হলুদ শহরের প্রেম পর্ব-১৩

0
90

#হলুদ_শহরের_প্রেম – [১৩]
লাবিবা ওয়াহিদ

মা মা*রা যাওয়ার পর থেকেই নিপুণের দিনগুলো অবহেলা, অত্যাচার এবং অভুক্তে কেটেছে। তার উপর ভাইয়ের অদৃশ্য দায়িত্ব যেন নিপুণের কাঁধে গিয়েই পড়েছিল। সংসারের যাবতীয় কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা এবং ভাইকে সামলানো সব একসাথেই করতে হয়েছিল তার। তার সৎ মা শুধু পায়ের ওপর পা আদেশ দিয়েছে, আর কথায় কথায় নিপুণকে মেরেছে। নিপুণ কাঁদত, কিন্তু বাবাকে এসব বলার সৎ সাহস কখনোই পায়নি। বরং সৎ মায়ের চাইতে বেশি ভয় পেত বাবাকে। বাবার সামনে দাঁড়ালে তার হাঁটু কাঁপত, থরথর করে সর্বাঙ্গ কাঁপত। এর মূল কারণ সেই বীভৎস রাতে বাবার বীভৎস রূপ।

নিপুণের বাবা কীভাবে যেন মায়ের খু*র মামলা খুব ঝটপট সামলে নিলো। যেন সব মাটিচাপা দেওয়া বা হাতের কাজ। নিপুণের মামারা এত চেষ্টা করলো, কিন্তু সঠিক কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তারা কিছুই করতে পারেনি সে সময়।

নিপুণের বাবা অবশ্য সেভাবে খেয়াল করেনি কখনো ছেলে মেয়েকে। সেই সুযোগটাই সৎ মা কাজে লাগাত। নিপুণকে না খাইয়ে রাখত, মানসিক ভাবে টর্চার করত। এতকিছুর মধ্যে নিপুণ তার পড়াশোনাটা ঠিক রেখেছে। সৃষ্টিকর্তা নিপুণের কপালে সুখ না লিখলেও দিয়েছিলেন এক ভাণ্ডার মেধা। এই মেধার বলে বয়সের তুলনায় বড়ো ক্লাসে দ্রুত উঠে গিয়েছিল সে। এইচএসসি পরীক্ষা অবধি বহু কষ্টে লড়াই করেছে নিপুণ।

কিন্তু একদিন নিপুণের বাবা হঠাৎ এক লোভনীয় সম্বন্ধ পেলেন। মেয়ের বিয়ের কথা যতবার ভেবেছেন ততবারই তাকে পেছোতে হয়েছে। কারণ যেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসত, সে এক গাদা যৌতুক চেয়ে বসত। কিন্তু নিপুণের বাবা কখনো মেয়ের পেছনে লাখ টাকা খরচ করতে রাজি না। সে পারলে আরও দেনমোহর হাতিয়ে নিবেন। এরপর মেয়ে যাক উচ্ছন্নে।

নিপুণের বাবার পছন্দসই এক প্রস্তাব এলো। ছেলে প্রবাসী। নিপুণকে দেখে তারা পছন্দ করেছেন, তাই যৌতুক বা অন্য কোনো চাওয়া টাওয়া নেই। নিপুণের বাবা সেদিনই বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেললেন। সেদিন নিপুণের এইচএসসির শেষ পরীক্ষা। অর্থাৎ প্রেক্টিক্যাল পরীক্ষা সেরে বাসায় ফিরেছে সবে। তখনই সৎ মা তোড়জোড় লাগিয়ে নিপুণকে তৈরি করে দিলো। এরপর নিপুণের বিন্দুমাত্র অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা না করে বিয়েটা করিয়ে দিলো। ছেলে দেশে আসেনি, তাই ভিডিও কলের মাধ্যমে বিয়েটা সম্পন্ন হয়।

নিপুণের জীবনের সবচেয়ে বড়ো সিদ্ধান্তে তার বাবা এভাবে তাকে ভাসিয়ে দিবে কখনো চিন্তাও করেনি। নিপুণের বাবা সেদিন বেশ খুশি ছিল। দেনমোহর হিসেবে হাতে হাতে দুই লাখ টাকা তিনি নিজেই আত্মসাৎ করে নিলেন।

