#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৩৭
-তুলি তুই এখানে কি করছিস ?
মাহিন অবাক হয়ে কথাটি বললেও তুলি কথাটিকে গুরুত্ব দিল না । একটা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল
– কেন আর কার থাকার কথা বলছো ?
মাহিন একটু ইতস্তত করতেই তুলি ব্যঙ্গ করে বলল
– ও নীলুর কথা বলছো ? ও তো বলল মিহু নাকি মাঝ রাস্তায় কোন বিপদে পড়ছে তাই চলে গিয়েছে । আচ্ছা এসব কথা বাদ দাও তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে ।চলো নিচে
মাহিন তুলির দিকে তাকিয়ে নিচে চলে গেল । নীলু ওকে না বলে চলে গেল ? কথাটি ভাবতেই কেমন একটা বিষাক্ত অনুভূতি আচ্ছন্ন হলো । সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে সদর দরজার দিকে চলতেই কোথা থেকে একটা আওয়াজ আসলো । আওয়াজ অনুসরণ করে দাদুর রুমের দিকে গেল । দরজায় হাত রেখে খুলতে যাবে ঠিক সেই সময়
– ভাইয়া তুমি ওখানে কি করছো ?
– এখান থেকে একটা আওয়াজ এসেছে । আওয়াজ আসলো কি থেকে সেটা দেখতেই আসলাম
– তুমি এখন এটা নিয়ে বসে আছো ? ওদিকে সবাই তোমার অপেক্ষা করছে । চলো তো
মাহিনের মাথায় নীলুর কথা ঘুরছে বিধায় তেমন গুরুত্ব দিল না বিষয় টিতে । তুলির সাথে অন্য মনস্ক হয়ে চলে গেল । তুলি বিষয় টি দেখে মাহিনের অগোচরে একটা শয়তানি হাসি দিল । মনে মনে বলল
– নীলু তোমাকে আমি বলেছিলাম অতি বাড় বেড়ো না ঝরে পড়ে যাবে । আমার সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়া । কত করে বললে না তোমায় যেরকম দেখায় আসলে তুমি সেরকম না । এখন দেখি তুমি কিরকম ? পারলে নিজেকে বাঁচাও
নীলুর জ্ঞান ফেরার পরে নিজেকে মিহুর দাদুর রুমে বাধা অবস্থায় পেল । একটু আগের কথা মনে করতেই মনে পড়ল কেউ ওকে মাথায় আঘাত করেছে আর তাতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে । অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারল না কারণ ওর হাত পা আর মুখ বাধা ছিল । অনেক কষ্ট করে টেবিলের ওপর থেকে একটা বক্স ফেলল । তাতে শব্দ হওয়ার পরে মাহিনের কথা শুনতে পেল । নীলু মনে মনে অনেক প্রার্থনা করল মাহিন যেন ওকে এসে উদ্ধার করে । মাহিনের হাবভাবে বোঝা গিয়েছে যে মাহিন ও নীলুকে চায় । আর কিছু হোক বা নাই হোক ভালোবাসার জোরে যেন মাহিন এদিকে আসে । কিন্তু হঠাৎ তুলির কথায় নীলুর হৃদস্পন্দন থেমে গেল । চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল । নীলু চিৎকার করে বলতে চাচ্ছিল
– প্লিজ মাহিন ভাই আমাকে ফেলে যাবেন না । আপনার ভালোবাসার পরশ না পেয়ে আমি এই পৃথিবী ছাড়তে চাচ্ছি না । আমার মনে হচ্ছে আর আপনাকে দেখতে পারবো না । তবুও বলব আপনাকে অনেক ভালোবাসি আমি মাহিন ভাই
কিন্তু এসবের কোন কথাই মাহিনের কানে পৌঁছাল না । ভালোবাসার যতই শক্তি থাকুক না কেন মনের কথা জানার শক্তি নেই । নীলুর কাছে যে আশার আলো ছিল সেটা দপ করে নিভে গেল । সদর দরজা শব্দ করে বন্ধ হওয়ার আওয়াজ নীলুর হৃদপিন্ডের গতি বেড়ে গেল । খুব করে আরফানের কথা মনে পড়ছে । বার বার বারণ করেছিল কিন্তু নীলু শুনল না । নীলু কাঁদতে থাকলো কিন্তু কিছুক্ষণ পরে নিজেক শক্ত করে বলল
