই হবে। এরপর পাসপোর্টের প্রক্রিয়া কতদিন চলবে কে জানে?

——————
সপ্তাহখানেক যাবৎ সাবিনার মন-মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। বাসার পরিবেশও বেশ থমথমে। চিৎকার চেঁচামেচি ঝুট ঝামেলা যেন বাসাতে লেগেই আছে। এর আসল কারণ সুপ্ত। সাবিনা নিপুণের ব্যাপারে সব জেনে গিয়েছেন। যখন মাসুদার কাছে শুনেছেন সে নিপুণকে সাহায্য করতে গিয়েছিল তখন সাবিনার মনে খটকার বাসা বাঁধে। সুপ্ত কখনোই কোনো মেয়ে মানুষকে নিয়ে এতটা ভাবা তো দূর, নামও নেয়নি মুখে। মাসুদার খোঁজ খবর তো কোনো কালেই রাখে না। সেখানে নিপুণের ব্যাপারে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছিল উনার মাথাতে।

মনের খচখচ চেপে না রেখে সাবিনা সরাসরি ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। সুপ্ত কোনো প্রকার ভণিতা না করে এক বাক্যে বলে দিয়েছিল,
–“ও তোমার ছোটো ছেলের বউ হবে আম্মা। বাকিসব পরিচয় তুচ্ছ, ও শুধুমাত্র সুপ্তের বউ হয়ে আমার বাসায় প্রবেশ করবে। ব্যাস!”

প্রথমদিনই মিনহাজ সাহেব থেকে শুনেছিলেন নিপুণের গল্প। মেয়েটা ডিভোর্সী, বাপ ভালো না। বাপের অত্যাচারে মেয়েটা ভাইকে নিয়ে আলাদা থাকছে ভাইকে সুস্থ, সুন্দর এক ভবিষ্যৎ দেওয়ার জন্য। সাবিনা তা শোনার পর যেমন মেয়েটার সাহসের তারিফ করেছিলেন তেমনই মেয়েটার জন্য তাঁর মায়া হচ্ছিল। তাই তো কী ভেবে যেন মাসুদাকে দিয়ে খাবার পাঠালো। মাঝেমধ্যে মাসুদাকে নিয়ে মেয়েটার খোঁজ খবরও নিতেন। কিন্তু এই মেয়ের পেটে পেটে এসব ছিল? সেদিন থেকেই শুরু হলো ঘরজুড়ে লঙ্কাকাণ্ড। সাবিনার বিপি একবার লো তো আরেকবার হাই হচ্ছে, এভাবেই তাঁর সময় যাচ্ছে। সেই মেয়েকে নিয়ে অসংখ্য কটুবাক্য বলে ফেলেছে এই পুরো সপ্তাহে। সুপ্ত আবার সেসব শুনে প্রতিবাদ করছে। এ কী বিশ্রি দিন এলো রে জীবনে। সাবিনা পারছে না হাতের ইশারায় ভষ্ম করে দিতে মেয়েকে। তাঁর সোনার টুকরো ছেলের জন্য নাকি শেষমেষ ডিভোর্সী মেয়ে? মান-সম্মান সব ধুলোয় যাবে। মানুষজন ছি ছি করবে। তাঁর চাইতেও বড়ো কথা, সুপ্তের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। মান-সম্মানের থেকেও বেশি দুশ্চিন্তা সুপ্তের জন্য। সে কেন নিজ পায়ে নিজেই কুড়াল মা*রতে চাচ্ছে? সে যত যাই হোক, সাবিনা মা হয়ে কখনোই ছেলেকে ওই পথে পা দিতে দিবেন না বলে ঘোর পণ করেছেন তিনি।

