হিমাদ্রিণী পর্ব-০৩

0
2

#হিমাদ্রিণী – ৩
লেখনীতে – আয্যাহ সূচনা

-“আপনার মনে হয়না হেমার কন্ডিশন কিছুটা আপনাদের বেখেয়ালি স্বভাবের কারণে বেশি বিগড়েছে।তাছাড়া দুইদিনের মাঝে সে আমাকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিয়েছে।আপনারা তার আপনজন।আপনাদের কেনো মেনে নিতে পারেনি,বলতে পারবেন?”

হেমা আধ ঘণ্টা হলো ঘুমিয়েছে। মাশুকও এখন বাড়ি ফিরতে চায়। কিন্তু তার মনে হলো খতিব সাহেবের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। কিছু অজানা প্রশ্ন মনের গভীরে জেগে উঠেছে। মাশুক সরাসরি খতিব সাহেবের সাথে ড্রয়িং রুমে বসলো।মাশুকের প্রশ্ন শুনে বিভ্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণ চুপ রইলেন, তারপর জিজ্ঞাসু চোখে মাশুকের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

মাশুক ফের বললো,

-“আপনারা যখন ওর আচরণে পরিবর্তন দেখতে পান তখনই আপনাদের সতর্ক হওয়ার কথা ছিলো।কেনো হলেন না?”

খতিব সাহেব এবার চোখ নামিয়ে নিলেন,গভীর অপরাধবোধে ভারাক্রান্ত। ভেতরে ভেতরে এক অদৃশ্য বোঝা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। ভুল হয়েছে, ভয়াবহ ভুল। তার নিজের গাফিলতির ফলেই হেমার জীবনে এত বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে।এতো বড় ক্ষতি হয়েছে।এ কথা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। মনের গভীরে এক শূন্যতা আর লজ্জার ছায়া ঘিরে ধরলো তাকে।যেন নিজের ভুলের ভার আর সামলাতে পারছেন না।

-“ডাক্তার আমি বেশিদূর পড়ালেখা করিনি।মানুষের যে এত এত মানসিক সমস্যা থাকতে পারে আমি জানতাম না।যখন অবস্থা পুরোপুরি অবনতি হয়ে গেলো তখন আমার হুশ ফিরে।আমি জানলে এতবড় ক্ষতি কখনোই হতে দিতাম না।”

মাশুকও দৃষ্টি নামায়।কি জবাব দেবে এমন কথার সে বুঝে উঠতে পারছে না।ভুল স্বীকার করছে,তাতে কি হেমার অবস্থার উন্নতি ঘটবে?ফরিদা বেগম বলে উঠলেন,

-“তাছাড়াও এই মেয়ে কারো কথার শুনেনা। ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় না ওকে।ওর কথার বিপরীতে গেলেই আঘাত করতে আসে।বিগত দুই তিন বছরে ওর পেছনে টাকা গেছে।একটা ডাক্তার,একটা নার্স টিকেনি।আমরা কিই বা করতে পারি?”

বাঁধ মানলো না মাশুকের মুখের শব্দেরা।বলে বসলো,

-“আপনার ভীষণ রাগ হয় হেমার প্রতি,তাই না?”

থতমত খেয়ে গেলেন ফরিদা। রসকষহীন ত্যাড়া মুখে প্রশ্নটি করে ফেলেছে।হেমার অবনতিতে ফরিদা বেগম বিশেষ রোল প্লে করেন।এটা বুঝবার বাকি নেই তার চালচলনে।মাশুক থামলো না।আবার বলে উঠলো,

-“রাগ হওয়ারই কথা। বিনা নিমন্ত্রণে কেউ এসে ঘাড়ে চেপে বসলে সেটা আসলেই বিরক্তির কারণ।আমি বুঝি”

কেমন বেফাঁস কথাবার্তা! ফরিদা বেগমের মুখ থেকে একটি শব্দও বেরুলো না।কপাল কুঁচকে স্থান ত্যাগ করলেন।খতিব সাহেব এমন আচরণে খুশি নন তার মুখ বলছে। গুরুত্ব আরোপ করলো না সেখানে মাশুক।উঠে দাঁড়ালো বের হবে বলে।যাওয়ার পূর্বে বললো,

