হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-৭৬

0
604

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৯৭)
চৌধুরী মেনশনে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছেন কুশল ব্যতিত চৌধুরী পরিবারের সকল সদস্যরা। সেইসময় ল্যন্ডলাইনের ফোনটি বেজে উঠলে সায়মন উঠে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন পুরুষের অস্থির কন্ঠে বলা শব্দগুলো ভেসে আসে…..

—“হ্যালো…হ্যালো…আমি নারায়ণগঞ্জের সাইডের নতুন ফ্যক্টোরির নাইট সিফটের সিকিউরিটি গার্ড কাশেম বলছিলাম। সায়মন স্যার কি আছেন আশে-পাশে! ওনাকে অনেক সময় হলো কল করছি কিন্তু স্যারের কোনো রেসপন্স না পেয়ে বাধ্য হয়ে এখানে কল করলাম।”

সায়মন শান্ত স্বরে বললেন….
—“হুম, কাশেম বলো কি হয়েছে!”

—“স্যার….অনেক বড় একটা দূ*র্ঘ*টনা ঘটে গিয়েছে। আমি একটু আগে ডিউটির জন্য ফ্যক্টোরিতে প্রবেশ করতেই দেখি ফ্যক্টোরির ভিতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর ফ্যক্টোরির সামনে একটা বিশাল গাড়িও দাঁড় করানো আছে। পরে আমি দ্রুত ফ্যক্টোরির ভিতরে গিয়ে দেখি একটা রুমের ভিতর থেকে দরজার নিচ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দরজা খুলতেই দেখি রুমের ভিতরে মাঝবরাবর মেঝের উপর কারোর আ*গু*নে দ*গ্ধ হয়ে যাওয়া লা*শ পড়ে আছে। লা*শ*টি এতোটাই বি*ভ*ৎ*স ভাবে পু*ড়ে গিয়েছে যে তা দেখে চেনা সম্ভব না এটা কার লা*শ হতে পারে। তবে এখানে পরে থাকা লাশটির থেকে কিছুটা দূরে আমি একটা ওয়ালেট পেয়েছিলাম। ওয়ালেটটি খুলে দেখে যা বুঝলাম এটা সম্ভবত কনক স্যারের ওয়ালেট!”

কাশেমের মুখে শেষ লাইনের কথাটুকু শোনামাত্র সায়মনের হাত থেকে ফোনটা ধ*প করে নিচে পড়ে যায়। আকস্মিক এমন হতে দেখে উপস্থিত বাকিরা বেশ অবাক হয়। সাবরিনা সোফা ছেড়ে উঠে সায়মনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার কাঁধের উপর হাত রেখে বললেন…

—“কি গো কি হয়েছে তোমার! শরীর খা*রা*প লাগছে নাকি!”

সায়মন সাবরিনার দিকে তাকিয়ে কিছুটা থ*ম*কা*নো স্বরে বললেন….
—“ক-কন-কনক!”

অনন্যা সায়মনকে এভাবে কনকের নাম উচ্চারণ করতে শুনে কিছুটা অস্থির হয়ে বললো….

—“কনক..বাবা কনকের কি হয়েছে! ও তো..বেশ কয়েকঘন্টা আগে নারায়ণগঞ্জের সাইডের নতুন ফ্যক্টোরিতে অনেক বড় স*ম*স্যা হয়েছে বলে সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গিয়েছিলো। ওখানের কোনো খবর পেয়েছেন আপনি! আমার কনক ঠিক আছে তো বাবা!”

অনন্যার মুখে এরূপ কথা শুনে সায়মন ‘ইয়া আল্লাহ’ বলে সোফার কাছে এসে ধ*প করে সেখানে বসে পড়েন। শুধু কামিনী আর রিজভী ব্যতিত উপস্থিত সবার ভিতর চি*ন্তা আর ভ*য় কাজ করতে শুরু করেছে। অনন্যা একহাতে ভ*র দিয়ে উঠে সায়মনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কাঁ*পা*ন্বিত স্বরে বললো…

—“বাবা…দয়া করে চুপ করে থাকবেন না আপনি। শুধু এতোটুকু বলুন আমার কনক ঠিক আছে। ওর কোনো বি*প*দ হয় নি।”

সাবরিনা দ্রুত পায়ে অনন্যার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন….
—“বউমা শান্ত হও, এই সময় এতো অস্থির ও উ*ত্তে*জি*ত হওয়া ভালো নয়। বাবুর উপর এর বা*জে প্রভাব পড়বে।”

অনন্যা এবার আর না পেরে কান্না করে দিয়ে বললো…
—“মা! বাবা কেনো এভাবে চুপ করে আছেন? তাকে বলতে বলুন না যে কনক ঠিক আছে। ওর কোনো স*ম*স্যা হয় নি।”

সাবরিনা অনন্যাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিয়ৎক্ষণ পর সায়মন সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন….

—“আমাকে এক্ষুণি নারায়ণগঞ্জ সাইডের ফ্যক্টোরিতে যেতে হবে। ওখানে না যাওয়া পর্যন্ত, নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত আমি তোমাদের কিছুই বলতে পারবো না।”

এই বলে সায়মন কাওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুতপায়ে বাহিরে চলে যান। কামিনী ওর কনুই দিয়ে রিজভীকে হালকা ভাবে একবার গুঁ*তো দিতেই রিজভী কামিনীর ইশারা বুঝতে পেরে সোফা ছেড়ে উঠে বললেন….

—“মেজো ভাবী..মা…বউ মা রা..তোমরা চিন্তা করো না। আমিও যাচ্ছি মেজো ভাইয়ের সাথে। দোয়া করো যেনো বড় কোনো দূ*র্ঘ*ট*না বা স*ম*স্যা না হয়।”

এই বলে রিজভীও সায়মনের পিছন পিছন চলে যায়। অনন্যার এখুনি নিজেকে দিশে*হা*রা দিশে*হা*রা লাগছে। সাবরিনা অনন্যাকে ধরে সোফায় এনে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসেন। অনন্যা উ*ত্তে*জি*ত স্বরে বললো….

—“মা..আপনার ছেলের কিছু হলে আমি আর আমার ভিতরে বেড়ে উঠা এই প্রাণটি যে বেঁচে থাকতেই জি*ব*ন্ত লা*শে পরিণত হয়ে যাবো। মা…ওর কিছু হবে না তো বলেন! ও সুস্থ ভাবে আবার আমাদের কাছে ফিরে আসতে পারবে তো! ও মা…বলেন না!”

সাবরিনার বুকের ভিতরেও যেনো অজানা য*ন্ত্র*ণা*রা দলা পেঁ*কে পেঁ*কে আসছে। তরুনিমার চেহারাতেও চি*ন্তার ছা*প স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তরুনিমা মনে মনে বললো….

—“কুশল..কোথায় আপনি! কনক ভাইয়াকে কি সঠিক সময় বি*প*দে*র হাত থেকে র*ক্ষা করতে পারেন নি আপনি! আল্লাহ আপনি ভালোদের প্রতি সহায় হন।”

(১৯৮)
প্রায় আধঘন্টার একটু বেশি সময় নিয়ে ড্রাইভিং করার পর রিজভী আর সায়মন গাড়ি নিয়ে নারায়ণগন্ঞ্জ সাইডের ফ্যক্টোরির মূল গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে একপার্শে গাড়ি থামায়। সায়মন আর রিজভী দ্রুততার সাথে গাড়ি থেকে নামতেই ফ্যক্টোরির সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়িটির দিকে তাকায়। সায়মন থ*ম*কে আসা স্বরে বললেন….

—“আল্লাহ…আপনি এতো নি*ষ্ঠু*র হবেন না। আমার ছেলেটার যেনো কোনো ক্ষ*তি না হয়।”

রিজভী মনে মনে বললেন…..
—“সায়মন চৌধুরী…নিজের চোখের সামনে নিজের একমাত্র ছেলের দ*গ্ধ-বি*ভ*ৎ*স, বি*শ্রী অবস্থায় পড়ে থাকা লা*শ দেখার পর যখন তুমি আরো অত্যাধিক য*ন্ত্র*ণা*য় ছ*ট-ফ*ট করবে, আ*র্ত*নাদ করবে তখন আমার মনের ভিতরে কি যে প্রশান্তি কাজ করবে তা এখন আর ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।”

পরক্ষণেই সায়মন ফ্যক্টোরির ভিতরের দিকে অগ্রসর হতে হতে ‘কাশেমের’ নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকতে শুরু করে। রিজভীও বাঁ*কা হেসে সায়মনের পিছন পিছন যেতে শুরু করে। সায়মনের ডাক শোনামাত্র কাশে দ্রুত পায়ে সেই কক্ষ থেকে বেড়িয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। সায়মন বললেন…

—“কোন রুমে আ*গু*ন লেগেছিলো! আর ওয়ালেটটা কোথায়! দাও আমায়। নিয়ে চলো ঐ রুমে আমাদের।”

—“আসেন স্যার…এদিকে।”

কাশেম ওদের দু’জনকে সেই কক্ষের কাছে নিয়ে আসে। সায়মনের হৃদ পিন্ড অনেক দ্রুততার সাথে স্পন্দিত হচ্ছে। কাশেম ওর নিজের পকেট থেকে লা*শে*র পাশ থেকে পাওয়া সেই ওয়ালেটটা বের করে সায়মনকে দেয়। সায়মন কাঁ*পা হাতে ওয়ালেটটা নেয় ঠিকই কিন্তু খুলে তা পরীক্ষা করার সাহস না পেয়ে রিজভীর হাতে দিয়ে দেয়।

সায়মন আর রিজভী দু’জনেই সেই কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করে। দু’জনের দৃষ্টিই মেঝের উপর পড়ে থাকা বি*ভ*ৎ*স ভাবে পু*ড়ে যাওয়া লা*শ*টির ওপর স্থির হয়। সায়মনের দু’চোখ ইতিমধ্যে নোনাজলে ভরপুর হয়ে উঠেছে। পরক্ষণেই রিজভী ওর হাতে থাকা ওয়ালেটটি খুলে ভিতরে অনন্যা আর কনকের একটা কাপল পিক, গাড়ির চাবি, কিছু কার্ডস রাখা দেখে নিজের আনন্দ ভাবে আপাতত চে*পে রেখে মুখের উপর খা*রাপ লাগার মি*থ্যে ছাপ ফুটিয়ে বললেন….