সেদিনই নিপুণকে তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গেল। স্বামী ছাড়া নিপুণ শ্বশুরবাড়িতে উঠল। কিন্তু কয়েকদিন অতিবাহিত হতেই মনে হলো এই বাড়ির লোক বউ নয়, কাজের লোক কিনে এনেছে। এমনিতেই একদম অচেনা মানুষের সাথে আচমকা বিয়ে, এই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই নতুন করে নতুন পরিবেশে নিজের বসত গড়া। কোনোটাই সুখকর ছিল না নিপুণের জন্য। দিন-রাত অবিরত খেটে যাওয়া, মানসিক যন্ত্রণা তার বাড়লো বই কমলো না। কাজ না করলে বাড়ির লোকেরা দেনমোহরের খোঁটা দিত। নিপুণ তখন বাকরুদ্ধ হয়ে যেত। কেউ কখনো দেনমোহরের খোঁটা দিতে পারে সেটা নিপুণের কল্পনাতেও ছিল না।

যার সাথে বিয়ে হয়েছিল তার সাথেও কখনো কথা হয়নি নিপুণের। যেন দেশের বাইরে অবস্থিত নিপুণের নামে মাত্র স্বামী তাকে বিয়ে করে দায় সেরেছে। কিন্তু সেই লোকের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই সে নিপুণের জীবন কোন জাহান্নামে ঠেলেছে।

এভাবে মাস ছয়েক কাটতেই নিপুণ জানতে পারলো তার নামে মাত্র স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছে। এবং সেই লোক বউ নিয়ে শীঘ্রই দেশে ফিরছে। এই খবর শুনে নিপুণের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল। যার সঙ্গে সম্পর্কই গড়ে উঠেনি সেই মানুষটা আরেকটা বিয়ে করে ফেলল? বাবা মেয়ের বিয়ে দিয়েই দায় সেরেছে যেন। আর একদিনও কল করে খবর নেয়নি, মেয়ে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে।

এসবের কিছুদিন পর নিপুণের বড়ো মামা পুলিশ নিয়ে আসলো নিপুণের শ্বশুরবাড়ি। নিপুণের বাবা খুব কৌশলে নিপুণের মামাদের না জানিয়ে নিপুণের বিয়ে দিয়েছে। যা এতদিনেও তার মামারা টের পায়নি।

বিভিন্ন ঝামেলা করে নিপুণকে মামা নিজের বাড়ি নিয়ে গেলো। নিপুণ এতটাই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিল যে তার মাস কয়েক কাউন্সিলিং চলছিল। ছেলেটা দেশে ফিরতেই চাপ টাপ দিয়ে ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর করানো হয়। ছেলেটা স্বীকার করেছে তাকে তার পরিবার বাধ্য করে বিয়ে করিয়েছে, বিয়েতে তার কোনো মত ছিল না।

মামার বাড়িতে থেকেই নিপুণ অনার্সে ভর্তি হলো। মামা সহ সবার সাপোর্টের মধ্যে দিয়ে অগোছালো নিপুণ নিজেকে ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিলো। বছরখানেক মামার বাড়ি থেকে সে নিজ উদ্যোগেই এক হোস্টেলে উঠলো। টিউশনি করে নিজের টুকটাক খরচ চালাত। আর পড়াশোনার খরচটা মামাবাড়ি থেকেই আসত।

পড়াশোনা আগের মতো থাকলেও নিপুণের মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। ভীতু মেয়েটা গায়ে ডিভোর্সী তকমা নিয়ে দিব্যি বেঁচে রইলো এই অবধি। বাবাকে ভয় পাওয়া তো সেই কবেই ছেড়ে দিয়েছে সে।

——————-
অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে নিপুণ এবং সুপ্তের। দুজন এখন সুপ্তের বাড়িতে যাচ্ছে। গাড়িতে বসেই নিপুণ তার জীবনের হিসাব কষছিল, সেই অবস্থায় মাথায় এলো অতীতের সমস্ত কালো দিন। বিয়েতে সকলে একত্রে বোঝানোর পর নিপুণ রাজি হয়েছে। তবে রাজি হওয়া এতটা সহজ ছিল না। সবার বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে। বড়ো মামা যখন বলল,

–“আগে একবার তোর বাপ তোর জীবন নষ্ট করেছে। আমি চাই না তুই আর কষ্ট পাস। সুপ্তসহ ওর পরিবার অসম্ভব ভালো। আমাদের মেয়েকে খুব সুখে রাখবে। আমাদের চেহারার স্বস্তিটা কী তুই উপলব্ধি করতে পারছিস না নিপুণ? তোর মায়ের দোয়া তোর ওপর আছে বলেই তো এরকম একটা ছেলে তোকে জীবনসঙ্গীনি করতে চাইছে। জানিস না, সৌভাগ্যকে পায়ে ঠেলে দেওয়া ঘোর পাপ?”

