#হামিংবার্ড
#পর্ব_২৫
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
দুপুরবেলা, বাড়ির ভেতর ব্যস্ততার এক আলাদা আমেজ। অরা রান্নাঘরে তামান্নার সাথে কাজকর্মে মশগুল। তারা দুজনেই রান্না নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে। কারণ, বিকেলবেলা নয়না বাড়ি ফিরে যাবে। নয়নার জন্য দুপুরে জমজমাট মহাভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
তালহা আজ অফিসে যায়নি। সকাল থেকেই বাসার সব বাজার-সদাই করে এনেছে সে। মাছ, মাংস, তাজা সবজি – সবকিছু যেন একেবারে পরিপূর্ণ থাকে, সে বিষয়ে কোনো কমতি রাখেনি। নয়নার আপ্যায়নে যেন একটুও ত্রুটি না হয়, সেই বিষয় আগে থেকেই বলে দিয়েছে আরিশ। আর এই যত্ন-ভরা উদ্যোগে অরা বেশ খুশি হয়েছে। মনে মনে ভাবছে, জীবনের ছোটো ছোটো মুহূর্তগুলোই বোধহয় এমন ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণেই অরার মনে হয়, আরিশের মনে তো কোনো ভালোবাসাই নেই!
রান্নাঘরে ভুরভুর করে ছড়িয়ে পড়েছে মশলার গন্ধ। চাপা হাসাহাসি, টুকটাক কথা আর হাঁড়িপাতিলের শব্দে যেন ঘরটা প্রাণে ভরে উঠেছে।
“ভাবি, আর কিছু লাগবে?”
তামান্না রান্নাঘরের কাজ সামলাতে সামলাতে জানতে চাইল।
“নাহ, মোটামুটি সবকিছুই শেষ।”
অরা হাসিমুখে উত্তর দিলো, কপালের চুল সরিয়ে নিলো আঙুলের ফাঁক দিয়ে।
“তাহলে আপনি গোসল সেরে নিন ভাবি। আমি সবকিছু ডাইনিং টেবিলে নিয়ে রাখছি,।
দায়িত্বশীল ভঙ্গিতে বলল তামান্না। অরা অবাক হয়নি। তামান্নার এই যত্নশীলতা তার খুব ভালো লাগে। হালকা হেসে সে তরকারির বাটি হাতে তুলে নিলো, বলল,
“আমিও নিচ্ছি কিছু।”
“আচ্ছা।”
তামান্না মাথা ঝাঁকালো। দুজন মিলে ধীরে ধীরে সব খাবার-দাবার গুছিয়ে ডাইনিং টেবিলে সাজাতে লাগলো। একটার পর একটা থালা, বাটি, গ্লাস–সব কিছু যত্নের সাথে গোছানো হচ্ছে । একপাশে মিষ্টির প্লেট, অন্যপাশে ভাজাভুজির আয়োজন। পুরো ঘরজুড়ে এক ধরনের উৎসবের আমেজ।
ড্রইং রুমে বসে আছে তালহা ও নয়না। তারা দু’জনেই টিভিতে ‘মোটু পাতলু’ কার্টুন দেখছে। মটুর বোকা বোকা কাণ্ডকারখানা দেখে দু’জনের হাসির শব্দে ঘর যেন প্রাণে ভরে উঠেছে। নয়না কখনো হাত দিয়ে মুখ চাপা দিচ্ছে, কখনো হেসে চোখে জল এনে ফেলছে। তালহারও অবস্থা সেইম। সে নিজেই হাসতে হাসতে বাচ্চাদের মতো দোল খাচ্ছে সোফায় বসে।
এই প্রাণবন্ত দৃশ্যের মাঝখানে অরা ডাইনিং রুমের দিক সামলে আস্তে করে ড্রইং রুমে এসে ঢুকল। ওড়না দিয়ে কপালের ঘামটুকু মুছে টুকটাক চোখ বুলিয়ে নিলো সবকিছুর ওপর। নয়নার হাসি দেখে ওর বুকের ভেতর কেমন একটা তৃপ্তির ঢেউ বয়ে গেল। সব আয়োজন যেন সার্থক মনে হচ্ছে এখন।
“অনেক কার্টুন দেখা হয়েছে। এখন গিয়ে গোসল সেরে নে নয়না। আর তালহা ভাই, আপনিও ফ্রেশ হয়ে আসুন। সবাই একসাথে খাওয়াদাওয়া করবো। ”
অরা আদর মেশানো কণ্ঠে বলল, হাতের ইশারায়ও তাগিদ দিলো।
নয়না তৎক্ষণাৎ বসা থেকে উঠে দাঁড়াল, মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল। তালহাও রিমোট কন্ট্রোল হাতে নিয়ে টিভিটা বন্ধ করে দিলো। ঘরটা হঠাৎ একটু শান্ত হয়ে গেল, শুধু রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা খাবারের গন্ধে যেন একটা উষ্ণ আমন্ত্রণ রয়ে গেল বাতাসে।
“ঠিক আছে আপু।”
নয়না খুশির ঝিলিক চোখে নিয়ে বলল।
“ওকে ভাবি মা।”
তালহাও হেসে বলল, চোখ টিপে ইশারা করলো।
অরা মুচকি হাসল। নয়না আর তালহা নিজেদের রুমের দিকে এগিয়ে গেল,হালকা হাসাহাসি করতে করতে। অরা দাঁড়িয়ে থেকে ওদের পেছনে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, মনটা যেন একটু বেশি শান্ত লাগছে আজ। ইশ, যদি সবকিছু এমনি থাকত!