—“মেজো ভাইয়া…এই ওয়ালেটটা যে কনকের এ নিয়ে কোনো স*ন্দে*হ নেই।”

সায়মন কাঁ*পা*ন্বি*ত পায়ে লা*শ*টির একেবারে কাছে গিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে মেঝের উপর বসে পরে। লাশটি থেকে এখনও হালকা ধোঁয়া বের হচ্ছে। বি*শ্রী পো*ড়া গন্ধ রিজভীর নাকে এসে লাগায় সে নিজের প্যন্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে তা দিয়ে আলতো ভাবে নিজের নাক-মুখ চেপে ধরে রাখে। সায়মন একদৃষ্টিতে লা*শ*টি*র দিকে তাকিয়ে আছে। খুবই বা*জে ভাবে পু*ড়ে গিয়েছে শরীরের প্রত্যেকটি অংশ। সেইসময় সায়মনের চোখ পড়ে লাশটির গলায় পো*ড়া র*ক্ত ও ঝ*ল*সা*নো চামড়া লেগে থাকা একটা চেইনের উপর। চেইনটির সাথে একটি লকেট ও রাখা ছিলো যা লা*শ*টির উপর উপর পড়ে আছে। সায়মন কা*পা*ন্বি*ত হাতে সেই লকেটটি হাতে নিয়ে তা খুলতেই ভিতরে একপার্শে অনন্যা আর কনকের কাপল ছবি আর অন্যপার্শে নিজের ও সাবরিনার ছবি স্পষ্ট ভাবে দেখতে পায়। সায়মনের আর বুঝতে বাকি থাকে না এই লা*শ*টি যে তার একমাত্র ছেলে কনকের। সায়মন ‘কনক….আমার ছেলে…আহাহা আআ’ বলে উচ্চস্বরে আ*র্ত*না*দ করে উঠে। সায়মনের আ*র্ত*নাদ এই রুমের চারপাশে থাকা প্রতিটি দেওয়ালের সাথে যেনো বা*রি খাচ্ছে। রিজভীর চোখে-মুখে আনন্দ-পরিতৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠে। কাশেম ওদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে ঠা*য় দাঁড়িয়ে আছে। রিজভী নিজেকে সামলে নিয়ে সায়মনের পাশে এসে হাঁটু ভাঁ*জ করে বসে মি*থ্যে শান্তনা দেওয়ার নাটক করতে বললেন…

—“মেজো ভাইয়া…নিজেকে সামলাও। কনক যে আর আমাদের মাঝে নেই। এই তি*ক্ত সত্যটাকে মেনে নিতে হবে তোমায়। কনকের লা*শ নিয়ে আমাদের বাড়িতে যেতে হবে। মা, ভাবী, বউমার এই কঠিন সময়ে তোমাকে তাদের পাশে থাকতে হবে। তুমি এভাবে ভে*ঙে পড়লে তাদের সামলাবে কে!”

সায়মন পিছন ঘুরে রিজভীকে জড়িয়ে ধরে উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন…

—“রিজভী…ভাই আমার…আল্লাহ আমাদের এ কোন কঠিন পরীক্ষার ভিতর ফেললেন! আমাদের কলিজার ধনদের আমাদের থেকে চিরতরের জন্য এভাবে কেনো কেঁ*ড়ে নিচ্ছেন! এই কঠিন য*ন্ত্র*ণা যে আমিই সহ্য করতে পারছি না রে ভাই। আমার এতো সুন্দর রাজ কুমারের মতো ছেলেটার এমন বি*ভ*ৎ*স অবস্থা কোন জা*লি*ম করলো! আমার ছেলেটাকে কি ঐ জা*লি*মে*রা বেঁচে থাকা অবস্থায় পুঁ*ড়ি*য়ে*ছিলো! কতোটা ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণা সহ্য করে আমার ছেলেটা এই দুনিয়ার মায়া ত্য*গ করেছে। আমার বুকের ভিতরটা যে ক্ষ*ত-বি*ক্ষ*ত হয়ে আসছে। বাবা হয়ে নিজের ছেলের লা*শ কাঁধে তুলবো কি করে ভাই। আমি পারছি না নিজেকে সামলাতে। সহ্য হচ্ছে না এই য*ন্ত্র*ণা। আআ হাহা আআ….!”

রিজভী মনে মনে কঠিন কন্ঠে বললো….
—“তোমাদের জন্য আমাকেও আমার একমাত্র ছেলের লা*শ কাঁধে তুলতে হয়েছিলো। অ*ন্ধ*কার ক*ব*রে দা*ফ*ন করে আসতে হয়েছিলো। যেমন কর্ম করেছো এখন তেমনই ফল ভো*গ করছো। খুব তাড়াতাড়ি তোমার আর তোমার স্ত্রীর পরিণতিও তোমাদের ছেলের মতোই বি*ভ*ৎ*স করবো।”

বেশ কিছুসময় পর সায়মন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছে বুঝে রিজভী কাশেমের সহোযোগিতায় কনকের লা*শ উঠিয়ে নিয়ে গাড়ির পিছন সিটে রাখে। অতঃপর সায়মনকে ধরে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসিয়ে দিয়ে রিজভী নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৬ পর্বের ২য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৯৯)
চৌধুরী মেনশনে ড্রয়িং প্লেসে চি*ন্তি*ত মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে চৌধুরী পরিবারের বাকি সদস্যরা। কুশল এখনও বাসায় ফেরে নি। সকলের আড়ালে বেশ কয়েকবার তরুনিমা কুশলকে কল ও মেসেজ করেছে কিন্তু কোনো রেসপন্স সে পায় নি তাই ওর মাঝেও অস্থিরতা, ভ*য় সমান ভাবে কাজ করছে। অনন্যার কান্না ও অস্থিরতা অনেক বুঝিয়েও কেও কমাতে পারে নি। অনবরত কনকের নাম্বারে কল করে যাচ্ছে অনন্যা কিন্তু প্রতিবারই সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে আপনা-আপনি কে*টে যাচ্ছে কল।

চৌধুরী মেনশনের মূল গেইট দিয়ে একেবারে ভিতরে এসে রিজভী গাড়ি থামায়। অতঃপর দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে ২জন গার্ডসকে ডাকে আর দুটো চাদর আনতে বলে। কিয়ৎক্ষণ পর দুটো চাদর নিয়ে গার্ডস দু’জন আসলে রিজভী ওদের উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“এখানে একটা চাদর বিছিয়ে দাও।”

একজন গার্ডস গাড়ির সামনে একটা চাদর বিছিয়ে দেয়। রিজভী আবারও বললেন….

—“এবার গাড়ির ভিতর থেকে সাবধানে কনকের লা*শ নামিয়ে চাদরের উপর রাখো।”

রিজভীর মুখে কনকের লা*শ নামানোর কথা শুনে গার্ডস দু’জন ভ*র*কে গিয়ে একে-অপরের দিকে তাকায়। অতঃপর দু’জনেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে দু’পাশ থেকেই গাড়ির দরজা খুলতেই ভিতরে বি*ভ*ৎ*স ভাবে পু*ড়ে যাওয়া কনকের লা*শ দেখে ওদের দু’জনেরই চোখ-মুখের ধরণ পুরোপুরি ভাবে পাল্টে যায়। পরক্ষণেই ওরা নিজেকে সামলে নিয়ে কনকের লা*শ গাড়ি থেকে সাবধানে নামিয়ে চাদরের উপর রাখে। আরেকটি চাদর দিয়ে কনকের পুরো শরীর ঢেকে দেয়। রিজভী ওদের উদ্দেশ্য করে আবারও বললেন…

—“বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাও।”

গার্ডস দু’জন আরো দু’জন গার্ডকে ডেকে আনে এরপর চারজন মিলে কনকের লা*শ উঠিয়ে চৌধুরী মেনশন ভিতরে যেতে হাঁটা ধরে। রিজভী সায়মনের সিটের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন….

—“মেজো ভাইয়া! গাড়ি থেকে নামো। ভিতরে যেতে হবে আমাদের।”

সায়মন ছল ছল দৃষ্টি নিয়ে রিজভীর দিকে তাকিয়ে বললেন….
—“আমি সাবরিনা, বউমা আর মায়ের সম্মুখীন হতে পারবো না রে ভাই। আমাকে এখানেই থাকতে দে।”

রিজভী তবুও কিছুটা জোর করেই সায়মনকে গাড়ি থেকে বের করে ধরে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে যেতে হাঁটা ধরে মনে মনে বললেন…

—“সম্মুখীন তো তোমাকে হতেই হবে সায়মন চৌধুরী। আমি আর আমার স্ত্রী তোমাদের জন্য আমাদের ছেলে হা*রা*নো*র ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণা সহ্য করেছি তখন তোমরা একসাথে দাঁড়িয়ে মজা দেখেছো কিন্তু এবার হবে তার উল্টো। এবার তোমরা য*ন্ত্র*ণা সহ্য করবে আর আমরা একসাথে দাঁড়িয়ে মজা নিবো।”

গার্ডসরা চাদরে পুরোপুরি ভাবে মোড়ানো অবস্থায় কনকের লা*শ নিয়ে বাড়ির মূল দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই ওরা সকলেই সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কামিনী নিজের বিনুনি ঘন ঘন নাড়াতে নাড়াতে মনে মনে বললেন….

—“নিজের ছেলে পু*ড়ে যাওয়া বি*ভ*ৎ*স লা*শ দেখার জন্য প্রস্তুত হও মিসেস.সাবরিনা চৌধুরী। তোমাদের আ*র্ত*না*দ করার দৃশ্য নিজের চোখে দেখার জন্য এই আর তর সইছে না।”

গার্ডসরা মেঝের উপর লা*শ*টি রাখতেই সাবরিনা বেশ কয়েকবার গার্ডসদের প্রশ্ন করেছে কিন্তু ওরা কোনো উত্তর না দিয়েই নিঃশব্দে স্থান ত্যগ করে। সকলের দৃষ্টি মেঝের উপর রাখা কনকের লা*শে*র উপর স্থির। চাদর দিয়ে ঢাকা থাকলেও লা*শ*টির উচ্চতাই সকলকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনন্যা ওর পেটের উপর একহাত রেখে ধীরপায়ে কনকের লা*শে*র দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। সাবরিনা ওকে আটকাতে নিলে কামিনী এসে সাবরিনাকে আটকে দেয়। তরুনিমা মনে মনে বললো…

—“আল্লাহ এতো বড় কঠিন পরিস্থিতির সামনে আমাদের দাঁড় করিয়েন না। অনন্যা ভাবি আর কনক ভাইয়ের অনাগত সন্তানের কথা ভেবে দয়া করুন। কনক ভাইয়া যেনো না হয় এখানে। কুশল…আপনি কোথায়! এই চি*ন্তা যে আর নিতে পারছি না। একটা তো মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিন যে আপনি আর কনক ভাইয়া দু’জনেই সুস্থ আছেন নিরাপদে আছেন।”

অনন্যা কনকের লা*শে*র মাথার কাছে এসে বেশ ক*ষ্ট করে মেঝের উপর বসে। সেইসময় রিজভী, সায়মন দু’জনেই বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। বাকিরা ওদের দিকে লক্ষ্য করে। ওদের সাথে তো কনক নেই। সায়মনের চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছে স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেকটা ভিষনই অস্বাভাবিক লাগছে তাঁকে দেখতে। সাবরিনা সায়মনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। অনন্যা শব্দ করে পর পর কয়েকবার নিঃশ্বাস ফেলে কাঁ*পা*ন্বি*ত হাত এগিয়ে লা*শ*টির মুখের উপর থেকে চাদর সরায়। সঙ্গে সঙ্গে আ*গু*নে ঝ*ল*সে যাওয়া বি*ভ*ৎ*স মুখশ্রী অনন্যা দেখতে পেয়ে ভ*য়ে ‘আআআআআ’ বলে চি*ৎ*কা*র করে উঠে বসা অবস্থাতেই পিছনের দিকে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে দু’হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে দু’চোখ বুঁজে ফেলে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। রিজভী কামিনীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তরুনিমা ছুটে যায় অনন্যার কাছে। কামিনী আর সাগরিকা দূর থেকেই লা*শ*টির বি*ভ*ৎ*স মুখশ্রী একবার দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে।সায়মন ধ*প করে দু’হাটু ভাঁ*জ করে মেঝের উপর বসতে নেয় সাবরিনা ‘কি গোওও’ বলে তাকে ধরে নেয় এবং দু’জনেই সেখানে বসে পরে। তরুনিমা অনন্যাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। সায়মন হু হু করে কান্না করতে করতে বললো…..