-“নমনীয় হতে হবে হেমার সাথে।নাহয় অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে।আত্মঘাতী হতে পারে সে।যদি আপনাদের কষ্ট হয় আমি ওকে মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাবো।আরো যদি সমস্যা হয় তাহলে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।আজ আসলাম।আগামীকাল দেখা হবে।”

খতিব সাহেব ভালো করেই জানেন কেনো মাশুক এমন আচরণ করলো। এর আগেও দুইজন ডাক্তার বলেছিলেন,বাড়ির পরিবেশ হেমার জন্য উপযুক্ত নয়।হেমার জন্য কেমন ব্যবহার আর স্থান প্রয়োজন তারা বুঝে উঠতে পারছেন না।কিন্তু এখন তিনি কী করবেন? এই মেয়েকে কোথায় নেবেন?সেতো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গুরুতর আঘাত করে বসে মাঝেমধ্যে।হতাশাগ্রস্তভাবে হাঁটতে হাঁটতে তিনি ঘরের দিকে অগ্রসর হলেন। সেখানে তার স্ত্রীকে দেখতে পেলেন,হেমার কাপড়গুলো ভাঁজ করছেন সযত্নে।আজব লাগলো। স্ত্রীর পাশে এসে বসলেন তিনি।মনে এক ধরনের ভারাক্রান্ত চিন্তা নিয়ে। সংসারের চাপে ও দায়িত্বের চাপে তিনি যেন একটি বিশাল ভারের বোঝা অনুভব করছেন। যা সময়ের সাথে বাড়তে বাড়তে তার কাঁধের ওপর অমানুষিক হয়ে উঠছে।

স্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন,

-“তুমিতো আগে হেমাকে কত ভালোবাসতে?হুট করে কেনো বিরক্তি এলো?”

ফরিদা বেগম অবাক চোখে চেয়ে দেখলেন স্বামীকে।প্রশ্ন করেন,

-“হুট করে?আর তুমি কারণ জানতে চাইছো?”

খতিব সাহেব তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলেন,

-“আমি দেখেছি ফরিদা সদ্য বাবা মা হারা মেয়েকে তুমি কিভাবে বুকে জাপ্টে নিয়েছিলে।কিভাবে ওর তীব্র জ্বরে ওর জন্য রাত জেগেছো।আমি আপন চাচা হয়েও ততটুকু করিনি।ওকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছো ভালো পরিবেশ দেওয়ার।হুট করে কি হলো?যেই মেয়েকে পাঁচ বছর মাথায় করে রাখলে,হুট করে তার প্রতি বিরক্তি?”

খতিব সাহেব কথাগুলো একে একে বলছেন, কিন্তু তার স্ত্রী ফরিদা শুনতে শুনতে যেন ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। তিনি জানেন, খতিব সাহেব যা বলছেন তা সত্যি। একসময় এই বাবা-মা হারা মেয়েটির প্রতি তারও গভীর মায়া ছিলো।এক অনাথ শিশুর প্রতি মমত্ববোধ থেকে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সম্পর্কের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেল। হেমার অস্বাভাবিক আচরণ আর অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়াগুলো ক্রমশ তিক্ততা বয়ে আনতে লাগলো।ফরিদার মনের গভীরে জমে থাকা বিরক্তি ও হতাশা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

-“আমি ক্লান্ত ফাহিমের বাবা।এই দুটো হাত দিয়ে ওকে যত্ন করেছি।ফল স্বরূপ কি পেলাম?আঘাত?আমারও বয়স হচ্ছে।কত কুলায় এই দুর্বল শরীরে।আমি ওকে খাবারের কষ্ট দেই?কোনো বিষয়ে না করি? করিনাতো।”

-“ও বুঝেনা এসব। মানসিকভাবে সে ঠিক নেই।”