– না নীলু তোকে নিজেকেই নিজের মুক্ত করতে হবে । নিজেকে বাঁচা তুই ।
নীলু কে টেবিলের সাথে বেধে রাখা ছিল । অনেক দ্রুত ওকে বাধার কাজটি করতে হয়েছিল বিধায় ওর শাড়ি দিয়েই ওকে বেধেছিল । হাতের নখ দিয়ে পেছন থেকে শাড়ির সুতা ছেড়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না । অনেকক্ষণ পড়ে তিন কি চারটি সুতা ছিড়ল । তারপর ক্লান্ত হয়ে পড়ল । আবার নিজেকে উৎসাহ দিয়ে কাজে লেগে পড়ল । প্রায় একঘন্টা এরকম করতে গিয়ে নখ থেকে রক্ত বের হয়ে গিয়েছে । তারপরও শাড়িটা সব ছিড়তে পারল না । নীলু তবুও হাল ছাড়ল না । অনেক চেষ্টার পরে শাড়িটা ছিড়ে ফেলল । এতে নিজেকে মুক্ত করলেও হাতের বাধন ও ছিল টেবিলের সাথে । একটা বাধন খোলার পরে নীলু একটু শক্তি পেল । টেবিলটি ধরে ঝাকাতে লাগল । সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিস পত্র পড়ার শব্দ হলো । নীলু অনেক কষ্ট করে হাতে বাধন খুলল তারপর নিজেকে মুক্ত করল । খুশি মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে লাগল । তখনই দরজার কাছে কারো হাটা শব্দ পেল । নীলুর মন খুশি হয়ে গেল । নিশ্চয়ই মাহিন এসেছে ভেবে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তৎক্ষনাৎ মনে পড়ল মাহিন না এসে যদি আর কেউ এসে থাকে ? নীলু তাড়াহুড়ো করে লুকিয়ে পড়লো । আর তখনই দরজা খুলে কেউ ঘরে ঢুকল
—–
মিহু বাসার সামনে এসে অবাক হয়ে গেল । এখন কি লোডশেডিং হচ্ছে নাকি ? না হলে বাসা অন্ধকার থাকবে কেন ? মেইন দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুলে গেল । দরজা খোলা কেন ? আরফানের আবার কিছু হলো নাকি ? কথাটি মিহুর মাথায় আসতেই ভয় পেয়ে গেল । দ্রুত ঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল সব জায়গায় অন্ধকার কিন্তু মোমবাতি দিয়ে রাস্তার মতো করে সারি সারি মোমবাতি সাজানো । আর তার মধ্যে গোলাপের পাপড়ি । দেখানো পথ দিয়ে হাটতে হাটতে আরফানের রুমের সামনে গেল । সেখানে একটা কাগজে লেখা
‘ ভেতরে প্রবেশ করুন ‘
মিহু ভেতরে প্রবেশ করতেই সারা রুম অন্ধকার দেখল । লাইট জ্বালাতেই মিহুর চোখ ধরে গেল । সারা রুমে গোলাপের গন্ধে মৌ মৌ করছে । বেডের ওপরে একটা বক্স রাখা আর সেখানে একটা চিরকুট ।
‘ মিহু আজকে আমার মনের মতো করে সাজবে ? তোমার ঐ অপরূপ রূপ দেখে ঘায়েল হতে চাই সব সময় । তুমি কি হবে আমার বেলী ফুল ? ‘
তারমানে আরফানের সব মনে পড়ে গিয়েছে? এ সুখ কোথায় রাখবে মিহু ? ওর ছোট্ট জীবনে এত আনন্দ কখনো পায়নি । বক্স খুলে সেখান থেকে একটা সাদা আর সোনালী রং এর মিশ্রণের কারুকাজের জর্জেট শাড়ী । তার ভেতরে আরেকটা চিরকুট
‘ একটু আমার জন্য চুল গুলো খোঁপা করো ‘
মিহুর চোখে পানি এসে গেল । ও দ্রুত শাড়ি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল । রেডি হয়ে নিজেকে আরেকটু পরিপাটি করে বসল । কিন্তু এখন কোথায় যাবে ?
