#হীরকচূর্ণ_ভালোবাসা
#পর্ব২০
#রাউফুন
মাইজিন নিজের মতো করে সবটা সামলানোর চেষ্টা করছে। কোনো ভাবেই তুলিকাকে মানাতে পারছে না। রান্না ঘরে কাজের জন্য সাহায্য করতে যাচ্ছে তো রান্না ঘর থেকেই বেরিয়ে যাচ্ছে সে। রাতে মিষ্টির কাছেই শুয়ে পরছে। প্রয়োজন ব্যতীত কোনো রকম কথা বলছে না মাইজিনের সঙ্গে। এতোদিন পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেছে তাদের সম্পর্কটা ঠিক করতে। কিন্তু যতদিন ঠিক করতে গেছে সম্পর্কটা আরও অবনতির দিকে গেছে। মাইজিন নিজের ভুলের জন্য মুহুর্তে মুহুর্তে দগ্ধ হচ্ছে। কিন্তু ভুল যেহেতু করেছে শাস্তি তার প্রাপ্য। তাও ভালো তুলিকা তো তাকে ছেড়ে যায়নি। তুলিকা তার চোখের সামনে আছে এটাই বা কম কি!
মিষ্টিও বুঝতে পারছে তার বুবুজান আর মাইজিনের সম্পর্কটা ঠিক নেই। ওঁদের মধ্যে ঝামেলা লেগেই আছে। কিন্তু এখানে তার কিছু করার আছে বলে মনে হচ্ছে না। ওঁদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কথা বলতে সংকোচ করে মিষ্টির। কদিন আগে ক্লাস নাইনে ভর্তি হয়ে নতুন বই এনেছে সে। নতুন বইয়ের গন্ধে মিষ্টি যেনো পড়ার জন্য আরও আগ্রহ পাই। সে মনে করে ক্লাস নাইন-টেন লাইফের সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট। বয়সের তুলনায় বেশ ম্যাচিউর হয়ে গেছে সে।
আজ শুক্রবার বন্ধের দিন। তুলিকা মাইজিনের সব জামা কাপড়, মিষ্টির আর তার জামা কাপড়, দুটো বিছানার চাঁদর, বালিশের কাভার গুলো, জানালার পর্দা, পাপস, সবকিছু সবগুলো কাপড় ভিজিয়েছে। সবকিছু ভিজতে দিয়ে সকালের রান্না করে ফেললো সে। মাইজিন নিচে গেছে নাফিসের কাছে। ওখান থেকে সোজা বাজারে গেছে। তুলিকা ততক্ষণে মিষ্টিকে শুধু জানালার গ্রিল পরিষ্কার করার জন্য বললো। একটা কাপড় ভিজিয়ে মিষ্টি গ্রিল পরিষ্কার কাজে লেগে পরলো।
সকালের রান্না হতেই তুলিকা আগে সব কিছু ধোঁয়ার জন্য গেলো। মাইজিন সেই মুহুর্তে বাজার করে ফিরলো। হাতে অনেক রকমের সবজি। এসে বিছানায় চাঁদর না দেখে বললো, ‘তুলিকা বিছানার চাদর কই?’
‘ভিজিয়েছি! আমি অন্যটা বিছিয়ে দিচ্ছি একটু পর!’
‘সমস্যা নেই আমি করে নিচ্ছি!’
‘আপনার করা লাগবে না আমিই করছি!’
তুলিকা এসে বিছানার চাদর বিছিয়ে দিলো। মাইজিন বাজার গুলো রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে ডালা সাজাতে লাগলো। তুলিকা এসে মাইজিনকে বাঁধা দিয়ে বললো, ‘কিচ্ছু করবেন না আপনি! আমার কাজ কি এতোটাই খারাপ হয় যে আপনি করেন? নাকি আমার কাজই পছন্দ হয় না আপনার?’
‘আরে আপনি বিছানার চাদর বিছিয়ে দিচ্ছিলেন তাই আমি বাজার গুলো ডালাই রাখছিলাম। এমন করেন কেন আপনি?’
