#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৪৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১২৩)
সন্ধ্যা অবাক স্বরে বললো….
—“কোন সত্যের কথা বলছেন আপনি নিলাদ্র?”
নিলাদ্র একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….
—“সায়মন চৌধুরী আর সাবরিনা চৌধুরী তোদের জন্মদানকারী পিতা-মাতা নয়। তোদের জন্মদানকারী পিতা বড়বাবা মানে রায়হানুল চৌধুরী।”
নিলাদ্রের মুখে এরূপ কথা শুনে সন্ধ্যা যেনো বড়সড় একটা ধা*ক্কা খায়। দুকদম পিছনের দিকে পিছিয়ে গিয়ে পড়ে যেতে নিলে নিলাদ্র সন্ধ্যার হাত ধরে ওকে পড়া থেকে বাঁচিয়ে নেয়। নিলাদ্র সন্ধ্যাকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো…..
—“সন্ধ্যা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা কর। এখনও অনেক কঠিন সত্য গুলো জানা বাকি আছে তোদের। এতো সহজে ভে*ঙে পড়লে ভালো মানুষের মু*খো*শ পড়া শ*ত্রু*দের মোকাবিলা করবি কিভাবে! আমরা দূর্বল হয়ে পড়লে আমাদের উপর আ*ঘা*ত হা*না ওদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে যে।”
সন্ধ্যা কাঁ*পা কাঁ*পা কন্ঠে বললো….
—“আমি ঠিক আছি নিলাদ্র। আপনি সব সত্যটুকু বলুন। মেজো ভাইয়া আর আমার জন্মদাত্রী মা কে? আর তিনি কোথায় থাকেন? এতোগুলো বছর ধরে ওনারা আমাদের মা-বাবা সেজে থাকার মিথ্যে নাটকই বা কেনো করলেন! আমি সব সত্য জানতে চাই।”
কুশল নিজের মুখশ্রী জুড়ে শান্ত ভাব স্পষ্ট রেখে দাঁড়িয়ে আছে। নিলাদ্র বললো….
—“বড় বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব যেহেতু কুশল আমাকে দিয়েছিলো তাই আমি বড় বাবার ব্লাড টেস্ট থেকে শুরু করে আরো কিছু টেস্ট করেছিলাম। অতঃপর রিপোর্টে দেখলাম দীর্ঘদিন ধরে বড়বাবাকে প্রতিদিন একটা কড়া ডোজের ঔষধ ইনজেক্ট করা হয়েছে। আর এই ঔষধের প্রভাবেই তিনি এখনও পর্যন্ত কো*মা থেকে জাগতে পারেন নি। এরপর একদিন মাঝরাতে তরু ভাবী বড়বাবার রুমের পাশে কারোর অবস্থান দেখতে পেয়ে তার রুমে গিয়েছেন তখন বড়বাবাকে সাময়িক সময়ের জনঢ় অস্বাভাবিক ভাবে কাঁ*প*তে দেখেছিলেন এই কাঁ*পু*নিও ঐ ঔষধের প্রভাবেই হয়েছিলো। সেইসময় তুই বড় বাবার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তার রুমে বাড়ির বাড়তি কোনো সদস্যের প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছিলি। বড় বাবার রুমের দরজায় তালা দিয়ে রেখেছিলি আর চাবি শুধু আমার আর তোর কাছেই রেখেছিলি এই বিষয়টা শ*ত্রু পক্ষের কাছে একেবারেই আনএক্সপেক্টেড বিষয় ছিলো। তাই যখন তারা পরেরদিন রাতে আবারও বড়বাবাকে ঐ ঔষধ ইনজেক্ট করার উদ্দেশ্য নিয়ে তারা সেখানে এসেছিলেন তখন বড় বাবার রুমের বাহিরে তালা লাগানো দেখে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তাদের মাঝেই একজন তালার উপর ঘু*ষি প্রয়োগ করেছিলেন। যার ফলে তালায় ওর দরজার সামনে র*ক্ত লেগেছিলো যা তারা মুছে ফেলতে ভু*লে গিয়েছিলেন। ভোর রাতের দিকে পানি পিপাসা পাওয়ায় আমি যখন ডায়নিং রুমের দিকে আসতে নিয়েছিলাম তখন আমার চোখে তালার উপর র*ক্ত লেগে থাকার বিষয়টা পরে। আমি নিঃশব্দে সেইখান থেকে সামান্য পরিমাণ র*ক্ত সংগ্রহ করে নিজের কাছে রাখি আর পরবর্তীতে শ*ত্রু পক্ষের কারোর চোখে যেনো বিষয়টা না পড়ে তাই সমস্ত র*ক্ত সেখান থেকে পরিষ্কার ও করে ফেলেছিলাম। পরেরদিন রিজভী চাচার হাতের ক্ষ*ত তো সবাই দেখেছিলি। সেটা দেখার পর আর চাচীর মনগড়া কাহিনী শুনে আমার মন খ*চ খ*চ করতে শুরু করেছিলো। তাই আমি চাচার হাতে থাকা ক্ষ*তের জায়গাটা পরিষ্কার করার বাহানায় তার র*ক্তও নিজের কাছে সংগ্রহ করে নিয়েছিলাম। কিন্তু দূ*র্ভা*গ্যের বিষয় হলো রিজভী চাচার র*ক্তের সাথে বড় বাবার রুমের দরজায় লাগানো তালা থেকে সংগ্রহ করা র*ক্ত ম্যচ হয় না। এই কারণে আমার মাথা যেনো ঘুরতে শুরু করেছিলো কাকে ছেড়ে কাকে স*ন্দে*হ করা উচিত আমার আমি তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সেদিনই দুপুরের পর পর হয়তো সায়মন চাচা যখন বাসায় ফিরলেন তখন তার হাতে আর পায়েও ব্য*ন্ডে*জ করা দেখেছিলাম। কিন্তু তিনি বলেছিলেন কোম্পানির জন্য নতুন একটা জায়গা দেখতে শহর থেকে অনেকটা দূরে গিয়েছিলেন সেখানে অন্য কোম্পানির কিছু শ*ত্রু*রা তার উপর অ্য*টা*ক করেছিলো যার ফলে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঐ ক্ষ*ত গুলোর সৃষ্টি হয়েছিলো। বিষয়টা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য না লাগায় আমি তার ক্ষ*ত গুলোও দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি আমাকে দেখাতে নারাজ ছিলেন। তাই ঐ র*ক্তের বিষয় থেকে কোনো শ*ত্রু*কে খুজে বের করার কাজও আমার অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিলো। মাঝরাতে এতোগুলো গার্ডের চোখকে ফাঁ*কি দিয়ে বাড়ির ভিতর কোনো বাড়তি লোকের প্রবেশ করা যে অ*সম্ভব এই বিষয়ে কোনোরূপ স*ন্দে*হ আমার ছিলো না। তাই আমি মনের খ*চ খ*চা*নী দূর করতে পরবর্তীতে খোঁজ নিয়েছিলাম তোদের কোম্পানি থেকে এমাসে কোনো নতুন জায়গা কেনার পরিকল্পনা ছিলো নাকি কিন্তু আমি জানতে পারি তেমন কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। যেহেতু রিজভী চাচার র*ক্তের সাথে তালা থেকে সংগ্রহ করা র*ক্ত ম্যচ করে নি আর সায়মন চাচাও আমাকে তার ক্ষ*ত দেখাতে নারাজ ছিলেন সেহেতু সায়মন চাচাই সেই রাতে বড় বাবাকে ঐ কড়া ডোজের ঔষধটি ইনজেক্ট করার