তখন বেডের ওপরে আরেকটি বক্স দেখতে পেল । বক্স টির রেপিং পেপার খুলে একটা ছোট পারফিউমের শিশি দেখতে পেল । আরো একটা চিরকুট পেল
‘ তোমাকে আমি কখনো উপহার দিতে চাইনা । আমি তোমাকে আমার একটা স্মৃতি দিতে চাচ্ছি । এই স্মৃতি তুমি যত্নে রেখ । ‘
অপর পৃষ্ঠায় লেখা ‘ আমাদের প্রথম মিলন স্থানে অপেক্ষা করছি ‘
বেলী ফুলের সুবাসের পারফিউম মিহুকে মুগ্ধ করল । নিজেকে বেলী ফুলের সুবাসে আবদ্ধ করল । তারপর রওনা দিল বাগানের উদ্দেশ্যে ।
আরফান বাগানের বেলী ফুল গুলো দিয়ে একটি গাজরা তৈরি করেছে মিহুর জন্য । এতক্ষণ বাতাসে বেলী ফুলের সুবাস হালকা থাকলেও এখন কড়া হতে লাগল । এর মানে আরফানের বেলী ফুল এসে গিয়েছে । আরফান পেছনে ঘোরার আগেই মিহু আরফানকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিল ।
– আপনার স্মৃতি মনে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারতাম না ।
আরফান মিহুর হাত ধরে মিহুকে ওর সামনে আনলো । তারপরে মিহুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল
– মিহু আজ আমি নিজের হাতে তোমার ঐ খোপায় বেলী ফুল পড়াতে চাই ।
মিহু পেছন ঘুরলে আরফান মিহুর খোপায় বেলী ফুলের গাজরা গুঁজে দেয় । তারপর ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে
– আজ আমি কোনো দূরত্ব চাই না । আমি আমাদের সম্পর্ক টিকে মজবুত করতে চাই
মিহু লজ্জায় নুয়ে গেল ।
– কিন্তু তার আগে কয়েকটা কথা ক্লিয়ার করতে চাই । যেটা না জানালে আমাদের সম্পর্কে জোড়া লাগার আগেই ফাটল ধরবে । আমার আসলে স্মৃতি হারায় নি । আমি অভিনয় করেছিলাম ।
এমন একটা মুহূর্তে এসে এরকম একটা কথা শুনে মিহুর ঝটকার মতো লাগল । আরফান এসব কি বলে ?
– জানি তোমার কাছে বিষয় টা খারাপ লাগছে কিন্তু আমাকে আগে ক্লিয়ার করতে দাও । আমার সব থেকে কাছের বন্ধু আমাকে ধোঁকা দিয়েছে । আমি জানতাম আমার কোনো শত্রু আছে যে আমার ক্ষতি করতে চায় । এমন কি তোমার ও ক্ষতি করতে পারে । এই জন্য আমাকে নাটকটি করতে হয়েছে ।
– কিন্তু আপনি তো আমাকে এই বিষয়ে জানাতে পারতেন ? তাই না ?
– পারতাম বললে ভুল হবে না । তবে তোমাকে ঐ পরিস্থিতিতে জানাতে পারিনি ।
– এখন আপনি সবাইকে ব্যাপারটি জানাতে চাচ্ছেন ?
– না শুধু তোমাকে । বাকিদের কাছে আমি এখন আমার কম্পানির বিষয় টি বলতে চাচ্ছি না ।
– কম্পানির বিষয়?
– ফারিশ আমার কম্পানি আমার কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছে ।
মিহুর রাগ উঠলো । আরফানের সামনে পায়চারি করতে লাগল । আরফান সেটা দেখে মুখ কালো করে ফেলল । বলল
– মিহু তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে ?
মিহু পাঞ্জাবির কলার ধরে টেনে দাতে দাত চেপে বলল – ছেড়ে যাওয়ার কথা আমি প্রথম দিনেই বলেছি । যে বাঙালি নারীরা এক সংসারে বিশ্বাসী আর আমিও এর ব্যতিক্রম নই ।
– তাহলে এমন করছো কেন ?