‘রাখুন এসব।’
মাইজিন বাজারের থলেটা কিছু রেগেই রাখলো। এরপর দপদপ করে পা ফেলে পাশের রুমে গেলো।গিয়ে দেখলো মিষ্টি গ্রিল ক্লিন করছে। হুট করেই মেয়েটা তার চোখের সামনেই এতোটা লম্বা কি করে হলো? মিষ্টির হাইট এতোটা দেখে মাইজিন একটু অবাকই হয়েছে। এতোদিন সে খেয়াল করেনি কিন্তু আজকে যেনো বেশিই লম্বা লাগছে মিষ্টিকে। সে আদুরে ভঙ্গিতে বলে, ‘আরে মিষ্টি বেহনা। আমাকে দাও আমি গ্রিল পরিষ্কার করছি!’
‘আপনি যান। আমি করছি!’
‘আরে তোমার কষ্ট করার কি দরকার? আমি করি না!’
‘না ভাইয়া। বুবুজান দেখলে আমাকে বকবে!’
‘তোমার বুবুজান দেখবে না।’
‘নাহ দিতে পারছি না।’
‘বোনের মতোই জেদি হয়েছো। আমার একা একা ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে আমি অন্য প্লানেটের মানুষ! এখানে ধপ করে উড়ে এসে টপ করে পরেছি। তোমরা কাজ করবে আর আমি হা করে দেখবো?’
‘সমস্যা কোথায়? দেখতে না চাইলে না দেখুন!’
‘ হ্যাঁ আমাকে তো অমানুষ, বর্বর, জানুয়ার মনে হয় তোমাদের দুই বোনের!’
‘কাজ করতে হবে না আপনি বরং আমার সঙ্গে গল্প করুন ভাইয়া।’
মাইজিন গল্প করতেই চাচ্ছিলো কিন্তু সে সময় ধুপধাপ আওয়াজ এলো। সে দৌঁড়ে এলো। দেখলো তুলিকা কোমড়ে ওড়না পেঁচিয়ে চাদর ধুচ্ছে। মাইজিন তার কাজে সাহায্য করতে চাইলো। কিন্তু মাইজিন কে দেখেই তুলিকা ওয়াশরুমের দরজা আটকে দিলো।
‘আরে তুলিকা আপনি এমন কেন করছেন? আমাকে এভাবে আপনি দূরে ঠেলে দিতে পারেন না।’
তুলিকা আপন মনে নিজের কাজ করাই ব্যস্ত। সকল কাপড় ধোয়া শেষ হলে বালতিতে ভরে নিলো। উঠে দাঁড়ালে সে বুঝলো তার মাথাটা ঘুরছে। সকালে খাওয়া হয়নি তার মনে পরলো। এমন কি সে রাতেও খাইনি। মাইজিন অনেক জোর করেছে খাওয়ার জন্য কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তুলিকা নিজের মাথা ঘুরাটা তোয়াক্কা না করে বালতি ভর্তি সকল কাপড় নিয়ে ছাদের দিকে রওনা হলো। ততক্ষণে মিষ্টির গ্রিল পরিষ্কার করা হয়ে গেছে। তাই মিষ্টিও গেলো। মাইজিনকে দেখতে পেলো না কোথাও৷ বারোটা বেজে গেছে এর মধ্যেই। ছাদের সকল কাপড় দুই বোন শুকাতে দিয়ে নিচে এলো। তুলিকা ভেতরে এসে ঘর মুছে নিলো। মাইজিন গোসল সেরে নামাজের জন্য তৈরি হয়ে সবে মাত্র বেরিয়েছে। হন্তদন্ত হয়ে কিছু খুঁজছে সে।
‘কি খুঁজছেন?’
‘আমার কাপড়-চোপড় কই?’
‘ধোঁয়া হয়েছে শুকাতে দিয়েছি।’
‘একটাও কাপড় রাখেননি এখন আমি কি পরবো?’
‘আমি কি জানি!’
মাইজিন কিছু না বলে দুই গালে হাত দিয়ে বিছানা বসে পরলো। আজকে বোধহয় নামাজে যাওয়া হবে না।
‘এই নিন লুঙ্গি! আর গেঞ্জিও আছে।’
‘লুঙ্গি?’
‘ হ্যাঁ এটা আমি সেদিন কিনেছিলাম!’
‘কার জন্য?’ শুধালো মাইজিন।
তুলিকা মিনমিন করে বলে, ‘আপনার জন্য!’
