#হারানো_হিয়া (পর্ব ৫)
১.
বিটু এয়ারপোর্টে এসেছে সেই সকাল সাতটায়। আরেকটু পরে এলেও হতো। কিন্তু বাবা তা হতে দিল না। সেই ভোর পাঁচটায় ওকে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়েছে। সকালে রাস্তা ফাঁকা থাকে, তাতে ময়মনসিংহ থেকে আসতে কাঁটায় কাঁটায় দুই ঘন্টা লেগেছে। মাহিন ভাইয়ার ফ্লাইট নামবে সকাল নয়টা পনের মিনিটে। এমনটাই জানিয়েছিল। মাহিন ভাইয়া হলো বড়ো চাচার ছেলে, আমেরিকায় থাকে। এক যুগ পর দেশে ফিরছে। মাঝে একবার এসেছিল যখন ওনার মা মারা যায়, মানে বিটুর বড়ো চাচি। ওনার বাবা মারা যাবার সময় আসতে পারেনি। কী যেন ভিসার ঝামেলা ছিল।
একটা বড়ো টয়োটা হায়েস গাড়ি ভাড়া করে রেখেছিল কয়েকদিন আগেই। এলাকার ড্রাইভার সুধীরকে নিয়ে এসেছে সাথে করে। কিন্তু সমস্যা হলো আজ সকালে বিটুর বাথরুম হয়নি ঠিকঠাক। সে কথা বলতেই সুধীর আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘পাবলিক টয়লেটে আছে বিটু ভাই। ওই যে ওদিকে। কাম সাইরা আসেন। ফ্লাইট নামতে এহনও মেলা দেরি। তার বাদে লাগেজ পাইতে পাইতে এক ঘন্টার ধাক্কা।’
বিটুর মেজাজ খারাপ হয়। তার মানে আরও এক ঘন্টা পরে রওনা দিলেই হতো। অবশ্য একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। ভোরে এসেছে বলে রাস্তায় জ্যাম ছিল না। ডিসেম্বর মাসে এবার আগেই শীত পড়ে গেছে। বিটু পরনের চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে পাবলিক টয়লেটের দিকে এগোয়।
ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই টের পায় ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। আশেপাশে কোথাও রেস্টুরেন্ট নেই। খেতে হলে রাস্তা পেরিয়ে উল্টোপাশে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যেতে হবে। বিটু একবার ঘড়ি দেখে। মোটে সকাল সাতটা একচল্লিশ মিনিট। নাহ, খেয়েই নেওয়া যাক।
বিমানবন্দর স্টেশনের পাশেই বড়ো একটা রেস্টুরেন্ট। সকালেই মানুষে গিজগিজ করছে। ও কোনমতে একটা চেয়ার দখল করে বসে। তারপর গরম গরম তন্দুর রুটি আর নেহারির অর্ডার দেয়। আব্বা পাঁচশ টাকা দিয়ে দিয়েছে। বলেছে দোকান থেকে মাহিন ভাইয়ার জন্য বোতলের পানি কিনে রাখতে, ‘মাম’ পানি। আমেরিকা থেকে এসে বাইরের পানি খেলে নাকি পেট নেমে যাবে।
একটু পরেই তন্দুর রুটি আর নেহারি আসে। বিটু টের পায় ক্ষুধায় পেট মোচড় দিচ্ছে। ও আর দেরি করে না, খাওয়া শুরু করে। খেতে খেতে ভাবে, আচ্ছা, মাহিন ভাইয়া একা দেশে ফিরছে কেন? গতবার চাচি মারা যাবার সময় বউ, বাচ্চাসহ ফিরেছিল। ও কানাঘুষায় শুনেছে ভাবির সঙ্গে নাকি সেপারেশন হয়ে গেছে। বিটু একটা কথা কিছুতেই বুঝে পায় না মানুষ বিয়ের এত বছর পর কী করে অমন বেমক্কা আলাদা হয়ে যেতে পারে? এটা নিয়ে ও শিউলির সঙ্গে আলোচনাও করেছিল। শিউলি ওর সঙ্গেই আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইংরেজিতে পড়ে। মাথা খুব পরিষ্কার। মাহিন ভাইয়ার কথা বলতেই ও বুঝিয়ে বলেছে, ‘শোন, বিয়েটা হলো অনেকটা সমঝোতা চুক্তির মতো। যতদিন চুপচাপ সহ্য করা যায়। আর ওসব দেশে তো মেয়েরা অনেক স্বাবলম্বী। কেউ কাউকে পোঁছে না। আমাদের মতো তো ওরা পরনির্ভরশীল না। তাই যখন দুজনের মধ্যে মেনে নেওয়ার ভারসাম্য টাল খেয়ে যায় তখন আলাদা হয়ে যায়। আর আমদের এখানে যতই ভারসাম্যের পাল্লা অন্যায়ভাবে একদিকে হেলে পড়ুক আমরা ঝুলেই থাকি।’
শিউলির কথাগুলো ওর ভীষণ কঠিন লাগে। কিন্তু যতটুকু বুঝতে পারে ও ঠিকঠাকই বলেছে। মাহিন ভাইয়া নাকি ভাবির সুবাদেই আমেরিকা গিয়েছিল। সেবার যখন আসে তখন ও ভাবির সঙ্গে সারাক্ষণ লেগে থাকত। ভাবির কখন কী লাগে। মিনারেল ওয়াটার, টিস্যু, আরও কত কী। বিটু বলার আগেই সব নিয়ে আসত। সেবার ভাবির সঙ্গে ওর খুব খাতির হয়ে গিয়েছিল। কথা দিয়েছিল সুযোগ হলে সবার আগে ওকে আমেরিকা নিয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো মাহিন ভাইয়ার সঙ্গেই আলাদা হয়ে গেল। তূর্ণা ভাবি কি ওর কথা আর মনে রেখেছে? একটা ভীষণ আফসোস হয় বিটুর। দুধ চা টাও এখন বিস্বাদ লাগছে।
ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই ও লাফিয়ে উঠে। এই রে নয়টা বেজে গেছে কখন। তাড়াহুড়ো করে বিল মিটিয়ে বের হয়ে আসে। অনেকটা পথ হেঁটে আসতে হয়। বাবা বলেছিল মাহিন ভাইয়া নাকি কাতার এয়ারওয়েজে আসবে। ফ্লাইট নম্বর দিয়ে দিয়েছে ওর হোয়াটসঅ্যাপে। বিমানবন্দরের ভেতরে নাকি টিভি মনিটর আছে যেখানে দেখা যায় কখনকার ফ্লাইট কখন নামবে। কে যেন বলেছিল চাইলে ইন্টারনেটেও খুঁজে দেখা যায়। তা বিটুর এই ব্যাপারগুলো খুব গোলমেলে লাগে। ও একটু ইউটিউবে খুঁজে খুঁজে গান শোনে। আর ফেসবুকে রিল দেখে। ইন্টারনেট ঘেঁটে ওসব ফ্লাইট নম্বর মিলিয়ে দেখবার দরকার নেই কোনো। ভাইয়া বলেছে নেমেই ওকে ফোন দেবে। ওকে দুই নম্বর টার্মিনালে থাকতে বলেছে। বিটু পা চালিয়ে দুই নম্বর টার্মিনালের দিকে এগোয়।
কাতার এয়ারওয়েজের বিশাল এয়ারবাস ৩৩৩ যখন ঢাকার মাটি স্পর্শ করে ঘড়িতে তখন ঠিক সকাল নয়টা বাজে। ডিসেম্বরের শেষ দিক। মাহিন জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। কুয়াশা কেটে রোদ উঠেছে বাইরে। কতদিন পর আবার নিজের দেশে ফিরে এল ও! মনে হচ্ছে নিজের কাছেই ফিরে এল। গত কয়েকমাসের অসহনীয় যন্ত্রণা, একাকীত্ব থেকে এবার মুক্তি। নিজের দেশ, নিজের মানুষের কাছে ফিরে আসার মতো আনন্দ বুঝি আর নেই। শুধু একটাই কষ্ট, মেয়ে ন্যান্সিকে আর কাছ থেকে দেখা হবে না। আসার সময় তূর্ণা ওকে নিয়ে এসেছিল বিদায় জানাতে। ছোট্ট মেয়েটা ওর গলা জড়িয়ে আমেরিকান একসেন্টে বলেছিল, ‘বাই পাপা, সি ইউ সুন।’
সত্যিই কি আর দেখা হবে?
