হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-২৫+২৬

0
131

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ২৫

পরন্ত বিকেলে বৃষ্টি থামতে ফারিসতা রাশফিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলো। বের হয়ে রাস্তায় এসে দেখলো একটাও রিক্সা নেই। একটু বৃষ্টি নামলেই সব রিকশা উঠাও হয়ে যায় সেখানে আজ সকাল থেকে বৃষ্টি নেমেছে একটু আগে থামলো বৃষ্টি তাই এখন রিকশা পাওয়াটা আসলেই দুষ্কর এটা ব্যাপার।

রিকশা না পেয়ে ফারিসতা হাঁটা দিলো ভাবলো হাঁটতে হাঁটতে সামনে রিকশা পেলে সেটায় উঠে যাবে। এমনি বৃষ্টি জন্য অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে এখন এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আরো দেরি হবে তাই সামনে হাঁটতে লাগলো৷ কিছুক্ষণ হাঁটার পর হুট করে ফারিসতার মনে হলো ওকে কেউ ফলো করছে। ফারিসতা চট করে পিছু ঘুরতে দেখলো কেউ নেই। ফারিসতা ভ্রম ভেবে ঘুরে আবার হাঁটা দিলো, না এবারো মনে হচ্ছে কেউ ওঁকে ফলো করছে ফারিসতা ফের পিছু ঘুরলো এবারও চোখে কিছু পড়লো না। ফারিসতা সতর্ক নেত্রে চারপাশে চোখ বুলালো। কিছু চোখে না পরলেও ফারিসতার দুরন্তর মস্তিষ্ক বুঝতে পারলো কেউ আছে ওর আসেপাশে। এমতাবস্থায় ফারিসতা কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা হঠাৎ করে ফারিসতার বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠলো। ফের সঙ্কিত লোচনে চারপাশে চাইলো ফারিসতা। ভীতি হলো মন। শঙ্কিত মস্তিস্ক জানান দিচ্ছে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। ফারিসতা কি করবে ভেবে না পেয়ে সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। চারদিক থেকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি বেজে উঠতে পিল চমকে উঠলো ফারিসতা। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে ক্রমশ। ফারিসতা শেষ বারের মতো আশপাশে একবার চোখ বুলিয়ে সামনে পা বাড়াতে যাবে তখন কোথা থেকে রকেট গতিতে একটা গড়ি ছুটে এসে ফারিসতার পাশে থেমেই ফারিসতা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগন্তক গাড়ি থেকে নেমে এক ঝটকায় ফারিসতাকে টান দিয়ে দূরে সরিয়ে নিলো সাথে সাথে সেই স্থান দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে গেলো একটা বুলেট যেটা রাস্তার পাশ ঘেঁসে থাকা ছোট একটা গাছের সাথে লাগতে দুই ভাগ হয়ে গেলো গাছটা।

হঠাৎ ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় থমকে গেলো ফারিসতা। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ওই বুলেটটার আঘাতে ও ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো ভাবতে ফারিসতা পুরো শরীর কাটা দিয়ে উঠলো।

হসপিটালে তাজ যখন রোগী দেখতে ব্যস্ত ছিলো তখন হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে একটা ভিডিও আসে। তাজ ভিডিওটা ওপেন করতে বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। ফারিসতা রাস্তায় পাশ ঘেঁসে হাঁটছে আর ওর পিছে কেউ একজন গা*ন নিয়ে ওকে ফলো করছে। ভিডিওটা দেখে তাজ ধরফরিয়ে এক ছুটে হসপিটালের সব ফেলে রেখে গাড়িতে উঠে ফুল স্পীডে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সাব্বিরকে ফোন করে ও কোথায় জানার জন্য। সাব্বির ফোন রিসিভ করে জানায় ও বাসায় তা শুনে তাজ সাব্বিরকে হুঙ্কার ছেড়ে শাসায়। তাজকে হঠাৎ এমন রেগে যেতে দেখে সাব্বির কাঁপা কাঁপা স্বরে জানা দে ফারিসতা আজ ক্লাস না করে রাশফিয়ার হোস্টেলে যায়। ততক্ষণে বৃষ্টি নামা শুরু হয়ে যায় তবুও ও দুপুর পর্যন্ত হোস্টেল কাছেই অপেক্ষা করেছিলো কিন্তু ফারিসতা না আসায় ভেবেছে আজ হয়তো রাশফিয়ার সাথে থাকবে তাই ও বাসায় চলে গেছে। সাব্বিরের কথা শুনে তাজ আরো রেগে গিয়ে সাব্বিরকে ধমকের উপর ধমক দিয়ে ফোন কেটে দিয়ে গাড়ি ফুল স্পীডে চালিয়ে হোস্টেল কাছাকাছি পৌঁছে ফারিসতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো আর ফারিসতার থেকে অনেকটা দূর থেকে কেউ ওর উপরে বন্ধুক তাক করে আছে তা দেখে তাজের বুক হঠাৎ করে কেঁপে ওঠে। তাজ ঝড়ের বেগে ফারিসতাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে পেরে যেনো জীবন ফিরে পেলো। আর একটা সেকেন্ড দেরি হলে কি হয়ে যেতো ভাবতে তাজ বিচলিত হয়ে ফারিসতার দুই গালে হাত রেখে বলে উঠলো,

