হামিংবার্ড পর্ব-২৭+২৮

0
11

#হামিংবার্ড
#পর্ব_২৭
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

“ কী রে সাবিহা? তুই তো বললি, ভাবি আমাকে ডেকেছিল। কিন্তু ভাবির তো শরীর খারাপ, তাছাড়া আমার সাথে কথা বলতেও আগ্রহী ছিলো না। “

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে কথাগুলো বলল তালহা। সাবিহা ড্রইংরুমের সোফায় পা তুলে বসে টিভি দেখছিল। ডাইনিংরুমে দাঁড়িয়ে থাকা তামান্না সব শুনে যা বোঝার বুঝে গেল। ইচ্ছে করেই সাবিহা আরিশের সামনে অরা আর তালহাকে উপস্থাপন করেছে।

“ আমি যে শুনলাম, ভাবি ডাকল তখন?”

“ তোর মাথা শুনেছিস পেত্নী। “

তালহা সাবিহার মাথায় একটা গাট্টা মেরে, হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিলো। সাবিহা বিশেষ কিছু বলল না। অন্য সময় হলে ভাইয়ের সাথে রিমোট নিয়ে ঝামেলা বাঁধাত নিশ্চিত । কিন্তু এখন সাবিহার মনটা ভীষণ ভালো ।

“ সব সময় আমার সাথে এমন করো। মা’কে বলব, তুমি আমাকে মেরেছ। “

“ যা গিয়ে বল। পেত্নী কোথাকার। “

সাবিহা শান্ত ভঙ্গিতে হেঁটে নিজের রুমের দিকে এগোল। নিজের কাজকর্ম সেরে তামান্না ডাইনিংরুম থেকে ড্রইংরুমে এসে তালহার কাছে দাঁড়াল।

“ কী খবর, তামান্না ভাটিয়া?”

“ আপনার বোন আসলেই একটা পেত্নী। “

“ ওমা! কেনো? “

“ কিছু না। “

“ ওকে শাঁকচুন্নি। “

নিজের ব্যাপারে এমন কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল তামান্না।

“ আমি শাঁকচুন্নি? ভালো, ভালো। “

তামান্না এ কথা বলে রাগে গজগজ করতে করতে রান্নাঘরের দিকে এগোল। তালহা জিহ্বায় কামড় বসাল। কী ভুলটাই না করলো সে!

“ এই তামু… তামান্না ভাটিয়া? ওই তামু…. শোনো না!”

“ তোমাকে বলেছিলাম, তালহার সাথে অপ্রয়োজনে কথা বলবে না। আমার সহ্য হয় না। তবুও কেনো বললে, হামিংবার্ড?”

অরার একটি হাত শক্ত করে পিছন থেকে ধরে রেখেছে আরিশ। সে ঠিক অরার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, রাগে যেন পাগল হয়ে গেছে। অরা তখন থেকেই বোঝানোর চেষ্টা করছে—তালহা নিজে থেকেই রুমে এসেছিল। কিন্তু আরিশ তার কথায় কান দিচ্ছে না; পাগলের মতো একা একা বকেই যাচ্ছে।

“ আরিশ! কতবার বলব? আমি উনাকে রুমে আসতে বলিনি৷ হয়তল পিকনিকের বিষয় কথা বলতে এসেছিল। “

“ বেডরুমে বসে কেনো কথা বলতে হবে, বলো? “

আরিশের কুরুচিপূর্ণ কথায় অরার চোখ-মুখ বিরূপ হয়ে উঠল। রাগে বলল,

“ আপনি একটা অসুস্থ মনের মানুষ। আপনার ভাই হয় সে। আমিও ভাই ডাকি। আপনি সেখানে এসব বলছেন কীভাবে? “

আরিশ অরাকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। অরার গাল ঠেকেছে ঠান্ডা দেয়ালের গায়ে। আরিশ তার দু’হাত পিছন দিকে মুচড়ে ধরে রেখেছে, শক্ত করে। অরা শত চেষ্টা করেও নিজের হাত ছাড়াতে পারছে না। এরই মধ্যে আরিশ অরার ঘাড়ে হিংস্রভাবে কামড়ে ধরল। অরার ব্যথায় বেরিয়ে আসা চিৎকারে তার কামড় ধীরে ধীরে নরম হয়ে চুমুতে রূপ নিল। কামড়ের জায়গা থেকে ক্ষীণভাবে রক্ত ঝরছে। আরিশ ধীরভাবে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল সেই ক্ষতস্থানে।

