হারিয়েছি নামপরিচয় পর্ব-২১+২২

0
283

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সন্ত্রা’সীরা রিফাতকে এগোতে মানা করে কিন্তু রিফাত কোন কথা না শুনে এগিয়ে যায়। একজন হঠাৎ রিফাতকে গু’লি করে দেয়। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রিফাত। মেঘলা রিফাত বলে চিৎকার দেয়। রিফাত নিভুনিভু চোখে একবার মেঘলার দিকে তাকায়। মেঘলার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। নিঃশ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হচ্ছিল রিফাতের।

এমন সময় পুলিশের আগমন ঘটে। কিছু মানুষ খবর দিতেই পুলিশ ফোর্স চলে আসে। অনেকক্ষণ গো’লাগুলি চলে। পুলিশের থেকে বাচার জন্য জিম্মি করা লোকদের টা’র্গেট করে স’ন্ত্রাসীরা। যার কারণে পুলিশদের বেশ বেগ পেতে হয়। কয়েকজনকে জিম্মি থাকা অবস্থাতেই মে’রে ফেলে। একজন তো মেঘলাকেও গু’লি করতে যাবে তার আগেই পুলিশ লোকটার হাতে গু’লি করে। মেঘলাকে ছুটে আসার চেষ্টা করে। এমন সময় একজন স’ন্ত্রাসী পেছন থেকে মেঘলাকে গু’লি করে। গু’লি এসে মেঘলার পিঠে লাগে। মেঘলাও মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রিফাতের থেকে একটু সামনেই লুটিয়ে পড়ে মেঘলা। রিফাতের দিকে তাকিয়ে নিরবে অশ্রু বিসর্জন করে।

‘আমাদের কি তাহলে এই পরিণতি হওয়ার ছিল। ভুল বোঝাবুঝির মধ্যেই সবকিছু শে’ষ হয়ে যাবে। আমার আফসোস থেকে যাবে আপনাকে এত কষ্ট দেওয়ার জন্য। যদি এটা আমার শে’ষ কথা হয় তাহলে আমি শে’ষবারের মতো বলতে চাই, খুব ভালোবাসি আপনাকে রিফাত। যদি আবার সুযোগ পাই আবার ভালোবেসে আপনাকে কাছে টেনে নিব।’

আর কিছু বলতে পারে না মেঘলা৷ আচমকা গড়িয়ে পড়তে থাকে। গড়িয়ে পড়তে পড়তে একটি পাথরে গিয়ে মেঘলার মাথায় আঘাত লাগে। পুলিশ কিছু সন্ত্রা’সীদের গ্রেফতার করে আবার কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। পুলিশ সকল আহত মানুষদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রিফাত, মেঘলাও ছিল তাদের মধ্যে।

আরিয়ান, আখি ও মুন্নি পুলিশদের সাথে বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। আখি বলে,
‘আমার বান্ধবী মেঘলাকে ওরা জিম্মি করে রেখেছিল। আমি এখনো ওর খোজ পাইনি।’

মুন্নিও বলে,
‘আমার ভাইয়া এদিকে এসেছিল। ওকেও খুজে পাচ্ছি না।’

এছাড়াও আরো অনেক মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজনের খোজ করছে। একজন পুলিশ সদস্য তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আপনারা সবাই শান্ত হন। এখানে কিছু পা’হাড়ি সন্ত্রা’সীগোষ্ঠী হামলা করেছিল। আমরা অনেক কষ্টে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। অনেক মানুষকেই ওরা জিম্মি করেছিল। যাদের মধ্যে কাউকে তো গু’লি করে মে’রে ফেলেছে কেউ বা আহত হয়েছে। কয়েকজন মানুষকে আমরা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছি। তারা ইতিমধ্যেই তাদের আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করেছে। আপনারা যারা আছেন তারা আর দেরি না করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চলে যান। সকল আহত এবং নি’হত ব্যক্তিদের সেখানেই পাবেন। ‘

পুলিশ অফিসারের কথা শুনে মুহুর্তেই সেখানকার পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। সবাই নিজের আপনজনের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে যায়৷ কেউবা আহাজারি শুরু করে দেয়।