উদ্দেশ্য নিয়ে তার সাথেই এসেছিলেন এমনটাই ধারণা করে পুরো বিষয়টাকে আরো ক্লিয়ার করতে পরেরদিন সকালেই আমি দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ বড় বাবার চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন ডাক্তার খালেকুজ্জামানের ক্লিনিকে গিয়েছিলাম তার সাথে পারসোনাল ভাবে কথা বলতে। বলা যায় তার মুখ থেকে সম্পূর্ণ সত্যটা বের করতে। আমি ডাক্তার খালেকুজ্জামানের কেবিনে গিয়ে তাকে ভালোভাবে ধরে বলেছিলাম দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ কার কথায় তিনি বড় বাবাকে এমন আইন বিরোধী ক্ষ*তি*কর ঔষধ ইনজেক্ট করেছিলেন। তিনি সত্যটা স্বীকার করতে নারাজ ছিলেন। পরবর্তীতে যখন তাকে তার ডাক্তারি সার্টিফিকেট হা*রা*নোর ও তার ক্লিনিক সারাজীবনের মতো সিল করে দেওয়ার ভ*য় দেখিয়েছিলাম তখন তিনি বললেন তিনি আমাকে সব সত্য বলবেন কিন্তু সেই সত্য জানতে আমাকে তার বাসায় যেতে হবে। কারণ বাহিরে থাকাকালীন ২৪ঘন্টাই নাকি তার উপর নজরদারী করার জন্য লোক সেট করা আছে। তিনি যেনো কারোর সামনে মুখ না খুলেন এই কথা বলে প্রানে মে*রে ফেলার হু*ম*কি দেওয়া হয়েছে। আমি এতো গভীর ভাবে চিন্তা না করেই খালেকের কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। আর সেদিন বিকেলের মধ্যেই আমি তার বাসায় যাবো এই বলে ক্লিনিক থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। যথাসময়ে আমি ডাক্তার খালেকুজ্জামানের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে চৌধুরী মেনশন থেকে বের ও হয়েছিলাম। ওনার বাসা শহর থেকে বেশ অনেকটা দূরেই ছিলো। তার বাসার সামনে এসে গাড়ি পার্ক করে আমি যখন তার বাসার ভিতরে প্রবেশ করি সেইসময় পিছন থেকে কেও আমার মুখের উপর একটা কাপড় চে*পে ধরেছিলো। সম্ভবত ঐ কাপড়ে ক্লোরোফাম দেওয়া ছিলো যার ফলে আমি সেন্স*লে*স হয়ে গিয়েছিলাম। অতঃপর……….
………………অতীতের সেইদিনের ঘটনা……………….
সেন্স ফেরার পর চোখ মেলতেই নিলাদ্র দেখে ঐ বাসারই ড্রয়িং প্লেসে ওকে হাত-পা বাঁ*ধাবস্থায় চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে কেউ। নিজের পরিস্থিতিতে ভালোভাবে বুঝে উঠতে নিলাদ্রের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। পরক্ষণেই নিলাদ্র বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য আ*প্রাণ চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু কোনোভাবেই সে সফল হতে পারে না। সেইসময় দরজার পাশ থেকে কারোর হাততালি দেওয়ার শব্দ ভেসে আসলে নিলাদ্র শান্ত হয়ে সেদিকে লক্ষ্য করতেই দেখে হুডি পরিহিত ৪জন ব্যক্তির সাথে ডাক্তার খালেকুজ্জামান নিলাদ্রের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। এমনিই আবছা আলো তারউপর হুডি পরে থাকায় সেই ৪জন ব্যক্তি আসলে কারা তা নিলাদ্র বুঝে উঠতে পারছে না। ব্যক্তি ৪জন নিলাদ্রের থেকে ২হাত দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতেই খালেকুজ্জামান পাশ থেকে একটা চেয়ার এনে হুডি পরিহিত একজন ব্যক্তির পিছন পার্শে রেখে হাসিমুখে তাকে বসতে বললেন। ব্যক্তি চেয়ার বসে পায়ের উপর পা তুলে। হুডি পরিহিত বাকি ৩জন ব্যক্তি বসারত সেই ব্যক্তির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকেন। নিলাদ্র ওদের দিকে দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“আমি জানি তোমরা কারা। তাই হুডি দ্বারা নিজেদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখার কোনো মানে নেই। তোমাদের উদ্দেশ্য কি তা আমার জানা নেই৷ কিন্তু বড় বাবার মতো একজন নিষ্পাপ, ভালো মানুষকে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ক্ষ*তি*কর কড়া ডোজের ঔষধ ইনজেক্ট করে এসেছো নিজেদের এই পা*ল*তু কু * কু*রের এর দ্বারা, কুশল, সন্ধ্যা, দাদীমার মতো এতো ভালো মানসিকতার মানুষদের সাথে ছ*ল*না করে এসেছো এতোগুলো বছর ধরে সবকিছুর পিছনে যে তোমাদের কোনো ভালো উদ্দেশ্য থাকতে পারে এটা বুঝতেও এখন আমার আর বাকি নেই। তোমাদের মতো মু*খো*শ*ধারী ন*র কি*ট*দের উপর থু*তু ফেলতেও ঘৃ*ণা হচ্ছে আমার। তোমাদের এতোগুলো বছর ধরে সাজানো পরিকল্পনা ভে*স্তে দেওয়ার পথে আমি অগ্রসর হচ্ছিলাম জন্য আমাকে ছ*ল*নার পথ ধরে এখানে এনেছো। এখন হয়তো তোমরা আমাকে মে*রে ফেলবে কিন্তু এ নিয়ে আমার মনের ভিতর বিন্দুমাত্র ভ*য় কাজ করছে না। আমি আমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা রেখেছি তিনি ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। সব অ*ন্যা*য় ও পা*প কারীরা একদিন ঠিকই ধ্বং*স হবে। তোমাদের ধ্বং*সে*র দিন ও শুরু হয়ে গিয়েছে।”
নিলাদ্রের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে হুডি পরিহিত ঐ ব্যক্তি ৪জনের রাগে যেনো সর্বশরীর কাঁ*প*ছে। নিজেদের আর মু*খো*শে*র আড়ালে না রেখে ৪জনই নিজেদের মাথার উপর থেকে হুডিটা স*রি*য়ে ফেলে। ওদের ৪জনের রাগে ফেঁ*টে পড়া মুখশ্রী দেখে নিলাদ্রের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। নিলাদ্র যাদের স*ন্দে*হ করেছিলো এরা তারাই। নিলাদ্র রিজভীর দিকে একপলক তাকিয়ে হাতের বাম পার্শে ফাঁকা স্থানে ঘৃ*ণা*য় ভরপুর মুখশ্রী করে থু*তু ফেলে। এভাবেই কামিনী, সায়মন আর সাবরিনাকে একপলক দেখে দেখে নিজের হাতের বাম ও ডান পার্শে থু*তু ফেলে নিলাদ্র। এই থু*তু গুলো যেনো ওদের মুখের উপরই ফেলছে নিলাদ্র এমন মনে হচ্ছে ওদের।
#চলবে ইনশাআল্লাহ…….