‘আমার জন্য লুঙ্গি?’
‘হ্যাঁ। সব সময় তো দেখি ট্রাউজার পরেন। তাই দুটো লুঙ্গি কিনে এনেছি। আর ম্যাচিং করে দুটো গেঞ্জিও নিয়েছি। এগুলো পরে নামাজে যান।’
‘আমি জীবনেও লুঙ্গি পরিনি। কিভাবে পরবো!’
‘কোমড়ে গলিয়ে কুচি করে পেঁচিয়ে নিন!’
‘মহা মুশকিল তো। আপনি আমার সব কাপড় ধোঁয়ার জন্য কেন নিলেন!’
‘আচ্ছা আর ধুঁয়ে দিবো না!’ বলেই সে ওই রুমে চলে গেলো।
মাইজিন অসহায় মুখ করে লুঙ্গি আর গেঞ্জি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একটা আন্ডারওয়্যার ও বাকি রাখেনি। সব ধুয়েমুছে সাফ করে দিসে এই মাইয়া। হতাশ হয়ে কোনো রকমে লুঙ্গি পেঁচিয়ে নিলো। টুপি মাথায় দিয়ে নিচে যেতেই নাফিস বললো,
‘কি রে এতো দেরি কেন?’
‘এমনি!’
হঠাৎই মাইজিনকে দেখে নাফিস হো হো করে স্বশব্দে হেসে উঠলো। মাইজিন মুখ বন্ধ করে কোণা চোখে চেয়ে রইলো।
‘সা*লা তুই এটা কি পরছিস?’
‘কি আবার চোখে দেখিস না?’
‘এটাকে কি লুঙ্গি পরা বলে? পরতে পারিস না পরেছিস কেন?’
‘আমি কি সাধে পরেছি! তোর ভাবি দিয়েছে পরার জন্য!’
‘তাই বলে তোর পরা লাগবে।’
‘উপায় ও নেই৷ আমার জামা কাপড় সব ধুয়ে দিয়েছে।’
নাফিস কতক্ষন হেসে মাইজিন কে ঠিক ভাবে লুঙ্গি পরিয়ে দিলো। যেতে যেতে নাফিস বারান্দায় তাকাতেই দেখলো মিষ্টি চুল শুকাচ্ছে। ওর লম্বা চুল আর এক সাইডের ফেস দেখে নাফিসের মনে কেমন যেনো ধড়াস করে উঠলো। মাইজিন খেয়াল করার আগেই নাফিস চোখ সরিয়ে নিলো। মনে মনে বললো, ‘ তওবা তওবা। মিষ্টি একটা বাচ্চা মেয়ে। নাফিস তোর নজর ভালো কর। শেষ মেষ একটা বাচ্চার দিকে নজর দিচ্ছিস। ছিঃ ছিঃ!’
নামাজ থেকে ফিরে দেখলো খাবার টেবিলে খাবার সাজানোই আছে। মাইজিন তুলিকাকে ডাকলো। সে এসে মাইজিনের প্লেটে খাবার দিলো। মাইজিন শ্লথ কন্ঠে বললো,
‘মিষ্টি কই? বসে পরুন এক সাথে খাবো!’
‘আপনি খেয়ে নিন আমার ভালো লাগছে না। কেমন বমি বমি পাচ্ছে।’
‘কি বলছেন এসব?’
‘কিছু না।’
মাইজিন আর খেতে পারলো না তুলিকার খারাপ লাগছে শুনে। তুলিকা হেঁটে যাচ্ছিলো সে-সময় মাথা ঘুরে ফ্লোরে পরে গেলো। মাইজিন দেখে ধরতে চেয়েও পারলো না। মিষ্টিও শব্দ পেয়ে যাবেন এসেছে।
‘বুবুজানের কি হয়েছে?’
‘জানি না মিষ্টি। তোমার বুবু বললো তার নাকি খারাপ লাগছে। বলতে না বলতেই অজ্ঞান হয়ে গেলো!’
মিষ্টি শব্দ করে কাঁন্না করে দিলো। মাইজিন জলদি পানি এনে চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলো। কিন্তু কাজ হলো না। বাধ্য হয়ে মাইজিন দ্রুত হসপিটালে নিয়ে গেলো তাকে। এদিকে মিষ্টির কাঁন্না থামছেনা। নাফিস হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে এলো। বললো,
‘কিরে ভাবির কি হয়েছে?’