৪১.
মুন্নি, আখি ও আরিয়ান চট্টগ্রাম মেডিকেলে এসেছে। এখানে অনেক খুজে রিফাত ও মেঘলার সন্ধান পেয়েছে। দুজনেই গু’লিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। রিফাতের গু’লি বের করা হয়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু মেঘলার অবস্থা বেশি ভালো না। তার শরীর থেকে গু’লি বের করা গেলেও তার মাথায় আঘাতের কারণে সমস্যা হতে পারে বলে ডাক্তার জানিয়েছে। আখি কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। আরিয়ান আখিকে সামলানোর চেষ্টা করছে। তার নিজেরও খারাপ লাগছে মেঘলার এই অবস্থার জন্য।

মুন্নি ইতিমধ্যে বাড়িতে যোগাযোগ করে সবাইকে রিফাতের ব্যাপারে জানিয়েছে। রিফাতের মা রোজিয়া, রিফাতের বাবা আমিনুল হক সবাই রওনা দিয়েছে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশ্যে। মুন্নির নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে,
‘আজ যদি আমি রিফাত ভাইয়াকে এখানে নিয়ে না আসতাম তাহলে এমন কিছুই হতো না। আমার জন্য হয়েছে।’

আখিও ভাবে মেঘলার ব্যাপারে তার পরিবারকে জানানো উচিৎ। আরিয়ানকে এই বিষয়ে বললে আরিয়ান বলে,
‘তুই কি মেঘলার পরিবারের ব্যাপারে কিছু জানিস? কারো নাম্বার আছে তোর কাছে?’

আখি বলে,
‘মেঘলার আগের ফোনে ওর বোন রোদেলার নাম্বার ছিল। কিন্তু সেই ফোন তো চুরি হয়ে গেছে। আমি ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলে দেখি। ও তো মেঘলার পরিচিত। ওর কাছে থাকলেও থাকতে পারে।’

আখি মুন্নির কাছে যায়।
‘এক্সকিউজ মি, তোমার কাছে মেঘলার পরিবারের কারো ফোন নাম্বার আছে? মেঘলার এই পরিস্থিতির কথা তাদের জানানো দরকার।’

মুন্নি চোখের জল মুছে। আখির দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,
‘মুবিন ভাইয়াকে বলতে হবে। মুবিন ভাইয়া রোদেলা ভাবি মানে মেঘলা ভাবির বোনের স্বামী।’

মুন্নি মুবিনকে ফোন করে সব জানায়। সব শুনে মুবিন রোদেলাকে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয়। মুবিন রোদেলার কাছে ব্যাপারটা গোপন রাখার চেষ্টা করে যে কেন তারা চট্টগ্রাম যাচ্ছে। কিন্তু রোদেলার জোরাজুরিতে মেঘলার ব্যাপারে বলে দেয়। রোদেলা সারা রাস্তা কাদতে কাদতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে এসে পৌছায়। এসে এদিক ওদিক মেঘলাকে খুজতে থাকে। মুন্নির সাথে দেখা হলে মুন্নি রোদেলাকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। সব শুনে রোদেলা নির্বাক হয়ে যায়। নিজের বোনের জন্য তার চিন্তা হতে থাকে।

৪২.
কয়েকদিন কে’টে গেছে। রিফাত এখন অনেকটাই সুস্থ। এই ক’দিন চট্টগ্রাম মেডিকেলেই ছিল সে। যদিও তার বাবা-মা চেয়েছিল তাকায় ঢাকা মেডিকেলে শিফট করতে কিন্তু সুস্থ হয়ে যাওয়ার আর তার প্রয়োজন হয়নি। এই কয়দিন চট্টগ্রাম মেডিকেলেই ছিল রিফাত। আজ রিফাতের রিলিজ ডেট।

রিফাত নিজেকে নিয়ে চিন্তিত নয়। তার চিন্তা মেঘলাকে নিয়ে। এখনো মেঘলার জ্ঞান ফেরেনি। ডাক্তার বলেছে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই রিফাত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেঘলাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে। সেখানে চিকিৎসা না হলে প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাবে।

