হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-১১

0
131

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ১১

আসবো….? তিফাজ চৌধুরীর রুমের কাছে যেয়ে ভেড়ানো দরজায় নক করে বলল তাজ।

দরজার ওপাশ থেকে তিফাজ চৌধুরী শক্ত গলায় বলে উঠলো আমার রুমে তোমার ছায়াও দেখতে চাইনা।

তিফাজ চৌধুরীর কথা তাজ কানে না নিয়ে রুমে ঢুকে বলে উঠলো তেমার রুমে কে এসেছে? আমি আমার মায়ের রুমে এসেছি।

কথা যখন শুনবেই না তাহলে অনুমতি নিতে কে বলেছে?

তাজ তিফাজ চৌধুরীর কথা কানে না নিয়ে ঘুমন্ত তাহমিনা বেগমের কাছে এগিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ নীরবে মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা খোঁজার জন্য পুরো রুমে একবার চোখ বুলাতে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা টেবিলের উপরে পেয়ে তাজ যেয়ে প্রেসার মাপার মেশিন এনে তাহমিনা বেগমের প্রেশার মাপতে দেখতে পেলো প্রেশার এখন ঠিক আছে। প্রেশার স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তাজ তিফাজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো,

তোমাকে বার বার বলেছি আমার উপরের রাগ মায়ের উপরে ফলাবে না যা বোঝাপড়া করার আমার সাথে করবে তারপর ও বার বার কেনো মায়ের উপরে রাগ খাটাও?

তোমার কথায় আমাকে চলতে হবে? মায়ের জন্য এতো চিন্তা তাহলে এটা বোঝো না তোমার মা আমার টেনশনে না বরং তোমার টেনশনে দিনদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে? অন্যের দোষ না খুঁজে আগে নিজের দোষ খোঁজো তারপর আমার সাথে তর্ক জড়াতে এসো এর আগে না।

তিফাজ চৌধুরীর কথায় তাজ বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো৷ আপাতত তিফাজ চৌধুরীর সাথে তর্কে জড়ানোর মুড নেই তাই কোনো কথা না বলে হনহনিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে নিজের রুমে যেতে সৌরভ চৌধুরকে চিন্তিত অবস্থায় বসে থাকতে দেখে তাজ তার পাশে যেয়ে বলে উঠলো, চাচ্চু কি হয়েছে?

তাজের প্রশ্নে সৌরভ চৌধুরী চিন্তিত মুখ লুকিয়ে বলল, হসপিটালে কি হয়েছিলো যার জন্য বড় ভাই আজ এতো ক্ষেপে গিয়েছে৷

আগে বলো তোমার কি হয়েছে।

তেমন কিছু না তুই বল হসপিটালে কি হয়েছে।

সৌরভ চৌধুরী কিছু একটা লুকাচ্ছে বুঝতে পারলো তাজ কিন্তু কিছু বলল না। এরপর আস্তে ধীরে খুলে বলল কিভাবে কি হয়েছে। সব শুনে সৌরভ চৌধুরীর কপালে আরো চিন্তার ভাজ পড়লো তা দেখে তাজ বলে উঠলো,

চাচ্চু কি হয়েছে বলবে তো। তোমাকে এমন লাগছে কেনো? কেউ কিছু বলেছে?

সৌরভ চৌধুরী এবার বলে উঠলো, কেউ একজন কয়েকমাস যাবত বিভিন্ন ভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে এমপির পথ থেকে সরে যেতে। কারো হুমকি আমি পরোয়া করি না কিন্তু খবর পেয়েছি তারা এবার আমাকে রেখে তোকে টার্গেট করেছে। তোর পাওয়ার যতদিন আছে, তুই যতদিন আমার পাশে আছিস ততদিন আমাকে কেউ ক্ষমতা থেকে সড়াতে পারবে না এই জন্য তোকে টার্গেট করে তোকে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলতে চাচ্ছে।

তুমি আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছো চাচ্চু? সিরিয়াসলি?