সাবিনা স্বামীকে সুপ্তের এসব পাগলামির ব্যাপারে বলেছিল। ভেবেছিল স্বামীকে বললে কোনো সুরাহা মিলবে। কিন্তু সেখানেও আশায় সাগর ফুরালো সাবিনার। মিনহাজ সাহেব আগে থেকেই সব জানতেন। শুরু থেকেই। উনি তো সুপ্তের পেছনে ছায়ার মতো লোক লাগিয়ে রেখেছেন। প্রথমে তিনিও বিষয়টি মানতে পারেননি। কিন্তু নিপুণের ব্যাপারে সব রকম খোঁজ খবর নিয়েই তিনি রাজি হয়েছেন। মিনহাজ সাহেব সমাজের চাইতে ধর্ম মানেন বেশি। তিনি ধর্মের নির্দেশের কাছে কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেন না। কিন্তু সাবিনা তোয়াক্কা করছেন, ছেলের জীবনের। সবাই অন্ধ হয়ে গেলেও তিনি অন্ধ হতে পারবেন না।

সাবিনা যেই পরিমাণে সুপ্তের সাথে ঝামেলা বাড়িয়েছেন তাতে তিনি ভেবেছিলেন সুপ্ত ক্ষেপে যাবে, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিবে কিংবা বাড়িতেই আসা বন্ধ করে দিবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না। সে প্রতিদিন সময়মতো বাড়ি ফিরছে, সবার সাথে বসে খাচ্ছে, সবার সাথে আচরণও স্বাভাবিক। আবার নিপুণের বিষয়ে কিছু বললে সুপ্ত প্রতিবাদ করে ঠিকই, তবে মাকে রাগ দেখিয়ে কখনো কিছু বলেনি। সাবিনা কিছু বললে বলবে,
–“তোমার চেঁচামেঁচি জায়েজ আম্মা। যেদিন ঠান্ডা হবা সেদিনই বিয়ে সেরে ফেলব। চিন্তা করো না।”

সাবিনার এই ধরণের অস্থির অবস্থাতে মিনহাজ সাহেব বড়ো ছেলে আর বড়ো বউকে ডেকে পাঠালেন। তারা আসলে জানিয়ে দিলেন যতদিন না সাবিনা ঠিক হচ্ছে ততদিন যেন তারা থেকে যায়।

মাহমুদ তা শুনে হুট করেই বলল সে এখন থেকে এখানেই থাকবে। চাকরি ছেড়ে দিবে তাড়াতাড়ি। চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাবার ব্যবসায় হাত দিবে। এতে মিনহাজ সাহেব সন্তুষ্ট হলেন। যাক, বহুদিন পর তাঁর এই সংসার পূর্ণ হবে।

মাহমুদের সবসময়ই ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে অভিজ্ঞতা অর্জন করার। কথাটা হাস্যকর শোনালেও মাহমুদের ইচ্ছাই ছিল সেরকম। সে বাবার ব্যবসায় হাত দেওয়ার আগে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে। সুপ্ত রাজনীতির পথে হেঁটে তো দেখিয়েই দিলো সে আর ব্যবসার কাছ ঘেঁষবে না। তাই মাহমুদ আর বেশি সময় নেয়নি, আর কত বাবা সব একা দেখবেন?

মাহমুদের বউয়ের নাম বর্ণা। ওদের একটা মেয়ে আছে, ছোটো। বর্ণা বেশ লক্ষী, চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে। সাবিনা বড়ো বউ বিচারে ভুল করেননি সেটা বেশ গর্ব করে সবার সাথে বলেন। আসলেই বর্ণা সুন্দর মানসিকতার, যা স্বীকার করতে দ্বীধা নেই। মাহমুদের সাথে অন্যত্র থাকলেও রোজ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর খোঁজ খবর রাখত। মাঝেমধ্যে হুটহাট ছোটো মেয়েটা নিয়েও চলে আসল এ বাড়ি। আবার বিকাল হয়ে আসলে মিনহাজ সাহেব তার গাড়িতে করে বড়ো বউকে পাঠিয়ে দিতেন।

সাবিনা ভেবেছিল তার এই দুঃসময়ে আর কেউ সঙ্গ না দিলেও তার একমাত্র আদরের বড়ো বউ তাকে সঙ্গ দিবে, তাকে সাপোর্ট দিবে। কিন্তু এবারও সাবিনাকে আশাহত হতে হয়। এ বাড়ির সবাই তার বিপক্ষে। যার জন্য তিনি আরও ক্ষুব্ধ।