‘জানি না রে ভাই। হুট করেই বললো মাথা ঘুরছে, বমি বমি পাচ্ছে! তারপর হাঁটতেই অজ্ঞান হয়ে পরে গেছে।’
নাফিস কিছু একটা ভেবে ঠোঁট চেপে হাসলো। বললো, ‘আরে বন্ধু আমাকে বলিস ভাবির সঙ্গে ঝগড়াঝাটি চলছে। আর এখন কি শুনি? তলে তলে দেখি আসল কাজ করে বসে আছিস!’
‘তুই কি মীন করছিস? আমি চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি এদিকে তোর ইয়ার্কি!’
‘মিষ্টির ব্যবস্থা কর। আর একদম চিন্তা করিস না।’ নাফিস বাচ্চা কোলে নেওয়ার মতো করে দুই নাচালো।
কটমট করে চাইলো মাইজিন। সে কখন করলো? এরকম টা হওয়ার সম্ভাবনায় নেই। অসম্ভব ব্যাপার স্যাপার বলছে নাফিস।
‘এসব কি হচ্ছে? আমার বুবুজান অসুস্থ আর আপনি হাসছেন? অসভ্য লোক!’
নাফিস মিষ্টির কথায় তার দিকে তাকালো। কেঁদে কে’টে একশাঁ মেয়েটা। নাকটা লাল হয়ে গেছে কাঁন্নার ফলে। নাফিস কোনো কথা না বলে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো মিষ্টির দিকে। পরক্ষণেই নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
‘নাফিস কন্ট্রোল,কন্ট্রোল। এমন বাচ্চা মেয়ের দিকে কেন নজর দিচ্ছিস?’
ডক্টর বেরিয়ে এলেন। মাইজিন তাকে দেখতেই ছুটে গেলো।
‘চিন্তা করবেন না আপনার ওয়াইফ সুস্থ আছেন এখন। উনার কিছু ম্যাডিক্যাল টেস্ট করতে হবে। এরপর উনাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন।’
‘ওর কি হয়েছে ডক্টর?’
‘দেখুন আমার মনে হচ্ছে উনি অনাহারে আছেন প্রায় চব্বিশ ঘণ্টার মতো। উনার খেয়াল রাখবেন এরপর থেকে খুব ভালো ভাবে। উনার রিপোর্ট গুলো কালকে এসে নিয়ে যাবেন।’
‘ওকে! থ্যাংক ইউ ডক্টর।’
মাইজিন তুলিকাকে নিয়ে বাড়ি এলো। আর নাফিস ফাঁকে ফাঁকে মিষ্টিকে দেখে যাচ্ছিলো না চাইতেও। কি করবে এখন সে? সে কি শেষ পর্যন্ত এই বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরলো!
#চলবে
#হীরকচূর্ণ_ভালোবাসা
#পর্ব২১
#রাউফুন
হাতের রিপোর্ট দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তুলিকা। কি করে সম্ভব? সে কিভাবে প্রেগন্যান্ট হতে পারে? সে এখনো বিবাহিত হয়েও পিওর ভা*র্জিন! মাইজিনের আরও খারাপ অবস্থা। তুলিকা প্রেগন্যান্ট এটার জন্য নয়। তুলিকার ভয়াবহ তীর্যক দৃষ্টি আর কথার তীব্র ঝাপটা দেখে। কি থেকে কি হলো বুঝতে পারছে না কিছুতেই। সে তো তুলিকাকে স্পর্শ করেনি৷ তবে তার বউ এমন রাতারাতি মা হতে চলেছে এটার মা’রপ্যাচ বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে তার।
‘এই তুলিকা আপনি আমার ঘুমের এডভান্টেজ নিয়ে আমার মতো অবলা পুরুষের সঙ্গে কিছু করেন নি তো? যার ফলস্বরূপ এই বাচ্চা এসেছে।’
কথার যথার্থ অর্থ ধরতে পেরে রোষানল দৃষ্টিতে তাকালো তুলিকা। রগরগে গলায় বললো,
‘তুই কথা বলবি না। সেইম কথাটা আমারও। তুই আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে বাচ্চা দিয়ে দিছস!’.