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৫০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
নিলাদ্রকে পরপর কয়েকবার নিজেদের দিকে একপলক দেখে দেখে হাতের বাম ও ডান পার্শের ফাকা স্থানে থু*তু ফেলতে দেখে ওদের ৪জনের রাগ কন্ট্রোলে রাখার সীমা যেনো ভে*ঙে যায়। রিজভী দ্রুত কদমে নিলাদ্রের কাছে এসে দাঁড়িয়ে স্বজোরে ওর গালে একটা থা * প্প * ড় দেয়। রিজভীর প্রয়োগকৃত এই থা * প্প * ড়ের প্রভাবে নিলাদ্রের ঠোঁটের ডান পার্শের কর্ণিশে হালকা কে * টে গিয়ে র * ক্ত বের হতে শুরু হয়। কিন্তু এই থা * প্প * ড় যে নিলাদ্রের উপর কোনো প্রভাবই ফেলতে পারে নি তা ওর ঠোঁটে লেগে থাকা বাঁ*কা হাসি দেখেই ওরা ৫ জন বুঝতে পেরেছে। রিজভী আবারও নিলাদ্রকে থা * প্প * ড় দিতে উদ্দ্যত হলে সাবরিনা চেয়ারে বসাবস্থায় থেকেই নিজের হাত উঠিয়ে ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন….
—“রিজভী…থামো! একে এভাবে মে*রে সময় ন*ষ্ট করে কোনো লাভ নেই। আমাদের এতোগুলো বছর ধরে সাজিয়ে আসা পরিকল্পনা ভে * স্তে দেওয়ার পথে অগ্রসর হয়ে এ যে কতো বড় ভু * ল করেছে তা ওকে হারে হারে টের পাইয়ে ছাড়বো।”
কামিনী নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললেন….
—“ভাবীইই…নিলাদ্রকে ওর ভু * লের জন্য শা * স্তি দেওয়ার আগে আমাদের এতো বছর ধরে সাজিয়ে আসা পরিকল্পনার কথাও ওকে জানিয়ে দাও। বেচারা সব সত্য জানার পর বাঁচার জন্য অবশ্যই ছ * ট-ফ * ট করবে। নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধু কুশল আর নিজের প্রেয়সী সন্ধ্যার শেষ পরিণতি যে ওর থেকেও ক * রু* ণ হবে এই বিষয়েও ওকে অবগত করো। সব সত্য জানার পরেও ওদের কাওকে আমাদের ষ * ড় * য * ন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না এমনটা ভেবেই ও কেমন ছ * ট-ফ * ট করে এই দৃশ্য দেখার কিন্তু মজাই অন্যরকম হবে।”
কামিনীর মুখে এরূপ কথা শুনে নিলাদ্র রাগ নিয়ে আবারও নিজেকে বাঁ*ধা*বস্থা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো…
—“খবরদার আমার ভাই সমতুল্য বন্ধু আর আমার প্রিয়তমার একচুল পরিমাণও ক্ষ * তি করার চেষ্টা করবে না তোমরা। তাহলে তোমাদের শেষ পরিণতি কিন্তু একদমই ভালো হবে না।”
সাবরিনা বললেন….
—“আমাদের শেষ পরিণতি আমরা নিজেরাই ঠিক করে রেখেছি আরো ২৮ বছর আগেই। নিজের বর্তমান অবস্থা এতো ক * রু * ণ হয়েছে দেখেও তোমার মুখের জো * ড় দেখছি এতোটুকুও কমে নি। কি ভেবেছো! আমাদের হাত থেকে জীবিত অবস্থায় বের হয়ে তুমি ওদের সবাইকে বাঁচিয়ে নিতে পারবে! তাহলে এই অ*সম্ভব চিন্তার কথা নিজের মাথা থেকে ঝে * ড়ে ফেলো। কারণ তোমার শেষ পরিণতি মৃ*ত্যু তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
নিলাদ্র তেজী কন্ঠে বললো….
—“কেমন বাবা-মা তোমরা নিজের সন্তানদের মে * রে ফেলার মতো পরিকল্পনা করছো!”
নিলাদ্রের মুখে এমন কথা শুনে ওরা ৪জন ই স্বশব্দে হেসে উঠে। নিলাদ্র এতে কিছুটা অবাক হয়। পরক্ষণেই ওরা হাসি থামাতেই সাবরিনা বললো….
—“বাবা-মা! কে কার বাবা-মা? কুশল আর সন্ধ্যা তো রায়হানুল চৌধুরীর ছেলে-মেয়ে আমরা তো শুধু আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ওদের সাথে এতোগুলো বছর ধরে বাবা-মা সেজে থাকার নাটক করেছি মাত্র। আমার আর সায়মনের একমাত্র ছেলে রওশান আজমাইন কনক। রিজভী আর কামিনীর একমাত্র ছেলে রাজবীর চৌধুরী। আমাদের কাছে এরা দু’জন ছাড়া চৌধুরী পরিবারের সাথে সম্পর্কিত আর কোনো সদস্যের জীবন নিয়ে কোনো পরোয়া নেই। আমাদের পরিকল্পনার পথে যারাই বাঁ*ধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে তাদের পরিণতিই মৃ*ত্যু হয়েছে। তার জল*জ্য*ন্ত উদাহরণ হলো রায়হানুল চৌধুরী আর তার স্ত্রী রুবিনা চৌধুরী। রায়হানুল চৌধুরীকে তো দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ একটা জীবন্ত লা*শ বানিয়ে রেখেছি। আর তার স্ত্রীকে দিয়েছিলাম ভিষণ য*ন্ত্র*ণা দায়ক মৃ*ত্যু। ২০ বছর আগের সেই দৃশ্যগুলো এখনও যখন চোখের সামনে ভেসে উঠে মনের ভিতরটা কেমন যেনো ফুরফুরে হয়ে উঠে।”
কামিনী বললো…..