“ আমি খারাপ, অসুস্থ মস্তিষ্ক আমার। সেখানে সুস্থ মনের বসবাস কীভাবে হবে, বলো? “

“ আপনি যদি কখনো হারিয়ে ফেলেন, বুঝবেন তার জন্য আপনি নিজেই দায়ী। আপনার আচরণের কারণেই আমি……. “

অরার কথা শেষ হওয়ার আগেই আরিশ তাকে এক ঝটকায় নিজের দিকে ফিরিয়ে, শক্ত করে থুতনিতে হাত রাখে।

“ এই পাখি! শশশশ….. চুপ! আমি তোমাকে কখনো হারাবো না। হারাতে দেবোনা। “

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল অরা। আরিশ হুট করে কোলে তুলে নিলো তাকে। অরা বুঝতে পারছে না কিছু। কী করতে চলেছে আরিশ?

“ কোথায় যাচ্ছেন? “

“ ওয়াশরুমে। “

“ কেনো? “

জবাবে শুধু এক রহস্যময় হাসি হাসল আরিশ; কোনো কথা বলল না। ধীরপায়ে অরাকে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোল। খান বাড়ির ওয়াশরুমগুলো এতটাই বড়ো যে, মনে হয় সেখানে হাডুডু খেলাও সম্ভব।

“ কী করবেন আপনি? বাথটবে চোবাবেন? “

অরার সরাসরি প্রশ্নের কোনো জবাব দিল না আরিশ। চুপচাপ তাকে কোল থেকে নামিয়ে ওয়াশরুমের দরজা ভেতর থেকে আটকে দিল। তারপর অরার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করাল। অরার চোখে ভয়, বিরক্তি, আর সেই সাথে কৌতূহলও ভেসে উঠল। আরিশ ধীরে হাত বাড়িয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিল। ওপরে থেকে টলটলে জল পড়তে শুরু করল। আরিশ আর অরা দু’জনেই সেই পানির নিচে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে।

আজকের আরিশ অরার কাছে অচেনা লাগছে। অন্যদিন হলে এতক্ষণে সে হয়তো জোর করে বিছানায় নিয়ে যেত। কিন্তু আজ… ওয়াশরুমে?

শাওয়ারের জলে অরার শরীর ভিজে একাকার। আরিশেরও একই অবস্থা। দু’জনেই একদৃষ্টে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে, শব্দহীন।

অরার কপাল বেয়ে জল গড়িয়ে নাকের ডগায় জমছে, সেখান থেকে ঠোঁট ছুঁয়ে থুতনি বেয়ে নিচে পড়ছে। এই দৃশ্য আরিশকে ক্রমশ বেপরোয়া করে তুলছে। সে অরার কোমরে শক্ত করে হাত রেখে তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলল।

কপালে কপাল ঠেকিয়ে এক মুহূর্তের নিঃশ্বাসহীনতায় আটকে গেল দু’জন।

“ অরা!”

চমকাল অরা। আজকে প্রথম আরিশ তার নাম নিয়ে ডাকল!

“ বলুন। “

“ আমি খুব কষ্ট দেই তোমাকে? “

“ হ্যাঁ। “

“ আমি যদি ভালো হয়ে যাই। মানে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করি, তুমি আমাকে ভালোবাসবে? আমাকে কি ভালোবাসা যায়? আমি.. আমি কি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য? “

আরিশের কণ্ঠস্বর আজ অন্য রকম শোনাচ্ছে। কেমন গলা ধরে এসেছে তার। মনে হচ্ছে শাওয়ারের জলের সাথে আরিশের চোখের জলও মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। অরার বুকটা কেমন হুহু করে উঠলো আরিশের কথায়। লোকটা ভালোবাসার কাঙ্গাল। মায়া হলো তার। আরিশের পিঠে হাত রাখল অরা। শান্ত গলায় বলল,

“ আপনি তো খারাপ নন। কিছু কিছু সময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন শুধু। ভালো কিংবা খারাপের ওপর নির্ভর করে কেউ কাউকে ভালোবাসে না। দেখেন না? নেশাখোর, ব্যাড বয় টাইপের ছেলেদেরকেও মেয়েরা ভালোবেসে ফেলে? এটা একটা অনুভূতি। কখন কীভাবে হয়ে যাবে – বলা যায় না। “