তুলিকার রাগান্বিত আর তুই তুকারি করায় ভড়কে যায় মাইজিন। মিনমিনিয়ে বলে, ‘তাইলে কি আপনি বুঝতেন না? না মানে আমি যদি ওরকম কিছু করতাম তাহলে। আচ্ছা আপনার হঠাৎ টেস্ট কেন করতে হলো?’
‘তোকে এখন বিশ্বাস নাই। আমার মাথা ঘুরছিলো, বমি পাচ্ছিলো। শুনেছি মাথা ঘুরলে, বমি পেলে মানুষ পোয়াতি হয় তাই টেস্ট করেছি! সেদিন জ্বরের ঘোরে কি সব আবোলতাবোল বলছস তা জানোস!’
‘আচ্ছা আমি কি জ্বরের ঘোরে কিছু করেছিলাম সেদিন?’
‘জানি না আমি!’ ঝামটা মে’রে বলে তুলিকা। মাইজিন দমে যায়। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ওমন শান্তশিষ্ট, নিপাট ভদ্র মেয়ের এমন ভয়াবহ রূপ দেখে।
মিষ্টি ওঁদের ঝগড়ার মধ্যে এক অবলা বাচ্চা। একবার মাইজিন তো একবার তুলিকাকে দেখছে। সে সাহস সঞ্চার রিনরিনে কন্ঠে বললো, ‘বুবুজান তুমি ভাইয়ার সঙ্গে এমন করছো কেন? কত ভালো একটা খবর। আমি খালামনি হবো খুশি না হয়ে রাগ করছো!’
‘ ভালো খবর না? ভালো খবর তোর পকেটে রাখ।’
‘বুবুজান আর রাগ করো না তো।’
‘রাগ করবো না তো কি বসে বসে নাচবো? তোর লু*চ্চা দুলাভাই আমার সর্বনাশ করবে আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো? আমি এখান থেকে চলে যাবো বলছিলাম না? তাই এই ব্যবস্থা করেছে যাতে আমি যেতে না পারি।’
‘আপু এভাবে বলো কেন?’
‘তুই যাবি এখান থেকে?’
মিষ্টি বোনের রোষানল দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে আস্তে আস্তে সটকে পরলো সেখান থেকে।
এদিকে নাফিস খবর পেয়ে ছুটে এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করে আবার চলেও গেছে। কারণ কেউ-ই দরজার খুলে নি। মাইজিন বারণ করেছে হাওয়া গরম দেখে। ডক্টরের কথা মতো মাইজিন রিপোর্ট এনেছে হসপিটালে গিয়ে। কিন্তু সেখানে রিপোর্ট খুলার সাহস হয়নি। যদি খারাপ কিছু হয়ে থাকে? তাই সোজা বাসায় এসে তুলিকার হাতে দিয়েছে রিপোর্ট। কিন্তু এরপরই শুরু হয় কুরুক্ষেত্র! মাইজিন কাচুমাচু হয়ে দাঁতে নখ খুটছে। না জানি তুলিকা কখন তার উপর হামলা করে৷ ভয়ে ভয়ে সে তুলিকার কাছে গিয়ে বললো,
‘বাচ্চা যদি এসেও থাকে তাতে এতো রাগ করার কি হয়েছে? একটা বাচ্চাই তো!’
‘ওহ তার মানে তোর মনে মনে এসব ছিলো? তুই নিজের দোষ ঢাকতে এখন আমাকে পটাতে আসছিস! দূর হো আমার চোখের সামনে থেকে!’
তুলিকা স্বজোরে মাইজিনকে ধাক্কা দিলো দুই হাতে। মাইজিন উল্টো পালটি খেয়ে ফ্লোরে পরে গেলো।
কিন্তু তাতেও মাইজিন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না৷ সে একদম প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। শুধু নরম কন্ঠে বললো, ‘আমি সত্যিই কিছু করি নাই তুলিকা!’
‘ হ্যাঁ কিছুই করেন নাই। বাচ্চা আকাশ থেকে ডাউনলোড হয়ে আমার পেটে আসছে। আমি আর এই সংসার করবো। আজ ই চলে যাবো এখান থেকে। কি ভেবেছেন থাকবো এখানে?’