সবাই ফ্রেশ হয়ে এলে একসাথে বসে আনন্দ করে খাওয়া হবে- এাব ভেবেই অরার মনে একটা আনন্দের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আরিশ! আরিশ তো দুপুরে বাড়ি ফিরবে না আজ। এবার কিঞ্চিৎ মন খারাপ লাগছে অরার।
শহরের বিকাল হলো ব্যস্ত, রঙিন, আর একটু ক্লান্ত সময়। এ সময় দিনের শেষভাগে সূর্যের রঙে শহরটা যেন একটু নরম হয়ে আসে। আকাশে লালচে, কমলা আর হালকা সোনালি রঙের খেলা চলে, ভবনের কাঁচের জানালায় সেই আলো পড়ে ঝিলমিল করে ওঠে। রাস্তায় তখন কর্মদিবস শেষ করা মানুষদের ভিড়। বাস, রিকশা, সিএনজি আর প্রাইভেট গাড়ির শব্দে চারপাশ গমগম করে। ট্র্যাফিক জ্যামও শুরু হয়ে যায় এই সময়টায়–হর্নের শব্দ যেন একটানা সুর হয়ে বাজতে থাকে। ফুটপাতে ভিড় বাড়ে, কেউ ফুচকা খাচ্ছে, কেউ মোবাইলে কথা বলছে, কেউ তাড়াহুড়ো করে বাসার দিকে ছুটছে। চা দোকানগুলোতে ধোঁয়া উড়তে থাকে, সেই সাথে হাসির শব্দ আর সন্ধ্যার গল্প জমে ওঠে।
নয়না কিছুক্ষণ আগেই নিজের বাসায় ফিরে গেছে। গত দুইদিন বোনের শ্বশুরবাড়িতে থেকে বেশ ভালো সময় কেটেছে তার। অরার হাসিখুশি, শান্তিপূর্ণ সংসার দেখে নয়না মুগ্ধ হয়েছে। শুধু নয়না নয়, নয়নার মা-বাবা–সোলাইমান ও রোকসানাও শুনে ভীষণ, ভীষণ খুশি হয়েছেন। মনে মনে তারা বারবার সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, মেয়ের সংসার এতটা মধুর দেখে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। শহরের রাস্তায় যেন ব্যস্ততার ঢেউ। কর্মব্যস্ত মানুষগুলো সারাদিনের ক্লান্তি বয়ে নিয়ে যার যার ঘরে ফেরার জন্য ছুটছে। গাড়ির হর্ন, ফুটপাথে মানুষের ভিড়, রাস্তার মোড়ের ধুলাবালি মেশানো বাতাস–সব মিলে এক অদ্ভুত কোলাহল। অরা চুপচাপ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করছে। বাইরে তাকালেও মনটা যেন কোথাও আর আটকে নেই। কেমন অস্থির লাগছে।
সকাল থেকে সাবিহার অতিরিক্ত হাসিমাখা আচরণ অরার মনে কেমন অস্বস্তি তৈরি করেছে। প্রথমে সে পাত্তা দেয়নি, ভেবেছিল হয়তো ভালো মুডে আছে। কিন্তু তামান্নাও বিষয়টা লক্ষ্য করে তাকে সাবধান করে দিয়েছে। অরা আর তামান্না দুজনেই বুঝে গেছে,কিছু একটা গোলমাল চলছে।
এই বাড়িতে আগে আরিশের টেনশন ছিল- তার পাগলামি, টর্চার, খামখেয়ালি– এসবের সাথেই দিন চলত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বাসার মানুষের সংখ্যা বাড়ায় ঝামেলার মাত্রাও বেড়েছে। যেমন, তালহা! যদিও তালহার কোনো দোষ নেই। সমস্যা তৈরি করেছে আরিশ। বিনা কারণে, সামান্য কথাবার্তার মধ্যেও, অরাকে তালহার সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে বলে সে। অরার মধ্যে কোনো সমস্যা না থাকলেও, এই অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা তার মনে ক্ষোভ জমাতে শুরু করেছে।
আর সাবিহা! সে তো আছেই। তার দৃষ্টি সবসময় আরিশের উপর, যেন আরিশ ছাড়া তার আর কিছুই চোখে পড়ে না। এই অসুস্থ মোহ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার গন্ধে অরার মনটা বিষিয়ে উঠছে।
জানালার ওপাশে নরম আলোয় ভেসে যাওয়া শহরটাকে দেখে অরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনে মনে ভাবল, সুখের সংসারের ছবির আড়ালে কখন যে অদৃশ্য ফাটল তৈরি হয়, তা কেউ টেরও পায় না। মনটা ভারী হয়ে এলো তার। বাইরে তাকিয়ে থাকলেও ভেতরে যেন অজানা শঙ্কার মেঘ জমে উঠছে…
“হেই, হামিংবার্ড! কী করছ?”