‘ভাই, সামনে আগান’, পেছনের যাত্রী তাড়া দেয়। প্লেনের দরজা খুলেছে। মাহিন হ্যান্ড লাগেজ নিয়ে নেমে পড়ে। ইমিগ্রেশনে এসে খুব একটা দেরি হয় না। ওর আমেরিকান পাসপোর্ট দেখে দ্রুতই ছাড়া পায়। ইমিগ্রেশন করে এবার ছোট চাচার ছেলে বিটুকে ফোন দেয়, ‘বিটু, আমি নেমেছি। তুই এসেছিস তো? লাগেজ পেয়ে ফোন দেব, তখন গাড়ি নিয়ে আসিস।’
বিটু আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘কোনো সমস্যা নাই ভাইয়া। আমি সেই সকাল সাতটা থেকেই এসে বসে আছি।’
মাহিন হাসে। এই দেশের মানুষ এখনও অন্যের জন্য অনেকটা সময় নষ্ট করতে দ্বিধা করে না। ও ছোট চাচাকে বলেছিল কাউকে পাঠানোর দরকার নেই। নিজেই গাড়ি ভাড়া করে চলে আসবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। একটা গাড়ি ভাড়া করে বিটুকে পাঠিয়ে রেখেছে।
লাগেজ পেতে পেতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লেগে যায়। ইশ, এখনও এই ব্যাপারটা ঠিক হলো না। মাহিন ঠেলেঠুলে লাগেজ নিয়ে যখন দুই নম্বর টার্মিনাল দিয়ে বের হয় ওর চক্ষু চড়কগাছ। কয়েকশো লোক বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এরা সবাই বিটুর মতো তাদের আত্মীয় স্বজনকে নিতে এসেছে! অনেকের হাতে ফুল। রঙিন সব জামা কাপড় পরা, একটা উৎসব যেন। উৎসুক চোখেমুখে সবাই তাদের আকাঙ্ক্ষিত মানুষের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। সেই নাড়ীর টান!
মাহিন মোবাইল বের করে এবার বিটুকে ফোন দেয়। তার একটু পরেই ওকে দেখতে পায়। লম্বা হিলহিলে একটা ছেলে, ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। গায়ে একটা কালো রঙের চাদর। ওকে দেখেই চিৎকার করে উঠে, ‘ভাইয়া, এই যে আমি।’
ওর চিৎকারে আশেপাশের মানুষ একবার ফিরে তাকায়। মাহিনের কেমন লজ্জা লাগতে থাকে।
বিটু এবার ভীড় ঠেলেঠুলে সামনে এগিয়ে আসে। মাহিন ভাইয়াকে ও দূর থেকেই চিনেছে। একটু স্বাস্থ্য হয়েছে, কিন্তু আগের মতোই সুন্দর। একসময় ভাইয়া নাকি এলাকার হার্টথ্রব ছিল। তা ভাইয়া যেমন লম্বা চওড়া, তেমনি গায়ের রঙ। মাথাভর্তি ঘন চুল ব্যাকব্রাশ করা। ওদের পূর্বপুরুষ নাকি জমিদার ছিল। আর তার ছিঁটেফোঁটা নাকি মাহিন ভাইয়া পেয়েছে। আজ মাহিন ভাইয়া একটা ধূসর ব্লেজার আর জিন্স পরে এসেছে। একদম পাক্কা আমেরিকান লাগছে।
বিটু সামনে এসে সালাম দিয়েই ওর হাত থেকে লাগেজটা নেয়। তারপর বলে, ‘ভাইয়া, দুইটা মিনিট দাঁড়ান। গাড়ি ডাকতেছি। পার্কিং-এ আছে।’
