হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-৩৫+৩৬

0
122

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ৩৫

তপ্ত দুপুরে সবাই নিজেদের খুদা নিবারন করার জন্য দুপুরের খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত। কর্মরত সকল পুলিশ অফিসাররা এক সাথে লান্স শেষ করতে ঘুমে সবার চোখ লেগে আসলো। দুপুরে এই একটাই সমস্যা খাওয়ার পর দুই চোখে ঘুম ঢোলে পড়ে কিন্তু ডিউটির চাপে দুপুরের ঘুমটা যেনো সবার হারাম হয়ে গিয়েছে কিন্তু আজ যেনো একটু বেশি এই ঘুম পাচ্ছে সবার। যতই ঘুম পাক ঘুমানো চলবে না তাই সবাই সবার ডিউটিতে লেগে পড়লো। অফিসার নাজিম যার আন্ডারে আপাতত নাহির খান আছে। অন্য সব ক্রিমিনালদের এক সাথে রাখলেও নাহির খানকে আলাদা রাখা হয়েছে স্পেশাল ভাবে আদর যত্ন করার জন্য। এই স্পেশাল আদর যত্নে নাহির খানের অবস্থা অলরেডি নিঃশ্বাস টেনে উঠানো ও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নাহির খানকে বন্দী করে রাখা জেলের সামনে ধুপ করে চেয়ারের উপরে বসে পড়লো অফিসার নাজিম। এতো ঘুম পাচ্ছে যে চোখ খুলে রাখা দায় হয়ে পড়েছে। তিনি চোখ আর খুলে রাখতে না পেরে টেবিলের উপরে মাথা দিয়ে ধীরে ধীরে ঘুমে ঢোলে পড়লো।

এক গ্লাস পানি আর শক্ত এক পিচ রুটি নিয়ে প্রবেশ করলো নাহির খানকে বন্দী করে রাখা কারাগারে সামনে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি যার পড়নে পুলিশের পোশাক কিন্তু অবাক করার বিষয় তার মুখ মাফলার দিয়ে পেচানো। সেই ব্যক্তি অফিসার নাজিমের কাছে যেয়ে তার পকেট থেকে জেলের চাবিটা নিয়ে তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে নাহির খান হুমড়ি খেয়ে ব্যক্তিটির হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এক টানে পুরো পানি শেষ করে দিলো। তাজদের হাতে ধরা পড়ার পর থেকে এখনো এক ঢোক পানি পড়েনি পেটে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে তার উপরে একের পর এক টর্চার সবাই করে চলেছে যার জন্য নিঃশ্বাস নেওয়া দায় হয়ে পড়েছে। নাহির খান খুদার জ্বালায় সেই শক্ত রুটিও ওই ব্যক্তির থেকে কেড়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলো। পুরো রুটিটা শেষ করে একটু খুদা নিবারন হতে শরীরে একটু শক্তি খুঁজে পেলো। শরীরে একটু শক্তি পেয়ে তিনি চোখ তুলে তাকালো কে তাকে খাবার দিলো দেখার জন্য। উপরে চোখ তুলে তাকাতে অজ্ঞাত ব্যক্তির চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলো না কিন্তু ওই চোখ দুটো দেখার সাথে সাথে নাহির খান ক্ষিপ্ত হয়ে লোকটার কলার টেনে ধরে বলে উঠলো, আমি এখানে বন্দী হয়ে একের পর এক টর্চার সহ্য করে যাচ্ছি আর তুই নাকে তেল দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস? এখনো সময় আছে আমাকে এখান থেকে বের করার ব্যবস্থা কর আর নাহলে আমি ফাঁস করে দিবো এই কালোবাজারি কাজের বড় কালপ্রিট আমি না বরং তুই।

অজ্ঞাত ব্যক্তি কলার থেকে নাহির খানের হাত ছুটিয়ে আরো হিংস্র হয়ে বলে উঠলো, এতো সেইফটির পরও কিভাবে ধরা পেড়েছিস?