ঠিক আছো তুমি? লেগেছে কোথাও?

হাঠাৎ তাজের কণ্ঠ কানে যেতে ফারিসতা গাছের থেকে চোখ সরিয়ে তাজের দিকে তাকাতে চোখ আটকালো তাজের চিন্তিত মুখশ্রীর দিকে। এলোমেলো চুল। গায়ে এখনো সাদা অ্যাপ্রন দেখে মনে হলো হসপিটাল থেকে ছুটে এসেছে। ফারিসতা নীরবে তাজকে অবলোকন করে তাচ্ছিল্য হেঁসে গাল থেকে তাজের হাত সরাতে সরাতে বলে উঠলো,

এত টেনশনের কিছু নেই ম/রি/নি আমি এখনো বেঁচে আছি।

ফারিসতার এমন তাচ্ছিল্যের কথায় তাজের চিন্তিত মুখ এবার শক্ত হয়ে আসলো। তাজ রাগে ফারিসতার দুই বাহু চেপে ধরে ফারিসতাকে ঝাকিয়ে হুঙ্কার ছেড়ে বলে উঠলো,

কোন সাহসে এই টাইমে একা বেরিছো?

তাজের এমন হুঙ্কারে ফারিসতার আজ ভয় লাগলো না বরং ফের তাচ্ছিল্য হেঁসে শুধালো,

আপনার মতো বড়োলোক আমি না যে সব সময় নিজেকে সেইফ রাখার জন্য গার্ডের ছায়াতলে থাকবো।

ফারিসতার কথায় তাজ রাগে ফারিসতাকে ছেড়ে দিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, তোকে গার্ডদের ছায়াতলে থাকার ব্যবস্থা করছি জাস ওয়েট এন্ড সি এ বলে ক্ষপ করে ফারিসতার হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নিজে অপজিট পাশে বসে ফুল স্পীডে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আদা ঘন্টার রাস্তা দশমিনিটে পার করে আরফিদের বাসায় সামনে গাড়ি থামিয়ে বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো নাম।

তাজের এমন রাগ, তুই তোকারী কোনো কিছুতেই ফারিসতার উপরে প্রভাব ফেললো না। ওতো ব্যস্ত নিজের জীবনের সমীকরণ মিলাতে। হুট করে জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো। পাখির মতো উড়ে বেড়াতে চাওয়া মেয়েটার আজ চব্বিশ ঘণ্টা গার্ডের ছায়াতলে থাকতে হচ্ছে। এক সেকেন্ডের জন্য ও গার্ডের আড়াল হলে সেখানেই ঘটবে জীবনের সমাপ্তি। এমন বন্দী জীবন তো ও চায়নি তাহলে কেনো হুট করে ওর জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো? আজ হয়তো ভাগ্য সহায় ছিলো দেখে জীবনটা ভিক্ষা পেয়েছে সামনে কি হবে? ওর কিছু হলে ওর মায়ের কি হবে? এই পৃথিবীতে ওর যেমন ওর মা ছাড়া আর কেউ নেই ঠিক তেমনি ওর ও মা ছাড়া আর কেউ নেই। জীবনে এতো বড় আঘাত পেয়ে শুধু মাত্র ওঁকে আকড়ে ধরে ওর মা বেঁচে আছে সেখানে ওর কিছু হলে তার কি হবে? ঢাকা শহরে ফের পা দিয়েছিলো কতশত স্বপ্ন বুনে তাহলে কি সব স্বপ্নের এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটে যাবে? কথাগুলো ভেবে ফারিসতা নীরবে তাজের গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো। একবার ফিরেও তাকালো না একজোড়া অস্থিরতায় ঘেরা চোখ ওতে আবদ্ধ।

