#হারানো_হিয়া (পর্ব ১৪)
১.
বর্ষা শেষ হয়েছে। এখন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর শুভ্র সাদা মেঘের ভেলা ভাসে আকাশে। আর রয়েছে নদীর দু’পাড় জুড়ে নরম সাদা কাশফুল। বাতাস এলেই কেমন দুলতে থাকে। একটা রঙিন পালতোলা নৌকার সামনের দিকে মীরা ইহানকে নিয়ে বসেছিল। পেছনে মাহিন বসে বসে মাঝির সঙ্গে কী যেন গল্প করছিল। আজ দুপুরেই ওরা ময়মনসিংহ এসে পৌঁছেছে। একদম ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড় ঘেঁষে রিসোর্টটা। ওদের রুমের জানালা দিয়েই নদীটা দেখা যায়। ইশ, না এলে ভীষণ ভুল হতো। ভাড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। মাহিন বলেছে এই রিসোর্টের মালিক নাকি তার কাছে দাঁতের চিকিৎসা করান। সেই সুবাদে তার জন্য রিসোর্ট ভাড়া নাকি মওকুফ। কথাটা বিশ্বাস হয়নি। লোকটা বেশ মজার। একটু উদাস ভাব আছে। এই যে মীরার সঙ্গে অযথা গল্পের চেষ্টা না করে মাঝির সঙ্গে বসে বসে গল্প করছে। ভালো লাগে ব্যাপারটা।গায়ে পড়া মানুষ একদম পছন্দ না।
একটু পর মাহিনের ডাকে পেছন ফিরে তাকায়, ‘আপনারা চা খাবেন?’
দুপুরে ভাত খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের একটু আগে ওরা নৌকায় উঠেছিল। চায়ের তেষ্টা পেয়েছে। মীরা গলা বাড়িয়ে বলে, ‘মন্দ হয় না।’
মাহিন সঙ্গে করে নিয়ে আসা ফ্লাস্ক নিয়ে এবার ওদের কাছে এসে বসে। তারপর মীরাকে এক কাপ চা দিয়ে বলে, ‘ইহান, চা খাবে তো আংকেল?’
ইহান লাজুক গলায় বলে, ‘হ্যাঁ আংকেল।’
ইহান বেশ সহজভাবেই নিয়েছে মাহিনকে। প্রথমটায় মীরা ভয় পেয়েছিল। যদি ছেলে প্রশ্ন করে ওনাকে চেনে কী করে?
মাহিন এবার নিজেও এক কাপ চা নেয়। তারপর ইহানের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয়। ও কী কী আঁকে, সেসব খবর নেয়। মোবাইলে তুলে রাখা ওর আঁকা ছবিগুলো আগ্রহের সঙ্গে দেখে। কোনো ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠিয়েছে কিনা জানতে চায়। ইহান যখন ‘না’ করে তখন মাহিন আফসোস করে বলে, ‘তোমার আঁকা যে ছবিগুলো দেখলাম ভীষণ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে একটা মেয়েকে নিয়ে যে একটা ছেলে সাইকেল চালাচ্ছে ওটা। আমি তোমাকে হেল্প করব। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে তোমার আঁকা ছবি সাবমিট করতে পারো। আমার মনে হয় তুমি ঠিক পুরস্কার জিতবে।’
ইহানের চোখেমুখ স্পষ্টতই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মীরা ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে ভাবে, এমন করে ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে কেউ একজন স্বপ্ন দেখাতে পারত যদি!
সন্ধ্যার আগে আগে ওরা রিসোর্টে নেমে আসে। নিচেই বাচ্চাদের প্লে গ্রাউন্ড, বসার ব্যবস্থা আছে৷ ওরা একটু নাস্তা করে। ইহান অনুমতি নেবার গলায় বলে, ‘আম্মু, আমি একটু ওদিকটায় যাই?’
অনেক বাচ্চারাই খেলছে। মীরা সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বলে, ‘সাবধানে খেল, ব্যথা পেও না কিন্তু।’
ইহান চলে যেতেই মাহিন হেসে বলে, ‘ব্যথা পেয়ে পেয়েই শক্ত হবে৷ ভয় পাবেন না।’
মীরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘এই জীবনে এত এত ব্যথা পেয়েছি যে এখন আর নতুন করে ব্যথা পেতে ভালো লাগে না।’
আবহাওয়াটা গম্ভীর হয়ে যেতেই মাহিন কৌতুকের গলায় বলে, ‘আচ্ছা, পাত্র কেমন দেখলেন সেটা তো বললেন না।’
মীরা স্বাভাবিক হয় এবার। হাসিমুখে বলে, ‘পাত্র তো দেখতে শুনতে কোনো খুঁত নেই। তা রান্নাবান্না জানেন? গান গাইতে পারেন?’
