হিমাদ্রিণী পর্ব-২০

0
1

#হিমাদ্রিণী – ২০
লেখনীতে – আয্যাহ সূচনা

-“ যারা একবার চলে যায়, তারা আর ফিরে আসে না, হিমাদ্রিণী। এটা মেনে নিতে হবে। বাস্তবতা যত কঠিনই হোক, নিজের জন্য লড়াই করতে হবে। এই পৃথিবীর এটাই নিয়ম। যারা তোমাকে ভালোবাসে, তাদের গুরুত্ব দাও। যারা পাশে আছে, তাদের ভালোবাসো। আজ এই সত্যটা মেনে নাও, কাল দেখবে জীবন অনেক সুন্দর লাগছে।”

খোলা আকাশের নিচে হেমা, মাশুকের অবস্থান। হেমার কোলে মাথা রেখে ছাদের ফর্সের শুয়ে আছে মাশুক। হেমার বাম হাত মাশুকের বুকে প্রশান্তির ন্যায় পরে। অন্যটি চুলে আবেশের স্পর্শ দিচ্ছে। মাশুকের বলা কথাগুলো খুব খুব কষ্ট দিলো। তার বাবা মা আর ফিরবে না? হেমার ঠোঁট কেঁপে উঠলো কিছু মুহূর্তের জন্য। বললো,

-“কিভাবে মেনে নিবো? তুমি আমাকে শিখাবে? আমি যে মা বাবাকে ভালোবাসি।”

-“শেখাচ্ছি-তো! অনেক ভালোবাসবো তোমায়। অশ্রুজল স্পর্শ করতে দিবো না তোমার চোখে। তখন শিখে যাবে নিজে থেকেই।”

হেমা একবার আকাশপানে চেয়ে মিটিমিটি তারাদের দেখলো। তারপর চাঁদটিকে। এরপর চোখ এসে থামলো মাশুকের পুরুষালি সুদর্শন মুখমণ্ডলে। ওর দিকে চেয়ে বললো,

-“জানো চাঁদ অনেক সুন্দর। আমার ভালো লাগে। আগে ভালো লাগতো না।”

মাশুক কিছুটা হেমার নকল করে জবাব দেয়,

-“জানো প্রেমিক প্রেমিকারা একে অপরকে চাঁদের সাথে তুলনা করে। আমিও কি করবো? বাজে শোনাবে নাতো?”

হেমা অবুঝ স্বরে শুধায়,

-“প্রেমিক প্রেমিকা? এরা আবার কারা?”

মাশুক শীতল স্বরে বলে, -“আমরা”

হঠাৎ করেই হেমার মুখে নেমে এলো নিস্তব্ধতা। তার কোলে শুয়ে থাকা মাশুক যেনো প্রিয় পুরুষ রূপে ধরা দিলো। চঞ্চল চিত্তে অজানা আতঙ্কের অংক কষতে বসলো হেমা। অতীতে ফিরে গিয়ে, বাবার-মায়ের মৃ ত্যু দৃশ্য কল্পনা করতে।কল্পনায় দেখছে লোকগুলোর মুখে পৈশাচিক হিংস্রতা।তার শ্বাস যেনো ভারী হয়ে এলো, অথচ আজ অদ্ভুতভাবে সে অস্থির হলো না।

মাশুকের বুকে রাখা হাত তার হাতেই মিশে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ হলো। চোখ খুলে স্নিগ্ধ, প্রশান্ত মাশুকের মুখ দেখে ভয় কেটে গেলো মুহূর্তেই। হেমার অন্তর শীতল হয়ে শান্তির স্রোতে ভেসে গেলো।

-“সবাই খারাপ হয় না, তাই না? আমি চোখ বন্ধ করে ভয় পাচ্ছিলাম। যেই চোখ খুলে তোমাকে দেখলাম,আমার ভালো লাগছে মাশুক।”

-“ তোমার অনুভূতি দিনদিন প্রখর হচ্ছে।”

-“জানো তোমার ভাবি যখন বললো তুমি খারাপ আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। তোমার কাছে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। প্রতিদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখতাম, আমার খারাপ লাগতো। এভাবে আমার খারাপ লাগে।তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরলে আমার ভালো লাগে। এটা কি ভালোবাসা?”