ফারিসতা যেতে তাজ সিটের সাথে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে তপ্ত শ্বাস ফেললো। তখন টুং করে ফোনে একটা মেসেজ আসলো। তাজ ফোন হাতে নিতে দেখলো হোয়াটস অ্যাপের সেই নাম্বার থেকে আবার মেসেজ এসেছে। তাজ মেসেজেটা ওপেন করতে জ্বলজ্বল করে উঠলো, আজ তো শুধু ট্রেইলার দেখালাম। নেক্সট টার্গেট সরাসরি বুকে লাগবে।

মেসেজটা দেখে তাজের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। তাজ সাথে সাথে ওই নাম্বারে ফোন করতে নাম্বার বন্ধ পেয়ে রাগে কেঁপে উঠল পুরো শরীর। তাজ আগুন চোখে নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে মেসেজ করলো, মা* সাহস থাকলে আড়ালে বসে কাপুরুষের মতো আঘাত না করে সামনে আয় দেখি তোর হিম্মত কতটুকু। নেক্সট টার্গেট বুকে লাগাবি তো দূরের কথা ওর গায়ে একটা ফুলের টোকা লাগলেও তোর কলিজা টেনে ছিড়ে ফেলবো শু* বাচ্চা। মেসেজটা করে তাজ হনহনিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ক্লাবে চলে গেলো সাথে আরফিকে ফোন করে জানান দিলো সবাইকে নিয়ে পাঁচ মিনিটের ভিতরে ক্লাবে আসতে।

ফারিসতা শুকনো মুখে কলিংবেল চাপতে সাথে সাথে ফারজানা বেগম দরজা খুলে দিলো যেনো এতক্ষণ ওর অপেক্ষায় এই বসে ছিলো। ফারিসতা বাসায় ঢুকতে আচমকা ফারজানা বেগম রেগে ফারিসতার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

এতো দেরি কেনো হয়েছে তোর? সবসময় যা খুশি মন চায় করতে দিয়েছি এ বলে সব কিছুর লিমিট ক্রস করে ফেলবি? বিকেলে আসার কথা ছিলো তাহলে রাত কেনো হয়েছে? এই শহর সম্পর্কে কতটুকু জানিস তুই হ্যা? আজকের পর থেকে ভার্সিটির বাহিরে এক পাও রাখলে পড়ালেখা সব বন্ধ করে দিয়ে বাসায় বন্দী করে রাখবো৷ তোকে স্বাধীনতা দিয়েছি বলে পাখির মতো উড়তে বলিনি, সেই উড়ার সাধ্য তোর নেই। যাদের মাথায় উপরে বাবা নামক বটবৃক্ষ নেই তাদের এতো উড়ে বেড়ানোর শখ মাটিপাচা দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু আমি তোর কোনো স্বপ্ন অপূর্ণ রাখিনি। সবসময় যেটা চেয়েছিস সেটা পেয়েছিস। জীবনে অনেক স্বাধীন ভাবে কাটিয়েছিস এবার থেকে আমি যেভাবে বলবো এর বাহিরে এক পাও যেনো না চলে কথাগুলো বলে ফারজানা বেগম হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

ফারজানা বেগমের প্রতিটি কথায় ফারিসতা স্তব হয়ে গেলো। ওর মাতো সহজে রাগে না আর রাগলেও কখনো এসব বলেনা তাহলে আজ কি হলো? কোনো ভাবে কি আজ ওর উপরে অ্যাটাক হতে যাচ্ছিলো সেটা জেনে গেছে? কিন্তু ওর মা কিভাবে সেটা জানবে ভেবে পেলো না ফারিসতা। পরক্ষণে ভাবলো হয়তো অন্য কোনো কারণে রেগে আছে পরে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ফারিসতার ভারাক্রান্ত মন আরো বেশি ক্ষুন্ন হলো মায়ের কথাগুলো ভেবে। এবার ও কি করবে? কিভাবে বের হবে এই কঠিন জীবন থেকে? ভাবতে ফারিসতা তপ্ত শ্বাস ফেলে রুমে চলে গেলো। আস্তে আস্তে রাত গভীর হতে লাগলো সেই সাথে বাড়তে লাগলো ফারিসতার চিন্তা। কি করবে ও? কিভাবে মুক্তি মিলবে এই বন্দী জীবন থেকে? আবার কবে মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেরাতে পারবে? আদো কি সেই সুযোগটা কখনো আসবে?

