#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_১৩
নেহালদের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গিয়েছে।রেবেকাসহ অন্যরা ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল।পিহু গাড়ির মধ্যে নেহালের হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গিয়েছিল।নেহান আস্তে আস্তে ডাক দিল
-পিহু,এই পিহু ঘুম থেকে উঠো।আমরা এসে গিয়েছি তো।ওঠো ঘুম থেকে
পিহু পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায়।তারপর বলে
-এসে গিয়েছি?
-হুম।
-চলো তাহলে
নেহাল প্রথমে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।তারপর পাঞ্জাবী টা ঠিক করে নিজের এক হাত বাড়িয়ে দেয় পিহুর নিকটে।পিহু লাজুক হেসে নেহালের হাতটা ধরে উঠলো।তারপর এগিয়ে গেল বাড়ির সম্মুখে।তাদের এইরকম কাপল দেখে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে।
কিন্তু পেছনের গাড়ি থেকে সদ্য নামা মিহুর এই দৃশ্য দেখে মুখ ভার হয়ে গেল।না,ওদের দেখে খারাপ লাগছে তা নয়।যে মুহূর্তে একটা ভরসার হাত প্রয়োজন সেই মুহূর্তে তার কাছে এখন কেউ নেই।বিদিশা মিহুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল
-এই আপু ওভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?ভেতরে চল
-হুম,চল।
পিহু আর নেহাল ঘরে ঢুকতেই রেবেকা দৌড়ে আসে।এসেই পিহুকে সোফায় বসিয়ে শরবত খেতে দেয়।তারপর জিজ্ঞেস করে
-আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো পিহু?
-না,,মা।
ঠিক সেই সময়ে দরজার পেরিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে মিহু।বিয়ের পোশাকে মাথায় হিজাব আর নেকাব দেওয়া।গাড়ি বাসার সামনে থামতেই মিহু হিজাব আর নেকাব ঠিক করেছে।মিহুকে একা দেখে সবাই একটু থমকে যায়।তারপর আশেপাশের লোকজন বলাবলি করতে থাকে
-আরফানের মনে হয় বিয়েতে মত ছিল না।
-হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন।না হলে কি নিজের বিয়ের সময় এভাবে বৌকে ফেলে রেখে যেতে পারে।
মিহু কথাগুলো শুনে মাথা নিচু করে ফেলল।চোখে না চাইতেও পানিগুলো চলে এসেছে।রেবেকা নীলুর বিষয়ে কিছুই জানেন না।তাই তিনি নেহালের দিকে তাকালেন।নেহাল তৎক্ষনাত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মিহুর পাশে গিয়ে বলল
-আসলে আপনারা কিছুই জানেন না।আসার পথে নীলু অসুস্থ হয়ে পড়ে তাই আরফান ভাই ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে।
-তারপরও বিষয় টা কেমন না।
রেবেকা তখন পিয়াসের মাকে বললেন-ভাবি ওদের দুজনকেই রুমে দিয়ে আসো।ওরা অনেক ক্লান্ত।
পিয়াসের মা রেবেকার কথা শুনে ওদের দোতলায় নিয়ে গেল।প্রথমে মিহুকে আরফানের রুমে বসিয়ে তারপর পিহুকে নেহালের রুমে দিয়ে আসল।নেহালের কাজিন সিস্টারেরা পিহু আর মিহুকে সাহায্য করল ফ্রেশ হতে।তারপর ওদের খাবারটা যে যার রুমে দিয়ে গেল।
এইদিকে নেহালকে রেবেকার কাছে পুরো ঘটনা ডিটেইলসে বলতে হয়েছে।নীলুর ঘটনা শুনে রেবেকা নেহালকে বলল
-খবর নিয়েছিলি বাড়িতে আসার পরে?
-হ্যাঁ পিয়াস কে ফোন দিয়ে ছিলাম। ও বলেছে নীলুকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে।ওর সুস্থ হতে একটু টাইম লাগবে।মানে কয়েকদিন লাগতে পারে।
-ওহ্।আচ্ছা আমি কি একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করব নীলু কেমন আছে?