বিনা বিরতিতে বলে থামলো হেমা। প্রশ্ন করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মাশুক জবাব দেয়,

-“হ্যাঁ, হিমাদ্রিণীর পবিত্র ভালোবাসা।যার মাঝে এক বিন্দু পরিমাণ কোনো ভেজাল নেই। পুরোটাই স্বচ্ছ। তোমার হৃদয়ের মত।”

-“এই ভালোবাসা সবসময় থাকবে?”

-“তুমি চাইলে থাকবে।”

-“যদি বাবা মায়ের মতো চলে যায়?”

-“ভালোবাসা হারায় সত্য, ফিরিয়ে আনাও সম্ভব।”

হেমা হাসলো হুট করেই। এই হাসির অর্থ বুঝেনি মাশুক। হেমার পাশে থাকা গোলাপ গাছ থেকে একটি সাদা গোলাপ নিয়ে মাশুকের বুক পকেটে রাখলো।

বললো, – “চাঁদ, ফুল আর তোমাকে একসাথে সুন্দর লাগছে।”

______

মাশুকের হৃদয়ে যেনো বয়ে চলে অদ্ভুত অনুভূতির স্রোত। নিজেকে ভাগ্যবান বলেই ভাবে সে। প্রেম, ভালোবাসা, মোহের মায়া আর চিকিৎসা সবকিছুই একসাথে। অবুঝ প্রিয়তমকে বোঝানোর তাড়না কখনও নিস্তব্ধ, কখনও প্রবল। এই বৈচিত্র্যময় সমীকরণে জীবন তার আপন ছন্দে দুলছে। তবুও, তবুও শান্তি আছে। সুখের এই সুরটি হৃদয়ের প্রতিটি কোণ ছুঁয়ে দিচ্ছে।

ভোর ছয়টায় ঘুম ভাঙলো মাশুকের। হাতড়ে দেখলো পাশে,প্রতিদিনকার মত। প্রতিদিন এই হাতের স্পর্শ হেমার দেহে পড়ে।আজ হলো ভিন্ন কিছু। বিছানার সাদা চাদরে হাত পড়তেই সম্পূর্ণ সজাগ হলো মাশুক। হেমা পাশে নেই। আতঙ্কে এক লাফে উঠে গিয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে। এদিক ওদিক তড়িঘড়ি করে ঘুরে তাকালো। কোথাও নেই মেয়েটি। বিচলিত পা জোড়া এসে থামে ঘরের সদর দরজায়। সেখান হতে দেখা যাচ্ছে জলপাই রঙের বস্ত্র পরিহিত মানবীনি এক নারীর দৃশ্য। হাস, মুরগির মাঝে সে একমাত্র মানবী। তাকে ছাড়া আর একজন আছেন।কেয়ার টেকার চাচা। তাকে দেখার ফুরসত মিললো না। কদম এগোলো হেমার দিকে। মাশুককে আসতে দেখে চাচা বললেন,

-“আমি ছিলাম বউমায়ের সাথে। আপনি ভয় পাইছেন?”

মাশুক স্মিত হেসে বললো, -“ একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।”

-“না কোনো সমস্যা নাই,আমি ছিলাম। আমি যাই নাস্তার ব্যবস্থা করি।”

-“আচ্ছা চাচা।”

মাশুকের ঘুম ঘুম চোখে তাকালো হেমা। এক পলক তাকিয়ে হেসে ফেলে। এরপর আবার ছোট ছোট মুরগির বাচ্চাগুলোকে কোলে নিয়ে আদর দিতে শুরু করলো। মাশুক কোমরে দুহাত রেখে বললো,

-“আমাকে ডাকোনি কেনো?”