ফারিসতা দীর্ঘশ্বাস টেনে বেলকনির চেয়ার ছেড়ে রুমে গিয়ে শরীরটা এলিয়ে দিলো বেডে। আলতো করে বুঁজে নিলো চোখ। পরক্ষণে চোখের সামনে ভেসে উঠলো তাজের এলোমেলো অস্থির চিত্তের মুখশ্রীটা। যে অস্থির হয়ে শক্তপোক্ত হাত দুটো আলতো করে ওর কোমল গালে রেখে বলেছিলো ঠিক আছো তুমি? তাজের অস্থির চিত্তে বলা কথার সাথে ফারিসতা শুনেছিলো তাজের বুকের ধুকপুকানি। যেনো বুক জুড়ে বাজতে থাকা প্রতিটি হার্টবিট ফারিসতাকে জানান দিচ্ছিলো ওর কিছু হলে ওই হার্টবিটাও চিরতরের জন্য থেমে যাবে।

ফারিসতা চট করে চোখ খুলে ফেললো। তাকালো সিলিং ফ্যানের দিকে যেটা ধীর গতিতে ঘুরছে। ফারিসতা এক ধ্যানে চেয়ে রইলো সেই ঘূর্ণয়মান ফ্যানের দিকে। মস্তিষ্কে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে কি করবো আমি? মস্তিষ্কে এই প্রশ্ন ঘুরে বেড়ালেও মিললো না এর কোনো উত্তর। ফারিসতা ফের দীর্ঘনিঃশ্বাস টেনে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে চোখ বুঁজে নিলো। আপাতত আর ভাতে পারছে না। ভাবতে চাচ্ছেও না। এখন ওর ঘুম প্রয়োজন। একটা সময় ঘুমিয়ে ও পড়লো। ঘুম ভাঙলো ফজরের আজানের ধ্বনি কানে যেতে। ঘুমকাতুরে মেয়েটা আজ না ঘুমিয়ে উঠে ওজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। নামাজ শেষে মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো। মায়ের রুমের এসে ফারিসতার চোখে পড়লো ফারজানা বেগমকে উদাস ভঙ্গিতে জানালার কাছ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিসতার বুকের ভিতর মোচড় মেরে উঠলো। কি হয়েছে ওর মায়ের? যেই মা হাজারো বকা ঝকা করলেও না খেয়ে কখনো ঘুমাতে দেয় না আর সেই মা কিনা ওঁকে রাতে একটা বারের জন্য ও খেতে ডাকেনি। হুট করে কি হলো ওর মায়ের ভাবতে ফারিসতা আলতো করে ফারজানা বেগমের কাঁধে হাত রাখতে হঠাৎ চমকে উঠলো ফারজানা বেগম। কোনো একটা বিষয় নিয়ে গভীর ভাবনায় মগ্ন ছিলো যার জন্য মেয়ে কখন রুমে এলো টের ও পেলো না। ফারজানা বেগম দ্রুত নিজেকে সামলে ফারিসতার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

খিদে পেয়েছে? রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সে জন্য তোকে ডাকা হয়নি তাই বলে নিজে নিয়ে খাওয়া যায় না? সব সময় মায়ের আশায় থাকিস, মা যখন থাকবো না তখন কি করবি?

মায়ের হঠাৎ এমন কথায় ফারিসতার বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠলো। মুহূর্তের মাঝে চোখের কোটরে জমা হলো অশ্রুকণা। ফারিসতা হঠাৎ ফুপিয়ে উঠে ফারজানা বেগমকে ঝাপটে ধরে ধেয়ে আসা গলায় বলে উঠলো, এভাবে কেনো বলছো আম্মু? আজ থেকে তোমার কোনো কথা অমান্য করবো না। যা বলবে সব করবো তবুও আমার উপরে রেগে থেকে এগুলো বলো না। আমার নিঃশ্বাস আঁটকে আসে।

মেয়ের এমন কান্নায় ফারজানা বেগম ফারিসতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, বোকা মেয়ে কান্না করছিস কেনো? আমি কথার কথা বলেছি। পাগলী মেয়ে কথাটা বলে ফারজানা বেগম ফারিসতার মাথা তুলে কপালে চুমু খেলো। ফারিসতা তখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। ফারজানা বেগম ফারিসতার চোখের পানি মুছে দিয়ে গালে এক হাত রেখে বলল,

মায়ের কথায় কাল খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিস?

