#হামিংবার্ড
#পর্ব_৩৪
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
[ পর্বটি রোমান্টিক, নিজ দায়িত্বে পড়ুন। ]
তোমাকে ছাড়া এ আকাশ সাজে না
সহজে তো বাঁশি বাজে না,
চলনা আজ এ রূপকথা
তোমাকে শোনাই ।
সারাটা দিন
ঘিরে আছো তুমি এত রঙ্গিন
হয়নি কখনো মন,
সারাটা রাত
আসছে না ঘুম ধরেছি হাত
থাকবো সারাজীবন ।
আকাশ হারায় যেখানে
ও.. তোমায় ছোঁবো সেখানে,
ও.. ভালোবাসো এখনি
হো.. পরে কি হয় কে জানে ।
সারাটা দিন
ঘিরে আছো তুমি এত রঙ্গিন
হয়নি কখনো মন,
সারাটা রাত
আসছে না ঘুম ধরেছি হাত
থাকবো সারাজীবন ।
ভালো লাগা সারাক্ষণ
ও.. জানিনা তার কি কারণ,
হা.. ভেসেছি স্বপ্নে আমি
ও…তোমাকে পেয়েছে মন ।
তোমাকে ছাড়া এ আকাশ সাজে না
সহজে তো বাঁশি বাজে না,
চলনা আজ এ রূপকথা
তোমাকে শোনাই ।
…….
গান শেষ হতেই উচ্ছ্বসিত তামান্না জোরে তালি দিতে লাগল। চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। তালহা গিটারটা ফ্লোরে রেখে হেসে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন লাগল গানটা?”
তামান্না মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল,
“অসাধারণ! আপনার গলার সুরটা একেবারে মন ছুঁয়ে গেল, ভাইয়া।”
“আস্তাগফিরুল্লাহ!”
তালহার হঠাৎ এমন প্রতিক্রিয়ায় চমকে উঠল তামান্না। চারপাশে তাকিয়ে কিছু ঘটেছে কি না বোঝার চেষ্টা করল। কিন্তু কোথাও কিছু অস্বাভাবিক দেখল না।
“কি হয়েছে?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল সে।
তালহা গম্ভীর গলায় বলল,
“তুমি আমাকে ভাইয়া বলো কেন? আমার অলরেডি একটা বোন আছে। একাধিক বোনের দরকার নেই আমার।”
মুচকি হাসল তামান্না। বিদ্যুতের ক্ষীণ ঝলকানি আকাশ চিরে আলো ফেলছে মাঝে মাঝে। অল্প অল্প শীতল হাওয়া বইছে। আকাশজুড়ে ঘন মেঘ, যেন কোনো এক দুরন্ত ঝড় ঠিক প্রস্তুতি নিচ্ছে নামার। হয়তো কালবৈশাখী নামবে এই রাতেই।
তামান্নার সেই রহস্যময় হাসিটা দেখে তালহার কপালে ভাঁজ পড়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে তাকাল সে, ভেতরে ভেতরে একটা অস্বস্তি কাজ করছে তার মনে।
“হাসছ কেন, তামান্না ভাটিয়া?”
চোখ ছোট করে জিজ্ঞেস করল তালহা।
“না, এমনি।”
কাঁধ ঝাঁকাল তামান্না।
“একদম না। কিছু একটা হয়েছে, বলো।”
“কচু হয়েছে।”
চোখ ঘুরিয়ে হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়াল তামান্না। তালহাও গিটার হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।
“ধ্যাৎ!”
কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করল তালহা।
আকাশের গর্জন যেন আরও কাছে আসছে। হাওয়াটা ঠান্ডা, কাঁধে এসে লাগছে ফিসফিস করে।
“ঝড় হতে পারে… আবহাওয়াটা ভালো লাগছে না।”
একটু থেমে আবার বলল তামান্না,
“চলুন, খেয়ে নিই। ভাইয়াও বোধহয় এখন খাবেন।”
“হুঁ… চলো।”
তালহা নিচু স্বরে বলল। মাথা হেলিয়ে সামনে পা বাড়াল তামান্না। তালহাও গিটারটা এক হাতে ধরে তার পেছন পেছন হাঁটতে লাগল চুপচাপ।
আজ প্রথমবার অরার হাতের রান্না খেয়েছে আরিশ, তাও আবার নিজের পছন্দের সব খাবার! সাধারণত ভদ্রলোক কড়া ডায়েট মেনে চলে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কার্ব কম, প্রোটিন বেশি – সবকিছু নিখুঁত হিসেবেই চলে। স্বাস্থ্য সচেতনতা তার জীবনের অপরিহার্য অংশ। তেজরিন খান আরিশ নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে বরাবরই দৃঢ়সংকল্প। তবে আজ সব নিয়মের বাঁধন আলগা করেই পেটভরে খেয়ে ফেলেছে। ভালোবাসার মানুষ যখন নিজের হাতে রান্না করে, তখন আর ক্যালোরির হিসেব চলে না।
আরিশ খাওয়া শেষে ধীরে ধীরে হাত-মুখ ধুয়ে উঠল। চোখেমুখে তৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট। ঠিক সেই সময় তালহা আর তামান্না এসে ঢুকল ডাইনিং রুমে। অরার খাওয়াও শেষ হয়ে গেছে।
“ ভাবি, আপনি কেন কষ্ট করলেন? আমাকে একবার ডাক দিলেই তো হতো!”
মিনমিনে গলায় বলল তামান্না।
ততক্ষণে তালহা চেয়ার টেনে বসে পড়েছে। তাসলিমাও এসে খাওয়ার জায়গায় বসেছেন, তবে সাবিহা নিজ ঘরে। তার এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না।
“ডাক দিতে হবে কেন, তামান্না?”
চোখ সরু করে বললেন তাসলিমা।
“তোমার কাজই তো এটা দেখাশোনা করা – কে কখন খাবে, কে বসেছে কে আসেনি এসব। আর তালহা, তোকে একটা কথা বলেছিলাম আমি। মনে হয়, ভুলে গেছিস।
তাসলিমা খাতুনের স্বরে একটা চাপা রাগ ছিল। তালহা কিছু বলল না চুপ করে রইলো । তামান্না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
তখনই আরিশ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“একদিন খেয়াল না রাখলে এমন কিছু হয়ে যায় না, চাচি। আফটার অল, ওর বয়স তো সাবিহার মতোই। বরং তার চেয়েও ছোটো। ইচ্ছেমতো কিছু করার, বা না করার বয়স এটা। আর তালহার গানের গলা দারুণ – ও তো শুধু গান শুনছিল।”
তাসলিমা খাতুন চুপ করে গেলেন। মনে মনে নিজের ছেলের ওপর ভীষণ রাগ করলেন। কখন আবার আরিশ কী বলে সেই ভয় অরা মাথা নিচু করে বসে আছে। আরিশের হালকা মন্তব্যে তামান্নার মুখে আবার হাসি ফুটেছে। একটু স্বস্তির ছাপ নিয়ে সে সবার সামনে খাবার পরিবেশন করছে।
হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল আরিশ। চোখ পাকিয়ে অরার দিকে তাকাল, তারপর এক ভরসা-মেশানো ইশারায় বলল, নিজের ঘরে যেতে। অরা বসা উঠে ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় চলে গেল।
“ সাবিহা খেয়েছে? “
শুধালো আরিশ। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন তাসলিমা। বললেন,
“ মেয়েটা খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে ফেলেছে প্রায়। “
আরিশের কপালের ভাঁজ গাঢ় হলো। কিছু না বলে ঘুরে দাঁড়াল, আর ডাইনিং রুম থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল।
জানালার পাশে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে সাবিহা। পরনে সাদামাটা একটি টি-শার্ট আর ঢিলেঢালা প্লাজু। শহরে আসার পর তার ভিতরে বেশ কিছুটা বদল এসেছে – চেহারায়, পোশাকে, ভাবনায়। এখন সে অনায়াসে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরতেও জানে। তার দৃষ্টি এখন বাইরের ঝাপসা আলোয় নয়, ভেতরের অন্ধকারে আটকে আছে।
মাথায় কেবল একটাই ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে – কীভাবে অরাকে চিরতরে আরিশের জীবন থেকে মুছে ফেলা যায়।
চাইলেই হয়তো চলে যেতে পারে সে এই বাড়ি থেকে। কিন্তু যাওয়ার আগে এমন কিছু করতে চায়, যেন অরার অধ্যায়টা বন্ধ না হলেও অন্তত নড়বড়ে হয়ে পড়ে। যেন ওর দম নিতে কষ্ট হয়, যেন আরিশ আর কখনো চোখ বুজে ওকে বিশ্বাস করতে না পারে।
“ সাবিহা? “
চেনা কণ্ঠ শুনে চমকে উঠল সে। তড়িৎ গতিতে ঘুরে তাকাল। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আরিশ। পরনে কালো টি-শার্ট আর জিন্স। মুখে একরাশ ক্লান্তি আর চোখে কড়াভাবে চাপা রাগ।
“আরিশ! ভেতরে এসো।”
আরিশ ঘরে ঢুকে ধীরে চেয়ার টেনে বসল। সাবিহা সামনাসামনি এসে দাঁড়াতেই বলল,
“ আরিশ না, আরিশ ভাইয়া বলে ডাকবে তুমি। বয়সে তোমার থেকে বড়ো আমি, সেটা কি ভুলে যাও?”
