#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#সুমাইয়া_সুলতানা
#পর্বঃ১২
সবকিছু শুনে মাহিম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। লাল পরীর বিয়ে হতে যাচ্ছিল! অন্য কারো হতে যাচ্ছিল সে? ইভা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কান্না করার ফলে চোখের পানিতে গালে দাগ হয়ে রয়ে গিয়েছে। মুখটা বিদধস্ত দেখাচ্ছে। মাহিম তাকায় তার দিকে। হাত টেনে কাছে নিয়ে আসে। মুখে কাঠিন্যতা ভাব ফুটিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলল,
” কাজী ডাক তোরা। আজকেই ইভাকে বিয়ে করবো আমি। একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর কোনো বাঁধা থাকবে না। ইভার বাবাও কিছু করতে পারবে না। ”
আলভী বাঁকা হেসে বলল,
” মামা তোর কি আমাদের এতটাই নির্বোধ মনে হয় নাকি? আমরা ওলরেডি কাজির সাথে কথা বলে তাকে এখানে আসতে বলেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। ”
সাকিব গিয়ে খাবার নিয়ে আসলো। এত ঝামেলায় ওদের খাওয়া হয়নি। খাবারের প্যাকেট ইভার হাতে ধরিয়ে দিল। জায়গাটাতে একটা তাবু টাঙানো। চারদিকে আবছা অন্ধকার। দূরের আলো এসে হালকা ভাবে আলোকিত করে তুলেছে। বাইরে কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে আলভী। মোটামুটি ভালো ভাবেই সবকিছুর আয়োজন করে রেখেছিল তারা। প্যাকেট গুলো নিয়ে তাবুর ভেতর চলে যায় সে। ইভা প্যাকেট থেকে খাবার বের করে সুন্দর করে পরিবেশন করল। সাকিব, আলভী ইতোমধ্যে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। মাহিম আসলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। ইভা গিয়ে মাহিমকে ডেকে আনে। হাত ধরে তাবুর ভেতর প্রবেশ করে। বিরিয়ানি এনেছে। ইভা বিরিয়ানি নিয়ে মাহিমের মুখের সামনে ধরে। মাহিম চুপ করে খেয়ে নেয়। নিজেও ইভাকে খাইয়ে দেয়। আলভী, সাকিবের খাওয়া শেষ। বাহির থেকে কারো পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। নিশ্চই কাজী সাহেব চলে এসেছেন। মাহিম কে বলে ওরা তাবু থেকে বেরিয়ে আসে। ইভা মাথা নিচু করে বসে আছে। মাহিম ইভার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” আজকে আমরা সারা জীবনের জন্য একে অপরের হতে চলেছি। এরপর আমাদের মধ্যে আর কোনো দূরত্ব থাকবে না। আমার মনের রানী হওয়ার জন্য তৈরী তো লাল পরী? ”
ইভা তাকায় ওর দিকে। চোখে চোখ পড়তেই লাজুক হাসে। মাহিম মুচকি হেসে পুনরায় কিছু বলতে যাবে তক্ষুণি বাইরে থেকে হট্টগোলের শব্দ শুনতে পায়। ভ্রু জোড়া কুঁচকে আসে সহসা। আলভীর চিৎকার কানে আসতেই তড়িৎ বেগে উঠে পড়ে। দ্রুত তাবু থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে চারজন লোক আলভী, সাকিবকে ধরে রেখেছে। হতভম্ব হয়ে গিয়েছে মাহিম। ওর পিছু পিছু ইভাও বেড়িয়ে আসে। আলভীর কপাল ফেটে গলগলিয়ে র*ক্ত বেরুচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে ভারী কিছু দিয়ে কপালে আঘাত করা হয়েছে। সাকিবের নাক দিয়েও র*ক্ত পড়ছে। চারজন লোকের মধ্যে দুজনকে মাহিম চিনে। এরা তো ইভার বাবার বডি গার্ড। কালো রঙের একটা মাইক্রো গাড়ি রয়েছে। সেখানেই গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো ইভার বাবা লিটন পাটোয়ারি। পাশে একজন ইয়াং ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। ঠোঁট দুটো চোখা করে ফুঁ দিয়ে বিষাক্ত ধোঁয়া উড়াচ্ছে আকাশ পানে। পড়নে তার কালো কোর্ট। ভেতরে আকাশি রঙের টি শার্ট। চোখে চশমা। চুল গুলো ঘাড় ছুয়েছে। মাথায় মেয়েদের মতো বেন দেওয়া। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে কোনো বড়লোক ঘরের বিগরে যাওয়া আলালের ঘরের দুলাল। পাশে আরো তিনজন ছেলে বডি গার্ড। দুজন মেয়েও আছে। মাহিম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকে। মস্তিষ্কে প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। এরা এখানে কিভাবে আসলো? জানলো কিভাবে যে ওরা এখানে আছে? সাকিব ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠে। ওর হাত ধরে রাখা লোকটা ডান হাতটা মোচড়িয়ে ধরেছে। পেটে ঘু’ষি দিতে উদ্ধত হতেই মাহিম দৌঁড়ে লোকটার হাতটা ধরে ফেলে। ইভা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। মনের ভেতর ভয়টা ঝেঁকে বসেছে তীব্র ভাবে। আজ আর রক্ষে নেই। মাহিম গিয়ে বডি গার্ডকে ধা’ক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। সাকিবকে ছাড়িয়ে রক্তিম চোখে তাকায় লিটনের দিকে। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো,
” আমার বন্ধুদের গায়ে আর একটা আ*ঘাতও করবেন না। কি পেয়েছেন কি আপনি? হ্যাঁ! কি শুরু করেছেন এসব? কেমন বাবা আপনি? নিজের মেয়ের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, ভালো লাগা, খারাপ লাগার কোনো দাম দেন না! বাবা নামের কলঙ্ক আপনি। আপনি এখানে কিভাবে আসলেন? ঠিকানা পেলেন কিভাবে? নজর রাখছিলেন নিজের মেয়ের প্রতি? ”
লিটন পাটোয়ারি বাঁকা হাসে। মেয়ের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন,
” এক সাথে এত প্রশ্ন করলে উত্তর কিভাবে দিবো? ধীরে ধীরে বলো। আমিতো আর পালিয়ে যাচ্ছি না। তোমার বন্ধুরা এসব মা’র খাওয়ারই যোগ্য। আমার মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে তুলে আনে কোন সাহসে? আমার মেয়ের জন্য কোনটা ভালো কোনটা খারাপ সেটা আমার তোমার থেকে শোনার প্রয়োজন নেই। আমি খুব ভালো করেই জানি। তুমি আমার ভোলা ভালা মেয়ের মাথাটা খারাপ করে দিয়েছ। আর বাকি রইল তোমরা এখানে আছো সেটা আমি কিভাবে জানতে পেরেছি? তোমাদের একটা ফ্রেন্ড আছে না, মিম! তার কাছ থেকেই জানতে পেরেছি। না না। ভেবোনা সে তোমাদের সাথে বেঈমানি করেছে। সে বলতে চায়নি। কিন্তু নিজের পরিবারের ক্ষতি কি কেউ চায়? সবথেকে বড় কথা নিজের ইজ্জতের ভয়ও তো আছে নাকি? কোনো মেয়ে কি তার ইজ্জত হারাতে রাজি হবে? তাও বন্ধুত্বের জন্য! অবশ্যই না। সেজন্যই তো সুরসুর করে তোমরা কোথায় আছো সেটা বলে দিয়েছে। ”
ইভার সামনে এসে খপ করে ওর বাহু চেপে ধরে। ভয়ে ইভার শরীর কাঁপছে। হাতে ব্যথা পাচ্ছে ও। চোখ, মুখ ক্ষিচে বন্ধ করে ফেলে। মাহিম ইভার কাছে দৌঁড়ে আসে। সিগারেট খাওয়া ছেলেটা এসে তাকে আটকানোর চেষ্টা করে। মাহিম ধা’ক্কা দিয়ে তাকে নিচে ফেলে দেয়। ক্ষেপে যায় সে। না পেরে তিনজন লোককে বলে মাহিমকে আটকাতে। লোক গুলো মাহিমকে ধরলেই গাড়ির ডিকি থেকে একটা হকস্টিক নিয়ে এসে মাহিমকে একের পর এক আ*ঘাত করতে থাকে। মৃদু শব্দ করে উঠে মাহিম। ইভা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” মাহিমকে ছেড়ে দাও রতন। ওকে মে’রোনা। বাবা রতনকে মা’রতে নিষেধ করো। প্লিজ বাবা। ”
লিটন ওর চুলের মুঠি ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন ,
” কি ভেবেছিস? বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবি আমি কিছু জানতে পারবো না! তুই আমাকে এখনো ভালো মতো চিনতে পারিসনি। তোর কি মনে হয়? সেদিন তোকে আর তোর নাগরকে দেখেও আমি ব্যাপার্টা হালকা করে নিয়ে নিবো? নো। মনে করেছিলাম তোর নাগর আর কোনো ঝামেলা করবে না। তবুও যাতে কোনো গন্ডগোল না হয় বাড়িতে প্রত্যেকটি রুমে, বাগানে, বাইরের দিকে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছিলাম। ভাগ্যিস রেখেছিলাম। তাইতো তোরা কিভাবে পালিয়ে এসেছিস দেখতে পেরেছি। জানতে পেরেছি। এসবের পেছনে কে সেটাও বুঝতে পেরেছি। তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমাকে ধোঁকা দিয়ে চলে আসলি! ভয় করেনি? ”
ইভা কাঁপা কন্ঠে বলল,