– কেন বুঝেন না ? এত সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে আমাকে তৈরি হতে বললেন এই ব্যাপারটি জানানোর জন্য ? মানে আমার দিকে একবারো তাকালেন না পর্যন্ত? কেমন দেখাচ্ছে সেটাও বললেন না । আর নিয়ে আসলেন কি ?
আরফান এবার নিজের ধাচে ফিরে এসে বাকা চোখে মিহুর দিকে তাকিয়ে বলল – তোমাকে তো দেখতে আস্ত একটা বেলী ফুল লাগছে ? এই দেখো তোমার শরীর থেকে সেই সুবাসটা আসছে । আর তুমি তো জানোই বেলী ফুল আমি কত ভালোবাসি ? তা আমাকে কি শুধু অন্তরেই ভালোবাসবে ? নাকি মুখেও স্বীকার করবে ?
#চলবে
#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৩৮
আজকের সকালে একটা অন্যরকমের প্রশান্তি রয়েছে । কারণ আজকে একটি ভালোবাসার পরিপূর্ণতার দিন । মিহু নিজের ভেজা চুলগুলো খুলে দিল । ঘুমন্ত আরফানের দিকে তাকাতেই মুচকি হাসি দিল । তারপর নিচে চলে গেল নাস্তা তৈরি করতে । মিহু নিজের আচল কোমড়ে বেঁধে কাজে নেমে পড়ল । কাজে দক্ষ হওয়ায় মিহু সব কাজগুলোই অনায়সেই করে ফেলল । কাজ করতে করতে হঠাৎ কারো ভালোবাসার দুটি হাত মিহুর কোমড় আকড়ে ধরল । মিহু একটা লাজুক হাসি দিয়ে বলল
– কোমড় ছাড়ুন । দেখছেন তো কাজ করছি
আরফান নিজের হাত আরো টাইট করে মিহুর কাধে থুতনি রেখে বলল
– তো তুমি তোমার কাজ করো । আমি কি নিষেধ করেছি ?
– আরে আমার কাজে তো সমস্যা হচ্ছে । আপনি আপনার কাজ করুন না ।
– আমি তো আমার কাজই করছি
বলে টুস করে মিহুর গালে চুমু খেলো । মিহু নিজের কাজ রেখে আরফানের হাত ছাড়াতে চাইল কিন্তু আরফান ছাড়ল না । মিহু বাধ্য হয়ে আরফানের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকল । আরফান একটা মিষ্টি হাসি দিল। তারপর বলল
– স্বইচ্ছায় চুমু করিলে দান
আমি করিব প্রস্থান
মিহু একটা বাকা হাসি দিয়ে বলল
– গরম পাত্র পড়িলে হাতে
প্রস্থান করিবেন স্বইচ্ছাতে
আরফান হতভম্ব হয়ে গেল মিহুর কথাতে । মিহু সামনে রাখা গরম কফির পাত্র আরফানের হাতে স্পর্শ করাতেই আরফান চমকে সরে গেল । মিহু তা দেখে হেসে দিল । আরফান আকস্মিকতা কাটিয়ে মিহুর দিকে তাকিয়ে বলল
– রেডি থেকো । আমার ও সময় আসবে , তখন দেখা যাবে ।
——————
গতদিন রাতে এবাড়িতে এসে পিয়াস তেমন কিছুই জানতে পারেনি যতটা এই কয়েক মিনিটে জেনেছে । ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বিদিশার দিকে । বিদিশাকে দেখতে আগে যতটা না হাসি খুশি দেখাতো এখন তার এক ভাগ ও নাই । চেহারায় একটা মলিনতার ছাপ এসে গিয়েছে । নাকে দেওয়া হীরের নাকফুলটা জ্বল জ্বল করছে । আগে খেয়াল না করলেও এখন ঐ উজ্জ্বলতা পিয়াসের চোখে প্রতিফলিত হচ্ছে । পিয়াস সকালবেলা পুকুর ঘাটে বসেছিল । সেখানে পাতি হাসের দল নিজেদের মতো করে খেলা করছিল তখন বিদিশা এসে জিজ্ঞেস করে
– আপনি কি আসলে এবনরমাল ?