দেখ বিষয়টা খুবি সিরিয়াস। কেউ যদি আমাদের সামনে থেকে আঘাত করতে আসে তাহলে তাকে উপরে ফেলা আমাদের বা হাতের কাজ কিন্তু কেউ যদি পিছ থেকে আঘাত করে তাহলে সেই আঘাতের মোকাবিলা করা এতটা সহজ না কারণ আমরা জামতেই পারবো না আমাদের আশেপাশে থাকা ভালোমানুষ রূপে কে কখন পিছ থেকে আঘাত করে বসবে। যেই অজ্ঞাত ব্যক্তি এসব করতে চাচ্ছে সে কে বা কে হতে পারে, তার সাথে আমাদের কিসের শত্রুতা এর কিছুই কিন্তু আমাদের জানা নেই। এমনকি সেই লোকের লোকজন দিয়ে সবসময় তোকে নজরে রাখছে। আমি মাস খানেক ধরে ওই লোকের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু কিছুতে নাগাল পাচ্ছি না। আর তোরা যেই ছেলেটাকে ধরেছিস আমার ধারণা ওই ছেলে ওই লোকের এর কেউ একজন। ওর মুখ থেকে সত্যি বেরিয়ে আসবে এই জন্য ওকে চিরতরে জন্য দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কেউ সব প্রস্তুুতি নিয়েই খেলতে নেমেছে বুঝতে পারছিস? আর নাহলে তোর এতো সিকিউরিটি থাক সত্যেও এতগুলো গার্ড সহ ওই ছেলেকে এক ঘন্টার ভিতর খু/ন করতে পারতো না।

সৌরভ চৌধুরীর কথায় তাজের কপালে এবার ভাজ পড়লো। বিষয়টা আসলেই সিরিয়াস তাই তাজ সৌরভ চৌধুরীকে অভয় দিয়ে বলল, টেনশন নিও না আমি খোঁজ নিচ্ছি কার বুকের এত বড় পাটা যে তাজ চৌধুরীর সাথে খেলতে নেমেছে।

সৌরভ চৌধুরী তাজের কাঁধে হাত রেখে বলল, নিজের সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিস। যারা মাঠে নেমেছে তারা সাধারণ কোনো মানুষ নিশ্চয়ই হবে না। সব যেনে বুঝেই ওরা মাঠে নেমেছে।

তাজ চোখমুখ কুঁচকে বলল, চাচ্চু তুমি ভয় পাচ্ছো? সিরিয়াসলি? রিল্যাক্স আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। তুৃমি সব কিছুর সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিয়ো। ওরা অ্যাটাক করলে শুধু আমার উপরে না তোমার উপরেও করবে যেহেতু তোমার ক্ষমতা কেঁড়ে নিতে চাচ্ছে। তুমি সাবধানে থেকো বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।

****
কেটে গেলো এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহ এর ভিতরে ফারিসতা আর রাশফিয়ার সাথে আদরিবার খুব ভালো একটা সম্পর্কে গড়ে উঠলো যেনো ওদের পরিচয় এক সপ্তাহের না এক বছর আগের। এর ভিতরে একদিন রাশফিয়া ফারিসতার বাসায় এসেছিলো সেদিন তিনজন মিলে জমিয়ে আড্ডা দিয়েছিলো। ভার্সিটি শেষে বাসায় এসে ফারিসতার এখন আর বোরিং হতে হয় না আদরিবার সাথে সময় কেটে যায়। মেয়েটা বড্ড মিশুক যে কারো সাথে অল্পতেই মিশে যেতে পারে।

আজ আদরিবার বার্থডে। বাড়িওয়ালার মেয়ে বলে কথা বিশাল অনুষ্ঠানের ব্যাপার। ইতিমধ্যে পুরো বিল্ডিং জাঁকজমকপূর্ণ করে সাজানো হয়ে গিয়েছে। ফারিসতা সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে করে আদরিবার জন্য গিফট কিনতে রাশফিয়া সহ শপিংমলে চলে গেলো। দুজন শপিংমলে ঢুকে গিফট চয়েস করছিলো তখন ওঁদের পাশে এসে দাঁড়ালো দুটো যুবক যাদের দেখে দোকানদার ফারিসতাদের রেখে বিচলিত হয়ে ওই যুবক দুটির কাছে এগিয়ে বলে উঠলো,

স্যার আপনারা আমার দোকানে। ক..কি লাগবে বলুন স্যার এ বলে দোকানের সব কর্মচারীকে হাক ছেড়ে ডাক লাগালো।

হঠাৎ দোকানদারকে ওদের রেখে অন্য কাস্টমারের জন্য এতো বিচলিত হতে দেখে ফারিসতা তেতে বলে উঠলো,

