#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ৩৯
বাসায় যাওয়ার সময় তাজের সাথে হাট্টা হাট্টি লড়াই লাগলো ফারিসতার। ফারিসতা খুব ভালো করেই জানে সেদিন ত্যাড়ামো করার জন্য তাজ ওঁকে শাড়ি পড়িয়ে রাখবে তাই ও আগে ভাগে ওর থ্রিপিস ব্যাগে ভরতে চাইলে তাজ কিছুতেই অন্য জামা কাপড় নিতে দিবে না কিন্তু ফারিসতা নিয়ে ছাড়বেই শেষ তাজ দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
তোমার জামাইর টাকার অভাব পড়েছে যে মায়ের বাড়ি থেকে জামাকাপড় নিবে? তোমার জামাই একজন ডক্টর তার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে বউয়ের ভরনপোষণের দায়িত্ব নেওয়ায়।
ফারিসতা মুখ ভেঙচিয়ে বলল, ডক্টর না কসাই? এত টাকা পয়সা আছে বলেইতো শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু কিনে দিতে পারেন নাই।
এটা তোমার ত্যাড়ামির শাস্তি। কয়দিন শাড়ি পড়লে ঘাড়ের ব্যাকা রগগুলো সব এমনি সোজা হয়ে যাবে তখন কত ড্রেস তুমি পড়তে পারো আমি দেখবো।
পড়বো না আমি শাড়ি।
আচ্ছা পড়া লাগবে না আমার লুঙ্গি আর গেঞ্জি পড়ো।
দরকার হলে তাই পড়বো তবুও শাড়ি পড়বো না।
তাজের সাথে এক ধাপ ঝগড়া করেও তাজের সাথে পেড়ে উঠলো না ফারিসতা৷ শেষে পর্যন্ত কোনো ড্রেস নিতে পারলো না শাড়ি ছাড়া। এই গরমের ভিতরেও খাটাশ লোক ওকে শাড়ি পড়িয়ে রাখবে ভাবতে ফারিসতা মনে মনে তাজের গোষ্ঠী শুদ্ধ উদ্ধার করে ফেললো।
তালুকদার বাড়ির সবাই সহ ফারিসতারা চৌধুরী নীড়ে প্রবেশ করতেই পুরো বাড়ি জুড়ে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠলো। তাহমিনা আর রেহেনা বেগম সবাইকে আপ্যায়ান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ফারিসতা তিফাজ চৌধুরীর সাথে দেখা করে এসে কিচেনে চলে গেলো রান্নার কাজে সাহায্য করতে। যদিও তাহমিনা বেগম ফারিসতাকে দিয়ে কিছু করাতে নারাজ কিন্তু ফারিসতাও নাছোড়বান্দা। এটা এখন থেকে ওর ও সংসার। সারাজীবন পায়ের উপরে পা তুলে খাওয়ার ইচ্ছে ওর কোনো কালেই ছিলো না। যদিও ফারজানা বেগমের কাছে থাকতে কখনো সেভাবে কাজ করা হয়নি কিন্তু এখন ওর নিজের সংসার হয়েছে। ও কজে হেল্প করবে, একটু একটু করে সবকিছু শিখে নিবে। পাক্কা গিন্নি হয়েই জীবন পার করবে। একটা সময় সংসারের হাল ধরবে। সবার মুখে হাসি ফোটাবে আরে কত কি ইচ্ছে বুনেছে মনে মনে।
তাহমিনা বেগম মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকালো ফারিসতার দিকে। ছেলের বউ হিসেবে যে পাক্কা হিরের টুকরো পেয়েছে ভাবতে আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করলো।
সবার সাথে হাতে হাতে কাজে সাহায্য করতে করতে মিসেস জেরিনা তাহমিনা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল, আপা একটা কথা বলার ছিলো।
হ্যা বলুন না।
মিসেস জেরিনা কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলল,
অনেক দিন হলো তো আপনাদের সাথে থাকলাম। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। এবার আমার যাওয়া উচিৎ।
মিসেস জেরিনার কথায় তাহমিনা বেগম কোমরে হাত দিয়ে বলল, আপনাকে কত বার বলেছি যাওয়ার নাম মুখে নিবেন না? সামনে মেয়ের বিয়ে আর আপনি বলছেন চলে যাবেন? মেয়ের বিয়েসাদী শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাওয়া যাওয়ি চলবে না। এখন আর কোনো কথা না। সকাল থেকে অনেক কাজ করেছেন এবার সোজা উপরে যেয়ে রেস্ট করবেন আপনার শরীর এখনো দুর্বল এ বলে মিসেস জেরিনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রান্না ঘর থেকে ঠেলে ঠুলে পাঠিয়ে দিলো।
মিসেস জেরিনা যেতে ফারিসতা শসা কাটতে কাটতে তাহমিনা বেগমের উদ্দেশ্য বলল, আন্টি আমিও একটা কথা বলি।
তাহমিনা বেগম ফারিসতার দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যা বাবাকে ঠিকি বাবা ডাকতে পেরেছিস আমিতো পর এই জন্য আন্টি ডাকছিস। তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই তুই যা তোর বাবার কাছেই।
তাহমিনা বেগমের কথা বলার ধরনে ফারিসতা হেঁসে দিলো। কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বলল, আচ্ছা সরি আর আন্টি ডাকবো না। আম্মাজান একটা কথা আছে বলবো?