পিয়াস হতভম্ব হয়ে বিদিশাকে বলল – মানে ?
– আপনি কি বুঝেও কিছু না বোঝার ভান করছেন ?
– দেখো বিদিশা আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না ।
– দেখুন আপনাকে যা বলার আমি সরাসরি ই বলতে চাই । আপনি কি সেই এস এম এস টির মানে আদৌ বুঝেন নি ? নাকি সেটাও বুঝে না বোঝার ভান করেছেন ?
– হ্যাঁ আমি বুঝেছি কেউ আমাকে ভালোবাসে কিন্তু সে কে ? সেটাইতো আমি খুঁজে পেলাম না । তবে এর সাথে তোমার সম্পর্ক কি ?
– যদি বলি সে আমি ?
পিয়াস বিদিশার দিকে একটু সময় তাকিয়ে থাকলো । তারপর উচ্চস্বরে হেসে দিয়ে বলল – তুমি ? মজা করছো ?
বিদিশা কঠিন মেজাজে বলল – এটা কি মজা করার সময়? আর আপনার কেন মনে হয় আমি হতে পারব না ?
পিয়াস হাসি থামিয়ে বলল – না আমি ওরকম ভাবে বলিনি । তুমি যদি ঐ এস এম এস টি দিয়েই থাকো তাহলে আমাকে ব্লক করে রেখেছো কেন ? আর কথাটি তো অনেক আগেই বলে দিতে পারতে
– আপনি কি জানেন আমাদের বাসায় সবাই কেন এসেছে ?
– ঈদ কাটাতে
– জ্বি না । আমার বিয়ে উপলক্ষ্যে । এই যে দেখছেন নাকফুল , এটা আমাকে দেখতে এসে পড়িয়ে গিয়েছে । আর কয়েকদিন পরেই বিয়ে ।
পিয়াস তখন থেকে স্তব্ধ হয়ে বসল । বিদিশার কথাগুলো মস্তিষ্কে যেতে একটু টাইম নিচ্ছে । পিয়াস কে এরকম তাকিয়ে থাকতে দেখে বিদিশা ঘাটে নেমে পড়ল । সকাল বেলা পুকুর থেকে পানি নিতে এসে দেখে পিয়াস এখানে বসে আছে । তাই মনের কথাগুলো আর চেপে রাখতে পারল না । কলসে পানি নিয়ে উঠে আসার সময় পিয়াস কে বলল
– আমি জানিনা আপনার মনের মধ্যে আমার জন্য কোনো জায়গা আছে কিনা তবে আমি আপনাকে আমার মনের কথা জানিয়ে দিয়েছি । এখন আপনি চাইলে যা খুশি তাই করতে পারেন । তবে মনে রেখেন এই সপ্তাহের মধ্যেই আমার বিয়ে ।
বলে বিদিশা চলে গেল বাড়ির উদ্দেশ্যে । পিয়াস কিছুক্ষণ ভাবলো আসলেই কি ওর মনের মধ্যে বিদিশার জন্য কোনো ফিলিংস আছে ? একজনের অনুভূতি দিয়ে তো আর একটি সম্পর্ক জোড়া যায় না । আর এখন তো বিদিশার বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছে ।
গ্রাম সাইড এলাকা হলেও কিছুটা শহুরে ধাচ রয়েছে এখানে । বিদিশাদের বাড়িটা পাকা বাড়ি । সব আত্মীয় স্বজন এখানে গিজ গিজ করছে । তবে মাহিনের চোখ শুধু একজনকেই খুঁজছে যদিও সে এখানে আসেই নি । একটু আগে একজন নীল শাড়ি পড়া মেয়েকে নীলু ভেবে ডাক দিয়েছিল কিন্তু সে তো আর নীলু না । সবাই এদিকে ওদিকে ব্যস্ত হলেও মাহিন সোফায় চুপ করে বসে আছে । নেহাল এসে ওর পাশে বসল
– কি মন খারাপ ?
– না ।
– তাহলে তোমাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন ?