আরিশের কণ্ঠে গাম্ভীর্যের ছাপ স্পষ্ট। সাবিহার গা জ্বলে উঠলো ভেতরে ভেতরে। ভাবছিল, খাবারের কথা বলবে, হয়তো মমতা দেখাবে। তা না করে, জ্ঞান দিচ্ছে।
“ সরি। “
“ ইট’স ওকে। খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করছো না কেন? “
“ আমি বিদেশে যাবো না, আরিশ। “
একটু থেমে ফের বলল সে,
“ আমি বিদেশে যাবো না, ভাইয়া। “
“ কেন যাবে না? কতো ছেলেমেয়ের স্বপ্ন দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করবে, আর তুমি সেই সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করতে চাচ্ছ! “
একমুহূর্ত নীরব থাকে বলল সাবিহা,
“ আমি তোমাদেরকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। “
আরিশ চুপ করে গেল। এক দৃষ্টিতে তাকাল সাবিহার দিকে। তারপর ঠান্ডা গলায় বলল,
“ দেখো সাবিহা, তুমি অরার সাথে যা করেছ তারপর তোমাকে এই বাড়িতে রাখার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলো না। কিন্তু চাচার মেয়ে তুমি। তোমার সাথে অবিচার করতে পারবোনা আমি। চাচা আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাই জন্য বলছি, দেশের বাইরে যাও। লেখাপড়া করো, নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করো। “
আচমকা সাবিহা আরিশের সামনে ফ্লোরে বসে পড়লো। আরিশ বিরক্ত হলো তাতে, কপাল কুঁচকে এলো তার।
“ প্লিজ! আরিশ… ভাইয়া আমাকে দূরে পাঠিও না। আমি এখানেই থাকতে চাই। “
বসা থেকে উঠে দাঁড়াল আরিশ। রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে তার।
“ দূরে তো তুমি অবশ্যই যাবে সাবিহা। হয় পড়াশোনার জন্য নয়তো অন্য কিছুর জন্য। আমার অরার আশপাশেও রাখবো না তোমাকে। “
আরিশ হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে গেল সব, ক্ষণেক বাদে রাগে চেয়ারটা উপড়ে ফেলে দিলো সাবিহা। নিজের চুল টানতে লাগলো। মৃত বাবার ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। মরার আগে কিছু জায়গা সম্পত্তি অন্তত তাদের নামে লিখে দিয়ে যেতেন! ঢাকা শহরে এতো কিছু আরিশের অথচ তালহাদের নামে কিচ্ছু নেই। আছে কেবল গ্রামে কয়েক বিঘা জমি….
অনেকক্ষণ হলো, ঘরে এসে বিছানায় চুপচাপ বসে আছে অরা। বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে সে। আরিশ কি রাগ করেছে? না, রাগ করারই বা কী আছে? মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, আর সেসবের উত্তরও যেন নিজেই দিচ্ছে অরা। বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না তার। ভাবলো, শুয়ে পড়বে। ঠিক তখনই দরজা আটকে যাওয়ার শব্দে চমকে তাকাল সে।
আরিশের চোখে চোখ পড়তেই বুকের ভেতর কেমন করে উঠল অরার– ভয়ে দৃষ্টি নত করে নিজেকে গুটিয়ে নিলো বিছানার এক কোণে।
আরিশ ধীরে ধীরে এগিয়ে এল তার দিকে। বিছানায় বসতে বসতে নিজের টিশার্ট খুলতে খুলতে শান্ত গলায় বলল,
“হোয়াটস হ্যাপেন, হামিংবার্ড?”
অরা ধীরে ধীরে মাথা তুলো তাকাল। উন্মুক্ত শরীরে অপূর্ব লাগছে তার রাগী ভূতকে। কিন্তু ভদ্রলোকের চোখগুলো অমন লাল কেন? কার সাথে রাগ করলো? অরার ভয়ার্ত দৃষ্টি দেখে মুচকি হাসল আরিশ। অরা একটু হলেও স্বস্তি পেলো তাতে।
“ আপনি রাগ করেছেন কেন?”
“ কারণ আমি তোমার রাগী ভূত, সেজন্য। “
চমকাল অরা। উনি কীভাবে জানলেন এই নাম? আমতা আমতা করে শুধালো,
“ আপনি কীভাবে….. “
আরিশ অরার দিকে এগোল, জাপ্টে ধরে কোলে তুলে বসালো তাকে। শাড়ি পরে এভাবে বসতে একটু অস্বস্তি লাগছে অরার। কিন্তু কী আর করার!
“ ওই যে সেদিন? নেশার ঘোরে বলেছিলে। “
লজ্জায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলল অরা। আর কী কী বলেছিল, করেছিল সেসব ভেবেই হাসফাস করছে।
“ আর কী কী করে…ছিলাম? “
থেমে থেমে প্রশ্ন করছিল অরা। আরিশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার চোখের গভীরে। তারপর নিঃশব্দে হাত রাখল অরার কোমরে। অরা নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে রইল, বুঝতে পারছিল কী হতে যাচ্ছে। আরিশ ধীরে এগিয়ে এল, তার চোখ আটকে রইল অরার ঠোঁটে। আরিশের আগ্রাসী চুম্বনে এলোমেলো হতে লাগলো সে। মিনিট পাঁচেক ওভাবেই চলল। যখন আরিশ থামল তখন অরার টালমাটাল অবস্থা। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে সে। আরিশের চোখেমুখে দুষ্টমির ঝিলিক।
“ এসব করেছিলে, হটি। “
হটি! চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল অরা। আরিশ তাকে হটি বলল কেন? তারমানে নেশার ঘোরে সে এরকম আদর করেছে? ছিহ! ছিহ! নিজের হাত দিয়েই চোখমুখ চেপে ধরল অরা। আরিশ ওর অবস্থা দেখে হাসছে। এমনিতেই কিস করতে গিয়ে ঠোঁটের সব লিপস্টিক ঘেঁটে গিয়ে থুতনিতে লেগে গেছে, তার ওপর এমন বোকা বোকা কাজকর্ম!
“ ওরে লজ্জা রে! সেদিন কোথায় ছিলো, এত লজ্জা? তখন তো আমি বারণ করা স্বত্তেও শোনোনি। “
অরা কিছু বলল না। চুপ করে রইলো, ওভাবেই।
“ আজ আমিও বারণ শুনবো না, পাখি৷ আই ওয়ান্ট ইউ টু বি মাইন, রাইট হিয়ার, রাইট নাউ। আই ক্যান্ট টেক ইট এনিমোর, আই নিড ইউ।”
আচমকা আরিশের এমন আবদারে ঘাবড়ে গেলো অরা। চেহারা থেকে হাত সরিয়ে কিছু একটা বলতেই যাবে এমন সময় আরিশ হাত দিয়ে অরার মুখ চেপে ধরল। অরা আরিশের দিকে তাকাল। চোখেমুখে তীব্র মোহ তার। ভয় পেলো অরা। না জানি কী করে এবার আরিশ।
“ চুপ! না বলবে না, হামিংবার্ড। আজকে আমি আর ধৈর্য ধরতে পারছি না। তুমি জানোই তো, আমি বড্ড অধৈর্য। “
আরিশ কথা বলতে বলতেই বিছানায় শুইয়ে দিলো অরাকে। শাড়ির আঁচল পাশে সরিয়ে, অরার ওপর চড়াও হলো সে। মুহূর্তের মধ্যে অরার পুরো মুখমণ্ডল এবং গলা আরিশের ঠোঁটের স্পর্শে ভরে উঠল। হাসফাস করছে অরা। আরিশ তাকে কিছু বলারই সুযোগ দিচ্ছে না। সেই পাগলামি, সেই হিংস্রতা! এমনিতে আরিশ সাধারণত শান্ত এবং স্বাভাবিক থাকে, তবে বিশেষ মুহূর্তে তার আবেগের তীব্রতা তাকে কখনোই পুরোপুরি শান্ত থাকতে দেয় না। এই মুহূর্তগুলোতে তার অনুভূতি আরও গভীর হয়ে ওঠে, যা তার আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসে।
“ আরিশ প্লিজ শুনুন। “
“ ইশশ! চুপপপ… অন্য কিছু বলো পাখি। যেমন, কিস মি আরিশ অথবা আই ওয়ান্ট মোর… প্লিজ বেবি সে দ্যাট!”