এই মিয়া কি সমস্যা আপনার? দোকানে আমরা আগে এসেছি আপনি আমাদের ফেলে রেখে অন্য কাস্টমারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কোন ভিআইপি ম্যান এসেছে আপনার দোকানে যার জন্য আপনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন মিয়া।

হঠাৎ পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর শুনে তাজ আর আরফি পাশ ঘুরতে ফারিসতাকে কোমরে হাত দিয়ে দোকানদারের দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরফি বিড়বিড় করে বলে উঠলো এই মেয়ে শান্ত ভাবে কথা বলার মেয়ে না সব সময় কথার আগে খ্যাক করে উঠতে হবে।

এক সপ্তাহ পর ফারিসতার রনচন্ডী রূপ দেখে থমকালো তাজ। সেদিন লেক পার্কে বসে ধমকানোর পর আর দেখেনি মেয়েটাকে। আজ এক সপ্তাহ পর আবার মেয়টাকে দেখে তাজ কেমন থমকে গেলো। এই যে কোমড়ে হাত দিয়ে রাগে লাল হয়ে নাকের পাটা ফুলিয়ে দোকানদারের দিকে তাকিয়ে আছে বিষয়টা কেনো যেনো খুব ভালো লাগলো তাজের। এই মেয়ের দম আছে বলতে হবে যে আসলেই কাউকে পরোয়া করে না। মেয়ে জাত হয় শিমুল তুলোর চেয়ে নরম কিন্তু এই মেয়ে তার ঠিক উল্টো। দেখতে শিমুল তুলোর মতো হলেও ভিতটা ঠিক ততটা শক্ত। কথা গুলো ভেবে তাজ মনে মনে শুধালো ভেরি স্ট্রিং গার্ল।

এদিকে তাজ আর আরফি পাশ ঘরতে ওদের দিকে চোখ যেতে ভিষম খেলো ফারিসতা। আর রাশফিয়ার
তাজদের দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো। ফারিসতা আর রাশফিয়া দু’জনেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তখন ফারিসতার খেয়াল আসলো ফারজানা বেগমের বলা কথা। এখন এখানে থাকলে কোনো না কোনো ভাবে তাজ বা আরফির সাথে লেগে যাবে তাই ফারিসতা কোনো দিকে না তাকিয়ে রাশফিয়ার হাত ধরে ওই দোকান থেকে বের হতে উদ্যত হতে তাজ দোকানদারের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ওদের সার্ভিস আগে দিন।

তাজের কথায় দোকানের ভয়ে ভয়ে বলল কিন্তু স্যার….

আমি দিতে বলেছি দোকানদারকে থামিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো তাজ।

তাজের কথার পৃষ্ঠে দোকানদারের আর কিছু বলার সাহস হলো না। তিনি ফারিসতাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
আপানারা চয়েস করুন।

দোকানদারের এবারের কথায় ফারিসতা ইচ্ছে করলো ব্যাটার মাথা ফাটিয়ে দিতে৷ একটু আগে ওদের পাত্তা না দিয়ে সুন্দর করে চলে গিয়েছিলো নতুন কাস্টমারের কাছে৷ প্রথমে অপমান করে এখন আসছে আবার ওদের ডাকতে ভাবতে ফারিসতার রাগ লাগলো কিন্তু আপাতত বাঘ ভাল্লুকে সামনে দাঁড়িয়ে আছে উল্টা পাল্টা কিছু বললে ওকে গিলে খাবে তাই ফারিসতা নিজের রাগ লুকিয়ে রেখে হাসার চেষ্টা করে বলল, না না কিছু লাগবে না আমরা অন্য দোকান থেকে নিয়ে নিবো এ বলে রাশফিয়াকে নিয়ে উল্টো ঘুরে এক কদম ফেলতে পিছ থেকে বাজখাই গলায় তাজ বলে উঠলো এই মেয়ে যেতে বলেছি তোমাদের?

হঠাৎ তাজের এমন ধমকে চলতে থাকা পা জেড়া শহসা থেমে গেলো। ফারিসতার শুকনো ঢোক গিলে পিছে তাকাতে তাজ কিছুটা শান্ত গলায় বলল,

যা নিতে এসেছো তা নিয়ে দেন যেখানে খুশি সেখানে যাও।

তাজের কথায় ফারিসতা হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো, আ,,আপনারা নিন আমরা অন্য….