—“ঠিক বলেছো ভাবী। নিজের শ*ত্রু*দের চোখের সামনে য*ন্ত্র*ণা*য় ছ*ট-ফ*ট করতে করতে মা*রা যেতে দেখার মতো এতো বেশি মজা হয়তো আর ২য় কিছুতে হয় না।”
রাগে, ক*ষ্টে, ঘৃ*ণা*য় নিলাদ্রের সর্বশরীর যেনো কাঁ*প*ছে। নিলাদ্র উচ্চস্বরে বললো…..
—“কি করেছিলি তোরা বড় মায়ের সাথে!”
কামিনী হাসি দিয়ে বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললো….
—“সব জানার জন্য কেমন ছটফট করছে দেখো তোমরা। আমার তো অনেক মজা লাগছে ওর এই অবস্থা দেখে।”
সায়মন বাঁ*কা হেসে বললো….
—“বেচারাকে এবার সবটা জানিয়ে দাও মাই সুপার ট্যলেন্টেড ওয়াইফ। তোমার তৈরিকৃত পরিকল্পনা অনুসরণ করেই তো আমরা এতোদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি। তাই মৃ*ত্যু*র আগে ওর শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করার দায়িত্ব তুমিই নাও।”
সায়মনের এরূপ কথা শুনে সাবরিনা বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে……
—“চৌধুরী বংশের অঢেল সম্পত্তি ভাগ-বা*টো*য়ারা করার একটা নিয়ম আছে যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এই নিয়মটা মানতেও সবাই বাধ্য ছিলো। আর কেও যদি এই নিয়ম ভ*ঙ্গ করার চেষ্টা করতো কখনও তাহলে তাকে চৌধুরী পরিবারের সব সম্পত্তি থেকে বহিষ্কার করা হতোই পাশাপাশি তার সাথে সব সম্পর্কও শেষ করা হতো। নিয়মটা হলো এমন যে, পরিবারের ছেলের সংখ্যা যদি হয় ৩জন তাহলে সেই ৩জনের মাঝে সবথেকে বড় যে হবে সে পাবে চৌধুরী পরিবারের সিংহ ভাগ সম্পত্তির মালিকানা এরপর সম্পত্তির বাকি যে অংশটুকু থাকবে তা আরো ৩ভাগ করা হবে। ২ভাগ পাবে মেজো ছেলে আর শেষ ভাগ পাবে ছোট ছেলে। আমার শ্রদ্ধেয় শ্বাশুড়ি মায়ের ও তিন ছেলে ছিলেন। তাই নিয়ম অনুযায়ী রায়হানুল চৌধুরী বড় ছেলে হওয়ায় পরিবারের সিংহ ভাগ সম্পত্তির মালিকানা তিনি পান। বাকি সম্পত্তির ২ভাগ পান আমার স্বামী সায়মন চৌধুরী আর শেষ ভাগ পান রিজভী। বিয়ের পর আমি যখন চৌধুরী পরিবারে আসি তখন এমন নিয়ম দেখার পর আমি একদমই সন্তুষ্ট ছিলাম না। তবুও এই নিয়ম মেনে নেওয়ার নাটক করতাম। এরপর যখন চৌধুরী পরিবারের ভবিষ্যত বংশধরদের মাঝে সম্পত্তির ভাগ-বাঁ*টো*য়ারা করার সময় আসলো তখন জানতে পারলাম বিয়ের ৪বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনও রায়হানুল চৌধুরী আর রুবিনা চৌধুরীর কোনো সন্তান হয় নি। এই নিয়ে তারা দু’জনেই অনেক বড় বড় চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন কিন্তু কোনো লাভ হয় নি। তাই তারা সন্তান হওয়া নিয়ে আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন প্রায়। এভাবেই পেরিয়ে যায় কয়েকমাস, আমার গর্ভে তখন কনক আসে। একদিকে গর্ভে কনকের অস্তিত্ত্বের জন্য খুশি অন্যদিকে সে পাবে সম্পত্তির সিংহভাগ অংশের মালিকানা। সবমিলিয়ে আমার আর সায়মনের আনন্দ রাখার যেনো জায়গা হচ্ছিলো না। বড় ভাবীর সাথে আমার শুরু থেকে বনতো না। তিনি ছিলেন ভিষন সাদামাটা, সরল-সহজ চিন্তা ভাবনার মানুষ। তাই তার সাথে আমি শুধু মুখে মুখেই মিল রেখে চলতাম। কনকের জন্মের পর পরই রিজভী কামিনীকে বিয়ে করে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসে। কামিনীর মেন্টালিটির সাথে শুরু থেকেই আমার মেন্টালিটি মিলে যেতো। তাই কামিনীর সাথেই আমার সর্বক্ষণ উঠাবসা হতো। যেহেতু বড় ভাইয়ের কোনো সন্তান হচ্ছিলো না তাই সম্পত্তির সিংহ ভাগ আমার ছেলের পাওয়ার কথা ছিলো তাই সম্পত্তির পরবর্তী ২ভাগ কামিনীর ছেলে হলে সে পাবে এমন আশাবাদীই ছিলো সে। কিন্তু আমাদের আশায় বারা ভাতের উপর যে এভাবে ছাই পড়বে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি নি। কনকের বয়স যখন ১বছরে পড়লো তখন বড় ভাবী এতোগুলো বছর পর গর্ভবতী হলেন। বড় ভাবীর শারীরিক অবস্থা দেখে আমার শ্বাশুড়ি মা আশা রেখেছিলেন বড় ভাবীর কোল আলো করে ছেলে সন্তানই আসবে। আর এমন হলে যে রায়হানুল ভাই বড় ছেলে হওয়ার সুবাদে তার ছেলে আমার ছেলের থেকে বয়সে ছোট হলেও সেই সম্পত্তির সিংহভাগ অংশের মালিকানা পাবে এতো বড় অবিচার আমি, সায়মন, কামিনী, রিজভী কেউই মেনে নিতে পারি নি। ১০মাস পর ঠিকই বড় ভাবীর ছেলে কুশলের জন্ম হয়। কুশলের জন্মের পর পরই ওর নামে সম্পত্তির দলিল তৈরি করেন স্বয়ং আমার শ্বাশুড়ি মা। কুশলের বয়স যখন ৩০ বছরে পড়বে তখন সে সম্পত্তির সিংহভাগ অংশের মালিকানা পাবে। কুশলের নামে সম্পত্তির দলিল তৈরি হয়েছে শুনে রাগে-ক্ষো*ভে আমাদের মাথা যেনো ফেঁ*টে যাচ্ছিলো। আর তখন থেকেই আমরা এই পরিকল্পনার বীজ বুনতে শুরু করি। এর মাঝেই রিজভী আর কামিনীর ছেলে রাজবীর এই দুনিয়ায় ভূমিষ্ঠ হয়। যার ফলে আমাদের দল আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠে। কুশলের বয়স যখন ৫বছর তখন সকলের চোখকে ফাঁ*কি দিয়ে ওকে ধা*ক্কা দিয়ে সিঁড়ি থেকে নিচে ফেলে দেই স্বয়ং আমি। পরিকল্পনা ছিলো এতো উঁচু কুশলকে ফে*লে দিলে সে মাথায় গু*রু*তর ভাবে আ*ঘা*ত পেয়ে মা*রা যাবে। আর তখন ওর নামে সম্পত্তির দলিল করা থাকলেও ৩০ বছর পর আমার ছেলে আর কামিনীর ছেলের মাঝে তা সমান ভাবে ভাগ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের এই পরিকল্পনাও ভে*স্তে যায়। কৈ মাছের প্রাণ হওয়ায় কুশল এতো উঁচু থেকে পরে গিয়েও বেঁচে যায়। কিন্তু মাথায় গুরু*ত*র ভাবে আ*ঘা*ত পাওয়ায় কুশল কো*মা*য় চলে যায়। কুশলের চিকিৎসায় নিয়েজিত ডাক্তার জানান যেদিন কুশলের সেন্স ফিরবে সেদিন সে ওর সুস্থথাকাকালীন সময়ের সকল স্মৃতি