-“তুমি আমাকে আসতে দিতে না।”

-“দিতাম”

-“উফ!”

হুট করে বিরক্ত হয়ে যাওয়ার কোনো অর্থ খুঁজে পেলো না মাশুক। হয়তো সে ব্যস্ত। ছোটছোট মুরগি ছানাদের নিয়ে। মাশুক হতাশ গলায় বললো,

-“ নিজের বাচ্চাকে আদর করার বয়সে তুমি মুরগির বাচ্চাকে আদর করছো।ভেরি ডিসাপোয়েন্টিং!”

হেমা মাশুকের দিকে দৃষ্টি তুলে বিস্মিত সুরে শুধায়,

-“কার বাচ্চা?”

-“আমার”

-“তোমার বাচ্চা আছে মাশরুম?” হেমা প্রশ্ন করলো।

মাশুক হাঁটু ভাঁজ করে বসে। হেমার দিকে চেয়ে বলে,

-“আমার বিষয়টা আরো ডিসাপোয়েন্টিং। ছোট বাচ্চা পালার বয়সে তোমার মত বড় বাচ্চাকে পালতে হচ্ছে।”

হেমার মাঝে সবকথা গুলিয়ে এলো। তালগোল পাকাচ্ছে। আশ্চর্য সে ভীষণ। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,

-“তোমার বাচ্চা,আমার বাচ্চা, বড় বাচ্চা, মুরগির বাচ্চা! কার কে বাচ্চা? কি বলছো কি? সহজ করে বলো মাশরুমের বাচ্চা!”

-“রাইট! মাশরুমের বাচ্চা। সে এখনও আসেনি পৃথিবীতে। আসবে কিনা সেটা নিয়েও ঘোর সন্দেহ।”

হেমা ঘাড় বাঁকা করে ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

-“আসবে না?”

-“তুমি আসতে দিবে?”

-“হ্যাঁ দিবো।”

মাশুক হাসি সংবরণ করে রেখেছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে প্রশ্ন করলো,

-“কিভাবে আসবে শুনি?”

হেমা এক্ষেত্রে প্রখর বুদ্ধিমত্তা খাটালো। মুরগির ছানাদের দিকে চেয়ে বললো,

-“ওরা কোথা থেকে এসেছে?”

মাশুক দুষ্টুমির সুরে জবাব দেয়,

-“আকাশ থেকে।”

-“তোমার বাচ্চাকেও বলো আকাশ থেকে আসতে।”

মাশুক সশব্দে হেসে উঠে। এখানেই বারবার মন বিগলিত হয় হেমার। নিজের অজান্তেই। হাঁটুর উপর হাত রেখে ক্ষুদ্র নয়ন,সাথে প্রাণখোলা হাসি। দৃষ্টি আটকে রাখলো হেমার।মাশুক হাসি থামিয়ে জবাব দেয়,

-“তাছাড়া আর কোনো উপায়ও দেখছি না।”

মাশুক চারপাশে নজর বুলিয়ে নিশ্চিত হলো, আশেপাশে কেউ নেই। ধীরে প্যান্টের ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো। হেমার কোলে থাকা মুরগির বাচ্চাগুলো বেশিক্ষণ থাকেনি; মায়ের পেছনে দৌড়ে চলে গেছে। হেমার মুখে অসন্তুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। মাশুক সেই সুযোগে হঠাৎই তাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আগেই তাই আশেপাশে দেখেছিলো এই উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য।

আবেগের গভীরে যখন ডুব দিতে যাচ্ছিলো, তখনই হেমা বলে উঠলো,

-“ছাড়ো! তুমি এখন খুব বেশি ঘেষাঘেষি করো।”

মাশুক ছাড়লো না; বরং তাকে শূন্যে তুলে নিলো। হেমার পা মাটি থেকে উঠে গেলো। মাশুক হাসি মিশ্রিত কণ্ঠে বললো,

-“প্রতিদিন নিয়ম করে তোমাকে জড়িয়ে ধরবো, যতবার ইচ্ছে ততবার। এতে আমাদের দুই হৃদয়ের মধ্যে আরও গভীর বন্ধন তৈরি হবে। জানো,এই আলিঙ্গন উদ্বেগ কমায়? এটা তোমার চিকিৎসার অংশ আর আমার শান্তির উৎস”

হেমা না বুঝেই বললো, -“হুহ!”