-“দিনদিন যে আমার মানসিক স্বাস্থ্য অবনতি হচ্ছে? ভাইজিকে বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রীকে হারাবেন। হেমা হুটহাট আঘাত করে।সেদিন আমার পিঠে ইট ছুঁড়েছে। আপনাকেওতো আঘাত করলো কিছুদিন আগে।ভুলে গেলেন?ওর অবস্থা এমন যেকোনো সময় কাউকে প্রাণঘাতী আক্রমণ করবে।ওর ভয়ে ছেলেটাকে বিদেশ পাঠালাম।তারপরও রাখছি তাকে নিজের কাছে,জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।”

হতাশা আর অসহায়ত্ব ছাড়া আর কি করার আছে খতিব সাহেবের?ভাই ভাবীর বিয়োগ।তার কাছে রেখে যাওয়া আমানতটাও ঠিকভাবে সামলাতে পারছেন না।কি করবেন?কিভাবে করবেন?

-“আমার বিশ্বাস ডাক্তার মাশুক হেমাকে সামলে নিবে।”

-“তাই যেনো হয়।আমি কারো সন্তানের ক্ষতি চাই না,আবার নিজেদেরও ক্ষতি চাই না”

____

-“আজ হুট করেই আমার কথা কেনো মনে পড়লো?ঘরকুনো মানুষ বাহিরের হাওয়া নিতে এসেছে।অবাক না হয়ে পারছি না আমি”

বন্ধুর কণ্ঠে অভিমান ঝরে পড়লো।যেন চাপা দুঃখ আর ক্ষোভ মিশে আছে প্রতিটি শব্দে। অনেকদিন পর লেকের পাড়ে পাশাপাশি বসেছে তারা।অথচ সেই পুরনো স্বাচ্ছন্দ্য আর নেই। এক সময় যে বন্ধুত্বে দিনরাত এক হয়ে যেত, আজ সেখানে সময়ের ফাঁক। অজানা বেড়াজালে হারিয়ে গেছে একসাথে কাটানো মুহূর্তগুলো। সেই নির্ভার হাসি আর গল্পগুলো। এখন শুধু নীরবতার মাঝে অতীতের সোনালি স্মৃতিগুলোও ধরা দেয় না।

মাশুক ঘাস ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো,

-“সতেজ হাওয়া আমার জন্য নয় বুঝি?”

শান্তনু বলে উঠে, -“পৃথিবীর সব জিনিস সবার জন্য না।”

-“একজন ইন্সপেক্টরের অভিমান মানায় না।তাদের থাকতে হয় রাফ এন্ড টাফ।”

ইন্সপেক্টর হয়েছে বলে কি জীবনের সমস্ত আবেগ, অনুভূতি মাটিচাপা দেবে? নাকি প্রমাণের মতো ধামাচাপা দেবে সব? এই কি তার নিয়তি? শুনেছিলো,ইঞ্জিনিয়াররা যান্ত্রিক হয়।কিন্তু ডাক্তারের মুখে এমন অনুভূতিকে অবজ্ঞা করার মতো কথা শোনা, একপ্রকার বিস্ময়কর বৈকি!

তুচ্ছ হেসে শান্তনু বললো,

-“আমি একজন আবেগ অনুভূতিসম্পন্ন স্বাভাবিক মানুষ।কিন্তু তুই বোধহয় মানসিক রোগীদের মধ্যে থেকে তাদের মতই হয়ে যাচ্ছিস।”

মাশুক ঘাড় তুলে আকাশপানে তাকায়।দুহাত পেছনে রেখে দেহের ভার ছেড়েছে।গমগমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,

-“আগে সময় ছিলো,ইচ্ছে ছিলো।এখনও সময় আছে ইচ্ছেটা মরে গেছে।”

-“কেনো?তুই কি ছ্যাঁকা খেয়েছিস?নাকি এখনো সাফার কথা মনে পড়ে?”