অরার চুল খামচে ধরে বলল আরিশ। সে সম্পূর্ণভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে অরার শাড়ি, চুড়ি, গয়নাগুলো। অরা চাইলেও থামাতে পারছে না আরিশকে। তাই বাধ্য হয়ে চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরিশের মেজাজ বিগড়ে গেলো। শোয়া থেকে উঠে বসে হাঁপাতে লাগলো সে।
“ সমস্যার কথা, আগে বলোনি কেন? “
“ বলতেই তো চেয়েছিলাম। আপনি শোনার অবস্থায় ছিলেন?”
কপাল চেপে ধরে বসে আছে আরিশ। গলা শুকিয়ে গেছে তার। বিছানা থেকে পোশাক হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। অরাও উঠে বসেছে, গায়ে বিছানার চাদর। আরিশের চোখে-মুখে তীব্র রাগ, যেন একটি আগুনের শিখা। অরাকে একেবারে চমকে দিয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করলো আরিশ। অরা ভয়ে, আতঙ্কে কিছু বলতে পারলো না। সে শুধু নিঃশব্দে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর, ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আরিশ। ঘরের ভাঙাচোরা অবস্থায় তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল অরা। সবকিছু তছনছ করে ফেলেছে আরিশ।
সারারাত ওইভাবে বসে রইলো অরা, অপেক্ষা করতে লাগলো আরিশের। কিন্তু সে আর ফিরে এলো না ঘরে। ফজরের আজানের আগে আগে চোখ লেগে এলো অরার। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল, টেরও পেলো না সে।
ভোরের আলো ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করছে, সকালের নরম রোদ জানালা দিয়ে ভেসে আসছে। বাইরে যানবাহনের ককর্শ শব্দ কানে ভেসে আসে, তবে জানালা বন্ধ রাখলে শব্দটা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু অরা সব সময় জানালা খোলা রেখেই ঘুমায়। রাতের আকাশে মেঘ জমেছিল, তবে ঝড়বৃষ্টি হয়নি, শুধুমাত্র এক মৃদু ঠাণ্ডা হাওয়া গুঞ্জরিত হচ্ছিল।
এলার্ম-ঘড়ির শব্দে হঠাৎ নড়েচড়ে উঠল অরা। সকাল সাড়ে আটটার এলার্মটা সেট করা ছিল। এটি মূলত আরিশের অফিসে যাওয়ার জন্য, তবে প্রতিদিনের মতো আজও অরার ঘুম আগে ভেঙে গেছে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঘুমঘুম চোখে কিছু সময়ের জন্য তাকিয়ে থেকে অরা বুঝতে পারলো – আজও সে আরিশের বুকের মধ্যে শুয়ে আছে। পুরো বিষয়টা বুঝতেই তার ঘুমঘুম ভাব একেবারে কেটে গেল। চোখে ভালো করে তাকিয়ে দেখল –হ্যাঁ, আরিশ তার সামনে শুয়ে আছে। আর অরা আরিশের হাতের ওপর শুয়ে, তার বুকের দিকে মুখ গুঁজে আছে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো অরা। মনে মনে ভাবলো, যাক, লোকটার রাগ কমেছে। তবে, অরার মনে কোনো দোষ ছিল না। অনেকবার সে চেয়েছিল বলার, সমস্যা আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
“ গুড মর্নিং, হামিংবার্ড। “
আরিশের ঘুম জড়ানো কণ্ঠটা দারুণ লাগে অরার। মিষ্টি করে হাসল অরা।
“ গুড মর্নিং। “
“ সাড়ে আটটা বেজেছে?”
“ হ্যাঁ, ঘড়ি তো তাই বলছে। আটটা চল্লিশ বেজেছে। “
আড়মোড়া ভেঙে অরাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আরিশ। মনে হচ্ছে টম তার জেরিকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে। অরা আরিশের বুকে মুখ গুঁজে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আরিশের গায়ের গন্ধটা খুব ভালো লাগে ওর।
“ তাহলে এখন উঠতে হবে, জান। অফিসে যাইনি তিনদিন হলো। গিয়ে দেখতে হবে কী অবস্থা এখানকার। “
শোয়া থেকে উঠে বসলো আরিশ। অরাও উঠে বসেছে।
“ হ্যাঁ যেতে তো হবেই। “
“ আর বলো না, একটু চোখের আড়াল করলেই সবাই লুটেপুটে খাওয়ার চেষ্টা করে। বিয়ের পর থেকে ইতালিতে একবারও যাওয়া হয়নি বলে ওখানকার অবস্থা কী হয়েছে তা তো শুনলে। একা মানুষ, দুই জায়গায় থাকাও সম্ভব না। ভাবছি তালহাকে ভালো করে কাজকর্ম শিখিয়ে, ইতালি পাঠিয়ে দেবো। কেমন হবে? “
অরার অবাক লাগছে। আরিশ তার সাথে কাজের বিষয় আলোচনা করছে!
“ হামিংবার্ড? সে সামথিং। “
“ হ্যাঁ, ভালোই হবে। নিজেদের লোক থাকলে আপনাকে আর টেনশন করতে হবে না। “
“ হ্যাঁ সেটাই। থাকো, ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি। “
“ আচ্ছা। “
ওয়াশরুমের দিকে এগোল আরিশ। অরা চটজলদি জামাকাপড় চেঞ্জ করে রান্নাঘরের দিকে এগোল।
চলবে,
#হামিংবার্ড
#পর্ব_৩৫
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
রোদ উঠেছে। আলোয় ধীরে ধীরে ভরে উঠছে চারদিক। রাস্তায় গাড়ির শব্দ, মানুষের হাঁটার তাড়া – শহর জেগে উঠেছে নিজের চেনা ব্যস্ততায়। দোকানপাট খুলছে, চায়ের স্টলে ভিড় বাড়ছে, অফিসমুখো মানুষের মুখে তাড়া।
রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন রোকসানা মল্লিক। নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে প্রায়। নয়না নাস্তা সেড়ে, স্কুলে যাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। সোলাইমান মল্লিক মাত্র রেডি হয়ে ডাইনিং রুমে প্রবেশ করলেন। পরনে ফর্মাল পোশাক, মুখে হালকা চাপদাড়ি উনার।
“ আজকে আমি তোকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসবো। “
চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন সোলাইমান।
“ আমি তো একাই চলে যেতে পারবো বাবা। তোমার আবার কষ্ট করতে হবে না। “
“ সে আমি বুঝবো। পাকা বুড়ি একটা। “
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আহ্লাদী স্বরে বললেন তিনি। নয়না মুচকি হাসল। এরমধ্যে রোকসানা খাবার হাতে ডাইনিং রুমে এলেন।
“ কী কথা হচ্ছে, বাবা-মেয়ের মধ্যে হুহ?”