মাশুক মুখ তুলে তাকায়। হেমার নাকে নাক ঘষে দিয়ে বললো,

-“পুরুষ মানুষ মাঝেমাঝেই লোভী হয়ে যায়। প্রিয়তমার কাছে ঘেঁষে থাকার বাহানা খোঁজে।আর এই লোভে পাপ হয়না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে লোভ দেখিয়ে বিশেষ কোনো লাভ হবেনা। সঠিক সুযোগ আর সময়ের অপেক্ষায় আছি।…. জানি কিছুই বুঝবে না,তারপরও বললাম। বুঝলে হয়তো লজ্জা পেতে।”

-“লজ্জা পাবো?”

মাশুক হেমার গালে হাত বুলিয়ে বললো,

-“পেতে পারো। আর আমি সেই লজ্জামাখা মুখ দেখতে ব্যাকুল।”

শান্তনুর সঙ্গে খাবার টেবিলে বসেই মাশুক ফোনে আলাপ চালাচ্ছে। জব্বার সাহেব এবং ফরিদা বেগমের কেস অবশেষে ফাইলবদ্ধ হয়েছে।এতদিন ধরে যে কেস ছিলো নানা জটিলতায় জড়ানো এক অমীমাংসিত অধ্যায়।এখন সেটি নতুন করে একটি খোলা কেস হিসেবে সামনে এসেছে।দুজন অপরাধীর আর পালাবার পথ নেই।অন্যায়,অবিচার আর হত্যা সবটার বিচার অত্যাবশ্যকীয়।

মাশুকের কণ্ঠে দৃঢ়তা, -“ওদের প্রাপ্য শাস্তি যেনো এক বিন্দুও কম না হয়, শান্ত! ওদের কথা ভাবলে আমার আজও হেমার বাবা মায়ের সেই করুন দৃশ্য মনে পড়ে। হেমার নাজেহাল অবস্থা মনে পড়ে।একচুলও যেন রেহাই না পায় তারা।”

ফোন কেটে নিজেকে শান্ত করলো মাশুক। অবশিষ্ট রুটির অংশটুকু হেমার মুখে তুলে দেয়। হেমা এত সময় মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। প্রশ্ন করলো নরম সুরে,

-“কি হয়েছে?”

মাশুক হেমার দিকে চেয়ে বলে,

-“তোমার বাবা মাকে যারা আঘাত করেছে,যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে হেমা।”

হেমার মধ্যে বিমূঢ়তা দেখা গেলো। নেত্র বিশাল গোলাকৃতি ধারণ করে। জানতে চায়,

-“ ওই খারাপ লোকগুলো?”

-“ ওই খারাপ লোকগুলো আর তোমার চাচী। তোমার চাচী তোমার বাবা মায়ের অপরাধী হেমা,তোমার অপরাধী।”

হেমার মস্তিষ্কে অনেকদিন পর একটি প্রশ্ন এসে ধরা দিলো। অদ্ভুতভাবে প্রশ্ন করলো,

-“আমার চাচ্চু কোথায়?”

যে ভয় ছিলো সেটাই হলো। মাশুক বরাবরই খতিব সাহেবের বিষয়টা এড়িয়ে যেতো হেমার কাছ থেকে। এক বিশাল ধাক্কা তাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। আর নয়। এর জবাবে কি বলবে?