একবার বলার পর ও ফারিসতাকে এমন নাকোচ করতে দেখে তীর তীর করে তাজের রাগ মাথায় চড়ে বসলো। তাজ দিক বেদিক ভুলে ধমকে উঠে বলে উঠলো এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার? এক কথা দুইবার বলা কেনো লাগবে? কি বলেছি কানে যায়নি?

হঠাৎ তাজের এমন ধমকে ফারিসতা চোখমুখ খিচে ভাবতে লাগলো কি করবে। নিজের রাগ আটকাতে চেয়েও ব্যর্থ হচ্ছে এবার। ও কেনো এই লোকের কথা শুনতে যাবে? এর পোষা চামচা নাকি ও যে উনি যেটা বলবে সেটা করতে হবে? অন্যের হুকুমে ওঠা বসা করার মেয়ে ফারিসতা মোটেও না তাই ত্যাড়ামো করে তাজের হুকুম অমান্য করে দোকান থেকে বেড়োতে নিবে তখন রাশফিয়া ফারিসতার হাত খামছে ধরলো। ফারিসতা একরোখা ত্যাড়া যেই জেদি মেয়ে তাই ও কি করতে চাচ্ছে বুঝে উঠতে সময় লাগলো না রাশফিয়ার। রাশফিয়া ফারিসতার হাত খামচে ধরে ফিসফিস করে বলল,

দোস্ত ঝামেলা করিস না প্লিজ ওনারা তো আমাদের ভালোর জন্যই সুযোগ দিয়েছে কথাটা বলে রাশফিয়া ফারিসতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে টেনে দোকানদারের কছে নিতে নিতে তাজদের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল নিচ্ছি আমরা এ বলে যা প্রয়োজন তা দোকানদারকে দেখাতে বলল।

রাশফিয়ার কাজে দাঁত কটমট করে তাকালো ফারিসতা রাশিয়ার দিকে যেনো এখনি কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।

ফারিসতার তাকানো দেখে রাশফিয়া ফিসফিস করে বলল, প্লিজ দোস্ত ক্ষেপিস না এ বলে দোকানদারকে ঘড়ি দেখাতে বলল। দোকাদার ঘড়ি দেখালে ঘড়িগুলোর মধ্যে কোনো রকম দুইটা ঘড়ি চয়েস করে প্রাইজ জানতে চাইলে দোকানদার বলে উঠলো দুইটা বারো হাজার।

দোকানদারের প্রাইজ মুখ দিয়ে বলতে দেরি ফারিসতার খ্যাক করে উঠতে দেড়ি হলো না। এমনি দোকানদারের উপরে ক্ষোব ছিলো তাজদের দেখে ওদের পাত্তা না দেওয়ায় তার উপরে তাজের দেওয়া ধমকের জন্য তাজের উপরে যেই ক্ষোব ছিলো সবকিছু মিলিয়ে রাগে ক্ষোবে খ্যাক করে ফারিসতা বলে উঠলো এই মিয়া বিজনেস করতে নেমেছেন নাকি ঢাকাতি করতে নেমেছেন? দুইটা ঘড়ির দাম বারো হাজার টাকা হয় কিভাবে?

হঠাৎ ফারিসতার এমন খ্যাক করে ওঠায় দোকানদার ভড়কে উঠলো। পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলে উঠলো আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে এটা ব্রান্ডের ঘড়ি।

এদিকে তাজ প্যান্টের পকটে হাত গুজে নিষ্পলক দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছে ফারিসতাকে। এই যে ওর কথা অমান্য করে ত্যাড়ামো করে চলে যেতে উদ্যত হতে রাশফিয়া টেনে দোকানদারের কাছে নিয়ে যাওয়া। রাশফিয়া টেনে নিয়ে যেতে দাত কটমট করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকা। দোকানদারের কথায় নাকের পাটা ফুলিয়ে খ্যাক করে ওঠা। এই যে এখন সামান তালে দোকানদারের সাথে ঝগড়া করছে যার জন্য একটু পর পর খ্যাক খ্যাক করে উঠছে সব কিছু তাজরিয়ানের কাছে অন্যরকম ঠেকলো। ফারিসতার কাজে তাজরিয়ান বিরক্ত হলো না বরং কেনো যেনো সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে ভালো লাগছে। এই যে রাগের কারণে ফর্সা নাকের ডগা লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। অনামিকা আঙুল নাড়িয়ে দোকানদারে সাথে ঝগড়া করছে এই সব কিছু তাজের কাছে খুব মজা লাগছে। একটা মেয়ে এতটা নাছোড়বান্দা কি করে হতে পারে? এই বিচ্ছু মেয়ে আসলেই আলাদা সবার চেয়ে আলাদা।