অরা একটু থামল। আরিশ অরাকে নিজের শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। যেনো একটু নড়লেই হাতছাড়া হয়ে যাবে সে।

“ ভালোবাসার জন্য কোনো যোগ্যতার দরকার হয় না, আরিশ। এসব ভাববেন না। আপনার চিকিৎসা দরকার। প্লিজ একবার ডাক্তার দেখাবেন? আমি আপনার সাথে সুন্দর একটা জীবন কাটাতে চাই ভাইয়া। “

অরার কথা শেষ হতেই তার গালে একটি থাপ্পড় পড়ল। আকস্মিক এই ঘটনায় অরা হতবাক হয়ে গেল, আরিশের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। থাপ্পড়টা যদিও খুব জোরালো ছিল না, তবুও অরা ভয়ে কিছুটা চমকে উঠল।

“ সব সময় তো আরিশই বলো, আজ আবার ভাইয়া ডাকতে গেলে কেন?”

অরা থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইলো কেবল। আরিশ টুক করে তার ঠোঁটে চুমু খেলো একটা। মুচকি হেসে বলল,

“ ওভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে না। তেমন জোর মারিনি। তবে ভবিষ্যতে আবারও ভাইয়া বললে, গাল আর আস্ত থাকবে না। “

খিলখিল করে হেসে উঠল অরা। আরিশ মুগ্ধ নয়নে অরার প্রাণবন্ত হাসি দেখছে। আজ পর্যন্ত অরাকে কখনো এভাবে হাসতে দেখেনি আরিশ। মেয়েটা হাসলে কী দারুণ লাগে!

“ আপনি আসলেই একটা আধপাগল, সাইকো টাইপের মানুষ। কখন কী হয় আপনার, বোঝা মুশকিল। “

ভ্রু কুঁচকে ফেলল আরিশ। সে সাইকো? মেহরাবও আজ সেটাই বলল। তাহলে কি কথাটা সত্যি? আজকে মেহরাবের সাথে কথা না বললে নিজের মনের কথা বুঝতে পারতোনা আরিশ। অরার প্রতি টুকরো, টুকরো অনুভূতিগুলোর নাম যে ভালোবাসা সেটাও বুঝতে পারতো না। আরিশের ভালোবাসা পাওয়ার পথটা ভুল– মেহরাব সেটা খুব ভালো করে বুঝিয়েছে তাকে। জোর করে, শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় না। বরং এসব করলে সম্পর্কে আরো দূরত্ব বাড়ে, এক সময় ভেঙে যায়। আরিশের পাগলামিগুলো মেহরাব ভালো করেই জানে। তাই আজকে মেহরাব একজন প্রকৃত বন্ধুর মতোই আরিশকে সঠিক পথে চলার পরামর্শ দিয়েছিল।

“ আমি আধপাগল, মানলাম। কিন্তু সাইকো নই। “

অরা কিছু বলতে যাওয়ার আগেই পরপর দু’টো হাঁচি দিলো। এতক্ষণ জলের নিচে দাঁড়িয়ে থাকাতে হয়তো ঠান্ডা লেগে গেছে । আরিশ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শাওয়ার বন্ধ করে দিলো। অরা নিজেকে আরিশের থেকে ছাড়িয়ে পেছন দিকে ফিরে বলল,

“ তাহলে আমার ঘাড়ে র ক্ত কেনো? আমার সাড়া শরীরে আপনার সাইকোগিড়ির প্রমাণ আছে। “

“ তোমার শরীরজুড়ে কেবল আমার ভালোবাসার চিহ্ন থাকবে, হামিংবার্ড। আমি যতই স্বাভাবিক হই না কেনো, আমার ভালোবাসার ধরণ বদলাবে না। আমার ছোঁয়া এমনই– যেমন উষ্ণ তেমনই বিধ্বংসী। “

দরজা খুলে, অরাকে কোলে তুলে নিলো আরিশ। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমের দিকে এগোল।

“ হুহ্, হুহ্। ডাক্তারের কাছে যাবেন তো? “

“ আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। তবুও যদি তুমি চাও, আমি যাবো। তবে ডাক্তার যেন বেশি ঔষধ না দেন। “

মুচকি হাসল অরা। লোকটা তো এখনও বাচ্চাদের মতোই কথা বলছে। আরিশ কোল থেকে নামিয়ে দিলো অরাকে।

“ ওকে। জামাকাপড় চেঞ্জ করে আসছি। আপনিও করে নিন। ঠান্ডা লাগবে। “

“ এখানেই চেঞ্জ করো। “

“ কী?”