ওই চতুর চাচা ভাতিজা গোপনে এভাবে আমার পিছু লেগে সবকিছু জেনে যাবে সেটা কারো ধারণাতেই ছিলো না। এই ঘটনা উন্মোচনের মূলে রয়েছে ম* তাজ চৌধুরী। আর ওঁদের সাহায্য করেছে কু* জেরিনা। ওঁকে আমার আগেই মে*রে ফেলা উচিৎ ছিলো। ম* টাকে বাচিয়ে রাখার জন্য আজ আমার এই পরিণতি।

সবার দোষ তুলে ধরছিস তোর ভাইরটা লুকাচ্ছিস কেনো? ওই শু* আমার থেকে অনুমতি না নিয়ে কোন সাহসে তাজের উপরে অ্যাটাক করেছে? ওর এমপির পথ লাগবে সেই জন্য সৌরভ চৌধুরীকে হুমকির উপরে রাখছিলাম। এভাবে হুমকির উপরে রাখলে এমনি দুইদিন পর এমপির পথ ছেড়ে দিয়ে লেজ গুটিয়ে পালাতো। সেই কয়দিনের ধৈর্য ম* হয়নি। খা* ও তাজ চৌধুরীর উপরে অ্যাটাক করবে আর তাজ চৌধুরী হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? এই টুকু কমনসেন্স নেই? আছে কোন ব*? এই সব কিছুর জন্য একমাত্র তোর ভাই দায়ী। ধরা পড়েছিস এখন এর সাজা ভোগ কর মা*।

সাজা ভোগ করবো মানে? তার মানে তুই এখানে আমাদের উদ্ধার করতে আসিসনি? তুই কি ভেবেছিস? মরলে একা মরবো না সাথে তোকে নিয়েই মরবো। আমি সব বলে দিবো পুলিশ অফিসারকে।

তুই আমাকে হুমকি দিচ্ছিস?

হ্যা দিচ্ছি কি করবি তুই? আমাকে এখান থেকে মুক্তি না করলে সব ফাস করে দিবো যে আমিতো শুধু তোর খেলার একটা গুটি। আসল কালপ্রিট তো তুই।

আমি এখানে এত রিস্ক নিয়ে এসেছি কি তোকে চেহারা দেখাতে? তোকে মুক্তি করার জন্য আমি এখানে এসেছি।

অজ্ঞাত ব্যক্তির কথায় নাহির খানের মুখের ভাব পাল্টে গিয়ে খুশিতে জ্বলজ্বল করে বলে উঠলো সত্যি বলছিস?

অজ্ঞাত ব্যক্তি বাঁকা হেঁসে বলল, একদম সত্যি।

***
ফারজানা বেগম ব্যস্ত হাতে তাজ, ফারিসতা, আরফি আর রাশফিয়াকে খাবার বেরে দিচ্ছে তা দেখে তাজ তাকে থামিয়ে দিয়ে এত ব্যস্ত হতে না বলে ওদের সাথে খেতে বসতে বলল। ফাজানা বেগম না বলতে তাজ জোর করে তাকেও ওদের সাথে খেতে বসালো। তাজের এমন আচরণের খুব সন্তষ্ট হলেন ফারজানা বেগম। নিশ্চিন্ত হলেন তার অবুঝ সহজ সরল মেয়েটাকে ভুল কারো হাতে উনি তুলে দেয়নি। সে না থাকলে এই ছেলেটা যে তার কলিজাটাকে সবসময় আগলে রাখবে ভাবতে শান্তির নিঃশ্বাস নিলো।

সবাই যখন খাচ্ছিলো তখন রুম থেকে ভেসে আসলো তাজের ফোনের রিংটোন। তাজের ফোন এসেছে বুঝতে পেরে ফারিসতা সবার দিকে একবার অবলোকন করে টেবিল থেকে উঠতে উদ্যত হতে তাজ ফারিসতার হাত ধরে আটকে দিয়ে বলল, যেতে হবে না খাওয়া শেষ করো।