—“পারলাম না গো কনকের মা…আমাদের কলিজার ধনটাকে বাঁচাতে পারলাম না। জা*লি*ম*রা আমাদের কনককে আ*গু*নে পু*ড়ি*য়ে মে*রে ফেলেছে। আহা আমাদের সোনা টুকরো ছেলেটার কি অবস্থা হয়েছে। আহারেএএএএ।”

সায়মনের এরূপ কথা শুনে সাগরিকা সোফায় বসে কান্না করতে শুরু করলেন। সাবরিনা পুরোপুরি ভাবে স্ত*ব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন সায়মনের দিকে। অনন্যা সঙ্গে সঙ্গে চি*ৎ*কার করে কাঁদতে কাদতে বললো…..

—“না..না..এ হতে পারে না। আমার কনক আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। ও ও আমার কনক নয়। আমার কনক বেঁচে আছে আমি জানি। ও সুস্থ আছে আমি জানি।”

সাবরিনা সায়মনকে ছেড়ে দিয়ে তার পাশেই ধ*প করে বসে পড়েছেন। যেনো মূহূর্তের মধ্যেই তিনি মানুষ থেকে পাথরে পরিণত হয়ে গিয়েছেন। সেইসময় রিজভী ওর পকেট থেকে কনকের ওয়ালেটটা বের করে অনন্যার সামনে লা*শে*র পাশে রেখে লা*শ*টির গলায় থাকা সেই র*ক্ত ও পো*ড়া চামড়া লেগে থাকা চেইনটা বের করে চাদরের উপর রেখে সেখান থেকে সরে এসে দাঁড়িয়ে মি*থ্যে খা*রা*প লাগার ভা*ন ধরে বললেন….

—“এটা আমাদের কনকেরই লা*শ বউমা। মি*থ্যে বলে মি*থ্যে আশ্বাস দিয়ে সত্যকে চে*পে রেখে কি বা হবে! সত্য যতো তি*ক্ত*ই হোক না কেনো তা আমাদের মেনে নিতেই হবে।”

অনন্যার দৃষ্টি স্থির হয় কনকের ওয়ালেট আর ওর বুকের উপর থাকা খোলা লকেট ওয়ালা চেইনটির উপর। অনন্যা কান্না থামিয়ে বসা অবস্থাতেই আবারও কনকের লা*শে*র কাছে এগিয়ে এসে ওয়ালেটটা হাতে নিয়ে তা মেলে ভিতরটা দেখে কিছুসময়। পরক্ষণেই থেমে গিয়ে চোখ বন্ধ করে মাথা উপরের দিকে কিছুটা তুলে শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে সেখানেই সেন্স লে*স হয়ে পড়ে যায় অনন্যা। তরুনিমা দ্রুত অনন্যার কাছে আসে। এরপর কয়েকজন মহিলা সার্ভেন্টের সহযোগিতায় অনন্যাকে উঠিয়ে তার রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয় তারা। তরুনিমা অনন্যার কাছেই রয়ে যায়। কামিনী আঁচল দিয়ে নিজের মু*খ চে*পে ধরে শব্দ করে মি*থ্যে কান্নার নাটক করতে করতে সাবরিনার কাছে এসে বসে বললেন….

—“ভাবী…ভাবী…এভাবে পাথরের মতো শ*ক্ত হয়ে থেকো না। দয়া করে কান্না করো তুমি। ভাবী…ভাবী গোওও…!”

সাবরিনা এখনও আগের মতোই নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।
.
.
.
রাতের বেলা…..
অনন্যা ঘুমিয়েছে বুঝে তরুনিমা অনন্যার রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখে কুশল ওর জন্য বরাদ্দকৃত সোফায় বসে আছে। ওর চেহারায় বরাবরের মতোই শান্ত ভাব স্পষ্ট আছে। তরুনিমা কুশলের সাথে কথা বলতে ওর দিকে এগোতে নিলে সেইসময় সন্ধ্যা সোফা ছেড়ে উঠে তরুনিমাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো….

—“মেজো ভাবী…আমাদের পরিবারের সাথে এসব কি হচ্ছে! হুট করেই কে আমাদের এতো বড় শ*ত্রু হয়ে দাঁড়ালো পর পর আমার দুই ভাই এতো বি*ভ*ৎ*স ভাবে মে*রে ফেললো। এই অজানা শ*ত্রু*র মোকাবিলা আমরা কি করে করবো! বারবার প্রিয়জনদের চিরতরের জন্য হা*রি*য়ে ফেলার এই অ*সহনীয় য*ন্ত্র*ণা যে আর স*হ্য করা যাচ্ছে না।”

সন্ধ্যার মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে তরুনিমা বেশ অবাক হয়। এখন ঠিক ওর কি করা উচিত তা ও বুঝতে পারছে না। তরুনিমা সন্ধ্যার পিঠে ও মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করে। পরক্ষণেই সামনেই তাকাতেই তরুর দৃষ্টি নিলাদ্রের উপর পরে। আর নিলাদ্র সেইমূহূর্তেই সকলের চক্ষুরালে তরুনিমাকে চোখ টি*প মা*রে। নিলাদ্রের এমন কাজে তরুনিমা হাসবে নাকি কাঁদবে তাও যেনো সে বুঝতে পারছে না। সেইসময় সন্ধ্যা কান্না করতে করতেই অত্যন্ত ধীরস্বরে তরুনিমার কানে কানে বললো…..

—“মেজো ভাবী..বড় ভাইয়া বেঁচে আছেন। মেজো ভাইয়া ওকে সঠিক সময়ে বাঁচিয়ে নিয়েছেন। এই কথা আমরা কয়েকজন ব্যতিত বড় ভাবীও জানে। ওনার আর বেবির কথা চিন্তা করে কৌশলে ভাবীকে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা মেজো ভাইয়া করেছেন। এখন আমাদের এমন ভাবে চলতে হবে যেনো সত্যিই বড় ভাইয়া আর আমাদের মাঝে নেই। শ*ত্রু পক্ষের কাওকে বিন্দুমাত্র স*ন্দে*হ করতে দেওয়া যাবে না। বুঝলে!”

এই বলে সন্ধ্যা আবারও শব্দ করে কান্না করতে শুরু করে। সন্ধ্যার বলা কথাগুলো শোনার পর তরুনিমার শুকিয়ে যাওয়া কলিজায় যেনো পানি আসে। নিলাদ্র যে চোখ টিপ দিয়ে এই বিষয়টাই বুঝাতে চেয়েছে তাও তরুনিমা বুঝতে পারে এতোসময় পর। কামিনী আর রিজভী দু’জনেই সাবরিনা আর সায়মনকে সামলাতে ব্যস্ত তাই এদিকে ওদের কারোরই নজর নেই।

কুশল সোফার সাথে হেলান দিয়ে ওর দু’চোখ বুঁজে ফেলে। সেইসময় ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে কয়েকঘন্টা পূর্বের ঘটনাগুলোর দৃশ্যপট…………

কুশল বেশকিছুটা দূরে থেকেই কনকের গাড়ি অনুসরণ করে গাড়ি চালাতে চালাতে পাশ থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে নিলাদ্রকে কল করে। ওপাশ থেকে নিলাদ্র কল রিসিভ করতেই কুশল বললো….

—“কি রে কোথায় তুই এখন!”

—“তোর কথানুযায়ী ৩০মিনিট আগেই আমি দু’জন গার্ডস নিয়ে ফ্যক্টোরির পিছন দরজায় গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।”

—“আচ্ছা…ওখানেই থাক। আমি আসছি কিছুসময়ের মধ্যেই।”

এই বলে কুশল কল কে*টে দেয়। বেশকিছুসময় পর কুশল লক্ষ্য করে কনক ওর গাড়ি নিয়ে ফ্যক্টোরির ভিতরে প্রবেশ করছে। অতঃপর কুশল নিলাদ্রকে মেসেজ করে ফ্যক্টোরির সামনে আসতে বলে। নিলাদ্র গাড়ি নিয়ে ফ্যক্টোরির সামনে দাঁড় করিয়ে ওর পিছনে বসা গার্ডসদের উদ্দেশ্য করে বললো…..

—“ঠিক ৫মিনিট পর ডে*ড বডিটা নিয়ে ফ্যক্টোরির ভিতর আসবে ওকে।”

—“ওকে স্যার।”

নিলাদ্র গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালে কুশল আর নিলাদ্র নিঃশব্দে ফ্যক্টোরির গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। অতঃপর ওরা ফ্যক্টোরির মূল দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই দরজার সামনে মেঝের উপর র*ক্ত আর পাশেই একটা লোহার রড পড়ে থাকতে দেখতে পায়। নিলাদ্র সেই রডটি হাতে তুলে নেয়। কুশল আর নিলাদ্র সেই র*ক্তের দা*গকে অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যায়। দেওয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়েই দু’জনেই লক্ষ্য করে রিজভীর ঠিক করা সেই লোকটি কনককে রুমের ভিতর মাঝবরাবর মেঝের উপর বিছানো লাল কার্পেটটির উপর শুইয়ে রেখে ওর উপর কেরোসিন-পেট্রোল আর বা*রু*দে*র গুঁড়ো ঢালছে। নিলাদ্র দেওয়ালের আড়াল থেকে বেরোতে নিলে কুশল ইশারায় ওকে থামতে বলে। নিলাদ্র না চাইতেও থেমে যায়। রিজভীর ঠিক করা লোকটি কনককে রাখা রুমের বাহিরে এসে পুরো বিষয়টা ভিডিও করতে শুরু করে। লোকটি যখন তার ফোন দেখতে ব্যস্ত ছিলো সেইসময় কুশল ওর প্যন্টের পিছন পকেট থেকে ছোট রি*ভ*ল*ভার*টা বের করে দেওয়ালের আড়াল থেকে বেড়িয়ে লোকটিকে নিজের গান পয়েন্টে রেখে তার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। পরক্ষনেই কুশল লোকটির মাথার পিছনে রি*ভ*ল*ভারটা রেখে বললো…..

—“একটুও যদি নড়চড় করার চেষ্টা করেছিস তো আমার রি*ভ*ল*ভার থেকে বের হওয়া যাস্ট একটা বু*লে*ট ই যথেষ্ট হবে তোর চ্যপ্টার ক্লোজ করতে।”

নিজেকে কুশলের গান পয়েন্টে থাকতে দেখে ঘা*ব*রে গিয়ে দু’হাত উপরে তুলে বললো….