– এমনিই
– আচ্ছা তুমি কি নীলুকে দেখেছো ? আমি কালকে ওকে খুজলাম পেলাম না আবার সকালেও খুজলাম , এখনো পেলাম না
– নীলু নাকি বাসায় গিয়েছে
– সেটা আমাকে একবার বলে যাবে না । দেখেছো কতটা বেখেয়ালী মেয়ে । থাক আরফান ভাই বাড়িতে আছে যেহেতু তাই টেনশন করার কোনো কারণ নেই
– হুম
————–
মিহু সেই সকাল থেকে ঘ্যান ঘ্যান করছে বিদিশাদের বাসায় যাবে কিন্তু আরফান মিহুর কোনো কথাই শুনছে না । ল্যাপটপ যে সেই কখন থেকে কোলে নিয়ে বসে আছে সেরকমই বসে আছে । মিহুর কথার কোনো উত্তরই দিচ্ছে না । মিহু রেগে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে গেল । স্ক্রিনে গেমস দেখে আরফানকে বলল
– আপনি এখন গেমস খেলছেন ? আমার কথার কোনো মূল্যই নেই আপনার কাছে ?
– আমার মূল্য যার কাছে নাই সে এখন আমার কাছে মূল্য আশা করছে কেন ?
মিহু একটা দম ফেলে বলল – আপনি ঐ বিষয় টি নিয়ে এখনো পড়ে আছেন ? চলুন আপনাকে একটা না একশটা চুমু দিব এখন চলুন
– ডান
মিহু কথাটা এমনিতেই বলল কিন্তু আরফান খুশি হয়ে গেল মিহুর এই শর্তে । মিহু কিছু বলার আগেই আরফান আবার বলে উঠল
– শর্ত যেন মনে থাকে ।
– আরে আমি তো এমনিই বললাম
– সেটা যেভাবেই হোক আমি জানি না । তুমি যেহেতু বলেছো সেহেতু তোমাকে অবশ্যই শর্ত মানতে হবে । যাও এখন রেডি হয়ে এসে ।
মিহু হতভম্ব হয়ে চলে গেল রেডি হতে । আরফান কাউকে ফোন দিয়ে বলল
– আজকে সন্ধ্যায় একটা রুম বুক করে রাখুন । আর সেখানে যেন কোনো রকম সিকিউরিটির ঘাটতি না হয় । আজকের সন্ধ্যা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ । যত টাকা লাগুগ আজকের সিকিউরিটি যেন কড়া হয় ।
আরফান নিজেও রেডি হয়ে নিল । রেডি হয়ে বডি স্প্রে দিতে গিয়ে ওর দেওয়া পারফিউম টির দিকে চোখ গেল । ফারিশের কথা মনে পড়তেই হাতের স্প্রে টা ছুড়ে ফেলে দিল ।
– ফারিশ আর যতই হোক আরফান আদিত্য বিশ্বাস ঘাতকদের কখনো ক্ষমা করে না । তুই কি ভেবেছিস তুই পার পেয়ে যাবি এমন কাজ করে । কখনোই না , তোকে এর শাস্তি পেতেই হবে ।
মিহু কোনো কিছুর শব্দ পেয়ে দ্রুত আরফানের কাছে এলো । আরফানকে এমন রাগন্বিত হতে দেখে অস্থির হয়ে গেল ।
– আপনার কি হয়েছে এরকম করছেন কেন ?
– কিছু হয় নি মিহু তোমার কাজে তুমি যাও
– আপনি কি আপনার কম্পানি নিয়ে আপসেট আছেন ?
– এটা নিয়ে তোমার টেনশন করা লাগবে না । তুমি যাও
মিহু হঠাৎ করেই আরফানের গালে একটা চুমু দিল । আরফান অবাক হয়ে গিয়েছে ।
– রাগ কমেছে ?
আরফান হ্যাঁ বলতে নিয়েও আবার মাথা নাড়িয়ে বলল
– না
মিহু আরেকটি চুমু দিতেই আরফান আবার মাথা নাড়ালো । এবার মিহু চুমু দিতে নিয়েও সরে এসে বলল
– আপনি আসলেই একটা বাটপার
– নিজের হাজবেন্ড কে কেউ কি বাটপার বলে ?