ফারিসতা এবার ঠোঁট উল্টো কান্না করে দিয়ে ফারজানা বেগমকে ফের ঝাপটে ধরে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে উঠলো একটুও না। আমাকে সারাদিন বকো দরকার হলে মা*রো তাতেও আমার এইটুকু কষ্ট লাগবে না শুধু আমার সাথে রাগ করে থেকো না।

ফারজানা বেগম মেয়ের পিঠে স্নেহের হাত বুলিয়ে বলল পাগলী মেয়ে আমার। রাতে খাওনি এবার ছাড়ো নাস্তা বানিয়ে দেই।

ফারিসতা ফারজানা বেগমকে ছেড়ে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল, আমিও হেল্প করি তোমায়?

ফারজানা বেগম মেয়েকে এক গাল হাসি উপহার দিয়ে বলল, আয় এ বলে কিচেনের দিকে পা বাড়ালো। ফারিসতার মায়ের পিছু পিছু গেলো। মায়ের সব কাজে হেল্প করে রুটি বেলার সময় রুটি গোল করার বদলে বাংলাদেশের মানচিত্র করে ফেলেছে তা দেখে হেঁসে কুটি কুটি হয়ে গেলো ফারজানা বেগম। তা দেখে ফারিসতা ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে। ফারজানা বেগম হাসি থামিয়ে ফারিসতকে নিজ হাতে শিখাতে লাগলো কিভাবে রুটি বেলতে হয়। এভাবে মা মেয়ের খুনসুটি মাঝে কাটলো সুন্দর স্নিগ্ধ এক ভোর।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং…

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ২৬

ফারিসতা ফুরফুরে মনে রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। আজ মায়ের সাথে খুনসুটিময় স্নিগ্ধ ভোর কাটাতে মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গিয়েছে। ফারজানা বেগম আরো আগেই অফিসে চলে গেছে। যাওয়ার আগে ফারিসতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছে শহরের অবস্থা ভালো না সাবধানে ভার্সিটিতে যেতে, কারো সাথে ঝামেলায় না জড়াতে৷

মায়ের কথাগুলো আজ ফারিসতা খুশি হয়ে মেনে নিয়েছে। এখন থেকে আর কোনো ঝামেলায় জড়াবে না। ওর মায়ের সবচেয়ে ভদ্র মেয়ে হয়ে উঠবে কথাগুলো ভেবে ফারিসা লিফট থেকে নেমে গেটের কাছে আসতে গেটের সামনে তাজকে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিসতার ভ্রু কুঁচকে গেলো।

ফারিসতা কুঁচকানো ভ্রুর দিকে তাকিয়ে তাজ অমায়িক হাসি দিয়ে বলল, গাড়িতে ওঠো।

তাজের মুখে এমন হাসি দেখে ফারিসতার চোখ কপালে উঠে গেলো৷ এই প্রথম তাজকে হাসতে দেখলো বোধহয়। টোল পড়া হাসি এই প্রথম দেখে ফারিসতার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এই লোক হাসলে গালে টোল পড়ে সেটা এতো মাসেও জানলো না। জানবেই বা কিভাবে মুখেতো সব সময় লেগে থাকে পূর্নিমা রাতের আধার। আজ হঠাৎ করে এমন হাসতে দেখে ফারিসতার ভ্রু বেঁকে গেলো। মনে মনে বলে উঠলো লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে?

আমি জানি আমার হাসি অনেক সুন্দর তাই এভাবে তাকিয়ে না থেকে গাড়িতে ওঠো।

তাজের এহেন কথায় বিষম খেলো ফারিসতা। ফারিসতা নিজেকে সামলে বলে উঠলো কে বলেছে আপনার হাসি সুন্দর? পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য হাসি।

ফারিসতার এক্সপ্রেশন দেখে তাজ নিম্নাষ্ঠ কামড়ে ধরে মৃদু হাসে বলল, গাড়ি উঠবে নাকি কোলে করে উঠানো লাগবে?

ফারিসতা চোখমুখ কুঁচকে ধুপধাপ পা ফেলে গাড়িতে উঠতে উঠতে বিড়বিড় করে বলে উঠলো গুন্ডা একটা।

ফারিসতা গাড়িতে উঠতে তাজ ও উঠে বসতে ফারিসতা বলল, কি এখন ডাক্তারি আর গুন্ডামী পেশা রেখে আমার বডিগার্ড হওয়ার চাকরি নিয়েছেন নাকি?

কারো নাকি বডিগার্ড রাখার সামর্থ্য নেই। আমার আবার দয়ার শরীর তাই ফ্রীতে বডিগার্ডের সার্ভিস দিচ্ছি, কোনো সমস্যা?

আলবাত সমস্যা। কেনো এমন করছেন?

তাজ এবার ফারিসতার দিকে কিছুটা ঝুঁকে নিরেট স্বরে বলে, কেনো এমন করছি বুঝো না?