—“স-স্যা-স্যার.. স্যার আমাকে মা*র*বে*ন না স্যার।”

সেইসময় নিলাদ্রের পাশে ওর আনা গার্ড দু’জন ডে*ড বডি নিয়ে দাঁড়ায়। কুশল বললো…..

—“নিলাদ্র..গার্ডসদের নিয়ে এদিকে আয় দ্রুত।”

নিলাদ্র আর গার্ডস দু’জন ডে*ড বডিটি নিয়ে কুশলের অন্যপাশে এসে দাঁড়ায়। কুশল গার্ডস দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“দ্রুত রুমের ভিতর গিয়ে কনক ভাইয়াকে বের করে আনো আর এই ডে*ড বডিটি কনক ভাইয়ার জায়গায় যেভাবে রাখা ছিলো সেভাবে রেখে দাও।”

গার্ডসরা কুশলের কথানুযায়ী কাজ করতে শুরু করে। কুশল নিলাদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“এর হাত থেকে ফোনটা নে। যে ভিডিওটা করেছে সেটা মি.রিজভী চৌধুরীর হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড কর।”

নিলাদ্রও কুশলের কথানুযায়ী কাজ করে। গার্ডসরা তাদের কাজ সম্পন্ন করতেই কুশল বললো….

—“ভাইয়াকে সাবধানে গাড়িতে রেখে তোমরা চলে যেও।”

—“ঠিক আছে স্যার।”

এই বলে গার্ডস দু’জন কনককে নিয়ে বাহিরে চলে যায়। কুশল ঐ লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললো…

—“রুমের দরজা বন্ধ করে আ*গু*ন লাগিয়ে দেওয়ার কাজ তুই-ই সম্পন্ন কর। তবে মনে রাখিস এখনও কিন্তু তুই আমার গান পয়েন্টেই আছিস। তাই জীবনের প্রতি মায়া থাকলে কোনোরকম চালাকি দেখানোর চেষ্টাও করবি না।”

কুশল আর নিলাদ্র পিছনের দিকে পিছিয়ে এসে দাঁড়ায় আর লোকটি নিজের শার্টের পকেট থেকে দেশলাই কাঠির বক্সটি বের করে দরজার বাহিরে থাকা কেরোসিন-পেট্রোল ও বা*রু*দের সংমিশ্রণের উপর আ*গু*ন ধরিয়ে দিয়ে পিছনের দিকে চলে আসে। কুশল আবার লোকটিকে নিজের গান পয়েন্টে রেখে ফ্যক্টোরির বাহিরে চলে আসে। অতঃপর লোকটির হাত-পা-মুখ খুব ভালোভাবে বেঁ*ধে নিলাদ্রের গাড়ির পিছন সিটে বসিয়ে দেয় আর নিলাদ্র তার গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে পরে। আর কুশল ওর গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার কনককে দেখে। কনকের সম্পূর্ণ শরীর কেরোসিন-পেট্রোল-বা*রু*দ এর গুড়ো লেগে আছে। ওর সম্পূর্ণ মুখে র*ক্ত লেগে আছে। কুশল গাড়ি স্টার্ট করে। নিলাদ্রও গাড়ি স্টার্ট করে কুশলের পিছন পিছন যেতে শুরু করে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৬ পর্বের ৩য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২০০)
পরেরদিন যথানিয়মে কনক বলে পরিচালিত সেই লাশটির দা*ফ*ন কার্য সম্পন্ন করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রিজভী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পালন করে। মনে মনে সে আর কামিনী ভিষণ আনন্দিত। ওদের ধারণায় কনকের মৃ*ত্যু আর নিজের চোখের সামনে নিজের একমাত্র ছেলের খু*নি*দের মানসিক য*ন্ত্র*ণায় আ*র্ত*না*দ করতে দেখে নিজের ছেলের মৃ*ত্যু শোক অনেকটাই কা*টি*য়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা সফল হচ্ছে ওরা দু’জনেই।

৩দিন পর……
সময় বদলাচ্ছে, মানুষের অভ্যাস, কর্ম, চলাফেরার ধরণ বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে না শুধু চৌধুরী মেনশনের পরিবেশ এর রূপই৷ সেই আগের মতোই থ*ম*থ*মে হয়ে আছে পুরো বাড়ি।

গোসল শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয় কামিনী। রিজভী বিছানায় বসে ল্যপটপে কাজ করছে। কামিনী রিজভীর দিকে একপলক দেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
মাথায় থাকা তোয়ালেটা খুলতেই মাথার একপার্শের একভাগ চুল সম্পূর্ণ গোড়া থেকে উঠে আসে আপনা-আপনিই। কোনো ব্য*থা-বে*দ*না, অনুভূতি ছাড়াই। কামিনী তা লক্ষ্য করে না৷ তোয়ালেটা ওভাবেই পাশে থাকা চেয়ারের উপর রেখে আয়নায় নিজের মুখশ্রীর প্রতিচ্ছবি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে। কিয়ৎক্ষণ পর রিজভী ওর ল্যপটপটা বন্ধ করে কামিনীর দিকে লক্ষ করতেই ওর মাথার একপার্শে চুল নেই দেখে তড়িৎগতিতে বিছানা থেকে নেমে কামিনীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন….

—“কামিনী তোমার মাথার এখানে চুল নেই কেনো?”

রিজভীর এরূপ কথা শুনে কামিনী হেসে বললেন…
—“এই অসময়ে তুমি মজা করতে আসছো! কাজ করছিলে যাও কাজ করো।”

—“আরে আমি মজা করতে যাবো কেনো? সত্যিই তোমার এখানে চুল নেই। তুমি নিজেই হাত দিয়ে দেখো।”

—“এই তুমি যাবে এখান থেকে নাকি চিরুনি দিয়ে ইচ্ছে মতো কয়েকটা দিতে হবে তোমার পিঠে তারপর তুমি মজা করা বন্ধ করবে!”

রিজভী কিছুটা বি*র*ক্তি নিয়ে বিছানার উপর থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে আবারও কামিনীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর মাথার চুলবিহীন অংশটুকুর কয়েকটা ছবি উঠিয়ে ফোন টা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন…

—“মুখের কথা তো বিশ্বাস করবে না এবার নিজের চোখেই দেখে নাও।”

কামিনীও কিছুটা বি*র*ক্তি প্রকাশ করে রিজভীর হাত থেকে ফোনটা নিতে নিতে বললেন…

—“উফহহ কি বি*র*ক্তি*কর অবস্থা তৈরি করছো তুমি ভালো লাগে না একদম।”

বলতে বলতেই ফোনে থাকা ছবিগুলো দেখে কামিনীর চোখের মণিজোড়া যেনো কোটোর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়। রিজভী বিছানায় নিয়ে বসতে বসতে বললেন….

—“এভাবে তো একেবারে শুধু শুধু এতোগুলো চুল একজায়গা থেকে উঠে আসার কথা নয়। কি আবার স*ম*স্যা হলো তোমার বুঝতেছি না।”

কামিনী ধ*প করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা মোড়া টার উপর বসে ফোনটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে পাশে থাকা চেয়ারের উপর থেকে তোয়ালে টা নিয়ে মেলে ধরতেই অনেকগুলো চুল দেখতে পায় সেখানে। কিয়ৎক্ষণ স্ত*ব্ধ হয়ে থাকার পর কামিনী উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন…..

—“হায় আল্লাহ….এ আমার কি হলো! আমার এতো সন্দর চুলগুলো এভাবে কি করে উঠে এলো! এতোদিন চিরুনি করার সময় চিরুণি ভর্তি হয়ে চুল উঠে আসছিলো। এতেই চুল কতো পাতলা হয়ে গিয়েছে। আর এখন একেবারেই একপাশ থেকে এতোগুলো চুল উঠে এলো! আমার এতো সাধের চুলগুলো! এ আমার কি হলো গো! ওগোওওও! আমার দুঃস্বপ্ন তবে কি সত্যি হতে চলেছে! আমি কি সত্যিই টা*ক*লু হয়ে যাবো! নাআআআআআআ এ হতে পারে না!”

রিজভী দ্রুত বিছানা থেকে উঠে এসে একহাতে কামিনীর মুখ চেপে ধরে বললেন……

—“আহহ..কি ম*রা কান্না জুড়ে দিলে তুমি হ্যা! এখন কান্না কাটি করে কি সারাবাড়ির মানুষকে জানিয়ে দিবে যে তুমি ধীরে ধীরে টা*ক*লু হতে চলেছো? এতে মান-সম্মান কি এতোটুকুও বেঁচে থাকবে? সব স*ম*স্যার ই কোনো না কোনো সমাধান অবশ্যই থাকে। এই স*ম*স্যা*র ও আছে নিশ্চয়ই। আর তোমার এতোদিন ধরে যে চিরুনি ভর্তি করে চুল উঠছিলো সেই কথা তুমি আমাকে জানিয়েছিলে একবারও? যদি আগেই জানাতে তাহলে আজ আর এই দিনটা দেখতে হতো না তোমায়। আরো আগেই এই স*ম*স্যার সমাধান করে ফেলতে পারতাম।”

এই বলে রিজভী কামিনীর মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। কামিনী জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললেন….

—“আরেকটু হলেই তো আমার প্রাণ টাই বেড়িয়ে যেতো এতো শক্ত ভাবে কেও মুখ চেপে ধরে! মাঝের সময়টাতে ছেলেকে হারালাম তখন কি মন মানসিকতা এতো ভালো ছিলো যে তোমাকে বলতাম চুল উঠার বিষয় নিয়ে কিছু! এখন এসব না বলে কি করলে সমাধান হবে সেটা বলো।”

—“কি করা যায় তা ভাবতে হবে।”

—“হেয়ার স্পেশালিষ্ট কোনো ডাক্তারকে দেখালে কি ভালো হবে না!”

—“সন্ধ্যার হাসবেন্ড সৌহার্দ্য তো একজন ভালো ডাক্তার শুনেছিলাম। আর ওর আরো ১০জন ভালো ডাক্তারদের সাথে উঠা-বসা আছে নিশ্চয়ই। একবার পারসোনালি ওর সাথে কথা বললে কেমন হবে কামিনী?”

—“যদি মেজো ভাই-ভাবী আমার স*ম*স্যার কথা জানতে পারেন তখন স*ম*স্যা আরো বাড়ানোর চেষ্টা করলে কি হবে! ওদের উপর কি ভরসা করা যাবে বলে মনে হয় তোমার?”