আচমকা পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরায় চমকে উঠল অরা। আরিশ ছিল যেন ঝড়ের মতো– কখন যে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে, টেরই পায়নি অরা। তার শক্ত হাত দুটো অরার কোমরের চারপাশে একঘূর্ণিতে বেঁধে ফেলল। আঙুলের স্লাইড করা নরম চাপ অরার পেটের উন্মুক্ত ত্বকে কাঁপুনি তুলল। সাথে সাথে আরিশের নিঃশ্বাস আর ঘাড়ে মৃদু কামড়! সবকিছু মিলিয়ে অরার সারা শরীরে একটা অজানা শিহরণ ছড়িয়ে গেল। ইচ্ছে না থাকলেও, শরীরটা নিজের মত করে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
“কিছু না।”
নিজের স্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল অরা।
“এত জলদি বাড়ি ফিরলেন আজ? সবকিছু ঠিক আছে তো?”
“সবকিছু ঠিক আছে।”
আরিশ গভীর কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল।
অরা মনে মনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। তবে আরিশ তখনও তাকে ছেড়ে দেয়নি, উল্টে আরও কাছে টেনে নিয়ে তার শরীরের সাথে শরীর জড়িয়ে রেখেছে। এই ঘনিষ্ঠতা, এই গাঢ় উষ্ণতা অরাকে বিচলিত করে তুলছে।
“কী ভাবছ এত?”
আবারও প্রশ্ন। আবারও আরিশের চোখে সেই চেনা তীক্ষ্ণতা।
অরা চমকাল। কীভাবে বুঝল আরিশ যে, সে চিন্তিত? আরিশ আলতো করে অরাকে নিজের সামনে ফিরিয়ে আনল, চোখে চোখ রেখে তাকাল। সেই গভীর দৃষ্টি, যা অরাকে কখনওই স্বাভাবিক থাকতে দেয় না। অরা বেশিক্ষণ চোখে চোখ রাখতে পারল না। দৃষ্টি নামিয়ে নিয়ে থেমে থেমে বলল,
“নয়না বাসায় চলে গেছে তো… সেজন্য মনটা একটু খারাপ লাগছে।”
“ওও আচ্ছা।”
আরিশ ঠোঁটে একচিলতে হাসি টেনে বলল।
“আমি ভাবলাম আমার ছোট্ট হামিংবার্ড কার ভাবনায় মশগুল হলো আবার!”
একটা দুষ্টুমির হালকা ভাব ছিল তার গলায়।
অরা এক মুহূর্ত দোনামনা করল, তারপর কেমন যেন মুঠোভরা অভিমানে মুখ তুলে বলল,
“যদি অন্য কারো কথা ভাবতাম?”
মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তারপরই যেন সব বদলে গেল। দপ করে যেন আরিশের চোখে ঝলসে উঠল আগুনের ঝলক। অরার কাঁধে তার হাতের চাপ শক্ত হলো। ব্যথায় নরম গালে টান পড়ল অরার, শরীরটা কেঁপে উঠল অবচেতনে।
আরিশের বদলে যাওয়া মুখ দেখে হঠাৎই অরার মনে ভয় ঢুকে পড়ল। ‘কেন বললাম এমন কথা!’ মনে মনে অনুতপ্ত হলো সে। দ্রুত গলা শুকিয়ে এলো।
“আমি মজা করেছি। প্লিজ… শান্ত হন আপনি,”
অরা ভীত কণ্ঠে বলল। আরিশ কোনো উত্তর দিল না। শুধু ঠান্ডা, করুণামিশ্রিত একটা ক্রুর হাসি ফুটে উঠল তার ঠোঁটে। হঠাৎ করেই, দুই হাতে অরার গাল মুঠোবন্দি করল সে। এত শক্ত করে যে অরা ব্যথায় কেঁপে উঠল। তার চোখ মুখের এত কাছে আরিশ, যে নিশ্বাসের উষ্ণতা গাল ছুঁয়ে যাচ্ছে।
এই মুহূর্তে অরা জানে, আরিশের ভালোবাসা কেবল উষ্ণতা নয়, মাঝে মাঝে তা দাবানলের মতোও হয়, যা তাকে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলতে পারে।
“যদি তোমার ভাবনায়ও অন্য কেউ আসে,”
আরিশ ঠান্ডা গলায় বলল,
“আমি সেই ভাবনা নষ্ট করে ফেলব। যদি ভাবনাই না থাকে, তখন তো আর কারও আসার সুযোগই নেই… তাই না?”
অরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে। কী বলবে, ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না সে। মাঝে মধ্যে মনে হয়, এই লোকটাকে সত্যিই কোনো মানসিক হাসপাতালে পাঠানো উচিত। আবার সঙ্গে সঙ্গেই নিজের ভাবনায় চমকে উঠল অরা।
‘ওফ্! কী সব ভাবছি আমি! যদি কোনোভাবে এই ভয়ঙ্কর লোকটা আমার ভাবনা পড়ে ফেলে? তাহলে তো আজই আমার শেষকৃত্য হয়ে যাবে!’
ভয়ে ভেতরটা শুকিয়ে গেল। শুকনো ঢোক গিলে খুব ভদ্র গলায় বলল,
“ঠিক বলেছেন।”
আরিশ সন্তুষ্টির ছায়া ফুটিয়ে মুচকি হাসল।
তার হাসি, অরার জন্য সবসময় এক রকম ভয় আর মুগ্ধতার মিশ্রণ হয়ে ধরা দেয়। অরাও সেই হাসির সাথে তাল মেলাল– একটা মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলল ঠোঁটে।
মনে মনে নিজেকে প্রবোধ দিল,
‘ওই যে একটা কথা আছে না? পড়েছি মোগলের পাল্লায়, খানা খেতে হবে একসাথে!’
অরা জানে, আরিশের আচরণ একধরনের তীব্র অধিকারবোধে ভরা। যেখানে ভালোবাসা নেই, নেই কোনো প্রেম। আছে শুধু জ্বালিয়ে দেওয়া অনুভূতি আর আগুন । তবু, এই আগুনেই যেন একটা স্বস্তিও আছে, কিংবা আকর্ষণ আছে।
ভয় আর ভালোবাসার অদ্ভুত মিশেলে অরা তার বুকের ভেতর চাপা শ্বাস টেনে নিল।
আরিশ এখনও অরার মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন তার চোখের ভেতর আরেকটা জগৎ দেখতে পেয়েছে।
ঘড়িতে রাত তিনটা পঁচিশ। থানার বাতিগুলো নিঃশব্দে জ্বলছে, যেন ক্লান্ত শহরের এক কোণে জেগে থাকা পাহারাদার। লকআপের পেছনে বসে থাকা লোকটার চোখে ঘুম নেই–সেখানে ছিল একরাশ শীতলতা, ভয়হীন এক শূন্যতা। তার নাম- রাশেদ হোসেন। বয়স ছাব্বিশ, মুখভর্তি দাঁড়ি, চোখজোড়া স্থির আর নিষ্ঠুর।
টেবিলের অন্য পাশে বসে আছেন ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন । তার চোয়াল শক্ত, চোখে রক্তজবার লাল রেখা। আটচল্লিশ ঘণ্টা ঘুমাননি। চোখের সামনে সেই সিরিয়াল কিলার, যে পরপর তিনজন ধর্ষণকে খুন করেছে। তা-ও খুব নৃশংসভাবে, দেখার মতো না। শহরের অন্ধকার অলিগলিতে ফেলে যাওয়া মৃতদেহের পাশে কোনো চিরকুট বা চিহ্ন পর্যন্ত রাখতো না সে। সবকিছু মিলিয়ে রুহুল আমিনের ওপর উপরমহল থেকে ভীষণ চাপ এসেছিল। ফলশ্রুতিতে এই খুনিকে ধরার জন্য প্রাণপণে দৌড়েছেন দু’দিন। এবং অবশেষে আজ সে সফল।
ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন চুপচাপ কফির কাপটা ঠোঁটে তুললেন। ধোঁয়া উঠছিল, কিন্তু তার চেয়েও গরম ছিল উনার ভেতরের আগুন।
“তুই খুন করেছিস। তিনজন পুরুষকে। সব প্রমাণ আছে। হাতেনাতে ধরা পড়েছিস। এবার বল,কার নির্দেশে করেছিস?”