ফারিসতা ছোট করে বলল, প্রবলেম নেই এনে দেই আমি।

যেটা বলেছি সেটা করো। বাজুক ফোন…

তাজের কথায় ফারিসতা আর কিছু বলল না। সবাই আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিতে বিকট শব্দে বেজে উঠলো আরফির ফোন। নীরবতা মাঝে হঠাৎ এভাবে ফোন বেজে উঠতে সবাই চমকে আরফির দিকে তাকাতে আরফি হাসার চেষ্টা করে পকেট থেকে ফোন বের করে এই টাইমে সাব্বিরের ফোন দেখে মুখ থেকে গা*লি বেরিয়ে আসতে যেয়েও সবার কথা খেয়াল হতে গা*লি গিলে নিয়ে ফোন কেটে দিয়ে বলল, সরি ডিস্টার্ব এর জন্য। এই সাব্বিরটার ও কমন্সেস নেই সময় নেই ঘোমায় নেই যখন তখন ফোন করবে এ বলে খাবার মুখে নিতে যাবে তার আগে আবার ফোন বেজে উঠতে আরফি এবার চোখমুখ কুঁচকে ফোন কাটতে নিবে তার আগে তাজ বলল, কোনো প্রয়োজন হতে পারে রিসিভ করে দেখ কি বলে।

আজাইরা কথা ছাড়া আর কি বলবে? এ বলে আরফি ফোন রিসিভ করে কানে তুলতে ফোনের ওপাশের কথা শুনে হোঁচট খেলো। স্তব্ধ হলো, থমকালো।

আরফির রিয়াকশন দেখে তাজ ভ্রু গুটিয়ে প্রশ্ন করলো হোয়াট হ্যাপেন্ড?

তাজের প্রশ্ন তাৎক্ষণিক প্রত্যুত্তর করতে পারলো না আরফি। কিছুক্ষণ পর কান থেকে ধীরে ফোনটা নামিয়ে থমকানো শুরে জবাব দিলো, নাহির খান খু*ন হয়েছে।

আরফির কথা কানে যেতে তাজ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে চ্যাচিয়ে বলে উঠলো হোয়াট?

আরফিও বসা থেকে উঠে তাড়া দিয়ে বলল, থানায় যেতে হবে তারপর সবটা জানা যাবে চল।

তাজ হাত ধুয়ে দ্রুতার সাথে ফারিসতার উদ্দেশ্য বলল বাসা থেকে যেনো এক পাও বের না হও আমি না আসা পর্যন্ত এ বলে ফারজানা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল, আন্টি ওদের দিকে খেয়াল রাখবেন যেনো বাসা থেকে বের না হয়। এই বাসায় সব জায়গায় সেইফটি আছে তবুও যেনো বের না হয়। আমি গার্ড আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি সাবধানে থেকে ওদের সামলে রাখুন আমরা না আসা পর্যন্ত এ বলে তাজ আরফিরকে নিয়ে তড়িঘড়ি করে করে বের হতে গিয়েও ফোনের কথা মনে হতে ফারিসতার উদ্দেশ্যে বলল, ফোনটা নিয়ে আসো।

নাহির খান খু*ন হয়েছে শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ফারিসতা। তাজের কথায় হুঁশ আসতে ফারিসতা এক ঘোরের মাঝে উঠে গিয়ে তাজের ফোন এনে তাজের হাতে দিতে তাজ হুশিয়ারি দিয়ে বলল, আন্টির কথা একদম অবাধ্য হবে না এ বলে বড় বড় কদম ফেলে চলে গেলো।

থানায় এসে স্তব্ধ হয়ে গেলো তাজ আর আরফি। পুলিশ অফিসাররা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক এক জায়গায় পড়ে আছে। তাজ সবার পার্লস চেক করে দেখলো সবার পার্লস ঠিক ভাবে চলছে। কিন্তু কারো হুঁশ নেই সবাই গভীর নিদ্রায় ঢলে আছে। তাজ সবাইকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে নাহির খানকে রাখা জেলখানায় যেতে চোখে পড়লো রক্তাক্ত নাহির খানের নিথর দেহের দিকে। যেই দেহের পাশে দাঁড়িয়ে আছে কিছু অফিসার তাদের মাঝে সৌরভ চৌধুরী ও রয়েছে। তাজরা সেখানে প্রবেশ করতে সৌরভ চৌধুরী এগিয়ে আসতে তাজ ওর দৃষ্টি নাহির খানের দিকেই সীমাবদ্ধ রেখে চোয়াল শক্ত করে বলল, কে করেছে এটা জানতে পেরেছো?