-তার আর কোনো দরকার নেই।আমরা নিজেদের মধ্যে এতো ফরমালিটি না দেখালেও চলবে।আমি তো খবর নিয়েছি ই।
-তারপরও আমি একবার কথা না বললে মনটাকে বোঝাতে পারছি না।
-আচ্ছা তোমার যদি মন চায় তাহলে ফোন করো।
বলে নেহাল চলে গেল।রেবেকা ফোনটা হাতে নিল।আরফানের নম্বর টা উঠিয়ে ফোন দিল ঠিক তখনই পিয়াসের মা ডাক দিল রেবেকাকে।ফোনটা রিং হওয়ার আগেই কেটে দিল।তারপর চলে গেল পিয়াসের মায়ের কাছে।
পিহুর এখন দমবন্ধ লাগছে।এত ভারী শাড়ী পড়ে থাকতে তার কষ্ট হচ্ছে ।প্রথমে সে চুলগুলো খুলে ফেলল। এতক্ষণ চুলগুলো খোপা করে থাকার ফলে মাথাটা ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল। এখন ভালো লাগছে।
-আহা কি শান্তি ই না লাগছে।পার্লারের মানুষ গুলোও না,,,,,এত পেঁচিয়ে কি চুল বাঁধে।যদি বাঁধতেই হয় তাহলে এমন ভাবে বাঁধবে যাতে খুলতে আর কষ্ট না হয়।
এভাবে বলতে বলতে নিজেই নিজের মেকআপ উঠাতে লাগল।চোখের লেন্স খুলতে গিয়ে এত ভোগ পোহাতে হল যে এটা চোখ না হয়ে যদি অন্য কিছু হতো তাহলে সেটা খুচিয়ে বারোটা বাজিয়ে দিত।চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেল।মেকআপগুলো আর এত কষ্ট করে উঠাতে ইচ্ছা করছে না।তাই একেবারে ফেসওয়াস দিয়ে ফেসটা ধুয়ে আসছে।এসে শাড়িটা পাল্টাবে এমন সময় নেহাল পেছন থেকে পিহুকে জড়িয়ে ধরল।
-আরেহ তুমি আসলে কখন আর কীভাবে আসলে?তোমার বোনেরা আটকায় নি?
-আসলে ওরা নীলুকে ছাড়া কিছু করতে চাইছে না।তাই আজকে রেহাই পেলাম।তবে তুমি এত আনরোমান্টিক কেন? আমি আসার আগেই সাজ নষ্ট করে ফেললে।দেখি আমার দিকে ঘোরে।
বলার সাথে সাথেই একচিৎকার দিয়ে পেছনে লাফ দিল।নেহালের চিৎকারে পিহু ভয় পেয়ে গেছে।ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
-ক্ ক্ কি হয়েছে?তুমি এত ভয় পেলে কেন?
নেহাল বুকে হাত দিয়ে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে।তারপর পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা তুমি কি কোনদিন মেকআপ করোনি?
-না কেন বলোতো?
-তাহলে তোমাকে সাজিয়ে দিত কে?
-তুলি আপু।কিন্তু কেন বলতো?
-কিছু না।চলো তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিই।তবে আগে চোখ বন্ধ করো।
-ওয়াও আমি খুব এক্সাইটেড। আচ্ছা এই নাও চোখ বন্ধ করলাম।বলে পিহু চোখ বন্ধ করল।
নেহাল পিহুকে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো।তারপর কানে কানে বলল
-রেডি তো?
-হ্যাঁ রেডি।চোখ খুলবো?
-হুম,,,,,,,চোখ খুলো।
পিহু খুব এক্সাইটেড হয়ে চোখ খুলল।কিন্তু চোখ খুলে দিল এক চিৎকার।নেহালকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল আর বলতে লাগল
-আমার সামনে থেকে ডায়নীটাকে সরাও।তাড়াতাড়ি সরাও।আমার খুব ভয় লাগছে।প্লিজ
নেহাল মুচকি হাসলো।তারপর ফিসফিসিয়ে বলল
-এই যে মিসেস নেহাল, ওটা কোনো ডায়নী নয়। ওটা আপনার নিজেরই চেহারা
পিহু কান্না থামিয়ে মাথা উঠালো।তারপর জিজ্ঞেস করল-তুমি কী বললে?