” আ…আমি তোমার সাথে চলে যাবো। রতনকে বিয়েও করবো। ওদের সবাইকে ছেড়ে দাও। আমি তোমার কাছে হাত জোড় করছি বাবা। ”
মাহিমের ঠোঁট কেটে র*ক্ত বেরিয়ে এসেছে। ঘু’ষি দেওয়ার ফলে গাল দুটো ফুলে গিয়েছে। ফর্সা মুখশ্রী লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে। ছোটার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। একা তিনজন বলিস্ঠবান পুরুষের সঙ্গে পেরে উঠা মুখের কথা না। তারউপর রতন হকস্টিক দিয়ে ইচ্ছে মতো পিটিয়েছে তাকে। শরীরের ব্যথা থেকে মনের ব্যথাটাই বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে তাকে। চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছে। জোড়ে জোড়ে ভারিক্কি নিঃশ্বাস ছেড়ে চিৎকার করে মাহিম বলল,
” ইভাকে ছাড়ুন। ওর গায়ে আর একটা টোকা লাগলে আপনাদের কাউকে ছাড়বো না আমি। কাউকে না। যাস্ট খু*ন করে ফেলবো। ”
রতন পৈশাচিক হাসি দিয়ে ইভার কাছে আসে। এক হাত বাড়িয়ে তাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। মাহিমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ব্যাঙ্গ করে বলল,
” আজকে ফুলটুসির সাথে আমার বিয়ে। তুই ওকে তুলে এনে রোমান্স করছিলি? করতি। তাতে আমার কি? অন্তত আমাদের বাসর করা পর্যন্ত তো ওয়েট করতি নাকি? আমার জিনিস আমি টাচ করতে পারলাম না এখন পর্যন্ত আর তুই তাকে নিয়ে ফুর্তি করবি সেটা আমি কিভাবে মেনে নিবো? ”
ইভার গা ঘিণঘিণ করে উঠল। কাঁধ থেকে রতনের হাত সরাতে চায় কিন্তু পারে না। মাহিম রক্তিম চোখে চেয়ে বলল,
” কু*ত্তা*র বাচ্চা। ইভাকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বললে তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো আমি। ”
পরপরই লিটন পাটোয়ারির দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
” দেখুন মিস্টার পাটোয়ারি। ভালো করে দেখুন। কেমন ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। আপনার মেয়েকে বিয়ে করে বাসর করার পর, অন্য কোনো ছেলে তাকে ছুঁলে ওই জা*নো*য়া*রে’র কিছু যায় আসবে না। বাবা হিসেবে আপনি কলঙ্ক। টাকার জন্য মেয়েকে একটা নরদমার কিটের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। ছিহ্! ”
ক্ষেপে গেল রতন। রাগ যেনো তরতর করে বেরে গিয়েছে শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। হাতে থাকা হকস্টিকটা দিয়ে জোড়ে দুটো আ*ঘাত করল মাহিমের মাথায়। মুহূর্তেই মাথা ফেটে গলগলিয়ে র*ক্ত বেরোতে শুরু করল। কপাল বেয়ে, নাক বরাবর সরু রেখার মতো র*ক্তের চিকন ধারা নেমে এসে চিবুকে ঠেকেছে। সেখান থেকে চুইয়ে চুইয়ে গলায় পড়ছে। হলুদ রঙের টি’শার্ট বুকের অংশ র*ক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। আহ! শব্দ করে উঠল। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। আলভী, সাকিব অসহায় চোখে চেয়ে আছে। তারাও মা’র খেয়েছে। লোক গুলো ধরে না থাকলে বন্ধুকে বাঁচাতে এগিয়ে ঠিকি আসতো। ইভা গলা ছেড়ে চিৎকার করে কাঁদছে। মাহিমের কাছে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছে না। কি ভাবে পারবে? রতন তাকে আটকে রেখেছে। কান্না করা আর ছটফট করা ছাড়া কিছুই করার নেই। রতন হাক ছেড়ে ওর এক লোক’কে ডেকে বলল,
” ওই জলদি গাড়ি ঘোরা। লেট হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। সবাই গাড়িতে উঠে পড়।”
” জ্বি বস। ”
ইভার বাবার দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে বলল,
” আঙ্কেল চলুন। আমি ওই কথাটা রাগের মাথায় বলে ফেলেছি। কিছু মনে করবেন না। এইসব ছাড় পোকা মে’রে হাত নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। ”
লিটন পাটোয়ারি রতনের কথায় সম্মতি প্রকাশ করল। যাওয়ার আগে মাহিমের উদ্দেশ্যে বললেন,