“ বাংলায় বললাম। “

“ বেডরুমে বসে জামাকাপড় চেঞ্জ করলে, অতবড় ওয়াশরুমটা আছে কী করতে? “

মুচকি হাসল আরিশ। অরার গাল টিপে দিলো কয়েকবার।

“ তা-ও কথা। “

“ যাচ্ছি, আমি। “

মুচকি হেসে ওয়াশরুমের দিকে এগোল অরা। আজকে ভীষণ খুশি লাগছে তার। আরিশের এমন পরিবর্তন কখনো আশা করেনি সে৷ সবকিছু যেন জাদুর মতো লাগছে ! তবে আজকে তালহা ভাই রুমে এসে ভালোই করেছে। মনে মনে তালহাকে ধন্যবাদ দিলো অরা।

“ কী ব্যাপার? ভাবি, ভাইয়া তো খেতে এলোনা! “

রাতের খাবার খাচ্ছে সকলে। ঘড়িতে সময় রাত সাড়ে দশটা। তামান্না সাবিহার দিকে তাকিয়ে ফুঁসছে কেবল।

‘ আজকে নিশ্চিত ভাবির সাথে খারাপ আচরণ করেছে আরিশ ভাইয়া৷ আর সবকিছুর জন্য সাবিহা ডাইনী দ্বায়ী। ’

মনে মনে এরকম আরো অনেক কথাই ভাবছে তামান্না।

“ নতুন বিয়ে হয়েছে ওদের। নিজেদের সময় মতো খেয়ে নিবে তালহা। তুইও বিয়েটা করে নে এবার। “

তাসলিমা বললেন। সাবিহা মুচকি মুচকি হাসছে। কিছুক্ষণ আগেই মায়ের কাছে গিয়ে সবটা খুলে বলেছে সে। সেজন্য মা-মেয়ে দু’জন বেশ খুশি। মায়ের কথায় চুপ করে গেল তালহা। আড়চোখে কেবল তামান্নার দিকে তাকাল একবার।

“ কার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে? তালহার না-কি? “

আরিশের কণ্ঠস্বর শুনে সবাই সিঁড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করলো। সাবিনা, তাসলিমা যেনো চারশো বিশ ভোল্টের একটা শক খেলো। অরা ও আরিশ একসাথে আসছে। দু’জনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সদ্য গোসল সেরে এসেছে। অরার চুল এখনো ভেজা! রাগে শরীর হিড়হিড় করে উঠল সাবিহার৷

“ আরে মায়ের কথা বাদ দাও। বিয়ে-শাদি আরো পরে করবো ভাইয়া। আগে বিজনেসটা বুঝি, একটা অবস্থান তৈরি করি, তারপর। “

অরাকে হাসিখুশি দেখে তামান্না স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আরিশ ও অরার বসার জন্য চেয়ার টেনে দিলো সে। দু’জনে পাশাপাশি বসলো৷ তামান্না খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে।

“ গুড। এটাই ভালো হবে। “

তালহা মুচকি হেসে খাবারের দিকে মনোযোগ দিলো৷ অরা খেতে খেতে তালহাকে উদ্দেশ্য করে শুধালো,

“ ভাইয়া একটু আগে যে বললেন, আমি আপনাকে ডেকেছি– কে বলেছিল সেটা? “

আরিশ আড়চোখে অরার দিকে তাকাল একবার। অরা আরিশের হাতে হাত রাখল। ইশারায় বোঝাতে চাইল, দরকারি কথা। আরিশ চুপ করে রইল।

“ সাবিহাই তো বলল তখন। “

আরিশ ও অরা দু’জনেই সাবিহার দিকে তাকাল। মেয়েটা ভাবতেও পারেনি, অরা এভাবে তার পর্দা ফাঁস করে ফেলবে। বোকার মতো হেসে বলল সাবিহা,

“ আসলে আমি ভুল শুনেছিলাম। “

“ ব্যাপার না আপু। আপনাকে ধন্যবাদ। “

মুচকি হেসে বলল অরা। আরিশও মৃদু হাসল। সাবিহা কিছুই বুঝতে পারছে না৷ কী হওয়ার কথা ছিলো, আর কী হলো?