বাড়িতে কীসব ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার কোনো কিছুই জানে না মাসুদা। কতবার, কতভাবে জানার চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই তার কিছু হচ্ছে না। এক বাড়ির কথা আরেক বাড়ি লাগানোর স্বভাব আছে মাসুদার। এই বাজে স্বভাবের ব্যাপারে সবাই অবগত আছে বলেই মাসুদা থাকাকালীন কেউ কোনো টু শব্দও করে না। এমন কী সাবিনা নিজেও না। তিনি শক্ত হয়ে চুপ মেরে থাকেন। অল্পতেই মাসুদার উপর বেশ চটে যান। যেন বহুদিনের রাগ মেটাচ্ছেন তিনি মাসুদার উপর। এইযে, আজ মাসুদা একপ্রকার সহ্য করতে না পেরে বলেই বসলো সে আর কাজ করবে না এখানে। খালাম্মা নাকি তাকে কথায় কথায় বকে। এতদিন পর সাবিনা নিজেও বেশ রেগে গিয়ে মাসুদাকে বলল,
–“যা বের হ, আর আসবি না আমার বাড়ি কাজ করতে। তোর মতো কাজ চোর মেয়ে লাগবে না আমার।”
মাসুদা ক্ষেপল বেশ। বিড়বিড় করে গাল-মন্দ করতে করতে চলতি মাসের ভাড়া নিয়ে বেরিয়ে গেলো। এত্ত অপমান ধম্মে সইবে না।

———————-
সন্ধ্যার হলদে ঝিমে আসা আলো যখন পশ্চিমের আকাশে অবস্থান করছিল তখনই নিপুণ অফিস থেকে বের হয়। নিপুণের পাশে রিয়াও আছে। রিয়ার গায়ে হলুদে অসুস্থতার জন্য নিপুণ যেতে পারেনি। বিয়েতে গেলেও কয়েক ঘণ্টার বেশি থাকতে পারেনি। সেবার জ্বর, অসুস্থতা ভালোই কাবু করেছিল তাকে। রিয়া বুঝেছিল নিপুণের অবস্থা, তাই রাগ কিংবা নিজের কাছে রাখার জেদও করেনি। এতে রিয়ার প্রতি নিপুণের মনখানা আরও গলে গিয়েছে। মেয়েটা এত ভালো কেন?

নিপুণ রিয়াকে বিদায় জানিয়ে অন্য গলি দিয়ে হাঁটতে লাগল। সামনে থেকে রিকশা নিবে সে। আজকের আকাশের পাশাপাশি আবহাওয়াও বেশ সুন্দর। রিকশা করে গেলে মন্দ হবে না।

নিপুণের ভাবনার মাঝে হুট করে এক কালো রঙের প্রাইভেট কার তার সামনে পথ আটকে দাঁড়াল। এতে নিপুণ অনেকটা ঘাবড়ে গিয়ে বুকে থুঁ থুঁ দেয়। পরমুহূর্তেই গাড়িটার দিকে তাকাতেই গাড়িটা চিনতে তার অসুবিধা হলো না। এই গাড়িটা প্রায়ই সুপ্তদের বাড়িতে পার্কিং করা থাকত। তাই বুঝতে সময় লাগলো না গাড়ির ভেতরকার মানুষটা আসলে কে।

গাড়ির জানালার কাচ খুলে গেল, সেই সঙ্গে পেছনের সিটের দরজা। ভেতর থেকে সুপ্ত হাঁক ছেড়ে বলল,
–“কাম ফার্স্ট সুন্দরী। দেরী হচ্ছে।”

নিপুণ অবাক হলো। এই ভরসন্ধ্যায় নিপুণ সুপ্তের সাথে যাবে কোথায়? যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। নিপুণ বেঁকে বসে বলল,
–“কেন? কোথায় যাব? যাব না আমি কোথাও। আমি পথ ছাড়েন, আমি বাসায় যাব।”