নিপুণের বুকটা এখনো অসম্ভব ভার। সুখ মিলছে না মনের মাঝে, এক প্রবল অস্থিরতা তার মন-মস্তিষ্ক জুড়ে গ্রাস করে আছে। বারবার মনে হচ্ছে, সুপ্ত ভালো কাউকে ডিজার্ভ করত। সে সুপ্তকে ঠকিয়েছে, বিয়ে করে চরম স্বার্থপরতা করেছে। সবাই যত যাই বলুক সবাইকে ঠকিয়েছে সে। তার মতো গায়ে কলঙ্ক গাঁথা মেয়ে কী করে একজন শুদ্ধ পুরুষের বউ হয়? এ যে অপরাধ।

সুপ্ত নিপুণের হাত অত্যন্ত যত্নের সাথে মুঠোবদ্ধ করলো। এই হাত যেন আকাশসম ভরসা দিচ্ছে পাশে থাকার। সুপ্ত নিপুণকে সময় দিয়ে বলল,
–“নিপুণ, দেখলে তো। তোমায় বিয়ে করে ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছি আমি!”

নিপুণ এ কথা শুনে অতীতে বিচরণ করে আপনমনে আওড়ালো,
–“বিয়ে করলেই ভালোবাসার প্রমাণ হয় না।আজীবন জীবনসঙ্গীর পাশে থেকে ভালোবাসাকেই ভালোবাসার প্রমাণ বলে।”

হাসলো সুপ্ত। নিপুণ আনমনে বলেছে ঠিকই। তবে কথার অর্থ ছিল বেশ গভীর। সুপ্ত নিপুণের কানে ফিসফিস করে বলল,
–“সেই প্রমাণও পেয়ে যাবে বউ।”

আচমকা সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ খেলে গেল নিপুণের। চমকে তাকাল সে সুপ্তের পানে। সুপ্তের মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। নয়তো মানুষটা মুখ জুড়ে এত সুখ বিচরণ করছে কেন? নিপুণ নজর ফেরালো, সামলে নিলো নিজেকে। প্রসঙ্গ পালটে বলল,
–“আমাদের বিয়ের কথা আপনার মা জানে?”

–“জানবে না কেন? মায়ের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করতে পারতাম?”

নিপুণ বেশ চমকে যায় সুপ্তের কথা শুনে। সুপ্ত কী মন রাখতে এই কথাটা বললো? সুপ্ত নিপুণের চোখ মুখ পরখ করে বুঝল কথাটা সে বিশ্বাস করেনি। সদ্য বিয়ে করা লাল টুকটুকে বউকে একপাশ থেকে বাহুডোরে আগলে বলল,
–“বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি। আমার বউকে এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্যি কার? তার ঘ্রাণে তার সান্নিধ্যে মানুষজন মোহিত হতে বাধ্য। যেমনটা আমি হয়েছিলাম।”

নিপুণ কিছু বলল না এ প্রসঙ্গে। সে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলো, এবং সুপ্তের স্পর্শ অনুভব করতে থাকল। তার ভেতরকার দ্বিধা এখনো কাটছে না। সুপ্ত বোধহয় ধরতে পারলো সেই দ্বিধা। নিপুণকে আরও আগলে বলল,
–“নিজেকে কখনো ছোটো ভেবো না বউ। তুমি সবসময়ই স্পেশাল ছিলে। তোমার একটি বিশুদ্ধ মন আছে, সেখানে আমি তোমার প্রথম ভালোবাসা হয়ে বিচরণ করছি। আমার জন্য এইটুকুই কত বিরাট পাওয়া জানো?”

আবেশে চোখ বুজে আসছে নিপুণের। সুপ্তের কথা শোনার পর আপনমনেই ভাবল, সুপ্ত কী মন পড়তে জানে?

অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নব দম্পতি নিজ গন্তব্যে এসে পৌঁছালো। ঘড়ির কাঁটা বোধহয় এখন এগারোটায় বিচরণ করছে। সুপ্ত হাত ধরে নিপুণকে গাড়ি থেকে নামালো।

নিপুণ বুকে আতঙ্ক নিয়ে লিফটে দাঁড়িয়ে রইলো। এত ভয় লাগছে কেন তার? সুপ্তের মাকে ভয় লাগছে কী? কিন্তু তাকে ভয় পাওয়ার কী আছে?

নিপুণ এবং সুপ্ত গিয়ে দাঁড়াল সুপ্তের বাসার সদর দরজায়। দরজা খোলাই ছিল। ভেতর থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আসলো বর্ণা। তার মুখ জুড়ে সুন্দর হাসি বিচরণ করছে। সুপ্ত বর্ণাকে জিজ্ঞেস করল,
–“মা কোথায় ভাবী?”