নীরব মাশুকের বাহুকে ধাক্কা দিয়ে হেমা প্রশ্ন করলো,

-“বলো না?”

মাশুক মুখ শক্ত করে সরাসরি জবাব দিলো,

-“তোমার চাচ্চু-ও তোমার বাবা মায়ের কাছে।”

হেমার ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁকা হয়ে গেলো। তৎক্ষণাৎ অর্থ বুঝতে সক্ষম এবার সে। অর্থাৎ তার শেষ ছায়াটুকু যে ছিলো সেও নেই। মাশুক হেমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

-“খবরদার কান্না করবে না। গতকাল বুঝিয়েছি কিন্তু হেমা। নিজেকে স্ট্রং বানাও। হুটহাট কান্না করে দুর্বল মানুষেরা।”

তারপরও হেমার ঠোঁট উল্টে আসে। এতদিন হয়তো বুঝতেই পারেনি। চোখের সামনে স্মৃতিচারণ ঘটে। সেদিন ঘুমন্ত খতিব সাহেবের মাথায় হাত বুলিয়ে এসেছে। সেতো চির নিদ্রায় শায়িত ছিলো। সেটিই শেষ দেখা। আর কখনও মনে করার সময়টুকু হয়নি?

মাশুক ম্লান কণ্ঠে ডাকে, -“হেমা….”

-“সবাই কেনো চলে যায় আমাকে ছেড়ে?”

যেনো কোনো সুস্থ স্বাভাবিক নারী নিজের মনের হাল ব্যক্ত করছে। মাশুক কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো। এই প্রশ্নের মাঝে কিছু একটা ছিলো। মনে হলো পৃথিবীর সমস্ত আবেগ মিশ্রিত এখানে। মনেই হলো না একবারের জন্য হেমার মানসিক অবস্থায় ত্রুটি আছে।

মাশুক জবাবে বলে, -“আমি যথেষ্ট নই?”

হেমা জবাব দেয়,

– “তুমি আমার সাথে থাকো বলেইতো আমার এখন আর কান্না পায় না। ভয় হয়না আমার।”

হেমার কোমল হাতে নিজের হাত রেখে মাশুক বললো,

-“তুমি যা হারিয়েছো,সেই শূন্যস্থান পূরণ করার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু নিজের অবস্থান তোমার জীবনে দৃঢ় করার সামর্থ্য আছে।”

-“জানো আমি কি ভেবেছি? আর পাগলামো করবো না,তোমাকে কষ্ট দিবো না, শুধু তোমার কথা শুনবো।আর নতুন মায়ের কথা আর….”

-“আর?”

-“সবাই আমাকে পাগল বলে। আমাকে সুস্থ করে দাও না। আমি তোমাদের কথা কেনো বুঝি না? তোমরা কি সুন্দর করে কথা বলো,আমি কেনো পারি না? আমাকে তোমাদের মত বানাও। প্লীজ! আমাকে কেউ যেনো পাগল না বলে”

চোখ টলমল করছে হেমার। নিজের সম্বন্ধে কঠিন বাস্তবতা মানতে চাইছে। উন্নতি অনেকখানি হয়েছে তার। নিজে থেকেই চাইছে স্বাভাবিক হতে। কথাবার্তা শিশুসুলভ হলেও মস্তিষ্কের পুনঃবিকাশ ঘটছে।

-“ কখনো কখনো চাই তুমি আমাদের মতই স্বাভাবিক হয়ে ওঠো, আবার কখনো কখনো ভয় হয়। তখন যদি তোমার স্বচ্ছতা,তোমার সরলতা,তোমার পবিত্রতা হারিয়ে বসে? আজকের পৃথিবীতে এসবের অভাব দেখা দিচ্ছে হেমা। সেখানে তুমি আমার কাছে অমূল্য রত্ন। যার মাঝে এক বিন্দু পরিমাণ ভনিতা নেই।”

চলবে….