রিলিজ পেতেই মেঘলাকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ নেয় রিফাত। আরিয়ান আজ আখিকে নিয়ে শেষবারের মতো মেঘলাকে দেখে যেতে এসেছে। মেঘলাকে দেখা হয়ে গেলে আরিয়ান রিফাতকে বলে,
‘আপনার ভালোবাসা দেখে আমি সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেছি। কেউ কাউকে এত ভালোবাসতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না। একটা সত্য কথা বলব আমারও মেঘলাকে ভালো লাগত। ভালোবাসা ছিল না শুধু ভালো লাগা ছিল। আপনিই মেঘলাকে সত্যি ভালোবাসেন তাই তো কোনকিছুর তোয়াক্কা না করে ওকে বাচাতে ছুটে গিয়েছিলেন। মেঘলা সত্যি খুব লাকি। আমি আল্লাহর কাছে শুধু এটুকুই চাইব তিনি যেন মেঘলাকে আবার আপনার কাছে ফিরিয়ে দেয়। মেঘলা যেন আবার সুস্থ হয়ে আপনার কাছে ফিরে যায়। আপনাদের মধ্যকার সব ভুল বোঝাবুঝি যেন মিটে যায়।’

আরিয়ান সেখানে আর না দাড়িয়ে চলে যায়।


মেঘলাকে ঢাকার একটি বেসরকারি এনে ভর্তি করিয়েছে রিফাত। এখানকার ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করে জেনেছে মেঘলার মাথায় ভারী কিছুতে আঘাত লাগায় সে কোমায় চলে গেছে। চিকিৎসা চললে হয়তো একসময় সে সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে কবে উঠবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। এমন হতে পারে এক সপ্তাহ, এক মাস লাগতে পারে। আবার কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে।

রিফাত অপেক্ষায় থাকে খুব শীঘ্রই হয়তোবা মেঘলা সুস্থ হয়ে উঠবে। এখন সবার প্রতীক্ষা একটাই মেঘলা হয়তোবা খুব শীঘ্রই রিফাতের কাছে ফিরে আসবে। সব সমস্যা কা’টিয়ে আবার মেঘলা-রিফাত কি এক হতে পারবে?

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মেঘলা কোমা থেকে সেরে উঠল। টানা একমাস কোমায় থাকার পর অবশেষে চোখ মেলে তাকালো মেঘলা। রিফাতের কাছে খবরটা আসতেই সে দৌড়ে চলে আসে। মেঘলাকে সুস্থ দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় রিফাত। উত্তেজিত হয়ে কাছে এসে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে। মেঘলা রিফাতকে দেখে খুশি হলো কিন্তু সেটা প্রকাশ করল না। রিফাত কাছে এসে জড়িয়ে ধরতেই মেঘলা তাকে দূরে সরিয়ে বলে,
‘কে আপনি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেন?’

রিফাত অবাক হয়ে যায় মেঘলার কথা শুনে। মেঘলা তাকে চিনতে পারছে না এটা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। রিফাত মেঘলাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘তুমি আমাকে চিনতে পারছ না মেঘলা? আমি রিফাত।’

মেঘলা ভালো করে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কে রিফাত? আর আপনি আমাকে মেঘলা বলছেন কেন? আমার নাম কি মেঘলা?’

রিফাত কিছু বুঝতে পারে না মেঘলার কথা। রিফাতের মনে হয় মেঘলা বোধহয় স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। রিফাতের মুখের এমন ভাব দেখে মেঘলা হেসে ফেলে।
‘আমি মজা করছিলাম রিফাত। জানেন আজ সকালে আমার জ্ঞান ফিরেছে। মেহের আন্টি, মুন্নি সবাই আমার সাথে দেখা করতে এলো। শুধু আপনি এলেন না। দেরি করার আসার শাস্তি এটা।’

রিফাত এবার যেন একটু স্বস্তি পায়। মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
‘এমন মজা আর কখনো করিও না। তুমি জানো না মেঘলা আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোমার কিছু হয়ে গেলে,,’

মেঘলা রিফাতকে আশ্বস্ত করে।
‘এবার আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আপনার কাছে ফিরে এসেছি। আর আপনাকে ছেড়ে যাবোনা। সেদিন যেভাবে আপনি নিজের কথা না ভেবে আমাকে বাচাতে এগিয়ে আসলেন তাতেই আমি বুঝে গেছি কত ভালোবাসা আমার প্রতি আপনার।’

রিফাত ও মেঘলা আজ অনেকদিন পর এক হলো। তাদের এই মিলনে প্রকৃতিও বোধহয় খুশি হলো। তাইতো বৃষ্টি এসে ছুয়ে গেল প্রকৃতির বুকে।

৪৩.
রোদেলা মেঘলার সুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। নিজের বোনের সুস্থতার জন্য এই ক’দিন কত দোয়া করেছে। আজ অবশেষে আল্লাহ সুস্থতা দান করল মেঘলাকে। রোদেলা ছুটে এসে সোজা মেঘলার কক্ষে যায়। মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘কেমন আছিস মেঘ? কত শুকিয়ে গেছিস৷ আমি তোকে নিয়ে কত টেনশনে ছিলান জানিস? ভালো হয়েছে তুই সুস্থ হয়েছিস।’

মেঘলা রোদেলাকে দেখে খুব খুশি হয়,
‘তুই কেমন আছিস রোদ? তোকে দেখে অবশ্য ভালোই মনে হচ্ছে। স্বামীর সাথে খুব ভালো আছিস। মুবিন খুব ভালোবাসে তোকে তাইনা?’