-বলেছি ওটা তোমার চেহারা
কথাটা শুনে পিহু ভালো করে আয়নার দিকে তাকালো।তারপর দেখলো মেকআপ গুলো আগে না উঠিয়ে একবারে ধুতে গিয়ে এই অবস্থা।চোখের কাজল আর স্যাডো গুলো মিলে চোখদুটোকে একদম ভুত বানিয়ে দিয়েছে।নিজের দোষ স্বীকার না করে বলল
-তুমি বাজে প্রোডাক্ট কিনে পাঠিয়েছো তাই এমন হয়েছে।এখানে আমার কোনো দোষ নাই।
নেহার বিরবিরিয়ে বলল-হ্যাঁ,,,, ঐ তো নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা।
-তুমি কি বললে?হ্যাঁ?
-না কিছু বলি নাই তো।কিছু না
-আচ্ছা আমাকে দেখে তোমার কী একবারো ডায়েনী মনে হয়েছে?
-হ্যাঁ তোমাকে দেখে তো একদম ডায়েনীই লাগ্ গ্ গ্ গে
বলতেই পিহুর দিকে তাকাতেই দেখতে পেল পিহু বোম দিয়ে আছে।পিহু মুখটা ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল।নেহাল মুচকি হাসল,তারপর পিহুর মুখটা ওরদিকে ঘুরিয়ে বলল
-তোমাকে যেমনটা ই লাগুক না কেন তুমি আমারই থাকবে।ডায়েনী হও বা পরী তুমি একমাত্র নেহালের।
-বিশ্বাস করি না
-আচ্ছা তাহলে প্রুভ দেখাই
বলে পিহুকে কোলে তুলে নিল।পিহু নেহালের গলা জড়িয়ে ধরল।লজ্জায় তার গাল দুটো গরম হয়ে গেল।পরিপূর্ণ পেল নেহাল আর পিহুর ভালোবাসা।
মিহুকে যে খাবারটা দিয়ে গিয়েছে সেটা না খেয়ে রেখে দিল।যতই হোক স্বামী যদি না খেয়ে থাকে সেখানে সে কিভাবে খাবার খায়? অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরেও যখন আরফান এলো না তখন মিহু তার বিয়ের সাজটা উঠিয়ে ফেলল। আসার পরেই বিদিশা অর্ধেক সাজ উঠিয়ে দিয়ে গিয়েছে বাকি গুলো নিজে উঠালো।তারপর ওযু করে নামাজ পড়তে লাগল।শেষে মুনাজাতে বলল
-হে আল্লাহ্ ।হে আমার ভাগ্য নির্ধাতা।আমি জানি আপনি যা করেন সেটা ভালোর জন্যই করেন।তবে আমি আপনার কাছে একটা জিনিস ই চাই আমি যেন একটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারি।আর আজকে আমি একজন মানুষের জীবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছি।আমার কারণে যেন তার কোন বদনাম না হয়।পরিশেষে নীলুর সুস্থ তা কামনা করছি।আমিন।
আজকে যেন মিহুর অপেক্ষার প্রহর কাটছে না।আরফানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সোফাতেই ঘুমিয়ে গেল। আর এইদিকে পিয়াস কে নীলুর কাছে রেখে আরফান বাইরে গেল নীলুর জন্য মেডিসিন আনতে।দোকান থেকে যখন মেডিসিন কিনে আসার জন্য রওনা দিল তখন ফুটপাতে বসা এক গাছ বিক্রেতা বলল
-স্যার একটা বেলী ফুলের চারা আছে।নিবেন?
এখন রাত বারোটার বেশী বাজে।এইসময়ে এই লোক গাছ বিক্রি করছে দেখে আরফানের একটু খটকা লাগল।তাই দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল
-এত রাতে গাছ বিক্রি করছেন কেন? এখন কেউ কিনবে এগুলো?