রাশেদ একটু হেসে ফিসফিস করে বলল,
“ ওরা কেউ পুরুষ না স্যার, সবাই কাপুরষ। ধর্ষণকারী… আর ধর্ষনকারী কখনো পুরুষ হয় না। ওদেরকে পুরুষ বললে প্রকৃত পুরুষদের অপমান করা হয়। ওদেরকে মারতে হতো।“
রুহুল আমিন টেবিলে সজোরে ঘুষি মারলেন।
“তুই কে? তুই ঠিক করবি কে মরবে কে বাঁচবে? আর ধর্ষনকারীর জন্য আমরা আছি, আইন আছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কী দরকার ছিলো? ”
রাশেদ হেলে বসে, চোখ নিচু করে ফিসফিস করে বলল,
“আমি কেউ না, স্যার। আর কোন আইনের কথা বলছেন আপনি? যে আইন আমার স্ত্রী’র ধর্ষকদের শাস্তি দিতে পারেনি, সেই আইন?”
এক মুহূর্তের নীরবতা। মাহতাবের গা শিউরে উঠল।
“ কী হয়েছিল তোর স্ত্রী’র সাথে? ”
রাশেদ হঠাৎ হাসতে হাসতে পেছনের দেয়ালে মাথা ঠুকতে লাগল।
“ আমি কীভাবে বলব! আমি কীভাবে বলব, আমার চোখের সামনে ওই জানোয়ারগুলো আমার ভালোবাসার মানুষটাকে খুবলে খেয়েছে! কীভাবে বলব, আমারই চোখের সামনে আমার স্ত্রীর গলা টিপে হত্যা পর্যন্ত করেছে! “
ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন থমকে গেলেন। রাশেদের কথাগুলো উনার রুহ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
চলবে,
#হামিংবার্ড
#পর্ব_২৬
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
“ আমি কীভাবে বলব! আমি কীভাবে বলব, আমার চোখের সামনে ওই জানোয়ারগুলো আমার ভালোবাসার মানুষটাকে খুবলে খেয়েছে! কীভাবে বলব, আমারই চোখের সামনে আমার স্ত্রীর গলা টিপে হত্যা পর্যন্ত করেছে! “
ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন থমকে গেলেন। রাশেদের কথাগুলো উনার রুহ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। একজন পুরুষের সামনে তার স্ত্রী’র সঙ্গে এমন কিছু ঘটতে দেখলে কেমন অনুভব হতে পারে – তা কল্পনাও করতে পারছেন না রুহুল। রাশেদ ঠুকরে কেঁদে উঠে ফের বলল,
“ আমিও গিয়েছিলাম আপনাদের আইনের কাছে। কিন্তু টাকার সামনে সেই আইন টিকতে পারেনি স্যার। “
ব্যথাতুর দৃষ্টিতে রাশেদের দিকে তাকালেন রুহুল আমিন ।
“ সবকিছু খুলে বলো রাশেদ। আমি তোমার কথা শুনবো। “
রাশেদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বসা থেকে উঠে ধীরে ধীরে গিয়ে দেয়ালের পাশে দাঁড়াল।
“প্রেমের বিয়ে ছিল আমাদের। পাঁচ বছর প্রেম করার পর পারিবারিকভাবেই বিয়ে করি আমরা। সবাই খুশি মনে আমাদের বিয়ে দিয়েছিল। তখন আমার একটা মার্কেটিংয়ের চাকরি ছিল। সব সময় দৌড়ঝাঁপের মধ্যে কেটে যেত দিন। নীলাকে নিয়ে বিয়ের এক বছরেও কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি। তাই ঈদের ছুটিতে দু’জন মিলে বান্দরবান চলে গেলাম। নীলা ভীষণ খুশি ছিল। এত খুশি, বলে বোঝাতে পারব না।
সারা বিকেল পাহাড়ে ঘুরতে ঘুরতে রিসোর্টে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল সেদিন। আমরা যখন প্রায় রিসোর্টের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, ঠিক তখনই চার-পাঁচজন ছেলে পথ আটকে দাঁড়ায়। নীলা ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
আমি ভেবেছিলাম, ওরা ছিনতাইকারী। টাকাপয়সা, গয়নাগাটি নিয়ে চলে যাবে। কিন্তু না- তাদের টার্গেট ছিল নীলা। ওরা প্রথমেই আমাকে ধরে হাত-পা বেঁধে দিল, মুখও শক্ত করে বেঁধে ফেলল। তারপর নীলার মুখও বাঁধা হলো।
সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। চাঁদের আলোয় নীলার ছটফটানি দেখছিলাম আমি, অথচ কিছুই করতে পারছিলাম না। কলিজাটা পুড়ে যাচ্ছিল।
আমার নীলাকে… ক্ষতবিক্ষত করল ওরা।
সবকিছু শেষ করে আমাদের দু’জনকেই ছুরি দিয়ে আঘাত করে ফেলে রেখে গেল।
স্থানীয় লোকজন আমাদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। আমি কীভাবে বেঁচে গিয়েছিলাম জানি না। হয়তো নীলাকে ওরা যে পাশবিক নির্যাতন করেছিল, তার ফলেই ওর মৃত্যু হয়েছিল।
কিন্তু আমি বেঁচে থেকেও যেন প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাচ্ছিলাম। সুস্থ হয়ে থানায় গিয়েছিলাম। ওরা প্রমাণ চাইলো। ততদিনে নীলাকে কবর দেওয়া হয়ে গেছে।
হাসপাতাল থেকে আমার সুস্থ হয়ে বের হতে চারদিন লেগেছিল। ততদিনে সব প্রমাণ মুছে গেছে। হাসপাতালের ডাক্তার পর্যন্ত মিথ্যে কথা বলল– কোনো ধর্ষণের প্রমাণ নাকি নেই, শুধু ছুরিকাঘাত হয়েছে।
পুলিশ ধর্ষণের মামলা নিল না। শুধু এটেম্পট টু মার্ডার হিসেবে নিল। কিন্তু ওরা কাউকে গ্রেফতারও করল না। পরে বুঝলাম, টাকা দিয়ে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেছে ওরা।
হতাশা আমাকে গ্রাস করে ফেলল। আমি এক অক্ষম স্বামী – নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করতে পারিনি, তার সম্মান রাখতে পারিনি। আর না পারিনি তাকে বাঁচাতে। দিন-রাত পাগলের মতো কাঁদতাম।
প্রতি রাতে নীলার সেই অসহায় কণ্ঠের চিৎকার আমার ঘুম কেড়ে নিত, আমাকে পাগল করে তুলত।”
একটু থামল রাশেদ। রুহুল আমিনের বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
“ তারপর? “
“ তারপর একটা সময় মনে হলো এই সমাজে ধর্ষকদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। যখন আইন তাদের সাজা দিতে পারেনি, তাদেরকে আমি শাস্তি দেবো। ব্যস! প্রথমেই ওই জানোয়ারগুলোকে খু*ন করলাম। তবে আলাদাভাবে। পাথর দিয়ে সাড়া শরীর থেঁতলে পাহাড়ের চূড়া থেকে ফেলে দিয়ে মেরেছি তাদের। সেজন্য ওখানকার পুলিশ বিষয়টা নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি। ভেবেছিল সবাই পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেছে, সেজন্য শরীর থেঁতলানো। কিন্তু পরবর্তীতে মনে হলো এতো কম শাস্তি পেয়ে মরলে তো হবে না। ওদেরকে আরো কঠিন শাস্তি পেয়ে মরতে হবে। এমনভাবে মরতে হবে যেন নিজে থেকেই মরার জন্য ছটফট করে।”
“ বুঝতে পেরেছি। আমি আসছি এখন৷ যেহেতু তুমি সবকিছু স্বীকার করেছ এবং তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে – তাই তোমার হয়ে আমি সুপারিশ করবো। “
“তারপর এক সময় মনে হলো – এই সমাজে ধর্ষকদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। যখন আইন তাদের সাজা দিতে পারল না, তখন ঠিক করলাম, শাস্তি আমি নিজেই দেবো। ব্যস! প্রথমেই ওই জানোয়ারগুলোকে খুন করলাম। তবে আলাদাভাবে। পাথর দিয়ে তাদের সারা শরীর থেঁতলে, তারপর পাহাড়ের চূড়া থেকে ফেলে দিয়েছিলাম। সেজন্য ওখানকার পুলিশ বিষয়টা নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি। ভেবেছিল, সবাই পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেছে – তাই শরীর থেঁতলে গেছে। কিন্তু পরে মনে হলো, এত কম শাস্তি পেয়ে ওদের মরলে তো চলবে না। ওদের এমন শাস্তি দিতে হবে, যেন মরার জন্য নিজে থেকেই ছটফট করে।”