” সেদিন সতর্ক করেছিলাম শুনলে না। কথায় বলেনা, পিপীলিকার পাখা গজায় ম’রিবার তরে। ভেবেছিলাম তোমাকে মে’রেই ফেলবো। নয়তো মিনিমাম কোমায় পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। যাস্ট রতনের কথায় তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি। ”
আলভীদের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে পুনরায় বললেন,
” যেকোনো কাজ করার আগে ভেবে করা উচিত। বন্ধুর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে গিয়ে নিজেদের কি হাল হয়েছে দেখেছো? তোমাদের তো মে’রে পঙ্গু বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া দরকার। তবুও ক্ষমা করে দিচ্ছি। ”
সকলেই গাড়িতে উঠে পড়েছে। রতন ইভাকে টানতে টানতে নিয়ে আসছে। ইভা যাবে না বলে চিৎকার করছে। চোখের পানি বাঁধ মানছে না। পেছনে ফিরে মাহিম মাহিম বলে বারবার ডাকছে। এখন মাহিমকে ছেড়ে চলে গেলে এই মুখ আর কক্ষনো দেখতে পারবে না। সারাজীবনের জন্য তার ভালোবাসা হারিয়ে যাবে। মাহিম হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছে। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। সারা শরীর ব্যথায় অতিষ্ট যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথার আ*ঘাতটা বেশি জোড়ালো। নিভুনিভু চোখে চেয়ে আছে। তার লাল পরীকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ওর বুকের ভেতর র*ক্তক্ষরণ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ হৃৎপিন্ডটা বের করে নিতে চাচ্ছে। মাহিম কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছে না। অস্পষ্ট ভাবে শুধু আওড়ালো,
” লাল পরীকে নিয়ে যেও না। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। এভাবে ওকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিও না। কেও আমার লাল পরীকে আটকাও। ওকে যেতে দিও না। আমাকে ক্ষমা করে দিও লাল পরী। আমি এক ব্যর্থ প্রেমিক। আমার ভালোবাসাকে আমি রক্ষা করতে পারলাম না। পারলাম না নিজের কাছে ধরে রাখতে। ”
আর কিছু শোনা গেল না। আর না মাহিম কারো কথা শুনতে পেল। শরীর ছেড়ে দিয়েছে তার। দপ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। চলে গিয়েছে তার লাল পরীকে নিয়ে। রা*ক্ষসের দলেরা তার রাজকুমারিকে নিয়ে চলে গিয়েছে। আলভী, সাকিব ছুটে এসে মাহিমকে আগলে ধরে। গালে চাপড় দিতে থাকে। মাহিম কোনো কথা বলছে না। নড়ছেও না। সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে সে। ওরাও বেশ ভালোই মা’র খেয়েছে। দুজনে মিলে কোনো রকম গাড়ি ডেকে এনে মাহিমকে নিয়ে দ্রুত ছুটলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
**********
অধরা নিরবে কেঁদে চলেছে। মাহিমের হৃদয়ের ক্ষতটা যেন সে উপলুব্ধি করতে পারছে। যদিও মাহিম তার জীবনের প্রথম পুরুষ। ইভার সাথে মাহিমকে দেখে কতটা কষ্ট হয়েছিল ওর সেটা শুধু ওই জানে। এই বুঝি বিচ্ছেদ চলে এলো। স্বামীকে হারানোর যন্ত্রণা অনুভব করছিল। তাহলে মাহিমের ভালোবাসা যখন তার থেকে দূরে চলে গিয়েছিল তখনো নিশ্চই মাহিমের মনেও ভয়ংকর যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়েছিল? মাহিমের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নাক টানার শব্দ ভেসে আসছে। অধরা হাত বাড়িয়ে স্বামীর চোখের পানি মুছে দেয়। আলতো করে গালে হাত রেখে নরম কন্ঠে শুধায়,
” তারপর কি হয়েছিল? ইভাকে কি আর ফিরে পাওনি? আর যেই মেয়েটাকে এত ভালোবাসো তাকে ভুলে আমাকে কিভাবে নিজের সাথে জড়িয়েছ? আচ্ছা মানলাম তাকে ভুলে যাওনি। তবে তার জায়গাটাতো আমাকে ঠিকি দিয়েছ। দু বছর সংসার জীবনে কখনো অবহেলা করোনি। কখনো কষ্ট পেতে দাওনি। সীমাহীন ভালোবাসায় মুড়িয়ে রেখেছ। এক মনে দুজনকে জায়গা দেওয়া যায়? দুজনের ভালোবাসে লালন করা যায়? ”
চলবে,,,,