পুরোপুরি ভাবে ভু*লে যাবে। কাওকে সে চিনতে পারবে না। সেন্স ফিরলে পরে ওকে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর মতো করে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। ডাক্তারের মুখে এরূপ কথা শুনে আমি আবারও নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করি। দেখতে দেখতে কুশলের কো*মা*য় থাকার সময় ২ বছর পেরিয়ে যায়। বড়ভাবী পুনরায় গর্ভবতী হন। আমাদের সময় আমাদের পরিবারের কোনো গর্ভবতী মহিলারা আল্ট্রাস্নোগ্রাফি করে নিজের কি সন্তান হবে তা জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতেন না। সন্তান জন্ম হওয়ার পরই জানতে পারতেন তার ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে। বড় ভাবী আবারও গর্ভবতী হয়েছে জানার পর আমরা এক ভ*য়া*নক পরিকল্পনা করি। এবারের পরিকল্পনা যেনো কোনো ভাবেই ব্য*র্থ না হয় সেদিকেও পুরোপুরি ভাবে খেয়াল রাখার ব্যবস্থা করবো বলেই আমরা ৪জন মনঃস্থির করি। নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সামনে যদি কোনো গাছ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তবে সেই গাছের ডাল-পালা ছে*টে কোনো লাভ হবে না। একেবারেই গাছটিকে গো*ড়া থেকে উপরে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের এবারের পরিকল্পনা ছিলো ঠিক এমনই। বড় ভাবীর গর্ভধারণের সময় যখন ৯মাস পেরোয় তখন………..
………..২০ বছর আগে সেই দূর্বি*ষহ দিনের ঘটনা…….
সাবরিনা আর কামিনী সিঁড়ির উপর অনেক তেল ফেলতে শুরু করে। তেল ফেলার কাজ শেষ হতেই সাবরিনা ওর কমোরের গোঁ*জ থেকে একটা সাদা কাগজে মুড়ানো কিছু বের করে কামিনীর সামনে ধরে বললেন….
—“এই কাগজে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ রাখা আছে। শ্বাশুড়ি মায়ের দুপুরের ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে একগ্লাস পানির ভিতর এই ঔষধগুলো সব মিশিয়ে নিয়ে তুই এক্ষুণি শ্বাশুড়ি মায়ের রুমে যা। ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত ঐ পানিই যেনো এখন শ্বাশুড়ির মা খান এটা শিওর হয়ে আসবি।”
কামিনী বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললেন…
—“ঠিক আছে ভাবী।”
এই বলে কামিনী দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ডায়নিং রুমে গিয়ে একটা গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে সাবরিনার দেওয়া ঘুমের ঔষধগুলো সব ভালো ভাবে মিশিয়ে সাগরিকা চৌধুরীর রুমে যায়। অতঃপর সাগরিকা চৌধুরীকে সেই ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত পানি দিয়েই তার দুপুরের ঔষধ খাইয়ে দেন। কিছুসময়ের মধ্যেই সাগরিকা চৌধুরী গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে যান। পরক্ষণেই কামিনী সাগরিকা চৌধুরীর রুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে সাবরিনা ড্রয়িং রুমে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন। কামিনী সাবরিনার পাশে বসে হাসি দিয়ে বললেন….
—“ভাবী…শ্বাশুড়ি মা সেই ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত পানি পান করে এখন গভীর ঘুমে ডুবে গিয়েছেন।”
সেইসময় চৌধুরী মেনশনের মূল দরজা দিয়ে সায়মন আর রিজভী বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। সায়মন আর রিজভী সোফায় এসে বসে। সায়মন বাঁ*কা হাসি দিয়ে বললেন….
—“ডার্লিং..তোমার কথানুযায়ী বড় ভাইকে অফিসের অনেকগুলো কাজের দায়িত্ব দিয়ে এসেছি। সন্ধ্যার আগে সেইসব কাজ শেষ করে তার পক্ষে বাসায় ফেরা সম্ভব না। তাই এই সময়ের ভেতরেই তোমাদের যা করার করে ফেলো।”
সাবরিনা বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন…
—“এবার তাহলে আসল মজা উপভোগ করার জন্য তোমরা তৈরি হও!”
এই বলে সাবরিনা সিঁড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে রুবিনা চৌধুরীকে ডাকতে শুরু করেন…
—“বড় ভাবী…ও বড় ভাবী…একটু নিচে আসবেন! খুব দরকার ছিলো। বড় ভাবী…!”
সাবরিনার ডাক শুনতে পেয়ে রুবিনা নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে এসে সিঁড়ির উপর পা রাখতেই পা পিছলে সিঁড়ি থেকে গড়তে গড়তে নিচে একেবারে সাবরিনার পায়ের কাছে এসে মুখ থু*ব*ড়ে পড়ে যান। সাবরিনা কয়েক কদম পিছনের দিকে পিছিয়ে যায়। রুবিনা নিচে পড়া মাত্র তার পানি ভে*ঙে যায়, প্রসবের রাস্তা দিয়েও প্রচুর র*ক্ত*পাত হতে শুরু করে, ওতো উচু থেকে নিচে মুখ থু*ব*ড়ে পড়ে যাওয়ায় নাক-মুখ দিয়েও র*ক্ত বের হতে থাকে। রুবিনা ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণায় আ*র্ত*না*দ করতে থাকেন। তার আর্তনাদ যেনো বাহিরের কারোর কানে না পরে তাই কামিনী টি-টেবিলের উপর থেকে সাউন্ড বক্সের রিমোটটা হাতে নিয়ে উচ্চস্বরে গান ছেড়ে দেয়। রুবিনা অ*সহ্য*কর য*ন্ত্র*ণা নিয়ে সাবরিনার দিকে সাহায্যের জন্য নিজের র*ক্ত মাখা হাতটি বা*ড়ি*য়ে দেয় কিন্তু সাবরিনা তা গ্রা*হ্য না করে সোফায় গিয়ে বসে।
রুবিনা নিজের সন্তানকে নিয়ে জীবন ও মৃ*ত্যু*র সাথক ল*ড়া*ই করছে আর ওরা ৪জন তখন ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে সেই ক*রু*ণ দৃশ্যটা উপভোগ করছে। মানুষ কতোটা নি*কৃ*ষ্ট হলে এমন পরিস্থিতিতেও হাসতে পারে তা ওদের না দেখলে বোঝা যেতো না। অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বড় ভাবী সন্তান ভূমিষ্ঠ করতে সক্ষম হন। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে কামিনী মুখে হাত দিয়ে বললো….