“ তেমন কিছু না, মা। আমাকে আজ বাবা স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসবে। “
“ তাহলে তো ভালোই। “
রোকসানা মল্লিক বাপ-মেয়েকে খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছেন। সোলাইমান মল্লিক খাবার খেতে শুরু করলেন।
“ প্রায় মাস দুই হবে অরাকে দেখি না সেই যে এলো, তারপর আর কোনো খোঁজ নেই মেয়েটার৷ “
“ আমার সাথে ফোনে কথা হয়, মাঝে মধ্যে। বলল তো সবকিছু ঠিকঠাক চলছে এখন। আরিশ আগের থেকে বদলে গেছে। ওর খেয়ালও রাখছে৷ “
বললেন রোকসানা। সোলাইমান মনোযোগ দিয়ে শুনলেন সব। নয়নাও কথা শুনতে শুনতে খাওয়া শেষ করলো।
“ যাক তাহলে ভালোই আছে। আমার সাথে তো আরিশের খুব একটা দেখা হয় না। আমাদের কাজ কেবিনের মধ্যেই, মাসে একবার হয়তো বসের কাছে যেতে হয়। “
“ হুম, বুঝতে পেরেছি। ভাবছি, আরিশকে কল করব। কল করে বলব মেয়েটাকে নিয়ে দু’দিন থেকে যেতে। “
সোলাইমান খাবার শেষ করে পানিটুকু খেয়ে বললেন,
“ এতো ভালোও কি হয়েছে সে? মানে আরিশ কি এতটাই পরিবর্তন হয়েছে যে, বললেই অরাকে নিয়ে আসবে?”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন রোকসানা। নয়না এরমধ্যে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।
“ ভাইয়া অনেক ভালো, বাবা। দেখো, আপুকে নিয়ে ঠিক বেড়াতে আসবে। “
নয়নার কথায় মুচকি হাসলেন রোকসানা।
সোলাইমান বললেন,
“এলেই ভালো। আজ তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে –সেদিকে কারো খেয়াল আছে? নাকি অরা আর পড়াশোনাই করবে না?”
নয়না ও রোকসানা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো একবার। রোকসানা বললেন,
“ আমি অরার সাথে কথা বলে দেখবো। যদিও তোমার মেয়ে লেখাপড়া অপছন্দ করে কিন্তু গ্রাজুয়েট তো কমপ্লিট করবে অন্তত! “
সোলাইমান ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন,
“ হ্যাঁ, বলে দেখো। আমি এলাম। নয়না আয় তাড়াতাড়ি। “
“ হ্যাঁ বাবা, চলো। “
নয়না মা’কে ইশারায় বিদায় জানিয়ে বাবার সাথে বেরিয়ে গেলো।
ডাইনিং টেবিলের ওপর ধোঁয়া ওঠা ভুনা মাংসের প্লেটটা রাখতে গিয়ে তামান্না হঠাৎ থমকে গেল। পাশ থেকে পানির গ্লাস তুলতে গিয়ে অরা হঠাৎ কেঁপে উঠল, বিষয়টা তামান্না খেয়াল করেছে।
” ভাবি? আপনি ঠিক আছেন?”
তামান্নার কণ্ঠে উদ্বেগ। অরা জবাব দিলো না। কিংবা জবাব দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই সে। তার মুখটা হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে এসেছে, চোখের পাতা ভারী, হাঁটু কেঁপে উঠলো হঠাৎ। তামান্না কিছু বলার আগেই অরার এতটুকু দেহটা ধপ করে নিচে পড়ে গেল। তামান্না আঁতকে উঠে ছুটে গেল তার কাছে।
” ভাবি! ভাবি! চোখ খুলুন!”
হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে অরার। নিঃশ্বাস চলছে, কিন্তু খুব ধীরে, যেন একেকটা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
আরিশ তখন নিজের ঘরে রেডি হচ্ছিল। কেমন হৈ-হুল্লোড়ের শব্দ শুনে দরজা খুলতেই তামান্নার চিৎকার ভেসে এল কানে। এরমধ্যেই তামান্নার ডাক শুনতে পেলো আরিশ।
” ভাইয়া! জলদি আসেন! ভাবি… ভাবি অজ্ঞান হয়ে গেছে!”
তামান্নার কথায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো আরিশের। ছুটে ডাইনিং রুমে গেলো সে। তামান্না ঘাবড়ে গিয়ে ওড়না দিয়ে অরার মুখে পাখার মতো করে বাতাস করছে। ইতিমধ্যে ডাইনিং রুমে পৌঁছে গেছে আরিশ। সে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে, অরার মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়ে বলল,
“ পানি নিয়ে আয়, রুমে পানি আছে কি-না জানি না। কপালে জলপট্টি দিতে হবে। “
তামান্না আরিশের কথামতো পানি আনতে গেলো। আরিশ এক মুহূর্তও দেরি করল না। পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রীন ট্যাপ করেই বলল,
“ডা. রায়হান, জরুরি– এখনই আমার বাসায় আসুন। এক মুহূর্তও দেরি করবেন না।”
ওপাশ থেকে কিছু বলতেই আরিশ কণ্ঠ চেপে বলল,
“আমি লোক পাঠাচ্ছি আপনাকে আনতে। সময় নষ্ট করবেন না। আমার ওয়াইফ সেন্সলেস হয়ে গেছে। ”
কথা শেষে অরাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডরুমের দিকে এগোল আরিশ। তামান্না পিছুপিছু পানির গ্লাস ও বাটি নিয়ে যাচ্ছে। সাবিহা ও তাসলিমা দূরে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে কেবল।
“ চল তো, একবার গিয়ে দেখে আসি। নয়তো পরে আবার আরিশ কিছু মনে করতে পারে। “
রাগে অসহ্য লাগছে সাবিহার। সব সময় আরিশকে সমীহ করে চলতে হচ্ছে তাদের। এই অনুগত্য ভালো লাগে না তার।
“ চলো দেখি, কী হলো বেডির। “
“ বাচ্চাকাচ্চা হবে না তো?”
মায়ের এমন কথায় চমকাল সাবিহা। কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল,
“ আরে না। তা হবে কীভাবে! ওদের মধ্যে তো স্বামী- স্ত্রী’র সম্পর্কই নেই। সেদিন অরার জামাকাপড় চেঞ্জ করার জন্য তামান্নাকে ডেকেছিল আরিশ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বউয়ের পোশাক বদলাতে অন্য কাউকে কি ডাকত? “
“ তা-ও ঠিক। তোর কথায় যুক্তি আছে। চল,চল। “
“ হুম। “
অরাকে কোলে তুলে সোজা নিজের রুমে নিয়ে এসেছে আরিশ। তামান্না হাতে বাটি আর পানির গ্লাস নিয়ে আসছে। আরিশ অরাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে কপালে ঠান্ডা পানির পট্টি চেপে ধরল।
” নিচে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাক। ডাক্তার এলেই সোজা রুমে নিয়ে আসবি, লেট করবি না। ”
তামান্না মাথা নেড়ে দ্রুত পা চালিয়ে ঘর বেরিয়ে গেলো।
“অরা… প্লিজ… চোখ খোলো পাখি। ”
অরার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আরিশের অস্থির লাগছে, এতটা অস্থির এ জীবনে কখনো লাগেনি তার। কেমন মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে আসছে । অরার কপালে, গালে পরপর কয়েকটা চুমু খেলো সে। চোখ টলমল করছে তার।
” এই অরা? কী হয়েছে তোমার? কথা বলো, আমার জানবাচ্ছা। দেখো, এই রাগী ভূতটা কেমন ভয় পাচ্ছে – তার হামিংবার্ডকে হারানোর ভয় হচ্ছে তার৷ একটিবার কথা বলো? ”
আরিশ একা একা বকতে লাগলো। সাবিহা ও তাসলিমা ঘরে এলেন। আরিশকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে দু’জনেই ভীষণ অবাক হয়েছে। তবে কেউ কোনো কথা বলছে না। কী জানি আরিশের মনমেজাজ কেমন! কিছু জিজ্ঞেস করলে যদি ফোঁস করে ওঠে? তার থেকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকাই বেটার।
পনেরো মিনিট পর ডাক্তার রায়হান আরিশের রুমে প্রবেশ করলেন। চোখেমুখে ক্লান্তি, কিন্তু আরিশের ফোন পেয়েই তিনি সব ফেলে চলে এসেছেন।
“ মি. আরিশ, কোথায় রোগী?”
“এইদিকে। দ্রুত দেখুন প্লিজ, এখনো জ্ঞান ফেরেনি।”
ডাক্তার কাছে গিয়ে অরার প্রেশার মাপলেন, পালস চেক করলেন। একদম পেশাদার ভঙ্গি। তারপর মুখ গম্ভীর করে বললেন,
“ব্লাড প্রেশার বেশ নিচে নেমে গেছে। হিমোগ্লোবিন সম্ভবত খুব কম। অ্যানিমিয়ার কারণে এমনটা হতে পারে। এখনই একটা ইনজেকশন দিচ্ছি। স্যালাইন দিতে হবে একটু পরই। ইনজেকশন দেওয়ার পর প্রেসার একটু উঠুক, তারপর স্যালাইন। এরপর কিছু ব্লাড টেস্ট লাগবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য।”
আরিশ ঠোঁট কামড়ে ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো।
“ ঠিক আছে, আপনার যা ইচ্ছে ঔষধ দিন কিন্তু আমার অরাকে ঠিক করুন, প্লিজ!”