—“সন্ধ্যা আর সৌহার্দ্যকে যদি আমরা নিষেধ করে দেই যে কাওকে যেনো এ বিষয়ে না জানায় তাহলে নিশ্চয়ই ওরা গো*প*নী*য়তা বজায় রাখবে। কারণ ওরা তো কেও এটা জানে না যে আমরা কতো কতো খা*রা*প কাজ করেছি! ওরা আমাদের এখনও আপন ভাবে, বিশ্বাস করে। তাই ওদের ভরসা করতে কোনো স*ম*স্যা নেই বলেই আমি মনে করি। এছাড়াও হুট করে কোন বড় ডাক্তারকে দেখাবো! এসব তো ঝা*মে*লার বিষয়।”

—“আচ্ছা…তুমি যেটা ঠিক মনে করো সেটাই হবে।”

—“চিন্তা করো না। খুব দ্রুতই তোমার চুল পড়ার স*ম*স্যা ঠিক হয়ে যাবে। আর নিশ্চয়ই ঐ চুলববিহীন অংশটুকুতেও নতুন চুল গজাবে।”

কামিনী কোনো প্রতিত্তোর করলো না।

(২০১)
অনন্যা কনককে দেখার জন্য অ*স্থি*র বোধ করছিলো তাই বাড়ির সবাইকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে অনন্যা আর তরুনিমাকে নিয়ে কুশল ওর গোপন আস্তানায় আসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছে ঘন্টাখানেক হলো। কিয়ৎক্ষণ পরে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতেই ওরা তিন জন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। অনন্যা চারপাশটা একনজরে দেখে নেয়। ঘন জঙ্গলের ভিতরে ইট-পাথর দিয়ে একটা বিশাল বড় গোডাউন এর মতো তুলে রেখেছে। মূল দরজার সামনে কালো পোশাকধারী ৪ জন গার্ডস দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও আশে পাশে আরো অনেক গার্ডসরা যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা অনন্যা বুঝতে পারে। তরুনিমার সাহায্য নিয়ে অনন্যা গোডাউনের ভিতরে প্রবেশ করে। অনন্যার শারিরীক অবস্থার কথা চিন্তা করেই কুশল লোক লাগিয়ে গোডাউন ভিতরে ও চারপাশের সব ময়লা-আবর্জনা আগেই পরিষ্কার করে নিয়েছে। গোডাউনের ভিতর প্রবেশ করতেই কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“ভাবী…এইদিকে আসুন।”

এই বলে কুশল একটা রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কুশলের পিছন পিছন তরুনিমা আর অনন্যাও এগিয়ে যায়। রুমটির দরজার সামনে ব*ন্দু*ক হাতে দাড়িয়ে থাকা গার্ডস দু’জন দরজা খুলে দিতেই ওরা তিনজন রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। কুশল গার্ডসদের ইশারা করলে তারা পুনরায় দরজা আটকে দেয় বাহির থেকে। রুমটির ভিতরে পূর্ব থেকেই নিলাদ্র আর সন্ধ্যা উপস্থিত ছিলো। অনন্যার দৃষ্টি যায় বিছানায় সয্যাশায়িত অবস্থায় চোখ বুজে থাকা কনকের দিকে। অনন্যার দু’চোখ ভরে আনন্দঅশ্রুরা ভীর জমায় ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। কনককে না দেখতে পেয়ে গত ৩টে দিন যেনো ৩শ যুগের সমান সময় নিয়ে কেটেছে তার। অনন্যা ধীর পায়ে বিছানার কাছে এসে কনকের বুকের পাশের বসে ওর বামহাতটা নিজের দু’হাত দিয়ে তুলে নিজের গালের উপর রেখে চোখজোড়া দিয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু ফেলে বললো….

—“তোমাকে দেখার পর আমার মনের আকাশ থেকে অ*শান্তির কালো মেঘ কে*টে গিয়ে শান্তির সূর্যের উদয় হলো কনক।”

এই বলে অনন্যা কনকের হাতে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। অনন্যার শীতল স্পর্শে কনকের সেন্স ফিরে আসে। তিন দিন পর কনক ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। তরুনিমা আর কুশল বিছানার অন্যপাশে দাঁড়িয়ে আছে। কনক চোখ মেলতেই নিজের সামনে অনন্যাকে বসে থাকতে দেখে চারপাশে একবার চোখ বুলায়। পুরোপুরি নতুন একটি জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করে সে। সবথেকে বেশি অবাক হয় কুশল, তরুনিমা, সন্ধ্যা আর নিলাদ্রের উপস্থিতি দেখে। কনক একা উঠে বসার চেষ্টা করলে ব্য*র্থ হয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“আমি উঠে বসতে চাই।”

কুশল এগিয়ে এসে কনককে ধরে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসতে সাহায্য করে। পরক্ষণেই কনক আবারও বললো….

—“আমি এখানে কিভাবে এলাম! এটা কোন জায়গা?আর তোমরা সবাই এখানে কি করছো! বাড়িতে নিয়ে যাও নি কেনো আমায়? বাবা-মা কোথায়!”

অনন্যা শান্ত স্বরে বললো….
—“কনক…শান্ত হও। এতো উত্তেজিত হওয়ার মতো কিছু হয় নি। সবকিছুই জানতে আর বুঝতে পারবে তুমি। ধৈর্য ধরো।”

—“কি জানার বা বোঝার বাকি আছে আমার বুঝলাম না!”

কুশল কনকের উপর দৃষ্টি স্থির করে শান্ত স্বরে বললো….
—“বড় ভাইয়া…জীবনের সবথেকে বড়, তি*ক্ত ও য*ন্ত্র*ণা দা*য়ক সত্যের কথা তোমার জানার বাকি আছে। শান্ত হয়ে আমাদের কথাগুলো শুনো। তাহলেই বুঝতে পারবে।”

কনক প্রতিত্তুরে কিছু বলতে নিলে অনন্যা কনককের হাতের উপর হাত রেখে ওকে থামিয়ে দেয়। এরপর কুশল একবার শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে কনকের অজানায় রয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ সত্য ঘটনাগুলো ওকে আর অনন্যাকে জানিয়ে দেয়। কুশলের মুখে সবকথা শোনার পর অনন্যা মাথা নিচু করে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। কনক পুরোপুরি ভাবে স্ত*ব্ধ হয়ে গিয়েছে।
তরুনিমা আর সন্ধ্যা পূর্ব থেকেই সব সত্য জানা সত্ত্বেও ওদের দু’চোখ বেয়েও নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। কনক ওর দু’চোখ বন্ধ করে পর পর কয়েকবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো……

—“ও-ও-ওরা এ-এতো য-য*ন্ত্র*ণা দিয়ে আ-আমাদের জন্মদায়িনী মাকে মে*রে ফেলেছে! আমাদের বাবাকে ২০বছর ধরে কো*মা*র পে*শে*ন্ট বানিয়ে রেখেছে! এ-এই মানুষগুলোকেই জীবনের অর্ধেকটা সময় ধরে মা-বাবা বলে ডেকে এসেছিলাম, সম্মান করেছিলাম, ভালোবেসেছিলাম! এ-এদের কথা শুনে আমি আমার মায়ের পেটের ভাইকে খু*ন করার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়েছিলাম! আল্লাহ…এ আপনি কোন সত্যের সম্মুখীন করলেন আমাকে! আমার পৃথিবীটা যে কালো অ*ন্ধ*কারে ছেয়ে গেলো মূহূর্তের ভিতরেই। যে ভাইকে আমি মে*রে ফেলার কথা চিন্তা করেছিলাম সেই ভাইয়ের জন্যই আমি আজ জীবিত আছি! ইয়া আল্লাহ এই কেমন পুনঃজীবন দান করলেন আপনি আমাকে? এই অনুশোচনার আ*গু*ন যে আমায় বেঁচে থাকতেই জা*হা*ন্না*মের আ*গু*নে দ*গ্ধ হওয়ার মতো য*ন্ত্র*ণা দিয়ে তিলে তিলে মে*রে ফেলবে। না না…আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এই বি*ষে ভরপুর চিন্তাধারার মস্তিষ্ক আমি গু*লি মে*রে ঝা*ঝ*ড়া বানিয়ে ফেলবো।”

এই বলে কনক উ*ন্মা*দে*র মতো ছ*ট-ফ*ট করতে শুরু করে। পরিস্থিতি বে*গ*তি*ক হতে দেখে সন্ধ্যা অনন্যাকে কনকের পাশ থেকে সরিয়ে আনে। নিলাদ্র আর কুশল দু’জনে মিলে কনককে ধরে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে শুরু করে। কিয়ৎক্ষণ পর কুশল দু’হাতে শক্ত ভাবে কনককে জড়িয়ে ধরতেই কনক অনেকটা শান্ত হয়ে যায়। পরক্ষণেই কনক হু হু করে কাঁদতে শুরু করে। কুশল শান্ত স্বরে বললো….

—“ভাই…ভাই…ভাই…শান্ত হও। তোমার কোনো দো*ষ নেই ভাই। অ*মানুষগুলো তোমার মন ও মস্তিষ্কে নিজেদের মাঝে বিরাজ করা বি*ষ ঢেলে দিয়ে তোমাকেও তাদের মতো বানিয়ে নিতে চেয়েছিলো। তুমি শুধুমাত্র তাদের বশীভূত হয়ে গিয়েছিলে। তুমি তো এখনও পর্যন্ত কোনো অ*ন্যা*য় বা পা*প কাজ করো নি। মানুষের মাঝে ভালো-খারাপ দু’ধরণের চিন্তা ধারাই বাস করে। যদি তুমি কোনো অ*ন্যা*য় করে বসতে তাহলে সব সত্য জানার পর তোমার এই উ*ন্মা*দ*না, অনুশোচনা বোধ হওয়া স্বাভাবিক বিষয় হতো। খারাপ চিন্তা করলেই মানুষটা খারাপ হয়ে যায় না ভাই। তুমি নিজের ভু*ল টা বুঝতে পেরেছো। আল্লাহ সঠিক সময়ে তোমার সামনে সত্যগুলো তুলে ধরার উত্তম সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের এ জন্য শান্ত হয়ে তার শুকরিয়া আদায় করা উচিত আমাদের। শান্ত হও ভাই…শান্ত হও।”

কুশলের এরূপ কথা গুলো শুনে কনক অনেকটা শান্ত হয়ে যায়। কনক সোজা হয়ে বসে দু’হাতে চোখের পানি মুছে বললো….

—“আমি ভিষণ লজ্জিত ভাই। আমাকে তোরা ক্ষমা করে দিস।”

—“তুমি আমাদের বড় ভাই। আমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া তোমার শোভা পায় না।”

কনক পাশ ফিরে সন্ধ্যাকে নিজের কাছে ডাকে। সন্ধ্যা একহাতে চোখ মুছে হাসিমুখে সোফা ছেড়ে উঠে কনকের পাশে গিয়ে বসে। কনক দু’হাতে নিজের দুই ভাই-বোনকে জড়িয়ে ধরে দু’চোখ বুঁজে ফেলে। এই প্রথম সন্ধ্যাকে আর বড় ভাইয়া এভাবে আদর করে নিজের বুকে জায়গা দিয়েছে। ওদের এই মিল-বন্ধন দেখে তরু, অনন্যা আর নিলাদ্রের চেহারাতেও প্রশান্তির ছাপ ফুটে উঠে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৬ পর্বের ৪র্থ অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২০২)
কনক-সন্ধ্যা-কুশল তিন ভাই-বোনের মিল-বন্ধন দেখে তরু, অনন্যা আর নিলাদ্রের চেহারাতেও প্রশান্তির ছাপ ফুটে উঠেছে। কিয়ৎক্ষণ পর নিলাদ্রের হাতে থাকার সন্ধ্যার ফোন বেজে উঠলে সে ফোনস্ক্রিণের দিকে তাকাতেই রিজভীর নাম্বার থেকে কল এসেছে দেখে ভ্রুযুগল কি*ন্ঞ্চি*ত কুঁ*চ*কে নিয়ে সকলের সামনে ফোনটা উচু করে ধরে বললো…..