হুট করে সোজা হয়ে বসল মাশুক। কিছু বিষয় মনের কোণায় ভেসে উঠলো।তবে সেগুলো স্মৃতি না।স্মৃতি তো অনুভূতি জাগায়,অথচ এ বিষয়ে মাশুকের হৃদয়ে কোনো তরঙ্গ নেই। ছিলো একসময় একজন, যার সাথে জীবনযাত্রার পথ এক হয়েছিলো।কিন্তু সময়ের সাথে সেই পথ ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে। একসময়, বাধ্য হয়েই তারা নিজেদের পথ আলাদা করে নেয়।

-“সাফার সাথে আমার যা ছিলো সেটাকে আমি ডিফাইন করতে পারিনা।বন্ধুত্ব বলবো নাকি প্রেম?বলতে পারি এই দুটোর মধ্যে কিছু একটা ছিলো। প্রেমের দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করেছিলাম দুজনেই কিন্তু কোনো কানেকশন পাচ্ছিলাম না কেউই। মিচুয়াল ডিসিশনে আমরা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হই।মনে পড়বে না কেনো?যেহেতু জীবনের অতীতের খাতায় আছে।কিন্তু মনে করে কষ্ট পাই না।এটাই মুখ্য বিষয়।”

শান্তনু স্বাভাবিক স্বরে শুধায়, -“তাহলে বিষাদ কিসের?”

-“কোনো বিষাদ নেই”

-“মিথ্যে!… তুই আগে অন্তত কথা বলতি।যদিও অল্প শব্দে বলতি,কিন্তু সেই কথায় সতেজতা ছিলো।এখন সেটিও নেই।”

মাশুক তেরছা হেসে জবাব দেয়, -“যান্ত্রিক শহরে থেকে যান্ত্রিক হয়ে এসেছি।”

-“বিদেশ যাওয়ার প্ল্যানটা কার ছিলো?”

-“আমারই ছিলো”

-“তাহলে?”

আবার শুরু হয়েছে ইন্সপেক্টরের জেরা।একের পর এক প্রশ্ন করতে করতে মাথা খারাপ করবে।যা মাশুকের অপছন্দের।মাশুক গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে,

-“আমি কি কাউকে দোষারোপ করেছি নাকি?”

-“অদ্ভুত তুই”

-“একটু”

-“তা আজকাল কি করছিস?তুইতো রাতে বাহিরে থাকিস না।সকালে ডিউটি বাকি সময় বাড়িতে।আজ হঠাৎ?”

আঁধারের নীরবতায় লেকের পানি চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে।এতে মাশুকের মনে বিশেষ কোনো ঢেউ উঠেনা।এ দৃশ্য তার কাছে একেবারে স্বাভাবিক।শান্তনুর কথাগুলোও ঠিক। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রোগী দেখা তারপর কাউন্সেলিং সেশন, তারপর বাড়িতে ফেরা।একটা রুটিনে বন্দী জীবন। চাঁদের আলোয় স্নাত লেকের সৌন্দর্যও উপভোগ করার বাসনা জাগেনা।

-“নিজ থেকে মাথায় একটা আলাদা ঝামেলা নিয়েছি।যার কারণে এখন রাত নয়টা অব্দি বাহিরে থাকতে হয়।”

-“কি ঝামেলা?”

মাশুক গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেমার বিষয়ে বলতে শুরু করলো। শান্তনু মনোযোগ দিয়ে শুনছে, কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে মিটিমিটি হাসি। বন্ধুর এই করুণ অবস্থা তার কাছে হাস্যকর। মাশুক মা র খাওয়ার ঘটনাটা আর বলতে সাহস করলো না। সেটা জানলে শান্তনু নিশ্চয়ই হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি করবে।

-“বেস্ট অফ লাক পাগলের ডাক্তার।”

____

চশমার কাঁচের পেছনে থাকা মাশুকের একজোড়া চোখ নীরবে তাকিয়ে আছে হেমার শান্ত, মায়াভরা মুখের দিকে। ছোট বাচ্চাদের মতো কিছুটা উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে সে।মুখটা একদিকে কাত করা, ঠোঁট কামড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমের গভীরে। মাশুকের অন্তরে হঠাৎই এক অদ্ভুত শীতলতার প্রবাহ বয়ে গেল, যেন তার ঘুমের স্থিরতায় লুকিয়ে আছে এক অনির্বচনীয় শান্তি।এক হিম প্রবাহ,যেনো কোনো হিমাদ্রিতে তার অবস্থান।