সুধীরকে ফোন দিয়ে আসতে বলেই বিটু বলে, ‘ভাইয়া, সকালের নাস্তা কোথায় করবেন? রাস্তার ওইপাশে একটা রেস্টুরেন্ট আছে, ভালো নেহারি পাওয়া যায়।’
মাহিন হাসে, ‘আরে আমি প্লেনে পেট ভরে খেয়েছি। একবারে ময়মনসিংহ গিয়ে তোর মায়ের হাতের রান্না খাব।’
বিটু হাসে। বাবা কদিন ধরেই দেশি মাছ কিনে কিনে ফ্রিজ ভরছে। রেললাইনের সামনেই মোহনগঞ্জ থেকে বিলের মাছ আসে। তাজা বোয়াল, টেংরা, ফলি, মেনি, কৈ মাছসহ আর কত পদের মাছ যে কিনেছে। আম্মা সকাল থেকেই রাঁধতে বসেছে। মাহিন ভাইয়া এই বংশের বড়ো ছেলে, ওর প্রতি সবার একটা আলাদা টান।
গাড়ি যখন ছাড়ে ততক্ষণে ঘড়িতে সকাল এগারোটা বেজে গেছে। মাহিন গাড়িতে উঠেই ঘুমিয়ে পড়ে। জেট ল্যাগের কারণে কটা দিন ঘুমের খুব উল্টোপাল্টা হবে। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখে ও নিউইয়র্কের একটা স্টেশনে বসে আছে। সামনেই সিলভার রঙের ট্রেন দাঁড়ানো। ট্রেনের ঝকঝকে জানালা দিয়ে ন্যান্সির বিষণ্ণ মুখ দেখা যাচ্ছে। পাশেই তূর্ণা মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। ট্রেন ছেড়ে দেয়। আর ও ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণপণে দৌড়ুতে থাকে যেন
২.
ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙে যায় মাহিনের। আসলে ঘুম ভেঙেছে সেই রাত দুটোয়। তখন থেকেই বিছানায় এপাশ ওপাশ করেছে। এখন আর না পেরে উঠেই পড়েছে। কয়দিন এমন হবে। আমেরিকায় তো এখন সন্ধ্যা। তাই ঘুমের ঘড়ির উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে।
নিজেদের পুরনো এক তলা বাড়িতেই ও উঠেছে। চাচা লোক দিয়ে এটা সাফসুতরো করে রেখেছে। একই সীমানায় ছোট চাচা নতুন তিনতলা বিল্ডিং বানিয়েছেন। কাল রাতে খেতে খেতে সেই গল্পই করছিলেন। চাচির বয়স বেড়েছে, কিন্তু সেই আগেরমতোই কত পদ যে রান্না করেছিলেন। কতদিন পর দেশি মাছ খেল।
মাহিন খুঁজে পেতে একটা চাদর বের করে। কাল রাতে চাচি বের করে দিয়েছেন। গায়ে দিতেই ন্যাপথলিনের গন্ধ পায়। বলেছিল এটা নাকি মা গায়ে দিত। চাদরটা গায়ে জড়াতেই একটা নরম ওম টের পায় মাহিন।
বারান্দায় একটা মোড়া পাতা আছে। ও এসে বসতেই মিষ্টি একটা ঘ্রাণ পায়। খুব পরিচিত একটা ফুলের ঘ্রাণ। কী যেন নাম ফুলটার? শিউলি। আহ, কতদিন পর ঘ্রাণটা পেল। কী মনে হতে মাহিন মোড়া থেকে উঠে বাইরে আসে। তারপর একটু খুঁজতেই গাছটা পেয়ে যায়। বাড়ির আঙিনার একপাশে মাঝারি উচ্চতার একটা শিউলি গাছ। বাইরের রাস্তার সড়কবাতি থেকে আলো এসে পড়েছে। আর সেই আলোয় ও দেখতে পায় সাদা সাদা শিউলি ফুল বিছিয়ে পড়ে আছে। মাহিন পায়ে পায়ে গাছটার নিচে যায়, তারপর নিচু হয়ে একটা একটা করে ফুল কুড়োতে থাকে। ধীরে ধীরে চাদরের একটা অংশ ফুলে ভরে যায়।