“বুঝতে পেরেছি। আমি এখন আসছি। যেহেতু তুমি সবকিছু স্বীকার করেছ এবং তোমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে – তাই তোমার হয়ে আমি সুপারিশ করবো।”
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল রাশেদ। ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন লকআপ থেকে বেরিয়ে গেলেন ঠিকই, কিন্তু তার মন পড়ে রইল রাশেদের কাছে।
“ আজ আমিও তোমাদের সাথে রান্না করব ভাবি। “
আচমকা সাবিহার এমন আচরণে বেশ চমকে গেল অরা। যে মেয়ে তিন বেলা খাওয়া ছাড়া কিছু করে না, আজ সে নিজে থেকেই রান্না করতে চাইছে! অরা কেউই সাবিহার আচরণটা ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। সবাই জানে, সাবিহা সাধারণত রান্না করার জন্য আগ্রহী নয়। বাড়ির অন্যান্য কাজেও সে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। শুধু খাওয়া ছাড়া, বেশিরভাগ সময় তার সমস্ত সময় টিভি দেখা কিংবা ঘোরাঘুরি করতেই চলে যায়। কিন্তু আজ কী যেন হলো, যেন এক নতুন রূপে আবির্ভূত হল সাবিহা।
তামান্না আড়ালে ভেংচি কেটে বলল,
“ আপনি কি রান্না পারেন, আপা?”
সাবিহা হেসে বলল,
“ পুরোপুরি না পারলেও অল্পবিস্তর তো পারি৷ অরা ভাবিও তো সব রান্না পারে না। আমিও ভাবির মতো সবকিছু শিখে নেবো। কী বলো ভাবি? “
অরা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
“ হ্যাঁ, হ্যাঁ। অবশ্যই শিখে নিবেন৷ শ্বশুর বাড়ি গিয়ে তো রান্নাবান্না করতেই হবে। “
মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো সাবিহার। বিয়ে! আরিশকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না সে৷
“ হুম। “
সাবিহাকে জব্দ করতে পেরে অরা আর তামান্না বেশ খুশি। ওরা নিজেদের মধ্যে ইশারায় হাসাহাসি করছে। সাবিহা আপাতত অরার কোনো কথা গায়ে না মাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রান্নাঘরে ঢুকে নিজে থেকেই কিছু পেঁয়াজ কাটতে শুরু করে সে। অরা ইলিশ মাছে লবণ, মরিচ আর হলুদ মাখাচ্ছে। তামান্না কড়াইয়ে তেল দিচ্ছে।
“ আচ্ছা ভাবি আমরা সবাই মিলে ছাঁদে পিকনিক করলে কেমন হয়?”
তামান্না সাবিহার কথা শুনে অরার দিকে তাকাল। অরা মুচকি হাসল। মেরিনেট করা মাছগুলো এক এক করে তেলে ছাড়তে ছাড়তে বলল,
“ ভালোই হয়। “
“ তাহলে তালহা ভাইয়া, বাসায় ফিরলে তোমার সাথে কথা বলে সবকিছুর ব্যবস্থা করবে। আরিশ তো এসব আয়োজন করবেই না কখনো। “
“ না, না! তালহা ভাইকে আমার কাছে পাঠানোর দরকার নেই। “
অরা বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল। সাবিহা ঠিক বুঝতে পারছে না, তালহা অরার সঙ্গে দেখা করলে এমন কী হতে পারে– যার জন্য অরা এমন রিয়াক্ট করলো? তবে এতটুকু বুঝেছো, এটা অরার জন্য বেশ অস্বস্তিকর।
“ কেনো ভাবি? তালহা ভাই কি তোমাকে কিছু বলেছে? মানে তোমাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে? “
“ আরে না। “
অরার চোখমুখ কেমন শুকিয়ে গেছে। তালহার সাথে কথা বলেছে শুনলেও আরিশের ক্রোধের মাত্রা বেড়ে যাবে। সাবিহা অরাকে আরকিছু বলার আগেই তামান্না বলল,
“ আরিশ ভাই কি আপনার থেকে ছোটো, সাবিহা আপা?”
তামান্নার প্রশ্নে হকচকিয়ে গেলো সাবিহা। অরা ঠোঁট টিপে হাসছে।
“ কেনো বলো তো?”
“ না মানে তালহা ভাইকে, ভাই বলে ডাকেন। অথচ আরিশ ভাইকে, নাম ধরে…. তাই আরকি!”