ফারিসতার ডাকে তাহমিনা বেগম ও হেঁসে দিয়ে বলল, বলেন আম্মাজান।
আচ্ছা যদি জেরিনা আন্টিকে পার্মানেন্টলি আমাদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে ফেলি তাহলে কেমন হয়?
আমিতো চাই এই জেরিনা আমাদের সাথে থাকুক। জেরিনা ভালোবাসার কাঙ্গাল। এই কয়টাদিন আমাদের মাঝে থেকে তার চোখে খুশির ঝলক দেখেছি। মনে হচ্ছিলো মৃত প্রায় মানুষটা আবার জীবন্ত হতে চলেছে কিন্তু ওনি প্রখর ব্যাক্তিক্তের অধিকারী একজন মানুষ। এভাবে কখনো থাকবেন না এখানে। এতদিন তো জোর করে রেখেছি কিন্তু রুশার বিয়ের পর মনে হয়না জোর করেও কোনো কাজ হবে।
পার্মানেন্ট থাকার ব্যবস্থা করলে যাওয়ার আর কোনো চান্স নেই। জেরিনা আন্টিকে ছোট চাচ্চুর সাথে বিয়ে দিলে কেমন হয়?
ফারিসতার কথায় সায় দিয়ে রেহেনা বেগম ও বলে উঠলো, এই কথাটা আমিও বেশ কয়েকবার ভেবেছিলাম কিন্তু সাহস হয়ে ওঠেনি কাউকে বলার। ফারিসতা আমার মনের কথাটা তুমি বলে দিলে।
তাহমিনা বেগম কিছুক্ষণ ভেবে বলল, সবি বুঝলাম কিন্তু সৌরভ কি বিয়েতে রাজি হবে? ওতো বিয়ের কথা শুনতেই পারে না। তার চেয়েও বড় কথা জেরিনা রাজি হবে কিনা।
রেহেনা বেগম বলল, জেরিনা আপার উপরে সৌরভ ভাইকে বেশ নরম এই দেখেছি৷ আমার মনে হয় সৌরভ ভাইকে রাজি করানো যাবে।
ফারিসতা বলল, তাহলেতো আর কোনো সমস্যা এই রইলো না। জেরিনা আন্টি ভালোবাসার কাঙ্গাল। আমাদের সবার ভালোবাসা পেয়েছে বলেই এতদিন এখানে আছে। আমরা সবাই মিলে কিছুদিন বুঝিয়ে বললে রাজি করাতে পারবো। তাহলে রুশা আপুর বিয়ের সাথে ছোট চাচ্চু বিয়েটাও করিয়ে দিলে খুব ভালো হয়।
আগে তোর ছোট চাচ্চুকে রাজি করা। আমি তোর বাবার সাথে কথা বলে দেখবোনে।
মায়ের কাছে কিছু প্রয়োজনের তাজ রান্না ঘরের কাছে আসতে দৃষ্টি থমকে গেলো ফারিসতাতে। শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে মা আর চাচিকে কাজে সাহায্য করছে সাথে গল্প গুজব করছে। এই মুহূর্তে ফারিসতাকে পাক্কা গিন্নির চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না৷ মেয়েটা এত অল্প সময়ে সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিয়েছে ভাবতে তাজের ঠোঁটের কোনো ফুটে উঠলো সুপ্ত হাসির রেখা। এই মা চাচিদের সাথে কাজের ফাঁকে গভীর পরামর্শে ব্যস্ত যেনো আরো কত যুগ আগে থেকে এরা একে অপরের সাথে পরিচিত। ফারিসতার প্রতিটি কাজ প্রতিটি মুহূর্ত তাজের হৃদয় ছুঁয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা স্নিগ্ধ, কোমল, নিস্পাপ, নিরহংকারী। এমন একটা মেয়ের পক্ষে সত্যি সম্ভব সবচেয়ে কঠিনতম পুরুষটার ও মন জয় করে নেওয়ার। ঠিক যেভাবে ওর মনটা জয় করে ফেলেছে চোখের পলকে। চোখের পলকের মাঝে বদলে দিলো তাজ চৌধুরীকে।