চলবে,

#হামিংবার্ড
#পর্ব_২৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

[ পর্বটি রোমান্টিক। ভালো না লাগলে অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ রইলো। ]

“ কীসের জন্য ধন্যবাদ দিলে, ভাবি? আমি আসলে…..”

অরা মুচকি হাসল। সাবিহা একবার আরিশের দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার অরার দিকে তাকাচ্ছে।

“ কিছু না। “

সাবিহা আর কথা বাড়ালো না। শেষে আবার কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে গেলে মহা মুশকিল হয়ে যাবে।

“ কী হে তামান্না ভাটিয়া, তুমি খাবে কখন?”

তালহার কথায় আরিশও তামান্নার দিকে তাকাল।

“ আপনারা খাওয়া শেষ করুন, তারপর খাবো। “

“ তোকে না বলেছি, যখন খিদে পাবে তখুনি খেয়ে নিবি? “

আরিশের গম্ভীর কণ্ঠে নড়েচড়ে উঠল তামান্না। অরা বলল,

“ তুমিও আমাদের সাথেই খেতে বসে যাও আপু। সবকিছু তো এখানেই আছে। “

অরার কথা শুনে আড়ালে ভেংচি কাটলেন তাসলিমা খাতুন। কাজের মেয়েকে নিয়ে এদের এত আদিখ্যেতা তাঁর সহ্য হচ্ছিল না। অরার কথামতো তামান্না একটা চেয়ার টেনে এনে খাওয়ার জন্য বসে পড়লো।

“ ঠিক আছে ভাবি। “

তালহা মুচকি হাসল। খানিক পরেই সাবিহা ডাইনিং রুম থেকে উঠে গেল। আজকে তার গলা দিয়ে ভাত নামছিল না৷ অরাকে কোনোভাবেই আরিশের থেকে দূরে সরানো যাচ্ছে না। নিজের ওপর খুব বিরক্ত সাবিহা৷

আকাশজুড়ে জমে উঠেছে ঘন কালো মেঘ। চারদিকে ছড়িয়ে আছে এক ধরনের অদ্ভুত অন্ধকার। খোলা জানালা দিয়ে টুপটাপ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে ঘরে। সঙ্গে ঢুকছে হালকা ঠান্ডা বাতাস, যা রুমের পরিবেশকে আরও শীতল করে তুলেছে। দূরে মৃদু গর্জন শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, আসন্ন কোনো দুর্যোগের পূর্বাভাস দিচ্ছে প্রকৃতি। সম্ভবত কালবৈশাখী আসছে– আবহাওয়া অফিস থেকেও নাকি এমন সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।

অরা বিছানা গোছগাছ করছিল। আরিশ চাচির সাথে কথা বলতে বাইরে গেছে, তবে কী বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটা অরা জানে না। বিছানার চাদরটা সুন্দর করে ঠিকঠাক করে অরা জানালাগুলোর দিকে এগিয়ে গেল। হালকা বাতাসে পর্দা দোলার শব্দ হচ্ছিল। সে একে একে সব জানালা আটকে দিলো, যেন ঠান্ডা বাতাস আর বৃষ্টির ছাঁট ঘরে ঢুকতে না পারে। ঠিক তখনই রুমে ঢুকলো আরিশ, তার মুখে এক অদ্ভুত আকর্ষণ।

“ আজকের ওয়েদারটা কেমন, বলো তো হামিংবার্ড?”

“ কেন, আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না? বৃষ্টি হচ্ছে! “

আরিশ রুমের দরজা বন্ধ করে ধীরে ধীরে বিছানার দিকে এগিয়ে এলো। অরা বিছানার অন্য পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, চোখেমুখে একরকম দ্বিধা। হঠাৎ করেই আরিশ তার হাত ধরে একটা হেঁচকা টানে তাকে বিছানায় ফেলে দিলো। অরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।

“ তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না, তোমার বর তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে আছে?”