সৌরভ চৌধুরী দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে না বলতে তাজ হুঙ্কার ছেড়ে পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, কি করে এমনটা হলো? এই জন্য আপনাদের এখানে এদের পাঠিয়েছি?

তাজের হুঙ্কার কলিজা শুদ্ধ উড়ে গেলো অফিসারদের। তারা নিজেরাও দুঃস্বপ্নে ভাবেনি এমন কিছু ঘটবে। খাবারের সাথে কে এভাবে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে সবাইকে এভাবে অচেতন করে নাহির খানকে খু*ন করলো কেউ বুঝতে সক্ষম হলো না।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কোথায়?

কথাটা বলতে সাব্বির তাজের হাতে একটা ল্যাপটপ বাড়িয়ে দিতে তাজ ল্যাপটপ অন করে সব পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। তাজের সাথে আরফিও সব পর্যবেক্ষণ করে তব্দা খেয়ে গেলো। কে এই সিরিসা কিলার? যে ক্যামেরার সামনে বসে খু*ন করেছে কিন্তু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ডিলেট করার কোনো প্রবনতাই ছিলো না। খু*নিকে চেনার ও কোনো উপায় নেই। পড়নে পুলিশের পোশাক, পুরো মুখ মাফলার দিয়ে প্যাচানো যে কোনো ভাবে বোঝায় উপায় নেই কে এই লোক। সম্পুর্ন ফুটেজ চেক করেও কোনো ক্লু পাওয়া গেলো না ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির। তাজ কয়েক বার ফুটেজ চেক করে ল্যাপটপ টা ছুঁড়ে মারলো দূরে। রাগে পুরো শরীর কেঁপে উঠলো যেনো পারলে এখানের সব কিছু ধ্বংস করে দেয়।

তাজের রক্তিম মুখশ্রী দেখে থরথরিয়ে কাঁপতে লাগলো অফিসাররা। এখন যে সবার উপরে দিয়ে সুনামি বয়ে যাবে ভাবতে এক এক জনের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাজ এদের কাউকে কিছু না বলে পাশের জেল খানায় প্রবেশ করে কোনো দিক না তাকিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো নাসির খানকে।

ভাইয়ের শোকে পাথর বনে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো নাসির খান। অবশ্য শোক বললে ভুল হবে সবেই ছিলো স্বার্থের জন্য। পুলিশ জেলে ঢুকালেও নাসির খানের ভরসা ছিলো তার ভাই কোনো না কোনো উপায়ে তাকে সহ এখান থেকে বের হবে কিন্তু ভাই খু*ন হয়েছে শোনার পর থেকে কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে কারণ এখন আর বাঁ*চানোর জন্য কেউ নেই। দু’দিন পর কোর্টে যখন ফাঁ*শি*র রায় দিবে সেই কথা ভাবতেই কলিজা শুদ্ধ উড়ে যাচ্ছে। নাসির খান যখন এসব ভাবনায় মত্ত তখন আচমকা কেউ এসে এভাবে এলোপাতাড়ি মারায় বুঝে ওঠার সমটুকু ও পেলো না কি হচ্ছে তার সাথে। এমনিতেই আগের ক্ষত গুলো এখনো শুকায়নি সেই ক্ষতর উপরে আবার আঘাত পেতে নাসির খানের চোখমুখ উল্টে গেলো।

আরফি ছুটে এসে তাজকে নাসির খানের থেকে টেনে ছুটিয়ে আনতে আনতে বলতে লাগলো মাথা ঠিক আছে কি করছিস? মরে যাবে আরেকটু হলে।

তাজ চেচিয়ে বলে উঠলো, ছাড় আমায়। এতবড় কলিজা এখনো ওরা আসল কালপ্রিটের নাম লুকিয়ে গিয়েছে। এখনো সময় আছে ওর মুখ থেকে বের কর আসল কালপ্রিট কে।