*****
পরিবার পরিজন সবার ভালোবাসা, হাসিখুশি খুনসুটির মাঝে কেটে গেলো একটা সপ্তাহ। আজ রুশার গায়ে হলুদ। চৌধুরী নীড়ে আজ সবাই হলুজ সাজে সজ্জিত
হলো। মেয়েরা হলুদ শাড়ি, ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি।
ফারিসতা, রাশফিয়া, আদরিবাসহ আরো কিছু কাজিন মিলে রুশাকে নিয়ে এসে স্টেজে বসিয়ে দিলো। বাসার সামনে খোলা জায়গায় বিশাল করে স্টেজ সাজানো হলো। স্টেজের সামনে পেতে রাখা চেয়ারে বসে আছে মুরুব্বীরা। এছাড়া সবাই হৈ-হুল্লোড় নাচ গানে ব্যস্ত। মুরুব্বি থেকে শুরু করে একে একে সবাই রুশাকে হলুদ ছোঁয়াতে লাগলো। হাসি আনন্দের মাঝে রুশাকে হলুদ ছোঁয়ানো শেষ হলে শুরু হয়ে গেলে একজন আরেকজনকে হলুদ মেখে ভূত বানানো। হলুদ মাখামাখির এক পর্যায়ে আদরিবার চোখে হলুদ লেগে যাওয়ায় মেয়েটা চোখ কচলাতে কচলাতে ডাইনিং রুমে যেয়ে বেসিং থেকে পানি দিয়ে পুরো মুখ ধুয়ে নিতে চোখের জ্বালা কমলো। চোখ জ্বলা কমতে আদরিবা শাড়ির আচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে যেতে উদ্যত হতে আচমকা সামনে এসে দাঁড়ালো সাফোয়ান। আদরিবা সাফোয়ানকে একবার অবলোকন করে তপ্ত শ্বাস ফেলে সাফোয়ানকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিবে তার আগে সাফোয়ান আদরিবার হাত ধরে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,
আমাকে ইগনোর করছিস কেনো?
আদরিবার চারেদিকে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে ছোট করে বলল, কোথায় ইগনোর করলাম?
একদম নাটক করবি না। এখানে আসার পর থেকে প্রতিদিন আমাকে এড়িয়ে চলেছিস। কি সমস্যা? আগে পকপক করতে করতে পারলে আমার মাথায় উঠে নাচতি আর এখন পালাচ্ছিস কেনো?
এমনি ভালো লাগছে না হাত ছাড়ো।
সাফোয়ান এবার রেগেমেগে আদরিবার হাত আরো জোরে চেপে ধরে মৃদু চ্যাচিয়ে বলল, আগে তো এই হাতটা ধরার জন্য কত বায়না খুজতি আজ কেনো ভালো লাগছে না? নাকি নতুন কারো হাত ধরার জন্য কাউকে পেয়ে গিয়েছিস?
সবসময় শান্তশিষ্ট থাকা ছেলেটাকে আজ হুট করে এমন রেগে যেতে দেখে আকাশ থেকে পড়লো আদরিবা সাথে রাগ ও লাগলো সাফোয়ানের কথায়। আদরিবার দাঁত কটমট করে বলে উঠলো,
হ্যা নতুন কাউকে পেয়েছি তাতে তোমার কি? আগে হাত ধরার বায়না খুঁজতাম, তুৃমি সেই হাত ধরার অধিকার দেওনি তাই নতুন কাউকে খুঁজে নিয়েছি কোনো সমস্যা?