তাজকে এমন নিজের দিকে ঝুঁকতে দেখে ফারিসতা পিছে ঝুকে এলোমেলো ভাবে বলে উঠলো,

বুঝতে চাইনা আমি কিছু সেটা বুঝতে পারছেন না? সড়ুন আমার কাছ থেকে।

ফারিসতার কথায় তাজ সড়লো না বরং দু’জনের মাঝের দূরত্ব আরো ঘুচে নিয়ে তাজ বলল, যত দূরত্ব করতে চাবে আমি ঠিক ততটা ঘনিষ্ঠ হবো। কি করবে?

তাজ এমন কাছে আসায় ফারসিতার নিঃশ্বাস আঁটকে আসার উপক্রম হলো। ফারিসতা কোনো রকম বলে উঠলো, প্লিজ দূরে সড়ুন আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

ফারিসতার কথায় তাজ ফারিসতার মুখের উপরে ফু দিয়ে বলল, এই টুকু দূরত্ব ঘোচায় নিঃশ্বাস নিতে পারছো না তাহলে প…

প্লিজ থামুন না চোখমুখ খিচে বলে উঠলো ফারিসতা।

ফারিসতার অবস্থা দেখে তাজ এবার খুব করে মজা পেলো কিন্তু মেয়েটাকে আর জ্বালাতন না করে সোজা হয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

তাজ দূরে সড়তে ফারিসতা বড় বড় করে বার কয়েক নিঃশ্বাস টেনে মনে মনে তাজের গুষ্টি শুদ্ধো উদ্ধার করলো। কিছুক্ষণ পর ফারিসতা খেয়াল করলো গাড়ি
ভার্সিটির পথে না গিয়ে গাড়ি উল্টো পথে যাচ্ছে তা দেখে ফারিসতা চেচিয়ে বলে উঠলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

গার্ডদের ছায়াতলে থাকার ব্যবস্থা করতে নিয়ে যাচ্ছি।

তাজের কথায় এবার ফারিসতার নিজের মাথা নিজের চপড়াতে মন চাইলো কাল ক্যান বলতে গিয়েছিলো আপনার মতো আমার গার্ডদের ছায়াতলে থাকা সম্ভব না। সেই একটা কথা ধরে রেখে এই লোক ওকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। ফারিসতা আর কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে গেলো। আজ আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা গেলেই দেখা যাবে এই ভেবে চুপ হয়ে গেলো। অনেকটা সময় পর চৌধুরী নীড়ের সমনে গাড়ি থামতে স্তব্ধ হয়ে গেলো ফারিসতা। হুট করে তাজ ওকে এখানে কেনো নিয়ে এলো ভেবে না পেয়ে ফারিসতা চট করে তাজের দিকে তাকাতে তাজ সিট বেল্ট খুলতে খুলতে বলল, নামো।

ফারিসতা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বলল, আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন?

বিয়ে করার জন্য আর একটা কথা বললে মুখ সেলাই করে দিবো চুপচাপ নামো।

ফারিসতা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল, মজা করছেন আমার সাথে? আপনার সাথে আমার মজার সম্পর্ক? এখানে কেনো এনেছেন?

ফারিসতার এমন বকবকানিতে তাজ কপাল কুচকে ঠোঁট গোল করে চ সূচক শব্দ উচ্চারণ করে গাড়ি থেকে নেমে ফারিসতার পাশে যেয়ে ফারিসতাকে কিছু বলার সুযোগ না দুয়ে ক্ষপ করে ফারিসতার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করতে লাগলো৷ তাজের এহেন কাজে ফারিসতা চোখ বড় বড় করে কিছু বলতে যাবে তখন লিভিং রুমে চৌধুরী পরিবারের সবাই এমনকি ফারজানা বেগমকেও দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো। ফারিসতা চট করে চাইলো তাজের হাতের মুঠোয় থাকা ওর হাতে দিকে। সবাই ওদের এভাবে দেখছে ভাবতে ফারিসতার চোখ এবার কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। ফারিসতা চটজলদি তাজের হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো কিন্তু তাজ ছাড়লো না তা দেখে ফারিসতা অসহায় চোখে সবার দিকে একবার তাকিয়ে ফিসফিস করে তাজের উদ্দেশ্যে দাঁত কটমট করে বলল,