“ আপনি শান্ত হোন। ইনজেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে উনার। তারপর আমি নার্সকে পাঠিয়ে স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। “
“ ওকে। “
ডাক্তার তার কাজ করতে থাকলেন। আরিশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কই এর আগেও তো অরার শরীর খারাপ হয়েছে। সেই শরীর খারাপের কারণ অবশ্য আরিশ নিজেই। তখন তো এতো কষ্ট হয়নি, অরার জন্য অস্থির লাগেনি তার। তবে আজ কী হলো? অরার অসুস্থতায় আরিশের গোটা দুনিয়া যেনো অন্ধকার লাগছে। মনে হচ্ছে আরিশের প্রাণপাখিটা অরার ভেতর বসবাস করছে। লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ল আরিশ। অরার মাথার পাশে বসে, কপালে হাত রাখল একবার। এরমধ্যে ডাক্তার অরাকে ইনজেকশন দিয়েছেন।
“ আপাতত আমার কাজ শেষ, মি. আরিশ। নার্স পাঠিয়ে দেবো, স্যালাইন দেওয়ার পর কিছুটা স্টেবল হবে আশা করি। তবে আগামীকাল অবশ্যই চেম্বারে নিয়ে আসবেন। “
“ ওকে, ডক্টর । থ্যাংক ইউ। “
“ নো নো, ইট’স মাই ডিউটি। আসছি আমি। “
“ ওকে। “
ডাক্তার চলে গেলেন। সাথে সাথে সাবিহা ও তাসলিমাও ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। তামান্না দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো এতক্ষণ। ডাক্তারের সাথে সাথে নিচে গেলো মাত্র। আরিশ তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে বসে আছে, কখন অরার জ্ঞান ফিরবে। মেয়েটার চোখমুখ কেমন ফ্যাকাসে লাগছে। বিয়ের পর থেকে নিজের দিকে কোনো খেয়াল রাখেনি সে। আর রাখবে কীভাবে? দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল আরিশ। তার জন্যই আজ অরার এই হাল। ঠিকমতো যত্ন নিলে মেয়েটার এমন অবস্থা হতোনা। অরার কপালে সময় নিয়ে চুমু খেলো আরিশ। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।
জ্ঞান ফিরছে অরার। আরিশ পাশে শুয়ে আঙুল দিয়ে তার ছোটো চুলগুলো মুখের ওপর থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। ঠোঁটের কোণে একটুকু মুচকি হাসি। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরার শান্ত মুখটার দিকে।
[ প্রিয় পাঠক, বইটই এপসে আমার সবগুলো ই-বুক ২৫% ছাড়ে কিনতে পারবেন এখন। অফারটি পেতে প্রোমোকোড TTP25 ব্যবহার করুন। আফর সীমিত সময়ের জন্য।]
নড়েচড়ে উঠল মেয়েটা। পুরো চোখ না মেলেও বুঝে গেল, আরিশ আছে, একেবারে কাছে। অরা চোখ বন্ধ রেখেই ধীরে ওর বুকের ভেতর ঢুকে গেল– চুপচাপ, নিরাপদে।
“ হামিংবার্ড! তুমি ঠিক আছো তো ?”
“ হুম।”
অরার সংক্ষিপ্ত উত্তর। আরিশের বুকের মাঝে লুকিয়ে আছে সে। আরিশ এখনও মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।
“ সত্যি, ঠিক আছো? “
“ হ্যাঁ, ঠিক আছি। “
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আরিশ।
“ শরীর খারাপ নিয়ে রান্নাঘরে গিয়েছিলে কেন? আর তোমার যে এনেমিয়া আছে সেটা তো বলোনি আগে!”
অরা মাথাটা একটু বের করে আস্তে আস্তে বলল,
“ বলব কীভাবে? আপনি তো আগে এতটা ভালো ছিলেন না।”
“ তারমানে আমি আগে খারাপ ছিলাম?”
“ নাহ, নাহ। মানে…. আসলে…..”
অরার এলোমেলো কথাগুলো আরিশের ঠোঁটের স্পর্শে থেমে গেলো। মায়া মায়া দৃষ্টিতে আরিশের পানে তাকিয়ে আছে সে। আজকে আরিশের ঠোঁটের স্পর্শ একদম আলাদা ছিলো। শান্ত, নরম, ভালোবাসার ছোঁয়া। কোনো হিংস্রতা, যন্ত্রণা ছিলো না।
“ আর কথা বলতে হবে না। এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো। তামান্না নাস্তা দিয়ে গেলে খেয়ে নিও। আমাকে অফিসে যেতেই হবে, সেটা তুমি জানো। তবে আমি তাড়াতাড়ি ফিরবো। “
মনটা খারাপ হয়ে গেলো অরার। লোকটা আরেকটু ভালোবাসলে কী হতো? আরেকটু ভালোবাসলে আজকে অফিসে যেতো না হয়তো। অরার মনে অনুভূতিরা লুটোপুটি খাচ্ছে। ইচ্ছে করছে না আরিশকে ছাড়তে। কিন্তু কী আর করার!
“ ঠিক আছে। “
“ আর শোনো, নার্স এলে ভালো মেয়ের মতো স্যালাইন দিতে দিবে। “
চমকাল অরা, চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল।
“ আমি ভয় পাই ওসব। কী ভয়ংকর সুঁচ! “
“ এরচেয়েও কয়েক গুণ বড়ো সুঁচ যখন নিতে পারো, তাহলে অতটুকু সুঁচও পারবে। ইচ্ছে থাকতে হবে, বেবি। “
শোয়া থেকে উঠে বসলো আরিশ। অরা লজ্জায় অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা মাঝে মাঝে বড্ড অসভ্য কথাবার্তা বলে। অরার নীরবতা দেখে আবারও বলল আরিশ,
“ আমি দুপুরের মধ্যে ফিরবো। তখনই সাথে করে নার্সকে নিয়ে আসবো। বিকেলে স্যালাইন দিবে। আমি থাকবো পাশে। ঠিক আছে এখন?”