—“এতো উপর থেকে পরে গিয়ে এতো সময় ধরে য*ন্ত্র*ণায় ছ*ট-ফ*ট করেও জীবিত সন্তানের জন্ম দিলো কি করে এই মহিলা! আজ একে আর এর সন্তানকেও আমি নিজ হাতে গলা টি*পে মে*রে ফে*ল*বো।”
এই বলে কামিনী বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
#চলবে ইনশাআল্লাহ……
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৫১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
কামিনী সোফা ছেড়ে উঠে রুবিনার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। পরক্ষণেই রুবিনার পায়ের কাছে এসে দাঁড়াতেই র*ক্তে মাখা সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাটির দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই দেখে বাচ্চাটি ছেলে নয় মেয়ে বাচ্চা। কামিনী ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন….
—“মেয়ে হয়েছে ভাবী….মেয়ে হয়েছে।”
মেয়ে হয়েছে শুনে ওদের ৩ জনের মুখেই হাসির রেখা ফুটে উঠে। অতঃপর ওরা তিনজন সোফা ছেড়ে উঠে কামিনীর পাশে এসে দাঁড়ায়। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর পরই রুবিনা নি*স্তে*জ হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত র*ক্ত*পা*ত হওয়ার কারণে ওনার শরীরের যেসব জায়গায় র*ক্ত ভরে নি ঐ জায়গাগুলো ফ্যকাসে বর্ণ ধারণ করেছে। সায়মন বললো….
—“মেয়ে হয়েছে যখন তখন এই বাচ্চাটিকে মে*রে পা*পে*র বোঝা বাড়ানোর কি দরকার! আর এই মেয়ে যতোই এই বংশের সদস্য হোক না কেনো এ তো আর এই বংশের সম্পত্তি থেকে কোনো ভাগ পাবে না। বিয়ের বয়স হয়ে গেলে বিয়ে দিয়ে দিবো। তখন এই আ*প*দ এমনিই আমাদের ঘর থেকে বিদায় হবে।”
সাবরিনাও সায়মনের কথায় সম্মতি জানিয়ে বললো….
—“হুম একে মা*রা*র দরকার নেই।”
ওদের কথপোকথন এর মাঝেই পিছন থেকে রায়হানুল চৌধুরীর কন্ঠস্বর ভেসে আসলে ওরা তিনজনই চমকে উঠে দরজার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। রায়হানুল চৌধুরী ড্রয়িং প্লেসের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললেন….
—“তোমরা এই দুপুরবেলা সাউন্ড বক্সে এতো জোড়ে গান ছেড়ে দিয়ে রেখেছো কেনো? আমার তো মাথা ধরে যাচ্ছে।”
টি-টেবিলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে রিমোটটা নিয়ে সাউন্ড বক্স বন্ধ করে রায়হানুল। গান বন্ধ হতেই রায়হানুলের কানে বাচ্চার কান্না করার আওয়াজ ভেসে আসে। রায়হানুল যেইনা পিছন ঘুরতে নিবেন সেই সময় সায়মন সোফার পাশে থাকা ভাড়ি ফুলদানীটা হাতে নিয়ে তা দিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে রায়হানুলের মাথার পিছনে বা*রি দেন। সঙ্গে সঙ্গে রায়হানুল ড্রয়িং প্লেসের মেঝেতেই মুখ থু*ব*ড়ে প*ড়ে যান। রুবিনার সামনে থেকে সাবরিনা, কামিনী, রিজভী সরে দাঁড়াতেই রায়হানুল তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে র*ক্তা*ক্ত অবস্থায় সিঁড়ির পাশে পড়ে থাকতে দেখতে পান। আর রুবিনার দুই পায়ের মাঝখান থেকেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ এখনও রায়হানুলের কানে ভেসে আসছে। রায়হানুল ওদের ৪জনকে এই হিং*স্র প*শু*র রূপে দেখে নিজের চোখকেই যেনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না। মাথার পিছনটা তার য*ন্ত্র*ণা*য় ছিঁ*ড়ে যাচ্ছে যেনো।
সেইসময় কামিনী লক্ষ্য করলো রুবিনা চোখ মেলে তাকিয়েছে। কামিনীর রাগে যেনো সর্বশরীর জ্ব*ল*ছে। কামিনী সাবরিনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—“ভাবী দেখো দেখো আবার চোখ মেলে তাকিয়েছে কেমন। এই মহিলা যে এতো সহজে ম*র*বে না তা বুঝতে আমার আর বাকি নেই। একে আমি আরো য*ন্ত্র*ণা দিয়ে দিয়ে মা*র*তে চাই।”
সাবরিনা বাঁকা হেসে বললেন….
—“মা*র তাহলে..! নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিজের চোখের সামনে একটু একটু করে মা*রা যেতে দেখার অনুভূতি কেমন হয় তাও বুঝুক আমাদের ভাসুর মশাই।”
সাবরিনার এরূপ কথা শুনে কামিনী হাসি দিয়ে আবারও রুবিনার পেটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে নিজের পা থেকে জুতো খুলে স্বজোরে পেটের উপর একটা লা*থি প্রয়োগ করলেন। এতে যেনো রুবিনার দেহ*চিঁ*ড়ে তার জীবনখানা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। রুবিনা “ইয়া আল্লাহহহহহ” বলে আ*র্ত*না*দ করে উঠলেন। রুবিনার আ*র্ত*না*দে পুরো চৌধুরী মেনশন যেনো কেঁ*পে উঠলো। রায়হানুল এমন ক*রু*ণ দৃশ্য দেখে স*হ্য করতে না পেরে মেঝে থেকে উঠার চেষ্টা করলেন কিন্তু তার শরীর তাকে সায় দিলো না। রায়হানুলের বুকের ভিতরটা য*ন্ত্র*ণা*য় ছিঁ*ড়ে যাচ্ছে যেনো। হাত উঠিয়ে মেঝের উপর বা*রি দিতে শুরু করেন। রায়হানুলের চোখজোড়া দিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু*পা*ত হতে শুরু করেছে। কামিনী একপলক রায়হানুলের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই আবারও নিজের পা অনেকটা উঁচুতে উঠিয়ে রুবিনার পেটের উপর লা*থি প্রয়োগ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে রুবিনা মুখ দিয়ে অনেক গুলো র*ক্ত বের হয়। তার কিছুটা কামিনীর পায়ের উপর এসেও পড়ে। কামিনী চোখ-মুখ কুঁচকে নিয়ে বললেন…..