-স্যার একপিছ রইয়া গেছে।হেই লাইগা রাইত হইলেও বেইচা যাইতে চাইছিলাম।
-আচ্ছা তাহলে ওটাকে তো সকালে বিক্রি করলেও পারতেন। এখন বাসায় গেলেই তো পারতেন।
-স্যার কি আর কমু।আইজকা আমার বিবাহ বার্ষিকী।হেইতে বিবি কইছিল একটা কেক আনতে।কিন্তু দেহেন এই এক পিছ বেচতে না পারলে কেক কিনতে পারমু না।হেই লাইগা বেচলাম
গাছ বিক্রেতার নিজের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দেখে অবাক হয়ে গেল।সে বলল
-আচ্ছা তাহলে গাছটা প্যাক করে দিন
গাছটা নেওয়ার পরে আরফান তাকে একটা এক হাজার টাকার নোট দিল
-স্যার ভাংতি নাই তো
-রেখে দিন,কালকে আপনার বিবিকে নিয়ে যা খুশি তাই করবেন।ঠিক আছে?
-কিন্তু
-কোনো কিন্তু নয়। আজকে আপনাদের যেমন বিবাহবার্ষিকী তেমনি আমার আজকে বিয়ে হয়েছে।মনে করবেন আমার বিয়ে উপলক্ষে আপনাদের সামান্য কিছু দিলাম
লোকটা খুশি হয়ে বলল-স্যার আপনার জন্য দোয়া রইল। এই গাছে খু সুন্দর বেলী ফুল ফোটে আর খুব ঘ্রাণ। আপনার আজকে যার লগে বিয়া হইছে সে যেন আপনার জীবনের বেলী ফুল হয়।
আরফান বেলী চারাটা নিয়ে চলে আসল। আর মনে মনে বলতে লাগল
-তার জীবনে আসলেই কী বেলী ফুল আসবে?মিহুর সাথে কী তার এমন একটা সম্পর্ক তৈরি হবে?আচ্ছা এটা কি সম্ভব হবে কখনো?মিহু কি তার জীবনে কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারবে?কি হবে তাদের ভবিষ্যত? কোন দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে তাদের জীবন?
#চলবে
#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_১৪
আরফান সকাল সকাল চলে আসলো বাড়িতে।এসেই কোনো দিকে না তাকিয়ে চলে গেল বাথরুমে।তার আজকে জগিং করা হলো না।অফিসে যেতে হবে,প্রচুর চাপ পড়েছে।তার প্রডাক্ট তৈরি করার জন্য আজকে মাল আসার কথা।সেগুলো ঠিকঠাক এসেছে কিনা ,ঠিক মতো রাখা হলো কিনা সব দেখতে হবে।গোসল করার পরে সে বেলী ফুলের গাছটা নিয়ে চলে গেল তার বাগানে।কিন্তু বাগানে গিয়ে দেখলো এক অপূর্ব দৃশ্য।
মিহু সকাল বেলা নামাজ পড়ে আর ঘুমায় নি।সে বেলকনির দরজা খুলে দেখল এটা একটা মিনি ছাদ। ছাদে ঘুর ঘুর করে একটু কর্ণারে যেতেই দেখতে পেল ফুলের বাগান। এত দুঃখের মাঝেও যেন কোথায় একটা সুখের অনুভূতি হচ্ছে । এত গুলো ফুল দেখে মিহু তার খোঁপা খুলে দিল।তার লম্বা সিল্কি চুলগুলো ছড়িয়ে পড়ল।তারপর সে কয়েকটা লাল গোলাপ তার কানে গুজল।কতক্ষণ এভাবে সারা বাগান ঘুরল আর সব ফুল গুলোতে তার হাতের ছোঁয়া দিল।কিছুক্ষণ পরে সে গোলাপগুলো মুখে নিয়ে চুলগুলো খোপা করতে লাগল।
ঠিক এই সময়ে আরফানের আগমন ঘটল।মিহুকে এভাবে দেখে আরফানের চোখ জুড়িয়ে গেল।মিহু চুলগুলো খোপা করে গোলাপ গুলো খোপায় দিতে চাইল।কিন্তু কোনোভাবেই দিতে পারছে।শেষে অতিষ্ঠ হয়ে ফুলগুলো ফেলে দিল। আরফান ছাদে বসে এসব দেখছিল কিন্তু মিহু আরফানকে খেয়াল করল না। আরফান ছাদ থেকে নেমে মাটিতে পরা ফুলগুলো তুলে নিল।তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেল মিহুর নিকটে।
মিহু মনটা খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।তখনই হঠাৎ গম্ভীর কারো কথা শুনে বুকটা কেঁপে উঠে।কেউ খোঁপায় কিছু করছে।
-কোনো কিছু না পারলে একদম হাল ছেড়ে দিতে নেই।একটু বিরতি নেওয়া যায় কিন্তু একদম ছুটি না।
মিহু দ্রুত পেছন ঘুরল।ঘুরে আরফানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। আরফানকে যে দেখেনি এমন না।বিদিশা একবার আরফানের ছবি দেখিয়ে ছিল।তাই চিনতে কোন অসুবিধা হয় নি।কিন্তু হঠাৎ সামনে থেকে দেখে একটু থমকে গেল। আরফান ও মিহুকে আগে দেখেছে কিন্তু বাস্তবে দেখে আরফান ও একটু থমকে গেছে।মিহু খেয়াল আসতেই সে ঘোমটা দিল মাথায়। তারপর চলে যেতে চাইলে আরফান বলে
-মিহু আমার আপনার সাথে কয়েকটি কথা ছিল। আপনি কি এখন শুনতে পারবেন?
-জ্বী বলুন।
-তাহলে আপনি দোলনায় বসুন আর আমি বেলী গাছটা লাগাচ্ছি।এক সাথে কথা বলাও হয়ে যাবে।
মিহু দোলনায় বসে বসে আরফানকে পরোখ করতে লাগল আর আরফান গাছটা লাগাতে লাগাতে বলতে লাগল
-কিছু কথা আগেই বলে দিচ্ছি।আমি চাচ্ছি না আপনি কষ্ট পান।শুনুন বিয়ে টিয়ে করার আমার কোনো ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু আমার বোনকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।বলতে গেলে ওই আমার প্রাণ। আমার বোন আবদার করেছে আপনাকে বিয়ে করতে হবে।এজন্য আমি আপনাকে বিয়ে করেছি।তাই বলে এটা ভাববেন না যে আপনি ফেলনা কিছু।যেহেতু আপনাকে বিয়ে করেছি সেহেতু আপনার কোনো অমর্যাদা হতে দেবো না।তবে একটা কথা আমি আপনাকে এখনই স্ত্রীর অধিকার দিতে পারব না এবং আদৌ পারব কিনা জানি না।আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি।আপনি কী শুনছেন?
-হ্যাঁ
-তাহলে আপনার কিছু বলার আছে?
-হুম
-বলে ফেলুন সমস্যা নেই।
-আচ্ছা নীলু কেমন আছে?
আরফান ফুল গাছটাকে মাটিতে সবেমাত্র পুঁতবে।তখনই মিহুর এমন কথা শুনে একটু অবাক সাথ একটু আশাহত ও হলো।মিহুর দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি মনে হয় ব্যাপারটিকে সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছেন না।আমি আসলে চাচ্ছি না এ বিষয় টা নিয়ে পরে কোনো ঝামেলা হোক।তাই এখনই সবটা ক্লিয়ার করতে চাইছি।
-আপনি যেমন করে চাইছেন তেমনটাই হবে।কারণ আমার নিজের ও বিয়ের প্রস্তুতি ছিল না।বিয়েটা হঠাৎ করেই হয়ে গেল।তাই এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার তেমন কোনো সমস্যা নেই।
-আচ্ছা তাহলে আপনি হঠাৎ করে বিয়েতে রাজি হলেন কেন? আপনিতো চেনেনও না আমাকে।
মিহু কি করবে ভেবে পায় না।সে কি তার অতীতের কথা বলবে?নাকি কিছুই বলবে না।এসব বললে তিনি যদি কিছু মনে করেন?