দোকানদারের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করে বারো হাজার টাকার ঘরি ছয় হাজার টাকায় নিয়ে নিলো তা দেখে আরফির চোখ কপালে উঠে গেলো। তার মানে দোকানদাররা ওদের এভাবে ঠকায় একটা জিনিসের তিন গুন দাম রেখে কথাটা ভাবতে আরফি দোকানদারের দিকে তাকাতে চোখে পড়লো ডেস্কের উপরে একটা ফোন যেটা ফারিসতার সাথের মেয়েটার হাতে দেখেছিলো তখন। এদিকে ফারিসতারা প্রায় দোকান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তখন আরফি পিছু ডেকে উঠলো এই মেয়ে….

দোকান থেকে বের হওয়ার সময় আবার পিছু ডাক পড়তে এবার বিরক্ত চরম সীমানায় চলে গেলো ফারিসতা। বিরক্ত নিয়ে ফারিসতা আর রাশফিয়া পিছু ঘুরে বুঝে উঠতে চাইলো কাকে ডাকছে তখন আরফি রাশফিয়ার দিকে আঙুল তাক করে বলল তোমাকে বলছি।

হঠাৎ আরফির এমন আঙুল তাক করাতে রাশফিয়ার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো৷ সহসা মনের ভিতর হানা দিলো আমি কি কিছু করেছি? ভাবতে রাশফিয়া ঢোক গিললো আবার কিছু না করে ফেলেছে। এমনি ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য এখান থেকে পালাতে চাচ্ছে আর সেই ঝামেলা পালাতে তো দিচ্ছেই না উল্টো একটার পর একটা ঝামেলা শেওরা গাছের পেত্নীর মতো ঘাড়ে চেপে আছে।

আরফি রাশিয়ার শুকনো মুখ দেখে স্মিত হাসলো। সেদিনও ফারিসতার সাথে এই মেয়েটা ছিলো। ওর একটা ডাকে এই মেয়ের মুখ চুপসে গিয়েছে। মেয়ে জাতি তো এমন এই নরম ভীত হওয়া উচিত তাইন? রাশফিয়ার পাশে ফারিসতাকে আরফির মনে হলো অন্য গ্রহ থেকে হয়তো ভুল করে ওদের গ্রহতে চলে এসেছে। ওর এক ডাকে ওই মেয়ের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে কিন্তু ফারিসতার ভিতরে নেই কোনো ভয় ভীতি উল্টো বিরক্ত নিয়ে ওর দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছে তা দেখে আরফি চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রাশফিয়ার উদ্দেশ্যে বলল, মেবি তোমার ফোনটা ওখানে রেখে যাচ্ছো।

আরফির কথায় রাশফিয়া ওর হাতের দিকে তাকাতে দেখে আসলেই ওর ফোন নেই। রাশফিয়া আরফির ইশারা অনুস্মরণ করে সামনে তাকাতে দেখলে ডেস্কের উপরে ফোন রেখেই চলে যাচ্ছিলো তা দেখে রাশফিয়া তড়িঘড়ি করে ফোন নিয়ে আরফির উদ্দেশ্যে ছোট করে ধন্যবাদ জানিয়ে ছুটে ফারিসতাকে নিয়ে মল থেকে বেড়িয়ে গেলো।

রাশফিয়াদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আরিফ বলে উঠলো অদ্ভুৎ তো। এভাবে কেউ ধন্যবাদ দেয়?

আরফির কথার পৃষ্ঠে তাজ আরফির কাঁধ চাপড় মেরে বলল,

এই মেয়ে নিতান্ত ভদ্র তাই অন্তত ধন্যবাদ পেয়েছি। তোর ভাগ্য ভালো এই মেয়ের জায়গায় ওই মেয়ে থাকলে ধন্যবাদ না পেয়ে একটা ফ্রিতে থাপ্পড় পেতি।

তাজের কথায় আরফি চোখমুখ কুঁচকে বলল তা ঠিক বলেছিস যেই ডেঞ্জারাস মেয়ে রে বাবা। বাপের জন্মেও এমন মেয়ে দেখি নাই।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