সুপ্ত ভ্রু কুচকে তাকালো নিপুণের দিকে। নিপুণ অবশ্য সুপ্তের চোখ-মুখ দেখেই বুঝল, সুপ্তের কোথাও একটা তাড়া আছে। কিন্তু কিসের তাড়া সেটা ধরতে পারছে না সে। সুপ্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–“নিপুণ, গাড়িতে এসে বসে যা প্রশ্ন করার করবে। এখন প্লিজ গাড়িতে উঠে বসো। তোমায় কোথাও নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিব না।”

নিপুণ আবারও বারণ করে বলল,
–“আমি যাব না বলেছি, যাব না। এমন করছেন কেন?”

–“দেখো নিপুণ, আমার রাস্তায় দাঁড়িয়ে একদম সিনক্রিয়েট করতে ইচ্ছে করছে না। তাই তোমাকে সহজ ভাবে বলছি। হাত ধরে টেনে তোলার আগে ভেতরে এসে বসো।”

সুপ্ত থেমে আবার বলল,
–“আমার বাবা ডেকে পাঠিয়েছে। এখন কী আমার বাবার কথাও রাখতে চাচ্ছ না?”

টনক নড়ে নিপুণের। যত যাই হোক, মিনহাজ সাহেবকে যথেষ্ট সম্মান করে নিপুণ। তার কথা শুনে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে নিপুণ গাড়িতে উঠে বসল, সুপ্তের পাশে। নিপুণ বসতেই গাড়ি স্টার্ট দিল ড্রাইভার। কিছুদূর আসতেই নিপুণ জিজ্ঞেস করলো,
–“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

সুপ্ত নির্লিপ্ত গলায় বলল,
–“বিয়ে করতে।”

নিপুণ চরম বিস্মিত হয় সুপ্তের কথা শুনে। এখন কী তবে কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই সুপ্ত তাকে বিয়ে করবে? সুপ্তের কাছে তার অনুমতির কোনো দাম নেই? তা কী করে হয়? সুপ্ত নিশ্চয়ই মশকরা করছে? এতে করে নিপুণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–“মজা নিচ্ছেন?”

সুপ্ত হাসলো, ভীষণ রহস্যময় সেই হাসি। হচ্ছেটা কী?
নিপুণ আরও একবার ধাক্কা খেল তার বড়ো মামাদের এলাকায় গাড়ি ঢুকতে দেখে। মোটামুটি এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে তারা। নিপুণ অত্যন্ত চিন্তায় পড়ে গেল। এখানে কেন এনেছে তাকে সুপ্ত? পেটে কী চলছে এই ছেলের? এই মুহূর্তে নিপুণের মাথাও যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে গলায় ঝুলিয়ে রাখা অফিস আইডিটা শক্ত করে ধরে বসে রইলো। এই মুহূর্তে এত অস্থিরতা কাজ করছে কেন? পুরো রাস্তায় সুপ্তও যে মুখ খুলেনি।

গাড়ি এসে থামলো মামাদের আলিশান বাড়ির ভেতর। সুপ্ত নিপুণকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো। ভেতরে প্রবেশ করতেই নিপুণের চোখ কপালে উঠে যায়। বৈঠকঘরে নিপুণের বড়ো মামা, নিশাত এবং মিনহাজ সাহেব বসে। তাদের সাথে হুজুর প্রকৃতির একজন লোক বড়ো এক খাতায় কিসব লিখছেন। বড়ো মামী হাসি-মুখে সবাইকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত। সুপ্ত এবং নিপুণের উপস্থিতি পেয়ে সবাই সদর দরজার মুখে তাকালো। নিপুণের বড়ো মামা উচ্ছ্বসিত গলায় সেই হুজুর প্রকৃতির মধ্যবয়সী লোকটির উদ্দেশে বললেন,
–“বর, কনে চলে এসেছে কাজী সাহেব। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিন।”

সুপ্ত তখন নিপুণের কানে ফিসফিস করে বলল,
–“আমাদের পালা এসে গেছে হার্ট।”

চলবে—