আলবাত সমস্যা। বেশি চালাক হয়ে গিয়েছিস তাইনা? তোর চালাকি ছুটাচ্ছি জাস্ট ওয়েট।
যা খুশি করো হাত ছাড়ো আমার এ বলে আদরিবা জোর করে সাফোয়ানের হাত থেকে নিজের হাত ছুটিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
আদরিবার যাওয়ার দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে রইলো সাফোয়ান। হুট করেই খুব করে রাগ লাগছে, কেনো এত রাগ লাগছে সাফোয়ান নিজেও জানে না। মেইন কথা হলো আদরিবার এমন ইগনোর ঠিক মেনে নিতে পারছে না সাফোয়ান। এই জন্যই হয়তো মানুষ বলে বিশেষ কেউ কাছে থাকলে তার মর্ম অনেকেই বোঝে না কিন্তু দূরে চলে গেলে তখন হারে হাতে টের পায় সেই ব্যক্তি ছাড়া সে কতটা অসম্পূর্ণ। সেই অবস্থা হলো সাফোয়ানের৷ আদরিবা সবসময় কোনো না কোনো বাহানা দিয়ে ওর কাছে থাকতো, ওঁকে বিরক্ত করতো, কেয়ার করতো আরো কত কি কিন্তু সবসময় এত কাছে থাকায় কখনোই আদরিবার মর্ম বোঝা হয়ে ওঠেনি। একটা সময় ফারিসতার দেখা পেলো। সবসময় ফারিসতাকে দূর থেকে দেখেছে তাই মন বলতো এই মায়াবিনীকে কাছে পেলে, আপন করে পেলে ও পরিপূর্ণ। যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলো তাকে ভাইয়ের বউ রূপে দেখে কষ্ট জর্জরিত হয়েছিলো বুক পাঁজরে, এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো জীবন কিন্তু তার চেয়েও এখন আরো বেশি নিজেকে এলোমেলো লাগছে আদরিবার ইগনোরে। মেয়েটা সবসময় কাছে ছিলো তাই টের ও পায়নি ওর অজান্তেই মেয়েটার জন্য ওর মনে কিছু একটা তৈরি হয়েছিলো। এখন মেয়েটা যেই দূরে সরে যাচ্ছে এখন মর্ম বুঝতে পারছে আদরিবা নামক মেয়েটা ওর হৃদয়ের কতটা জুড়ে আরো আগে থেকেই বসবাস করছে।
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ৪০
সবাই যখন হলুদ মাখামাখিতে ব্যস্ত তখন সবার মাঝ থেকে তাজ ফারিসতার হাত আলতো করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ছাঁদে চলে গেলো।
সবার মাঝ থেকে এভাবে ছাঁদে নিয়ে আসায় ফারিসতা কোমরে হাত দিয়ে বলল, কি সমস্যা? এখানের সব কাজ তো আগে থেকেই করে রেখেছি তাহলে এভাবে সবার মাঝ থেকে কেনো নিয়ে এসেছেন? সবাই কি ভাববে?
তাজ ফারিসতার কথা কানে না তুলে ফারিসতার কোমর আকরে ধরে বলল, কে কি ভাবলো তা দেখার সময় নেই জান। এখানে এসেছি আমি আমার কাজে।
তাজ কোমর আকরে ধরায় ফারিসতা ছোটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বলে উঠলো, কি করছেন ছাড়ুন কেউ এসে পড়বে।
আসুক….
তাজের এমন গা ছাড়া কথায় ফারিসতা নাকের পাটা ফুলিয়ে বলল, আপনিতো নির্লজ্জ লোক শরম লজ্জ বলতে কিছু নেই কিন্তু আমার আছে ছাড়ুন বলছি।
তাজ ছাড়লো তো না এই উল্টো টুপ করে ফারিসতা নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বলল, রাগলে তোমায় একদম বাচ্চাদের মতো লাগে আর জানোইতো বাচ্চাদের দেখলে আমার আদর করতে মন চায় এতে আমার দ….