অসভ্য বেয়াদব লোক হাত ছাড়ুন বলছি।

ভালোভাবে বললে ছেড়ে দিতাম বাট এবার ছাড়ছি না এ বলে আরো শক্ত করে হাত চেপে ধরলো।

সাফোয়ান সবে উপর থেকে নামছিলো অফিসে যাবে বলে তখন চোখ সামনে যেতে তাজের হাতের মুঠোয় ফারিসতার হাত দেখে হাঠাৎ বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কম্পিত হলো পা জোড়া। সাফোয়ান অবিশ্বাস্য চোখে অস্থির চিত্তে তাজ আর ফারিসতার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। গতকাল আদরিবা জ্ঞান হারানোর পরে ওকে বাসায় দিয়ে এসে সাফোয়ান চলে এসেছিলো। হুট করে আদরিবার বলা কথায় সাফোয়ান ঘোরের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলো। ঘোরের মাঝে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে তাজের বিয়ে বিয়ে নিয়ে সবার মাঝে কিছু একটা বলতে শুনেছিলো কিন্তু আদরিবার ঘোর কাটাতে না পেরে কোনো কথা কানে না তুলে সেই যে রুমে যেয়ে দরজা আটকিয়েছে আর মাত্র বের হলো। বের হয়ে এমন কিছু দেখে সাফোয়ান না চাইতেও বুকের ভিতর কেমন ব্যথা করছে। তাহলে তাজ ফারিসতাকে বিয়ে করছে ভাবতে সাফোয়ান চমকে ফারিসতার মুখের দিকে তাকালো।

কাল আদরিবার যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বলা কথাগুলো গভীর ভাবে দাগ কেটেছে সাফোয়ানের বুকে। মেয়েটা সবসময় সাদামাটা খুব নরম মনের অধিকারী তাই সবসময় আদরিবাকে ওর কাছে ভালো লাগতো বাট সেটা বোন হিসেবে। উজ্জ্বল ফর্সা মেয়েটা ফারিসতার চেয়ে কম সুন্দর হলেও ওই মায়াবী কান্নারত চোখজোড়া গভীর ভাবে সাফোয়ানের মনে দাগ কেটে জানান দিয়েছিলো কতটা ভালোবাসে ওকে। নরম হৃদয়ের অধিকারী মেয়েটার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার গভীরতা দেখে সাফোয়ান ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছিলো ওর কি করা উচিৎ সেটা ভেবে। মন বলছে তুইতো ফারিসতাকে ভালোবাসিস আর মস্তিষ্ক বলছে ওই নরম হৃদয়ের অধিকারী মেয়েটাকে এভাবে ভেঙে গুড়িয়ে দিস না মেয়েটা নিঃস্ব হয়ে যাবে। এ নিয়ে সাফোয়ান ঘোরের মাঝে আঁটকে পড়েছিলো কি করবে সেটা ভেবে। ফারিসতার সাথে কয়েক মাসের পরিচয় হলেও সাফোয়ান নিজের অজান্তেই ফারিসতাকে ভালোবেসে ফেলেছে। জীবনের প্রথম ভালোবাসাটা একটু বেশি গভীর হয় যেই ভালোবাসাটা পূর্ণতা না পেলেও হৃদয়ের এক কোনে প্রথম ভালোবাসাটা থেকে যায় এই। হুট করে সাফোয়ানের বুকের ভিতর চিনচিনিয়ে ব্যথা উঠতে লাগলো। তাজ যেহেতু একবার বলেছে ফারিসতাকে বিয়ে করবে তাহলে দুনিয়ার কারো সাধ্য নেই সেই বিয়ে আটকানোর। যাকে ভালোবেসেছে তাকে নিজের ভাইয়ের বউ রূপে দেখতে হবে ভাবতে সাফোয়ানের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। বুকের ভিতরে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে সাফোয়ানের চোখের সামনে ভেসে উঠলো আদরিবার ব্যথার্ত মুখশ্রী। ওর মতো কি ওই মেয়েটাও কাল এভাবে কষ্ট পেয়েছে? ভাবতে সাফোয়ান গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারলে এক পাক্ষিক ভালোবাসাটা আসলেই কতটা যন্ত্রণার সেখানে ওই মেয়েটা ওকে এক বছর যাবত এক পাক্ষিক ভালোবেসে এভাবে পুড়েছে।

সবার দৃষ্টি তাজ ফারিসতার হাতের দিকে দেখে ফারিসতা এবার অসহায় কণ্ঠে তাজকে বলে উঠলো, প্লিজ ছাড়ুন না হাতটা।

ফারিসতার এমন আকুতিতে তাজ বাঁকা হেসে হাত ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে থাকা সৌরভ চৌধুরী পাশে ধাপ করে বসে পড়লো। তাজ বসতে সৌরভ চৌধুরী চোখ ছোট ছোট করে বলল, ভাতিজা তো দেখছি পুরোই ফাস্ট।