—“শ*য়-তা*ন*দের নাম নিতে না নিতেই শ*য়-তা*ন পক্ষ থেকে একজনের কল এসেছে। কলটা কি রিসিভ করা উচিত আমার?”

সকলেই নিলাদ্রের হাতে থাকা সন্ধ্যার ফোনের দিকে তাকায়। কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“সন্ধ্যার কাছে দে ফোনটা। সন্ধ্যা কল রিসিভ করে লাউডস্পিকার অন কর।”

নিলাদ্র সন্ধ্যার কাছে তার ফোনটা দেয়। সন্ধ্যা কল রিসিভ করে লাউডস্পিকার অন করতেই ওপাশ থেকে রিজভীর নরম কন্ঠস্বর ভেসে আসে….

—“সন্ধ্যা..মা! কোথায় আছিস তুই?”

সন্ধ্যা স্বাভাবিক স্বরেই বললো…
—“শ্বশুড়বাড়িতেই আছি চাচা! হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছেন? বাড়িতে কি সবকিছু ঠিক আছে?”

—“আর ঠিক থাকবে কি করে রে মা! পর পর আমাদের পরিবারে যে দু’টো দূ*র্ঘ*ট*না ঘটে গেলো তার রেশ কি এতো সহজে কাটবে বল!”

—“হুম…সাবধানে থেকো তোমরা সবসময়। চাচীর খেয়াল রেখো।”

—“সন্ধ্যা মা..! আমার আর তোর চাচীর জামাইয়ের সাথে একটু দরকারী বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিলো। জামাই কি ফ্রী আছে? সময় দিতে পারবে আমাদের?”

সন্ধ্যা কুশলের দিকে তাকালে কুশল ইশারায় কথা চালিয়ে যেতে বলে। সন্ধ্যা শান্ত স্বরে বললো….

—“হুম এখন ওর কাজের তেমন প্রেসার নেই ফ্রী-ই আছে।”

—“তাহলে আগামীকাল বিকালে জামাইকে বলিস আমি আর তোর চাচী জামাইয়ের সাথে দেখা করতে ওর ক্লিনিকে আসবো।”

—“ক্লিনিকে কেনো চাচা? বাড়িতে আসুন চাচীকে নিয়ে।”

—“না রে মা, কাল জামাইয়ের ক্লিনিকেই যাবো। পরে কোনো একদিন তোর শ্বশুড় বাড়িতে যাওয়া যাবে। কিছু মনে করিস না।”

—“আচ্ছা..তোমরা যেটা সঠিক মনে করো। আমি তোমাদের জামাইকে বলে রাখছি এই বিষয় সম্পর্কে।”

—“আচ্ছা ঠিক আছে।”

এই বলে রিজভী কল কে*টে দেয়। তরুনিমা ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললো…

—“অবশেষে মোক্ষম সময় এসেই গেলো। শি*কা*র শি*কা*রী*র ফাঁ*দে পা দিয়ে ফেলেছে। এবার শি*কা*রী হিসাবে নিপুণতার সহিত বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করতে হবে আমাদের।”

সকলেই তরুর দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। তরুনিমা নিলাদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো…

—“নিলাদ্র ভাইয়া..আগামীকাল তুমি ক্লিনিকে যাবে আর তোমার চেম্বারে রিজভী ও কামিনী চৌধুরীর জন্য অপেক্ষা করবে। পুরো সময়টা তুমি আমাদের সাথে কলে থাকবে। ওদের সম্পূর্ণ কথপোকথন আমরা শুনবো। তারপর তোমাকে কি করতে হবে সেটাও আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলে দিবো। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের পরবর্তী শ*ত্রু*র ভিষণ-ই বা*জে ভাবে প*ত*ন হতে চলেছে এতোটুকু নিশ্চয়তা আমি তোমাদের দিতে পারি।”

তরুনিমার এরূপ কথা শুনে সকলেই যে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে তার ছাপ ওদের মুখশ্রীতে ফুটে উঠেছে। পরক্ষণেই অনন্যা বললো…

—“এখন আমাদের বাড়িতে ফেরা উচিত। ডাক্তার দেখানোর কথা বলে অনেক সময় হলো আমরা বেড়িয়েছি। আর বেশিক্ষণ দেড়ি করা ঠিক হবে না।”

কনক বললো…
—“হুম ঠিক বলেছো। কুশল ভাই আমার…তোর ভাবী আর আমাদের অনাগত বাচ্চার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি তোর উপর দিলাম। ওদের খেয়াল রাখিস। তোরাও সাবধানে থাকিস, সবসময় সতর্ক থাকিস। শ*ত্রু পক্ষের কেও যেনো তোদের কারোর বিন্দুমাত্র ক্ষ*তি করতে আর সক্ষম না হয় ভাই।”

কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“চিন্তা করো না বড় ভাইয়া। আমি আমার আর কোনো প্রিয়জনের শরীরে ফুলের টো*কা*ও লাগতে দিবো না শ*ত্রু*পক্ষদের। সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত তোমাকে এখানেই থাকতে হবে ভাই। কারণ শ*ত্রু*রা সবাই জানে তুমি আর বেঁচে নেই।”

—“হুম আমি এখানেই থাকবো ভাই।”

অনন্যা কনকের হাত ধরে বললো….
—“আমি সুযোগ করে কুশল ভাইয়ের সাথে আবার আসবো তোমার সাথে দেখা করতে। সাবধানে থেকো তুমি। বের হইও না এই জায়গা থেকে।”

—“চিন্তা করো না বউ।”

কুশল বললো…
—“ভাবী..আপনি চিন্তা করবেন না। এখানে বড় ভাইয়ার প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের দিকে ২৪ ঘন্টা খেয়াল রাখার জন্য আমি সার্ভেন্ট, ডাক্তারের ব্যবস্থা করে রেখেছি। খুব তাড়াতাড়ি বড় ভাইয়ার মাথার ক্ষ*ত ও শুকিয়ে যাবে। আর বাড়ির সকলের সামনে তোমাকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। কেও যেনো তোমার আচারণে স*ন্দে*হ করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকবে।”

অনন্যা উপরনিচ মাথা নেড়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দেয়। পরক্ষণেই কনক বললো….

—“এই তোরা কিছুসময়ের জন্য সবাই নিজেদের দু’চোখ বন্ধ করে দু’হাতে দু’কান চেপে ধরতো। আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খোলা কিংবা কান থেকে হাত সরানো হয় না যেনো।”

কনকের এরূপ কথা শুনে ওরা সকলেই বেশ অবাক হয়। কনক আবারও বললো….

—“কি রে তোরা আমার শুনছিস না কেনো?”

সঙ্গে সঙ্গে ওরা সকলে নিজেদের চোখ বন্ধ করে দু’হাতে নিজেদের দু’কান চেপে ধরে। অনন্যা বললো…

—“পা*গ*ল হয়ে গেলে নাকি তুমি!”

—“আমার কাছে আরেকটু এগিয়ে এসে বসো তো।”

অনন্যা কনকের বেশ অনেকটা কাছে গিয়ে বসে। কনক ওর দু’হাত অনন্যার দু’গালের উপর রেখে ওর কপালের একবার ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। কনকের এমন কাজে অনন্যা ওর ঠোঁটে লজ্জাজনক হাসি ফুটিয়ে তুলে। অতঃপর কনক অনন্যার পেটের উপর নিজের একহাত রেখে বললো….

—“আমি তোমাদের দু’জনকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। তোমরা দু’জন আমার বেঁচে থাকার সবথেকে মূল্যবান কারণ। সেদিন যে কথা অসম্পূর্ণ রেখে চলে এসেছিলাম। আজ তা সম্পূর্ণ করতে হবে। আমি কখনই তোমাদের দু’জনকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমার নিঃশ্বাস চলমান থাকা পর্যন্ত আমি তোমাকে আর আমাদের অনাগত সন্তান আমার সবটা উজার করে ভালোবেসে যাবো ইনশাআল্লাহ।”

অনন্যা কনকের হাতের উপর হাত রেখে হাসিমুখে বললো….
—“আমরা দু’জনও তোমাকে সবসময় ভালোবাসে যাবো মহাশয়।”

পরক্ষণেই কনক আবারও তার অনাগত সন্তানের নড়ে উঠাকে অনুভব করে। কনক ওর ঠোঁটে হাসির রেখা স্পষ্ট করে বললো….

—“আজ আবার কি*ক দিলো। আমি আজও অনুভব করতে পারলাম বউ।”

—“ও ওর মায়ের কথায় সায় প্রদান করলো।”

অতঃপর অনন্যা কনকের থেকে কিছুটা সরে এসে বসে। কনক বাকিদের উদ্দেশ্য করে বললো….

—“হুম..হয়েছে হয়েছে। এবার তোরা চোখ মেলতে পারিস।”

ওরা সকলেই চোখ মেলে। কনক ভ্রু কুঁচকে বললো…

—“তোরা আমার কথা একবারেই কি করে শুনতে পারলি? তারমানে তোরা ঠিকভাবে কান চে*পে ধরিস নি!”

কনকের এরূপ কথা শুনে সকলে একে-অপরকে দেখে উচ্চশব্দে হেসে উঠে। অনন্যা বেশ লজ্জা পায়। কিয়ৎক্ষণ পর কনক ব্যতিত বাকিরা আস্তানা থেকে বেড়িয়ে পরে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দ্যেশে।

(২০৩)
রাতেরবেলা….
নিজেদের রুমের পাশে থাকা বেলকনির রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুশল। বেলকনিতে থাকা সিংগেল দোলনায় পা গুটিয়ে বসে চকলেট খাচ্ছে তরুনিমা। কুশলের দৃষ্টি তরুনিমার উপরেই স্থির হয়ে আছে। চকলেট খাওয়া নিয়ে তরুনিমা এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে কুশল ওর দিকেই লম্বা সময় ধরে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে তার খেয়াল ও তরুর নেই। বিশাল আকাশে থালার মতো একটা চাঁদ উঠেছে, তার চারপাশে অগুনিত তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জোৎস্নার আলোয় পুরো পরিবেশে এক অন্যরকম সৌন্দর্য বিরাজ করছে। তরুর চকলেট খাওয়া পুরোপুরি শেষ হলে সে নিজের দুইহাতের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে সবগুলো আঙুল চকলেট দিয়ে মাখিয়ে ফেলেছে সে। তরু দোলনা থেকে নামতে নামতে বললো….