ফারিসতা তাজের বুকে মৃদু ঘুষি মেরে বলল, অসভ্য সব সময় একি এক্সকিউজ দিয়ে বাহানা খোঁজার ধান্দা। আপনাকে আমি এখন খুব ভালো করেই চিনেছি ছাড়ুন বলছি।
চিনে যখন ফেলেছো এই তাহলে বাহানা ছাড়া আরেকটু কাছে যাই এ বলে তাজ ফারিসতার আরো নিকটে চলে গোলো তখন দরজার সামনে থেকে এক সাথে তিন চারটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো সরি সরি ভুল টাইমে চলে আসলাম।
দরজার সামনে পরিচিত কণ্ঠস্বরগুলো শুনে ছিটকে তাজের থেকে দূরে সরে গেলো ফারিসতা। এই কণ্ঠস্বরের প্রতিটি ব্যক্তিকেই ওরা চেনা ভাবতে ফারিসতার কান কোন দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো লজ্জায়।
দরজার সামনে দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আরফি, পাপন, মাহিমের দিয়ে তাকিয়ে তাজ দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল, আমি ওখানে আসলে একটার দাঁত ও মুখে থাকবে না। শালা কাবাবের হাড্ডি হয়ে এখন বলা হচ্ছে ভুল টাইমে এসেছি।
তাজের হুমকিতে আজ কেউ ভয় পেলো না বরং সবাই এক সাথে তাজের কাছে এগিয়ে এসে পাপন বলল, শালা একটু লজ্জা শরম রাখ। কোথায় আমরা সবাই দেখে ফেলেছি এই জন্য শরমে মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজবি তা না করে গুন্ডাদের মতো থ্রেট দিচ্ছিস।
তাজ পাপনের কথা শুনলো কিন্তু জবাব না দিয়ে ফারিসতাকে একবার অবলোকন করে ছোট করে বলল, নিচে যাও ১২ টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে রাশফিয়াকে নিয়ে এখানে এসো।
তাজের বলতে দেরি ফারিসতার এক ছুটে সেখান থেকে যেতে দেরি হলো না। ফারিসতা যেতে তাজ পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে পাপনদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, কি বলছিলি যেনো?
তাজকে এমন এগোতে দেখে সবাই এক সাথে পিছাতে পিছাতে মাহিম বলল, এই একদম গুন্ডামী করবি না আমরা কিন্তু তিনজন।
তাজ একি ভাবে এগোতে এগোতে বলল, তাই নাকি? তা তিনজন এক সাথে রেডি তো?
আরফি ঢোক গিলে বলল, আরে ভাই থাম আমরাতো তোর ভালোর জন্যই বলেছি। সব লজ্জা এভাবে বিলিয়ে না দিয়ে একটু লজ্জা সঞ্চয় করে রাখা উচিৎ।
লজ্জা মেয়েদের ভূষণ ওটা রেখে দিয়ে আমি কি করবো?
এভাবে মারতে আসলে বলবো কিভাবে? আগেতো থাম…
তাজ পা জোড়া থামিয়ে দিয়ে বলল, থামলাম…
ব্যাস হয়ে শুরু হয়ে গেলো পাপনের লাগাম ছাড়া কথা। পাপনের মুখ থামানো জন্য হুমকি ধামকি দিয়েও কোনো কাজ হলো না। সবাই এক সাথে তাজের সাথে মজা নিতে লাগলো। ১১:৫৫ বাজতে তাজ পাপনকে থামিয়ে আরফিকে কিছু একটা বলে ফারিসতারকে ফোন করে ওদের আসতে বলল।
ঠিক ১২ টায় রাশফিয়াকে নিয়ে আদরিবা আর ফারিসতা ছাঁদে প্রবেশ করতে অন্ধকার ছাঁদে ঝকমক করে আলো জ্বলে উঠতে সবাই এক সাথে বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে রাশফিয়া।
সবার কাজে বিস্ময়ের কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো রাশফিয়া। রুশার বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যস্ততায় ভুলেই গিয়েছিলো আজ ওর বার্থডে। কিন্তু এরা মনে রেখেছে ভাবতে রাশফিয়া অবাক হয়ে সবাইকে একবার অবলোকন করতে রাশফিয়াকে আরো অবাক করে দিয়ে আরফি ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর দিকে এক গুচ্ছ গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে রাশফিয়াকে প্রপোজ করে।