‘মজা করছিস আমার সাথে? এতদিন পর আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হলো৷ আর তুই,,,’

মেঘলা রোদেলাকে বলে,
‘তুই যেভাবে কাদছিলি আমার তো ভয় করছিল। তাই একটু হাসানোর চেষ্টা,,’

রোদেলা মেঘলাকে জিজ্ঞেস করে,
‘ডাক্তার ম্যাডাম অনেক কিছুই শিখে গেছেন। আমার অবশ্য সুবিধাই হলো। এখন অসুখ বিসুখ হলে আমার বোন বিনা পয়সায় আমার চিকিৎসা করে দেবে।’

মেঘলা মুখ বাকিয়ে বলে,
‘ফ্রি তে চিকিৎসা আমি করব না। তুই তো আমার বোন তোর থেকে তো আরো বেশি ফি নিতে হবে। আমাকে একটু বেশি করে টাকা দিয়ে উপকার করিস।’

রোদেলা রাগী মুখ করে নেয়। মেঘলা বরাবরই বেশ চুপচাপ ছিল। প্রয়োজনের থেকে বেশি কথা বলতো না৷ হঠাৎ করে মেঘলা এত কথা বলছে যে রোদেলা রীতিমতো অবাক হয়ে যাচ্ছে।

‘আচ্ছা একটা কথা বল মেঘলা তুই কি কোমা থেকে উঠে পাগল হয়ে গেছিস? এত বেশি কথা তো তুই বলতি না।’

মেঘলা কিছু একটা লুকাচ্ছে। তার চোখ মুখ দেখেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। মনের কথা মনে লুকিয়ে রেখেই মেঘলা বলে,
‘আরে না। আমি তো এমনিই এমন করে বলছিলাম।’

‘বুঝেছি। তোর মনে রং লেগেছে। রং লাগারই কথা। রিফাত কত ভালোবাসে তোকে।’

মেঘলা মৃদু হাসে।
‘জিবনে মজা খুব কমই করেছি। সবসময় পড়াশোনার মধ্যেই ডুবে ছিলাম। এখব অন্তত তোদের সাথে মজা করে নেই। নাহলে তো আফসোস থেকে যাবে। মৃত্যুকে অনেক কাছ থেকে দেখে এসেছি। তাই জিবনের মূল্য এখন আমি বুঝতে পেরেছি।’

রিফাত আচমকা রুমে চলে আসে। মেঘলাকে আর রোদেলাকে কথা বলতে দেখে কিছুটা বিব্রত হয়।
‘মেঘলা। তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।’

রোদেলা রুম থেকে চলে যেতে চাচ্ছিল তখন রিফাত বলে,
‘তেমন জরুরি কিছু না। আসলে মেঘলা তো চট্টগ্রাম মেডিকেলে পড়ে এমনিতেই অনেকদিন ক্লাস মিস হয়েছে। এখন ওর একটু রেস্ট প্রয়োজন। ভাবছি পরের সপ্তাহে ওকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাবো। আমি ওখানে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে নিয়েছি। মেঘলা ডাক্তারি পড়াশোনা যতদিন পূরণ না হয় ততদিন ওখানেই থাকবে।’

মেঘলা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘আমার জন্য ফ্ল্যাট কেন কিনতে গেলেন? আমি তো হোস্টেলেই ভালো ছিলাম।’

‘হোস্টেলে গিয়ে তো আমি আর থাকতে পারব না। ফ্ল্যাটে হলে সপ্তাহে একদিন হলেও গিয়ে থাকতে পারব।’

রোদেলা মেঘলাকে বলে,
‘দেখেছিস তোর স্বামী তোকে কত ভালোবাসে।’