অরা ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল। আরিশ ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের চুলগুলো পরিপাটি করছে।
“ আচ্ছা। “
“ গুড গার্ল। আমি গেলাম। “
“ টাটা। “
বাচ্চাদের মতো টাটা বলাতে হাসল আরিশ। কিন্তু অরা ঠিক বুঝতে পারলোনা সেটা। বেরিয়ে গেলো আরিশ। বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো অরা।
দুপুরবেলা, রহমান চৌধুরী এবং ফারুক চৌধুরী তাদের অফিসে বসে আছেন, বাতাসে কিছুটা গরম। শহরের ব্যস্ততা একটু দূরে থাকলেও অফিসে চাপপূর্ণ পরিবেশ। জানালার বাইরে রোদ মৃদু ঝলমল করছে, তবে অন্দরমহলে ঠান্ডা, কৃত্রিম আলোয় ভরা। বড় একটা কাঠের টেবিলের চারপাশে বসে আছেন তারা, পাশে এক কাপ কফি রাখা। সম্পর্কে তারা আপন ভাই। রহমান চৌধুরী, বয়স ষাটের কাছাকাছি আর ফরুক চৌধুরীর বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই।
রহমান এবং ফারুক আরিশের বিজনেস রাইভাল। দীর্ঘদিন ধরে আরিশের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ করছে তারা, কিন্তু কোনোভাবেই তারা আরিশকে টেক্কা দিতে পারছে না। তাদের সব কৌশল, পণ্য, এবং মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি আরিশের সামনে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তবে তারা শান্ত বসে থাকার পাত্র নয়। তাদের নিজেদের গোপন ব্যবসাও আছে, কিন্তু সেটা পুরোপুরি অবৈধ। তারা জানে, যদি এসব কাজ ফাঁস হয়ে যায়, তারা শেষ হয়ে যাবে। তবে এই মুহূর্তে তাদের একটাই লক্ষ্য – আরিশের ব্যবসায়কে নষ্ট করে নিজের পথ পরিষ্কার করা।
ফারুক কফির কাপের দিকে তাকিয়ে সিগারেট ধরিয়েছেন, ধোঁয়া তার মুখ থেকে বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললেন,
“এই আরিশের কিছু একটা করা উচিত এবার ।”
তিনি একটা ঝাপসা হাসি দিলেন, সিগারেটের ধোঁয়া মৃদু ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে।
রহমান তার হাতে থাকা কিছু কাগজপত্র নেড়ে-চেড়ে বললেন,
“তুমি ঠিক বলেছো। তার ব্যক্তিগত জীবনই এখন আমাদের হাতিয়ার। এই বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি। তবে একটু সময় নেবে। আমাদের পদক্ষেপ খুব সাবধানী হতে হবে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল তো বাঁকাতেই হবে। ”
তার কণ্ঠে ঠান্ডা এক ধরনের আক্রোশ , মনে হচ্ছে তার লক্ষ্য শুধু আরিশ নয়, তার সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস করে দেওয়া।
ফারুক হালকা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
“আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা শুধু তার ব্যবসা নয়, তার জীবনের সব কিছু। একবার তার পারিবারিক সম্পর্কগুলো বিপদে পড়লেই তাকে একা পাওয়া যাবে। আর তখন আমরা চাইলে তাকে সহজেই টেক্কা দিতে পারব।”
তিনি কফির কাপটা টেবিলের ওপর রেখে আবারও সিগারেট ধরালেন।
রহমান কাগজগুলো একপাশে সরিয়ে দিয়ে খোলামেলা স্বরে বললেন,
“তার ভালোবাসার মানুষদের কাছে যেতে হবে। পেছন থেকে আঘাত আসলে সামনে দাঁড়িয়ে সে কিছুই করতে পারবে না।”
“ হ্যাঁ। শুনেছি নতুন বিয়ে করেছে, গ্রাম থেকে তার পরিবারও ঢাকা এসে থাকছে। আগে তো একা ছিলো কিন্তু এখন তার পরিবার আছে সাথে। “
ফারুকের মুচকি হাসলেন রহমান।
“ ঠিক আছে। এবার দেখা যাক। “
তারা দুজনেই চুপ করে গেলো। খান ইন্ডাস্ট্রিকে পথে নামানোই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
চলবে,
#হামিংবার্ড
#পর্ব_৩৬
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
[পর্বটি রোমান্টিক। ভালো না লাগলে এড়িয়ে যান। ]
বিকেলবেলা। জানালার ফাঁক গলে নরম রোদ ঘরের ভেতর ছড়িয়ে পড়েছে। অরার স্যালাইনের ব্যাগে এখন সামান্যই তরল বাকি। নিঃশব্দে ফোঁটা ফোঁটা করে নামছে শেষ ক’ফোঁটা। আরিশ অরার পাশে বসে আছে। সেই দুপুর থেকে এভাবেই বউয়ের পাশে বসে থেকেছে সে। এক মুহুর্তের জন্যও সরেনি। অরা কাঁধের উপর দিয়ে মাঝে মাঝে চুপি চুপি তাকাচ্ছে আরিশের দিকে। তারপর আবার তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিচ্ছে । এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় কাজ করছে ভেতরে ভেতরে।
লোকটা তো ভীষণ খারাপ তবে এত কেয়ার করে কেন? তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল অরা। অরার যে কী হয়েছে সেটাই বুঝতে পারছে না বেচারি। অরার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরিশের আশেপাশে গেলেই বুক ধুকপুক করে, নিঃশ্বাস যেন ঘন হয়ে আসে। আরিশের বলা কিছু কথা তো মাঝে মাঝে স্লো মোশনে শুনতে পায় সে।
স্যালাইন শেষ। এসো, সুঁচটা খুলে দেই।”
চমকে উঠল অরা। গলায় এক ঢোঁক শুকনো নিঃশ্বাস গিলে আমতা আমতা করে বলল,
“না-নার্স আপু কোথায়?”
“উনি তো চলে গেছেন। কেন? ভয় পেও না, আমি খুলে দিতে পারি।”
অরা জানে, পেছানো তার পক্ষে সম্ভব না। তবু স্বভাবে অল্প একটু পেছনোর চেষ্টা করল। কিন্তু পেছনে এগোনোর মতো আর জায়গাও নেই।
আরিশ তার সেই চেষ্টা দেখে মিটিমিটি হাসল।
“আপনি… আপনি নার্সকে কল করুন।”
“ওনার বাচ্চা নাকি কাঁদছিল। তাই আগেভাগেই আমাকে বলে চলে গেছেন।”
“তাহলে ডাক্তার! ডাক্তারকে কল করুন।”
আকস্মিক অরার চুলগুলো শক্ত করে চেপে ধরল আরিশ। চমকাল, থমকাল অরা৷ আরিশের এমন আচরণের কারণ বুঝতে পারছে না মেয়েটা৷ লোকটার চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে।
“ ডাক্তার কেন? আমি আছি না? আমার থেকে ডাক্তারের ওপর বেশি বিশ্বাস তোমার? ওই ডাক্তার আর আসবে না। আগামীকাল মহিলা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। এখন চুপ করে বসে থাকো। “
আরিশের ধমক আর চুলের টানে ব্যথা পেয়ে অরা আর কিছু বলল না। সব ভয়, সব অস্বস্তি চেপে রেখে চুপচাপ বসে রইল সে। আরিশ ধীরে ধীরে অরার হাতটা ধরল। সুঁচটা বের করার জন্য অগ্রসর হলো সে। অরা চোখ শক্ত করে বন্ধ করে আছে। এক ঝলক তাকাল আরিশ তার মুখের দিকে। তারপর এক নিঃশ্বাসে দ্রুত সুঁচটা বের করে ফেলল। মৃদু গোঙানির মতো একটা শব্দ বেরিয়ে এলো অরার মুখ থেকে। হঠাৎ করেই সে ঝাঁপিয়ে পড়ল আরিশের বুকে। চমকে উঠল আরিশ। বুকের ভেতর কেমন করে ধক করে উঠল। অরা এক হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে তার পিঠ, মুখটা ঠেকিয়ে রেখেছে আরিশের ঘাড়ে। তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আর ঠোঁটের স্পর্শে যেন আরিশের শরীর জুড়ে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ল।
আরিশও ধীরে ধীরে, নরম হাতে জড়িয়ে ধরল অরাকে। তার ঘাড়ে এক মৃদু কামড় বসিয়ে দিল। আবারও গুঙিয়ে উঠল মেয়েটা। তবু একটুও সরে এল না। তখনই হঠাৎ হুঁশ ফিরল আরিশের।
“ আমার লাগছে, আরিশ।”
অরার কণ্ঠে হালকা ব্যথার সুর।
আরিশ নিস্পৃহ গলায় বলল,
“কামড় দিলে যদি ব্যথা না লাগে, তবে কামড় দেওয়ার মানেই বা কী?”
“মানে, আমি ব্যথা পেলেও আপনি চালিয়ে যাবেন?”
ভ্রু কুঁচকে কিছুটা বিরক্ত গলায় বলল অরা,
“আপনি আসলেই একদম পাগল। ক্রেজি একটা মানুষ!”
কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলল অরা। নিজেকে আরিশের থেকে দূরে সরিয়ে নিলো। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আরিশ৷ অরা কি রাগ করলো? এই মেয়ে রাগ করতেও জানে? বাহ! ইন্টারেস্টিং!
“ হেই হামিংবার্ড! তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছো?”
“ না, একদম না। রাগ করা তো আপনার জন্মগত অধিকার। আমি কেন রাগ করবো? আপনার ইচ্ছে হলে আপনি কামড়ে দিবেন, ইচ্ছে হলে চুল ধরে টানাটানি করবেন আবার ইচ্ছে হলে জোর করে আদ…….”
থেমে গেল অরা। বাকিটুকু আর বলল না।
হঠাৎ যেন সংবিৎ ফিরে পেল। এক মুহূর্তে নিজেকেই অপরিচিত লাগল তার। এই রাগ, এই অভিযোগ –এসব কোথা থেকে এলো?
অভিমান জমেছে মনে? না কি ভালোবাসার কোনো অভাব? লোকে বলে, যখন ধৈর্য ফুরিয়ে যায়, যখন ভালোবাসার ঘাটতি টের পাওয়া যায়– তখন নাকি মানুষ সহজেই রেগে যায়।
হয়তো তাই হচ্ছে তার সঙ্গে। হয়তো… সে ক্লান্ত, হয়তো… সে অভিমানী। আরিশ এতক্ষণ অবাক নয়নে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। এই ছোট্ট পাখিটা, এই হামিংবার্ডটা –রাগলে এতটা সুন্দর লাগে,সেটা আগে কখনো দেখতে পায়নি সে।
“কথা শেষ করো, বউপাখি।”
আরিশের গলায় একধরনের আদেশ-মেশানো সুর।
“না… মানে… কিছু না।”
লাজুক অথচ ধরা পড়ে যাওয়ার গলায় বলল অরা।
“জোর করে আদর করব?”