– আপনার রিজার্ভ আছে এখন 98 টি । দুটি শেষ , মনে থাকে যেন ।
বলে মিহু চলে গেল । আরফান একটু হাসলো ।
——————–
রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে মিহু অতিষ্ঠ হয়ে গেল । আজকে আরফান গাড়ি নেয় নি । বাইক নিয়ে বের হয়েছে । মিহু বোরকা পড়ে আছে দেখেও একটা ছেলে বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছে । আরফান বলল
– আমার রিজার্ভ থেকে আরো আটটা এখন দাও
মিহু চারপাশে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে বলল – এখন ?
– হ্যাঁ
– কিন্তু
– না কোনো কিন্তু নেই
আরফানের জেদের কাছে হেরে গিয়ে মিহু আরফানের কথা মানলো । আরফান সেই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলল – অন্য কোথাও চোখ দে না হলে চোখ শেষ হয়ে যাবে ।
বিদিশাদের বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । বাইক থেকে মিহু নামার পরে আরফান বলল
– তাহলে তুমি যাও ।
মিহু অবাক হয়ে বলল – আপনি যাবেন না ?
– না , আমার একটু কাজ আছে । আমি এখন যেতে পারব না । তবে কথা দিচ্ছি বিদিশার বিয়ের সময় অবশ্যই আসবো ।
– কী বিদিশার বিয়ে ? আমি তো জানি না । আপনি জানলেন কী করে ?
– তুমি গিয়ে জানবে । আর আমার একটু কাজ আছে তাই এখন এ বিষয়ে বলতে পারছি না । তবে সাবধানে থেকো আর আমার বোন আর তোমার খেয়াল রেখো ঠিক আছে ?
মিহু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে । আরফান একটু হালকা হেসে বলল
– এখন আমার পাওনা থেকে কয়েকটা দাও ।
মিহু লজ্জা পেয়ে বলল – আপনি কখনো শুধরাবেন না । আমি গেলাম ।
বলে মিহু চলে যাওয়া ধরল । আরফান জোরে জোরে বলল – তাহলে কিন্তু পরে ডবল চাই ।
বলে বাইক স্টার্ট দিল । আর তখনই মিহু আরফানের গালে চুমু দিয়ে দৌড় দিল । আরফান হেসে দিয়ে চলে গেল ।
– তাহলে আপনিই সেই ব্যক্তি যে কিনা আমার আর মিহুর শুভাকাঙ্ক্ষী ।
– তাহলে এতদিনে চিনতে পেরেছো । আমিতো ভাবলাম সরোয়ার কাজীর রহস্য মনে হয় কেউ জানতেই পারবে না ।
আরফান নিজের ফোনটা বের করে টেবিলে রেখে চেয়ারে রিল্যাক্স হয়ে বসল । তারপর বলল
– আমার মনে হয় আপনাকে কোথাও দেখেছি
আরফানের সামনে বসা মহিলাটি হেসে বলল
– ততোমার স্মৃতি শক্তি তো খুব ভালো । দেখি তুমি আমাকে মনে করতে পারো কিনা ?
আরফান একটু ভেবে বলল – আমি যদি ভুল না করি তাহলে আপনি ঐদিন আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন আর একটা ঠিকানায় আসতে বলেছিলেন কিন্তু সেখানে মিহুর দাদু আগে থেকেই বসে ছিল । তারপর আপনি ঐদিন আমাকে বলেছিলেন আপনি আমার চাচাতো ভাইয়ের কোনো আত্মীয় হন ।
– তুমি ঠিকই ধরেছো । এখন বলো তুমি কি চাও
– আমি সব কিছু পরিষ্কার ভাবে জানতে চাচ্ছি । এই রহস্য এর উদঘাটন করতে চাচ্ছি । আমি জানি আপনি এই সবের সাথে সম্পর্কিত । এখন আমি মূলত সব কিছুই জানতে চাচ্ছি ।
– ওকে । আমি বলতে পারি তবে তুমি কোনভাবে জানতে চাও । আমার কাছ থেকে সরাসরি নাকি এই ডায়েরির মাধ্যমে ।
বলে মিহুর মায়ের ডায়েরি টা আরফানের সামনে রাখল ।
#চলবে