কপাল কুঁচকে ফেলল সাবিহা। ইচ্ছে করছে, এই তামান্নার গালে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মারতে। কিন্তু কিছু করা যাবে না এখন। সাবিহা মেকি হাসল।
“ এমনি। আচ্ছা আমি আসছি এখন৷ তোমরা তো সব কাজ করেই ফেলেছ৷ “
“ ওকে আপু। “
সাবিহা আরকিছু না বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তামান্না ও অরা হাসছে, সাবিহার অবস্থা দেখে।
সন্ধ্যাবেলা সাবিহা তালহাকে পিকনিকের সব পরিকল্পনা বুঝিয়ে বলল। তামান্না, অরা, সাবিহা আর তালহা মিলে একসাথে সবকিছু ঠিকঠাক করে নিলো। ঠিক হলো–ছাদে বসে পিকনিক হবে। আলাপচারিতা শেষ হতে হতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেল। অরা নিজের রুমের দিকে চলে গেল। তামান্নাও রাতের খাবার গরম করতে রান্নাঘরের দিকে এগোল। ড্রইংরুমে এখন শুধু সাবিহা আর তালহা বসে আছে। দু’জনে কিছুক্ষণ পিকনিক নিয়ে কথা বলছিল।
এরমধ্যে সাবিহা কয়েকবার দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তালহা টিভি দেখছে আর মাঝে মাঝে বোনের সঙ্গে কথা বলছে। হঠাৎ সাবিহা এগিয়ে এসে বলল,
“ভাইয়া, অরা ভাবি আপনাকে ডাকছে।”
তালহা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ভাবি? কোথায় ডেকেছে? ”
টিভির দিকে তাকানো অবস্থায়ই শুধালো তালহা। সাবিহা তাড়াহুড়ো করে বলল,
“ হ্যাঁ ভাবি, রুমেই ডেকেছে। বলল, কী একটা জরুরি কথা আছে। তুমি এখুনি যাও। “
“ ওকে। “
অরা জরুরি কথা বলবে শুনে তালহা আর সময় নষ্ট করলোনা। দ্রুত অরার রুমের দিকে এগোল।
বিছানা গোছগাছ করছিল অরা। এমন সময় ঘরে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে ফিরে তাকাল সে।
“ ভাবি মা, তুমি ডেকেছ?”
তালহাকে বেডরুমে দেখে গলা শুকিয়ে গেল অরার। মাত্র আরিশের গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেয়েছে সে। তারমানে আরিশ যেকোনো মুহুর্তে রুমে চলে আসবে! অরা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তালহাকে যে ঘর থেকে চলে যেতে বলবে সেটাও পারছে না। তালহা অরাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরেকটু কাছাকাছি এগিয়ে বলল,
“ তুমি ঠিক আছো? “
ঘোর কাটলো অরার। তালহার দিকে এগিয়ে কণ্ঠে অস্থিরতা নিয়ে বলল,
“ আমি ঠিক আছি ভাইয়া। আপনি ড্রই রুমে গিয়ে বসুন। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি, কেমন মাথা ব্যথা করছে। “
“ আমি তামান্নাকে দিয়ে বাম পাঠিয়ে দিচ্ছি রুমে। নিচে যাওয়ার দরকার নেই। তারচে বরং তুমি রুমে বসেই আরাম করো। “
“ কী হয়েছে তালহা? আরাম করার কথা হচ্ছে যে?”
আরিশের গলা শুনে রীতিমতো কেঁপে উঠল অরা।দরজার দিকে তাকাতেই তাকে দেখতে পেল – কালো ফরমাল শার্ট আর প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখদুটো লালচে হয়ে গেছে, মুখটা কেমন যেন বিধ্বস্ত লাগছে। আরিশ ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল। তালহা বলল,
“ ভাবি মা, ডেকেছিল আমাকে। কিন্তু রুমে এসে শুনি মাথা ব্যথা করছে। তাই বললাম রুমে থেকে আরাম করতে, এখন ড্রইং রুমে যাওয়ার দরকার নেই । আমি গিয়ে বাম পাঠিয়ে দিচ্ছি। “
অরা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । কোনো কথা বলছে না। শুধু আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে।
“ কোনো ঔষধ লাগবে না, তালহা। লাগলে আমি দিয়ে দেবো। চিন্তা করিস না। তুই যা, আমি দেখছি তোর ভাবি মা’কে। “
“ ঠিক আছে ভাইয়া। গুড নাইট। “
“ হুম, গুড নাইট। “
তালহা অরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
চলবে,