চুপ করে রইলো অরা। আরিশ এগিয়ে এসে আলতো করে তার কপালে একটি চুমু আঁকলো। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো অরা। তার নিঃশ্বাস যেন একটু ভারী হয়ে উঠলো, বুকের ভেতর কেমন অস্থির ঢেউ খেলে গেল। অরার এমন নরম প্রতিক্রিয়ায় আরিশ মৃদু হেসে উঠলো। সেই হাসিতে ছিল একরাশ ভালোবাসা, ছিল একরকম মুগ্ধতা। নীরব সম্মতির ইঙ্গিত পেয়ে, সে আরও উষ্ণতা ছড়িয়ে দিলো অরার শরীর জুড়ে। আবেশে চোখ বন্ধ রেখেই অরা বিছানার চাদর শক্ত করে খামচে ধরলো। আরিশের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়ায় অরার সমস্ত মুখমণ্ডল যেন অদ্ভুত এক আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে উঠলো।

“ আ..প..নি কী করছেন? “

আরিশ আলতো করে অরার ঠোঁটের ওপর আঙুল চেপে ধরলো। নরম স্পর্শে তার সমস্ত শরীর শিউরে উঠলো। আরিশ ফিসফিস করে বললো,

“ তুমি জানো হামিংবার্ড, আমি কী করছি। অনুভব করো। বাঁধা দিও না। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না আর। “

“তুমি জানো, হামিংবার্ড… আমি কী করছি।”

আরিশের গলা প্রচণ্ড কোমল, কিন্তু তার ভেতরে একটা অদম্য আকাঙ্ক্ষা দপদপ করছে।

সে ফিসফিস করে আরও এগিয়ে বললো,

“ফিল মি… ডোন্ট স্টপ মি। আই ক্যান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ এনি মোর।”

অরা চোখ বুজে অনুভব করলো, তার বুকের ভেতর তীব্র ধুকপুকানি, আর চারপাশের নিস্তব্ধ ঘরের মধ্যে দুজনের নিঃশ্বাসের ছন্দ একসাথে মিশে যাচ্ছে।

অরা ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। আরিশের বলা কথাগুলো তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আর তার গালদুটো লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে। আরিশ ধীরে ধীরে অরাকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করতে শুরু করলো। প্রথমে কপাল, তারপর গাল, ঠোঁট—সব জায়গায় একের পর এক ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ ছড়িয়ে যাচ্ছে। তার স্পর্শের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরিশের স্পর্শে বুকের ভেতর এক অদ্ভুত

তৈরি হতে লাগলো অরার।

তবে প্রথম দিকে অরার ভালো লাগলেও, সময়ের সাথে সাথে তার মনোভাব বদলাতে শুরু করেছে। আরিশের স্পর্শে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করছে সে। আরিশের সেই চিরচেনা তীক্ষ্ণ স্পর্শে অরার আগের কিছু মুহূর্ত মনে পড়ে যাচ্ছে ।

“ প্লিজ স্টপ! “

“ আই কান্ট, হামিংবার্ড। “

আরিশ অরার বারণ শুনলো না। ধীরে ধীরে, গলা থেকে ঠোঁটের ছোঁয়া নিয়ে আরো গভীরে যেতে লাগলো। অরা ছটফট করতে লাগলো, মাঝে মাঝে ব্যথায় চোখ বন্ধ করে ফেলছে। তার শরীর এক অদ্ভুত অবস্থায় ছিল – একদিকে ব্যথা, অন্যদিকে অরিশের স্পর্শে এক ধরনের অস্বস্তি। হঠাৎ, আরিশ অরাকে শক্তভাবে উল্টো দিকে ফিরিয়ে শুইয়ে দিলো। ঘাড়ের ওপর থেকে তার চুলগুলো সরিয়ে, ঠোঁট দিয়ে আগ্রাসীভাবে থাবা বসালো।

অরা আরিশের এই আচরণে বিস্মিত হয়ে গেল, তার কোমল হাতগুলো আরিশের শক্ত, রুক্ষ হাতের নিচে চাপা পড়ে গেছে, যেন সে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে

“ আরিশ! “

“ হুম?”

“ আমার লাগছে, পিঠে। “

“ সরি, পাখি। একটু সহ্য করো। এরথেকে আস্তে আদর করা আমার পক্ষে সম্ভব না। “

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল অরা। এই যদি হয় স্বাভাবিক আদর তবে….