–“আসছে।”

সাবিনা আসলো। নিপুণ আড়চোখে সাবিনাকে দেখে নিলো। সাবিনার চোখ-মুখে গম্ভীরতা ঠাসা। গম্ভীর মুখেই সে ছেলের বউকে ভেতরে নিয়ে আসলো। সে নিজে কিছুই বলছে না, কিন্তু মিনহাজ সাহেব সবকিছু বর্ণাকে বুঝিয়ে বলছে। বর্ণা সরবত খাওয়ালো নিপুণ, সুপ্তকে। সঙ্গে বেশ কিছু মিষ্টান্ন। বর্ণা নিপুণকে পায়েস খাইয়ে দিতে দিতে বলল,
–“এটা খাও। শাশুড়ী আম্মা বানিয়েছেন।”

সাবিনা কিছুটা দূরব বসে ছিল বিধায় শুনতে পায়নি। নিপুণ চুপচাপ খেয়ে নিলো। সবার ধারণা ছিল সাবিনা চেঁচামেঁচি লাগিয়ে দিবে, নতুন বউকে বকাঝকা করবে। কিন্তু সাবিনা কিছুই বলছে না, একদম নিশ্চুপ।

বর্ণা কিছুক্ষণ পর নিপুণকে সুপ্তের ঘরে নিয়ে গেল। সুপ্ত তখন মায়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
–“তুমি খুশি তো মা?”

সাবিনা শক্ত চোখে তাকালো ছেলের দিকে। মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
–“তোরা আর আমায় খুশি থাকতে দিলি কই?”

সুপ্ত হাসলো। মাকে একপাশ জড়িয়ে বলল,
–“আমি জানি তুমি ভয় পাচ্ছ। ভয় পেও না আম্মা। নিপুণকে চিনতে আমি ভুল করিনি। ভরসা রাখো, ইন-শা-আল্লাহ্ সব ভালো হবে।”

এক সুন্দর ফুলে সাজানো বিছানায় নিপুণ বসে আছে। বাসর ঘর যেন ফুলের পবিত্রতার ঘ্রাণ ছাড়া অপূর্ণ। নিপুণের আগেও বিয়ে হয়েছে। কিন্তু সেটা বিয়ের মতো অনুভূত হয়নি। যেদিন নিপুণ ঘরে প্রবেশ করেছে তখন কেউ তাকে মিষ্টান্ন খেয়ে বরণ করেনি, ঘর কেউ ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেয়নি।

অথচ এখন সব হচ্ছে। মনে হচ্ছে এটাই তার প্রথম বিয়ে। নিপুণের ভেতরকার মরিচিকা ধরা অনুভূতিগুলো কেমন যেন সতেজ হাওয়ায় নিজেদের সতেজ করে তুলছে। কিন্তু দ্বিধা তো মনের কোণে থেকেই যায়, সুপ্তের জন্য।

সুপ্ত ঘরে প্রবেশ করে দেখলো তার লাল টুকটুকে সুন্দরী বউ বিছানার মাঝে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। সুপ্তের ডান হাত বুকের বা পাশে চলে গেলো। সুখ চিনচিন করছে কী? আহ, কতগুলো দিন এরকম দৃশ্য দেখার জন্য কাতড়াচ্ছিল সে। অবশেষে সে মনের রানিকে ঘরের রানি করতে সক্ষম হয়েছে। পথটা যে ভীষণ জটিল ছিল। সুপ্ত এগয়ে যেতে লাগলো নিপুণের দিকে।

সুপ্ত ঘরে প্রবেশ করার পর থেকেই নিপুণের হৃদপিণ্ডের মাত্রা অস্বাভাবিক বেড়েছে। এমন অনুভূতি হচ্ছে কেন তার? দুজন একা এক রুমে বলে? নিপুণ আচমকা কেন লজ্জা পাচ্ছে? লজ্জা, জড়তা নিমিষেই কাবু করে ফেলল নিপুণকে। সুপ্ত গিয়ে বসলো নিপুণের পাশে। নিপুণ মাথা নিচু করে রেখেছে শক্ত করে। হাত-পা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে তার। এসি চলা সত্ত্বেও বিন্দু বিন্দু ঘাম কপালে জমাট বেঁধেছে।

সুপ্ত আগুনে ঘি ঢেলে বেশ ঠান্ডা গলায় বলল,
–“ফ্রেশ হবে?”