সৌরভ চৌধুরী আর আরফি মিলে তাজকে কোনো রকম সামলে নিলেও নাসির খানের মুখ থেকে বের করা গেলো না কোনো কথা। কথা বের হবেই বা কিভাবে? সে নিজেইতো জানেনা কে সেই ব্যক্তি।

#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

হ্যাপি রিডিং… 🥰

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ৩৬

সোশ্যাল মিডিয়া ফের তোলপার হয়ে গেলো নাহির খানের মৃত্যুর সংবাদ শুনে। টিভির প্রতিটি চ্যানেলে চ্যানেলে ভেসে উঠছে নাহির খানের রক্তাক্ত নিথর দেহ। দেশের সম্মানীও একজন ডক্টরের মৃত্যুতে জনগণ শোকাহত না বরং খুশি হয়েছে। ডক্টর রূপে এই জা* এর জন্য প্রাণ হারিয়েছে হাজারো মানুষ। এমনকি নবজাতক শিশুকেও ছাড় দেয়নি এই জা*

জনগণের মুখে হাসি ফোটার সাথে সাথে মিসেস জেরিনার ঠোঁটের কোনেও ফুটে উঠলো তৃপ্তির হাসি। ইনি এই হয়তো প্রথম নারী যে কিনা নিজের স্বামীর লা*স দেখে তৃপ্তির হাসি দিলো। আজ যেনো তার বুকের উপর থেকে বড় একটা পাথর সরে গেলো। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারলো। জীবনে এই একটাই চাওয়া ছিলো সেটা পূরণ হয়ে গিয়েছে ব্যাস এখন মরেও যেনো শান্তি পাবেন।

কিছুক্ষণ হলো সৌরভ চৌধুরী বাসার ফিরলেন। বাসায় ফিরে স্বামীর লা*স দেখে মিসেস জেরিনার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠতে দেখে সেদিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো। একটা মানুষ কতটা অত্যাচারের শিকার হলে স্বামীর লা*স দেখে হাসতে পারে ভাবতে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

****
রাত ১২ টায় তাজ বাসায় ফিরে কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে যেয়ে শুয়ে পড়লো।

তাজের কাজ নীরবে অবলোকন করে ফারিসতা ভয়ে ভয়ে আমতা আমতা করে তাজকে খেতে ডাকলে তাজ চোখের উপরে হাত রেখে জবাব দিলো খাবো না মাথা যন্ত্রণা করছে।

ফারিসতা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে জড়তায় ভুগতে লাগলো এখন ওর কি করা উচিৎ সেটা ভেবে। ফারিসতা অনেক ভেবে চিন্তে আস্তে-ধীরে তাজের মাথার কাছে বসে আকাশ সমান জড়তা নিয়ে তাজের চুলের ভাজে হাত রাখলো।

হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে তাজ চোখ থেকে হাত সরিয়ে চোখ তুলে তাকাতে ধক করে উঠলো ফারিসতার বক্ষ। ফারিসতা চটজলদি এলোমেলো ভাবে বলে উঠলো চ..চুল টেনে দেই ভালো লাগবে।

তাজ কিছুক্ষণ নীরবে ফারিসতাকে অবলোকন করে ভ্রু গুটিয়ে বলল হঠাৎ এত মায়া?

ফারিসতা অপ্রস্তুত হলো কিন্তু তাজকে সেটা বুঝতে না দিয়ে ঝটপট বলল, আজব মায়ার কি হলো? সেদিন আমি অসুস্থ ছিলাম আপনি সেবা করেছিলেন আর আজ আপনি অসুস্থ তাই আমি সেবা করছি শোধবোধ আমি আবার কারো ঋণ রাখি না হুহ্।

তাই নাকি? বলে তাজ বাকা হেঁসে হুট করে ফারিসতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।

তাজের কাজে ফারিসতা চমকে বলে উঠলো ক..কি করছেন কি?