নিজের অজান্তেই এক কোমল ইচ্ছে জাগলো মনের কোণে। পুরুষালি হাতটা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল হেমার চুলের দিকে। তার নরম চুলে হাত বুলাতে বুলাতে মাশুক এক নরম স্বরে ডেকে উঠল,

-“হেমা”

নিজের অজান্তে বাঁধাহীন হাতজোড়া নিজের ভুল বুঝতে পেরেও সরলো না।ঠাঁয় রয়ে গেলো হেমার মাথার উপর।প্রতারণা দিচ্ছে মস্তিষ্ক,

-“শরীরেতো স্পর্শ লাগেনি,শরীরে স্পর্শ বলতে বোঝায় তার ত্বকে স্পর্শ।এখানে চুলের আবরণ আছে।”

কী ভয়াবহ অদ্ভুত যুক্তি! ভুল করছে, অথচ সেই ভুলকেই যুক্তির মোড়কে সাফাই দিচ্ছে। পাল্টাপাল্টি যুক্তির এমন এক জটিল খেলায়, একদিন নিজের পায়েই বাঁধা পড়বে সে। যুক্তির ফাঁদে নিজেই আটকে যাবে।

নাছোড়বান্দার মত রইলো।হাত সরালো না।তবে গলার স্বর উঁচু করলো।হেমাকে চিয়ার আপ করতে বললো,

-“হেমা?গেট আপ! দুপুর দুইটা বাজে।তুমি ঘুমোচ্ছো কেনো? এটা ঘুমোনোর সময় না।”

মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে ‘উম’ শব্দ উচ্চারণ করলো হেমা।অর্থাৎ সে উঠতে ইচ্ছুক নয়।মাশুক হাল ছাড়লো না।পাতলা ব্ল্যাঙ্কেট এর উপর থেকেই হেমার হাত টেনে তুললো তাকে। হেমা উঠেই থম মেরে রইলো।মাশুক আবারো তার সামনে এসে বসে।মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

-“গুড নুন”

হেমা বিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইলো।চোখ খুলছে আর বন্ধ করছে।এই দুই কাজে কয়েক মিলি সেকেন্ডের সময় ব্যয়িত হচ্ছে।মাশুক বলে উঠে,

-“হেমা!”

-“উম?”

হেমার মুখের ভঙ্গি বলছে সে মাশুককে চেনার চেষ্টায়।বারবার দেখছে তাকে।মাশুক চিন্তিত হলো।বলে উঠলো,

-“আমাকে চিনতে পারছো?আমি মাশুক..তোমার নতুন বন্ধু…হেমা?”

হেমার মস্তিষ্ক যেনো সজাগ হলো। টুপ করে নিঃশ্বাস ফেলে। ফোলা মুখে বললো,

-“ওওও তুমিইইইই”

স্বস্তি পেলো মাশুক।যাক মেমোরি লসের ভয় অন্তত ঘুচলো।আবার বলে উঠে,

-“হারি আপ হেমা।তুমি নাস্তা করবে।তারপর আমরা কিছু গেমস খেলবো।”

হেমা একটি কথাও কানে তুললো না।চুপচাপ ব্ল্যাঙ্কেট তুলে মুড়িয়ে নিলো। তারপরই ঘটালো কান্ড।ধীরে এগিয়ে এসে মাশুকের প্রশস্ত পুরুষালি বুকে লুকিয়ে নেয় নিজেকে।যেনো একটি আশ্রয় পেলো। দেহ,মুখ আড়াল করে কুঁকড়ে গেলো বুকের মাঝে। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে উঠে,

“তোমার কাছ থেকে এমন একটা সুন্দর ঘ্রাণ আসে জানো।আমার না সেটা খুব খুব পছন্দ হয়েছে।আমার ভালো লাগে তোমার আশেপাশে থাকতে….তাইতো তোমায় বন্ধু বানিয়েছি।”

মাশুক স্তব্ধ। নীরবতার ভিতর দিয়ে এক শীতল তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে।বুকের দিকটা উষ্ণতায় ঘেরা।তারপরও ঠান্ডা অনুভব করছে।মূর্তির মত হয়ে গেলো মাশুক।নিঃশ্বাস আটকে নিয়েছে সাথেসাথেই।

চলবে…