আরফির কাজে রাশফিয়া অবাকের শীর্ষে চলে গেলো। কস্মিনকালেও ভাবেনি আরফিও ওকে ভালোবাসে ভাবতে রাশফিয়া উত্তেজনা খুশিতে কেঁদেই দিলো। এরপর আস্তে ধীরে নিজেকে স্বাভাবিক করে সবাই মিলে এক সাথে কেক টাকার পর আরফি আর রাশফিয়াকে আলাদা একটু সময় দিয়ে সবাই ঘুমাতে চলে গেলো। তাজ ফারিসতাকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করতে এক ঝটকা খেলো। পুরো রুম ক্যান্ডেল লাইটের হলদে আলোয় জ্বলজ্বল করছে। বেডের উপরে গোলাপের পাপড়ির ছড়াছড়ি। পুরো রুম ফুল দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো। তাজ পুরো রুম একবার অবলোকন করে ঠিক বুঝতে পারলো না এটা কি ওর রুম নাকি ভুলে অন্য রুমে চলে এসেছে। কিন্তু অন্য রুমে আসলে ওর রুমের জিনিসপত্র এই রুমে আসলো কিভাবে ভাবতে তাজের মনে পড়লো ছাঁদে বসে বলা আরফি, মাহিম, পাপনের কথোপকথন। ওরা যখন তাজকে নিয়ে মজা নিচ্ছিলো তখন ওরা বলেছিলো ওর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে রুমে গেলেই পাবে। তখন ওদের মজার ছলে বলা কথা পাত্তা না দিলেও এরা যে সত্যি এমন কিছু করে বসবে কল্পনাতেও আসেনি।
এদিকে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ফারিসতা পুরো রুমে চোখ বুলাতে চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। তাজ কি ওকে সম্পূর্ণরুপে গ্রহণ করতে চায় এই জন্য এমন সারপ্রাইজ রেডি করেছে ভাবতে ফারিসতার কান কোন দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো। লজ্জায় রক্তিম হলো পুরো মুখশ্রী।
তাজ আমতা আমতা করে কিছু বলার জন্য উদ্যত হয়ে ফারিসতা দিকে তাকাতে ফারিসতার লজ্জামাখা মুখশ্রী দেখে মুহূর্তের মাঝে তাজের মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো। ক্যান্ডেল লাইটের হলদে আলোয় হলুদ শাড়ি পরিহিত মেয়েটার আবেদনময়ী লজ্জায় রাঙা রক্তিম মুখশ্রীতে তাজের চোখ আঁটকে গেলো। শুকিয়ে আসলো গলা। তাজ শুকনো ঢোক গিলে ফারিসতার দিকে এক কদম আগাতে ছলাৎ করে উঠলো ফারিসতার বক্ষ। ফারিসতা চোখ তুলে তাকাতে তাজের ঘোলাটে দৃষ্টি ওতে আবদ্ধ দেখে শুকনো ঢোক গিলে তুতলিয়ে কোনো রকম বলল, আ..আমি ফ্রেশ হতে গ..গেলাম এ বলে এক ছুটে সেখান থেকে পালাতে নিলে ফারিসতার হাত তাজ ওর মুঠোয় নিয়ে এক টানে ফারিসতাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। তাজের টানে ফারিসতার মাথা যেয়ে ঠেকলো তাজের বুকে। তাজের বুকের প্রতিটি হৃৎস্পন্দনের শব্দে কেঁপে উঠছে ফারিসতা। তখন অনুভব করলো শাড়ি ভেদ করে একজোড়া পুরুষালি উষ্ণ হাতের স্পর্শ কোমরে লাগতে ফারিসতার কম্পিত শরীর এবার ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠল। দাঁড়িয়ে গেলো শরীরে প্রতিটি লোমকূপ।
তাজ ফারিসতার কোমর আকরে ধরে ফারিসতাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘোরলাগা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, এখনো পালাই পালাই করবে?