“ জোর করবেন? “

আরিশ অরার কথায় খেয়াল করলোনা। কোলে তুলে দু’পাশে পা ছড়িয়ে বসাল তাকে৷ অরা আবারও জিজ্ঞেস করলো।

“ আরিশ! লিসেন টু মি, আজও জোর করবেন?”

ভালোবাসার সেই মুহূর্তে বারবার কথা বলায় আরিশের মেজাজ বিগড়ে গেলো। কোনো কথা না বলে, একপ্রকার অসহিষ্ণু হয়ে অরাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। অরা হঠাৎ অবাক হয়ে চমকে উঠলো, তার চোখে ভয় আর বিস্ময় একসাথে। আরিশের চোখে কিছুটা বিরক্তি, কিছুটা কষ্ট– সে কোনো মন্তব্য না করে, এক নিঃশ্বাসে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর, তীব্র পদক্ষেপে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, যেন সে আর তার মধ্যে কিছুই নেই। অরা বাকরুদ্ধ হয়ে, আচমকা আরিশের এমন আচরণে একদম বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। তার মনে হাজারটা প্রশ্ন, কিন্তু কোনো উত্তর নেই।

ঘণ্টাখানেক পর, আরিশ রুমে ফিরে এলো। অরা এখনও বসে আছে। যেন সে নিজের ভেতর এক অদৃশ্য যুদ্ধ লড়ছে। তার চোখে কিছুটা হতাশা, কিছুটা বিভ্রান্তি। সে আরিশের ভাবমূর্তি বোঝার চেষ্টা করছে, কিন্তু আরিশের প্রতিটি মুহূর্তের পরিবর্তন যেন তাকে আরো বিভ্রান্ত করে তুলছিল।

“ ইচ্ছে না থাকলে আগেই বলে দিতে, পাখি৷ মাঝপথে গিয়ে বললে তো মেজাজ বিগড়ে যাবেই! “

অরা মুচকি হাসল। আরিশ অরার হাসি দেখে ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করলো,

“ কী? “

“ কিছু না। “

“ না, বলো। “

“ আপনি খুব কন্ট্রোললেস হয়ে যাচ্ছেন । “

কনুইতে ভর দিয়ে শুয়ে, আরিশ অরাকে নিজের কোলের কাছে টেনে শুইয়ে দিলো। তার শরীরের কাছাকাছি আসতে অরা একটু অস্তিত্ব অনুভব করলো, কিন্তু আরিশের শক্ত হাত তাকে নিরাপদে আগলে ধরল। ফলশ্রুতিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অরা।

“ এতদিনে বুঝলে?”

“ হু। “

“ ঘুমাও। “

“ আপনি ঘুমাবেন না?”

“ নাহ। “

“ কেনো?”

“ তুমি ঘুমানোর পরে আদর করবো তাই। “

আরিশের কথায় অরা চোখগুলো বড়ো বড়ো করে তাকাল। আরিশ তা দেখে হেসে উঠলো, একদম জোরে হাসি দিলো৷ তার হাসিতে অরা আরেক দফা অবাক হয়ে গেলো।

“ মজা করেছি । গুড নাইট। “

অরা কিছু বললো না। নীরবে, আরিশের বুকে মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার নিঃশ্বাস আর আরিশের দেহের তাপ একাকার হয়ে যাচ্ছে। শুকনো ঢোক গিলল আরিশ। অরার স্পর্শে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বেশ মুশকিল।

বিকেল বেলা, আরিশ তার নিজের কেবিনে বসে আছে। টেবিলের ওপর কিছু ফাইল, কাগজপত্র আর কম্পিউটারের স্ক্রীনে কাজ চলছে।

“তারপর? সবকিছু ঠিকঠাক এখন? ভাবির সাথে মন খুলে কথা বলেছিস তো?”

মেহরাব চায়ের কাপটা টেবিলের ওপর রেখে প্রশ্ন করলো। আরিশ তখন কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু তবুও মেহরাবের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। সবকিছু তো মেহরাবের জন্যই হয়েছে।

“হ্যাঁ, অরা এখন আগের মতো নিজেকে গুটিয়ে রাখে না।”

“বেশ, বেশ। এখন সময় করে ভাবিকে নিয়ে একদিন ডাক্তারের কাছে চলে যা। যত দ্রুত চিকিৎসা নিবি, ততই ভালো।”

“তোরা যে কী শুরু করলি! বলেছি তো, যাবো ডাক্তারের কাছে।”

মেহরাব চায়ের কাপটা আবারও হাতে তুলে নিলো। অদ্ভুত শোনালেও, মেহরাব গরম চা পছন্দ করে না; চা ঠান্ডা হওয়ার পরেই পান করে সে।

“আচ্ছা, মেহরাব, একদিন বাসায় আয় না?”