হঠাৎ করেই অনেক বছর আগের একটা স্মৃতি মনে পড়ে যায়। ও তখন ডেন্টাল কলেজে পড়ে। এক পুজোর ছুটিতে বাড়ি এসেছিল। ওর অভ্যাস ছিল ভোরে ঘুম থেকে উঠে একটু দৌড়ঝাঁপ করা। তা সেদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠতেই একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখেছিল। একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে ওদের বাড়ির আঙিনায় শিউলি ফুল কুড়িয়ে ওড়নায় রাখছে। ওকে দেখেই থমকে গিয়েছিল। একটু যেন লজ্জাই পেয়েছিল। পরে জেনেছিল মেয়েটা আনন্দমোহন কলেজে অনার্সে পড়ে। অত বড়ো একটা মেয়ে অমন বাচ্চাদের মতো ফুল কুড়াচ্ছে দেখে খুব ভালো লেগেছিল। পরে ওর সঙ্গে পরিচয় হয়। বছরখানেক আগে নাকি এই এলাকায় এসেছে ওরা। বাবা স্কুলের শিক্ষক। মায়ের সঙ্গে ওদের ভাব হয়ে গিয়েছিল আগেই। এরপর কেমন করে যেন মন দেওয়া নেওয়া হয়ে যায়। প্রথম প্রথম ভেবেছিল অল্প কদিনেই ও হাঁপিয়ে যাবে। যেমন এর আগে অনেক মেয়েই প্রেম করতে এসে একটা সময় বুঝে গেছে ও ঠিক রোমান্টিক টাইপ না। কিন্তু কেমন করে যেন এই মেয়েটা টিকে গিয়েছিল। ওকে ভীষণ ভালোবাসত। একটা সময় মাহিনরও মনে হতো ও নিজেও বুঝি তাই বাসে৷ কিন্তু সেটা ভুল প্রমাণিত হলো যখন ছোট চাচা আমেরিকা প্রবাসী তূর্ণার সঙ্গে বিয়ের সমন্ধ নিয়ে এলেন। বাবা তখন জীবিত। মা কিছুতেই রাজি না, এক ছেলে অমন দূর দেশে গিয়ে পড়ে থাকবে। চাচা বোঝালেন, এটা একটা সুযোগ। মাহিন এই দেশে থেকে জীবনে তেমন কিছুই করতে পারবে না। সামন্য ডেন্টিস্ট হয়ে আর ক’টাকাই কামাবে। একবার আমেরিকা গিয়ে ডিগ্রি নিতে পারলে আর মাহিনকে কে পায়। তা মাহিন ডিগ্রি নিয়েছিল, বড়ো ডেন্টিস্ট হয়েছে। কিন্তু তার বিনিময়ে সেই শিউলি ফুল কুড়ানো মেয়েটার সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করতে হয়েছে। কথা দিয়েছিল বিয়ে করতে হলে ওকে করবে। কিন্তু ও কথা রাখেনি। আচ্ছা, সেই মেয়েটার দীর্ঘশ্বাস বুঝি ওর সংসার জীবনে অভিশাপের মতো পড়েছে। একটা দিন ও সুখী হতে পারেনি। নাহ, এবার যদি সুযোগ পায় মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা করবে তো ওকে সেই শিউলি ফুল কুড়ানো নাফিসা মেয়েটা?
(চলবে)
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর