হৃদমাঝারে তুমি পর্ব-১৫+১৬

0
444

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_১৫

এখন পরিবেশটা একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে নেহালের কাছে।কারণ ও ভেবেছিল নীলুকে দেখতে যাওয়ার সময়ে পিহুর সাথে দু একটা দুষ্টমি করবে কিন্তু এখন তাকে বিবাহিত হয়েও সিঙ্গেল ছেলেদের মতো থাকতে হচ্ছে।মিহু আর পিহু দুবোনে ঠিক করেছে তারা রিক্সায় যাবে।পিহু যখন এই আবদার করেছে তখন নেহাল অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিল পিহুর দিকে কিন্তু পিহু ওকে পাত্তা দেয় নি।দুবোন ড্যাঙ ড্যাঙ করে রিক্সায় উঠে চলে গেছে।আর নেহালের আসতে হচ্ছে একা একা।রিক্সায় উঠে নেহাল পোস্ট দিল

‘বিয়ের পরেও সিঙ্গেলদের মতো একা একা রিক্সাতে ঘুরতে হচ্ছে’

পোস্ট দেওয়ার সাথে সাথেই পিয়াস কমেন্ট করল

‘ভাই তোমার তো সাত কপাল।বিয়ের পরেও সিঙ্গেল। আর আমি তো জন্মগত সিঙ্গেল।’

নেহাল পিয়াসের কমেন্টে কোনো রিয়্যাক্ট করল না।কারণ এখন কিছু বললেই ওর ইমেজটা নষ্ট করে দিবে সবার সামনে।তবে পিয়াসের কমেন্টের সাথে সাথেই পিহু হতে মেসেজ আসল

‘বউ set your nickname বিবাহিত সিঙ্গেল’

এরপর পিহু ডাটা অফ করে ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে।মিহু অন্যদিকে ফিরে ছিল।নিজের আপন বোনের সাথেও একটা জড়তা এসে গেছে।আসলেই সম্পর্কে দূরত্ব চলে আসলে সেখানে সম্পর্ক টা আগের মতো থাকে না।দু বোনের কেউ ই বুঝতে পারছে কীভাবে শুরু করবে।প্রথমে পিহু শুরু করল

-মিহু তোর কি মনে আছে সেই ক্লাস থ্রী এর কথা?যখন একদিন বাবা আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে যায় নি তখন রাস্তায় কয়েকটা কুকুর আমাকে আক্রমণ করেছিল?

-হ্যাঁ সেইদিন আমি স্কুলে যাই নি।কিন্তু চাচী আমাকে মারুফাদের বাসায় পাঠিয়েছিলেন তুলি আপুকে ডাকতে।তুলি আপু আর আমি যখন রাস্তায় তখন তোকে দেখেছিলাম কুকুরের ভয়ে রাস্তায় জড়োসড়ো হয়ে আছিস

-ঐদিন তো তুলি আপু ভয়ে কান্না করে দিয়েছিলেন।তিনি তখন ক্লাস সেভেনে পড়েন।রাস্তায় উপুড় হয়ে কুকুরগুলোকে বলেছিলেন কুকুর ভাই তোমার পায়ে পড়ি যেতে দাও।পরে তো ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।

-হুম সেইদিন যদি মাহিন ভাই সঠিক সময় না আসতেন তাহলে মনে হয় সবাই কুকুরের কামড় খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে হতো।

ঘটনাটা বলার পরেই দুজনে চুপ হয়ে গেল কি বলবে কেউ ই ভেবে পায় না।দুজনেই ফরমালিটি দেখাচ্ছে।ফরমালিটি টা ভাঙতেই মনে হয় রিক্সাটা একটা ঝাকি দিল।মিহু পড়ে যেতেই পিহু ধরে ফেলল।এই হাতটাই তো এতদিন মিহু চেয়েছিল কিন্তু পায়নি।তারপরও মিহুর কাছে মনে হলো এতদিন পরে মনে হয় ও সত্যিই সুখের সন্ধান পেতে চলল।মিহু হঠাৎ করে কেঁদে দিল।মিহুকে থামাতে গিয়ে পিহুও কান্না করে দিল। ওদের কান্না শুনে রিক্সাওয়ালা রিক্সা থামিয়ে হতভম্ব হয়ে বসল। ওদের রিক্সা থামাতে দেখে নেহাল ওর রিক্সা থামিয়ে দৌড়ে এই রিক্সার কাছে আসল।দুজনকে এত জিজ্ঞেস করল কেউ কিছু বলল না।কিছুক্ষণ পরে দুজনে কান্না থামিয়ে রিক্সাওয়ালাকে আবার যেতে বলল।কেউ কোনো কিছুই বুঝলো না।

নীলু এখন অনেকটাই সুস্থ।কিন্তু ডাক্তার বলেছে তারপরও সকাল পর্যন্ত থাকতে।পিয়াস আর নীলু বসে আড্ডা দিচ্ছিল।নীলু একটা আপেল নিয়ে কামড় দিবে তখনই দরজার দিকে তাকিয়ে

‘ভাবী’

বলে চিৎকার দিল। আর আপেলটা ছুড়ে ফেলল।বেড থেকে নেমে দৌড়ে মিহুকে জড়িয়ে ধরল।তা দেখে পিহু বলল

-নীলু আমি কিন্তু রাগ করেছি।শুধু এক ভাবীকে জড়িয়ে ধরলেই হবে?

মিহুকে ছাড়িয়ে পিহুকে জড়িয়ে ধরে বলল
-কে বলেছে শুধু বড় ভাবীকেই জড়িয়ে ধরব? এই নাও তোমাকেও জড়িয়ে ধরলাম।কিন্তু ভাবি তোমার রাগতো আমি ভাঙাবো না।যে ভাঙাবে সে কই হ্যাঁ?

পিহু লজ্জা পেল।তারপর বলল
-ও পেছনে পড়েছে।আচ্ছা দাঁড়াও ফোন দিচ্ছি।

বলে পিহু ফোন দিল কিন্তু নেহাল ফোন রিসিভ করল না।আরো দুইবার ফোন দেওয়ার পরেও ধরল না।

-মনে হয় ব্যস্ত আছে।
পিহু কথাটি বলে অন্য দিকে তাকাতেই দেখলো পিয়াস এক হাতে ফোন আর অপর হাতে একটা আপেল ধরে আছে।কিছুক্ষণ আপেল এর দিকে তাকায় আবার কিছুক্ষণ ফোনের দিকে।পিয়াসের এমন অবস্থা দেখে পিহু জিজ্ঞেস করল

-পিয়াস কি হয়েছে?

পিহু মিহু কে দেখে অবাক হয়ে পিয়াস জিজ্ঞেস করল
-তোমরা কখন আসলে ভাবী?

-এইত কিছুক্ষণ আগে।কেন তুমি খেয়াল করো নি?আচ্ছা যাক,এক হাতে ফোন আর এক হাতে আপেল নিয়ে কি দেখছো?

-বুঝলে ভাবী আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে নীলুর সাথে কথা বলছিলাম।কীভাবে যেন উড়ন্ত একটা আপেল এসে আমার ফোনের ওপরে পড়ল আর ফোনটা পড়ে গিয়ে ডিসপ্লে ভেঙে গেছে।

পিয়াসের কথা শুনে নীলু মিটমিটিয়ে হাসল।তারপর বলল

-ভাই হয়তো তুমি ভবিষ্যতের নিউটন। পুরোনো নিউটনের মাথায় আপেল পড়ে কয়েকটা সূত্র আবিষ্কার হয়েছিল আর এখন হয়তো তোমার ফোনের ওপর পড়ে নতুন কিছু আবিষ্কার হবে।আচ্ছা ভাই যা কিছুই আবিষ্কার করো না কেন একটু সহজ করো যাতে ভবিষ্যতের বাচ্চাদের গালি না খেতে হয়।

এমন সময় পিহুর নম্বরে আননোন থেকে ফোন আসল।প্রথমে পিহু ধরেনি।দ্বিতীয়বারে ফোনটা ধরল

-হ্যালো কে বলছেন?

-পিহু আমি নেহাল

-তোমার ফোনের কি হয়েছে?আর এইটা কার নম্বর থেকে ফোন দিয়েছো?

-আমার ফোন আর টাকা হারিয়ে গেছে।

-কীভাবে?

নেহাল শুকনো মুখে বলল-তোমরা যখন রাস্তায় বসে কান্না করছিলে তখন রিক্সায় মোবাইল আর মানিব্যাগ রেখে আসছিলাম পরে তোমরা যাওয়ার পরে গিয়ে দেখি রিক্সা উধাও।আর আমার কাছে ফোন টাকা কিছু নেই।তুমি একটু শপিং মলের কাছে আসতে পারো।আমি এখান থেকে যেতে পারছি না।

পিহু হাসতে হাসতে বলল-আমার মনে হয় রিক্সায় তুমি থাকলে তোমাকেও নিয়ে যেতো।আচ্ছা,,,,,,,,তুমি একটা রিক্সা করে চলে আসো এখানে।ভাড়া এখান থেকে দিবে বলে উঠে আসো।

-না তুমি একটু এখানে আসো।কাজ আছে

-আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি আসছি

পিহু ফোন কেটে সবাইকে সব বলল।তারপর বেরিয়ে গেল শপিংমলের উদ্দেশ্যে।মিহু পিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল

-ভাইয়া আপনিও এখন বাসায় যান। আপনাকে দেখে ক্লান্ত লাগছে।আমি আছি নীলুর সাথে

-না ভাবী আরফান ভাই আমাকে ভর্তা বানিয়ে দেবে।আর তাছাড়াও কালকে সকালে তো চলেই যাবো।এখন গিয়ে কোনো লাভ নাই।

-না ভাইয়া আপনি এখন বাসায় যান। উনি কিছু বলবেন না।আর আমি আছিতো নীলুর সাথে।আমি সকাল পর্যন্তই থাকবো।

-না না।আরফান ভাই অনুমতি না দিলে যাবো না।আর বড় মা যদি জানে তার ছেলের বৌকে আমি হাসপাতালে রেখে এসেছি তাহলে আমাকে চিরতরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবে।

-আপনি মনে হয় ভাবছেন আমি নীলুর ভালোমতো দেখাশোনা করতে পারব না।

-না না ভাবি ।একথা কখন বললাম

-তাহলে বাসায় যান

-কিন্তু

-কোনো কিন্তু নাই আপনি চলে যান।

মিহুর কথায় পিয়াস চলে গেল। আসলে ও একটু চাইছিল ফ্রেশ হতে কিন্তু এখানে কে থাকবে ভেবে যায় নি।মিহুকে এখানে থাকতে দেওয়াটা কেমন দেখায় তাই যেতে চাইছিল না।তারপরও মিহুর জোরাজুরিতে চলে গেল আর ওর মনটাও একটু বাসায় যেতে চাইছিল।

পিয়াস চলে যাওয়ার পরে নীলু মিহুকে নিয়ে বেডে বসল।তারপর মিহুকে বলল

-বড় ভাবী তোমাকে কয়েকটা কথা বলার ছিল। এখন সুযোগ পেয়েছি তাই বলে রাখছি।

-হ্যাঁ বলো।

-ভাবী আমি জানিনা অতীতে কি হয়েছিল বা কি ঘটেছিল ।কিন্তু আমি আঁচ করতে পেরেছি যে অতীতে এমন কিছু ঘটেছে যার ফলে আমি মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ি।আমার কথা বাদ দাও তুমি আরফান ভাইয়ের কথা বলো।তাকে কি তোমার স্বাভাবিক মনে হয়?

-হ্যাঁ স্বাভাবিক ই তো।

-না ভাইয়া স্বাভাবিক না।এমনকি তিনি স্বাভাবিক ভাবে জীবনটাকে উপভোগ করছেন না।আমি জানি তোমাকে প্রথম প্রথম বলাটা ঠিক হবে না।কিন্তু আমি এখনই তোমাকে এটা জানিয়ে রাখতে চাই যে আমি চাই তুমি আমার ভাইয়ের জীবনটাকে ঝলমলে করে দাও।তাকে একটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সাহায্য করো।আমি জানি এইটা একমাত্র তুমিই পারবে।

আরফান তার অফিসের কেমিক্যাল ল্যাবে গেল। আজকে যে প্রডাক্ট গুলো এনেছে সবগুলোই কেমিক্যাল।ফারিশ আগে থেকেই ল্যাবে ছিল।সবগুলো কেমিক্যাল থেকে একটু একটু স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করতে লাগল।ফারিশ আরফানকে বলল

-আরফান আমার তো মনে হয় সবগুলোই ঠিক ঠাক আছে।তবুও তুই একটু রিপোর্ট টা চেক করে দেখ

আরফান ফারিশকে বলল-তুই যেখানে বলেছিস সব ঠিক আছে তাহলে সব ঠিকই আছে।তোকে অবিশ্বাস করার কোনো অপশন ই নাই।

-ভাই এত বিশ্বাস করিস না।কবে দেখবি বিশ্বাস ভেঙে দিয়ে চলে গেছি টের পাবি না।

-সেটা হওয়ার হলে অনেক আগেই হতো।

এমন সময় অফিসে পিয়ন এসে বলল
-স্যার আপনাকে একজনে এই চিঠিখানা দিয়ে গিয়েছে।বলেছে আপনাকে দিতে।আর এটা সাথে সাথেই পড়তে বলেছে।

আরফান চিঠিটা নিয়ে দেখল বেশ আহামরি কিছু না।চিঠিটা একটা সাধারণ খামের মধ্যেই দেওয়া।ফারিশ বলল

-হয়ত সাধারণের ভেতরে অসাধারণ কিছু।যা খুলে দেখ

আরফান নিজের কেবিনে এলো।এসে তার চেয়ারে বসে পড়ল। তারপর খামটা খুলে চিঠিটা বের করল।সেখানে লেখা ছিল কিছুটা এরকম

“জনাব আরফান আদিত্য,

আমি আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী বলছি।একেবারে আপনার না আমি আসলে মিহুর শুভাকাঙ্ক্ষী।তবে যেহেতু আপনি মিহুর জীবনে জড়িয়ে আছেন তাই আপনাকেই বলতে হচ্ছে। আমি আমার পরিচয় কিছুই এখানে লেখার মাধ্যমে দিতে রাজি নই।কারণ কোনো প্রুভ থেকে যাক সেটা আমি চাইছি না।আর বেশি কথা এখানেও লিখব না।শুধু বলছি আপনার কিছু জরুরী ইনফরমেশন জানা প্রয়োজন। আপনি (………..) রেস্টুরেন্টে আগামী দিন বিকেল চারটার সময়ে আমার সাথে দেখা করবেন। আর এটাকে নিছক কোনো বিষয় ভেবে উড়িয়ে দেবেন না।

ইতি
আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী

#চলবে

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_১৬

সুখ জিনিসটা আসলে আপেক্ষিক। আমরা বর্তমানে কেমন আছি সেটা নির্ভর করে অতীতে কেমন ছিলাম তার ওপরে।এই যেমন অতীতে আমার যদি একশ টাকা খরচ করার সামর্থ্য থাকত আর বর্তমানে যদি সেটা কমে দশটাকায় দাঁড়ায় তাহল আমরা ভাবি আমাদের কষ্টের দিন এসেছে।আমাদের এখন আর সুখের দেখা মিলবে না।কিন্তু যার অতীতে দশটাকাই ছিল খরচ করার সামর্থ্য তার যদি বর্তমানেও দশ টাকা খরচের সামর্থ্য হয় তাহলে সে ভাববে সে সুখেই আছে।আসলে এই সুখটা নির্ভর করে আমরা কিসের ওপর ভিত্তি করে সেটাকে পরিমাপ করছি

মিহু অতীতে কেমন ছিল জানেনা শুধু জানে এই দুদিনে সে অনেক সুন্দর একটা জীবন পেয়েছে।একটু আগে পিহু ফোন করে বলে দিয়েছে যে নেহালের একটা জরুরী কাজ পড়েছে তাই ওদের বাসায় যেতে হয়েছে।নীলু একটু মন খারাপ করেছিল নেহাল ভাই ওর সাথে দেখা করতে আসেনি বলে।তবে মিহুর সাথে কথা বলতে বলতে খারাপ লাগাটা কেটে গিয়েছে।ওর হাই পাওয়ারে খাওয়া ওষুধ গুলোর কারণে সন্ধ্যার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।মিহু একটু কেবিনটার দিকে তাকিয়ে দেখে সারা জায়গায় এখানে ওখানে জামা কাপড় পড়ে আছে।ও একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে নিল।তারপর নীলুর কপালে হাত বুলিয়ে দিল।হাত বুলাতে বুলাতে মিহু নিজেও নীলুর পাশে ঘুমিয়ে পড়ল।

আরফান সব কাজ গুছিয়ে হাসপাতালে আসলো।এই কাজের ফলে ও নীলুকে বেশী সময় দিতে পারছে না।আর এখন তো আরো দায়িত্ব বেড়ে গেছে।ওর জীবনে মিহুও জড়িয়ে গিয়েছে।যতই হোক দায়িত্ব গুলো আরফান খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করে।এসব ভাবতে ভাবতেই কেবিনের দরজা খুলল।দরজা খোলার পরে ওর হৃদয়টা জুড়িয়ে গেল।নীলুর পাশেই মিহু ঘুমিয়ে আছে।ঘুমের মধ্যেই নীলুর মাথায় বার বার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আরফান ধীরে ধীরে ওদের দিকে এগিয়ে গেল।মিহু যে পাশে ঘুমিয়ে আছে সেই পাশে গিয়ে হাটু মুড়ে বসল।নীলুর দিকে তাকিয়ে মিহুর দিকে তাকালো।এই মেয়েটার মুখে একধরনের মায়া কাজ করে যেটা আরফানকে ওর দিকে টানে।কয়েকটা চুল মিহুর কপালে এসে পড়েছিল। আরফান হাত দিয়ে ঐগুলো সরিয়ে দিল।তারপর ভালো করে খেয়াল করে দেখল যে মিহুর বাম পাশের চোখের নিচে একটা তিল রয়েছে।আরফান মিহুর দিকে তাকিয়েই ছিল তখনই হঠাৎ করে মিহু পাশ ঘুরতে গিয়ে বেড থেকে পড়ে যেতে নিলেই আরফান মিহুকে ধরে ফেলে।মিহু গিয়ে পড়ে আরফানের কোলের মাঝে।আরফান এমন ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেল।মিহু ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে গেল। চোখ খুলে নিজেকে আরফানের কোলে আবিষ্কার করে বিস্মিত হলো।দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিল।হয়ত দুজনে এইভাবেই তাকিয়ে থাকত যদি না আরফানের ফোন আসত।ফোনের রিং শুনে আরফান মিহুকে নামিয়ে দিল। আর দ্রুত বাইরে চলে গেল।

মিহুর জীবনে এই প্রথম কোনো পুরুষকে এত কাছ থেকে দেখেছে।লজ্জায় মিহুর গাল দুটো লাল হয়ে গেলো।ও একবার নীলুর দিকে তাকিয়ে দেখে নীলু একটু নড়ে চরে আবার ঘুমিয়ে গেল।আরফানের সামনে পড়লে এখন আর ও আরফানের দিকে তাকাতেই পারবেনা।ও উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল।

পিহু অনেকক্ষণ ধরে দেয়ালে একটা পেইন্টিং লাগাতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।পেইন্টিং টা তিনটা অংশে বিভক্ত যদি উপরে ধরে লাগাতে যায় তাহলে নিচে থেকে সরে যায় আবার নিচ থেকে লাগাতে গেলে উপর থেকে সরে যায়। এটা নিয়ে এত ঝামেলা হচ্ছে বলার বাহিরে।নেহাল দরজায় ফুলগুলো লাগাচ্ছিল,হঠাৎ করে পিহুর দিকে তাকাতেই দেখতে পায় পেইন্টিং টা নিয়ে বহুত ঝামেলা করছে।তাই ও পিহুর কাছে গিয়ে ওর পেছন থেকেই পেইন্টিং টার উপরের দিক ধরে বসল আর পিহু এক এক করে এবার তিনটা খন্ডই লাগিয়ে ফেলল। এবার অনেক খুশি লাগছে।পেছন ফিরতে নেহালের দুই হাতের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।নেহাল ওর দুই হাত দিয়ে দেয়ালে পিহুকে আটকিয়ে ফেলেছে।নেহাল পিহুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।পিহু কিছু বলতে যাবে তার আগেই নেহাল পিহুর ঠোটে আঙুল দিয়ে বলল

-হুস,কোনো কথা বলবে না।

তারপর পিহুর দিকে তাকিয়ে থাকল একটু সময় ধরে।পিহু অপেক্ষায় আছে নেহাল কি বলবে এর জন্য।কিন্তু নেহাল কিছু না বলে পিহুর দিকে তাকিয়েই আছে।

-ভাই এইভাবে ভাবির দিকে নজর দিস না।তোর নিজেরই বৌ।পরেও দেখতে পারবি।এখন আমার মতো সিঙ্গেলের সামনে বসে এত মহব্বত না করলেও পারিস।

দরজার সামনে বসে বলা পিয়াসের কথাগুলোর ফলে নেহালের মুডটা নষ্ট হয়ে গেল।নেহাল চোখ গুলো বড় বড় করে পিয়াসের দিকে তাকালো।পিহু মিটমিটিয়ে হাসল।নেহাল পিয়াসের দিকে তাকাতেই পিয়াস ক্লোজ আপ মার্কা হাসি দিয়ে বলল

-ভাই তোর চোখের ধার বিয়ের পরে কমে গেছে বিয়ের পরে এখন আর ধার দিলেও হবে না।আর তোর চোখকে এখন আর আমি ভয় ও পাই না

-তুই আসার আর টাইম পেলি না

-ভাই তুই নিজেই আমাকে ফোন দিয়ে ডেকেছিস। এখানে আমার কোনো দোষ নাই

বিদিশা গিয়েছিল পানি নিয়ে আসতে।এখানের ঘটনা না সম্পর্কে না জেনেই বলল

-হ্যালো হ্যালো গাইজ। এখানে কি হয়েছে আমাকে কেউ একটু বলবে?

বিদিশাকে দেখে পিয়াস ভূত দেখার মতো ভয় পাওয়ার অভিনয় করে এক লাফ দিয়ে সরে গেল।তারপর বলল

-আর জ্বীনের বাদশা বিদিশা আপনি এখনো বাসায় যান নি? আপনার মা বাবা তো আপনার জন্যে টেনশন করবে।আপনি মা বাবা ছাড়া থাকবেন কীভাবে?এত ছোট মানুষ।

বিদিশা ভ্রু কুচকে পিয়াসের দিকে তাকাল। পিয়াস কি ওকে অপমান করল না ওর মজা উড়ালো বুঝলো না।তারপর বলল

-আরে আপনি যে ষাঁড় তা বার বার প্রমাণ করতে হবে না। আমরা এমনিতেই জানি একথাটা

-আমি প্রমাণ করলাম কখন?

-এই যে একটু আগে ষাঁড়ের মতো লাফ দিলেন।

নেহাল কতক্ষণ এর দিকে তাকায় আবার কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকায়।তারপর একটা ধমক দিয়ে বলল

-চুপ করবি তোরা?বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস। এখন তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে দে নাহলে সকালের মধ্যে শেষ করতে পারব না।

-কিন্তু ভাই নীলুর ঘর এতো ঘটা করে সাজানো হচ্ছে কেন? আমিতো বুঝতেই পারছি না

-ষাঁড়ের যে মাথায় ঘিলু নাই তা একে দেখলেই বোঝা যায়।বির বির করে বিদিশা বলল।বিদিশার বলা শুনে পিয়াস বলল

-কি বললেন একটু জোরে বলেন।শুনতে পাই নাই

-বলছি আপনার মাথায় সমস্যা যার কারণে কানে শুনতে পারছেন না।

-তোরা আবার শুরু করেছিস?

-কিন্তু আয়োজন টা কিসের?

-ভাইয়া আমি বলছি।নীলুর কালকে জন্মদিন আর তাছাড়াও নীলু এই দুদিন হাসপাতালে ছিল। তাই একটা সারপ্রাইজ পার্টির আয়োজন করেছি?

-নীলুর জন্মদিন কবে?
-কালকে

পিয়াস বিদিশার কথা শুনে বলল- আচ্ছা আজকে কত তারিখ?

বিদিশা ক্যালেন্ডার এনে পিয়াসের চোখের সামনে ধরল।তারপর বলল- এই নিন দেখেন আজকে কত তারিখ।

-ভাই এটা সত্যিই ২৩ সালের ক্যালেন্ডার তো?

বিদিশা ক্যালেন্ডারে ২০২৩ সাল লেখাটায় আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল- এই যে এখানে লেখা আছে।

পিয়াস মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।পিয়াসকে এরকম আপসেট হতে দেখে নেহাল জিজ্ঞেস করল

-কি হয়েছে?এভাবে বসে পড়লি কেন?

-ভাই আজকে আমার একটা জবের ইন্টারভিউ ছিল।মায়ের জোরাজুরিতে তার এক খালাতো বোনের অফিসে একটা জবের জন্য যেতে বলেছিল।তিনি বলেছিলেন আমি গেলেই নাকি আমার চাকরি কনফার্ম করে দিবেন।কিন্তু আমার মনেই ছিল না যে আজকে সকালে ইন্টারভিউ ছিল।

-তো এখন কি করবি?

-ভাই শুধু একটা উপকার করিস। আজকে একটু মাকে বলবি আমি কোথায় তা তুই জানো না।আর আমাকে আজকে এই বাসায় লুকিয়ে থাকতে দিস।মা আজকে আমাকে কাচা খেয়ে ফেলবে

ছাদে বসে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে মাহিন।কোনোদিন না খাওয়ার ফলে এখন কাশতে হচ্ছে। আসলে একটা কথা ঠিক ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।’
মিহুর বিয়ের পরে ও বুঝতে পেরেছে যে ও কি মূল্যবান জিনিস হারিয়েছে যা ফেরত চাইলেও পাওয়া যাবে না।মিহুকে যে ও কতটা ভালোবাসতো সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।ও যদি মিহুকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেত তাহলে হয়তো সব সমস্যার সমাধান হতো।আর তাছাড়াও মিহু তো কাউকে ভালোবাসতো না যে ওকে বিয়ে করতে মানা করত।হঠাৎ করেই ও দেখতে পেল মিহু ওর দিকে এগিয়ে আসছে।এসে ওর হাতের সিগারেটটা ফেলে দিল।তারপর বলল

-মাহিন ভাই তুমি এটা কি করছো?এভাবে নিজেকে কেউ শেষ করে?

-মিহু শেষ তো ঐদিনই হয়েছি যেদিন তুই অন্যকারো বৈধ দলিল হয়ে গিয়েছিস।

-তাই বলে এখন নিজেকে শেষ করে লাভ আছে? সিগারেট মানুষের জন্য কতো ক্ষতিকর তা তুমি নিজেই ভালো করে জানো।

-নিকোটিনের ধোঁয়া মানসিক শান্তি দেয়

-কিন্তু সেটা সাময়িক। আর ঐটার ক্ষতিটা হলো চিরকালের জন্য

-এটার ক্ষতি ছাড় যে ক্ষতিটা বুকের এই বামপাশে হয়েছে সেটা কখনো পোষাতে পারবো?

-মাহিন ভাই ক্ষতি যতোই হোক সেটাকে পূরণ করার কিন্তু বিভিন্ন উপায় আছে

মাহিন মিহুর কথায় একটু থমকালো।তারপর কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল

-মিহু তুই তো আরফানকে ভালোবাসো না।আমি যদি বলি আমার কাছে চলে আয় তাহলে চলে আসবি?আমি তোকে নিয়ে দূরে চলে যাবো অনেক দূরে।যাবি আমার সাথে?

মিহু খিলখিল করে হেসে দিল।তারপর বলল
-মাহিন ভাই আমি জানতাম মদ খেলে মানুষ হুশে থাকে না।কিন্তু এখনতো দেখছি সিগারেট খেলেও হুশ উড়ে যায়।

-মিহু তুই উত্তর টা বল

মিহু মাহিনের দিকে তাকালো।তারপর হাসি হাসি মুখ করে বলল

-তুমি ছোট বেলায় আমাকে দেখে শুনে রাখতে।আমার সম্পর্কে তোমার এতটুকু ধারণা তো হয়েছে যে এই প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে?

-দেখ মিহু সো,,,,,,

মিহুকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাইলো কিন্তু মাহিন মিহুকে কোথাও দেখতে পেল না। আচ্ছা তাহলে এগুলো কি সব ভ্রম ছিল?মনের কল্পনা? কল্পনাই হবে না হলে এত রাতে মিহু এখানে কি করবে?তবুও এই প্রশ্নের উত্তরে মিহু কি বলল। কল্পনায় যা বলেছে মিহু বাস্তবেও কি সেটাই বলবে?আচ্ছা মিহুর কাছে কি ও জিজ্ঞেস করবে?মিহু কি সত্যিই ওর কাছে চলে আসবে?নাকি মিহু আরফানকে ভালোবেসে ফেলবে?তাহলে তো ও আর মিহুকে নিজের করতে পারবে না।ও মিহুকে যা বলার আরফানকে ভালোবাসার আগেই বলবে।তাতে যা হওয়ার হবে।

#চলবে

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
# বোনাস

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ল নীলু।মিহু সবে মাত্র নামাজ শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখল।নীলুকে উঠে যেতে দেখে ও জিজ্ঞেস করল

-নীলু কোনো সমস্যা হয়েছে?

নীলু বিষন্ন মনে বলল-না

-তাহলে তোমাকে এত আপসেট দেখাচ্ছে কেন?

-ওটা এমনিই দেখাচ্ছে মনে হয়।মাত্রই ঘুম থেকে উঠলাম তো তাই।

-আচ্ছা এখন খাবে কিছু?তোমার ভাইয়া কেক,রুটি,বিস্কুট সব কিনে দিয়ে গিয়েছেন।তুমি কি এখন খেতে চাচ্ছো কিছু?

-না বলে নীলু একটু মন খারাপ করে বসল।তারপর মিহুকে জিজ্ঞেস করল-আচ্ছা ভাবি ভাইয়া কোথায়?ভাইয়াকে তো দেখছি না।

আরফানের কথা বলায় মিহু কেন যেন লজ্জা পেল।থত মত খেয়ে বলল-তিনি তো বাসায় চলে গিয়েছেন।

-কখন?

-কাল রাতেই চলে গিয়েছেন আর বলেছেন আজকে নাকি কি একটা ইমপর্টেন্ড কাজ আছে।তাই তিনি হাসপাতালে আসতে পারবেন না।তার বন্ধু ফারিশ এসে নাকি আমাদের বাসায় দিয়ে আসবে।

-ও ও
বলে নীলু আবার শুয়ে পড়ল।খুব মন খারাপ লাগছে তার। আজকে নীলুর জন্মদিন।কিন্তু দেখো ওকে কেউ ই উইস করছে না।এমনকি ওর আরফান ভাইয়া ও উইস করছে না।মিহু ভাবি না হয় নাই জানে তার জন্মদিনের কথা কিন্তু বাকি সবাই তো জানে।

কালকে মিহুর সাথে আরফানের আকস্মিক দুর্ঘটনায় আরফান মনে হয় একটু লজ্জা পেয়েছে।তাই ও একটু থেকে আবার চলে গিয়েছে।পরে ফারিশকে পাঠিয়ে জিনিসগুলো কিনে দিয়েছে। আর ফারিশ কে নিয়ে যেতে বলেছে সকালে।ফারিশের কথায় মিহুর মনে পড়ল ফারিশ একটা কার্ড দিয়ে বলেছিল নীলু সকালে ঘুম থেকে উঠলেই যেন এই কার্ডটা দেয়।তাই মিহু নীলুকে বলল

-নীলু এইদিকে ঘোরো।দেখো ফারিশ ভাইয়া একটা কার্ড দিয়ে গিয়েছেন তোমাকে দিতে বলেছেন। এই নাও

নীলু মিহুর বিপরীতে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।ও কান্না করছে।মিহুর দিকে ফিরলে মিহু ওর কান্না দেখে ফেলবে।তাহলে মিহু আবার হাজার প্রশ্ন করবে।শেষমেষ ওর নিজেরই বলে দিতে হবে ওর জন্মদিনের কথা।নিজের জন্মদিন কেউ বলে দেয় নাকি?তাই নীলু মিহুকে বলল

-এখন ঘুরতে ইচ্ছা করছে না।তুমি পাশে রেখে দাও আমি পরে দেখে নেবো।

-আচ্ছা
বলে মিহু নীলুর মাথার কাছে কার্ডটা রেখে দিল।মিহুকে কার্ডটা খুলতে নিষেধ করেছিল ফারিশ তাই আর কার্ডটা খুলেনি।মিহু আঙুল দিয়ে তাজবীহ্ গুনতে গুনতে বেলকনিতে গেল। সূর্য ওঠার সময় হয়ে গিয়েছে।সকালে আযান দেওয়ার পরে সময় থাকে একটুকু।সূর্যটাও উঠি উঠি করে উঠে যায়।তারপর আবার ডুবেও যায়। আজকে রাত পেরোলেই মাহে রমজান।মিহু মন ভরে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করল।শহর যতই ধূলোবালিতে পূর্ণ থাকুক না কেন সকাল বেলার বাতাসটা একদম টাটকা।মিহু সব থেকে এই সময়টাকেই পছন্দ করে।নিরিবিলি কোলাহল মুক্ত। আর দু একটা পাখির মিষ্টি কন্ঠের গান শুনতে খুব ভালো লাগে।একটু সময় পরে মিহু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র গুলো গুছিয়ে নিল। আজকে সকালের দিকেই নীলুকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে।ফারিশ এসে পড়বে আটটার মধ্যেই।আর মাত্র দুঘন্টার মতো বাকি।

নীলু তার ড্রেস পরিবর্তন করে তার কাপড় গুলো গুছিয়ে নিল।মিহু সব কিছু গুছিয়ে নিচে রওনা দিল।ফারিশ ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।নীলু যাওয়ার আগে একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল কিছু ফেলে গিয়েছে কিনা।বেডের ওপরে কার্ডটা দেখে হাতে নিল।তারপর কৌতুহল হয়ে খুলতে যাবে এমন সময় মিহু ডাক দিল। ও আসছি বলে নিজের ব্যাগের মধ্যে কার্ডটা ঢুকিয়ে নিল।তারপর দৌড়ে মিহুর কাছে গেল।

বাসার সবাই অপেক্ষায় আছে নীলু কখন আসবে।পিয়াস তো একরকম একপ্রকারে একটা কবিতা বানিয়ে ফেলল

-একটি সারপ্রাইজ দেওয়া হবে তার জন্য লক্ষ্য লক্ষ্য অধীর সারপ্রাইজ দাতা বসে আছে

কখন আসবে নীলু?কখন আসবে নীলু?

এই বাড়ি সেদিন ছিলো না,শোভিত ফুলের রুমটা কালকে ছিল না

বলার পরে নেহালের দিকে তাকিয়ে বলল-নেহাল এরপর যেন কী?কবিতার লাইনটা মনে পড়ছে না

-ভাই তুই থাম,তোর মনে করা লাগবে না।নির্মলেন্দু গুণ যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে তোর পা ধরে মাফ চাইতেন।বলতেন আমি আর কবিতা লিখব না তুমি দয়া করে থামো।

-প্রসংশা যদি করতেই হয় ঘুরিয়ে পেচিয়ে না করে সোজাসুজি করলেই পারিস। এত প্যাচানোর কি আছে?
বলার পরে নিজের শার্টের হাত ঠিক করে তারপর চুলগুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল- আমি জানি আমি ভালো আবৃত্তি করতে পারি আর ভালো কবিতা বানাতেও পারি।আমি অলওয়েজ হিরো

-হিরো না জিরো

বিদিশার কথায় পিয়াস প্রতিবাদ করে বলল- আপনি এখন একটা প্রুভ দেখান পারলে।

-আপনি লক্ষ্য লক্ষ্য সারপ্রাইজ দাতা পেলেন কোথায়? এখানে আমরা ৬ জন আছি।আপনার চোখের পাওয়ার জিরো।কিচ্ছু দেখেন না চোখে।

পিয়াস আশেপাশে তাকিয়ে সবাইকে গুনল।বিদিশা,পিহু,নেহাল,বড় মা আর ও নিজে মিলিয়ে মোট ৫ জন হয়। এবার ও হেসে বলল

-আপনি গনিতে কাচা বাদশা বিদিশা।আমরা এখানে ৫ জন আছি।

পিয়াসের বলা শেষ হলে বিদিশাও পিয়াসের মতো করে হেসে বলল- ষাঁড় মশাই একটু আপনার ঘাড়টা ঘুরালে আমি ধন্য হতাম।কৃপা করে যদি ঘাড়টা বা দিকে ঘুরিয়ে রান্নাঘরে তাকাতেন

পিয়াস বিদিশার বলা কথায় রান্নাঘরে তাকিয়ে দেখে রেবেকার সাথে ওর মাও তাকে হেল্প করছে।এটা দেখে মনে মনে বলল

-আজ কেক এর বদলে পান্ডার মতো বাশ খেতে হবে।

গাড়ি থেকে নামার পরে ফারিশ গাড়ি নিয়ে চলে গেল।মিহু নেমে নীলুর দিকে তাকিয়ে দেখলো মুড খারাপ করে রেখেছে।নীলুর কাছে গিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলল

-কি হয়েছে?মন খারাপ করেছো?
-না ভাবি
-তাহলে ভেতরে চলো

বাড়ির কলিংবেল বাজানোর পরেও যখন কেউ দরজা খুলল না তখন নীলু বলল-

-দাড়াও ভাবি আমার কাছে অতিরিক্ত চাবি আছে ঐটা দিয়ে খুলি

দরজা খোলার পরেই কয়েকটা বেলুন ফাটানো হলো।ওপর থেকে গোলাপের পাপড়ি পড়তে লাগল। আর সবাই চিৎকার করে বলল

-হ্যাপি বার্থডে নীলু

নীলু সত্যিই সারপ্রাইজড হয়ে আছে।খুশিতে চোখে পানি এসে গেলো।সবাই তাহলে এই প্লান করছিলো।তাই ওকে কেউ কিছু বলেনি।বিদিশা নীলুকে নিয়ে ওর রুমে গেল।নীলু খুশিতে বিদিশাকে জড়িয়ে ধরল।তারপর বলল