চোখ কপালে তুলে তাকাল অরা।
শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,
“আমি… আমি অসুস্থ। শরীর খুব দুর্বল।”
“তুমি না বললে তো আমি জানতেই পারতাম না!”
নাটুকেপনা মেশানো হাসিতে বলল আরিশ,
“থ্যাংক ইউ, মিসেস অরা!”
হঠাৎ যেন অরা দ্বিধায় পড়ে গেল। লোকটা কি রেগে গেলো? তাই এমন করে কথা বলছে? না-কি সত্যি সত্যি মজা করছে? তেজরিন খান আরিশ মজাও করতে জানে?
“আপনি রাগ করেছেন?”
সন্দেহ মেশানো গলায় জিজ্ঞেস করল সে।
“হ্যাঁ, রাগ করেছি। কারণ রাগ করা আমার জন্মগত অধিকার।”
আরিশ অরার গাল টেনে হালকা টিপে দিয়ে বলল,
“আর অধিকারের জায়গায় আমি খুব কঠোর। সহজে ছাড়ি না।”
গালে আরিশের স্পর্শে এক মুহূর্তে অরা নিশ্চিত হলো আরিশ মজা করছে। তবু সে এক রহস্যময় মানুষ– এই ভালো, এই খারাপ!
কখন যে কী করে বসবে, তা কেউ জানে না।
“ভালো।”
নরম স্বরে বলল অরা।
“কিছুক্ষণ রেস্ট করো। আমি গিয়ে গোসল সেরে আসি।”
“এখন?”
কণ্ঠে অজান্তেই লজ্জা মেশানো টান।
“তুমি চাইলে একটু পরেও করতে পারি। উপযুক্ত কারণ দাঁড় করিয়ে… তারপর… তুমি চাও?”
আরিশের দৃষ্টি যেন চুম্বকের মতো। অরা কিছু বলল না। শুধু চোখ নামিয়ে নিলো। লোকটার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেও কথাই বলা যায় না। সবসময় কেমন একটা রস ভরা বাঁক, যেন প্রতিটা বাক্যে ইশারার ফাঁদ।
আরিশ ধীরে ধীরে তার পাশে এসে বসল।
ডান হাতের আঙুল ঠোঁটে রেখে নিচের দিকে আলতোভাবে নামাতে শুরু করল – একটানা, অতি ধীর লয়ে। অরার শিরদাঁড়া বেয়ে এক অদ্ভুত শিহরণ নেমে গেল। চোখ বন্ধ করতে বাধ্য হলো সে। আঙুলের নরম চলাচল যেন আর শরীর ছুঁয়ে নয়, আত্মা ছুঁয়ে যাচ্ছে। শরীরটা হালকা থরথর করে উঠছে –আর হৃৎস্পন্দন যেন নিয়ম মানছে না।
“ টুনাইট, আই ওন্ট জাস্ট টাচ ইউ… আইল ওন এভরি ইঞ্চ অফ ইউ–স্লো, দীপ, অ্যান্ড রিলেন্টলেস–আন্টিল দ্য ওনলি থিং ইউ রিমেম্বার ইজ দ্য প্লেজার, অ্যান্ড দ্য পেইন ইজ লং ফরগটেন।”
অরা হঠাৎ চমকে তাকাল আরিশের দিকে। কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না। ওই চোখ দুটো যেন তাকে গিলে ফেলতে চাইছে – নেশাগ্রস্ত, পাষাণ নরম চোখ। অরার দৃষ্টি নেমে এলো নিজেই, বুকের ভেতর কেমন ঝড় উঠেছে। আরিশ তার নীরবতার সুযোগ নিচ্ছে না, বরং ধীরে ধীরে তাকে অনুভব করছে। হাতের প্রতিটি স্পর্শে অরার ত্বকে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। অরা যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলছে, প্রতিরোধ করার সামর্থ্যটুকু হারিয়ে ফেলেছে। মাঝখানে আটকে গেছে –না চাইতেও চাওয়া, না বলতে গিয়েও থেমে যাওয়া।
আরিশ খুব সন্তর্পণে, বুঝেশুনে অরার ঠোঁট ছুঁয়ে ফেলল। একটা মৃদু কাঁপন ছড়িয়ে পড়ল অরার ছোট্ট শরীরজুড়ে। চোখ দুটো নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল তার। সে আর কিছুই ভাবতে পারল না, শুধুই অনুভব করল। দুই হাতে জড়িয়ে ধরল আরিশকে। আরিশ থেমে গেল হঠাৎ। হতবাক হয়ে অনুভব করল – এই প্রথম অরা তাকে নিজে থেকে আলিঙ্গন করছে। বুকের গভীরে এক অদ্ভুত প্রশান্তি ভর করল তার। যেন এটাই ছিল তার চাওয়া, বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত।
অরার অবস্থা তখন দিকহারা পথিকের মতো। কিছুই বুঝতে পারছে না –কী করেছে, কী করবে। এক অচেনা ঘোরে ডুবে আছে, যে ঘোরে যুক্তি নেই, আছে শুধু হৃদয়ের স্পন্দন।
“ কী হলো? “
আরিশের প্রশ্নে অন্য দিকে ফিরে তাকাল সে। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করে নিতে কয়েক মিনিট সময় লাগলো তার। আরিশ মিটিমিটি হাসছে। অরাকে বশ করার মন্ত্র শিখে ফেলেছে যেন সে। জোর করে নয় এবার অন্যভাবে কাছে টানবে অরাকে।
“ হামিংবার্ড? “
“ হুম। “
“ কিছু লাগবে? “
“ নাহ। “
মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল আরিশ। ওয়াশরুমের দিকে এগোতে এগোতে বলল,
“ তখন বলেছিলে আমি জোর করে আদর করি, এখন আমি বলছি – তুমি নিজে থেকেই আমার কাছে আসবে। আমি তোমাকে বাধ্য করবো, আমার কাছে আসার জন্য। “
অরা চুপচাপ বসে রইল। মুহূর্তটা যেন স্থির হয়ে আছে তার ভেতরে। কী হয়েছিল একটু আগে–সেটাই বিশ্লেষণ করতে ব্যস্ত মন। এই কি দুর্বলতা? এই কি আকর্ষণ? নাকি নিছকই এক মানসিক বিভ্রান্তি? একটা ভয় ধীরে ধীরে গা বেয়ে উঠছে– সে কি সত্যিই একটু আগে রাগী ভূতটার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল? মাথা নাড়িয়ে নিজেকে ধমক দিলো অরা। নাহ, এই লোককে ভালোবাসা যায় না। যে মানুষ চোখের পলকে বদলে যায়, যে রাগের মাথায় একদিন খুন করেও ফেলতে পারে, তার প্রতি টান মানে আত্মঘাতী প্রবণতা!
অরা নিঃশ্বাস ফেলল ধীরে, নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল,
“সবই হরমোনের খেলা, প্রেম না। ঠান্ডা মাথায় ভাব অরা, এই লোক একটা বিপদ।”
আচমকা ফোনের রিংটোনের শব্দে নড়েচড়ে উঠল অরা। রনি কল করেছে! অরা ওয়াশরুমের দিকে উঁকি দিলো একবার। না, আরিশ মাত্রই ওয়াশরুমে ঢুকল, নিশ্চয়ই বের হতে সময় লাগবে। অরা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে কল রিসিভ করলো।
“ কী রে অরু? এভাবে ভুলে গেলি? “
“ না রে। জানিসই তো সব। “
“ হ্যাঁ, সবই জানি৷ আকাশের থেকে সবকিছু শুনেছি। সে যাইহোক, যেটার জন্য এতদিন অপেক্ষা করছিলাম, আজকে ওটার রেজাল্ট বেরিয়েছে।”
“ আমার মনে হয় লেখাপড়া হবে না, রনি৷ “
“ ওমা! কেন? তোর অত হাইফাই, বড়লোক বর। অথচ তোকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিটও করাবে না? “
চুপ করে রইলো অরা। কীসের জন্য এমন কথা বলেছে সে, তা তো রনি জানে না। যেখানে তালহা ভাইকে নিয়েই আরিশের এত সমস্যা সেখানে কীভাবে ভার্সিটিতে যেতে দিবে?