ওফ কোর্স তাজ চৌধুরী অলওয়েস সব কিছুতেই ফার্স্ট ভাব নিয়ে বলল তাজ।

এদিকে ফারিসতা অস্বস্তিতে গাট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার এমন রিয়াকশন দেখে মেয়েটা কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না আর ওর মা এই বা এখানে কেনো? এমন হাজারো ভাবনার মাঝে উপস্থিত সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলো৷ সবার এমন হাসিতে ফারিসতা আরো অস্বস্তিতে পড়ে গেলো তখন তাহমিনা বেগম বসা থেকে উঠে ফারিসতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ফারিসতার থুতনিতে হাত রেখে বলল, লুকিয়ে চুকিয়ে প্রেম না করে আমাদের জানালে ওতো পারতি আমরা কি সিনেমার মতো ভিলেন নাকি যে তোদের মানবো না? তোকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন এই মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম এই সোনার টুকরো চাঁদকে আমার আরেকটা মেয়ে করে বাসায় তুলবো কিন্তু ভয় ছিলাম আমার ছেলেটা আদো বিয়ে করতে রাজি হবে কিনা কিন্তু এখন দেখছি সে আমাদের থেকেও এক ধাপ এগিয়ে আছে।

তাহমিনা বেগমের কথাগুলো কর্ণগোচর হতে ফারিসতার মাথা চক্কর কেটে উঠলো। কি বলছে কি উনি কিছুই যেনো ফারিসতার মাথায় ঢুকলো না। ফারিসতা বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো ম..মানে?

রুশা কাটা চামচের মাথায় একটা মিষ্টি এনে সেটা ফারিসতার মুখে পুরে দিয়ে বলল,

আর মানে মানে করা লাগবে হবু ভাবি। আমরা সবাই জেনে গিয়েছি তোমার আর ভাইয়ার রিলেশনের কথা। তাই আর দেরি কিসের আজকেই তোমায় আমাদের রাজা তাজ ভাইয়ের রানী করার ব্যবস্থা করে ফেলেছি।

রুশার কথায় ফারিসতার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। কিছুতো একটা মিস্টেক হয়েছে ভাবতেই ফারিসতা তাজের দিকে তাকাতে তাজের ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা বাঁকা হাসি দেখে বুঝতে বাকি রইলো না এসব কার কাজ। তাজের এমন কাজে ফারিসতা হোচট খেলো। ফারিসতা সবাইকে যেই বলতে যাবে এগুলো সব মিথ্যা তখন খেয়াল হলো ওর মুখ ভর্তি মিষ্টি যেটা রুশা মুখে পুরে দিয়েছিলো একটু আগে। ফারিসতার কাছে হুট করে মিষ্টিটা নিম পাতার মতো তেতো লাগল সেই সাথে জ্বলে উঠলে পুরো শরীর তাজের কাজে। ফারিসতা তড়িঘড়ি করে না চাবিয়ে মিষ্টিটা গিলে নিলো কিন্তু এতে বাজলো আরেক বিপত্তি। আস্ত মিষ্টি গলায় আঁটকে কাশি উঠে গেলো।

তাহমিনা বেগম তড়িঘড়ি করে টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে ফারিসতার কাছে এগিয়ে দিতে ফারিসতা ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বড় বড় করে বার কয়েক দম নিয়ে বলতে লাগলো আমার কথা…..

পথিমধ্যে থামিয়ে দিয়ে তাহমিনা বেগম ফারিসতাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল, কোনো কথা শুনা লাগবে না কাশতে কাশতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছো এবার চুপচাপ বসো এ বলে রেহেনা বেগমের থেকে একটা বক্স নিয়ে সেটার ভিতর থেকে আঙটি বের করে ফারিসতার অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দিলো।

তাহমিনা বেগমের কাজে ফারিসতা চমকে বলে উঠলো এ..এ কি করছেন আন্টি।

আমার একমাত্র ছেলের বউকে স্বর্ণালঙ্কার পড়াবো না তা কি হয় নাকি এ বলে ফারিসতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গলায় চেইন পড়িয়ে দিলো।

সবার এমন কাজে ফারিসতার এবার জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা। ফারিসতা এবার হতাশ হয়ে মায়ের দিকে তাকাতে ফারজানা বেগমকেও সবার মতো স্বাভাবিক দেখে মাথা চক্কর কেটে উঠলো।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং…🥰