ঋণ নিয়েছিলে তা উশল করছি। সেদিনতো আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে। আমি নিতান্ত ভদ্র ছেলে তাই শুধু কোলে মাথা রেখেছি। এবার মাথা ম্যাসেজ করে দিবে সকাল পর্যন্ত তাহলেই ঋণ শোধ হবে।

ফারিসতা চোখ বড় বড় করে বলল, অসম্ভব মিথ্যা বলছেন আপনি সব। কোল থেকে মাথা সরান আর নাহলে চুল টেনে দিবো না।

তাজ এবার ফারিসতার কোমর আকরে ধরে বলল, যেই কয়টা কথা বেশি বলবে ঠিক ততটা ঘনিষ্ঠ হবো। সো কিপ ইউর মাউথ শাট এ্যান্ড গেট টু ওয়ার্ক।

তাজের কথায় ফারিসতা জমে বরফ হয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে তাজ বলে উঠলো, মুখ দিয়ে সাউন্ড বের করার আগে মনে রেখো প্রতিটা কথার বিনিময়ে ঘনিষ্ঠ হবো। এত ঘনিষ্ঠতায় পরে বেসামাল হয়ে কিছু করে বসলে আমার দোষ দিতে পারবে না বলে দিলাম।

তাজের এহেন কথায় ফারিসতার কান কোন দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো। মুখে কুলুপ এটে শক্ত হয়ে বসে রইলো। মনে মনে নিজেকে তিন চারটা গালিও দিলো দরদ দেখিয়ে উপকার করতে আসার জন্য। এখন উপকার করতে এসে দরজার চিপায় আঁটকে গেলো। তাজের গরম নিঃশ্বাস পেটে লাগতে শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যেতে লাগলো ফারিসতার। তার উপরে পুরুষালি হাতের স্পর্শে কোমর আকরে ধরায় ফারিসতার নিঃশ্বাস আঁটকে আসার উপক্রম।

নীরবতা পালন করা শেষ করে এবার ডিউটি স্টার্ট করুন ম্যাডাম আর নাহলে…

থামুন অসভ্য লোক একটা কোনো রকম কথাটা বলে ফারিসতার কাঁপা কাঁপা হাতে তাজের সিল্কি চুলের ভাজে কোমল হাত রেখে মৃদু টেনে দিতে লাগলো। কোমল স্পর্শ মাথায় লাগতে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো তাজ। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো মৃদু হাসি। শক্ত হৃদয়টাও আজ কতটা কোমল হয়ে গিয়েছে এই মেয়েটার মায়ায় আঁটকে ভাবতে তাজ ফারিসতার কোমর আরো গভীর ভাবে আকরে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো। বুক জুড়ে ছেয়ে গেলো এক পশলা শান্তির মেলা। যেই শান্তিটা এর আগে কখনো উপভোগ করেনি। এভাবে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো।

ঘন্টাখানেক পার হয়ে গেলো একি ভাবে বসে ফারিসতা তাজের চুল টেনে দিচ্ছে। একি ভাবে বসে থাকায় পা অবশ হয়ে গিয়েছে। এখন একটু নড়াচড়ার প্রয়োজন কিন্তু তাজের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে ইচ্ছে হলো না নড়াচড়া করে লোকটার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিতে। হুট করে মানুষটার প্রতি এক অন্য রকম মায়া জন্মে গিয়েছে ফারিসতার ছোট্ট হৃদয়ে। এটাই বুঝি স্বামী স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কের মায়ার বাঁধন?

মাঝ রাতে তাজের ঘুম ছুটে গেলো। তাজ পিটপিট করে চোখ খুলতে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ফারিসতা এখনো একি ভাবে বসে ওর মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। ঘুমে মেয়েটা বার বার টক্কর দিচ্ছে। ওতো তখন মজার ছলে বলেছিলো সকাল পর্যন্ত চুল টেনে দিতে হবে আর এই মেয়ে সত্যি কিনা তা করছে। মেয়েটা ওর এতো বাধ্য হলো কবে? ওতো ভেবেছিলো ও ঘুমিয়ে পড়লেই ফারিসতা সরে যাবে। কিন্তু এই মেয়ে এখনো বসে আছে ভাবতে তাজ চট করে ফারিসতার কোল থেকে উঠে বসতে চমকে উঠলো ফারিসতা। এতক্ষণ ঘুমে চোখ ভেঙে আসছিলো তাই তাজ কখন জেগে গিছে টের ও পায়নি।

এখনো ঘুমাও নি কেনো?