—“আমি হাত-মুখ পরিষ্কার করে আসতেছি।”

এই বলে তরু দোলনা থেকে নেমে সামনের দিকে অগ্রসর হতে নিলে পিছন থেকে কুশল তরুর ডান হাত ধরে এক টা*নে নিজের বুকের উপর এনে ফে*লে অন্যহাত দিয়ে ওর কমোর জড়িয়ে ধরে। কুশলের আকস্মিক এমন কাজে তরু কিছুটা ভ*র*কে গিয়ে দু’চোখ বুঁজে ফেলে। পরক্ষণেই চোখ মেলে সামনে তাকাতেই কুশলের চোখে চোখ পরে তরুর। কুশলের ঘো*লা*টে দু’চোখ তরুকে ওর দিকে আ*কৃ*ষ্ট করতে চাইছে। তরু নিজের দৃষ্টি নামিয়ে বললো….

—“ছাড়ুন আমায়…চকলেট দিয়ে দু’হাত মাখিয়ে ফেলেছি। আপনার টি-শার্টে লেগে যাবে যে।”

কুশল তরুকে নিজের বুকের সাথে লে*প্টে নিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো….

—“এতোসময় ধরে একা একা চকলেট খেলে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে এখন তো আমারও চকলেট খেতে ইচ্ছে করছে ভিষণ।”

তরু শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো….
—“আ-আমাকে ছে*ড়ে দিন…হাত-মুখ পরিষ্কার করে আপনার জন্যও চকলেট নিয়ে আসবো।”

—“এতো সময় অপেক্ষা করা তো আমার পক্ষে আর সম্ভব হবে না।”

—“এখন তো আমার কাছে আর কোনো চকলেট অবশিষ্ট নেই। এক্ষুণি কি করে দিবো?”

—“আছে তো অবশিষ্ট।”

—“মা-মানে!”

—“মানে টা বুঝিয়ে দিচ্ছি।”

এই বলে কুশল তরুর ডান হাতটা নিজের মুখের কাছে এগিয়ে নিয়ে প্রতিটি আঙুলে লেগে থাকা চকলেট গুলো পরম আবেশে খেতে শুরু করে। কুশলের এমন কাজে তরুর সর্বশরীর যেনো শিউরে শিউরে উঠতে শুরু করে। তরু যেনো বরফের মতো জমে যাওয়ার পরিস্থিতিতে আঁটকে যায়। পরক্ষণেই কুশল তরুর দু’হাত ওর কমোরের পিছনে নিয়ে গিয়ে ঠেকিয়ে নিজের একহাত দিয়ে ওর হাত যুগল চে*পে ধরে অন্য হাত দিয়ে তরুর থুতনি স্পর্শ করে ওর নুইয়ে থাকা মাথা কিছুটা উঁচু করে ধরে। তরু ওর চোখজোড়া বুঁজে ফেলেছে। কুশল তরুর ঠোঁটের চারপাশে লেগে থাকা চকলেট গুলোর উপর নিজের ঠোঁট লাগিয়ে খেতে শুরু করে। অতঃপর কুশল তরুর ঠোঁটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। এভাবেই যে পেরিয়ে যায় লম্বা সময়। কুশল তরুর ঠোঁটের ভাঁজ থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নেয়। দু’জনেই শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলছে। কুশল তরুর কমোর ছেড়ে দিয়ে দু’হাত ওর গালের উপর রেখে তরুর কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বললো….

—“আমার চকলেট খাওয়া শেষ হয়েছে আর তোমার হাত-মুখ ও পুরোপুরি ভাবে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। সুন্দর না বিষয়টা!”

কুশলের এমন কথায় তরু বেশ লজ্জা পায়। পরক্ষণেই তরু নিজের দু’হাত দিয়ে কুশলের বুকের উপর হালকা প্রেসার প্রয়োগ করে ওর থেকে সরে রুমের ভিতর যেতে শুরু করে। কুশল পিছন থেকে কিছুটা উচ্চস্বরে বললো….

—“এতো সুস্বাদু চকলেট কিন্তু আমি এর আগে কখনও খাই নি। আজ তো মুগ্ধ করে দিলে। এরপর প্রতিদিন এর স্বাদ গ্রহন করতে চাই।”

এই বলে কুশল তরুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসতে শুরু করে। তরুও রুমের ভিতর এসে থেমে গিয়ে নিজের ঠোঁটের উপর ডান হাত রেখে লজ্জাজনক হাসি দেয়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৬ পর্বের ৫ম অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(২০৪)
পরেরদিন দুপুরের পরপর….
দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ করে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছেন সায়মন, সাবরিনা। সেইসময় কামিনী আর রিজভী সেখানে আসে। কামিনী শান্ত স্বরে বললো…

—“মেজো ভাবী…আমি আর রিজভী একটু বাহিরে যাচ্ছি সন্ধ্যার পূর্বেই বাসায় ফিরবো। তোমরা সাবধানে থেকো।”

সাবরিনা আর সায়মন কামিনী, রিজভীর দিকে তাকাতেই বেশ অবাক হয়ে যায়। একসাথে থাকতে থাকতে এতো গুলো বছর পেরিয়ে কখনও কামিনীকে শাড়ির আচঁল কিংবা ওড়না টেনে মাথায় কাপড় দিতে দেখে নি তারা কেও আর আজ কিনা সে হিজাব পড়েছে! অতি আশ্চর্য জনক লাগছে বিষয়টা ওদের কাছে। সাবরিনা ওনার ভ্রু যুগল কিন্ঞ্চিত কুঁ*চ*কে নিয়ে বললেন….

—“সে তো বুঝলাম কিন্তু তুই হিজাব পড়েছিস কেনো? চুল বের করে বিনুনি দুলিয়ে দুলিয়ে কথা না বললে চলাচল না করলে তুই নাকি আনকমফোর্টেবল ফিল করিস! আজ কি হলো তোর? শরীর কি ঠিক আছে?”

সাবরিনার এমন কথায় কামিনী আর দু’জনে একে-অপরের দিকে তাকায়। পরক্ষণেই কামিনী পরিস্থিতি সামলে নিতে চেহারায় কিছুটা মলিনতার ছাপ ফুটিয়ে বললেন….

—“জীবনে তো কম পা*প আর অ*ন্যা*য় কাজ করি নি ভাবী! ছেলেটাকে অকালে হারিয়ে ফেললাম। তাই এখন সব কিছুর জন্য নিজের ভিতরে ভিষণ অ*নু*শো*চনা বোধ কাজ করে। স্বাভাবিক ভাবে হোক কিংবা অস্বাভাবিক ভাবে, একদিন তো আমাদের সবাইকে-ই এই দুনিয়ার মায়া ত্য*গ করতে হবে। বয়স ই বা আর কতো বাকি আছে আমাদের। বাকি যতোদিন বেঁচে আছি ততোদিন না হয় পূন্যের পথেই চলার চেষ্টা করি। এতে যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর থেকে পা*পে*র বোঝা কিছুটা হালকা করেন। তাই ঠিক করলাম এখন থেকে আমার স্বামী ব্যতিত আর ২য় কোনো ব্যক্তিকে আমার একটা চুলও দেখাবো না আমি। সবসময় মাথায় ওড়না বা হিজাব পেঁ*চিয়ে রাখবো।”

কামিনীর মুখে এমন পূন্যবানদের মতো কথা শুনে সাবরিনা আর সায়মন দু’জনেই অত্যন্ত অবাক হয়ে যায়। যেনো তারা ‘শ*য়-তা*নে*র মুখে আল্লাহ তায়ালার নাম শুনছেন।’ কামিনীর পাশ থেকে রিজভী তাড়ার স্বরে বললেন….

—“চলো এখন যাওয়া যাক, নয়তো ফিরতেও দেড়ি হয়ে যাবে।”

—“হুম চলো।”

এই বলে কামিনী আর রিজভী সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। সায়মন আর সাবরিনা ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। পরক্ষণেই সাবরিনা বললেন….

—“কামিনীর মুখে এতো ভালো ভালো কথা গুলো কেনো যেনো আমার হ*জ*ম হচ্ছে না গো। মনে হচ্ছে কোনো না কোনো গ*র*ব*র এর ভিতর অবশ্যই আছে। যা ওরা দু’জন আমাদের সামনে আনতে চাইছে না।”

সায়মন বললেন….
—“হলেও হতে পারে।”

সাবরিনা আর কোনো প্রতিত্তুর করলেন না।

(২০৫)
নতুন চেহারা ও নতুন পরিচয় হওয়ায় নিলাদ্রের অফিসিয়ালি ডাক্তার হওয়া ও রোগীদের মাঝে সু-চিকিৎসা প্রদান করা এখন সম্ভব হবে না বিধায় কুশল ডা.আকরামের সাথে কথা বলে একবেলার জন্য তার ক্লিনিকেই একটা চেম্বারের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। চেম্বারটি অন্য সব ডাক্তারদের চেম্বারের মতো করেই সাজানো গোছানো রয়েছে। দরজার উপর ডা.সৌহার্দ্য তালুকদারের নেমপ্লেট ও লাগানো রয়েছে। চেম্বারের বাহিরে কুশল ওর একজন গার্ডসকে সাধারণ পোশাক পড়িয়ে বসিয়ে রেখেছেন যিনি সৌহার্দ্যের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন আজ। সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে বুঝে কুশল, তরুনিমা আর সন্ধ্যা ঐ ক্লিনিকেরই অন্য পার্শে একটা কেবিন বুক করে সেখানে আছে। কুশল কেবিনের ভিতরে পায়চারি করছে। তরু আর সন্ধ্যা বিছানায় বসে আছে নিজেদের সামনে ল্যপটপ ওপেন করে। নিলাদ্রের জন্য বুক করা চেম্বারের ভিতরের ও বাহিরে সিসিটিভি ক্যমেরা লাগানো আছে আর সেই ফুটেজটাই তরু, সন্ধ্যা ল্যপটপ স্ক্রিণে দেখছে। অপেক্ষা ওদের রিজভী আর কামিনীর সেখানে আসার। সন্ধ্যা শান্ত স্বরে বললো….

—“মেজো ভাইয়া..নিলাদ্রের জন্য চেম্বার তো বুক করলে কিন্তু ক্লিনিকের রিসেপশনে বসা মহিলাটির সাথে কি কথা বলেছিলে! চাচা-চাচী তো ক্লিনিকের ভিতরে আসার পর সরাসরি রিসেপশনেই যাবে নিলাদ্রের চেম্বার কোথায় তা জানতে।”

কুশল পায়চারি করতে করতেই বললো….
—“সব কাজই সম্পন্ন করা হয়েছে সন্ধ্যা।”

কুশলের কথা শুনে সন্ধ্যা এবার আরো কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়। বেশকিছুসময় পর ল্যপটপ স্ক্রিণে কামিনী আর রিজভীকে নিলাদ্রের চেম্বারের দিকে অগ্রসর হতে দেখে তরুনিমা বললো….