-ধন্যবাদ ।ধন্যবাদ তোমাকে
-আমাকে ধন্যবাদ দিও না।এই প্লানটা সব করেছে নেহাল ভাইয়া।তাকে দেও ধন্যবাদ।

নেহাল সহ বাকি সবাই ওদের পেছনে পেছনে এসেছিল।নীলু দৌড়ে গিয়ে নেহালকেজড়িয়ে ধরল।তারপর ওর হাতে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল

-তুমি এই জন্য আমার সাথে হাসপাতালে দেখা করো নি।তাই তো বলি নেহাল ভাই আসে না কেন

-হ্যাঁ নীলু।তোমার নেহাল ভাই আমাকে শপিং মলে ডেকে নিয়ে এইসব জিনিস কিনিয়েছে।

রেবেকা নীলুকে জড়িয়ে ধরে বলল-হ্যাপি বার্থডে মামণি।আজকে তোমার ফেভারিট চকলেট ফ্লেভারের কেক বানিয়েছি।আমার মনে হয় তুমি পছন্দ করবে।আচ্ছা তোমাকে আর কেউ উইস করেনি

নীলু কিছু বলার আগেই মিহু বলে উঠল- আমার মনে হয় করেছে।তোমাকে যে কার্ডটা দিয়েছি সেটা কি দেখেছিলে?

মিহুর কথা শুনে নীলু তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে কার্ডটা বের করে সেটা খুলল।

‘তোর জন্য আছি,তোর জন্য বাঁচি
থাকতে পারব না তো চিরকাল
যা কিছু হোক না কেন,তুই জেনে রাখিস
তুই হলি আরফানের প্রাণ’

শুভ জন্মদিন আমার ছোট্ট বোনু।দেখতে দেখতে তুই কবে যে এত বড় হয়ে গেলি আমি জানি না।তবে তুই আমার কাছে এখনো সেই ছোট্ট নীলুই আছিস।যাই হোক রাগ করিস না,আজকে একটা কাজ পরে গেছে তাই সরাসরি তোকে কিছু বলতে পারলাম না।কিন্তু আমার পক্ষ থেকে একটা ছোট উপহার। আজকে দুপুরে সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ট্রিট দেওয়া হবে।ফারিশ তোদের নিতে যাবে সবাই রেডি থাকিস

আরফানের ট্রিটের কথা শুনে সবাই খুশি হলো।

সবাই রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছে।মিহু যদিও মুখ ঢেকে রেখেছিল কিন্তু আরফান যেহেতু একটা রুমের মতো জায়গা বুক করেছে সেহেতু এখানে বসে খাচ্ছে।খাওয়ার মাঝেই দুজনে দুজনার দিকে তাকালো।তারপর আবার লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল। আরফান ঘড়ির দিকে তাকাতেই উঠে চলে গেল।

কফি শপে বসে আছে আরফান।তার সামনে বসে আছে মিহুর দাদু।মিহুর দাদুকে দেখে আরফান অনেক অবাক হলো।তিনি তো ইন্ডিয়া ছিলেন। ওদের বিয়েতেও আসতে পারেনি এমনকি এক মাসেও নাকি আসতে পারবে না এমনটা বলেছিলেন।তাহলে বিয়ের দু দিন পরেই দেশে আসলেন কীভাবে?উনি আবার চিঠি দিতে যাবেন কেন?

-আমি জানি তোমার মনে অনেক কিছু ঘুর পাক খাচ্ছে ।দেখো আমার ইন্ডিয়া কাজ ছিল ঠিক আছে।কিন্তু রমজান উপলক্ষে আমি দেশে চলে এসেছি।

-কিন্তু আপনি তো আমাকে ফোন করলেই পারতেন।চিঠি লিখেছেন কেন? আর মিহু সম্পর্কে আমার এমন কি জানা প্রয়োজন যা না জানলে অনেক সমস্যা হবে?

মিহুর দাদু একটু সময় কিছু ভাবলেন।তারপর আরফানকে বলল

-আসলে চিঠিতে কি লিখেছিলাম অত খেয়াল নেই।বয়স হয়েছে তো তাই মনে নাই।থাক কোনো ব্যাপার না। চলো তোমাকে মিহুর সম্পর্কে অনেক কিছু বলি।
প্রায় ঘন্টা খানেক বলার পরে মিহুর দাদু উঠে গেলেন।বাহির হবার সময়ে একজন মহিলার সাথে ধাক্কা লাগল।দাদু সরি বলে চলে গেলেন। ঐ মহিলাটি আরফানকে দেখে বলল

-তুমি নিশ্চয়ই আরফান?
-হ্যাঁ কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না
-তুমি আমাকে চিনবেও না।মাস্ক পড়া অবস্থায় তো চিনবেই না মাস্ক খুললেও চিনবে না। আমি তোমার বাই পিয়াসের মায়ের বোন।যাই হোক দেখা হয়ে ভালো লাগল। আসি ঠিক আছে

আরফান হতভম্ব হয়ে রইল। মহিলাটি ঝড়ের মতো আসলো আবার ঝড়ের মতো চলে গেল।মাঝখানে কি বলে গেল কিচ্ছু বুঝতে পারল না।সে যাই হোক ওর মাথায় এখন মিহু সম্পর্কে বলা কথাগুলো ঘুরছে। আচ্ছা মিহুর সম্পর্কে জানতে ভাবতে এত ভালো লাগে কেন?কোনো কিছু ভেবে মুচকি হাসল আরফান।তারপর আবার রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে চলে গেল

#চলবে

(রি চেক করিনি।ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)