তাজের ঘোরলাগা কণ্ঠস্বরে ফারিসতার বুকে ধুকপুকানি বাড়িয়ে দিলো কয়েকগুণ। লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গায় খুঁজে না পেয়ে তাজের বুকের মাঝেই খুঁজে নিলো ঠাই। বুঝে নিলো স্বামী ঘোরলাগা কণ্ঠস্বরের মাঝে ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার আহ্বান, আকাঙ্খা। ফারিসতা থেমে গেলো। পালাই পলাই না করে লজ্জাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সাড়া দিলো স্বামীর ডাকে। একটু একটু করে ডুব দিলো ভালোবাসার সাগরের অতল গহ্বরে। পূর্ণতা পেলো পবিত্র এক বন্ধনের। সূচনা হলো নতুন এক ভোরের যেই ভোরে ঘুম ভাঙতে ফারিসতা যখন লজ্জায় হাসফাস করছিলো তখন তাজের ঘুম ভাঙতে ফারিসতার লজ্জায় রক্তিম মুখশ্রী দেখে তৃপ্তির হাসি দিয়ে অর্ধাঙ্গিনীর লজ্জা লুকানোর জন্য নিজের প্রসস্থ বুকের মাঝে আলতো করে অর্ধাঙ্গিনীকে আগলে নিলো। ফারিসতা নিজের লজ্জামাখা মুখশ্রী লুকানোর জন্য একটা প্রসস্থ বুক পেয়ে আবেশে চোখ জোড়া বুঁজে নিলো। সাথে ফুটে উঠলো ঠোঁটের কোনে স্নিগ্ধ এক হাসির রেখা। মন জুড়ে ছেয়ে গেলো এক ভালোলাগার ঠান্ডা শীতল হাওয়া। স্বামীর মুখে লেগে থাকা তৃপ্তির হাসিতে একজন নারীর মনে ছেয়ে যায় কতটা সুখ, আনন্দ, ভালোগালা সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না৷ আসলেই ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ভাষাহীন এক সুখ যেটা প্রকাশ করার না শুধুই অনুভব করার। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখকর অনুভূতি হয়তো এটাই একজন স্ত্রী হয়ে স্বামীর মুখে তৃপ্তির হাসি ফোটানো।
***
সুখের সময় গুলো বুঝি একটু তাড়াতাড়ি এই কেটে যায়। কেটে গেলো তিনতি মাস। সেদিন রুশার বিয়ে সম্পূর্ণ হওয়ার পর রুশা স্বামীর সাথে চলে গেলো কানাডা। সেদিন শুধু রুশার বিয়েটাই হয়নি সাথে সৌরভ চৌধুরী আর মিসেস জেরিনার বিয়েটাও হয়েছিলো। সৌরভ চৌধুরীকে রাজি করানোর দায়িত্ব তাজের উপরে দেওয়ায় তাজ খুব সহজেই সৌরভ চৌধুরীকে বুঝিয়ে রাজি করিয়ে ফেললো আর ফারিসতা সহ চৌধুরী পরিবারের বাকি সবাই মিলে রাজি করালো মিসেস জেরিনাকে। ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকা কাঙাল মিসেস জেরিনাও সবার এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে তাদের সবার মাঝে থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার আশায় আকাঙ্খায় তিনিও রাজি হলো। সেদিন এক সাথে পূর্ণতা পেলো দুই জোড়া সম্পর্ক। সেদিন থেকে সবার দিনগুলো কাটলো ভালোবাসাময়। সাফওয়ান আদরিবার ভালোবাসাও খুব শীঘ্রই পূর্ণতা পেতে চলেছে। আদরিবাকে সাফওয়ান নিজের অর্ধাঙ্গিনী করতে চায় সেই কথাটা সাহস করে একদিন সবার সামনে বলতে কেউ অমত করলো না কারণ তারা আরো আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলো আদরিবাকে সাফওয়ানের বউ করে আনবে। কয়েকমাস পর আদরিবারদের ফার্স্ট সেমিস্টারের ফাইনল এক্সাম তাই ঠিক করা হলো এক্সামের পর বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে। এদিকে আরফি আর রাশফিয়াও চুটিয়ে প্রেম করছে। মেয়েটা আবার নতুন করে বাঁচতে শিখেছে, হাসতে শিখেছে আরফির মাঝে।
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
হ্যাপি রিডিং…