সদ্য ঘুম ভাঙা তাজের ঘুম জড়ানো কণ্ঠস্বর শুনে ফারিসতার ঘুম উড়ে গেলো। পুরুষালী ঘুম জড়ানো কণ্ঠস্বর শুনতে ফারিসতার বুকের ভিতর টিপটিপিয়ে উঠলো। তাজের ঘুম জড়ানো মোটা স্বর হুট করে হৃদয় ছুয়ে গেলো। কি মধুর এই স্বর ভাবতে ফারিসতার ইচ্ছে জাগলো তাজের সদ্য ঘুম ভাঙা মোটা কণ্ঠস্বরটা আরেকটু শোনার। ফারিসতা একটু নড়েচড়ে বসে বলল,

আপনি এইতো বলেছেন ঋণ শোধ করতে হলে সকাল পর্যন্ত মাথা ম্যাসেজ করতে। আমি কারো ঋণ রাখি না তাই ঋণ শোধ করছিলাম।

তাজ ফারিসতার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, বাকি ঋণ জমা রইলো পরে শোধ করে নিবো এবার ঘুমাও রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে।

আমি কারো ঋণ বা….

পথিমধ্যে ফারিসতাকে থামিয়ে দিয়ে তাজ ফারিসতার উদ্দেশ্যে বলল, চুপ। বলেছিলিনা আমার কথার পৃষ্ঠে যেই কয়টা বাড়তি কথা বলবে তার বিনিময়ে ঠিক ততটা ঘ…..

তাজের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ফারিসতা চোখমুখ কুঁচকে বলে উঠলো, জানি আমি বার বার একি কথা বলা লাগবে না ঠোঁট কাটা অসভ্য লোক একটা। কথাগুলো বলে ফারিসতা ধুপ করে শুয়ে পড়ে তাজের অপজিট দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। মূলত তাজের ঠোঁট কাটা কথায় লজ্জা লুকানোর জন্য রাগের অভিনয় করে তাজকে এরিয়ে যাওয়ার ধান্দা করে শুয়ে পড়া।

ফারিসতা শুতে তাজ ও আর কোনো বাক্য বিনয় না করে ফারিসতার পাশে শুতে ঝংকার দিয়ে উঠলো ফারিসতার সর্বাঙ্গ। কিছুদিন আগেও লোকটার সাথে ওর সম্পর্ক ছিলো সাপে আর নেউলের আর আজ একি বেডে পাশাপাশি শোয়া ভাবতে লজ্জায় জড়তায় চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিলো ফারিসতা। এভাবে একটা সময় যখন চোখে ঘুম ঢলে আসছিলো তখন অনুভব করলো একটা উষ্ণ হাত তখনের মতো আবারো কোমর পেচিয়ে ধরেছে।

উষ্ণ হাতের স্পর্শে ফারিসতার ঘুম আবারো ছুটে গেলো। ফারিসতা কম্পিত শরীরে চমকে তাজের দিকে তাকাতে তাজের মুখোমুখি যেয়ে ঠেকলো ওর মুখ। ড্রিম লাইটের হালকা নীল আলোয় তাজের ঘোলাটে দৃষ্টি চোখে পড়তে ছ্যাত করে উঠলো বক্ষস্থল। ফারিসতা চট করে আবার ঘুরে যেতে নিবে তার আগে তাজ ফারিসতা আঁটকে দিয়ে ঘোর লাগা কণ্ঠে ডাকলো, ফারিসতা….

তাজের এমন ডাকে ফারিসতার অন্তরাত্মা সহ সব কেঁপে উঠল। ফারিসতা কোনো রকম কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে সাড়া দিলো হ..হুম।

তাজ ফের একি ভাবে বলল, আরেকটু কাছে গেলে রাগ করবে? কথাটা বলেও ফারিসতার প্রত্যুত্তর এর অপেক্ষা না করে তাজ ফারিসতাকে মৃদু টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।আস্তে আস্তে তাজের পুরুষালি উষ্ণ ঠোঁট জোড়া ক্রমশ এগিয়ে যেতে লাগলো ফারিসতার পাতল গোলাপি ওষ্ঠের দিকে।