তুলিকা হনহনিয়ে অন্য রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে কাঁন্না করতে লাগলো। মাইজিন যখন স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো সে সময় তার ফোনে কল এলো। সে না দেখে নাদান মুখে কল রিসিভ করে। বললো,
‘হ্যালো! কে বলছেন? এই সময় আপনি যাকে কল করেছেন সে এখন বউয়ের হাতে ধাক্কা খেয়ে ভিমড়ি খেয়ে বসে আছে। প্লিজ কিছুক্ষন পর ফোন করুন। ধন্যবাদ!’
অপর প্রান্ত থেকে খুকখুক করে কেশে উঠলেন ডক্টর! এমন কথা শুনে একবার ফোনের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলেন সঠিক নাম্বার কি না। দেখলেন সঠিক নাম্বার! তিনি শান্ত গলায় শুধালেন,
‘আপনি কি মিস্টার মাইজিন সুলতান।’
‘ইয়েস কে বলছেন?’ কথা শুনে মাইজিন সিরিয়াস হলো এবারে।
‘আসলে একটা ভুল হয়েছে আমাদের তরফ থেকে। আপনার ওয়াইফের রিপোর্ট এর জায়গায় অন্য একজনের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কাইন্ডলি যদি আবার রিপোর্ট টা নিয়ে আসতেন ভালো হতো!’
‘কিন্তু রিপোর্টে তো আমার ওয়াইফের ই নাম আছে!’
‘এই জন্যই গোলমাল হয়েছে। আসলে যে মহিলার রিপোর্ট আপনি নিয়ে গেছেন সে মহিলারও নাম তুলিকা। সেজন্য একটা মিস-আন্ডারস্ট্যান্ড ক্রিয়েট হয়েছে।’
‘আপনাদের এরকম ভুলের জন্য আমার সংসার ভাঙতে বসেছিলো। যায় হোক আমি ওই মহিলার রিপোর্ট নিয়ে এখনই আসছি! আর খেয়াল রাখবেন আর যেনো এমন ভুল না হয়।’
এমন খবর পেয়ে খুশিতে দু চোখ চকচক করছে মাইজিনের। এবার নিশ্চয়ই আর ভুল বুঝবে না তুলিকা তাকে। সে দ্রুত গিয়ে দরজা ধাক্কালো।
‘তুলিকা দরজা খুলুন। খুশির খবর আছে!’
তুলিকা গা’ট্টি মেরে বসে রইলো। কিছুই ভালো লাগছে না তার। মাইজিনের কথা শুনলেই রাগ লাগছে। লোকটা স্পর্শ করবে না বলেও স্পর্শ করলো অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। আর এখন সে মাও হতে চলেছে। মা হওয়ার খবর পেলে মানুষ খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় কিন্তু সে খুশি হতে পারছেই না। হবে কিভাবে কিছুতেই তো বোধগম্য হচ্ছে না সবটা হলো কিভাবে? কোথাও কি কোনো ভুল হয়েছে? মাইজিনের মতো মানুষ হয় না। তার সঙ্গে একই বিছানায় এতোদিন পর্যন্ত রাত্রী যাপন করেছে অথচ তার অনুমতি পাইনি বলে তার হাত টা পর্যন্ত ধরেনি সে কিনা তার ঘুমের সুযোগ নিয়ে এরকম কিছু করবে? আর যদি এরকম কিছু করেও থাকতো সে তো বুঝতে পারতো। তার ঘুম ভারী কিন্তু তাই বলে এটা নয় যে তাকে কেউ স্পর্শ করলে সে জেগে যাবে না। তবে এই বাচ্চা? বাচ্চা তার পেটে কোথা থেকে এলো? এদিকে রিপোর্টে লেখা আছে ফাইভ উইকশ প্রেগন্যান্ট টাইম।
‘আহা তুলিকা দরজা খুলুন খবর শুনলে আপনি আমার থেকেও বেশি খুশি হবেন। আপনি প্রেগন্যান্ট না। ওটা অন্য একজনের রিপোর্ট!’