মাহিন হো হো করে হাসে। তারপর বলে, ‘মজা করে বললেও এখন কিন্তু এসব জিজ্ঞেস করার দিন এসেছে। গান না পারলেও রান্নাবান্না পারি। বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকা মানুষ আমি। তাই ঘর গৃহস্থালির কাজ সবই জানি। আমাকে বিয়ে করলে আপনি ঠকবেন না।’
মীরা স্থির দৃষ্টিতে তাকায়, ‘আপনি কি সবকিছু এমন ঠকা, না ঠকা দিয়ে বিচার করেন?’
মাহিন থমকায়। তারপর নিচের ঠোঁট কামড়ে বলে, ‘সবসময় না হলেও ব্যাপারটা মাথায় থাকে। এই ধরুন আমি যখন আমেরিকা গেলাম তখন ভাবলাম যার সঙ্গে প্রেম করি তাকে বিয়ে করে লাভ নেই। তখন তাকে ঠকিয়ে তূর্ণার সঙ্গে চলে গেলাম আমেরিকা। কিন্তু দেখুন, শেষ পর্যন্ত আমি ঠকলামই। একেকটা মানুষের একেক স্বভাব। আমার মনে হয় এজন্য আমাকে সারাজীবন পস্তাতে হবে।’
মীরা ওর সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে মুগ্ধ হয়। তারপর একটু ভেবে বলে, ‘আচ্ছা, আপনি বললেন আপনি একজনকে ভালোবাসতেন। তাকে ঠকিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করে আমেরিকা চলে যান। আপনি কি সেই মানুষটার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন?’
মাহিন এবার ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আপনি বুঝি খুব পিউরিটান টাইপের মানুষ? হ্যাঁ, ক্ষমা চেয়েছি তবে সেটা অবেলায়। এখন অবশ্য একটা দায় মেটাবার সুযোগ এসেছে। আপনি যদি সাহায্য করেন তাহলে ব্যাপারটা সহজ হয়।’
মীরা ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘আপনার প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক!’
মাহিন রহস্যময় হাসি হেসে বলে, ‘আছে, গভীর সম্পর্ক আছে। আচ্ছা, আপনি তো একটা ছেলেকে ভালোবাসতেন। আপনিও তাকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করেছিলেন। অবশ্য সেখানে আপনার কোনো দোষ ছিল না। আপনি বাধ্য হয়েছিলেন। সুমন তখন ছাত্র, বিয়ে করে দায়িত্ব নেবার সামর্থ্য নেই।’
মীরা স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই লোক কী বলছে! ইনি সুমনের কথা জানল কী করে?
মীরা চাপা গলায় বলে, ‘আপনাকে কে বলল এসব কথা?’
মাহিন অনুত্তেজিত গলায় বলে, ‘যিনি বলেছেন তার পরিচয় শুনলে আপনি আরও বেশি চমকে যাবেন। মাথা ঠান্ডা করে বসুন।’
মীরার এখন কেমন টেনশন লাগছে। এমন হুট করে এই অচেনা জায়গায়, অচেনা মানুষের আমন্ত্রণে চলে আসা উচিত হয়নি। অবশ্য ওয়াকার ভাই বলেছিলেন ইনি ওনার চাচাতো ভাই। কিন্তু তবুও, মানুষকে যে আজকাল চট করে বিশ্বাস করা যায় না।
মীরা গম্ভীরমুখে বলে, ‘আমার মাথা ঠান্ডাই আছে। আপনি বলুন, কে বলেছে এসব কথা।’
মাহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘যে মেয়েটাকে আমি ঠকিয়ে আমেরিকা চলে গেলাম সেই মেয়েটা। ওর নাম নাফিসা। আর সবচেয়ে বড়ো ট্রাজেডি কি জানেন? নাফিসা হলো সুমনের বউ।’
কোথাও যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। মীরা টের পায় ওর মাথা ঘোরাচ্ছে। এই লোক কী আজগুবি সব কথা বলছে!
মীরা লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়, তারপর টেনে টেনে বলে, ‘আপনি কী বললেন? সুমনের বউ নাফিসা আপনার সেই ফেলে যাওয়া প্রেমিকা ছিল? এ যে অসম্ভব!’
মাহিন মলিন হাসে, ‘পৃথিবীটা ভীষণ রহস্যময়। এমন কাকতাল ঘটনাও ঘটে? আপনি এবং আমি আমরা দুজনেই আমাদের তরুণ বয়সের প্রেমের মুখোমুখি।’
মীরা স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। সুমন কি এসব জানে? নিশ্চয়ই এখনও জানে না। জানলে ওকে বলত।
ও জিজ্ঞাসু গলায় বলে, ‘সুমন জানে ব্যাপারটা?’