মেঘলা মাথা নামিয়ে নেয়। রিফাত বলে,
‘আরো একটা কথা। আমাদের প্রথম বিয়ে যেমন তেমন ভাবে হয়েছে। তাই চারদিন পর আমরা সত্যিকারের বিয়ে করব। রোদেলা তুমি তো এখানে মেঘলার একমাত্র আত্মীয় তাই তোমাকে সব কাজ করতে হবে। আর পারলে তোমার আব্বু আম্মুকেও আসতে বলিও।’

৪৪.
মুন্নি রিয়্যালিটি শো এর মূল মঞ্চে অংশগ্রহণ করেছে। যেখানে সে এখনো অব্দি টিকে আছে। আরিয়ানও টিকে আছে। এখন তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই প্রতিযোগিতার ফাইনাল হবে। যখন একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

এই ক’দিনে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে মুন্নি ও আরিয়ানের। মুন্নি আরিয়ানকে প্রায় সব কথাই শেয়ার করে। আরমানের প্রতি তার ফিলিংস এর কথাও শেয়ার করেছে। তবে আরিয়ানের কেন জানিনা মুন্নির মুখে আরমানের কথা শুনে একটুও ভালো লাগে না। এর কারণ সে বুঝতে পারে না। আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। রিয়্যালিটি শো অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর মুন্নি আরিয়ানকে বলে,
‘আজকে আরমানকে খুব সুন্দর লাগছিল তাই না? কত সুন্দর জাজের আসনে বসে ছিলেন। উফ আজ আবার নতুন করে ক্রাশ খেলাম।’

আরিয়ানের ভালো লাগছিল না জন্য সে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলে,
‘মেঘ,,,মানে তোমার ভাবি এখন কেমন আছে?’

‘ভাইয়ার কাছে শুনলাম ভাবির জ্ঞান ফিরেছে। ভাবছি কাল একবার দেখা করে আসব।’

‘কোমা থেকে সেরে উঠেছে ভালো খবর তো।’

‘আরো একটা ভালো খবর আছে। চারদিন পর ভাইয়া আর ভাবির বিয়ে। আগের বিয়েটা তো রোদেলা হিসেবে করেছে এবার মেঘলা হিসেবে বিয়ে করবে। আমার বন্ধু হিসেবে আমি তোমাকে বিয়ের দাওয়াত দিলাম। তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবা।’

আরিয়ানের মেঘলার বিয়ের খবরটা শুনে একটু মন খারাপ হয়। যাই হোক না কেন, মেঘলা তো তার প্রথম ভালো লাগা। আরিয়ানকে ঘোরের মধ্যে দেখে মুন্নি বলে,
‘কি যাবে তো?’

‘না আসলে সেদিন আমার জরুরি কাজ আছে। বাইরে যেতে হবে।’

মুন্নি বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে। এমন সময় আরমান খানকে দেখতে পায় মুন্নি৷ তাকে দেখেই তার দিকে ছুটে যায়। আরিয়ান বেশ জেলাস হয় ব্যাপারটা নিয়ে। নিজেকেই নিজে বলে,
‘এই মেয়েটাও না সারাদিন শুধু আরমান, আরমান আর আরমান। কিন্তু আমার এত খারাপ লাগে কেন ওকে আরমানের সাথে দেখলে?’

মুন্নি আরমানের কাছে যায়। আরমান মুন্নিকে দেখে মৃদু হাসে।
‘তুমি তো অনেক ভালো গান গাও মুন্নি। তোমার গানই এখানকার প্রতিযোগীদের মধ্যে আমার সবথেকে ভালো লাগে। গাইতে থাকো অনেক ভালো কিছু করতে পারবা।’

আরমানের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে মুন্নি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে না পেরে বলে দেয়,
‘জানেন আমি না আপনাকে অনেক পছন্দ করি।’

আরমান হাসি প্রসস্থ করে,
‘জানি তো। অনেক মেয়েই আমাকে পছন্দ করে। আমার কাছে প্রতিদিন এই নিয়ে কত মেইল আসে।’

‘আমি আসলে আপনাকে ভালোবাসি।’

আরমান এবার বেশ জোরে শব্দ করে হাসে।
‘তুমি এখনো অনেক ছোট। ভালোবাসার কি বোঝ?’

‘আমি কোথায় ছোট? অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। ১৯ বছর বয়স আমার।’

আরমান কিছু না বলে বাকা হেসে চলে যায়। মুন্নি আরমানের কথাই ভাবতে দেখে। দূরে দাড়িয়ে আরিয়ান এসব দেখছিল আর জেলাস হচ্ছিল।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