“ও বাবা গো!”

“কী হলো তোর?”

“হয়েছে তো, তোর! তোর বাড়িতে যাবো, তারপর তোর বউকে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করবো, তারপর তুই আবার সাইকোগিরি শুরু করবি।”

আরিশ কিছুটা লজ্জা পেলো এবার। তার কাছের মানুষগুলো এভাবে তাকে নিয়ে ভাবে, বিষয়টা কখনো ভেবে দেখেনি সে।

“আরে না! কাল আয় বাসায়।”

“ঠিক আছে। বন্ধু যখন বলছে, সে ভদ্রলোক হয়ে থাকবে তখন, না হয় গেলাম।”

মেহরাব হাসতে হাসতে বাকি চা-টুকু শেষ করে ফেলল।

________________

“ তুমি ডেকেছিলে, মা?”

নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল তালহা। দু’দিন ধরে বাড়িতে বসেই কিছু প্রজেক্ট কমপ্লিট করতে দিয়েছে আরিশ, এবং সে কাজের চাপ নিয়ে দিন-রাত এক করে ব্যস্ত ছিল। প্রতিটি মুহূর্তে শুধু কাজ আর কাজ, কিন্তু হঠাৎ সাবিহা এলো তার রুমে। সাবিহা বলল, “মা ডাকছেন।” তালহা কোনো কিছু না ভেবেই কাজের সব চিন্তা পিছনে ফেলে, মায়ের রুমে চলে এলো।

“ হ্যাঁ। বস। “

শান্ত গলায় বললেন তাসলিমা। মায়ের এমন শান্ত গলার পেছনে সব সময় কোনো না কোনো জটলা লুকিয়ে থাকে, সেটা তালহা জানে খুব ভালো। আজও কি তেমন কিছু বলবেন তিনি? তালহা সন্দিহান দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার চোখে এক ধরনের অস্থিরতা, কিন্তু মা তো শান্ত, ঠাণ্ডা গলায় কথা বলছেন। সে মায়ের পাশে গিয়ে বসলো, কিন্তু মনে তোলপাড়। তাসলিমা খাতুন সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন একবার, যেন তার অস্থির মনোভাব কিছুটা শান্ত হয়।

“ কী হয়েছে, মা?”

“ তোর কী হয়েছে? “

“ আমার! আমার আবার কী হয়েছে? “

“ কিছু না হলেই ভালো। কিন্তু দেখতে তো পাচ্ছি অন্য কিছু। “

“ যা বলার সরাসরি বলো। “

“ তামান্নার সাথে একটু বেশিই মিশছিস। “

অবাক হলো তালহা। এসব বলার জন্য রুমে ঢাকলেন, মা? কিন্তু কেনো? তামান্নার সাথে তো স্বাভাবিক মেলামেশাই করে সে।

“ কী বলছ এসব? আমি তো স্বাভাবিকভাবেই মিশি, তার সাথে । “

“ তাহলে তো ভালোই। অন্য কিছু হলে মোটেও ভালো কিছু হবে না। “

চুপ করে গেলো তালহা। সত্যি বলতে তামান্নার প্রতি কিছুটা ভালোলাগার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটা অন্য কিছু তো নয়। আর ভালোলাগা কী দোষের?

“ এভাবে বলছ কেনো? আমি কি ছোটো আছি, মা? আমি বুঝি কোনটা আমার জন্য ভালো আর কোনটা ভালো। “

“ সেটা সময় বলে দেবে। ওই কাজের মেয়ের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবি৷ ওসব মেয়েরা ছেলেদের কীভাবে পটাতে হয় সেটা ভালো করেই জানে। “

তাসলিমার এমন কথায় বসা থেকে উঠে দাঁড়াল তালহা।

“ তোমার থেকে এমন কথা আশা করি না মা। মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের বিষয় কথা বলার সময় অবশ্যই সম্মান রক্ষা করা উচিত। আসছি আমি। “

তালহা রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে বুঝতে পেরে তাসলিমাও রাগ করলেন।

চলবে,