মাহিন মাথা নাড়ে, ‘সম্ভবত না। আপনার ছবিটা কৌতূহলবশত নাফিসা দেখতে চেয়েছিল। আর সেখানেই গোলমাল বেঁধে গেল। ওর কাছেই আপনার সম্পর্কে সব জানলাম। আপনাকে কাছে থেকে দেখার ভীষণ কৌতূহল ছিল।’
মীরার তখনও ঘোর কাটেনি। একটু সামলে নিয়ে বলে, ‘আপনি সব জানার পরেও কেন এগোলেন?’
মাহিন কপাল কুঁচকে বলে, ‘এগোতাম না। একটা দারুণ ভাবনা মাথায় আসে। আচ্ছা, আপনি সুমনকে ভালোবাসতেন, আর আমি নাফিসাকে। আমরা দুজনেই আমাদের পুরনো ভালোবাসা ফিরে পেতে চাই। ধরুন, আমি নাফিসাকে বিয়ে করলাম, আর আপনি সুমনকে বিয়ে করে নিলেন। তাহলে কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এই পৃথিবীতে মানুষ নানা জাগতিক জটিল পরিস্থিতির কারণে তাদের প্রিয় মানুষকে ছেড়ে অন্য মানুষকে বিয়ে করতে হয়। এরপর সারা জীবন একটা আফসোস বয়ে বেড়ায়। তারা ভাবে, জীবন যদি একটা সুযোগ দিত আগের মানুষটার কাছে ফিরে যেত। আমাদের ক্ষেত্রে জীবন কিন্তু আমাদের সুযোগ দিল। আমরা কি ফিরে যেতে পারি না আমাদের পছন্দের মানুষের কাছে?’
মীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর বিস্মিত গলায় বলে, ‘এমন অদ্ভুত একটা চিন্তা আপনার মাথায় এল? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? আমাকে বলেছেন ভালো, আর কাউকে ভুলেও এই কথাটা বলতে যাবেন না।’
মাহিন থমকায়। তারপর নিচু গলায় বলে, ‘কিন্তু আমি যে বলে ফেলেছি একজনকে।’
মীরা কপাল কুঁচকে বলে, ‘কাকে?’
মাহিন একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে, ‘নাফিসাকে বলেছি। ও যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় আপনার পথটাও পরিষ্কার হয়ে যায়।’
মীরা চোখা গলায় বলে, ‘তা নাফিসা কী বলল?’
মাহিন মাথা নেড়ে বলে, ‘এখনও উত্তর পাইনি। হয়তো দ্বিধায় আছে। আমার ধারণা ও রাজি হবে।’
মীরা কঠিন গলায় বলে, ‘আমি কখনোই এমন অন্যায় হতে দেব না। সুমনের সুখের সংসার ভেঙে ওকে কখনোই আমি পেতে চাইনি। আর সেটা হতেও দেব না।’
মাহিন চেয়ে থাকে। তারপর হেসে বলে, ‘আপনি খুব বিশুদ্ধ মানুষ। তাই এমন করে বলতে পারলেন। কিন্তু আমি তো বিশুদ্ধ মানুষ না। তাই নাফিসা যদি রাজি হয় সে ক্ষেত্রে আমি হয়তো ওকেই বিয়ে করব। আর সুমন তখন একা হয়ে যাবে। একটা সময় আপনিই হয়তো ওকে বাঁচানোর জন্য বিয়ে করবেন। একদিক দিয়ে আমি আপনার উপকারই করার চেষ্টা করছি। ভেবে দেখবেন ব্যাপারটা।’
মীরা উঠে দাঁড়ায়, ‘আমার ভাবার কিছু নেই। আপনি একজন অসৎ মানুষ। আমি কাল সকালেই এখান থেকে চলে যাব। আর হ্যাঁ রিসোর্ট এর যা ভাড়া সেটা পুরোটা আমি দিয়ে যাব।’
মীরা আর দাঁড়ায় না। ইহানকে ডেকে নিয়ে দোতলায় ওদের রুমে চলে যায়। যদিও ইহান আসতে চাচ্ছিল না। মীরা রুমে এসে জানালার সামনে দাঁড়ায়। চাঁদের আলোয় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি মাঝে মাঝে ঝিকমিক করছে। মীরা সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবে, সুমন ওর জীবনে এমন নদীর পানির ঝিকমিক আলোর মতো। যেটা দূর থেকেই দেখা ভালো। মাহিন লোকটা যে সেই ঝিকমিক আলো পাবার আশায় উলটো সব ডুবিয়ে দেবার অদ্ভুত চিন্তা করছে। নাহ, কাল সকালেই ফিরে গিয়েই সুমনকে ধরতে হবে। ওকে সব খুলে বলতে হবে, ওর সংসার যে ভাঙার পথে!
২.
সুমন স্তম্ভিত হয়ে মীরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কী বলছে এসব ও! সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
সুমন আবার জিজ্ঞেস করে, ‘তুই বলছিস তোর যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই লোক নাফিসার প্রাক্তন?’
গতকালই মীরা এসেছে। এসেই সুমনকে ফোন দিয়েছিল। তা ও কাল সময় দিতে পারেনি। আজ সকালে সেই ব্যাংকের সামনে অশ্বত্থ গাছটার নিচে ওরা দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।
মীরা মাথা নাড়ে, ‘হ্যাঁ। কিন্তু তুই মাহিনের কথা জানতি না?’
সুমন না-সূচক মাথা নাড়ে। মীরার আফসোস হয়, শুধু শুধু এসব অজানা কথা সুমনের জানতে হলো।
মীরা হতাশ গলায় বলে, ‘শুধু তাই না। মাহিন নাকি নাফিসাকে বিয়ে করার কথা বলেছে। তাতে করে তুই আমাকে পেয়ে যাবি। মাহিনের কথা মতে এটা নাকি একটা চমৎকার সমাধান। তুই প্লিজ তোর বউ নাফিসাকে আটকা। ওকে ভীষণ ভুল বোঝানো হচ্ছে। তোর ছোট ছোট দুটো বাচ্চা আছে। স্বার্থপরের মতো নিজের সুখটাই দেখলে তো হয় না। আমাদের একটা সময়ে তীব্র ভালো লাগা ছিল। কিন্তু নিয়তি আমাদের আলাদা করেছে। নতুন মানুষ এসেছে। একটা সময় তারাই আপন হয়ে ওঠেছে। বাচ্চাদের ভেতর মায়ার শিকড় গেড়েছে। এতই কি সহজ এমন একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে পুরনো সম্পর্কে ফিরে যাওয়া? তোর কী মনে হয়?’
সুমন বিষণ্ণ হাসে, ‘মীরা, তুই ঠিক আমার মতোই ভাবিস। তাই বুঝি তোর সঙ্গে আমার ভাব হয়েছিল। তুই যেমনটা বললি আমিও ঠিক তেমনটাই ভাবি। আমার কাছে এখন সন্তানদের ভালোমন্দ সবার আগে। ওদের সুখটাই আমার সুখ। আমি নাফিসাকে বুঝিয়ে বলব। ও নিশ্চয়ই ওই ভদ্রলোকের মত এত পাগল না। বাস্তব বুদ্ধি ওর নিশ্চয়ই আছে। তুই বলে ভালো করেছিস।’
মীরা মাথা নাড়ে, আকুল গলায় বলে, ‘আমি তোকে অসুখী দেখতে পারব না সুমন। আশা করি এমন কিছুই হবে না।’
সুমন সেদিন বাসায় ফেরার পথে ভাবে ইদানিং নাফিসাকে আনমনা লাগে। সারাক্ষণ কী নিয়ে যেন খুব চিন্তা করে।
সেদিন রাতে নাফিসা হঠাৎ করেই বলে, ‘সুমন, একটা জরুরী কাজে আমাকে কাল ময়মনসিংহ যেতে হবে। তুমি একটু বাসায় থেকো। ওদের দুজনকে দেখে রেখো।’
সুমন টের পায় ওর বুকের ভেতর ড্রাম পেটাচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘হঠাৎ ময়মনসিংহ?’
নাফিসা গম্ভীরমুখে বলে, ‘বললাম তো কাজ আছে। আমি সকালে গিয়ে বিকেলেই ফিরে আসব।’
সুমন থমকায়। ও কি আগ বাড়িয়ে মাহিনের কথা তুলবে? না, থাক। দেখা যাক নাফিসা কী করে।
সুমন একটু চুপ থেকে বলে, ‘আমি কি একটা গাড়ি ঠিক করে দিব?’
নাফিসা ক্লান্ত গলায় বলে, ‘আচ্ছা দিও।’
সেদিন রাতে সুমনের ঘুম আসে না। হঠাৎ করেই নাফিসাকে হারানোর ভয় তীব্র হয়ে ওঠে। তূর্য, জুঁই, ওদের কথা ভেবে বুকটা হাহাকার করে ওঠে। নাফিসা কি সত্যিই ওর সেই পুরনো ভালো লাগার মানুষ মাহিনের কাছে ফিরে যাচ্ছে?
(চলবে)