নিপুণ সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়ায়। সুপ্ত মুচকি হেসে আলমারি থেকে একটি লাল রঙের কম্ফোর্ট শাড়ি বের করে দিলো নিপুণকে। নিপুণ অবাক হলো সুপ্তের আলমারি থেকে শাড়ি বের করতে দেখে। সুপ্ত হেসে বলল,
–“অবাক হওয়ার কিছু নেই। তোমার বিয়ের প্রিপারেশন না থাকলেও আমার বিয়ের প্রিপারেশন আগে থেকেই ছিল।”

মূলত সুপ্তের মাকে রাজি করিয়ে সুপ্ত এবং মিনহাজ সাহেব যায় নিপুণের বড়ো মামার বাড়ি। সুপ্ত ঠিকানা নিয়েছিল নিশাতের থেকে। নিশাতের সাথে সুপ্তের কথা-বার্তা চলে আজ অনেক দিন হয়েছে। মূলত শুরুটা ছিল জয়নালের সেসব কাণ্ডের পর থেকে। নিশাত যখন থেকে শুনেছে নিপুণকে সুপ্ত পছন্দ করে তখনই বোনের ভবিষ্যৎ খুশির জন্য কোনো দ্বিধা ছাড়াই রাজি হয়ে গিয়েছিল। এজন্য নিপুণের সব খবর সবার আগে নিশাতই তাকে দিত। এরপর বড়ো মামার বাড়ি গিয়ে বেশ গোপনে কথা-বার্তা সেরে আসে বাপ-ছেলে। বড়ো মামা বেশ খুশি হয়ে বাকি দুই ভাইকেও জানায়। সব খোঁজ খবর নেওয়ার পর তারাও রাজি হয়। সবাই সব জানত শুধু জানত না নিপুণ। সুপ্তই জানাতে দেয়নি। কারণ নিপুণকে ভালো ভাবে বললে সে কখনোই হতো না, তাই হুট করেই নিপুণকে বিয়ে করার প্ল্যানিং করে সে। তবে নিপুণকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে। সুপ্ত ততদিন অবধি আগাতে পারছিল না যতদিন পর্যন্ত না সে শিওর হবে আদৌ নিপুণের মনে তার কোনো জায়গা আছে কী না। শেষ পর্যন্ত সে সফল।

নিপুণ শাড়ি পরে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই সুপ্ত হা করে চেয়ে থাকল নিপুণের দিকে। নিপুণ এতে লজ্জা পেলো। কোনো প্রকার কথা না বলে সে দ্রুত বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ইচ্ছে তো করছে সুপ্তের এই অসহ্য চাহনির থেকে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে। কিন্তু সেই উপায় কী আদৌ আছে? নিজেকে তো লিখেই দিয়েছে সুপ্তের নামে।

সুপ্ত নিপুণের হাত টেনে নিজের দিকে ফেরালো। নিজের কাছে এক টানে নিয়ে আসতেও বেশি সময় নিলো না। নিপুণ লজ্জায় কাবু হয়ে সুপ্তের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো। সুপ্ত আরও গভীর ভাবে নিপুণকে নিজের সাথে জড়িয়ে ঘোর লাগা গলায় বলল,
–“পালাচ্ছ কোথায় বউ? পালাই পালাই খেলা যে এবার সুপ্তের সাথে চলবে না। অনেক পালিয়েছ, এবার পালানোর পানিশমেন্ট পাওয়ার পালা!”

নিপুণ আনাড়ি করতে লাগলো। ছাড়া পেতে ছটফট করতে করতে কম্পিত গলায় বলল,
–“ছা..ছাড়ুন।”

সুপ্ত ছাড়ল না। ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে নিলো নিপুণের কাছে। নিপুণের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। সুপ্ত চুমু দিলো নিপুণের গালে। নিপুণের সর্বাঙ্গ শিথিল হয়ে যায় নিমিষেই। পরমুহূর্তেই নিপুণের অধরে গভীর এক চুমু এঁকে নিপুণকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। সুপ্ত নিপুণকে নিজ বুজে আগলে চোখ বুজে বলল,
–“তুমি এখনো সম্পর্কটার সাথে সহজ নও। তাই সময় দিচ্ছি, তবে খবরদার বেশি অপেক্ষা করাবে না। এখন শান্তিতে ঘুমাতে দাও দেখি। বউকে বুকে আগলে ঘুমানোর শান্তিটা উপভোগ করতে দাও।”

নিপুণের কম্পন তখনো থামেনি। সুপ্ত নিপুণের কপালে শেষ চুমু দিয়ে বলল,
–“নাজুক বউ আমার, এখন ঘুমাও।”

চলবে—