অরাকে চুপ করে থাকতে দেখে রনি বলল,
“ একবার কথা বলে দেখিস। চেষ্টা তো অন্তত কর। লেখাপড়া ছাড়া গতি নেই ভাই, নিজের ভালো বুঝবার চেষ্টা কর। লেখাপড়া আজীবন সাথে থাকবে, মানুষ থাকুক বা না থাকুক। বিশেষ করে, মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া জরুরী। জব না করলে করবি না, কিন্তু লেখাপড়া জানা থাকলে কখন কাজে লাগে বলা যায় না। “
রনির কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতোও না। অরা গভীর মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনছিল এতক্ষণ।
“ ঠিক আছে। আমি আরিশকে বলে দেখব। যদিও তিনি রাজি হবেন না, কিন্তু বলব। “
“ ঠিক আছে, রাখছি। পরে তোর সুবিধামতো কল দিস না হয়। “
“ ওকে, বায়। “
“ বায়। “
কথা শেষ হতেই হঠাৎ এক ধরনের অস্বস্তি গ্রাস করল অরাকে। যেন কারও দৃষ্টি তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে নীরবে। ভয়ে ভয়ে পাশ ফিরতেই চোখে পড়ল আরিশ –সাদা তোয়ালে জড়ানো ভেজা, উন্মুক্ত শরীর। অরার গলা শুকিয়ে এলো। এই চেহারায় আরিশকে সে বহুবার দেখেছে, তবু আজ যেন আলাদা লাগছে। নিজের ভেতর জন্ম নেওয়া আকাঙ্ক্ষাটা সামলানো দুষ্কর হয়ে উঠছে।
ইচ্ছে করছে… খুব ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে একবার, দু’বার… হয়তো তার চেয়েও বেশি। কিন্তু সেই ইচ্ছেগুলোকে অগোচরে গিলে ফেলে চুপচাপ বসে থাকে সে – নিজেকেই বোঝাতে চায়, এ আকাঙ্ক্ষা একেবারেই নিজের ভ্রম।
“ কে কথা বলছিল ফোনে? “
আরিশের কথায় হুঁশ ফিরল অরার। আচমকাই একরাশ আতংক ঘিরে ধরলো তাকে৷ নিশ্চয়ই আরিশ কিছু একটা করবে এখন। হয়তো ফোন ভেঙে ফেলবে নয়তো জোর করে কিছু । বারবার নতুন ফোন ব্যবহার করতে ভালো লাগে না অরার৷
“ র..রনি, আমার ক্লাসমেট। ভার্সিটিতে যাওয়ার কথা বলছিল, ওরা সবাই….. “
“ সুস্থ হও, তারপর নিয়ে যাবো। “
অরা বিস্ময়ে আবারও শুধালো,
“ কী? “
“ বললাম তুমি সুস্থ হও, তারপর ভার্সিটিতে নিয়ে যাবো। “
অরা খুশিতে বসা থেকে উঠে একপ্রকার লাফিয়ে আরিশের গলা ধরে তার কপালে চুমু খেলো। আরিশ যেন বরফের মতো জমে গেলো তাতে। আকস্মিক ঘটনায় অরা নিজেও ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে। কী করলো এটা!
“ আসলে… আমি… মানে। আমার ভুল হয়েছে। “
অরা দূরে সরতে চাইলে আরিশ তার কোমরে হাত রেখে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলল।
“ তুমি আমাকে কিস করলে হামিংবার্ড! নিজে থেকে, এই প্রথম! আরেকটা করবে? প্লিজ? “
আরিশের কোমল, শান্ত কণ্ঠস্বর শুনে অরার মনটা কেমন আকুপাকু করছে। আর সত্যি বলতে আরিশকে এভাবে সদ্য গোসল করে আসা অবস্থায় দেখে অরা নিজেও কিছুটা দূর্বল অনুভব করছিল। আরিশ কপালে কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“প্লিজ হামিংবার্ড… গিভ মি আ কিস।”
কণ্ঠে এমন এক অসহায়তা, যা অরার বুকের ভেতরটা কেঁপে তুলল।
আরিশের ঠোঁট ছুঁয়ে গেল অরার কপালে। জোর করে যতই যা করুক, অরার স্পর্শ পাবে না সে। আর পেলেও তাতে কোনো অনুভূতি থাকবে না– এটা আরিশ ভালো করেই জানে৷ আজকের আরিশ যেন ভিন্ন। একটুকরো ভালোবাসার আশায় মরুভূমির মতো শুকনো হৃদয়টা বাড়িয়ে দিয়েছে সে। ভালোবাসার কাঙাল সে। অরার মায়া হলো তার ওপর। চোখ বন্ধ করে, নিঃশ্বাস আটকে রাখার মতো সাহস জড়ো করে, ধীরে আরিশের ঠোঁটে চুমু দিলো সে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল আরিশ। লজ্জায় আরিশের বুকে মুখ গুঁজে ফেলল অরা।
“ বিশ্রাম নাও। সন্ধ্যায় পার্টি আছে। “
অরাকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো অরা,
“ কীসের পার্টি?”
“ বউ নিজে থেকে কিস করেছে সেই আনন্দে পার্টি দেবো। বাড়ির লোকজনই থাকবে আর তালহাকে তোমার বাবা-মা আর নয়নাকে নিয়ে আসতে পাঠাবো।”
আজকে যেন অরার চকমকানোর পালা। এক এক করে আরিশের আচরণে কেবল চমকেই যাচ্ছে সে। ভার্সিটিতে যেতে দেওয়া, বাবা-মাকে নিয়ে আসতে চাওয়া সবকিছুই স্বপ্নের মতো লাগছে অরার। আরিশ অরার চোখমুখ পর্যবেক্ষণ করে হেসে বলল,
“ সেই খুশিতে কি আরেকটা কিস করবে?”
ফিক করে হেসে উঠল অরা। আরিশও হাসতে হাসতে ওয়ারড্রবের দিকে এগোল। চেঞ্জ করে নিচে যেতে হবে, সন্ধ্যায় পার্টি মানে অনেক কাজ বাকি!
মাগরিবের আজান দিচ্ছে। দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটছে নয়না। আজকে বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা পায়নি বলে হেঁটে বাসায় যেতে হচ্ছে তাকে। বাসা থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় পনেরো মিনিটের পথ। তবে রিকশা করে গেলে কম সময় লাগে। এমনিতেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে, তার ওপর একা! না চাইতেও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ভয় মনে উঁকি দিচ্ছে তার৷ দম আটকে আসছে যেনো। হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো নয়না। একটা গাড়ি থেমেছে, ওর পাশেই। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে এলো নয়নার। গাড়ির জানালার দিকে তাকাল একবার।
“ গাড়িতে উঠে এসো, নয়না। তোমাদের বাসায় যাচ্ছি আমি। “
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল নয়না। এটা তালহা ভাই । গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছে তালহা, নয়না মুচকি হেসে তালহার পাশের সিটে বসলো। গাড়ি চলতে শুরু করেছে আবার।
“ হঠাৎ আপনি এলেন? “
“ তোমার দুলাভাইয়ের হঠাৎ মনে হলো, তোমাদেরকে নিয়ে যাওয়া দরকার। “
“ নিয়ে যাবেন মানে? কোথায়? “
“ধুর! অর্ধেক কথা বললে বুঝবে কীভাবে! বিকেলেই হুট করে ভাইয়া বলল, সন্ধ্যায় বাড়িতে একটা পার্টি আছে। ভাবি মা’র মন ভালো হবে যদি তোমাদেরও আনা যায়, তাই ভাইয়া আমাকে পাঠিয়েছে—তোমাদের নিয়ে যেতে। আন্টির সাথেও অলরেডি কথা বলে নিয়েছে।”
“ ভাবি মা? “
তালহা জোরে হেসে উঠল।
“ হ্যাঁ। আমার ভাইয়ের আদেশ, তার বউকে ভাবি মা বলে ডাকতে হবে। প্রচুর টক্সিক উনি, সাথে ওভার পজেসিভ। “
“ আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু মা কি বলেছে, পার্টিতে যাবে সবাই? “
“ হ্যাঁ, বললেন বলেই তো নিতে এলাম আমি। “
নয়না বেশ খুশি হলো। হাসি হাসি মুখে বলল,
“ আমি আজ আপুর সাথে থেকে যাবো। “
“ বেশ, যেও৷ “
“ আচ্ছা। “
চলবে,