তাজের এই ঘনিষ্ঠতায় ফারিসতা নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলো। তাজের অধর যখন ওর অধর ছুঁই ছুঁই তখন ফারিসতা কম্পিত স্বরে বলে বলল আ..আমার এ..একটু সময়ের প..প্রয়োজন।

পথিমধ্যে বাঁধা পেয়ে তাজ ফিসফিস করে বলল, আম সরি জান এ বলে ডুব দিলো কোমল গোলাপি অধরের মাঝে। গভীর থেকেও গভীর হতে লাগলো সেই স্পর্শ। পুরুষালি এমন স্পর্শে ফারিসতার শীর্ণ দেহটি ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠল। যেই কম্পনে তাজ বেসামাল হয়ে গেলেও নিজেকে এইটুকুতেই সামলে নিলো। অনেকটা সময় পর তাজ ফারিসতাকে ছেড়ে দিয়ে তাকালো ফারিসতার চোখমুখ খিঁচে থাকা কম্পিত লজ্জায় রক্তিম মুখশ্রীর দিকে। তাজ কিছুক্ষণ নীরবে ফারিসতাকে অবলোকন করে আলতো করে ফারিসতার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, জাস্ট এইটুকুই। এগেইন সরি এইটুকু না করলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে অন্য কিছু করে বসতাম। আমি জানি তোমার সময় প্রয়োজন। আমি তোমায় সময় দিতে চাই। যেদিন তুমি সম্পূর্ণরূপে আমার হতে প্রস্তুত হবে আমি সেদিন এই তোমাকে সম্পূর্ণরূপে নিজের করে নিবো এর আগে না। আমি চাই না জোর করে তুমি আমায় সম্মতি দেও। আমি চাই ভালোবেসে তুমি আমায় সম্মতি দেও।

তাজের কথা কর্ণগোচর হতে কি হলো ফারিসতা জানে না কিন্তু হুট করে চোখ জোড়া ভিজে আসতে চাইলো। এতক্ষণ ভয়ে গলা শুকিয়ে গিয়েছিলো এই বুঝি তাজ স্বামীর অধিকার ওর উপরে ফলাবে। যত যাই হোক বিয়েটা যেভাবেই হোক বিয়েটা ও মেনে নিয়েছে। এখন সব কিছু ওর স্বাভাবিক ভাবে নিতে একটু সময়ের প্রয়োজন। তাজকি ওকে সেই সময় টুকু দিবে না ভাবতে ভয়ে জড়সড় হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু তাজ যে ওকে ওর চেয়েও বেশি বোঝে সেটা প্রায় ভুলতে বসেছিলো। ফারিসতা সব ভুলে হুট করে নিজ থেকে তাজকে ঝাপটে ধরে তাজের বুকে মুখ গুজলো। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোটা পানি। আজ খুব করে মনে হচ্ছে জীবন সঙ্গী হিসেবে তাজকে পেয়েছে এটা যেনো ওর জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।

ফারিসতার কাজে মৃদু হেসে তাজ ফারিসতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, এবার কিন্তু তুমি নিজ থেকে কাছে এসেছো আমি কিন্তু আনিনি।

তাজের কথায় ফারিসতার হুঁশ আসতে সরে যেতে নিলে তাজ ফারিসতাকে দুই বাহুর মাঝে আলতো করে আলিঙ্গন করে নিয়ে বলল, এভাবে থাকো।

ফারিসতা নড়েচড়ে উঠে কিছু বলতে যাবে তার আগে তাজ বলল, চুপ কোনো কথা না রাত অনেক হয়েছে চুপচাপ ঘুমাবে এখন।

ফারিসতা আর কথা বাড়ালো না। কেটে গেলো সকল জড়তা। মন জুড়ে ছেয়ে গেলো একরাশ ভালো লাগা। এখানেই হয়তো প্রথম সৃষ্টি হতে লাগলো পবিত্র এক ভালোবাসা। ফারিসতা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চুপটি করে তাজের বুকের মাঝে বিড়াল ছানার ন্যায় ঘুমিয়ে পড়লো।

#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

হ্যাপি রিডিং…