—“এই তো ওরা আসছে। সন্ধ্যা..সন্ধ্যা…নিলাদ্র ভাইয়াকে কল করো।”

সন্ধ্যা তৎক্ষণাৎ নিলাদ্রকে কল করে। নিলাদ্র কল রিসিভ করে নিজের কানে থাকা ব্লুটুথ ইয়ারফোন এর সাহায্যে। কুশল পায়চারি থামিয়ে তরুনিমার পাশে এসে বসে। সন্ধ্যা ওর ফোনের লাউডস্পিকার অন করে তরুনিমার সামনে রাখে। সবার দৃষ্টি ল্যপটপের উপর স্থির। কামিনী আর রিজভী নিলাদ্রের চেম্বারের সামনে দাড়িয়ে কুশলের ঠিক করা সেই পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টের আড়ালে থাকা গার্ডসের সাথে কথা বলে। গার্ডসটিও ভিষণ নিপুনতার সাথে নিজের কাজ সম্পন্ন করে। রিজভী আর কামিনী কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করে। ওদের দু’জনকে দেখামাত্র নিলাদ্রের ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠে। নিলাদ্র ওদের সামনে নিজের সৌহার্দ্য রূপের প্রকাশ করে বললো….

—“চাচা-চাচী আপনাদের আসতে কোনো স*ম*স্যা হয় নি তো!”

কামিনী আর রিজভী নিলাদ্রের সামনা-সামনি টেবিলের ওপারে থাকা চেয়ার টেনে সেখানে বসে। রিজভী বললেন…

—“না..জামাই বাবা, কোনো সমস্যা হয় নি।”

—“সন্ধ্যা গতকাল রাতেই আপনারা যে এখানে আসবেন সেই কথা আমাকে জানিয়েছিলো। আমি ওকে বললাম আপনারা হলেন আমাদের পরম আত্মীয়। আপনারা বাসায় না এসে কেনো কষ্ট করে চেম্বারে আসবেন! তখন ও বললো আপনারা এখানেই আসতে চেয়েছেন বাসায় পরে আসবেন।”

কামিনী শান্ত স্বরে বললেন…
—“হুম, জামাই বাবা…কথা তেমনটাই হয়েছিলো আমাদের। আসলে তোমার সাথে পারসোনালি কিছু কথা বলার ছিলো তাই এখানেই আসতে চাওয়া।”

—“হুম যা বলার তা নি*র্দ্বি*ধায় বলতে পারেন আমায় চাচী।”

কামিনী একপলক রিজভীর দিকে তাকায়। রিজভী ইশারায় কামিনীকে ওর স*ম*স্যার বিষয়টা শেয়ার করতে বলে। পরক্ষনেই কামিনী কিছুটা অ*স্বস্তি বোধ নিয়ে নিজের মাথায় থাকা হিজাবটা খুলতে শুরু করে। নিলাদ্র ওর ভ্রু যুগল কিন্ঞ্চিত কুঁ*চ*কে নিয়ে কামিনীর দিকেই তাকিয়ে আছে। হিজাব পুরোপুরি ভাবে খোলা শেষ হতেই কামিনী ওর ঘাড় বাঁ*কি*য়ে যে পাশ থেকে চুল গোড়া থেকে পুরোপুরি ভাবে উঠে এসেছিলো সেপাশটা নিলাদ্রকে দেখায়। ক্যমেরার মাধ্যমে কামিনীর একপাশ টা*ক হয়ে যাওয়ার দৃশ্য কুশল, তরুনিমা আর সন্ধ্যাও দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে ওরা তিন স্বশব্দে হেসে উঠে। ওদের হাসির শব্দ শুনে নিলাদ্রের কাশি উঠে যায়।
নিলাদ্র টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে অল্প পরিমাণে পানি পান করে। সন্ধ্যা হাসতে হাসতে বললো….

—“এ কি অবস্থা হয়েছে এই মহিলার! মাথার এক পাশের চুল উঠে টা*ক পড়ে গিয়েছে। আল্লাহ আমার হাসি তো থামছে না।”

তরুনিমা আর কুশল নিজেদের হাসি কন্ট্রোল করে নেয়। তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো…

—“নিলাদ্র ভাইয়া…নিজেকে কন্ট্রোল করুন। আর স্বাভাবিক ভাবে কথা বলুন ওদের সাথে।”

তরুর কথা শুনে নিলাদ্র একবার গলা ঝাঁ-ড়া দেয়। কামিনী সোজা হয়ে বসে নিলাদ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন…

—“অনেক দিন থেকে গোসলের পর তোয়ালে দিয়ে চুল মোছার সময়, চিরুনি করার সময় অত্যাধিক পরিমানে চুল উঠতে শুরু করেছিলো। মাঝখানে পরিবারের উপর দিয়ে এতো বড় বড় ধা*ক্কা গেলো তাই এই বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে উঠতে পারি নি। কিন্তু আগামীকাল গোসলের পর চুল থেকে তোয়ালে খোলার পর লক্ষ্য করলাম চুলের একপাশ থেকে সব চুল উঠে তোয়ালেতে লেগে আছে। আমার গো গলা ছেড়ে দিয়ে কান্না করার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তোমার চাচা শ্বশুড় অনেক বুঝিয়ে শান্ত করেছেন আর তাই তোমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলার জন্যই আজ এখানে এসেছি আমরা বাবা।”

রিজভী বললেন…
—“বয়সের সাথে সাথে নরমালি সবারই কম বেশি চুল পড়ে যাওয়ার স*ম*স্যা হওয়াটা তো স্বাভাবিক সেটা আমরা সবাই জানি বাবা। কিন্তু এভাবে একবারেই একপাশ থেকে চুল উঠে গিয়ে টা*ক পরে যাওয়ার ব্যপারটা তো মোটেও নরমাল বিষয় না তাই না!”

নিলাদ্র অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখে। তরুনিমা বললো…
—“গুগোলে গিয়ে ‘অ্যালোপেশিয়া’ লিখে সার্চ করো। আর সেই রোগের বর্ণনা দিয়ে দাও নিলাদ্র ভাইয়া।”

তরুনিমার কথানুযায়ী নিলাদ্র ওর ফোন হাতে নিয়ে গুগোল থেকে ‘অ্যালোপেশিয়া’ রোগের ফলে হওয়া সব স*ম*স্যা গুলো একনজরে দেখে নেয়। ডাক্তারি ডিগ্রী অর্জন করার জন্য এই রো*গ সম্পর্কেও নিলাদ্রের কম-বেশি ধারণা পূর্ব থেকেই ছিলো। পরক্ষণেই নিলাদ্র ওর ফোনটা টেবিলের উপর পুনঃরায় রেখে বললো….

—“চাচীর কি স*ম*স্যা হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পেরেছি চাচা।”

কামিনী বললেন…
—“কি স*ম*স্যা হয়েছে আমার জামাই বাবা!”

—“আপনাদের আমি ডিটেইলস বলছি তাহলে আপনাদের বিষয়টা বুঝতে সুবিধা হবে।”

রিজভী আর কামিনী দু’জনেই ওদের মাথা একপার্শে বাঁকিয়ে ‘আচ্ছা’ সূচক প্রতিত্তুর করলেন। অতঃপর নিলাদ্র বললো….

—“সাধারণভাবে মাথার চুল পড়ে যাওয়াকে চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় ‘অ্যালোপেশিয়া’ বলা হয়। সাধারণত মাথার চুল পড়তে শুরু করে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে।
এক্ষেত্রে একেকজনের একেক সময়ে সেটি শুরু হতে পারে। চুল পড়ার ধরনও হয় প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা। কারোর তুলনামূলক বেশি হয় আবার কারোর কম হয়।
কিন্তু ‘অ্যালোপেশিয়া’ হলে মাথার চুল হঠাৎ পড়ে যেতে শুরু করে এবং ধারাবাহিকভাবে তা পড়তেই থাকে।
কখনো একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে চুল পড়ে যায় কখনো আবার পুরো মাথা থেকে সব চুল পড়ে যায়।
এমনকি ভুরু বা চোখের পাপড়িসহ সম্পূর্ণ শরীরের লোমও পড়ে যায়। যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই-ই এ রোগের শিকার হতে পারেন। এমনকি শিশুরাও বাদ যান না। ‘অ্যালোপেশিয়া’ রোগের আবার বিভিন্ন ধরন আছে। সে কারণে একেক জনের শরীরে একেক ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। সাধারণত চুল পড়া বা এই ‘অ্যালোপেশিয়া’ রোগের স্থায়ী কোন সমাধান নেই। তবে চাচীর এই স*ম*স্যাটি যেহেতু শনাক্ত করতে পেরেছি আমি তাই ওনার চিকিৎসা করলে হয়তো কিছুটা উপশম হতে পারে এ রোগের। তবুও কোনো নিশ্চয়তা আমি দিতে পারছি না৷”

নিলাদ্রের মুখে এরূপ কথাগুলো শুনে কামিনীর মুখ পুরোপুরি ভাবে মলিন হয়ে যায়। সে নিজের মাথা নুইয়ে ফেলেছে। রিজভী একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন….

—“দেখো জামাই বাবা চিকিৎসা করলে যদি সত্যিই কিছুটা উপশম হতে পারে তাহলেও চলবে।”

—“হুম আমি আমার সবটুকু জ্ঞান প্রয়োগ করে চেষ্টা করবো চাচা। আপনি চাচীকে মানসিকভাবে ভে*ঙে পড়তে দিয়েন না। বুঝান চাচীকে। নয়তো স*ম*স্যা আরো বে*ড়ে যাবে।”

রিজভী শুধু উপরনিচ মাথা নাড়ালো। অতঃপর কামিনীকে বুঝিয়ে রিজভী নিলাদ্রের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসে। ওরা বের হতেই নিলাদ্র ওর চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে ক্যমেরা দিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাজ্ঞুল দেখিয়ে ‘ডান’ বুঝিয়ে হাসতে শুরু করে। রিজভী আর কামিনী ক্লিনিক থেকে বের হয়ে গিয়েছে বুঝে কুশল, তরুনিমা আর সন্ধ্যা ওদের কেবিন থেকে বেড়িয়ে নিলাদ্রের চেম্বারে চলে আসে। কুশল চেয়ারে বসতে বসতে বললো…

—“এই কারণেই তুমি সন্ধ্যার বিয়ের আগে নিলাদ্রের থেকে ঐ ক্ষ*তি*ক*র ঔষধ দুটো নিয়েছিলে! তার প্রয়োগেই এই মহিলার এমন ক*রু*ণ দশা হয়েছে!”

তরুনিমা হাসতে হাসতে বললো….
—“হুম, ঠিক ধরেছেন। মাত্র তো শুরু হয়েছে। ক*রু*ণ দশার এখনও লম্বা জার্নি পার করতে হবে ঐ কামিনী চৌধুরীকে। নিজের সৌন্দর্য নিয়ে ওনার অতিরিক্ত অ*হং*কার চূ*র্ণ-বি*চূ*র্ণ করে দিবো। আর ওনার করা পা*প কর্মের জন্য উপযুক্ত শা*স্তিও হা*রে হা*রে ভোগ করবেন উনি খুব শীঘ্রই। যতোদিন যাবে কঠিন থেকে কঠিনতর সা*জা ভোগ করবে ওরা আর ওদের ক*রু*ণ পরিণতি হতে দেখে মজা পাবো আমরা।”

তরুনিমার মুখে এরূপ কথা শুনে সন্ধ্যা খুশিতে তরুনিমাকে জড়িয়ে ধরে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…….