মিহুকে কিছু বলতে না দেখে আরফান বলল
-আপনার যদি বলতে কোনো সমস্যা হয় তাহলে বলার প্রয়োজন নেই।এখন আপাতত আপনি এটা ডিসাইড করুন যে আমার শর্তে আপনার কোনো প্রবলেম হবে কিনা? আপনি লাগলে সময় নিন।
মিহু একটু মুচকি হাসলো।তারপর বলল- এই বিষয়টা আপনার বিয়ের আগে বলা উচিত ছিল বিয়ের পরে এসে আমাকে সহস্র বছর সময় দিলেও আমি আপনার সব শর্তে রাজি।কারণ বাঙালি নারিরা এক সংসারেই নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চায় হোক সেটা ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী।
বলে মিহু আস্তে আস্তে চলে গেল। আরফান মিহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল
-আমি কি আসলেই মেয়েটার জীবন নষ্ট করলাম নাকি?আমার কি বিয়ের আগেই বিষয়টা ক্লিয়ার করা উচিত ছিল। নিজের বিষয়টা প্রধাণ্য দিতে গিয়ে আবার মিহুর জীবনটাকে বিপদে ফেলল না তো?
পিয়াস নীলুর বেডের পাশে সোফায় বসে ঘুমিয়ে ছিল।রাতে ওর ভালো করে ঘুম হয় নি।হাসপাতালে তো ওর কখনো ঘুমই আসতে চায় না।তবুও একটু ঘুমিয়ে পড়েছে ঠিক তখনই ওর মনে হলো কে যেন বলছে
ঐ ইংরেজী ষাড় ঘুম দিয়ে উঠে যা নইলে তোর ঘাড়ে চেপে একদম ঘড়িতে বাজাব।না হলে সুস্থ হবি না।
পিয়াস এসব অদ্ভুত কথা শুনে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে গেল।ঘুমানোর আগেও এটা হাসপাতাল ছিল আর ঘুম থেকে উঠার পরেও এটা হাসপাতাল শুধু পার্থক্য হলো আগে ছিল নির্জন নিরালা আর এখন হলো মাছবাজার।কারণ বাসার সব গুষ্টিশুদ্ধ এসেছে নীলুকে দেখতে।পিয়াস একটা বাচ্চা কে ডেকে জিজ্ঞেস করল
-এই একটু আগে কি কেউ আমাকে ঘুম থেকে উঠতে বলেছিল?
-হুম
-কে?
-একটা আপু
-কি বলেছিল?
-বলেছিল এই ইংরেজি ষাঁড় ঘুম থেকে উঠুন।নইলে ঘাড়ে ইন্জেকশান দিয়ে দেবো।
-আর কিছু বলেছে
-না
-যা তাহলে
পিয়াস হতভম্ব হয়ে আছে।নিশ্চয় বিদিশা এসেছিল।কিন্তু ও তো ঐসব কথা বলেনি।তাহলে কে বলেছে?
আসলে একটু আগে হয়েছিল কি রেবেকা নীলুকে বলেছিল ‘দেখেছো ঘড়িয়ে কয়টা বাজে এখনও যদি খাবার না খেয়ে থাকো তাহলে সুস্থ হবে না।’আর সবার কথা জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ঘুমের মধ্যে শুনেছে পিয়াস যেটা এখন পর্যন্ত সে বুঝতে পারছে না।উঠে সে ওয়াশরুমে গেল
রেবেকা নীলুর হাত ধরে বলল
-সুস্থ হয়ে যাও তাড়াতাড়ি।মামণি কষ্ট পাচ্ছে তো
-মামণি আমি তো সুস্থ ই আছি।একটু দুর্বল আর কিছুই না।আচ্ছা ভাবিরা কেউ আসেনি?
-আসলে বুঝলে বাড়িতে তো অনেক মেহমান। এখন সেখান থেকে ওদের নিয়ে আসলে ব্যাপারটা কেমন দেখায় না?তাই আসেনি
-ওওও
বলে মন খারাপ করে ফেলল নীলু।নীলুর মন খারাপ করা দেখে রেবেকা বললেন
-কিন্তু অন্য আরেক জন এসেছে।গেজ করো তো কে?