—“দিলি তো র*ক্ত ব*মি করে আমার এতো সুন্দর পা টা ন*ষ্ট করে। আজ তোকে আমি এই পা দিয়েই গলা টি*পে মে*রে ফে*ল*বো।”
এই বলে কামিনী রুবিনার মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর গলার উপর নিজের পা চে*পে ধরেন। রুবিনার শরীর আর ওকে সায় দেয় না। অল্প সময়ের মধ্যেই রুবিনা পুরোপুরি ভাবে নিস্তেজ হয়ে যায়। রুবিনাকে নিস্তব্ধ হতে দেখে রায়হানুলের কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায়। নিজের চোখের সামনে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে এতো য*ন্ত্র*ণা স*হ্য করে মা*রা যেতে দেখেও কিছু করতে না পারার এক হৃ*দ*য় চু*র*মা*র করে দেওয়ার মতো য*ন্ত্র*ণা অনুভব করছে রায়হানুল। সেইসময় সায়মন রায়হানুলের মাথার পিছনে পূর্বের আ*ঘা*ত করা জায়গাটিতেই পুনরায় নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আ*ঘা*ত করে। রায়হানুল ২য় বারের এই আ*ঘা*ত আর সহ্য করতে পারেন না। তিনিও নিস্তব্ধ হয়ে যান। সাবরিনা ওদের তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..
—“রায়হানুলকে প্রা*ণে মে*রো না সায়মন। কামিনী, রিজভী তোমরা এই মহিলার লা*শ বাড়ি থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যাও আর দা*ফ*নে*র ব্যবস্থা করো। সায়মন তুমি আমার সাথে এসো।”
সাবরিনার কথানুযায়ী কামিনী আর রিজভী রুবিনার লা*শ নিয়ে চৌধুরী মেনশন থেকে বেড়িয়ে যায়। সাবরিনা সায়মনকে নিয়ে রায়হানুলের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন…..
—“গাড়িটাকে এমন ভাবে ভা*ঙো যেনো দেখে মনে হয় খুবই গুরুতর এ*ক্সি*ডে*ন্ট হয়েছে।”
সাবরিনার কথার ধরণ বুঝতে পেরে সায়মন বাঁ*কা হেসে পাশে পড়ে থাকা একটা কাঠের লাঠি হাতে নিয়ে গাড়ির সামনের গ্লাসের অংশ টুকু ভে*ঙে ফেলে। এরপর নিচে পরে থাকা কাঁ*চ গুলোও পরিষ্কার করে ফেলে। অন্যদিকে রিজভী আর কামিনী চৌধুরী মেনশন থেকে বেশ অনেকটা দূরে একটা ফাঁকা মাঠে এসে গাড়ি থামায়। সেখানেই রুবিনার জন্য ক*ব*র খুঁ*ড়ে তাকে দা*ফ*ন দিয়ে বাসায় ফিরে আসে ওরা। সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাটি অনেক সময় ধরে কাঁদতে কাঁদতে নে*তি*য়ে পড়েছে। কামিনী বাচ্চাটিকে নিজের কোলে তুলে নেয়। সাবরিনা সায়মনকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..
—“তুমি আর রিজভী রায়হানুলকে নিয়ে আমাদের পরিচিত ক্লিনিকে যাও। ডাক্তার খালেকুজ্জামানের আন্ডারে রাখার ব্যবস্থা করবে ওনাকে। এই বিষয়টাকে এ*ক্সি*ডে*ন্ট প্রমাণ করতে যতো টাকা ব্যয় করতে হয় করো। আর খালেককে একটা বিষয় খুব ভাবে বুঝিয়ে দিবে যে, রায়হানুলের যেনো কখনও সে*ন্স না ফেরে। জীবিত লা*শে*র মতো করে রাখতে হবে ওনাকে।”
সাবরিনার কথানুযায়ী রিজভী আর সায়মন রায়হানুলকে উঠিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। ওরা চলে যেতেই সাবরিনা কামিনীর কাছে গিয়ে বাচ্চা মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বললেন….
—“আমি একে পরিষ্কার করিয়ে আমার বোনের বাসায় রেখে আসার ব্যবস্থা করছি। কিছুদিন ও আমার বোনের বাসাতেই থাকবে। তুই সিঁড়ির উপর ফেলে রাখা তেলগুলো আর মেঝেতে জায়গায় জায়গায় লেগে থাকা সব র*ক্ত গুলো ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নে। তোর শাড়িতে অনেক র*ক্ত লে*গে আছে। ফ্রেশ হয়ে এই শাড়িটাও আগুন দিয়ে পু*ড়ি*য়ে ফেলবি৷ কেও যেনো বিন্দুমাত্র স*ন্দে*হ করতে না পারে।”
এই বলে সাবরিনা নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হন। কামিনীও নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বেশ কয়েক ঘন্টা পর…….
নিজরুমে সাগরিকা চৌধুরীর ঘুম ভে*ঙে গেলে তিনি ধীর গতিতে শোয়াবস্থা থেকে উঠে বসেন। অত্যাধিক মাথা য*ন্ত্র*ণা করায় তিনি একহাতে মাথা চে*পে ধরে বললেন….
—“এতো মাথা য*ন্ত্র*ণা করছে যে কেনো! কোনোদিন তো এমন হয় না। আজ দুপুরের ঔষধ খাওয়ার পরই কেমন ঘুম পাচ্ছিলো কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তা বুঝতে পারি না।”
এই বলে সাগরিকা চৌধুরী বিছানা থেকে নেমে ধীরপায়ে হাঁটতে হাঁটতে রুম থেকে বেড়িয়ে আসেন। ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়াতেই দেখলেন সাবরিনা, কামিনী চি*ন্তি*ত মুখশ্রী করে সোফায় বসে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছেন। সাগরিকা চৌধুরী শান্ত স্বরে বললেন….
—“মেজো বউমা…ছোট বউমা…কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছো তোমরা! তোমাদের এমন চিন্তিতই বা দেখাচ্ছে কেনো? আর বড় বউমা কোথায়?”
আকস্মিক সাগরিকা চৌধুরীর উপস্থিতিতে ওরা ২জনেই কিছুটা ভ*র*কে যায়। পরক্ষণেই নিজেদের সামলে নেয় ওরা। সাবরিনা শান্ত স্বরে বললেন….
—“আম্মা…আপনি ঘুম থেকে উঠে গিয়েছেন! আসুন এখানে এসে বসুন।”
সাগরিকা চৌধুরী ধীরপায়ে সোফার কাছে এসে বসলেন। পরক্ষণেই কামিনী বললেন…
—“আম্মা….আপনার শরীর ঠিক আছে তো? মুখ-চোখ গুলো কেমন ফু*লে গিয়েছে।”
সাগরিকা চৌধুরী শান্ত স্বরে বললেন….
—“দুপুরে তুমি আমাকে ঔষধ খেতে দিলে! ঔষধ খাওয়ার পরপরই ভিষণ ঘুম পাচ্ছিলো আমার এরপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। একটু আগেই ঘুম ভা*ঙ*লো পর থেকেই মাথাটা ভিষণ য*ন্ত্র*ণা করছে। হঠাৎ এমন হওয়ার কারণ বুঝতে পারছি না।”
সাগরিকা চৌধুরীর কথা শেষ হতে না হতেই মূল দরজা দিয়ে রিজভী আর সায়মন বাসার ভিতরে প্রবেশ করলেন। ওদের দু’জনকে দেখে সাগরিকা চৌধুরী বললেন….
—“কি ব্যপার..মেজো খোকা, ছোট খোকা তোরা দু’জন আসলি বড় খোকা আসলো না!”
সায়মন আর রিজভী সোফায় বসলেন। সায়মন শান্ত স্বরে বললেন….
—“সে কি বড় ভাইয়া এখনও বাসায় ফেরেন নি! দুপুরের পরপরই তো বড় ভাইয়া বড় ভাবীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে চেকআপ করাবেন বলেই অফিস থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলেন। এতোক্ষণে তো বাসায় ফেরার কথা৷”
সাগরিকা চৌধুরী কামিনীকে উদ্দেশ্য করে বললেন…
—“ছোট বউমা…বড় বউমার রুমে গিয়ে দেখো তো ও আবার এসে ঘুমিয়ে গিয়েছে কিনা।”
—“ঠিক আছে আম্মা।”
এই বলে কামিনী সোফা ছেড়ে উঠে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় রুবিনার রুমের অগ্রসর হতে হতে মনে মনে বললেন….
—“রুমে তো তাকে পাওয়া আর সম্ভব হবে না আম্মা। অনেক আগেই তাঁকে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে চা*পা দিয়ে এসেছি।”
কিছুসময় পর কামিনী সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বললেন…
—“আম্মা..বড় ভাবী তো তার রুমে নেই। তারমানে ওনারা এখনও বাসায় ফেরেন নি।”
সেইসময় সায়মনের ফোন বেজে উঠে। পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখলেন ডাক্তার খালেকুজ্জামান কল করেছেন। সায়মন তার কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে খালেক বললেন….
—“সায়মন স্যার..রায়হানুল স্যারের অবস্থা আগের থেকে এখন অনেকটা বেটার হয়েছে। আমি আপনার কথানুযায়ী ওনার শরীরে কড়া ডোজের একটা ঔষধ ইনজেক্ট করে দিয়েছি। এই ঔষধ এর প্রভাবে উনি জীবন্ত লা*শে*র মতো হয়ে যাবেন। প্রতিদিন ওনার শরীরে একটা করে এই ঔষধ ইনজেক্ট করতে হবে। তাহলে উনি আর কখনই স্বজ্ঞানে ফিরতে পারবেন না। আর আমরা তখন এটা বলতে পারবো যে উনি গাড়ি এ*ক্সি*ডে*ন্টে*র কারণে মাথায় গু*রু*তর ভাবে আ*ঘা*ত পাওয়ায় কো*মা*য় চলে গিয়েছেন।”
খালেকের কথাগুলো শোনার পর সায়মন কল কেটে দিয়ে ওভাবেই ফোন কানে ধরে রেখে সকলকে শোনাতে বললেন…
—“কি বলছেন কি আপনি ডাক্তার! বড় ভাইয়ার এ*ক্সি*ডে*ন্ট হয়েছে! মাথায় গু*রু*তর ভাবে আ*ঘা*ত পেয়েছেন! আপনার ক্লিনিকেই ভর্তি আছেন বড় ভাইয়া! আচ্ছা আচ্ছা আমরা আসছি, এক্ষুণি আসছি।”
সায়মনের মুখে এরূপ কথা শুনে সাগরিকা চৌধুরী উত্তজিত হয়ে উঠে বললেন….
—“মেজো খোকা..কি বলছিস তুই এসব! আমার বড় খোকার এ*ক্সি*ডে*ন্ট হলো কি করে?”
সায়মন ওর কান থেকে ফোন সরিয়ে সোফার উপর রেখে বললেন…
—“আম্মা…আপনি টেনশন করবেন না। আমি আর রিজভী ক্লিনিকে যাচ্ছি। বড় ভাইয়ার অবস্থা আসলে কেমন তা দেখে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে আসবো আমরা।”
সাগরিকা চৌধুরী বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন…
—“তোদের সাথে আমাকেও নিয়ে চল। না জানি আমার বড় খোকা, বড় বউমা কি অবস্থায় আছে। আমিও যাবো।”
এই বলে সাগরিকা চৌধুরী মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলে সাবরিনা তাকে ধরে আবারও সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললেন…
—“আম্মা..আপনি শান্ত হন। এতো বেশি উত্তেজিত হবেন না। আপাতত ওরা দু’জন গিয়ে পরিস্থিতি হাতের নাগালে নিয়ে আসুক। তারপর আমি আর কামিনী আপনাকে ওখানে নিয়ে যাবো। শান্ত হন আপনি আম্মা। তোমরা যাও আর পরিস্থিতি কেমন হয় তা জানাইও।”
সায়মন বললেন….
—“ঠিক আছে। রিজভী চল…!”
এই বলে সায়মন আর রিজভী বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলেন। গাড়িতে উঠে বসতেই রিজভী বাঁ*কা হেসে বললেন….
—“আরে বাহ মেজো ভাইয়া… তুমি তো সুপার এক্টিং জানো। এমন ভাবে পরিস্থিতিটা সাজালে তুমি আর মেজো ভাবী যে কারোর শক্তিও হবে না আমাদের এক চুল পরিমাণ স*ন্দে*হ করার। বড় ভাইয়ের বিষয়টা তো সামলে নেওয়া গেলো কিন্তু বড় ভাবীর বিষয়টা সামলাবে কি বলে! তাকে তো অলরেডি দা*ফ*ন করে দিয়ে এসেছি।”
সায়মন গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললেন….
—“সেই প্লান ও তৈরি করে রেখেছে তোর মেজো ভাবী।”
চলবে ইনশাআল্লাহ……