চটাস করে দরজা খুলে দিলো তুলিকা। এমন বক্তব্য শুনে মুহূর্তেই বাকহারা হলো তুলিকা। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাইজিনের দিকে। মিষ্টির রিয়াকশন ও একই। ঠোঁটের দুই রেখার মধ্যে ঈষৎ ফাঁক বিদ্যমান। অবাকতায় বাকহারা হয়ে গেছে সেও।
‘কি বললেন? অন্য একজনের রিপোর্ট? কিন্তু রিপোর্টে তো আমার ই নাম!’
‘এক্ষুনি ডক্টর কল করে জানালেন আপনার নামের ই আরেকটা মহিলার সঙ্গে অদল বদল হয়েছে রিপোর্ট। আপনি প্রেগন্যান্ট না ইয়েএএ।’
মাইজিন খুশিতে রিপোর্ট নিয়ে দ্রুত হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। পিছে ফেলে গেলো তুলিকার অবাক করা মুখ। মানুষটার সঙ্গে এতো এতো রাগ দেখালো সে এটা শুধুই একটা ভুল থেকে? সে-ই বা কি করবে? রিপোর্ট দেখে মাথা ঠিক ছিলো না তার। তাই তো বা’জে ব্যবহার করে ফেলেছে মাইজিনের সঙ্গে! এমন কি তুই পর্যন্ত তাদের সম্পর্ক টেনে নিয়ে গেছে।
মাইজিন বাড়িতে আসার পর তুলিকা নিশ্চুপ ছিলো। অস্বস্তিতে মাইজিনের চোখে চোখ মেলাতে পারছিলো না সে। কিন্তু মাইজিন দিব্বি স্বাভাবিক ছিলো। বরং সে আসার সময় লুডো কিনে এনেছে। সাথে করে নাফিসকে ডেকে এনেছে চারজন খেলবে বলে।
অকম্মাৎ মিষ্টি চেচিয়ে উঠলো। বললো, ‘ইয়ে আমার ছক্কা উঠেছে। আর এই যে ছক্কায় নাফিস ভাইয়ার গুটি খেয়ে দিলাম।’
নাফিস মুখ গোমরা করে ভেবলার মতো চেয়ে রইলো। এর আগে মাইজিনের গুটি খাওয়া পরেছিলো কিন্তু মিষ্টি মাইজিনের গুটি খাইনি। কিন্তু তার বেলাই এমন নিষ্ঠুরতার মানে কি? সে বলল, ‘এটা কি ঠিক হলো বাচ্চা? চিটিং করলে আমার সঙ্গে। এমনিতেই একটাও গুটি উঠেনি আমার।’
ঝলমলিয়ে হেসে উঠলো মিষ্টি। নাফিস মিষ্টির সুন্দর হাসির দিকে তাকিয়ে রইলো। মাইজিন খেলার ছলে তুলিকাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় আছে। যা হলো আজ। কিন্তু মেয়েটা নির্জীব হয়ে আছে।
‘এয়্যাইই নাফিস ভাই ওইভাবে চাইয়া রইছেন কিল্লাই? আরেকবার চাইয়া থাকলে চোখ খুবলে তুলে কাকেরছা কে খাওয়াবো হুহ্!’
মাইজিন আর তুলিকা পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে দুজনের দিকে। এদিকে ঝটপট চোখ সরিয়ে নিয়ে শুকনো ঢুক গিলে নাফিস। সে ভাবছে আর জীবনেও মিষ্টির দিকে তাকাবে না। কি সাংঘাতিক মেয়ে আল্লাহ! এতোদিন কত সিনিয়র,জুনিয়র মেয়ে তার পিছনে ঘুরেছে। তাদের কেন যে রিজেক্ট করেছে সে? একদম ঠিক হয়নি তাদের রিজেক্ট করা। আজ তাদের রিজেক্ট করার ফল এই বাচ্চা মাইয়ার প্রেমে পরা। দেখতে নরম স্বভাব কিন্তু ভেতরে রনচন্ডী রুপ! এবার যাদের রিজেক্ট করেছিলো তাদের কাছে যেতে হবে তাছাড়া উপায় নেই। আজীবন সিঙ্গেল থাকার চেয়ে একটা হিল্লে জুটিয়ে মিঙ্গেল হওয়া বেটার।
#চলবে
রিচেইক হয়নি বাচ্চারা। একটু মানিয়ে নিও প্লিজ!