-কে মামণি
-ভেতরে আসো তুমি
বিদিশা নীলুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এতক্ষণ লুকিয়ে ছিল। বাসা থেকে কয়েকটা বাচ্চা এসেছে ওদের সাথে। সেই বাচ্চা দের নিয়ে বাইরে ছিল।রেবেকার ডাক শুনে দৌড়ে ভেতরে গেল।ঠিক তখনই পিয়াস বাথরুম থেকে বের হলো।বাথরুম ছিল দরজার পাশে।ও বাথরুম থেকে বের হতেই শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
-ও বাবাগো আমার কোমড়টা গেছে মনে হয় । নীলুরে এখন তোর সাথেই মনে হয় হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।কিন্তু এখানে উড়ন্ত খাম্বা এলো কীভাবে
-এই মিস্টার ইংরেজী ষাঁড় চোখ খুলে ভালোভাবে দেখে কথা বলুন। এখানে কোনো খাম্বা নেই আমি আছি। আমি হলাম বিদিশা
-ও জীনের বাদশা,এই জন্যই তো বলি এতো শক্তি অন্য কেউ কোথায় পাবে?
-আহ পিয়াস কি শুরু করলি কি?ফ্লোরে বসার নিয়ত ই করছো নাকি
রেবেকার ধমকে দুজনেই চুপ করে গেল।বিদিশা নীলুর কাছে গিয়ে বলল-দেখলে কেমন সারপ্রাইজ দিলাম
-হুম আমি খুব সারপ্রাইজড হয়েছি
-তুমি কি আমাকে এই বিষয়টা নিয়ে পচাচ্ছো?
-না না তোমাকে পচাতে যাব কোন দুঃখে?তুমি হলে আমার দুই ভাইয়ের শালিকা আমি কি সেখানে কিছু বলতে পারি?তুমি তো একটা শালিক পাখি
-যাও নীলু তোমার সাথে কথা বলব না।
-আরে না না রাগ করে না।
এভাবেই দুজনে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে।নীলুকে হাসি মুখে দেখে রেবেকা খুব খুশি হলো।পিয়াসকে আরফান ফোন দিলে নীলুর অবস্থা সম্পর্কে জানায়। আরফান ফোনটা কেটে তার অফিসে আসা প্যাকেট গুলোর হিসাব মিলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আজকে প্রায় মেহমানরাই নেহালদের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।পিয়াসের মাও তাদের বাড়িতে গিয়েছে।যেহেতু রিসিপশান এখন করা হবে না তাই বিকের মধ্যেই বাড়ি খালি হয়ে গেল।বাড়িতে মানুষ বলতে নেহাল,রেবেকা পিহু,মিহু।নেহাল আর পিহু রেডি হয়ে বাইরে যাচ্ছিল তখন রেবেকা সোফায় বসে চা খাচ্ছিল।জিজ্ঞেস করলেন
-কোথায় যাচ্ছ?
-মা নীলুকে দেখতে যাচ্ছি।
-মিহুকেও তাহলে সাথে নিয়ে যাও।
-আচ্ছা।
পিহু মিহুকে ডাকতে ওর রুমে গেল।গিয়ে দরজা নক করল।মিহু ভেতরে আসতে বলল।কিন্তু পিহুকে দেখে মিহু একটু অবাক হলো।ও বাড়িতে থাকতে পিহু আর মিহুর তেমন একটা কথা হতো না।কারণ পিহু যদি মিহুর সাথে কথা বলে তাহলে তার প্রভাবটা মিহুর ওপরেই পড়ে যেটা ভেবে পিহু তেমন একটা কথা বলতো না মিহুর সাথে।কিন্তু এখন তো মিহুর সাথে কথা বলতে সমস্যা নেই।দুজনেই একটু আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ল।পিহু ওকে জিজ্ঞেস করল
-নীলুকে দেখতে যাবি মিহু
#চলবে